Tuesday 26 June 2018

‘অপর’ সমাজের আরও একটা স্রোত



দীপেন্দু চৌধুরী
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধান। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন এলজিবিটি (LGBT) সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর জন্য আমেরিকায় যে আইন আনলেন তারপর সেটা আজ ইতিহাস। আমেরিকা সেখানেই থেমে থাকল না। আমেরিকায় সরকার বদল হলেও ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্প্রদায়ের আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সমস্ত রকমের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন‘এলজিবিটি’ (সমকামী, উভকামী এবং রুপান্তরকামী) গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের স্বীকৃতির লড়াইয়ের ইতিহাস আমরা আমেরিকার সাহিত্য, চলচ্চিত্রে ধারাবাহিকভাবে দেখে আসছি। কলকাতা আমেরিকান সেন্টার পুরো জুন মাস ধরে টানা এই বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনার ব্যবস্থা করেছে। ২ জুন ছিল Pride Month Film Fest. ব্যানারের ছবি। ছবির নাম ‘Philadelphia’ ছবিটা আমি দেখেছি। ছবিটি না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না ‘এলজিবিটি’ আন্দোলন কতদিন আগে আমেরিকায় শুরু হয়েছিল।
৯ জুন ছিল ছবি। আবারও Pride Month Film Fest. ব্যানারের ছবি। ছবির নাম ‘Milk’এই ছবি থেকে আমরা সমাজের ‘অপর’ সম্প্রদায়ের মানুষের পারিবারিক যন্ত্রণা, ব্যাক্তিগত যন্ত্রণার এক মর্মস্পর্শী চিত্রনাট্য খুঁজে পাই। ব্যক্তি মানুষের, গোষ্ঠী মানুষের সামাজিক অবহেলা থেকে মুক্তির জন্য ‘এলজিবিটি’ গোষ্ঠীর আন্দোলন আমাদের সেলুলয়েডের পর্দা থেকে বাস্তবে টেনে নামিয়ে আনে। ‘মিল্ক’ নামের একজন সমকামী মানুষ স্থানীয় পুরসভা বা লোকাল বোর্ডের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারপর তাঁকে কেন্দ্র করে ছবির গল্প এগতে থাকে। এই ছবিটিও আমি দেখেছি। মিল্ককের আহ্বানে সমকামী, উভকামী রুপান্তরকামীরা একমঞ্চে সংগঠিত হতে থাকে। একসময় নির্বাচন শেষ হয়। মিল্ক জিতে যায়। তবু সমাজের মূলস্রোতে ওদের স্বীকৃতি মেলে না। যে স্বীকৃতির লড়াই সারা বিশ্বে আজও চলছে। মিল্ক নামের এই ছবি আত্মপ্রকাশেরও পঞ্চাশ বছর আগে ‘এলজিবিটি’ আন্দোলনের শুরুয়াত। ইউরোপের জার্মানি থেকে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন।  
জুন মাসের ধারাবাহিকতায় ২০ জুন আমরা পেলাম সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন দুপুর দুটোয় ‘South Asina Young Queer activists Network/ SAYAN 2nd Conference. LGBT and Livelihood Discrimination.’ শুরু হল অন লাইন সেমিনার। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের যৌথ আয়োজক সংস্থা ছিল ‘প্রান্তকথা’ নামে একটি এনজিও। প্রান্তকথা আমন্ত্রণপত্রে আহ্বান জানিয়েছিল ‘Across South Asia, including India, queer youth , youth belonging to gender and sexuality minorities are subjected to similar challenges, atrocities, violence and persecution 🛑
SAYAN or South Asian Young Queer Activists Network currently is the only South Asian platform of its kind 🌏 
With technical support from American Posts from Burma, Bangladesh, Sri Lanka, Nepal and India (Kolkata) we will have the 2nd Digital Conference on the existing ground realities across these countries. Please
join us in this historical endeavour.’   
প্রান্তকথা নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধায় ২০জুন অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় জানিয়েছিলেন, ‘’আমরা ‘এলজিবিটি’ আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে যেতে চাই। সেই কারণে এই সম্প্রদায়ের যুবগোষ্ঠীর বক্তব্য আমরা শুনব।‘’  
‘সায়ন’ বা সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ ক্যুয়ার অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক নামের সম্মিলিত মঞ্চের ছিল এটা দ্বিতীয় বৈঠক। শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বে সামজিক অধিকারের প্রশ্নে আজও এই সম্প্রদায়কে তথাকথিত সমাজের বাঁকা চাহনি, অবহেলা, কটুকথা সহ্য করতে হয়। আজও ওরা ‘অপর’ হয়ে রয়ে গেল। মনে পড়ছে রাজা রাম মোহন রায়ের আন্দোলনের কথা। সতীদাহ প্রথা বন্ধের আন্দোলন। পরম্পরা হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় শুরু করেছিলেন বিধবা বিবাহ। সেই সময়কাল থেকে এগিয়ে আসতে থাকলে বর্তমান উচ্চশিক্ষিত, বনেদী সমাজের কতটা পরিবর্তন হয়েছে? এর উত্তর কে দেবে?     
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এদেশের রূপান্তরকামীরা কিছু  স্বীকৃতি ও অধিকার পেলেও, সামাজিকভাবে আজও তাঁরা প্রায় একঘরে। আর সমকামী, উভকামীদের লড়াই তো আরও কঠিন। দেশের আইন তাঁদের বিপক্ষে। শতাব্দী প্রাচীন ব্রিটিশ আইনের (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা) দৌলতে সমপ্রেম এদেশে আজও অপরাধের তকমা পায়। তবে শুধু ভারত নয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশিয়ার মতো দেশগুলিতেও পরিস্থিতি প্রায় সমান। একমাত্র ব্যতিক্রম নেপাল। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর সেখানে সমকামী বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০ জুন ভিডিও কনফারেন্সেরমাধ্যমে আলোচনায় কাঠমান্ডুর প্রতিনিধিদের প্রশ্ন ছিল রুপান্তরকামী, হিজড়েদের সামাজিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে কেন?   
২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল এক ঐতিহাসিক রায় ভারতবাসীর সামনে এসেছিল। সুপ্রীমকোর্ট রায় দিয়েছিল ট্রান্সজেন্ডারদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এঁরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে, ফলে শিক্ষা, জীবিকা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার যেন এঁদের সমান সুযোগের বন্দোবস্ত করে। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণের রায়ে বলা হয়েছিল ‘’তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি কোনও সামাজিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত ইস্যু নয়। মানবাধিকারের প্রশ্ন বলেই বিবেচ্য।‘’ শুধু তৃতীয় লিঙ্গ কেন? সমকামিতা বিষয়ক ৩৭৭ ধারাটি নিয়েও প্রশ্ন আজও থেকে গেল। ঔপনিবেশিক আমলের বস্তাপচা মানসিকতা থেকে এই ধারাটি ভারতীয় আইনের ধারায় সংযোজিত  হয়েছিল। সুপ্রীম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইনে একটি সংশোধন করলেই হয়ে যাবে। অবশ্য এই সংশোধনের দায়িত্ব আদালতের নয়। ভারতীয় সংসদের। সেই রায়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত সংসদে এ বিষয়ে কোনওরকম আলোচনা হয়নি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ তার অফিসে সমকামী দম্পতিদের জন্য অন্যদের সমান সুবিধা দিতে চাইলেও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ভারত।
আমরা আলোচিত নিবন্ধে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করলাম ২০ জুন কলকাতা আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন সভাঘরে এই বিষয়গুলি আরও বিস্তারিত এবং আক্রমণাত্বকভাবে উঠে এসেছিল। ওই দিনের আলোচনা দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ছিল এলজিবিটি কিউ আই ইয়ুথ এন্ড লাইভলিহুড ডিসক্রিমিনেশনআমরা প্রথমেই একটি বিষয়ে নজর করি। ২০ জুনের ভিডিও সম্মেলনের জন্য বসার আয়োজনটা অত্যন্ত চোখে পড়ার মত। একটা লাটিন বর্ণমালার ‘ইউ’ আকৃতির সুদৃশ্য টেবিলকে কেন্দ্র করে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। টেবিলের সামনে প্রমান সাইজের পর্দা। টেবিলের একদিকে বসেছিলেন ‘এলজিবিটি’ আন্দোলনের প্রথম শ্রেণীর নেতৃত্ব। অপর্ণা, তিস্তা, অনুরাগ, রঞ্জিতা, সমর্পণ মাইতি। তাঁদের পাশে বসে অনুষ্ঠানের ‘মডারেটর’ তথা আমেরিকান সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর জয় ট্রেলর। যিনি পুরো অনুষ্ঠানকে নিজস্ব ঘরানা এবং শৈলীতে পরিচালনা করেন। ছিলেন সাংবাদিক তথা সমাজ কর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় এবং আমেরিকান সেন্টার, কলকাতার কনস্যূলেট জেনারেল ক্রেগ হল। সম্প্রতি যার নেতৃত্বে কলকাতা, ভারত, এশিয়া এবং আমেরিকার সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। তৈরি হচ্ছে নতুন আরও এক মেলবন্ধন। আরও এক সাংস্কৃতিক এবং আধুনিক বাণিজ্যের মেলবন্ধন। যাকে আমরা নতুন ঘরানা বলতে পারি।          
এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, নেপাল এবং ভুটানের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জয় ট্রেলর কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে আলোচনার দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিলেন। এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মার্কিন কনস্যুলেটের অফিসউল্লেখিত দেশগুলির বিভিন্ন মার্কিন কনস্যুলেট থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য পেশ করেন সেই সমস্ত দেশের প্রতিনিধিরা। কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেট এই আয়োজনের মূল কেন্দ্র। কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল ক্রেগ হল অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে জানান, ‘’এলজিবিটি অধিকারের প্রশ্নে এই দেশগুলিতে একসঙ্গে লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করতেই এই সেমিনারের আয়োজন এবং তাতে সহযোগিতা করছে মার্কিন কনস্যুলেট।‘’  
আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম পাকিস্তানকে নিয়ে কিছুটা চিন্তা রয়েছে উদ্যোগী সংস্থার। কারণ মাস দুয়েক আগে এই ধরণের পৃথক একটি ভিডিও কনফারেন্সে সে দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু এবারেরটা ব্যতিক্রম। উৎসাহের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামাবাদের যৌন সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধিরা পরামর্শ চাইলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের সহনাগরিকরা প্রশ্নের উত্তর দিলেন। শুধুমাত্র ইসলামাবাদ নয় করাচী শহরের সমকামীরা নিজেদের অবস্থার কথা জানালেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে এল তাঁদের অবস্থাটা প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠীর মত। তাঁরা স্থানীয়ভাবে কোণঠাসা। তাঁরা অভিযোগ করলেন, পাঁচ বছর আগে থেকে স্কুল-কলেজে সমস্যা আছে। কিছুটা জোর করেই স্কুল- কলেজ ছাড়তে বাধ্য করানো হয়।
পাকিস্তানেও রুপান্তরকামী বা ট্রান্সজেন্ডাররা কিছুদিন হল আইনি স্বীকৃতি পেয়েছেন। ট্রান্সজেন্ডাররা আইনি স্বীকৃতি পেলেও লেসবিয়ান, গে’দের মতো সমকামীদের সামাজিক বা আইনি স্বীকৃতি নেই। করাচি, ইসলামাবাদ থেকে প্রশ্ন ছিল তাঁরা কি করবে? কিভাবে পাল্টান সম্ভব? স্বীকৃতি আদায় সম্ভব? রেঙ্গুন থেকে দাবি উঠল, ট্রান্সজেন্ডারদের অস্ত্রপচারের সব রকমের ব্যবস্থা করতে হবে। এলজিবিটি অধিকারের জন্য। we have no legal protection. Working of Laws, Implication of Laws-এর কিভাবে ব্যবস্থা করা যায়? প্রশ্নগুলির উত্তর দিলেন কলকাতার যৌন সংক্রান্ত আন্দোলনের সমাজকর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘’ দলিতদের সংগ্রাম ২০০ বছরের পুরনো। এলজিবিটিদের সংগ্রাম, দলিতদের সংগ্রামকে আমরা একসঙ্গে এক রাস্তায় একটা মিছিলে আনতে চাইছি। আমাদের এই সভাঘরে মুসলিম মহিলারা আছেন। আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে শিখব। শ্রমিক সংগঠন থেকে আমরা নেব। এখানে অনেক তরুণ প্রতিনিধি হাজির আছেন। তাঁদের থেকেও শিখতে হবে।  কলকাতায় সমকামীরা এডস সচেতনতার মতো বিষয়ে সামাজিক আন্দোলের সমর্থনে লড়াই করছেন। এবং এভাবেই ওরা সমাজের মূল স্রোতের কাছে আসেন।‘’
দিল্লি থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এ দেশের তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার-সংক্রান্ত যুগান্তকারী রায়ের এক আবেদনকারীও। তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী বা ওবিসির মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছে নালসা রায়।  এদিন সেই রায়ের কথা মনে করিয়ে দেন সেই আবেদনকারী। ঢাকার যৌন সংখ্যালঘুরা বলছিলেন বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কথা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকি রয়েছে সেই কথা বললেন তাঁরা। আমরা শুনলাম মায়ানমারে রূপান্তরকামী মেয়েদের লিঙ্গান্তরের অস্ত্রোপচারের সমস্যা এবং ঝক্কি ঝামেলার কথা। হাসপাতালে গেলে পুলিশ ধরবে। তাই বাধ্য হয়ে হাতুড়ের স্মরণাপন্ন হতে হয়। উত্তর এল চেন্নাই থেকে। সেখানের একটি এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি জানালেন, ‘’তামিল নাড়ুতে এই শল্য চিকিৎসা নিখরচায় করা যায়। এবং অবশ্যই নিরপদে। কেউ এলে সাহায্য করব।‘’
কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল গ্রেগ হল বলেন, ‘’২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে কলকাতার হাসপাতালে ট্রান্সজেন্ডারদের অপারেশনের কাজ শুরু হয়েছে।‘’ তিনি পরে আরও বলেন, ‘’যন্ত্রণার গল্পগুলো এ ভাবে ভাগ করে নিতে পারলেই এগিয়ে চলার রাস্তাটাও খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে।‘’    
এলজিবিটি আন্দোলনের সমাজকর্মী তিস্তার উপর দায়িত্ব ছিল অল্প কথায় অনুষ্ঠানের শেষ বক্তব্য রাখার। তিস্তা বলেন, ‘’ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য নিজেদের গোপনীয়তা সামাজিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। Trans Gender Board (TGB) আছে। We need to understands every issues.
দ্বিতীয় পর্বে ছিল মত বিনিময় সভা। আলোচক ছিলেন সমর্পণ মাইতি, তিনি গে সমাজের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছেন। সম্প্রতি তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে Mr. Gay World’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। 2nd Runners up হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘’গ্রাম থেকে ছোট শহর সেখান থেকে বড় শহর। আমি স্কুল থেকে নিগ্রহের শিকার। আমাকে কলেজ হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। When I got a chance to pursue research in Calcutta, I thought I would no longer be bullied because people here were far more open minded. But I was wrong. আমার কয়েকজন ঘনিস্ট বন্ধু আমার পাশে আছে।‘’
 শুভাগতা ঘোষ,  সাফো নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি বলেন, ‘’ একজন লেসবেন মহিলার প্রতিরোধটা আসে বাবা-মায়ের কাছ থেকে। আমরা সমানাধিকারের জন্য লড়াই করছি ১৯ বছর। বাড়ি থেকে লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষিত হতে না পারলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না। অর্থনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষার সমস্যা হয়। এবং তখন চাকরি বা কাজ পাওয়া যায়না গ্রাম মফসসলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়। এই বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।‘’  
কুচিনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তথা শিল্পপতি নমিত বাজোরিয়া বলেন, ‘’৩-৪ বছর আগে থেকে আমরা সোশ্যাল এন্টরেপেনারশিপ শুরু করেছি। ভারতের বিভিন্ন শহরে আমরা শুরু করি। সামাজিকভাবে এই সম্প্রদায় অবহেলিত। মালদহ জেলার একজনকে আমরা ‘ফেলো’ হিসেবে সাহায্য করছি। যাঁদের মেধা তাঁদের প্রত্যেকের কাজ পাওয়ার অধিকার আছে।‘’  
ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের থেকে নাটক করেন সুজয় এবং অনুরাগ। তাঁরা মূলস্রোতের নাট্য পরিচালকদের প্রসঙ্গে বিভিন্ন অসাম্যের কথা বলেন। কাজ না পাওয়ার কথা বলেন। তাঁরা সমানধিকারের কথা বলেন। অপর্ণা বলেন, ‘’আমি হিজড়ে সম্প্রদায়ের সমাজকর্মী। উচ্চ শিক্ষিতইংরেজি স্কুল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। মূল ধারার মানুষেরা আমাদের সঙ্গে কি ধরণের ব্যবহার করে আমরা জানি। আমি ইংরেজি স্কুল কলেজে পড়েছি বলে কিছুটা সমীহ পাই। কিন্তু যারা সাধারণ সমাজের তাঁদের সঙ্গে কি ধরণের অমানবিক ব্যবহার করা হয়? সমাজ কি আজও পাল্টাবে না? আমদের সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেন? কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কাজের স্বাধীনতা কতটা?’’
কিছুদিন আগে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ে এলজিবিটি সমাজের মানুষদের কাজের সুযোগ নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়। সমীক্ষাটি করেন পরমেশ সাহানি। ‘গে বোম্বে’ নামে একটি বইয়ের লেখকও তিনি। তাঁদের সমীক্ষার কিছু অংশ আমরা উল্লেখ করছি।
              ’The Second Indian LGBT Workplace Climate Survey was conducted with the aim of assessing the workplace environment vis-à-vis LGBT employees in corporate India. While the first such survey in 2012 had revealed many key insights, the second survey sought to follow up on those findings- especially in the context of homosexuality being recriminalized by a Supreme Court ruling in December 2013. Workplace Diversity & Inclusion has now been widely recognized as a business driver. However, one segment of the employee base that is still largely neglected and their presence unrecognized at least in the Indian workplace– is that of LGBT employees. The Supreme Court ruling on Section 377 has also hurt the pace of progress on this issue. Section 377 of Indian Penal Code does not criminalize LGBT identity and hence initiatives that promote inclusion of LGBT employees – such as constituting Employee Resource Groups- do not pose any legal risk for the companies, however, risk-averse organizations have taken a safer route by not taking any steps in this regard. On the other hand, some multinationals- especially those based in the US and Europe are bringing LGBT-friendly policies into their Indian offices as well. This survey focused on three sectors of the economy- Information Technology, Banking & Finance and FMCG & Manufacturing. Hundred respondents from various Indian and foreign multinational companies participated in the survey that showed interesting results. The results were a mixed bag - more than half of LGBT Indians we surveyed could be legally fired from their jobs for being LGBT. Only a small minority- 4% are covered by......’’
আমরা উল্লেখ করছি আরও দু’টি বিষয়ের। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, রক্ষণশীল সমাজ যেভাবে মানসিক অসুস্থতার তকমা দিয়ে থাকেন রুপান্তরকামীদের এটা আর করা যাবে না। ১৮ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় মোট ৫৫ হাজার রোগ, আঘাত এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন সব রোগের কথা বলা হয়েছে। সেই তালিকায় ‘মানসিক অসুস্থতার’ তালিকা থেকে সরিয়ে ‘যৌন স্বাস্থ্য’ সংক্রান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে রূপান্তরকামীদের। হু-র এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘’আশা করা যায়, এই নতুন তালিকা প্রকাশের পরে বৈষম্য কমবে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হছে সংসদীয় মন্ত্রক সূত্রে খবর, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে ১৮ জুলাই। তিন তালাক এবং রূপান্তরকামী সংক্রান্ত বিলও এই অধিবেশনে পেশ হওয়ার কথা। 
  
  

 

No comments:

Post a Comment