Sunday 16 April 2017

বাবু রাজনীতি উবাচ

বাবু রাজনীতি উবাচ: 

সমর সেন যে ‘বাবু বৃত্তান্ত’ লিখে গেছেন সেই ধরণের বৌদ্ধিক উপসনা আমার নেই। ভারত নামক উন্নয়নশীল দেশটিতে আধুনিক গণতন্ত্রের উন্নতি যত হচ্ছে ততই কেন জানি না ‘বাবু’দের দল হারিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ কিছুদিন আগে উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তথাকথিত যেসব ‘বাবু’ দের রসায়ন আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল সেই সাম্রাজ্য দখল করলেন গেরুয়া পোশাক পরিহিত স্বনামঅধন্য এক ব্যক্তি। ‘বাবু’ রাজনীতির দলে ব্যতিক্রম অবশ্যই। ‘বাবু’ সমাজেও উল্লেখযোগ্য এক ব্যতিক্রম। যোগী আদিত্যনাথ যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন এই খবর তাঁর পূর্বাশ্রম পরিবারও জানত না। সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজেপি নামক দলটি একটি ব্রাহ্মণশ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দল। সেই সর্বভারতীয় দলের  বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বোন জমিতে খেতির কাজ করতে করতে মোবাইলে খবর পায় তার দাদা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। ভারতীয় বাবু রাজনীতির অবসান এখান থেকে শুরু এমনটা বলা যাবে না। কারণ বিজেপি দলের এর আগে আমরা কল্যাণ সিংহ, উমা ভারতীর মত দলিত মুখ্যমন্ত্রী দেখেছি। বিজেপি তথা দলের পারবারিক সময়কাল বর্তমানে অনেকটা বদলে গেছে। এবং বদলে যেতে চাইছে। যদিও সামন্ত ভারতের হাত ধরেই সেই সময়ের ‘বাবু রাজনীতির’ স্বরূপ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মত রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই রাজ্যের পশু খাদ্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য স্লটার হাউসগুলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই থেমে থাকেনি রাজ্য সরকার। সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, লাইসেন্সহীন মাংস কাটার কারখানাগুলি বন্ধ করার অভিযানও শুরু হয়। সেই অভিযানে কিছু বৈধ স্লটার হাউসও বন্ধ করা হয়উত্তর প্রদেশের মাংস ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামেন। পরে আদালতে মামলা হয়। এবং একটি মীমাংসার পথ আমরা দেখতে পাই।
প্রগতির রথের চাকা বিশ্বায়ন উত্তর ভারতে থেমে থাকতে পারে না। উত্তর প্রদেশের গেরুয়া বসন পড়া মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দলের এবং দলীয় পরিবারের নিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতির উর্ধে উঠে ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে নার্সারি স্তর থেকে ইংরেজি পড়ানো শুরু করতে হবে। এবং দশম শ্রেণী থেকে বিভিন্ন বিদেশী ভাষার সঙ্গেও পরিচিত হবে রাজ্যের পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ‘’শিক্ষায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন প্রয়োজন। আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলব যা জাতীয়তাবাদের প্রচার করবে ঠিকই, কিন্তু আধুনিক উপায়ে।‘’        
বাবু রাজনীতির অবসান কবে কোথা থেকে শুরু সেটা ইতিহাসের বিষয়। কিন্তু বিজেপি নামক দলটি ২০১৪ সালে যে ব্যক্তিটিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন তিনি ব্রাহ্মণ নন। এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘বাবু রাজনীতির’ মূলে আঘাত করেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। খুব সম্ভবত পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ক্ষত্রিয় বা উচ্চ বর্ণের সম্প্রদায় থেকে কেউ আসছেন না। ‘বাবু রাজনীতির’ মূলে আঘাত করেই এমন একজন সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, সেটা আম ভারতীয়দের কাছেও চমক হবে সম্ভবত উত্তর প্রদেশ ভোটের সময় জাত-পাত, ধর্ম যেভাবে আসে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবেই এসছে। তবে সেগুলি ‘বাবু রাজনীতির’ খোলস থেকে মুক্ত হয়ে দলিতের ভাষায় দলিতের ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দুজনেই সুকৌশলে কখনও ভারতীয় প্রাচীন সভ্যতার গতানুগতিকতা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। আবার কখনও বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের ‘বাবু রাজনীতিকে’ উস্কে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজ বাদী সরকার কবরস্থানগুলির সংস্কার করলেও শ্মশান সংস্কারের কাজ ফেলে রেখেছেন।
কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই কংগ্রেসের তথাকথিত রাজনৈতিক অবস্থান ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকেই তিনি দলিত পরিবারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছেন এবং সক্ষমও হয়েছেন। কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং প্রগতিধারার রাজনীতি একশ্রেণীর ‘বাবু সম্প্রদায়’-এর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাঁরা বিভ্রান্ত ছিলেন। উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (২০১৭) ২৩ মার্চ আমেঠীর রামলীলা ময়দান থেকে সমস্ত দেশের মানুষের কাছে রাহুল গাঁধি শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দলের বর্তমান অবস্থান ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, ‘’তুমি হিন্দুও নও, মুসলিম নও, তুমি মানুষের সন্তান এবং তুমি শৈশব থেকে বড় হয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষই হবে।‘’ কংগ্রেসের সহ সভাপতি আরও ঘোষণা করলেন, ‘’ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে এটাই আমার বর্তমান বার্তা।‘’
একবিংশ শতাব্দীর যুব প্রতিনিধি হিসাবে রাহুল গাঁধি ভোটব্যঙ্কের রাজনীতি আর করতে চাইছেন না। যে বিতর্ক বার বার কংগ্রেস নামক ১৩০ বছরের দলে দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস কোন ভোট ব্যঙ্ককে পরিচর্যা করবে? শাহবাণু মামলা থেকে রাম মন্দিরের শিলান্যাস দু’টি বিষয় নিয়েই কংগ্রেসের মধ্যে দোলাচল ছিল। রাজীব গাঁধির সময় থেকে কংগ্রেস নামক দলটি ভারতীয় রাজনীতির মেরুকরণের এই বদ্ধজলা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। সংগঠনে রাজনৈতিক অবস্থান সঠিকভাবে মানুষের কাছে না পৌঁছতে পারার ব্যর্থতা কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর বর্তায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। ২০১৪ সালের আধুনিক গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের মত বিষয়কে মূল এজেন্ডা করে এন ডিএ সরকার বিজেপির নেতৃত্ব কিছুটা আত্মতুষ্টিতে রয়েছেএটা খুবই স্বাভাবিক একসময়ে ভারতীয় সংসদে মাত্র দু’জন সাংসদের দল আজ শাখা প্রশাখায় ভারতের অন্যতম বৃহত্তর দল। সেই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর মত নেতা। বিশ্বায়নের ধারাবাহিকতায় ইউরোপ আমেরিকার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়েই এশিয়ার দেশগুলি উন্নয়নের অংশীদার হতে চাইছে। ভারত সহ ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থসামাজিক চরিত্রের বদল দেখলে আমরা বুঝতে পারব। এশিয়ার ওই সব দেশে উন্নয়ন যেমন হচ্ছে দুরনীতিও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এশিয়া নামক মহাদেশটির বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি মহাদুর্নীতির মত আখ্যান মানুষ অনেকবার শুনেছে। ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছরে এশিয়ার ১৫টি দেশের ৯০০ মিলিয়ন মানুষ ঘুষ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল ১৫টি দেশের ২২,০০০ মানুষের মধ্যে সমীক্ষা করে এই তথ্য জানতে পেরেছে। সূত্রঃ এএফপি।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কত শতাংশ মানুষ দুর্নীতির কথা বলেছেন? সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে জানতে পারছি চিনের ৭৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৬৫ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৫৯ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৫৬ শতাংশ,  দক্ষিণ কোরিয়া ৫০ শতাংশ, হংকং ৪৬ শতাংশ, ভারত ৪১ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৩৫ শতাংশ, পাকিস্তান ৩৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ৩৪ শতাংশ, জাপান ২৮ শতাংশ, তাইওয়ান ২৬ শতাংশ, মায়ানমার ২২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২১ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১৪ শতাংশ। সূত্রের খবর, ভারতে ‘সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন’-এর বাৎসরিক রিপোর্ট বলছে, ২০১৫- ২০১৬ সালের আর্থিক বছরে দুর্নীতি বিষয়ক অভিযোগ জমা পড়েছে ২৯,৮৩৮টি এবং ২০১৬-২০১৭ সালের অভিযোগ ৪৯,৮৪৭টি। সিভিসি রিপোর্ট আরও বলছে, রেলের দুর্নীতি গত আর্থিক বছরে ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন বছর হয়ে গেল দায়িত্বে এসেছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য একের পর এক কর্মসূচী নিচ্ছেন। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্টআপ প্রকল্প’, ‘স্বচ্ছ ভারত’, ‘জন ধন প্রকল্প’, ‘নোটবন্দি’ ইত্যাদি। এইসব প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও দেশের বিনিয়োগ খুব কিছু উল্লেখযোগ্য বলা যাবে কি? সম্প্রতি রিজার্ভব্যঙ্ক প্রকাশিত তথ্য বলছে ভারতে ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছরে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৫.১ শতাংশ। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘’শুধু ব্যঙ্কের ঋণ বৃদ্ধির হার যে এত কম, তা নয়। ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির ক্ষমতার তুলনায় উৎপাদনের হারও গত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ক্ষমতার তুলনায় মাত্র ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে। এ থেকেও স্পষ্ট কারখানা তৈরি হচ্ছে না, শিল্পও হচ্ছে না। তাই বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে না।‘’ ভারতীয় গণতন্ত্রে উন্নত দুনিয়ার মত বিরোধীদের গঠনমূলক সমালোচনা শাসক দল মেনে নিতে চায় না অথবা পারে না। গঠনমূলক কলমচির দায়িত্বও আমাদের নিতে হবে। বিজেপি বলতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিল্পের জন্য এবং বিনিয়োগের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিরোধীরা তথ্য তুলে ধরিয়ে দিচ্ছেন সরকারের দুর্বলতা। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘’ঋণ না হলে লগ্নী হবে না, শিল্প হবে না, নতুন কর্ম সংস্থানও হবে না।‘’ জয়রাম রমেশ শ্রম মন্ত্রকের হিসেব উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, শ্রম মন্ত্রকের হিসেবই বলছে, মোদী সরকারের প্রথম দু’বছরে সংগঠিত ক্ষেত্রে মাত্র ৪.৪ লক্ষ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রথম দু’বছরে সেই তুলনায় ২১ লক্ষ কর্ম সংস্থান হয়েছিল।                          
দুর্নীতির বহর যতই বাড়ুক সময়ের দাবি মেনে কখন কোন আড়াল থেকে একদল অন্য ধারার যুব নেতৃত্ব সামনে এগিয়ে আসছেনগঠনমূলক রাজনীতির ভাষা চেনানোর দায়িত্ব নিয়ে। রোহিত ভেমুলার মত ছাত্র নেতার মৃত্যুর পরেও ছায়া রেখে গেছে নতুন আলো, নতুন ভাষায় কথা বলার জন্য। রোহিত ভেমুলার ছায়াপথ ধরে এগিয়ে এসছেন, কানাহাইয়া কুমার, উমর খালেদ। এবং ধূমকেতুর মত উদয় হয়ে আবার আড়ালে চলে গেছেন গুরমেহের কৌর। ভারতীয় সেনার কন্যা গুরমেহের। তার বাবা কার্গিল যুদ্ধে মারা যান। শহীদ ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংহের মেয়ে গুরমেহের দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজের ছাত্রী গুরমেহেরের একটি ট্যুইট নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি বলেন, ‘’যখনই অসহিষ্ণুতা তীব্র আকার ধারণ করে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গুরমেহের কৌররা উঠে আসেন।‘’ ‘বাবু রাজনীতি’ আবার একবার প্রতিনিধিত্ব হারায়। সেই সূত্রায়ন মানতে চাইছেন কংগ্রেসের একদল নতুন প্রজন্মের নেতা। উচ্চ শিক্ষিত, ধনিক শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল এমন সব প্রতিনিধি নিয়ে গড়ে ওঠা দলটির খোল নলচে বদলে ফেলতে চাইছেন রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে কংগ্রেসের একদল যুব নেতা।
এসবের পরেও বিজেপি দলের আড়ে বহরে বেড়ে চলেছে কি করে? পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যে কিছুদিন আগে রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে সারা রাজ্যে বিজেপি সশস্ত্র মিছিল করেছে। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসকদল, সিপিএম এবং কংগ্রেস বিভিন্ন ধরণের সমালোচনা করলেও বিজেপির বেড়ে ওঠাকে আটকাতে পারছে না। সেই সার সত্য আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। আমরা উল্লেখ করতে পারি সারা দেশে যে কয়েকটি জায়গায় উপ নির্বাচন হয়েছে সেইসব ক্ষেত্রে বিজেপি এবং কংগ্রেস স্মানে স্মানে টক্কর দিয়ে লড়েছে। এই নির্বাচন প্রসঙ্গে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেছেন, ‘’By election results overall have gone in favour of parties who had won it last time except that AAP candidate in Delhi's Rajouri Garden is placed third. Congress here has increased its vote percentage significantly. BJP has won 1 Rajastan, 1 Himachal and 1 Assam seats. Congress retains 2 Karnataka seats. Jharkhand seat has gone in favour of opposition JMM( supported by Congress) candidate. While BJP has retained 1 Madhya Prdesh seat, Congress has a slight lead over BJP in Ater Assembly seat. Counting is still in progress. Last time it was won by Congress and a defeat here would be a setback. West Bengal seat has gone in favour of TMC but significantly it is the BJP that has captured the second place. The CPI nominee is a distant third and Congress nominee rejected completely. Both BJP and Congress vote percentage in Assam's Dhemaji seat has gone up, 10 percentage point for BJP and 14 percentage point for Congress as compared to last year's Assembly result in this constituency. Not much of a 'revolution' in the results except that Congress is back into the reckoning in Delhi, retains its fortune in Karnataka in a convincing way, BJP still has sway over in Rajasthan and Madhya Pradesh and the Opposition is gaining traction in Jharkhand. West Bengal- TMC is entrenched in a strong way in its citadel of Purba Midnapore and BJP able to make a point.’’
এই নির্বাচন প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা এনডিটিভির বক্তব্য আমরা দেখে নিতে চাইছি।
 ‘’In by-elections held for 10 assembly seats in eight states, the BJP is in position to win six. It had held three of these seats and is gaining three from other parties, including Delhi's Rajouri Garden, where last time's winner Aam Aadmi Party has lost its deposit ahead of key civic elections. In Karnataka, the Congress has won both Nanjangud and Gundlupet, seats it held. In Jammu and Kashmir's Srinagar, where fresh elections were ordered in 38 polling booths after violence on Sunday, less than one per cent have turned up to vote.’’ NDTV 
আদিবাসী দলিত আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী জেভিয়ার ডায়াস বলছেন,   
‘’If BJP looses #Littipara Assembly seat it will be an insult to the BJP propaganda machine. Modi himself went to Sahibganj the adjourning District to campaign. Thousands of people from Littipara were brought to Sahibganj for his darshan. Cash was flowing like water. My friend who was working for the JMM candidate told me that BJP workers are now having so much money that for at least one year they need not find employment.’’  
এমত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস দলীয় প্রসারের যে জন্য কি কর্মসূচী নিয়েছে সেটা রাজ্যবাসীর কাছে খুব কিছু পরিষ্কার নয়। কিন্তু কংগ্রেসের কিছু ডেডিকেটেড কর্মী গত এক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্বাধীনতা আন্দলনের বীর যোদ্ধাদের মনে রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য আজকের বাস্তবতায়। অতীতকে সামনে আনতে না পারলে কংগ্রেস তার উজ্জ্বল দিকগুলি আজকের প্রজন্মের কাছে কতটা তুলে ধরতে পারবে? ভারতীয় স্বাধীনতার জন্য যেসব ভারতীয় শহীদ হয়েছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের ঋণ কোনও মূল্যেই শোধ করা সম্ভব নয়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রতি মুহূর্তে স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাস পৌঁছে দেওয়াই একমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা। সেই দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা মনে রেখে ‘আগস্ট বিপ্লব উদযাপন কমিটি’ ৯ অগস্ট, ২০১৬ থেকে সারা বাংলা জুড়ে বিভিন্ন জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মনে রেখে একটার পর একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করে চলেছে।
সারা বছর ব্যপী এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ৯ অগস্ট। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তণ বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের ট্যবলোরর জয় যাত্রা শুরু হয়েছে। শেষ হবে ৯ই আগস্ট, ২০১৭ সালে কলকাতায় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে
২০১৬ সালঃ সেপ্টেম্বরে হয়েছে তমলুকে। শহীদ মাতঙ্গিনী হাজরাকে মনে রেখে। অক্টোবরে কলকাতায় যতীন দাস পার্কে। শহীদ যতীন দাসের স্মরণে। কোহিনূর সেন বরাটের নৃত্যগোষ্ঠী স্বদেশী গানের কোরিওগ্রাফি করে। নভেম্বর মাসে খিদিরপুরে পাইপ রোডে অনুষ্ঠান হয়। শহীদ বিনয়-বাদল-দীনেশকে স্মরণ করে। এই তিন দিকপাল স্বদেশী মহাকরণ অভিযানের আগের রাতটা কাটিয়েছিলেন খিদিরপুরের এই পাইপ রোডে।  ডিসেম্বর মাসে শহীদ কানাইলাল দত্তকে স্মরণে রেখে চন্দন নগরে অনুষ্ঠান হয়। ২০১৭ সালঃ জানুয়ারি মাসে মাস্টারদা সূর্য সেনকে মনে রেখে অনুষ্ঠান হয় খড়দহে। ফেব্রুয়ারি মাসে দারজিলিং পাহাড়ে ভবানী ভট্টাচার্যকে মনে রেখে অনুষ্ঠান হয়। মার্চ মাসে গোপীনাথ সাহাকে মনে রেখে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠান করে ‘আগস্ট বিপ্লব উদযাপন কমিটি’। এপ্রিল মাসে শহীদ মঙ্গল পান্ডেকে মনে রেখে অনুষ্ঠান হয়েছে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডে পার্কে। মে মাসে কৃষ্ণনগর শহরে অনুষ্ঠান শহীদ বসন্ত বিশ্বাসকে মনে রেখে। জুন মাসে অনুষ্ঠান আছে জলপাইগুড়ি শহরে শহীদ বীরেন্দ্র দত্ত গুপ্তকে মনে রেখে। এবং জুলাই মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বোড়ালে ‘আগস্ট উদযাপন কমিটি’র অনুষ্ঠান বিশ্ব বরেণ্য বিঞ্জানী এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী সত্যেন্দ্র বসুকে স্মরণ করে।              
বিস্মৃত বাঙালি জাতির হাতে হেচকা টানে মনে করিয়ে দিতে হয়। বাংলার এবং বাঙালির ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দলোলনের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের। ‘আগস্ট বিপ্লব উদযাপন কমিটি-এর প্রচার পত্রে লেখা হয়েছিল, ‘’ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। তবে তর্পণ করার প্রচেষ্টায় আসুন আগামী ৯ই আগস্ট, ২০১৬ বেলা ১টায় ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে একত্রিত হয়ে জাতীয় স্তরের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার শপথ গ্রহণ করি।‘’
এই বাংলা তথা ভারতে আজ বড় প্রয়োজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর ‘গোরা’ উপন্যাসে তিনি গোরাকে আমাদের উপহার দিয়েছেন উদারতার প্রতীক হিসাবে। ‘গোরা’ উপন্যাস আমরা প্রায় সবাই পড়েছি। এই উপন্যাসে স্বদেশপ্রেম তথা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার যে সামাজিক ছবি সেদিন বিশ্ব বরেণ্য লেখক আমাদের সামনে হাজির করেছিলেন সেই চির সত্যের সন্ধান আমি আজও করি। গোরা একদিন অনুভব করেছিল স্বদেশপ্রেম যখন আমাদের সামনে স্বভাবজাতভাবে দেখা দেবে, তখন, ‘সে আমার ধণপ্রাণ, আমার অস্থিমজ্জা, রক্ত, আমার আকাশ-আলোক, আমার সমস্তই অনায়াসে আকর্ষণ করে নিতে পারবে।’ গোরার কাছে তার তৎকালীন স্বদেশের সেই সত্যমূর্তি যে কী আশ্চর্য, অপরূপ, কী সুনিশ্চিত, সুগোচর, তার আনন্দ, তার বেদনা যে কী প্রচন্ড প্রবল হয়ে এসেছিল। আমার অনুভবে আজও ‘গোরা’ আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে ‘বাবু রাজনীতি’-এর দিন অবসান হয়েছে অনেক অনেকদিন আগেই। খুব সম্ভবত পথে নেমে আর্থরাজনৈতিক এবং আর্থসংস্কৃতির নতুন ভাষায় তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্ব দিতে হবে। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’             


Tuesday 11 April 2017

চিনব বললেই কি?

চিনব বললেই কি? 

পা টেনে টেনে যাব বললেই কি যাওয়া যায়?
চিনব বললেই কি চিনে চিনে চলা যায়?
সাদা আতপ চাল আর ঘি দিয়ে ভাত
যেদিন প্রথম খেলাম। নিয়ামিষ তরকারি ছিল,
সুস্বাদু যেন স্বর্গের অমৃত। ‘কিরে আর এক গ্রাস দিমু?’
সাদা থান পড়ে দিদিমার প্রশ্ন এবং প্রশ্রয়!
সাদা থান কাপড়, সাদা আতপ চালের ভাত,
নিরামিষ তরকারি। সাদা সিঁথি। ধব ধবে সাদা শনের মত
একমাথা চুল ছিল আমার দিদিমার।
জানতাম দাদু স্বর্গের অমৃত সফরে গেছেন।
কুচ কুচে কালো বেড়ালটাও বসে থাকত। 
হেথায় আরও একজন ছিলেন কালো চুল, সাদা থান, সাদা সিঁথি
আমার মাসিমা। বাল বিধবা ছিলেন তিনি।
শেষ বসন্তে এবং গ্রীষ্মের প্রথম প্রহরে ‘কাসুন্দি’
তৈরি হবে। দিদিমা, এবং নোয়া মাসি ফ্যাকাসে চোখে
‘বইয়া থাকেন’। সধবার দল আমার তিন মামিমা
স্নান করে, পুজো সেরে রোদে ভেজানো গরম জলে.........
সরষে বাটা গুলে ‘কাসুন্দি’ করছেন।
হিন্দু ব্রাহ্মণ বাড়ির নিয়ম ঐতিহ্যের
সাতদন্ডি পৈতের উপাচার সাজিয়ে!    
কালো বেড়ালটা সরষের তীব্র ঝাঁঝে
নাকের উপর শুর তুলে ঘোলাটে চোখে দূর পাশে গিয়ে
শরীর এলিয়ে দিল। আজ নিরামিষ।
আমিষ সমাজ তুমি আর কতদূরে?  

        

Thursday 6 April 2017

বৈশাখ বশিতা

বৈশাখ বশিতা:

এবছর শীত ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ বলে থেকে গেল কিছুদিন। ‘বসন্ত দূত’ কুহু রবে দিকচিহ্ন মেপে চলে গেছে। এমনটা কথা ছিল না। তবু চলে যায়। প্রকৃতির খামখেয়ালির সঙ্গে মানানসই করে এপাড়া ওপাড়ায় থাকলেও। সময় কি বুঝতে পারে না ওরা? তাই হবে হয়ত। বসন্তের প্রখরতায় শীত ছিলঅনুভবে তুমিও ছিলে এবছর। আরও কত বছর কত দিন থাকবে তুমি? চেনা বাউলের একতারায়। অচেনা বৈশাখের খেজুর পাটিতে? তাল পাতার পাখার হাওয়ায় হাওয়ায় লাগে যখন দোল। তুমি থেক সব সময় আমার হয়ে আমার পাশে। তাপ-উত্তাপ না থাকলে মানব ধর্ম মানবতা চিনবে কোন মন্ত্রে? শীতের প্রখরতায় রুদ্র উত্তাপ দিতে চায়নি এই সেদিনের সকাল দুপুরেঅথবা দিতে পারেনি। তপনায়ন যদি চোখ নত করে বিনম্র ভঙ্গিমায় চৈত্রের সময়কালকে ভ্রুকুটি করে, তবে বসন্তের রানী অভিমান করে অভিসারে যেতে চায়কি কোনও দিন?  আজ আবার কুহু কলরবে শীত শেষের বেলা অনুভব হচ্ছে। ‘বসন্ত বৌরি’ ফিরে যায়নি। প্রখর গ্রীষ্মের আহ্বানকে অচেনা লাগেনি ওদের। ওরা আজও প্রেম চেনে, ভালোবাসা চেনে। বৈভবে আছে ওরা। সূর্য তুমি উত্তাপ দাও ওরা তোমার উত্তপ্ত আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করবে। সূর্য ভালো থেক এই বসন্তের অপরাহ্ণ বেলায়। আকাশে, গাছে দূর দিগন্ত চরাচরে ওরা দুই ভিন্ন প্রজাতির পাখি সখা হয়ে ছিল। আজও সখা হয়ে থাকে। ওরা পারে আমরা পারি না। জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘বৌ কথা কও’, ‘চোখ গেল’ বা পিঁউ কাঁহা’, পুচ্ছের নীচে লাল আর মাথায় ঝুঁটি নিয়ে বুলবুলি, ঘুঘু, বসন্তের দূতের মতই বৈশাখকে আমন্ত্রণ করে। আমরা পারি না। এই বাংলার গর্ব ‘বাংলা নববর্ষ’ আজ কি জৌলুস হারিয়ে ফেলছে?
মন টানে সত্তর আশির দশকে। শৈশব কৈশোর পেরনো স্মৃতি রুদ্রতপ্ত ঘর্মাক্ত সকাল সন্ধ্যের ‘নষ্টালজিয়া’ হেচকা টান দেয়। গ্রাম, প্রত্যন্ত গ্রাম, গঞ্জ, শহর বিভক্ত বাংলার প্রাচুর্য দেখেছি ছোট ছোট দোকানে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে, দোকানে মাঙ্গলিক সুতোয় বাঁধা আমের পাতা। সেই পাতায় সিঁদুর লাগানো। দোকানের দরজার চৌকাঠে, বাড়ির দেওয়ালে, চৌকাঠে সিঁদুর, হলুদ দিয়ে আঁকা মাঙ্গলিক চিহ্ন। ধর্ম আমার যাই হোক সেদিন আমার শ্লোগান ‘শুভ নববর্ষ’। লেটার প্রেসে ছাপা ‘পোস্ট কার্ড’ বা আমন্ত্রণপত্র আম বাঙালি, আপেল বাঙালির বাড়ি পৌঁছে যেত। তারপর সকাল থেকে বৈশাখি সন্ধ্যে, রাত দশটা, এগারটা ‘হালখাতা’ করে বাড়ি ফেরা ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী গণেশ’ কখণ চুপি সারে এই বাংলার ‘রিচুয়াল’ হয়ে গেছে। ধর্ম নয় উৎসব হয়ে আছে আজও আমার আমাদের বয়সী বাঙালির কাছে। সাদা-রঙ্গিন পায়জামা, পাঞ্জাবি সব সময় এই ভারতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। বাঙালি তাঁর মধ্যে অন্যতম সেই মাত্রার নতুন গন্তব্যে পৌঁছে দেয় আমাদের। আক্ষেপ করার কথা যারা বলে তাঁদের আহাম্মক বলতে চাই না। বা বলার মত প্রশ্রয় আমার নেই। সারা বাংলায় আমাদের মামা, মাসি, কাকা পিসিদের বাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। সেই কারণে যেমন সমস্ত বাংলার জেলাগুলি ছুঁয়ে দেখেছি, ঠিক একইরকমভাবে গণসংগঠন করার সময় প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলা দেখেছি। সাংবাদিকতা সূত্রেও অনেক জেলা ঘুরতে হয়। উত্তর বঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে বাংলা নববর্ষের হৈ চৈ উপস্থিতি ছিল। আজ কতটা আছে? বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান বা রাঢ় বাংলার ‘বাংলা নববর্ষ’ শিমূল, পলাশের বাসন্তিকা ডাক দিয়ে দিয়ে নিয়ে যেত ধূ ধূ প্রান্তর ভাঙ্গা মহুল ফুলের শান্ত ভাষায়। লাল সরানে। ‘ই বাবু আমার টাকা লায়, এই লে দশঘড়া ধান লে’। সব টাকা তুর শুধ করি দিলুম। লয়?’ শুভ নববর্ষ বাংলার অহংকার। বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার পাটুলিতে আমার মামার বাড়ি। অনেকটা সময়ের শৈশব কৈশোর কেটেছে মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে। পাটুলিতেও দেখেছি গঙ্গার চরে টিনের দেওয়াল দেওয়া এক কামরা দু কামরার ঘর। টিনের ছাউনি। কাঠের জানলা। সেইসব বাড়ির দোকান, গৃহস্থ ঘরে একই সুরে ‘বাংলা নববর্ষ’ পালন হত। গঙ্গায় নৌকা ভাসত কাঠের দেওয়ালে সিঁদুরে আঁকা মাঙ্গলিক চিহ্ন নিয়ে। নৌকার ছইয়ে আঁকা সেই লাল হলুদ সিঁদুরের প্রাচুর্য। এই শতাব্দীর প্রথম দশকে দেখেছি। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাতলা, বিদ্যাধরি, হাতানিয়া দেয়ানিয়া সহ বিভিন্ন নদীর বুকে ভেসে থাকা নৌকায় মাঝিরা ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে নৌকা নিয়ে পাড়ি দিয়েছে মাঝ দরিয়ায়। কখনও কখনও স্মৃতি ফিরে এসেছে নির্মলেন্দু  চৌধুরীর গলায় ‘ও আমার তিস্তারে......।’  এসো হে বৈশাখ এসো এসো। বৈশাখ তুমি হারিয়ে যেওনা। জণসংযোগের এত বড় উৎসব বাঙালির একান্ত নিজস্ব। দুর্গা পুজোর পর বাঙালির জীবনে এতবড় উৎসব আর কটা আছে? বর্তমান বিশ্বে ৩০ কোটি বাঙালি। আচ্ছা ভাবুন আমাদের দেশের রাজধানী দিল্লির কথা। ১৯১১ সালে কলকাতার বাবু বাঙালিদের সাহেবরা দিল্লি নিয়ে গেলেননতুন রাজধানীর আমলাতন্ত্র সামলানোর জন্য। এই শ্রেণির বাঙালি দীর্ঘদিন দিল্লিতে। এটা যদি প্রথম শ্রেণির বাঙালির দিল্লি যাওয়া হয়। দ্বিতীয়বার গেলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কর্মসূত্রে যারা দিল্লি গেলেন এবং দিল্লিতে থেকে গেলেন যেসব বাঙালি। তৃতীয় দফায় গেলেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বাঙালি। যারা বাবু বাড়ির বিভিন্ন কাজ করেন। এবং রিক্সা চালান। দিল্লির এই তিন শ্রেণির বাঙ্গালিকে বাংলা নববর্ষের দিন দেশের রাজধানী শহরে এক ঘণ্টার জন্যা রাস্তায় আনতে পারলে বাংলা তথা বাঙালির অস্তিত্ব জানান দেওয়া যায়। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলছিলেন, ‘’দিল্লিতে আমি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন থাকি। আমি নিজেও কর্মসূত্রে দিল্লির বাঙালি। দিল্লিতে ৭০০ সর্বজনীন এবং কালীবাড়ির মত দুর্গাপুজা হয়। দিল্লির বাঙালিরা যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ‘শুভ বাংলা নববর্ষ’ করে তাহলে বাংলার সংস্কৃতির গভীরতা আমরা জানান দিতে পারি। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরা যেভাবে গুরু পরব করে।‘’        
আহা যদি একটা মিছিল করতে পারতাম! অথবা এমনটা কি ভাবা যায় সারা বিশ্বের বাঙালি ১লা বৈশাখ ‘শুভ নববর্ষ’ উদযাপন করবে পরস্পরে হাতে হাত রেখে। যে ভাষায় সংহতি দিবস পালন করা হয়। সেখানে কোনও ধর্ম থাকবে না। সম্প্রদায় থাকবে না। থাকবে শুধু মানুষ। মানব বন্ধন বলতে পারেন। আমি মানব শৃঙ্খল বলার অনুমতি চাইছি আপামর বিশ্বের বাঙালির কাছে। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার পর নায়।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা যায় কিনা সেই প্রশ্ন নিয়ে এই বাংলার দু’একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বললাম। প্রায় সকলেই একমত বর্তমান সময়ে ‘বাংলা নববর্ষ’ আমাদের স্বত্বা চেনাতে সাহায্য করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, কেন্দ্রীয়ভাবে কোনওদিন সেভাবে করা যায়নি। কারণ এআইসিসি এবং পিসিসি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে দেশের জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছেন সব থেকে বেশি মানুষ। সেটা স্বাধীনতার আগে হোক বা পরে। মান্নান সাহেব আরও বলেন, ‘’তবে বাংলা নববর্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে করা উচিত। কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক শাখা সারা রাজ্য জুড়ে বাংলা নববর্ষ উৎসব ব্যাপকভাবে পালন করতে পারে। এই ধরণের উৎসবে নানা বর্ণের মানুষ সামিল হয়ে থাকে। এখানে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ থাকে নাকোনদিন ছিলও না। হালখাতার অনুষ্ঠানে সব মানুষ সামিল হয়। এটা আমার মত বাঙালিদের কাছে উৎসবেরমত। সমস্ত বাঙালির অহংকার এই উৎসব।‘’
 পরে কংগ্রেসের প্রবীন এবং বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা যুক্তি দিয়ে বোঝান বাংলা নববর্ষ কংগ্রেস রাজ্য জুড়ে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে করলে দলগতভাবে যেমন লাভ। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সামাজিকভাবেও কংগ্রেস লাভবান হবেকংগ্রেস এই উৎসব পালন করলে কংগ্রেসের অনেক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধুতি পাঞ্জাবী পরে পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলার এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রভাবিত করতে পারবে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দলের এক অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েছেন। রাজ্যে দলগতভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বাংলা নববর্ষ’ উদযাপন করার জন্য। সূত্রের খবর তৃণমূল কংগ্রেস সারা রাজ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক নেতা বললেন, ‘’আমরা আইপিটিএ আন্দোলনের সময় থেকেই ‘বাংলা নববর্ষ’ পালন করি। নিশ্চয়ই দলগতভাবে নয়। সাংস্কৃতিক শাখা এই ধরণের অনুষ্ঠানে সামিল হয়। ৩৪ বছরের বাম জমানায় যে সব ছোট ছোট দোকান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এই অনুষ্ঠান করেছে তাঁরা আমাদের গণ সংগঠনের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। গেরুয়া ঝড় আটকাতে দিদিভাই কি করছেন?’’ কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি রামনবমী উৎসব উপলক্ষে বলেছেন, ‘’ভারত এমনই একটা দেশ, যে দেশে ইন্দ্রধনুষের বৈচিত্র আছে। আমার এই দেশে সব ধর্মের এবং সংস্কৃতির গভীরতা রয়েছে। সেই গভীরতার ঝলক আমি সারা দেশে দেখতে পাই।‘’
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে। কলকাতায় একটি রাজনৈতিক দলের রামনবমী উপলক্ষে পরপর দু’দিন মিছিল। বড় থেকে শুরু করে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে ছিল তরোয়াল, ত্রিশূলের মত ধর্মীয় অস্ত্র। বিরোধীরা এই মিছিলের মধ্যে দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা দেখতে পাছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘’দেশ চূরান্ত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যারা আন্তরিকভাবে রামনবমী পালন করে আসছেন সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নায়। কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় রামমন্দির গড়ে তোলার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে সব শিবির হয়েছে সেখানে রামমন্দির নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। রাজ্যে রামরাজাতলা অনেক আগে থেকেই আছে। রামচন্দ্র বাংলার মানুষের কাছে পূজিত হতেই পারেন। সেটা নিয়েও আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে একটি দু’টি শিবির থেকেসেই নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।‘’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, ‘’কেউ রামে আশ্রয় নিয়েছে কেউ হনুমানে আশ্রয় নিয়েছে। যা হচ্ছে সেটা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের পরম্পরা তার বিরোধী। এটা সর্বনাশের পথ। কেউ ওই পথে যাবেন না। একদল বুদ্ধিজীবী অরাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে চাইছেন। এই সময় নীরব থাকা, নিশ্চুপ থাকা আমরা অনুমোদন করতে পারি না। আমাদের দেশ, আমাদের রাজ্য আমাদের সংবিধান আক্রান্ত। ঝান্ডা ছাড়া দলমত নির্বিশেষে শান্তি মিছিল, সভা ইত্যাদি হতে পারে। চূড়ান্ত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত মানুষের কাছে আমাদের আবেদন আপনারা এগিয়ে আসুন। আমরা বামপন্থীরা সঙ্গে আছি।‘’
কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, ‘’ধর্মের নামে বিপজ্জনক এক রাজনৈতিক খেলা।‘’ বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিংহ বলছেন, ‘’তরোয়াল, ত্রিশূল এগুলো আবার অস্ত্র নাকি? এখন আগ্নেয়াস্ত্র হচ্ছে অস্ত্র। যে মিছিল রামনবমী উপলক্ষে হয়েছে এই ধরণের মিছিল আগেও হয়েছে।          
এই বাংলার ভাবার সময় এসেছে। পণ্য সংস্কৃতি উৎপন্ন এবং পরিবেশন যারা করছেন তাঁরা তাঁদের ব্যবসার অভিমুখ সময় উপযোগী করবেন। এবং শিল্প বাণিজ্য মহল তাঁদের ব্যবসা করার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেবার তাঁরা নেবেই। কিন্তু বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই বাংলার নতুন প্রজন্মের বুধিজীবীরা কি ভাবছেন? গত কয়েক বছরে বাংলা সহ সমস্ত দেশে দলিত সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষেরা কেমন আছেন? সম্প্রতি (৪ এপ্রিল, ২০১৭) ‘কাউন্টার ভিউ’ পোর্টালে রাজীব শাহ লিখছেন। আসুন সেই ছবি আমরা পড়ি।
‘’National Campaign on Dalit Human Rights (NCDHR), the apex body of India’s Dalit rights organizations, has in a report submitted to the United Nations (UN) insisted that the country’s reservation measures “must be extended to Dalits of all faiths, especially to Dalit Christians and Muslims.”
Pointing out that Dalit Christians and Muslims are “presently excluded from the reservation benefits owing to religion-based discrimination”, NCDHR report insists, “The Constitution Scheduled Castes Order 1950, Paragraph 3's religious ban ought to be removed/deleted or amended by Union of India for the extension of Scheduled Castes privileges to Christians and Muslims of Scheduled Castes origin.”
Prepared following consultations with 563 Dalit rights bodies across India with the help of the All-India Dalit Mahila Adhikar Manch, Dalit Ardhik Adhikar Andolan, the National Dalit Movement for Justice, and the National Dalit Watch, the NCDHR report, titled “Joint Stakeholders’ Report on Caste-based Discrimination in India” has been submitted for discussion at the 27th Session of the Universal Periodic Review of the UN Human Rights Council – India, scheduled in May 2017.
A year ago, a 
US State Department report on the human rights situation in India had said that though “some Christians and Muslims were identified as Dalits”, the Government of India had preferred to limit “reservations for Dalits to Hindus, Sikhs, and Jains.”
The US report had come had come following a report submitted in 2014-end to the Narendra Modi government by a high-level committee headed by well-known academic Amitabh Kundu, which 
insisted that “the Dalit Muslims must be taken out of the other backward classes (OBC) list and incorporated in the scheduled caste list.” 
কংগ্রেসের সভাপতি সনিয়া গাঁধিও কি দেশবাসিকে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন? তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন, ’Secularism is more than a majority-minority issue. It is a struggle between those who wish to preserve the essence of their religion and those who seek to deliberately distort that essence.’’
পশ্চিমবঙ্গে ‘বাবু বাঙালি’ গণেরা (হিন্দু এবং মুসলিম-উভয় সম্প্রদায়) নিজেরা উচ্চশিক্ষিত হলেও নিম্নবর্গের মানুষদের শিক্ষিত করে তোলার দায় কোনদিনই নেয়নি। তাই রাজ্যের আপামর মানুষ আজও আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত নয়। এই রাজ্যকে ‘বাম’ আন্দোলনের আঁতুর ঘর বলা হয়। দেশ ভাগের অভিশপ্ত বিছার কামড়ে উদ্বাস্তু জঙ্গমের ঢেউকে এই রাজ্য আপন গড়িমায় জায়গা করে দেয়। তাই হয়তবা ‘জাতিভেদ’ প্রথার বিরুদ্ধে কোনও সচেতন দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে ওঠেনি আমাদের পশ্চিমবঙ্গেহয়তবা এই কারণেই জ্যোতিবা ফুলে, ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর অথবা রামস্বামী নাইকার পেরিয়ারের মতো নেতা আমাদের রাজ্য পায়নি। পাশাপাশি এটাও আরও একটি বাস্তব যে ‘মারাঠি’ অস্মীতার স্বত্বা নিয়েও মহারাস্ট্রে যে আন্দোলন (ধ্বংসাত্বক হোক বা আত্মরক্ষার প্রয়োজন) গড়ে উঠেছে তাও এই বাংলায় দেখা যায়নি। ‘মারাঠি’ জাতির স্বঘোষিত সেনা নায়ক বাল কেশব ঠাকরের বা বাল ঠাকরের মতো দীর্ঘ পুরুষও এই বাংলা পায়নি।            

সেই শুন্যস্থানে বাঙালির বারমাসে তের পার্বণের মধ্যে ‘বাংলা নববর্ষ’ ‘শারদ উৎসব’ এর মত আলো, প্যান্ডেল, থিম ইত্যাদির ভীড়ে আজও আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠেনি। এই জন্যই সম্ভবত ‘বাংলা নববর্ষ’ কে আলাদা করে নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের সঙ্গে দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আজ এই বাংলায় চৈতন্য, গুরু নানক, কবির, গৌতম বুদ্ধের খুব প্রয়োজন।  গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রের প্রশ্রয়ে নববর্ষের দিন বাঙালি সকাল সন্ধ্যে শুধুমাত্র ‘টিভিঘরে’ লাইভ অনুষ্ঠানে নিজেদের বন্দী না রেখে শুরু হোক প্রভাত ফেরি। আছেন, ছিলেন থাকবেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু, রামমোহন, বিবেকানন্দ, কাজি নজরুল, মুজতবা আলি, হেমন্ত, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পুরনো দিনের গান। কান্তকবিরাও ফিরে আসুক আধুনিক কন্ঠশিল্পিদের বৃন্দগানে। এ বছর দিনটা উৎসব মুখর হোক কীর্তন, বাউল, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি সহ বিভিন্ন ঘরানার লোকগীতি হোক। বাচিক শিল্পিরা দায়িত্ব নেবেন বৈশাখকে মনে করিয়ে দিতে। গানে, কবিতায়, ব্যানারে, ফেস্টুনে, ফ্লেক্সের কথামৃত হোক শুধু বাংলায়। সূর্যালোক আলিঙ্গন করুক স্পর্ধাকে। বাঙালির ঔদ্ধত্যকে। বাঙালির ঞ্জানকে। আপামর বাঙালির উদারতাকে। শুভ নববর্ষ ১৪২4.

Sunday 2 April 2017

চন্দ্রালোকিত টিলা

চন্দ্রালোকিত টিলা: 

আমার বাড়ির কয়েক ছটাক দূরে
ওই দেখা যায় লাল মাটির সরান, মহুল ফুলের
উথাল পাথাল ঘ্রাণ। শিমূল শাখে নতুন পাতার কোলাহল।
কেউ কেউ বলে এখানে কোলাহল থেমে গেছে।
তা কেন? প্রেম এসেছিল সেই কোন বিহান বেলায়।
সূর্য কোলাহলে উত্তাপ ছিল
চন্দ্রালোকের স্নিদ্ধতায়। প্রেমে আছে ঐশ্বরিক স্নিদ্ধতা।
অনেকে বলে প্রেম আসে যৌন আলিঙ্গনে।
কোথায় যে যাই? কার কথা বিশ্বাস করি?
সেদিন দেখলাম বুড়ো আমগাছটায় কতশত
সবুজ আম। গাছের ডাল ঝুঁকে গেছে।
ওই বিদেশের সাদা বকেরা ফিরে গেল,
বলে গেল আ-মরণ আমার! বুড়ো গাছের জৌলুস দ্যাখ।
প্রেম এসেছিল কোন বিহান বেলায়।
আমার বাড়ির কয়েক ছটাক দূরে
ওই দেখা যায় নাগরিক পাহাড়ের টিলা।
আজও সেই টিলার মিঠে-তেতো নীম গাছটায়
নীম ফল হয়?
আজও কি সূর্য কোলাহলে উত্তাপ আছে?
এখানে কোলহল থেমে গেছে,
গঞ্জ শহরটায় বুড়ো কোকিলের ডানায়
পলাশের স্পর্শকাতর পাঁপড়ি।
প্রেমে আছে ঐশ্বরিক স্নিগদ্ধতা।
আবার কোলাহল হবে সূর্যালোকের বর্ণচ্ছটায়,
গ্রাম্য মেঘের রঙিন ঘোমটায় শহর বারান্দায়,
বহুতল বাড়ির চিলেকোঠায়।