Saturday 30 April 2016

বাংলার চতুষ্পাঠী

বাংলার চতুষ্পাঠী

দীপেন্দু চৌধুরী 


আকাশ সেদিনও খোলা আজও চিরঅম্লান আহ্বানে উন্মুক্ত। তবুও এক সুদৃঢ় শৃঙ্খলায় আমাদের জানান দিচ্ছে, বিশৃঙ্খল সাময়িকভাবে বাহুল্যহীন মনে হতে পারে। স্থায়ীভাবে কি সম্ভব? ঠিক তেমনি স্বাধীনতা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে বিশৃঙ্খলা নয়। সম্প্রতি ‘সোশাল মিডিয়ায়’ একটি দুটি অপ্রয়োজনীয় পোস্ট নজরে পড়ছে। এই সব লেখা সামাজিক জীবনে ব্যপক দূরত্ব তৈরি করতে সহায়ক হয়। ধরা যাক কোনও এক নাট্য ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত এমন অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তি। এই সব ব্যক্তিদের পরস্পরের ধারাবাহিকভাবে কয়েক দশকের সুসম্পর্ক আছেকেউ সোশাল মিডিয়া ব্যবহার এবং উপভোগ করেন কেউ কেউ করেন না। তবুও বর্তমান ‘লক্ষ্মী চঞ্চলা’ সময়ে একটা ‘শৃঙ্খলা’ খোলা আকাশের উদার ন্যায় নীতি মেনেই চির বহ্নিমান হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ‘ফেসবুকে’ শ্রদ্ধেয় নাট্য ব্যক্তিত্ব শাওলি মিত্রকে নিয়ে একটি অবাঞ্ছনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় লেখা আমার নজরে পড়েছে। যদিও আমি লেখাটি শেয়ার করিনি। এবং করতেও চাই না। আমাদের অসময়ে এই সব ব্যক্তিরা আড়াল থেকে কাউকে বুঝতে না দিয়ে ভালো কিছু করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকেন। তিনি এবং তাঁরা এসএমএস করেন ‘তোমরা ভালো থেক’। ‘তোমার নতুন কাজের শুভ কামনা করিসাফল্য কামনা করিএই সব ব্যক্তিরা ‘নাথবতী অনাথবত’ হয়েই থাকেন। বছর চারেক আগে শাওলীদির সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি তাঁর সঙ্গে বিগত মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। তাঁর এক সহকর্মী তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত যোগাযোগ রাখছেনতাই ব্যক্তি শাওলী মিত্র   তিনি ‘বঙ্গশ্রী’ উপাধীতে ভূষিত হলেন না ‘নাট্যশ্রী’ তে ভূষিত হলেন সেটা তাঁদের মত ব্যক্তিত্বদের কাছে কিছু এসে যায় না। নাট্য ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা এবং বাংলার নাট্য আন্দোলনে তাঁর কতটা অবদান সেটা আজ ইতিহাস। সম্ভবত তিনি ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করেন না। আর যারা আমাদের আঁধার মানিক সস্তায় উপহার দিতে চান তাঁদের আলিঙ্গনের আহ্বান জানিয়ে বলছি, সোনার হাঁস চিনতে জানালেন না। ‘পাভলভ’ তত্বের ঘণ্টা কি করে বাজাবেন? হয় নিজেদের সংহত করুন না হলে নাট্য অ্যাকাদেমির শুকনো বাগানের পরিচর্যা করুন। বাগানের রঙ দেখার কি দরকার?  আপনি বা আপনারা কি করবেন সেটা বলা মানে খোলা আকাশের আন্তরিক আহবানকে অবঞ্জা করা হয়! ‘কানা ছেলের নাম পদ্ম লোচন’। গত কুড়ি কুড়ি বছর আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে নাটক ওয়ালাদের ‘বহুরূপী’ মঞ্চের দর্শক আসনে স্থান পাওয়ার যোগ্যতা হয়নি। এবং একই সঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই নিজের সত্য-অসত্য ‘সংলাপ’ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম ‘রুদ্ধ সংগীত’ শোনার রুদ্ধ দ্বার আজও খোলার অবকাশ পাইনি।  কেউ কেন যেন বারে বারে বলে ‘এখনো গেল না আঁধার, এখনো রহিল বাঁধা’। ‘নাট্যজন’ সমাজের বাইরে থেকে চিনেছি অনেক অনেক আলোক বর্ষের তারকাদের। মানবতার কাজ করতে গেলে নির্দিষ্ট কোনও পাত্র বা জলাধারের কি প্রয়োজন? মানবতার কি কোনও পদবী হয়? কোনও পুরষ্কার দিয়ে বলতে হয়, ‘আপুনি মানবতার জন্য কাজ করুন গা’নাট্য ব্যক্তিত্ব হতে গেলে ‘পানিপার’ ও হতে হয়। বলা শোভা পায় না ‘আমি কি পানি পার’? বাল্কল পড়ে যে সব প্রণাম্য ব্যক্তি বাংলার রঙ্গালয় গড়ে দিয়ে গেছেন। তাঁরা জল বয়ে আনা থেকে ‘বারবণিতাদে’র বাংলার নাট্য মঞ্চে নিয়ে এসে নাট্য সেবক তথা নাট্য সেবায়েত করে গড়ে তুলেছেন। পরে এঁরা সকলেই নাট্য পূজারী হয়েছেন।                             
‘এক পুরুষে করে তিন পুরুষে খায়’ এই প্রবাদটার ব্যবহারিক উপযোগিতা কি সব সময় পাওয়া যায়? এই বাংলার কিছু স্বনামধন্য পরিবার আছে। তাঁরা তিন পুরুষ, চার পুরুষ এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে এই বাংলার নীল আকাশের নীচে আমাদের আলো দিচ্ছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়,      শম্ভু মিত্র, ঋত্বিক ঘটক, অমর্ত্য সেন, নরেন দেব, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেন গুপ্ত, উৎপল দত্ত, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, কমল কুমার মজুমদার, প্রফুল্ল সরকার, (পৃষ্ঠপোষক)  ইত্যদি। প্রতি মুহূর্তে  স্মরণযোগ্য এইসব পরিবারকে আমাদের ‘বাংলার চতুস্পাঠিতে’ ব্যকারণ পড়াতে এবং পড়তে লাগবেই। চারদেওয়ালের চারপেয়েতে বসেও বলা যায় ‘আমি যাবই বাণিজ্যেতে যাবই’।
নাটকে রাজনীতি সেদিনও ছিল আজও আছে। উৎপল দত্ত সম্পাদিত ‘এপিক থিয়েটারে’র বিশেষ সংখ্যায় (১৯৮১) ‘রাজনৈতিক থিয়েটার ও আত্ম সমালোচনা’ প্রবন্ধে হীরেন ভট্টাচার্য লিখছেন, ‘’এদিক থেকে দেখতে গেলে রাজনৈতিক থিয়েটার আগেও ছিল এখনো আছে। বাংলা নাটকের উদ্ভবপর্বে রামনারায়ণ-মাইকেল-দীনবন্ধুর নাটকে সামন্ত ব্যবস্থা বিরোধী, প্রগতিশীল, সেক্যুলার সারবস্তু ছিল তা অবশ্যই রাজনৈতিক কেননা তাতে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সার বস্তুরই শিল্পরূপ আমরা পাই। পরবর্তীকালে গিরিশ-অমৃতলালের যুগে নাটকে একই সংগে যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রগতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক প্রশ্নে নানা পরাগগতির চিহ্ন দেখা দিয়েছিল তাও রাজনৈতিক বিষয়ই। পরাগতির দিকটাও রাজনৈতিক পরাগতি বলেই ধরতে হবে, কেননা তাতে বুর্জোয়া শ্রেনীর বিপ্লবের দিকস্থিতি (অরিয়েন্টেশান) পরিবর্তনের প্রতিফলনই ঘটেছিল। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের নাটকেও উদ্ভবপর্বের রাজনৈতিক চিন্তার ফলগুধারা তাঁর শেষ পর্বের (রথের রশি ইত্যাদি) নাটকে ফলগুতত্বের অবগুণ্ঠন ত্যাগ করে প্রকাশ্যেই প্রবাহিত। এ যুগেই মন্মথ রায়ের ‘কারাগার’ পৌরানিক নাটকের বাতাবরণে সম্পূরণতই রাজনৈতিক নাটক। (হতে পারে তাতে গান্ধিবাদের প্রভাব রয়েছে, কিন্তু গান্ধীবাদও একটি রাজনৈতিক মতবাদ)। তারও পরবর্তীকালে গণনাট্য আন্দোলন তো রাজনৈতিক থিয়েটারকেই তার ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছে। আজকের দিনে পশ্চিমবংগে যে অসংখ্য গ্রুপথিয়েটার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এরা প্রত্যেকেই তাদের রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকেই নাট্যরুপে উপস্থিত করছেন! এটা হতে পারে যে রাজনৈতিক চিন্তাধারার ক্ষেত্রে সকলেই ঠিক এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই।‘’ (পৃষ্ঠা- ৫৪)

বাংলার অচল পয়সা নিয়ে খেয়াল তামাশা করার সময় আমরা সম্ভবত পেরিয়ে এসেছি। ধ্রুপদী বাংলার তান গত দু’বছর আগে টান টান ভৈরবী সুরের পল্লবিত লহমায় বাধাঁ শুরু হয়েছে। আপনি বা আপনারা সেই যঞ্জে সম্মিলিত হবেন কি হবেন না সেটা অবশ্যই ‘বৃহন্নলা’ কাহিনীর চিত্রনাট্যে লেখা থাকবে। অবঞ্জা ঞ্জাত সারে হোক অথবা অঞ্জাতসারে। তাম্বুক সেবন করে হোক বা স্বাস্থ্যবিধি সচেতনতায়অথবা ‘সবার চৈতন্য’ হোক এই গরিমায়। আপনাদের আস্তেই হবে নব ‘বাংলার চতুস্পাঠি’তে।         

Thursday 28 April 2016

গণতন্ত্রের পরিভাষা

সবিনয় নিবেদন,
আপনাদের সমীপে অবান্তর আলাপ করার ঔদ্ধত্য দেখাতে সাহস করে উঠলাম ‘সামাজিক সাংবাদিকতা’ (Social Media) এর খোলা বাতাসের প্রশ্রয়ে। নিজের বাড়বাড়ন্ত দেখানোর অনধিকার চর্চা না করে শুধু এই কথাটা রাখব। রাখব অযত্নলালিত ‘শিল্পসংস্কৃতির’ এক উঠোন আড়ম্বর প্রশ্রয়ে।
আকাশের সঙ্গে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যোগ্যতা নেই। আবেগ কখন ঘুমিয়ে পড়ল। তবুও বড় কথার মানুষ নেই পাশে। বাতাসের সঙ্গে বেড়াতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গাছেরা বড় শান্ত। প্রশ্রয় দেবার আকাশে তারা নেইত। আজ নেই। সেও না হয় মেনে নেবার অবকাশ খুঁজে নেওয়া যাবে। মাকড়সার আঠা মাখানো শিল্পীর তুলিতে আঁকা বহুকথিত সমাজ আছে। আপনারা কি একমুঠো প্রশ্রয় দেবেন? আপনাদের তিলত্তমা প্রশ্রয়ে যদি নিজের অবস্থান হয়, জানি অচল পয়সার মত নিজেকে আড়াল করতে করতে শুনতে হবে। কেটে পড়ুন মশায়। সটান এবং সপাটে বলতে চাই, বুদ্ধবাবু হেলে নয় ‘কেউটে’ ধরেছেন। বুদ্ধুবাবু হেলেও ধরতে পারেন। কেউটেও ধরতে পারেন। যার কথা ধার করে লিখলাম তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে বমাপন্থী দলে নেই। কিন্তু চাষার ব্যাটা রেজ্জাক মোল্লা, সিপিএমের উত্তর অনিল বিশ্বাস যুগে ‘দ্বন্দমূলক বস্তুবাদ’ বোঝার অন্যতম কারিগর। আমি জানিনা, আমার মত জনপদের সাংবাদিককে রেজ্জাকদার মনে আছে কিনা। আমার মত ‘হারমাদদের সর্দারকে’ রেজ্জাকদা কতটা মনে করতে পারবেন। সেই রেজ্জাকদার কথা উল্লেখ করেই বলছি, বুদ্ধুবাবু কেউটে ধরেছেন।
কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধির শৈশব, কৈশোর আক্রান্ত। তিনি এক বাঁও, দো বাঁও গুনতে গুনতে এগিয়ে আসছেন দেশের যোগ্য নেতা হওয়ার দাবিতে। বুদ্ধবাবুকে এদিন যতটা আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল বহু বছর এই আবেগ দেখা যায়নি। যে কথা তিনি তাঁর তাত্ত্বিক বক্তব্যের ভাঁজে ভাঁজে বুঝিয়ে দিতে চেস্টা করেছেন।     
কিছুদিন আগে ‘মানুষের জোট’ গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছিলাম হাজরা পার্কে ‘কংগ্রেসের সভা মঞ্চে’ দীপা দাশমুন্সির পাশে একসঙ্গে কি বুদ্ধবাবুকে দেখা যাবে? আমার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে। ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ কলকাতার ‘পার্ক সার্কাস’ ময়দানে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যৌথ নির্বাচনী প্রচারসভা ছিল। মঞ্চে হাজির কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধি সহ এক ঝাঁক প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা নেত্রী এবং অবশ্যই দীপা দাশমুন্সি। সিপিএমের কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ কয়েকজন সিপিএমের যুব নেতা।
সিপিএমের রাজ্য কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীকে ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত এই বাংলার বৃহত্তর স্বার্থে ‘কংগ্রেসের সভামঞ্চে’ বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতাকে পাঠানোর জন্য। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিকেও ধন্যবাদ। যদিও এর আগে কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গাঁধির দুটি জনসভায় সিপিএম প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারছি, বুদ্ধবাবুকে কংগ্রেসের সভায় পাঠানোর জন্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ ক্ষুব্ধ। এই বিষয়ের সাংবাদিকদের  প্রশ্নের মুখে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন বলেছেন, ‘’পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই এখন বাস্তব প্রয়োজন। মানুষ যা চাইছে, উপর তলায় তারই প্রতিফলন ঘটছে। তা ছাড়া বুদ্ধদেব এখন পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন।‘’
  ক্ষোভের কারণ যাই থাক। যে দলের ‘লৌহ কপাট’ ভাঙ্গছে সেই দলের ‘ক্ষোভ’ বাইরে আসা মানে বৃহত্তর গণতন্ত্রের পরিভাষা তৈরি হওয়া। কারণ পরিভাষায় গণতন্ত্রকে বলা হয় ‘বৃহত্তর সাধারণ মণ্ডল’ ইংরেজিতে ‘The greater common good’কিন্তু এর পরে কি? আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরে বাংলার ‘জনতার আদালত’ রায় দেবে। সম্প্রতি একটি সূত্রে জানতে পারলাম রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতৃত্ব এই মুহূর্তে সরকারে যেতে আগ্রহী নয়। দলের কয়েক জন প্রথম সারির শীর্ষ নেতা দলটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে আগ্রহী। যতটা সম্ভব ‘বেনো জল’ বের করে দলটার খোল নলচে বদলে দিতে চান এইসব নেতৃত্ব। সেই কারণে আগামী দুবছর বামপন্থিরা ‘বিরোধী’ আসনে বসে ‘দায়িত্বশীল বিরোধী’ দলের ভূমিকায় নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। বাংলার ‘শিল্পায়ন’ ‘গণতন্ত্র’ এবং বাঙ্গালির মূল্যবধকে তার স্ব মহিমায় ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী এই গোষ্ঠীটি। সম্ভবত খুব সঠিক সিধান্ত। কারণ দলের পুরনো কিছু ‘বেনোজল’ আবার মাথা তুলতে চাইছে। দাঁত নখ বের করে তাঁরা নিরীহ মানুষের উপর খবরদারি করতে চাইছে। রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে একদল ‘কংগ্রেসের মূল্যবোধে’ বিশ্বাস করে এমন নতুন যুবক-যুবতি এই বাংলার উন্নয়ন দেখতে চাইছে। সময় বলব কোন গাছের ছায়া শীতল হবে।      
যদিও আমারা জানিনা ১৯ মে কি হবে। ‘সোসাল মিডিয়া’ মারফৎ  বামপন্থীদের একটি সান্ধ্য দৈনিকে দেখালাম ‘জোট’কে দেওয়া হয়েছে ১৬৭ টি আসনআর তৃণমূলকে দেওয়া হয়েছে ১২৭টি আসনএই হিসাব ধরলে বিজেপি সহ অন্য দল গুলি শূন্য। যদি ধরে নেওয়া যায় কাগজটি তার পাঠককে টার্গেট করে এই খবর করেছে তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু এই হিসাব ধরে কোনও আহাম্মক ‘উত্তর সম্পাদকীয়’ লিখবে না। মূল্যবোধ আছে এমন উচ্চ শিক্ষিত কিছু নির্বাচিত ‘তৃণমূল’ বিধায়ক নতুন ঘরানায় না থেকে অন্য কিছু ভাবতে পারেন। বিগত পাঁচ বছরের মূল্যায়ন করে এই সব নব নির্বাচিত তরুণ বিধায়করা পূর্বাশ্রমের মঞ্চে ফিরে আসলেও অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না। সর্বপরি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নিজের দায়িত্বে ভোট চাইছেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তিনি আবার নিজে পরখ করে দেখতে চাইছেন। এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ‘বিজেপি’ তাদের আসন সংখ্যা বাড়ানোর সব রকম প্রচেষ্টা করছে। বেশ কয়েকটি আসনে তুল্য মূল্য বিচারের লড়াই আমরা দেখব। পাশাপাশি থাকবে এসইউসি, নকশালপন্থীর মত দল। 
গত প্রায় চার দশকের পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে জটিল অবস্থা সম্ভবত মানুষের মূল্যবোধের। ১৯৭৭ সালে বাম্পন্থীরা যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন দীর্ঘকালীন লড়াইয়ের কারণে সামাজিক মূল্যবোধের কারণটা ছিল অনেক অনেক গভীরে। উদবাস্তু জীবনের স্বজন এবং দেশ হারানোর একটা নিবিড় যন্ত্রণাও ‘বাংলার সংস্কৃতি’ গড়ে ওঠার কারণ ছিল। পশ্চিমের হাওয়ার ঝাপ্টাকেও মনে রাখতে হবে। ফরাসী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব এই দেশে তথা এই বাংলায় ব্যপকভাব দেখা যায়। তার কিছুদিন আগেই ‘তে ভাগা আন্দোলন’ ছুঁয়ে এসেছে এই বাংলা। কৃষক আন্দোলনের নেতারা এই সেদিন পর্যন্ত কমরেড লেনিনকে উধৃত করে লিখেছেন, We are told: ‘’If the peasants seize the land now, it is the richer peasants who will get it those who have animals, implements etc.; would this, therefore, not be dangerous from the point of view of the poor peasants.’’ Comsade, I must dwell on the argument, because our party, in all our divisions, programs and appear to the people, dulaares: ‘We are the party of wage-workers and poor plasants’,  it is their inbereals we are to protect; it is through them, and through them alone, through those clause, than mankind can excape the horrors (First Congress of peasant deputies-Vol, 24, page 402)বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সত্তরের দশকেও রবীন্দ্র উত্তর যুগে ‘বামপন্থী সংস্কৃতির’ সঙ্গে ‘জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতির’ সংঘাত থাকলেও বাংলা তথা বাঙ্গালির ‘মূল্যবোধ’ ভেঙ্গে পড়েনি। বিশ্বায়ন সংস্কৃতির যতই দাপট থাক পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসব কেন? এই প্রশ্ন তুলে আমরা চণ্ডী মণ্ডপে, পাড়ার রকে, চায়ের দোকানে, অশ্বত্থ গাছের ছায়া শীতল বৈঠকি আড্ডায় মশগুল ছিলাম। পারিবারিক, সামজিক আভিজাত্যের অহংকারে।
কিছুদিন আগে উচ্চ শিক্ষিত এক প্রবীণ মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। একটি পাক্ষিক পত্রিকার অফিসে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় বললাম, আগে পরস্পরকে চিনি। সামাজিক সম্পর্কটা আগে হোক। তারপরে রাজনৈতিক বিষয়টা আলোচনা করা যাবে। তিনি অট্টহাসিতে আমাকে আলিঙ্গন করে বললেন, ‘’অসম্ভব ভালো কথা বলেছেন। আজ আমাদের প্রয়োজন পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করা। সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা। সুনন্দ সান্যালের মত অধ্যপককে যদি অসম্মান করা হয় সেটা আপনারা মেনে নিতে পারেন আমরা মেনে নিতে পারব না।‘’

পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সব স্তরের নাগরিকের। কোনও একটি দলের কয়েকজন নেতার দায়িত্ব নয়। কংগ্রেস, বামপন্থীরা যেমন করে ভাবছে, তৃণমূল দলের কিছু নেতা সম্ভবত নিজেদের মত করে ভাবতে চাইছেন কিভাবে দলটির পুনঃনবীকরণ করা যায়। প্রায় গত দু’দশকের ঘনঘটা ভুলে ‘পশ্চিমবঙ্গকে’ নতুন করে তোলার শপথ নিতে হবে নির্বাচিত সরকার এবং বিরোধী বেঞ্চের বিধায়কদের। এই ক্ষেত্রে মারটিন লুথার কিংকে আমরা মনে করতে পারি তিনি বলেছিলেন, ‘যে কোনও জায়গায় অন্যায় ঘটলে সেটা সব জায়গায় ন্যায়ের পক্ষে বিপজ্জনক’’                               

Monday 18 April 2016

একটু পা চালিয়ে ভাই

পশ্চিম বঙ্গে মুসলপর্ব কি পেরিয়ে এলাম?
‘নিহিত পাতালছায়া’ কাব্যগ্রন্থে ‘বিপুলা পৃথিবী’ কবিতায় কবি শঙ্খ ঘোষ বলছেন, ‘’একদিন সে এসে পড়েছিল এই ভুল মানুষের অরণে্য।/ হাতে তাদের গাঁ ছুঁতে গিয়ে কর্কশ বল্কল লাগে বারে বারে।
আজ মনে হয় কেন সে গিয়েছিল। সে কি ভেবেছিল তার চিকন মোহ উদ্ভিন্ন করে দেবে অন্ধকারের শরীর? সে কি যেন মেঘলা জল কালো বনের মাথায়? প্রতিটি পাতা তার নন্দন বরণ করে নেবে সবুজ কৃতঞ্জতায়? আঙুরের আভার মতো দৃষ্টি-ধুয়ে-দেওয়া প্রান্ত বেলা?
আজ মনে হয় কেন সে ভেবছিল। সেই অরণ্যের মধ্যে সেও এক তামসী বৃক্ষ যে নয়, এই কি তার জীবন?’’

চতুর্দশ বিধানসভার শেষ অধিবেশনে আমি একটি প্রথম সারির দৈনিক সংবাদ পত্রের সাংবাদিক হিসাবে বিধান সভায় হাজির ছিলাম। ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ছিল বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বিধানসভার অধিবেশন। এই অধিবেশনে প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট বক্তব্য রেখেছিলেন নিজের আসনে বসে। কি বলেছিলেন তিনি? আমি যতটা নোট নিতে পেরেছিলাম, ‘’১৯৭৭ সালের মে মাসে প্রথম নির্বাচিত হই। জ্যোতি বসুর ক্যাবিনেটে আইনমন্ত্রী ছিলাম। ‘পরিবর্তন’ এর কথা খুব প্রচলিত হয়েছে। ‘পরিবর্তন’ কোনদিন কখন কোথায় হবে? ১৯৯৭৭ সাল থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামের কি অবস্থা ছিল? গ্রামজীবনে সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে। সব করেও আবার পরিবর্তন থাকবে। কী পরিবর্তন? ব্যক্তি না নীতির পরিবর্তন? মানুষের স্বার্থে কোন পরিবর্তন দরকার? যত কাজ হবে তত ঘাটতি থাকবে। যারা নবনির্বাচিত হয়ে আসবেন তাঁদেরও শিক্ষা, শিল্প সব বিষয়ে দেখতে হবে। আশা করব আমার জায়গায় যোগ্য লোক আসুন। আমি গর্বিত এতদিন এই পদে থাকতে পেরে। আমরা নতুন নতুন জিনিস আনতে পেরেছি। সরকার কিভাবে কাজ করবে তার নিরদেশ দেওয়াই আমাদের ভূমিকা। নতুন প্রজন্ম আসবে তাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হোক। ১৫৮টা আইন করতে হয়েছে আমাদের। ১৮ বছরের ভোট দেওয়ার অধিকার এই রাজ্যে প্রথম। পশ্চিমবঙ্গ যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে আরও সভ্যতা আনা দরকার। সমাজ পরিবর্তন সংসদীয় গণতন্ত্রে হবে কিনা জানি না। আংশিকভাবে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে আমি কৃতঞ্জ। তিনি যেভাবে সাহায্য করেছেন। বিরোধী দল নেই। তবুও বলব পার্থবাবু সব সময় সাহায্য করতে পারেননি। আবু হেনা এবং কংগ্রেসের দু’একজন শীর্ষস্থানীয় বিধায়ক সাহায্য করেছেন। সংসদে মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। ভাঙচুর, অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা ঠিক নয়। 
আমি আশা করব কেউ চিরস্থায়ি নয়। দেশ মানুষের থেকে বড়। এই বিধানসভা আমার থেকে বড়। কিন্তু এখনকার রীতিনীতিকে মর্যাদা দিতে হবে। বিরধীদলের কোন স্বীকৃতি ছিল না। তখন ওদের ৪৮ জন সদস্য ছিল না। বিরোধী দলের নেতার কোনও স্ট্যাটাস ছিল না। জ্যোতিবাবুকে বলে ৩০ জনের দলকে বিরোধী দলের স্বীকৃতি দেওয়া হল। আমি আশা করব আগামীদিনে সভা আরও উচ্চতায় যাবে। আমি আশা করব বিধানসভা আরও দায়িত্বশীল হবে। শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে দিন। আমার আবেদন আপনাদের সকলের কাছে।‘’   
২০০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ এর কোনও অধিবেশনে উপস্থিত থাকার মতো সৌভাগ্য আমার হয়নি। এবছর আবার এই রাজ্যে বিধানসভার ভোট। গত দু’বছর আগের একটি শ্লোগান সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ফিরিয়ে এনে সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহার করছে। ‘পরিবর্তন’ তো অনেক হল এবার প্রত্যাবর্তন এর পালা’। এই শ্লোগানটির সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি। এবারের বিধানসভার ভোট তরুণ প্রজন্মের কাছে এক নতুন অভিঞ্জতা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই। সার্বিকভাবে দীর্ঘায়ত এক অচেনা অশুভ শক্তির সঙ্গে শুভ শক্তির যুযুধান লড়াই। এই লড়াইয়ে দু’টি ভিন্ন মেরুর রাজনৈতিক দল জোট করেছে। কংগ্রেস-সিপিএমের জোট গঠন নিয়ে যতই চাপানউতোর হোক। বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নতুন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১৯৩৬ সালে ভারতের কমিউনিস্টরা সাময়িকভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কমিউনিস্টরা মূলত তিনটে থেকে চারটে দলে ভাগ হয়ে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ১৯৭৭ থেকে ২০০১১ যে সভ্যতায় আমার বড় হলাম। গ্রাম-বাংলার মুখে ভাষা এল। নিম্ন বর্ণের মানুষ স্বাধীনতা পেল। বর্গাদার আন্দোলন স্বীকৃতি পেল। গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নতুন এক সভ্যতা চিনতে এগিয়ে এল। এই দীর্ঘ সময়ে কেন্দ্রে বেশিরভাগ সময়টাই কংগ্রেস ছিল। গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শাসন নিম্ন বর্গের মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার পথ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু বাতলে দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এবং পরে ১২৯ বছরের পুরনো দলটি বিভিন্ন পরম্পরা বজায় রেখে আপন গরিমায় ভাস্বর থাকতে চেয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে কংগ্রেস যে উল্লেখযোগ্য কাজগুলি করেছেপরপর সাজিয়ে দিলে আসে (১) দেশের ‘গণতন্ত্রকে’ নাগরিক জীবনে আরও উন্নত মানে নিয়ে যেতে সাহায্য করা। (২) জমিদারি প্রথার অবসান। (৩) বৃহৎ শিল্পের পরিকাঠামো এবং পরিবেশ তৈরি করা। (৪) শিল্পনগরী গড়ে তোলা। (৫) ব্যাঙ্ক জাতীয় করণ। (৬) প্রথম শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আই আই টি, আই আই এম প্রতিষ্ঠা। (৭) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।(৮) দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে স্বগরিমায় লালিত্য এবং লাবণ্যে ধরে রাখা। এবং অর্থনৈতিক সংস্কার। এই পর্যায়ে দু’টি ইউপিএ সরকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে আর্থিক সংস্কার যেমন করেছে। অবশ্যই উল্লেখযোগ্য কাজ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যপক সংস্কার। তারমধ্যে অন্যতম খাদ্য নিরাপত্তা আইন বা ১০০ দিনের কাজ। তথ্য জানার অধিকার আইন, শিক্ষার অধিকার আইন। শিশুশ্রমিক প্রথা বিলোপ বিলের প্রস্তাব এবং মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তা বিলের প্রস্তাব। ভারতীয় গণতন্ত্রের বিকাশের এই পর্যায়ে আমাদের দেশ তথা কংগ্রেস পেল এক অত্যন্ত সম্মানজনক নেত্রীকে। আড়াল থেকে নয়। একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁন্ধি।
বাম জামানার দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনে আমরা স্ববিরোধ পরিলক্ষিত করেছি। সিপিএম তথা বাম্ফ্রন্টের মধ্যে এই আদর্শের সংঘাত বাংলার কলমজীবীরা অনেক আগেই চিনতে পেরেছিল। সিপিএমের মধ্যে যে আদর্শের সংঘাত বাংলার মানুষ উপলব্ধি করছিল তারই ফসল কি ২০০১১ সালের তথাকথিত হোক অথবা কথিত হোক ‘পরিবর্তন’? এই প্রেক্ষাপটে কি বলা যায় ৩৪ বছরের এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারতের বিভিন্ন পিছিয়ে থাকা রাজ্য এগিয়ে গেল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে। বিহার, ঝাড়খণ্ডের মত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে সামনের সাড়িতে এসে কড়া নাড়ছে।
তৃণমূল আমলে একদম কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি এটা বলা খুব সম্ভবত নিরপেক্ষ প্রতিবেদকের কাজ নয়। প্রচারের ঢক্কানিনাদ এর অংশটা বাদ দিলে নিজেদের সূত্রে জানা যাচ্ছে রাজ্য সরকারের ‘কণ্যাশ্রী’ প্রকল্প খুব উল্লেখযোগ্য কাজ। ‘খাদ্যসাথী’ও প্রশংসার দাবি রাখে। বিছিন্নভাবে হলেও প্রয়াত ডাঃ সুব্রত মৈত্রের নেতৃত্বে স্বাস্থ ক্ষেত্রে কিছুটা সংস্কার হয়েছে। ডাঃ শশী পাঁজা দায়িত্ব নেওয়ার পর নারী ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের কাজও প্রশংসা দাবি করে। শিল্প এবং বিদ্যুতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও কাজ যে হয়েছে সেটা নজড়ে আসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগঘন আবেদনের সঙ্গে একমত না হয়েও বলতে হবে প্রথম একবছর কাজ শিখতেই নতুন মন্ত্রীসভার সময় চলে গেছে। পাশাপাশি বিরোধী দলের অভিযোগ কৃষি ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের আত্মহত্যা বেড়েছে। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানতে পারছি রাজ্যের চা বাগানগুলিতে খাদ্যের অভাব এবং অপুষ্টিজনিত কারণে ৩৮৩ জন শ্রমিক ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। রাজ্যের অস্থীর পরিস্থিতির সুযোগে নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে এমনটাই দাবি সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি দলের নেতৃত্বের। রাজ্যে নারী এবং কিশোরী পাচারের হার কিছুটা নিম্নমুখী হলেও উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

দু’টি জামানার সময়কাল এবং কার্যকাল পাশাপাশি রেখে আলোচনা করলে কি আংশিকভাবে ‘সভ্যতার সংঘাত’ পরিলক্ষিত হচ্ছে? আলোচনার সূত্র ধরে যদি পিছিয়ে যাই তাহলে ১৮ বছর আগে এই রাজ্যে এক অচেনা সভ্যতা রাজ্যের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার দখল নেয়। ২০১৩ পর্যন্ত এই রাজ্য তথাকথিত সেই সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে যুঝতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বুদ্ধবাবু মনে হয় এসব মেনে নিতে পারেননি। মানতে পারেননি সিপিএম দলের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসও। পার্টি চিঠিতে দলের কর্মীদের তথাকথিত ওইসব বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন তিনি। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় বুদ্ধবাবু বৃহৎ শিল্পের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। হয়ত ভেবেছিলেন শিপ্লায়ন হলে রাজ্যের তথাকথিত সমান্তরাল চালু আর্থিক ব্যবস্থাকে ভাঙ্গতে সক্ষম হবেন তিনিকিন্তু সেই ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে রাজ্যের ‘শিপ্লায়ন’কে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে আটকে দিতে পেরেছিল। এটাকে একধরণের ‘Clash of civilization’ বা ‘সভ্যতার সংঘাত’ই বাল যায় কি? এই প্রসঙ্গে স্যামুয়েল পি হান্টিংটনের ‘Clash of civilization’ বা ‘সভ্যতার সংঘাত’ লেখাটির থেকে কিছুটা উল্লেখ করছি। যদিও বিশিষ্ট সমাজ বিঞ্জানী হান্টিংটন বিশ্ব সমাজ ব্যাবস্থার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তাঁর বক্তব্য বা থিসিস লিখেছিলেন।
‘’ The Clash of Civilizations (COC) is a hypothesis that people's cultural and religious identities will be the primary source of conflict in the post-Cold War world. It was proposed by political scientist Samuel P. Huntington in a 1992 lecture[1] at the American Enterprise Institute, which was then developed in a 1993 Foreign Affairs article titled "The Clash of Civilizations?",[2] in response to his former student Francis Fukuyama's 1992 book, The End of History and the Last Man. Huntington later expanded his thesis in a 1996 bookThe Clash of Civilizations and the Remaking of World Order.
The phrase itself was earlier used by Albert Camus in 1946,[3] and by Bernard Lewis in an article in the September 1990 issue of The Atlantic Monthly titled "The Roots of Muslim Rage".[4] Even earlier, the phrase appears in a 1926 book regarding the Middle East by Basil Mathews: Young Islam on Trek: A Study in the Clash of Civilizations (p. 196).
This expression derives from clash of cultures, already used during the colonial period and the Belle Époque.[5] 

Overview[edit]
Huntington began his thinking by surveying the diverse theories about the nature of global politics in the post-Cold War period. Some theorists and writers argued that human rights, liberal democracy, and capitalist free market economy had become the only remaining ideological alternative for nations in the post-Cold War world. Specifically, Francis Fukuyama argued that the world had reached the 'end of history' in a Hegelian sense.
Huntington believed that while the age of ideology had ended, the world had only reverted to a normal state of affairs characterized by cultural conflict. In his thesis, he argued that the primary axis of conflict in the future will be along cultural and religious lines.[6]
As an extension, he posits that the concept of different civilizations, as the highest rank of cultural identity, will become increasingly useful in analyzing the potential for conflict.
In the 1993 Foreign Affairs article, Huntington writes:
It is my hypothesis that the fundamental source of conflict in this new world will not be primarily ideological or primarily economic. The great divisions among humankind and the dominating source of conflict will be cultural. Nation states will remain the most powerful actors in world affairs, but the principal conflicts of global politics will occur between nations and groups of different civilizations. The clash of civilizations will dominate global politics. The fault lines between civilizations will be the battle lines of the future.[2]
In the end of the article, he writes:
This is not to advocate the desirability of conflicts between civilizations. It is to set forth descriptive hypothesis as to what the future may be like.[2]
In addition, the clash of civilizations, for Huntington, represents a development of history. In the old time, the history of international system was mainly about the struggles between monarchs, nations and ideologies. Those conflicts were primarily seen within Western civilization. But after the end of the cold war, world politics had been moved into a new aspect in which non- Western civilizations were no more the exploited recipients of Western civilization but become another important actor joining the West to shape and move the world history.[7]   ‘’ (Wikipedia)

২০১১ সালের ২৫ মার্চ ছিল বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বিধানসভার অধিবেশন। সেই অধিবেশনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আনুমানিক এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট বক্তব্য রেখেছিলেন। কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। চতুর্দশ বিধাসভার আজ শেষদিন। পাঁচ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, বিল, বাজেট সরকারি-বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বহুমুখী আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্র যাতে আরও প্রসারিত হয় আমরা চেস্টা করেছি। কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাইছি। বিতর্ক হবেই। বিতর্ক মানে বিরোধী দলের বিকল্প ব্যবস্থা তুলে ধরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটনা ঘটেছে। অধ্যক্ষকে অপমানিত হতে হয়েছে। এইসব দুরভাগ্যজনক ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সেসবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও আমাদের অধ্যক্ষ চেয়ারে বসে ঝঞ্জা-বিধস্ত সমুদ্রে সভা চালিয়েছেন। এই ঝঞ্জার মধ্যে স্পিকার সাহেব জাহাজ চালিয়েছেন। ওই জাহাজ চালাতে গিয়ে আপনি দুর্যোগের মধ্যে পড়েছেন। সেই দুর্যোগ থেকে আপনি যাত্রীদের বাচিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাচ্ছি অনুপস্থিত বিরোধীদেরও। সাংবাদিক বন্ধুদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আগামী দিনে আরও শক্তিশালী গণতন্ত্র চালাতে পারি এই দিশা রেখে আমার বক্তব্য শেষ করছি।‘’
এত দীর্ঘ বারান্দায় হেঁটে এসে কয়েকটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে উঠছে। বামফ্রন্ট কি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে? যদি সরকার গঠন করতে পারে তা হলে আগের বামফ্রন্ট   সরকারের করা ভুলগুলি ইতিমধ্যে সিপিএম নিজের দলে এবং বামফ্রন্টগতভাবে চিহ্নিত করেছে। সেই ভুলগুলি কি সংশোধন করা সম্ভব হবে? নীচুতলার কিছু অতি উৎসাহী ‘কমরেড’ ইতি পূর্বে যেসব অতিবাম ঝোঁক দেখিয়েছেন সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তো? আবার যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার করতে হয় সে ক্ষেত্রে ‘প্রত্যাবর্তন’ কিভাবে সম্ভব? যদিও কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে রাজ্য কমিটির নতুন টিম ‘বাম-গণতান্ত্রিক’ মনোভাবাপন্ন শিক্ষিত, কম শিক্ষিত মানুষের মনে আশার আলো জাগাতে পেরেছেন। ১৯ মে আমারা জানতে পারব নতুন সরকার কারা গঠন করছেন। এবং কারা রাজ্যের শিল্পায়নের স্বার্থে, সার্বিক     উন্নয়নের  দাবিতে, সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রকল্পে উৎসাহ দিতে বিরোধী আসনে বসছেন? কারা বাংলার হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী হবেন? যদি এবার ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয় সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে সেই অপেক্ষায় আমরা থাকব। পশ্চিমের উন্নত গণতন্ত্রের মানদণ্ডে সরকার এবং  বিরধী দলের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলায় নতুন ভোর আসুক। নীল আকাশে লাল সূর্যের উদয় আমরা দেখতে অভ্যস্ত। প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিমের আহবান মনে রেখে এই বাংলার দায়িত্ব এবং কর্তব্য নতুন নির্বাচিত বিধায়করা নেবেনতো? কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধি আমাদের ‘ডিগনিটির’ কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ১৮ এপ্রিল, ২০১৬ সালে কান্দি জনসভায় রাহুল গাঁধি বলেন, ‘’এক সময় বাংলা ভারতকে পথ দেখাত। আজ সেই বাংলা পিছিয়ে পড়ছে।‘’ 
আসুন একবার ফিরে দেখি পদাতিক কবি কি বলেছিলেন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় একটু পা চালিয়ে, ভাই কবিতায় বলছেন, ‘’লাল-নিশান নিয়ে একদল মজুরের এক বিশাল মিছিল আসছে।/ আমার মনে হল, লেনিন যেন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,/ শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে-/ একটু পা চালিয়ে, ভাই, একটু পা চালিয়ে।।‘’       


Wednesday 13 April 2016

সাধের খেয়া

সাধের খেয়া
সীমানা ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেছে আমীন, 
তহসিলদার পাহাড়ায় ছিল।
হাতে অচেনা তমসুক, তমস্বিনী তমাল বৃক্ষের
নব পল্লবে নিরুপাখ্য লিপিকুন্ডলী।
‘এপারে তুমি রাধে ও পারে আমি’।
বাঁশ বনের শুকনো পাতায়
খস খসে আওয়াজ.........।
হিস হিস শব্দ আসে, ভেঙ্গে যায় তোমার উজ্জ্বল
স্নায়ু বন্দনার নূপুরের মায়াবী রাগ---
‘এপারে তুমি রাধে ও পারে আমি’।
পার্থিব বস্তু ছুঁয়ে দেখেছ! লজ্জাবতী গাছের
জাগ্রত স্নায়ুর সুতীব্র উচ্চারণে কেউ বলছে;
মৃত কোষকে পুরস্কৃত কোরনা।
শুকনো চোখের খস খসে আলো, 
রাষ্ট্রনেতার পায়ে ঠিকরে পড়বে না।
‘এ পারে তুমি রাঁধে ও পারে আমি’।
এবার বসন্তে পলাশ ফোটেনি,
শিমূলও ক্লান্ত মূর্ছনায় তলপেট হাতড়াচ্ছে,
ফুলরেণু আজও রসে টইটুম্বুর।
পীচ রাস্তার নীচে মাটি নয়
পাথর আছে, পীচ রাস্তার উপরে
তাপ-উত্তাপ নেই।
চল হেঁটে আসি আমরা......।
সম্মিলিত মিলন উৎসবে কৃষ্ণচূড়া,
রাধাচূড়ার পাপড়ির গালিচায়
হাটতে ‘বড়কুটুম’ লাগে তোমাকে।
‘এ পাড়ে তুমি রাঁধে ও পারে আমি’।
মাঝে বসন্ত বয়ে যায়।
এই শনিবার বারের পূজো, বাড়িতে
সত্য নারায়ণের হরির লুঠ দেব।
সোমবার সত্য পীড়ের দরগায়
ছিট কাপড়ের চাদর চাপিয়ে দিও।
‘ও পারে তুমি শ্যাম এ পারে আমি’,

মাঝে বসন্ত বয়ে যায়।   

Tuesday 12 April 2016

পাকদণ্ডী সামাজিকতা


লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী (রং-তুলি দিয়ে যারা কাজ করেন) তাঁদের চয়নে যেসব চরিত্ররা উঠে আসেন তাঁরা অবশ্যই সমাজের প্রতিনিধি। এটা নতুন কিছু কথা নয়। বহুবার বহু সৃষ্টিশীল মানুষ ‘নিরপেক্ষ’ থাকার মূল্য চুকিয়েছেন। তথাকথিত কিছু স্ব ঘোষিত সফেদ কুর্তার মানুষ ওই সব বিতর্কিত মিছিলে ছিলেন। আজও থাকেন। নতুন সভ্যতার সংস্কৃতিতে হাত, পা, মাথা পাকিয়েছেন বলে যাঁদের চিহ্নিত করছি তাঁরা সবাই হয়ত নন। কিন্তু সমাজের প্রথম শ্রেণীর তথাকথিত কিছু ব্যক্তি ভারতের মত এক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশে নিজেদের কেউকেটা ভেবে নিয়ে কল্পনার রসে নিজের মতামতকে জিরিয়ে নিতে চাইছেন। এবং জয়ের এক মিথ্যে মিনার থেকে ‘নিদান’ জারি করেন যারা,  তাঁরা কালের পদধ্বনি হয় শুনতে পান না অথবা শ্রবন গোচর করতে চান না।
প্রারম্ভিক জীবনে প্রাচুর্য পেয়েছেন কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করতে বাহ্যিক জীবনের সব কিছু ত্যাগ করেছেন এমন উদাহারণ ভারতীয় মহাকাব্যে যেমন আছে অপরদিকে বাস্তব জীবনেও আছে। রাজা হরিশ্চন্দ্র, ভগবান গৌতমবুদ্ধ, রাজা অশোক নন। স্ম্রাট অশোক।  এইসব মহতদের উত্তাপ থেকে নিজেদের সরিয়ে এনে যদি দেখি তাহলে সরকারি প্রধান চেয়ারে যে ব্যক্তি বসছেন,  তিনি অনেক বাধ্য বাধকতার মধ্যে কাজ করেন। এই রাজ্যে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা তাঁদের দলের বাধ্য বাধকতা মেনেই রাজ্যপাট চালিয়েছেন। রাজধর্ম পালন করেছেন। এখানে কাউকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু অথবা অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে তুলনা করাটা হবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে মৌন বা নিরবাক রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করা। অথবা নিজেকে ‘কূপমণ্ডূক’ হিসাবে চিহ্নিত করা। আমি সেই চড়ুইভাতিতে থাকতে পারিনি। কবিগুরু যে দর্শন থেকে আমাদের শুনিয়েছেন, ‘’মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’’। সেই দর্শনের ছাত্র হয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়।     
নিরপেক্ষ লেখক শিল্পীদের ‘নিরপেক্ষ’, সততা, নির্ভীক হওয়াটা হয়ত জুলুমের পর্যায়ে পড়ে, সভ্যতার লেপ্টে থাকা অচল কিছু ‘মূল্যবোধের’ বাস্তব দেখার এবং লেখার অপরাধে তাঁদের সামাজিক বয়কটের পাল্লায় হোঁচট খেতে হয়। কোনও অভয় না পেয়ে তথাকথিত পচন ধরা সমাজের ‘ছাইভস্ম’ মাখতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। যারা লড়াইটা করতে চেয়েছেন এবং পেরেছেন সেইসব স্বনাম ধন্য ব্যক্তিরা আজও সর্ব সমাজে স্ববান্ধব চিরস্মরণীয়। আর যারা ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন বা করেন তাঁরা কালের নিয়মে হারিয়ে যান। আমি এই কৈফয়েৎ দিয়ে নিজেকে আনুষ্ঠানিক মহতের দলে ফেলে অন্যদের ব্যস্ত সময়ে ভাগ বসাতে চাইছি না। অনুগ্রহ করে নিজেদের ‘পরের পৃষ্ঠা’ দেখার জন্য আসুন একটি দু’টি সৎ, সরল মানুষের খোঁজে থাকি। সম্ভবত তাঁরাই হচ্ছেন ‘জোকার’ বা ‘ক্লাউন’ অথবা হরবোলা। জোকারদের যেমন সামাজিক মূল্য যেটাই হোক তাকে সব খেলা জানতে হয়। সবাইকে হাসাতে হয়। জোকার কাঁদলেও সবাই হাসে। পাশাপাশি ‘হরবোলা’ কেও সব সুর জানতে হয়। সব শ্রেনীর শব্দ রপ্ত করতে হয়। সাংবাদিক সুদেবদার (সুদেব রায় চৌধুরী, আনন্দ বাজার পত্রিকা) একটি কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, যারা জন্মেছেন (Inborn)  লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক হওয়ার জন্য তাঁদের শিল্পীসত্বা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা বাতুলতা।

‘যুব-নায়ক বিবেকান্দ’ বইয়ে স্বামী লোকেশ্বরানন্দ লিখছেন, ‘’স্বামী বিবেকানন্দ জানতেন, মানুষে মানুষে প্রভেদ থাকবেই। দৃষ্টিভঙ্গি, স্বভাব, দক্ষতা, যোগ্যতা---এগুলোর পার্থক্য থাকবেই। এই ধরণের পার্থক্য স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনও। যদি এসব তফাত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তাহলে ব্যক্তির স্বাভাবিক উন্নতি ব্যহত হবে। প্রতিটি মানুষ তার নিজের মতন করে বড় হয়ে উঠবে, তার সহজাত প্রতিভা অনুযায়ী। ধরা-বাঁধা ছাঁচ ধরে কেউ কখনও বড় হয়ে উঠতে পারে না। স্বাধীনতাই উন্নতির প্রধান শর্ত—স্বামীজী বলতেন। মানুষের সর্বোত্তম অগ্রগতি সম্ভব হয় স্বাধীনতার পরিবেশে। সমাজের কর্তব্য সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু স্বাধীনতার পরিবেশ থাকলেই যে মানুষের অগ্রগতি একই রকম হবে, বা একই গতিতে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। স্বাধীনতা, সমান সুযোগ--- এগুলো অবশ্যই কাম্য। কিন্তু সকলের পক্ষে এগুলিই যথেষ্ট নয়। এমন লোকও আছে যার সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি। যেসব সীমাবদ্ধতা সে একার চেস্টায় অতিক্রম করতে পারবে না। কিংবা সে হয়তো দেরিতে শুরু করেছে বলে অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এরকম লোকের জন্য শুধু সমান সুযোগই নয়, বিশেষ সুযোগের প্রয়োজন।‘’ (পৃষ্ঠাঃ ২৩)                 
শুভ নববর্ষ ১৪২৩ এর শুভেচ্ছা জানাই।                  

Monday 11 April 2016

মাছমাছি

মাছমাছি
চৈত্র শেষের ফুটপাথে, বসে আছে লোকটা,
সন্ধ্যের কলকাতায়------
শান বাঁধানো নতুন ফুটপাথে,
মায়াবি আলোয় দুঃখ থাকতে নেই।
ছেঁড়া কাঁথা, ময়লা কম্বল, বক্ষ আবরণী
ওই আছে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে,
রবীন্দ্র সদনে।
শান বাঁধান ফুটপাথ ধরে
যারা হেঁটে এল সভ্যতার আঁচল খুলে,
কথা, হাসি, না দুঃখ, না কান্না
সব কেমন অম্লান মেখলা,
চল আবার বসি নন্দনে।
নন্দনের মাথার উপরে নীল আকাশ,
আকাশের নীচে মস্ত এক সামিয়ানা।
ভোজসভা ছিল। চেনা-অচেনা
অর্ধ উলঙ্গ পৃথিবী নেমে এসেছে।
চৈত্র শেষে নন্দনের উঠনে......
কাঠ কয়লা দিয়ে কি লিখছে লোকটা!
কি লিখছে সে ওসব?
“তোমরা ব্যবহার হতে জান----
ব্যবহার করতে জান।
আমি এই বসে আছি। দেখছি রসে বসে,
ওই দেখ সাদা হাঁস নন্দনের পুকুরে,
স্ফটিক সবচ্ছ জলে মাছেরা কেমন
‘মাছামাছি’, কানামাছি খেলছে।’’