Tuesday 26 September 2017

রাজপথ চিনতে চাই না জনপদে খুঁজে নেব তোমাকে

রাজপথ চিনতে চাই না জনপদে খুঁজে নেব তোমাকে:  
একদিন কানের কাছে কেউ একজন ফিস ফিস করে প্রশ্ন করল ‘বেঁচে আছ তাহলে?’ উত্তর দিতে চাইনি। পশু যদি বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটা মুহূর্ত লড়াই করতে পারে। সেখানে আমরা মানুষ। বোধবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন মানুষ। এক চোখে দেখ অথবা দু’কানে শুনতে পাও। রেলের খালাসিদের কাছে শোনা, ‘এই ঠিকাদার বাবুর দাদুকে লিয়ে......’, ‘হেঁইয়ো’। ‘জোরসে মারো’ হেঁইয়ো।‘ ‘রেলবাবুর দু’কান কাটা’......’, ‘হেঁইয়ো’। এই আরও জোরে......’। ‘জোরসে বোলো......’। হেঁইয়ে......’। ‘মারকে দিখাও......।’ ‘হেঁইয়ো......’  ‘রেলবাবু টাকা ক্যনে কম দিছিস...’? ‘হেঁইয়ো’, হেঁইয়ো...। ‘রেল বাবুর টাঁকে চুল গজালছে......’, ‘হেঁইয়ো, হেঁইয়ো...। রেলের খালাসিদের কঠোর কঠিন শ্রমের ‘রাগ’, কষ্ট, শ্লাঘা, যন্ত্রণা, ঘাম, ঘামের ঘ্রাণ সব একাকার হয়ে যায় ওই ধরণের শ্লোগানে। সর্দার হাঁকেন। চ্যালার দল দোহারার কাজ করে। আমরা কান দিয়ে শুনেছি। দু’চোখ দিয়ে দেখেছি। না চোখ দিয়ে কোনদিন শুনিনি। কান দিয়ে দেখতেও চাইনি।
হ্যা সেই জনপদে তোমেকে পেয়েছিলাম। তুমি সেদিন বলতে এই জনপদ দিয়ে যাব। এই জনপদে ধুতরো ফুল আছে। এই জনপদে ক্যাকটাস আছে। আঁতা ফলের ঝোপঝাড় আছে। জবা ফুলের হাতছানি আছে। রক্তগাঁধা আছে। লজ্জাবতির বনলতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাব। বনকুলের কাঁটা আছে। আমি এই পথ দিয়ে যাব। রাজপদ দিয়ে যেও না। রাজপথে গোলাপ থাকে। থাক। গোলাপের সাজানো বাগান থাকে। আরে থাক না। চন্দ্রমল্লিকার সুঘ্রাণ থাকে। তুমি বলেছিলে,  থাক। থাকতে দাও না। বনমল্লিকা কোথায় পাবে? বনফুল কোথায় পাবে। লজ্জাবতির বনলতা কোথায় পাবে? আমি ওই পথ দিয়ে যাব। জনপদ দিয়ে যাব। রাজকুমারী ঘুমিয়ে থাকে। জনপদের রাজকন্যা খালাসি পাড়া চেনে। আমি খালাসি পাড়ার পথ দিয়েই যাব। খালাসি পাড়ার পথ দেখে পথ চিনতে চিনতে একদিন কলকাতায় রাজপথে এলাম। ‘শহরটার এই গোলক ধাঁধাঁয় আঁধার হোলো মন’। আমরা সকাল সকাল কলকাতায় এলে হাওড়া স্টেশন থেকে হেঁটে হেঁটে বড় বাজার হয়ে বই পাড়ায় আসতাম। তারপর সেখান থেকে ট্রাম লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে কলকাতা তোমাকে দেখেছি। দেখেছি গাছেলা মেয়েদের হাতছানিতে। দেখেছি কমললতার আড় চোখের চাহনিতে। কাজল পড়া বৌঠাকরুনদের ফিচেল হাসিতে।
সেই রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় এক গলিতে গেলাম। কানাইধর লেন। আমার ফুলদি থাকতেন। উচ্চ শিক্ষিত পরিবার। আমার নিজের পিসির মেয়ে। জামাইবাবু সুধন বাগচি তৎকালে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘হাইজিন’ নামক সংস্থায় ডাইরেক্টরের পিএ ছিলেন। সন্ধ্যের ছুটির পর, রবিবার এবং অন্যান্য ছুটিরদিন তিনি আরও একটি কাজ করতেন। প্রখ্যাত চর্মরোগ বিশেষঞ্জ ডাঃ রঞ্জিত পাঁজার চেম্বারে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সুধন বাগচী মানে আমার জামাইবাবু স্থায়ীভাবে ডাঃ রঞ্জিত পাঁজার চেম্বারে আমৃত্যু কাজ করেছেন আমার মনে আছে অজিতদা মানে অজিত পাঁজা যেদিন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের মন্ত্রী হলেন আমরা তার পরেরদিন পাঁজাবাড়ী থেকে পাঠানো বনেদি মিষ্টি খেলাম। পরে সাংবাদিক হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টে অজিতদার একাধিকবার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তার অভিনীত নাটক ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ’ নাটক সাংবাদিক হিসাবে কভারেজ করেছি। নাটকও দেখেছি।   
কলকাতা তোমাকে অভিনন্দন। তোমার রাজপথে যেদিন থেকে এসে ঠাঁই নিলাম সেদিন থেকেই যে জনপদ ভুলে গেছি এমন বলাটা অর্বাচীনের ভাষা হয়ে যায়। ফুলদির বাড়িতে থাকত আমার থেকে এক বছরের ছোট সুহাস বাগচী। সুহাসও হাইজিনে চাকরি করত। তিন তলার ওই ফ্ল্যাটের একটি ঘর নিয়ে থাকত আরও একজন। মকবুল ফিদা হোসেনের মতো লম্বা, কাঁধ পর্যন্ত বাবরি চুল। লম্বা দাড়ি। টিকালো নাক। অমল মণ্ডল। বেনিয়াটোলা লেনে লেটার প্রেসের ব্যবসা ছিল। কবিতা লিখত। সাহিত্যের সবদলের মানুষজনের কাছে বড় আপনারজন ছিল অমলদা। অমলদা তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ আমি জানি না। আমার জীবনের জনপদে তুমি দীর্ঘ দীর্ঘতায় রয়ে গেছ। যেদিন সুতো ছিঁড়ে গেল তারপর এ পথ সে পথে তোমাকে এই কলকাতা শহরের অলি গলিতে খুঁজেছি। সলেমনকে খোঁজার মত খুঁজেছি। তুমি কোথায়? আরও অনেক কিছু বলতে হবে। যদি সেই সুযোগ আসে। তুমি আমাকে যেমন গভীর রাতের নেশাতুর ভাষায় বলেছ। অম্লান আলোয় ভিজে ‘রাতভোর বৃষ্টি’-এর কথা শুনিয়েছ অন্যদের। তাদেরকে সেই জনপদের মানুষগুলিকেও তুমি বলে গেছ, ‘দীপেন একদিন খুব বড় হবে। দেখে নিও।’ আশির দশক আমাকে এঁকে দিয়েছে গদ্যের ছন্দে হেঁটে চলা। পদ্যের ছন্দে ‘ছাতিম’ গাছের নীচে ‘ধুতরো’ ফুলের স্পন্দন খুঁজতে খুঁজতে কলকাতার রাজপথে ছুটছিলাম। একটা বুড়ো অশ্বত্থ হেসে আমাকে বললে, ‘ও পথে যাসনে। ওই পথ তুই চিনিস না। তোকে সকলে গালি দেবে। তুই জনপদে চলে যা। জনপদ দিয়ে হেঁটে যা। ঘামে ভেজা মজদুরদের দেখতে পাবি। ঘামে ভেজা ছাত্রদের বইয়ের পাতা উলটে দেখ, ‘রাজপথে’ কন্যেরা কথা কয় কিন্তু দেখা দেয় না। তোমার ঘরে অমলদা এক কন্যেকে একবারই দেখেছিলাম। তুমি বলেছিলে ‘একমাত্র দীপেন বলেই আমি ওর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম।’ তিনি ‘রাজপথ’ থেকে এসছিলেন না জনপদ থেকে? আমি আজও জানি না। তবে অমলদা আমার অনেক না বলা কথা আজ রয়ে গেল। আমি জানি তুমি ‘কফিহাউস’ থেকেই ‘অমলকান্তি’কে খুঁজছিলে। অজিতদা মানে অজিত পান্ডে তখন আমাদের টেবিলের উল্টোদিকে চুটিয়ে আড্ডা দিতেন।                 
তারপরে আমার সেই অচেনা শহরের রাস্তাগুলো আরও বড় রাজপথ হয়ে গেছে। ওই দিনের জনপদে আমি, অমলদা, সুসু (সুহাস বাগচী), অমলদার ভাই বাপী, (বাপী তখন মেডিক্যালে ডাক্তারি পড়ছে)। এবং আরও একজন। সেই জনের নাম আমার মনে নেই। পার্থ বসু নামে এক কাউন্সিলারের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমাদের এই টিমটার কাজ ছিল পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত কলেজ স্কয়ারের উল্টোদিকের গলিতে আইবুড়ো গল্প করা। হাইজিন অফিসটা যে গলিতে সেটা সম্ভবত সূর্য সেন স্ট্রীট বা মির্জাপুর স্ট্রীট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা মেডিকাল কলেজ এই দুই প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালের মাঝের গলিতে আমরা সন্ধ্যে থেকে রাত এগারটা বারটা পর্যন্ত দু’টো বেঞ্চ নিয়ে পুজোর ছুটি কাটাতাম। পুজোর পাঁচ ছটা দিন ওই গলিতে ভিড় থিক থিক করত। কারণ কলেজ স্কয়ারের পূজো মণ্ডপ থেকে বেড়নোর পথ হিসাবে সম্ভবত ওই গলি বেশি ব্যবহার হতসন্ধ্যের সময় আমাদের মতো জোয়ানমদ্দদের চোখ যেমন হয় আরকি। ‘হেঁইয়ো...’। কিন্তু যারা কলেজ স্কয়ারের ঠাকুর দেখে ,মহম্মদ আলি পার্কের ঠাকুর দেখতে যেত সেইসব মেয়েবেলার পটলচেরা চোখে তখন থই থই উৎসবের চপলতা। তাঁদের কারো আমাদের দেখার ফুরসত নেই। ভিড়ের মাঝে ঘটত অন্য ঘটনা। কয়েক জোড়া করে চটি জুতো কেউ না কেউ ফেলে চলে যেত। আমরা সেই চটি জুতো ছোট লাঠি দিয়ে টেনে বেঞ্চের তলায় সরিয়ে রাখতাম। পরে যারা খুঁজতে আসত একজোড়ার জন্য নেওয়া হত দশ টাকা। এক পাটির জন্য পাঁচ টাকা। মেয়ে ছেলে যারই হোক না কেন? দর্শনার্থীদের অনেকে জেনে গিয়েছিলেন। চটি জুতো হারালে আমাদের কাছে পাওয়া যেতে পারে। তাই অনেকেই আমাদের কাছে খোঁজ নিতে আসত। পায়ে গলিয়ে নিজেরটা মিলে গেলে টাকা দিয়ে জুতো নিয়ে যেত। প্রতিদিন কমবেশি তিনশ টাকা থেকে পাঁচশো টাকা সংগ্রহ হত। ওই সংগৃহীত অর্থ দিয়ে আমরা পাশের বস্তির ছেলেমেয়েদের স্কুলের বই, খাতা কিনে দিতাম। কালী পুজোর সময় বাজি পটকা কিনে দিতাম। কোনও সময় অসুস্থ রুগীর ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। সবটা আমরা অত্যন্ত গোপনে করতাম। কোনও রকম রাজনৈতিক রঙ যাতে না লাগে। আমি সেই সময় বলতাম হ্যা আমি জনপদ দিয়ে যাব। তোমার কথা আজও শুনছি। এই পথে ধুতরো ফুল আছে। এই পথে বনকুল আছে। লজ্জাবতি লতাগাছ পাওয়া যায়। এই পথে রাজলক্ষী আছে। এই পথে অন্নদাদি আছেন।
জনপদে হাঁটতে হাঁটতে যেদিন কলকাতার কানাইধর লেনে গেলাম। প্রথমদিন দেখেছিলাম সুধন জামাইবাবু শ্রীম কথিত ‘কথামৃত’ পড়ছেন। মাঝে মাঝেই তাঁকে এই বই পড়তে দেখেছি। জামাইবাবু একদিন ‘কথামৃত’ পড়ার সময় আমাকে একটা অংশ পড়ে দেখতে বললেন। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।। বিলাতে কাঞ্চনের পূজা— জিবনের উদ্দেশ্য কর্ম না ঈশ্বরলাভ? এই পরিচ্ছদের একটা অংশ ছিলো, ‘’তাই বলছি যে যা কিছু কর না কেন, এগিয়ে গেলে আরও ভালো জিনিস পাবে। একটু জপ ক’রে উদ্দীপনা হ’য়েছে বলে মনে করো না, যা হবার তা হয়ে গেছে। কর্ম কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য নয়। আরও এগোও, কর্ম নিষ্কাম ক’রতে পারবে। তবে, নিষ্কাম কর্ম বড় কঠিন, তাই ভক্তি ক’রে ব্যকুল হ’য়ে তাঁকে প্রার্থনা কর, ‘হে ঈশ্বর, তোমার পাদ পদ্মে ভক্তি দাও, আর কর্ম কমিয়ে দাও; আর যেটুকু রাখবে, সেটুকু যেন নিষ্কাম হ’য়ে ক’রতে পারি।‘’
ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই। অভাবে হোক বা স্বভাবে হোক বাঙালি কি বড় বেশি কাম চোর? এক বাঙালির কথা আজ মনে পড়ছে। তিনি ক্ষিতিমোহন সেন। প্রাচীন ভারতের যে শিক্ষা সেই শিক্ষায় ক্ষিতিমোহন তার প্রঞ্জায় আমাদের হাঁটতে বলেছেন উদার ঞ্জানের পথে। অর্ধশতক জুড়ে তার আহরিত ঞ্জান দিয়ে আমাদের আলোকিত করেছেন। ক্ষিতিমোহন সেনের চর্চার বিষয় ছিল মধ্যযুগের সন্তদের জীবন এবং বানী। কবীর, দাদূ নামক সন্তদের সাধনার বিষয়গুলির মর্মে ঢুকে অনুসন্ধান করেছিলেন তিনিবাউল সংগীত নিয়েও তিনি গভীর চর্চা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকে ১৯০৮ সালে ক্ষিতিমোহন সেন চম্বা রাজ্যের কাজ ছেড়ে দায়িত্ব নিলেন বিশবভারতীর অধ্যাপকের। বিশ্বভারতীর ব্রহ্মাচর্যাশ্রমে অধ্যাপনার কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি। বহু ভাষাবিদ ক্ষিতিমোহন সেন ইংরাজি, বাংলা ছাড়াও হিন্দী এবং গুজরাটি ভাষায় একাধিক বই লিখেছেন।
১৯৪৬ সালের একটি প্রবন্ধে ক্ষিতিমোহন লিখছেন, ‘’কত কত সংস্কৃতিই এইভাবে ভারতের ধর্মের মধ্যে সমন্বিত হতে লাগল। ভারত তাই চিরদিন সবার প্রতি উদার। ভারতে যখন যে ধর্ম বিপ্নন হয়ে আশ্রয় চেয়েছে, সে-ই আশ্রয় পেয়েছে। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আসবার কোন প্রয়োজন ঘটে নি। অভ্যাগতেরা আপন আপন ধর্ম ও সংস্কার নিয়ে ভারতে অবিরোধে সাধনা করার অধিকার পেয়েছে। খৃস্টীয় প্রথম শতকেই দক্ষিণ ভারতে সিরীয় (Syrian) খৃস্টানেরা আসেন। তাঁরা সেখানে সাদরে গৃহীত হন ও রাজাদের ভূমিদান লাভ করেন। বিপন্ন পারসীরা গুজরাতে সাদরে অভিনন্দিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হনরাজ্য জয় করবার পূর্বেই মুসলমান সব সাধক ভারতে এসে আতিথ্য ও সাধনার জন্য স্থানলাভ করেন। তার পরে আসে মুসলমান সৈন্য। তেজপাল বস্তুপালের সময়ে গুজরাতের অনুপমা দেবী মুসলমানদের জন্য আশীটি মসজিদ করে দেন। বিজয়ী মুসলমানদের জন্য সে মসজিদ নহে।‘’

এখন পথ চিনে যেতে পারব। তুমি যে জনপদ দিয়ে আমাকে হেঁটে যেতে বলেছ সেই পথে আলো আছে। সেই পথে জোনাক জ্বলে। ভালোবাসার মশাল জ্বলে। রাতপোকারাও অজান্তে বন্ধু হয়ে যায়। রাতপাখিদের সঙ্গে সখ্য করে নেওয়া যায়। কেন? বলব? হুতোম আমার চির সখা চির বন্ধু হয় যে। এসো আজ থেকে আমরা জনপদ দিয়ে হাঁটি।                                                                                                        

Friday 22 September 2017

মনের জানলা খুলে দেখুন 'কিশলয়' আলো দেবে

মনের জানলা খুলে দেখুন ‘কিশলয়’ আলো দেবে: 
শারদ শুভেচ্ছা শেষ হতেই। শুভ বিজয়া। এই ছিল চেনা সংস্কৃতি। এই ধারাবাহিকতায় বাংলার দুর্গা পুজো আমরা দেখে আসছি। বাঙালির সেরা উৎসবের এটাই ছিল চিরাচরিত প্রবাহমান অনুভূতি। এবছর ‘বিসর্জন’ বিতর্ক বাংলায় আবার একটা ভিন্ন মাত্রা জুড়ে দিতে চাইছে। গণতান্ত্রিক দেশে সমাজ নামক বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান বর্তমান ভারতীয় গণতন্ত্রে আপনার আমার দাদু-ঠাকুর্দার উত্তর কলকাতা বা মধ্য কলকাতার সম্পত্তি নয়। সর্বজনে হিতায় বলব আর সমাজের প্রাতিষ্ঠানিকতা মানব না? সে কালে রাজা ছিল,বাবু ছিল/ একালে বাবুমশায় খুলে দিল/ দেশ আগে,সমাজ আগে/একথা মানতে হবে/বাংলার সামাজিক বন্ধন চিরায়ত তবে!
আমরা প্রসঙ্গ খুলে দিতে চাই না। মনের জানলা খুলে দেখতে চাইছি আরও বৃহতকে। সুদূরের আগত পিয়াসিকে। ভোরের কিশলয় বলি আর শিউলি বলি চিনতে আপনাকে আমাকেই হবে। বাংলার দুর্গা পুজোয় সাকুল্যে বাজেট কত? শাপলা, পদ্মফুল হাতে প্রাক্তন খাজাঞ্ছিরা তাঁদের সময়ের কথা বলতে পারবেন। বর্তমানের অর্থ বিশারদদের কাছে জানতে বড় ইচ্ছা করে। উৎসব হোক। আমরা আনন্দ করিআড়াল থেকে অন্তর্যামী সব কিছু দেখছেন। অনুষ্ঠানের শর্ত মেনে আয়োজকদের কেউ কেউ পথশিশুদের নতুন বস্ত্র দেবার ব্যবস্থা করেফল মিষ্টি দেয়। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান আবার পথ শিশুদের জন্য বাস-ট্রাম ভাড়া করে। বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরিয়ে দেখায়। আম আঁটির ভেঁপুর শিশুর দল অবাক নয়নে আপ্লুত হয়ে চেয়ে থাকে। অচেনা সুগন্ধিমাখা বাবুদের পানে। এরা এতদিন কোথায় ছিল? মনে মনে বলে। আমরাও জানি এসব অস্থায়ী। শুভকাজ করলে আলোচনা হবে সমালোচনা হবে। কিন্তু কাজটা আপনাকে বা আমাকে করতেই হবে। এই কাজ করার তাগিদ আছে বলেই প্রয়োজন আছে। কিন্তু বাস্তব যেটা নগর সভ্যতার এই নতুন অজনপ্রিয় এজেন্ডার সঙ্গে নাগরিক সমাজ কতটা পরিচিত? সোস্যাল মিডিয়ায় স্বনিযুক্ত ‘ক্যামেরাম্যান’ পাওয়া যায়। স্বঘোষিত প্রতিবেদক পাওয়া যায়। ব্যক্তির প্রচার হোক বা সংস্থার প্রচার। সবকিছুই সমাজের অংশ। কোথাও থাকে আত্মপ্রচার কোথাও থাকে সমাজ এবং সামাজাকিতার প্রয়োজনে। এই ধরণের কাজে অর্থ আসে কিনা আমার জানা নেই। অর্থ না নিয়েও বহু চিত্র সাংবাদিক বা সাবেক ক্যামেরাম্যান কাজ করে। প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিককে উদ্বৃত্ত করে রাখলেও সেই সাংবাদিককূল সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে যায় না। কারণ সমাজ একটা প্রতিষ্ঠান। মনের জানলা খুলে রাখুন ‘কিশলয়’ আলো একদিন আমাদের আলোকিত করবে।      
আমি আমার নিজের সাংবাদিকতার অভিঞ্জতার কথা দিয়ে শুরু করি। নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় বছর। আমি একটি টিভি চ্যানেলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ১০ মিনিটের তথ্যচিত্র করি। কারণ ওই চানেলে ১৫ মিনিটের একটি এপিসোড চলত। সেই সুবাদে আমাকে নিত্য নতুন গল্প খুঁজে এনে ‘ইন্ট্রো’, ‘ভয়েস ওভার’ লিখে এডিট করে দু তিনটে এপিসোড রেডি করে রাখতে হত।
একুশ শতাব্দীর দ্বিতীয় বছরের দুর্গা পুজোটা আমার মনে গভীর দাগ কেটে রয়েছে। সে বছর পুজোর ঠিক আগে আগে এক এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে আমার আলাপ হল। তিনি আমাকে বললেন, ‘’আমি আপনাকে হাওড়া স্টেশনের শৈশব দেখাব। কি অকল্পনীয়ভাবে হাওড়া স্টেশনের শিশুরা জীবন যাপন করে।‘’ উল্লেখিত কর্মকর্তার দিন এবং সময় মতো আমি ক্যামেরাম্যান সঙ্গে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে হাজির হলাম। আমাদের অনুমতি পত্র আগেই করা ছিল। স্টেশনের বিভিন্ন দোকানের আড়াল, আবডালে, প্লাটফর্মের শেষ প্রান্তে, মালগুদাম, গোডাউন সংলগ্ন এলাকায় ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশু কিশোরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। জরাজীর্ণ হার জিরজিরে চেহারা। কেউ কেউ একধরণের অ্যাডেসিভ পুরনো কাপড় বা রুমালে লাগিয়ে মুখ দিয়ে টানছে। মুখের উপরের অংশ, দুটো ঠোঁটে দগে দগে ঘা হয়ে গেছে। পুলিশ তাড়া করে। পালিয়ে যায়। আবার ফিরে আসে। আমরা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছিলাম এইসব ছেলেরা সাধারণত আসে বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লী এবং বস্তি থেকে। গ্রামের সাধারণ গরিব ঘরের ছেলেরাও এই দলে ভিরে যায় নেশার টানে। এরা নেশা করার অর্থ যোগার করে পুরনো (প্যাসেঞ্জাররা যে সব জলের বোতল ব্যাবহার করে ফেলে দেয়) প্ল্যাস্টিক বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে।
কেউ কেউ অবৈধভাবে কুলির কাজ করে। কেউ কেউ কেপমারি এবং পকেট মারের কাজ করেও টাকা পায়। যে এনজিওটির আধিকারিক আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন তার নির্দেশ মতো আমরা ছেলেগুলোকে কোনও কথা জিগ্যেস করিনি। ‘বাইট’ নিইনি। কারণ আমরা আক্রান্ত হতে পারতাম। ওই এনজিও সংস্থাটি যে কয়েকজনকে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের জন্য নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। আমরা সেই আস্তানায় গেলাম। দোতলা একটি বাড়ির উপর নীচে ছ’টা ঘর। প্রতিটি ঘরে চারটে করে চৌকি আর একটা করে টেবিল আছে। এদের থাকা খাওয়া, চিকিৎসা, জামা, কাপড় সমস্ত কিছুর দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির। ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে আমরা তিন চারজন ছেলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। কয়েকজন অ্যাডেসিভের পুরনো টিউব ব্যবহার করে কি ভাবে ওরা নেশা করে সেই দৃশ্য আমাদের অভিনয় করে দেখিয়েছিল। আমরা ক্যামেরায় ছবি তুলে নিয়ে এসেছিলাম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিকদের কাছে জানতে পেরেছিলাম এইসব ছেলেদের বেশিরভাগের পিতৃ পরিচয় জানা নেইকেউ কেউ মায়ের পরিচয় জানে। ১০ জনকে উদ্ধার করে আনলে চার থেকে পাঁচজন থেকে যায়বাকিরা পালিয়ে যায়। কিছুদিন অন্য অঞ্চলে গিয়ে নেশা করে। কয়েকদিন বাদে আবার হাওড়া স্টেশনে ফিরে আসে। হাওড়া স্টেশনে পুলিশের নজরদারি যখন বেশি থাকে এইসব ছেলেরা ধর্মতলা, বাবুঘাট, ফেয়ারলি প্লেস, শিয়ালদহ অঞ্চলকে বেছে নেয়। ‘কলকাতা’ রেলে স্টেশন হওয়ার পর সেখানেও এই সব ছেলেরা আশ্রয় নিয়েছে। তবে সংখ্যায় কম।  ওই বছর হাওড়া স্টেশনের জিআরপির এক আইসি আমাকে থানার ক্রাইম বোর্ড দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের এই বোর্ডে, চোর, ছিনতাইবাজ সহ দাগী আসামীদের নাম থাকত। নতুন শতাব্দীতে নতুন সংযোজন ‘ড্রাগস অ্যাডিক্টেড চিলড্রেনস’আমি আপনাকে বলছি আগামী দশ বছরে দেখবেন এই ধরণের ক্রাইম আরও বাড়বে।’
প্রায় পনের বছর পেরিয়ে এলাম। দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? একটা তথ্য হাতের কাছে আছে। পুনরাবৃত্তি করি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেশের স্বাধীনতার সত্তর বছর উদযাপন হল। স্বাধীনতার পচাত্তর বছর উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ঘরের সব জানলা কি খোলা আছে? দেশের সব মানুষ কি ভরপেট খেতে পায়? বছর চারেক আগের একটি তথ্য বলছে, পৃথিবীর প্রায় ৮৭ কোটি মানুষের (১২.৫ শতাংশ) অর্ধাহার বা অনাহারে দিন কাটে। বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্রের দেশ। গর্বিত গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকাতেও প্রায় ৫ কোটি মানুষের (১৬ শতাংশ) বছরভর ভরপেট্টা খাবার জোটেনা। যে সূত্র থেকে এই তথ্য পেলাম সেই সূত্র বলছে, বিশ্বের গর্বিত গণতন্ত্রের দেশ বলি যে সব দেশকে আমরা, সেই শিল্পোন্নত দেশগুলি সব থেকে বেশি খাবার নষ্ট করে। মার্কিন দেশের নাগরিকরা যে খাবার কেনে তার ২৫ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় করে। ব্রিটেনের নাগরিকরা যে খাবার কেনে তার ১/৩ ময়লা ফেলার বাক্সে ফেলে দেয়। ইউরোপ এবং আমেরিকায় বছরে মাথা পিছু ২৮০-৩০০ কেজি (Avoid Future Famine-UNDP report.) খাবার অপচয় হয়।  যদিও উল্লেখ করতেই হয় শিল্পোন্নত দেশ আমেরিকা এবং ইউরোপে নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে। খাবার নষ্ট না করার আন্দোলন। বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাব কতৃপক্ষ, ছোট ছোট বোর্ড, মেনু কার্ডে লিখে রাখছে ‘খাবার নষ্ট করবেন না। যতটা খেতে পারবেন সেই পরিমাণ নেবেন।’ কোনও কোনও দেশে খাবার নষ্ট করলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য ঠিক ঠাক সংরক্ষণ না করার কারণে নষ্ট হয়ে যেত। আমাদের কাছে আরও একটি হিসাব আছে। ২০০২ সালে ফসল রাখার পর্যাপ্ত গোডাউন বা গোলা না থাকার কারণে ১.৫ কোটি টন খাদ্যশস্য বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক অনেক কম দামে বিদেশের বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়েছিল ভারতের বর্তমান আর্থ-সামাজিক চিত্র ব্যাখ্যা করলে কতটা আমরা এগতে পেরেছি? শিশুরাই দেশের কথিত এবং অকথিত ভবিষ্যৎ। চরমতম দারিদ্র এবং অবহেলিত শৈশব, অভইভাবকহীন শৈশব ‘ফুটপাথ’ বেছে নিতে বাধ্য হয়। কেউ কেউ বাবা মায়ের সঙ্গে ঝুপড়িতে থাকে। কেউ কেউ সারাদিন এখানে সেখানে কাটিয়ে রাতটা আশ্রয় নেয় বড়লোক বাবুর গাড়ি বারন্দা, ঠেলা গাড়ির নীচে। এই শিশুরা একটু বড় হলে ‘শিশু শ্রমিক’ হিসাবে কাজ করে। (ভারতে আইনত শিশুশ্রম নিষিদ্ধআমাদের দেশে শিশু শ্রমিক নিরোধক আইন, ১৯৮৬ আছে। ‘Child labor-prohibition and regulation Act. 1986)
কেউ কেউ অপরাধ জগতে আশ্রয় নেয়। শহর সভ্যতার ছবি আজ থেকে কয়েক বছর আগে যা ছিল আজ কতটা বদল হয়েছে?
আট বছর আগের একটি তথ্য থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (আই এ এল ও) এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন- ‘বিশ্বে নারীর কর্মসংস্থানের গতি’ (Global Employment Trends for women ) এর কয়েকটি মন্তব্য বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার ব্যাখ্যা ছিল এইরকম, ‘’পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোন পরিবারে যারা গৃহ পরিচারিকা/ পরিচারকের কাজ করে তাঁদের বলা হয় ‘গার্হস্থ শ্রমিক’’। (A domestic worker is someone who carries out household work in a private house hold in return for wages.) সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের গৃহ পরিচারিকা/ পরিচারকের সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। এদের ২০ শতাংশের বেশি ১৪ বছরের কম বয়সের শিশু। মূলত কন্যাশিশু। এই তথ্য বছর কয়েক আগের হলে বর্তমান ভারতে এই সংখ্যার হার নিশ্চয় আরও বেড়েছে। কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন মেট্রোপলিটন শহরের পরিচারিকারা মূলত আসে রাস্তার ধারের ঝুপড়ি বা ফুটপাথ থেকে। দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফুটপাথগুলিও উন্নত হচ্ছে। তা হলে ওইসব ফুটপাথবাসীদের কি হবে? বিশেষত যারা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কখন কোথায় হারিয়ে যায়? বিশেষ করে গৃহহীন অভিভাবকহীন  ফুটপাথ শিশুদের নিরাপত্তা এবং পুনর্বাসন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কি ভাবছে? বিভিন্ন রাজ্য সরকারই বা কি ভাবছে? আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর সূত্রে খবর, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ কলকাতা এবং হাওড়ায় অন্তত বাইশ হাজার পথশিশুর খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়াও রাজ্যে শিলিগুড়ি, মালদহ, আসানসোল এবং খড়গপুরে পথশিশু গণনা চলছে। সূত্রের আরও খবর সমস্ত রাজ্যের হিসাব ধরলে পথশিশুদের সংখ্যা এক লক্ষের বেশি হবে।
রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও জানালেন, ‘’এই বিষয়ে পুজোর ছুটির পর যা বলার বলব। তবে সমীক্ষা শুরু হয়েছে এটুকু আমি জানি।‘’                                                                             

         

Monday 18 September 2017

গদ্যের প্রজাপতি তোমাদের পাড়ায় ছেড়ে দিলাম।

গদ্যের প্রজাপতি তোমাদের পাড়ায় ছেড়ে দিলাম। : 
বর্ষার ছন্দ এবার কেন যেন শারদ প্রভাতের আগেই ছুটি দিয়ে গেল। অফুরন্ত প্রাণের আবর্তিত পেঁজা পেঁজা মেঘেদের ইতি উতি আনাগোনা। কেউ বলে বৃষ্টি তোমাকে আরও দেওয়ার ছিল। তুমি কোথায় গেলে? ফিরে এসো ফিরে এসো। ‘ওলি বার বার ফিরে আসে, ওলি বার বার ফিরে যায়’। সে আরও বলে আবার মেঘমন্দ্রিত সুরের রঙে আর ভাসব না। নাই বা থাকল মেঘলা আকাশ। ভিজেছি ওই সেদিন যেদিন প্রথম বললাম, গদ্যের প্রজাপতি তোমাদের পারায় ছেড়ে দিলাম। আগেও চিনতাম না। আজ আর চিনেই বা কি করব? শরৎবাবু সাধারণ প্রজাপতি খুঁজতেন। রবীবাবু তাই হয়ত বলেছিলেন, শরৎবাবু একটা সাধারণ প্রজাপতি থুড়ি একটা সাধারন মেয়ের গল্প লেখ। শরৎবাবু তার সময়কালে যতগুলি সাধারণ মেয়ের গল্প লিখেছেন আর কোনও কথাশিল্পী কি সেই গল্প লিখেছেন বা লিখতে পেরেছেন? যৌথ পরিবারের মূল্যবোধ। মূল্যবোধ ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। পরিবার বিচ্ছিন্নতা। ভাইয়ের সঙ্গে দাদার সম্পর্ক টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া। ব্রাহ্মসমাজের গভীরতা, ব্যপ্তি। পুরনো সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে নতুনের সমাজ ব্যস্থার দ্বন্দ। উচ্চ শিক্ষার কারণে সাংস্কৃতিক উদ্যানে নতুন মূল্যবোধের প্রেরণা। এইসব নিয়েই না শরৎচন্দ্র।      
পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, সামাজিক পারিবারিক উত্থানপতনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সবস্থানে মোর ঘর আছে বলে শরৎচন্দ্র এই দেশ সেই দেশ, এই পাড়া ওই পাড়া আফিং আর গাঁজার নেশায় ঘুরেছেন। মানুষ দেখেছেন। মানুষের কথা শুনেছেন। মানুষকে চিনেছেন। সমাজ দেখেছেন, সমাজের টানাপড়েন নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তাই তিনি ব্যর্থ প্রেমের উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত’ লিখেছেন। প্রতিটি পর্বে তিনি গদ্যের প্রজাপতি নিয়ে ঘুরেছেন। ‘রাজলক্ষ্মী’, ‘অভয়া’, ‘কমললতা’ কালো ভ্রমর হাতে আমাদের পদ্যের ছন্দ চেনাতে চেয়েছে। কিন্তু আপনভোলা শ্রীকান্ত নিজের ছন্দে গদ্যের রাস্তায় কঠোর বাস্তবকে চিনিয়েছেন। গদ্যের প্রজাপতি আপন ডানায় ভর করে গদ্যের পাড়া খুঁজে আমাদের সামাজিক টানাপড়েন চিনিয়েছে। সাহিত্য সমালোচকরা অনেকেই শরৎচন্দ্রের গল্প- উপন্যাসকে শিল্পের মর্যাদা দিতে চান না। তিনি নাকি বস্তা পচা সব বটতলার গল্প লিখে গেছেন। তা বেশ করেছেন। তাতে আপনাদের কি এসে গেল? বাংলা তথা ভারতে ‘ঘর-সংসার’ করা সে যুগের বাবু বিবিদের কাছে সাহিত্যের ‘পীঠে- পায়েস’ ছিল শরৎচন্দ্রের গল্প উপন্যাস শরৎচন্দ্রে এতটাই আপ্লুত ছিলাম আমার মনে পড়ছে কলকাতা শহরে আশির দশকে অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যখন দেখা হয় আমি গড় হয়ে প্রণাম করেছিলাম। খুব লাজুকভাবে বিস্ময়ে চেয়েছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম। বিরাজ বৌয়ের মাধবী। বিন্দুর ছেলের বিন্দু। আমাদের ঘরের ‘দিদি’। আমাদের যৌথ পরিবারের বৌদি। ২০০২ সালে এবং তারপরে  যতবার ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমি প্রণাম করেছি। মাধবীদি একদিন জানতে চাইলেন ‘তুমি বারে বারে প্রণাম কর কেন? যতদূর জানি তুমি এসব মান না।’ আমি লাজুক হেসে বলেছিলাম, ‘আপনি আমাদের শরৎচন্দ্রের বিরাজ বৌ, বিন্দু। তাই আপনাকে প্রণাম করি। আমি বড়দের সম্মান করি। আমার মা শিখিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক যে জাতের হোক বা ধর্মের হোক প্রণাম করবে। আপনিও আমাদের শিক্ষক।’ সামনে ছিলেন সাংবাদিক সুদেব রায় রায় চৌধুরী। সুদেবদা বলেছিলেন, ‘’দীপেন্দু টপাটপ কথা বলে। ওকে কেঊ কেউ মাথা তোলার  স্বাধীনতা দিচ্ছেনা।‘’ মাধবীদির সঙ্গে দেখা হলে আমার কাজ ছিল ওনার জন্য পান এনে দেওয়া। টাকা মাধবীদি নিজে দেবেনগদ্যের প্রজাপতি আমাদের এভাবেই সমাজ পরিবারে আজও অবস্থান করছে।     
যৌথ পরিবার কাকে বলে বুঝেছিলাম খুব ছেলেবেলায়। আমরা নলহাটির বিদুপাড়ায় প্রথম যে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম সেটা ছিল টিনের চাল। অবশ্য গরম অতটা লাগত না কারণ পুরনো দিনের বাড়ির মতো আমাদের ভাড়ার বাড়িটাও ছিল দোতলা। বাঁশ, কাঠ দিয়ে তৈরি একটি মাচার মতো দোতলা করা ছিল। বাঁশ এবং কাঠের কড়ি বরগা এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল একতলা বা দোতলা থেকে খুব একটা বোঝা যেত না। তার কারণ একতলা সিলিং এবং দোতলার ছাদ মাটি, চুন, সুড়কির মিশ্রণে এমন ভাবে লেপা ছিল যেটা সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। উপর নীচ নিয়ে আমাদের তিনটে ঘর ছিল। আমরা পাঁচ ভাই বোন বাবা মায়ের সঙ্গে ওই বাড়িতে ছিলাম। পায়খানা, বাথরুম, রান্নাঘর আলাদা ছিল। আমাদের যৌথ পরিবার এতো ছোট ছিল না। আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে ছোট একটা মাঠ পেরিয়ে আরও একটা বাড়ি ছিল। ওই মাঠের সংলগ্ন আমাদের বাড়ির দেওয়ালে একটা বড় বেল গাছ ছিলো। আমাদের বলা হয়েছিল ওই বেল গাছে ‘ব্রহ্মদৈত্য’ থাকে। ছোট বেলায় আমরা ওই মাঠ পাড় হওয়ার সময় তিন বার ‘রাম রাম, রাম রাম রাম রাম’ করে তবে এবাড়ি অন্যবাড়িতে যাতায়াত করতাম।  
পেছন দিকের বাড়িটা দালান বাড়ি মানে পাকা বাড়ি। একতলা-দোতলা মিলিয়ে পাঁচটা স্বচ্ছল পরিবার বাস করত ওই বাড়িতেওই পরিবারগুলির তুলনায় আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল ছিল। সেটা আমি ক্লাস এইট পর্যন্ত টের পাইনি। এমনই বন্ধন ছিল ওই পরিবারগুলির সঙ্গে। ছটা পরিবারে কম বেশি ২৫ জন ছেলে মেয়ে। আমরা স্কুল যাওয়ার সময় ‘চড়ুইভাতি’ মেজাজে ২৫ জন ছেলমেয়ে সারিবদ্ধভাবে ভাত খেতে বসতাম। বরাদ্দ ছিল ভাত, এক চামচ ঘি, আলুসেদ্ধ সঙ্গে এক হাতা করে ভাতের ফ্যানসেইভাত অমৃতের মতো লাগত। এই সময়কালে যে ছাত্র প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হতো তাকে আর বই কিনতে হত না। সামনে কেউ না কেউ থাকত। তার কেনা বই ব্যবহার করা যেত। আমাদের এই ২৫ জনের টিমকে সমস্ত পাড়া সম্ভ্রমের চোখে দেখত। একটু বড় হয়ে মায়ের নির্দেশ মেনে যখন সাহিত্য পড়তে শুরু করি প্রথমেই ভালো লেগেছিল শরৎচন্দ্র।
বাঙাল ঘটির অনুপাতে আমরা তিনটে পরিবার ছিলাম বাঙাল। অন্য তিনটে পরিবার ছিল ঘটি। প্রতি বছর দুর্গা পুজার সময় ওই তিনটে ঘটি পরিবার গ্রামের বাড়িতে পুজো দেখতে যেতগ্রাম থেকে টোপর দেওয়া গরুর গাড়ি আসত। টোপরের উপরের দিকে এবং ভেতরে দিকটা দামি কাপড় দিয়ে মোড়া থাকত। যে পরিবারে যত বেশি জমি তাঁদের গরুর গাড়ির সাজসজ্জা ততটাই অভিজাত। দু’টো তিনটে গরুর গাড়ি করে ওরা গ্রামের বাড়ি চলে যেত বাড়ির পূজো দেখতে। ভাগচাষি, রাখাল-বাগাল, গাড়োয়ান, বাড়ির কাজের লোক সবার জন্য জামাকাপড় কেনা হত। আমি শিশির ভেজা শৈশব চিনে চিনে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকতাম। আর মনে মনে বলতাম গদ্যের প্রজাপতি কাদের পাড়ায় ছাড়ব? আমাদের গঞ্জ শহরে তখন চারটে দুর্গা পুজো হতো। রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলো টিম টিম করে জ্বলত। কেউ কেউ প্রদীপ বা মোমবাতি দিয়ে ঝাড়লন্ঠন বানিয়ে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে পড়ত। আমি ক্লাস এইটের পর পুজোর চারটে দিন বন্ধুদের গ্রামের বাড়িতে সকাল থেকে পুজো দেখতে যেতাম। কোনদিন আলপথ ভেঙ্গে। যৌবনবতী সোনালী ধানের শীষ ছুঁয়ে দেখতাম। গর্ভে কতটা দুধ আছে। একটা দু’টো শীষ মুখে দিয়ে দেখতাম। কুমারী মেয়ের স্তনের আঠাল স্তনের মত মনে হত। কোন কোনদিন সরু বুক চিতিয়ে শুয়ে থাকা গরম পিচরাস্তা, মাটি আর মোড়াম মেশানো কাঁচা রাস্তার ধুলো মেখে কৈশোর চিনতে যেতাম। থর থর ঠোঁট কাপা নারীর উষ্ণতা পেতে চাইতাম। পাইকপাড়া গ্রামের এক নারী ক্লাস নাইনে হাঁটুর নীচে নীল পাড় শাড়ি পড়ে স্কুলে যেত। তার আমাকে মনে ধরেছিল। সে মেয়ে শুনেছি বিঞ্জানী হয়ে আমেরিকায় আছে। সেই মেয়ের আমাকে মনে ধরলেও আসতে দেয়নি আমাদের পাড়ায় আর এক মেয়ে। এই সেই মেয়ে যে আমাকে কুরুশ কাটার অপূর্ব এক গেঞ্জি বুনে দিয়েছিল। ‘ওলি বার বর ফিরে আসে’। সেকথা আজ থাক। প্রজাপতি ও প্রজাপতি— তুমি বারে বারে পাখনা মেল। আজ গদ্যের প্রজাপতি।
বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রকৃত স্রষ্টা রাজা রামমোহন রায়। রাজা রামমোহন রায়ের আগের যুগে গদ্য সাহিত্য কতটা সামাজিক ছিলো? কেরি সাহেব, ফোরট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতজনেরা ছিলেন। তারাও উপেক্ষিত ছিলেন বলেই অনেক বিশেষঞ্জের অভিমত। কেউ কেউ বলেন আঠার শতক নাকি চিহ্নিত হয়েছিল বন্ধ্যাকাল বলে। এটা মানতেই আমাদের দেশীয় অভিজাত শ্রেণীর কাছে বাংলা গদ্যের কোনও গ্রহণযোগ্যাতা ছিল না। ইতিহাসবেত্তারা বলেন, উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের আগে পর্যন্ত আমাদের বাংলা ‘বাংলাগদ্য’ চিনতে পারেনি। সংস্কৃত ভাষার দাপটে বাংলাগদ্য ‘গদ্যছন্দ’ খুঁজছিল। এই শারদ বেলায় ভাষা সাহিত্য আমাদের বিষয় নয়। নিপবিথী বনে আমরা ফিরছি গদ্যের প্রজাপতির খোঁজে।              
শরতের সেই শিউলি সকালে কত প্রজাপতি নীল আকাশের নীচ দেখেছি। সেই প্রজাপতিগুলি ছিল কবিতার প্রজাপতি। ওদের ভাষা সেদিনও বুঝিনি আজও বুঝি না। আজ রবাহুতের ন্যায় এই কলম লিখতে বসে মনে পড়ছে একজনের কথা। তিনি ভাগ্যকাকু। ভাগ্যকাকু করতেন কি পূজোর চারটে দিন একটা খদ্দরের শান্তিনিকেতনী ব্যাগে করে ফুল নিয়ে যেতেন। সকালের অঞ্জলি হয়ে গেলে সেই ফুল ব্যাগ থেকে বের করে যারা দাঁড়িয়ে থাকতেন তাঁদের দিতেন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন রকমের ফুল থাকত ভাগ্য কাকুর ব্যাগে। জবা, শিউলি, টগর, শাপলা, পদ্ম, বেলফুল, বেলপাতা, আরও যেসব ফুল অঞ্জলি দেওয়ার জন্য লাগে তিনি সেইসব ফুল আমাদের মতো কম বয়সীদের হাতে দিতেন। অঞ্জলি হয়ে গেলে একটি ছেলের ব্যাগ থেকে কাঁচের বয়েম বের করে নারকেলের নাড়ু আর তিলের নাড়ু দিতেন প্রায় সবাইকে। ছেলেটি ভাগ্যকাকুর সঙ্গেই আসত। কম বয়সী ছেলে ওর নাম রাখাল। ভাগ্যকাকু খাদির পায়জামা আর ফতুয়া পড়তেন। সঙ্গের ছেলেটারও একই পোশাক। পরে জেনেছিলাম ভাগ্যকাকু ওই ছেলেটিকে রাস্তার থেকে ধরে এনে পড়াচ্ছেন। অনাথ ছেলে। ভাগ্যকাকু থাকতেন নলহাটি শহরের পশ্চিমদিকে বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের কাছে একটি আশ্রমে। আমাদের পাড়ার পরে একটা চালকল ছিল। তারপর ছিল আশ্রমটা।  আশ্রমটার নাম ‘সর্বোদয়’ আশ্রম।            
 সর্বোদয় আশ্রমের আমরা অনেকবার গেছি। ভাগ্যকাকুর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে ঘনঘন যেতাম। তার কারণ ছিল গেলেই কিছু না কিছু খাবার পাওয়া যেত। এই আশ্রমে চরকা কাঁটা হতো। গুটিপোকা সেদ্ধ করে সিল্ক তসরের সুতো তৈরি হতো। আশ্রমে গুটিপোকার চাষ হতো। তার জন্য তুত গাছের চাষও করা হতো। আশ্রমের সবজি বাগান আলাদা ছিল। গোয়াল ঘর ছিল। গোয়ালে আট দশটা গরু থাকত। বছরভর দুধ দিত এইসব গরু। সেই দুধের দুধ দিয়ে নারকেলের নাড়ু তৈরি করতেন ভাগ্যকাকু আর তার আশ্রমিকরা। তিলের নাড়ুও আশ্রমে তৈরি হতো। আমরা জানতাম ভাগ্যকাকু স্বদেশী ছিলেন। আমার মনে আছে প্রথমদিন আমি যেদিন আশ্রমে যাই আমার এক বন্ধু সঙ্গে ছিল। তখন আমরা ক্লাস ফাইভে পড়ি। তার আগে আশ্রমে গিয়েছি কিন্তু ভেতরে ভয়ে যাইনি। যেদিন ভেতরে যাওয়ার সুযোগ এলো ভাগ্যকাকু তার ঘরে নিয়ে গেলেন। আশ্রমের সব ঘরের দেওয়াল পাকা হলেও চাল ছিল টিনের ছাউনি। ভাগ্যকাকুর ঘর ছিল অতি সাধারণ। কাঠের চৌকির বিছানায় একটা শতরঞ্চির উপর সাদা ধবধবে চাদরপাতা। বালিশও সাদা ওয়ার। চৌকির পাশে একটা টেবিলের উপর বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা বই। গাঁধিজি,রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জহরলাল নেহরু, সুভাষ বসু সহ আরও অনেকের। ভাগ্যকাকুর ঘরের দেওয়ালে ছিল ওইসব ব্যক্তিত্বদের ছবি। ছবিগুলি বেশিরভাগই ক্যালেন্ডার কেটে বাঁধিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাগ্যকাকু সেদিন আমাকে আর আমার বন্ধুকে কাঁসার গ্লাসে একগ্লাস করে ভর্তি ঘন গরুর দুধ খেতে দিয়েছিলেন। আমরা দুজনেই লক্ষ্য করেছিলাম ভাগ্য কাকুর ঘরের পাশেই ছিল রান্নাঘর। জানলা দিয়ে দেখেছিলাম বড় বড় দুটো কাঁসার গামলায় দুধ গরম করে ঢেকে রাখা আছে।
পরের ঘটনা না লিখলে এইপর্বটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ওই রান্নাঘরেও ছিল একটা বড় জানলা। আমরা জানতাম দুপুরের সময় ভাগ্যকাকু আশ্রমে থাকেন না। জন সংযোগ করতে বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন সন্ধ্যের সময়। আমরা তিন বন্ধু ঘন খাঁটি দুধের লোভে মাঝে মাঝে আশ্রমে গিয়ে চুরি করে দুধ খেতামরান্নাঘর বন্ধ অবস্থায় কি করে সম্ভব ছিল দুধ খাওয়া? আমাদের এক বন্ধু ছিল চতুর বুদ্ধির উদাহারণ। এসব বিষয়ে ওর মাথা থেকে বেরতো দুষ্টু   বুদ্ধি। গোপনীয়তার কারণেই কোনও বন্ধুর নাম উল্লেখ করছি না। দুষ্টু বুদ্ধির বন্ধুটি প্রস্তাব দিল রান্নাঘরে বড় তালা দেওয়া। কিন্তু জানলা খোলা। জানলায় মোটা তারের জালি। বিড়াল যাতে ঢুকতে না পারে। জানলার পাল্লা খোলা রাখা হোত হাওয়া বাতাস আসবে সেই কারণে। দুধ, রান্নাকরা খাবার যাতে নষ্ট না হয়। দুধ ঢাকা থাকত ভারি ভারি দুটো কাঁসার রেকাবি দিয়ে। তাহলে কি করা যায়? প্রথমে লোহার জালি একটা মোটা স্ক্রিউ ড্রাইভার দিয়ে বড় করে নেওয়া হয়েছিল। পেঁপে গাছের ডাল ভেঙ্গে পাতা ছাড়িয়ে পাইপ করে নেওয়া হল। পেঁপে গাছের ডাঁটা ব্যবহার করে অনেক কসরত করার পর একটা পাত্রের ঢাকনা কিছুটা ফাঁক করা গেল। তারপর আমাদের আর কে পায়? ‘চিচিং ফাঁক’। আমরা তিন জনে ওই পাইপ ব্যবহার করে অনেকটা দুধ খেয়ে ফেললাম। বেশিদিন পারিনি। কারণ কয়েকদিন এটা করার পর একদিন দেখি আমাদের পেছনে ভাগ্য কাকু দাঁড়িয়ে আছেনমুচকে মুচকে হাসছেন। আমরা ছুটে পালাতে যাচ্ছিলাম। ভাগ্যকাকু বললেন, ‘আহা পালাচ্ছ কেন? লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এই বয়সে এরকম সবাই করে । এসো আমার সঙ্গে এসো আমরা তাঁকে অনুসরণ করলাম। তিনি আমদের একটা লাইব্রেরি ঘরে নিয়ে গেলেন লাইব্রেরি ঘরের বড় জানলা থেকে ফুলের বাগান, সবজি বাগান দেখা যায়। পদ্যের প্রজাপতির দল সেখানে বাঁধা বন্ধনহীনভাবে ঘুরে ঘুরে ফুলের মধু খাচ্ছে। পাঠাগারের দেওয়ালে দেখলাম কয়েকটা লাইন লেটার প্রেসের মোটা হরফে লিখে ছাপানো হয়েছে। সেই লেখা কাঠের ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে। পণ্ডিত জহরলাল নেহরুর একটা উধৃতি। ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় নেহরু বলেছিলেন, ‘’যে যে ধর্মের মানুষ হই না কেন, আমরা সবাই সমানভাবে ভারতের সন্তান, আমাদের প্রত্যেকের সমান অধিকার, সমান সুযোগ ও সমান দায়িত্ব আছে।‘’ সম্প্রতি একটি বাংলা দৈনিকে ইতিহাসবিদ এবং সাংসদ সুগত বসু ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ অগস্ট মধ্যরাত্রিতে পণ্ডিত নেহরুর বক্তব্যের অংশটি উল্লেখ করেছেন। সেদিন ভাগ্যকাকু আমাদের ওই উধৃতি দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘’তোমাদের যখন দুধ খেতে ইচ্ছে করবে চলে আসবে। আমি না থাকলে রাখালকে বলবে রাখাল তোমাদের দুধ দেবে। আমাদের আশ্রমের দুধ বিক্রি করা হয়না। আমরা খাই। আশ্রমে যারা কাজ করে তাঁরা খায়। আর অতিথি এলে তাঁদের দেওয়া হয়। দুধের সড় দিয়ে ঘি করা হয়। সেই ঘি একই রকমভাবে আমরা সবাই খাই। যৌথভাবে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন না করলে আমরা মানুষ পাব কোথায়?’’
সেদিন থেকেই আমাদের মূল্যবোধ গড়ে উঠেছিল? পাঁচ-ছটা পরিবারের ছেলমেয়েদের বড় হয়ে ওঠার যূথবদ্ধ জীবনযাপন ছিল সর্বজনীন নাটমন্দিরের মতো। সেই নাটমন্দিরের কারিগরেরা আজ আর কেউ বেঁচে নেই সম্ভবত দু-একজন থাকলেও বয়সের ভারে তাঁদের আজ অনেক সীমাবদ্ধতা। তারাই আমাদের গড়ে দিয়ে গেছেন। কত রকমভাবে আমাদের শৈশব কৈশোর সেই অভিভাবকেরা গড়ে দিয়ে গেছেন। সেই ভিতের উপরে দাড়িয়েই আজ খাটি মানুষ খুঁজি। আসল মানুষ খুঁজি। শিক্ষিত মানুষের শিক্ষিত বিবেক খুঁজি। আরও অন্যদের মতো তারাও বলে গেছেন, ইস্ট দেবতা তোমার হ্রদয়ে বাস করছে। তাঁকে খুঁজে নিতে হবে শিক্ষায়, জনশিক্ষায়, ঞ্জানে, সামাজিক বন্ধনে।                                            


Saturday 2 September 2017

ভারতীয় ভাষা, সভ্যতা সাগরের মতো- বাঙালি সংস্কৃতি গঙ্গার অববাহিকা

ভারতীয় ভাষা সভ্যতা সাগরের মতো
বাঙালি সংস্কৃতি গঙ্গার অববাহিকা: 
সম্প্রতি শিলিগুড়ি থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করেছিল। আমি তাঁর কাছে জানতে চাই পাহাড়ের কি অবস্থা? কবে বনধ উঠবে? স্থায়ী সমাধান কি কিছু দেখা যাচ্ছে? আত্মীয় বন্ধুটি বলল, ‘স্থায়ী সমাধান হলেও হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকের পরে। তবে মনে হচ্ছে পাহাড়ে গোষ্ঠী রাজনীতি নতুন করে শুরু হবে। আমরা সমতলবাসী দ্রুত পাহাড় সমস্যার সমাধান চাই। টানা বন্ধে সমতলের মানুষেরও ব্যাবসায়ী স্বার্থ এবং সামাজিক সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়ছে। দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে রাজ্যের যে পর্যটন শিল্প সে সবের কি হবে জানি না। হেরিটেজ বাড়ি, বিখ্যাত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’ বন্ধুর আক্ষেপের সঙ্গে বহু শিল্পী, বুদ্ধিজীবীর আক্ষেপ মিলে যাচ্ছে। কলকাতা বা দেশের অনেক খ্যাতনামা ব্যাক্তি আছেন যাঁদের শৈশব কৈশোর দার্জিলিং, কালিম্পং-এর মতো শৈল শহরের মিশনারি স্কুল, হস্টেলে কেটেছে। তারাও আজ উদ্বিগ্ন। যেমন চলচিত্র অভিনেতা তথা পরিচালক অঞ্জন দত্ত। তাঁর ব্যক্তি জীবনের অনেকটাই জুড়ে আছে দার্জিলিং। তাঁদের সঙ্গে আমার বন্ধুটির কথা যেন অনেকটাই মিলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পাহাড়ের দলগুলি নিয়ে ২৯ অগস্ট নবান্নে যে বৈঠক হয়েছে সেই বৈঠকে রাজ্য সরকার, গোর্খা জন্মুক্তি মোর্চা এবং পাহাড়ের অন্যান্য দলের আলোচনা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে। পাহাড় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল বাংলা ভাষা চালু করাকে কেন্দ্র করে। সেই আলোচনা পথ বদলে পাহাড় ‘গোর্খাল্যান্ড’-এর দাবিতে রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। ৮ জুন পাহাড়ে রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক চলাকালীন পাহাড়ে গন্ডগোল শুরু হয়। যেটা এই রাজ্যের সুশিক্ষিত সচেতন নাগরিক অতীতেও  চায়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতেও চায় না। ২৭ অগস্ট রবিবার কলকাতার লেক ক্লাবে ‘ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কল’-এর একটি বিতর্কসভা ছিল। সভার মত ছিল, ‘বাংলা ভাষার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে’। এই সভায় প্রবীণ কবি শঙ্খ ঘোষ বলেন, ‘’নীচের তলায় বাংলাও গুরুত্বপূর্ণ। শহরের লেখাপড়া শেখা মানুষের দৃষ্টিতে সব কিছু দেখা ঠিক নয়।‘’ এই কথা বলার আগে শঙ্খ ঘোষ একটি গল্প শোনান আমাদের। তিনি বলেন, বিলেতের লেখক উইলিয়ম রাদিচে। এবং অবশ্যই তিনি বাংলাবিদ। বিলেতের ছাত্রেরা আরও ভালো বাংলা শেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় আসতে চেয়ে লেখকের মতামত জানতে চেয়েছিল। রাদিচে সেইসব আগ্রহী ছাত্রদের কলকাতা যেতে নিষেধ করেন। রাদিচে বলেন, ‘ভালো ইংরেজি শিখতে হলে কলকাতায় যেতে পার! ভালো বাংলার জন্য যাবে ঢাকা।’ বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম পথিকৃৎ এবং অভিভাবক কবি শঙ্খ ঘোষ আমাদের হাত ধরে চিনিয়ে দিলেন উচ্চ শিক্ষিত বাংলার নাগরিক আমরা কোথায় আছি।
এই সূত্রে পাহাড়ের ইতিহাসটা আর একবার চর্বিত চর্বণ করে নেওয়া যাক। চাণক্য নীতি সেই কথাই বলে না? ইতিহাস না জানলে একটা অঞ্চলকে আলতো করে দেখা হয়। যে কোনও অঞ্চলের গভীরে জানতে হলে সেই অঞ্চলের ইতিহাস জানাটা অবশ্যই জরুরি।
দার্জিলিং শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার শব্দ "দুর্জয় লিঙ্গ" থেকে। এর অর্থ " অদম্য ক্ষমতার অধিকারী শিব, যে হিমালয় শাসন করে"।
সিক্কিম, নেপাল, ভূটান ও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীন ভাবে জড়িত দার্জিলিং এর ইতিহাস । ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্য্যন্ত সিক্কিম রাজ্য দ্বারা দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড়ী অঞ্চল এবং নেপাল রাজ্য দ্বারা শিলিগুড়ি সংলগ্ন তরাই সমতল অঞ্চল শাসিত হত। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে নেপালের গুর্খারা সমগ্র পাহাড়ী অঞ্চল অধিকারের চেষ্টা শুরু করলে সিক্কিম রাজ্যের ছোস-র্গ্যাল তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপালীরা তিস্তা নদীর তীর পর্য্যন্ত সিক্কিম সেনাবাহিনীকে হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় সমগ্র উত্তর সীমান্তে নেপালীদের বিজয়যাত্রা রুখতে ব্রিটিশরা তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ইঙ্গ-গুর্খা যুদ্ধের ফলে গুর্খারা পরাজিত হয়ে পরের বছর সগৌলি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে সিক্কিম রাজ্য থেকে অধিকৃত মেচী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল নেপালীরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চল ছোস-র্গ্যালকে ফিরিয়ে দিয়ে সিক্কিম রাজ্যের সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করে।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে লেপচা ও হিন্দুস্থানী ভাষায় রচিত এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দার্জিলিং অঞ্চলের লীজ প্রদান করা হয়।( নেপালি ভাষা নয়)
১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রতিনিধিদল নেপাল-সিক্কিম অঞ্চলের সীমান্তে তাদের যাত্রাকালে দার্জিলিং অঞ্চলে অবস্থান করার সময় এই স্থানে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ছোস-র্গ্যালের নিকট হতে মহানন্দা নদীর পশ্চিমাঞ্চল লীজ নেন।১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে সিক্কিম রাজ্য আর্থার ক্যাম্পবেল নামক কোম্পানির একজন আধিকারিক এবং জোসেফ ডাল্টন হুকার নামক একজন উদ্ভিদবিদ ও অভিযাত্রীকে গ্রেপ্তার করলে কোম্পানি তাঁদের মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়, যার ফলে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোম্পানি ৬৪০ বর্গমাইল (১,৭০০ কিমি২) এলাকা অধিকার করে নেয়। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভূ্টান ও ব্রিটিশরা সিঞ্চুলা চুক্তি স্বাক্ষর করলে কালিম্পং ও পাহাড়ের গিরিপথগুলির ওপর ব্রিটিশ রাজের অধিকার হয়।
ব্রিটিশ ও সিক্কিমের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিবাদের ফলে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিস্তা নদীর পূর্ব তীরের অঞ্চলগুলি ব্রিটিশদের হস্তগত হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১,২৩৪ বর্গমাইল (৩,২০০ কিমি২) ক্ষেত্রফল এলাকা নিয়ে দার্জিলিং জেলা গঠিত হয়, যা বর্তমানে একই আকারের রয়ে গেছে। 
১৮৯০ গ্রীষ্মকালে সমতলভূমির প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আধিকারিকেরা দার্জিলিংয়ের মনোরম আবহাওয়ায় বসবাস শুরু করলে দার্জিলিং একটি শৈলশহর ও স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
আর্থার ক্যাম্পবেল ও রবার্ট নেপিয়ার এই শৈলশহর গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলে ১৮৩৫ থেকে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ ও ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হলে দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যা শতগুণ বৃদ্ধি পায়।
১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমতলের সঙ্গে সংযোগকারী প্রথম সড়কপথ নির্মিত হয়।
১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য অস্ত্রাগার নির্মিত হয় এবং ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এই শহরকে পুরসভায় পরিণত করা হয়।১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ শুরু হলে বেশ কিছু ব্রিটিশ চা প্রস্তুতকারক এই স্থানে বসবাস শুরু করেন। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং শহরকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করা হয়। স্কটিশ ধর্মপ্রচারকরা ব্রিটিশ আধিবাসীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল চালু হলে শহরের উন্নয়ন আরো দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটিশ শাসনকালের শুরুতে দার্জিলিংকে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত জেলা হিসেবে গণ্য করা হত, যার ফলে ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য জেলাতে প্রযোজ্য আইন এই অঞ্চলে বলবত হত না। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলকে একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দার্জিলিং অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।[
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সশস্ত্র বিপ্লবীরা বাংলার গভর্নর স্যার জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টাও করেন।
১৯৪০-এর দশকে এই জেলার চা শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিয়দংশ নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পাহাড়ে নেপালীরা প্রধান জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করলেও তরাই সমতলে ভারত ভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিশাল সংখ্যক বাঙালি উদ্বাস্তুরা বসবাস শুরু করতে শুরু করে। নেপালীদের দাবীগুলির প্রত্যুত্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিস্পৃহ মনোভাবে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দার্জিলিংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও নেপালী ভাষার স্বীকৃতির দাবী ওঠে।
১৯৭৫খ্রিস্টাব্দে সিক্কিম নামক একটি নতুন রাজ্যের উদ্ভব হলে এবং ভারত সরকার দ্বারা নেপালী ভাষাকে ভারতীয় সংবিধান অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের নিস্পৃহতা লক্ষ্য করে এই অঞ্চলে গোর্খাল্যান্ড নামক একটি নতুন রাজ্য তৈরীর জন্য বিংশ শতাব্দীর আশির দশক জুড়ে ব্যাপক ও হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামক একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদলের সৃষ্টি করা হয়, যাদের ওপর এই জেলার প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। 
২০০৮-০৯ সাল নাগাদ ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পৃথক রাজ্যের দাবী মেনে নিতে অস্বীকৃত হলে পুনরায় ধর্মঘট আন্দোলন শুরু হয়।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে একটি চুক্তির ফলে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামক একটি নতুন স্বায়ত্তশাসিত পার্বত্য পরিষদ গঠন করে এই জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়। (Courtesy: Mahendra Nath Bala, Facebook)
আন্দোলনের শুরু ‘বাংলা ভাষা’ বাধ্যতামূলক করা হবে কি হবে না এই নিয়ে আমাদের রাজ্যে বাংলা ভাষা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল রাজ্য শিক্ষা দপ্তর জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে কোনও বিঞ্জপ্তি জারি হয়নি। বিষয়টা আলোচনার স্তরে ছিল। রাজ্যের ভাষা বিতর্ক আজকের নয়। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতই এই বাংলার অভিযোগ ‘হিন্দি ভাষা’ কে রাজ ভাষা করে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। বিশেষত জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি গড়ে তোলার অন্যতম রাজনৈতিক দল বিজেপির এজেন্ডাতে আছে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’। বিজেপি বিরোধী দলগুলির এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। উল্লেখিত অবস্থানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা দিলে প্রাক্তন তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বর্তমানে দেশের উপ রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন,

‘’Minister Venkaiah Naidu also said that it was necessary for people to learn their mother languages as the "dominance of English medium has shadowed their cultural heritage".
All India | Edited by Divyanshu Dutta Roy | Updated: June 24, 2017

 Union Minister Venkaiah Naidu today called Hindi the "national language" earning him a sharp rebuke from the opposition and a fact check on social media. "Hindi is our national language, our identity and we should be proud of it," Mr Naidu said, adding that "it's very unfortunate that we are obsessed with English" which, according to him, was detrimental to the nation's progress.

Opposition leaders tore through the comments, pointing out that the Indian Constitution does not mark any language as "national". Under its Article 343, Hindi and English are assigned the status of official languages.’’

ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখক এবং কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ২৪ জুন টুইটারে টুইট করেন,  

‘’Hindi is NOT our national language. It is India's most widely-spoken language & useful to know. But it cannot &should not be imposed on anyone https://twitter.com/JayasreeVijayan/status/878514646231113728 …’’

ন্যাশন্যাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা ওই একই দিনে টুইটারে জানতে চান দেশ কবে জাতীয় ভাষা পাবে?  "When did we get a national language?"

কর্ণাটকে টিউব রেলে বিঞ্জপ্তির কারণেও ‘হিন্দি ভাষা’ নিয়ে আর একদফা বিতর্ক হয়। কয়েকটি আঞ্চলিক দল বিজেপির নেতৃত্বে কেন্দ্রের কোয়ালিশন সরকারের উদ্যোগে ‘হিন্দি ভাষা’ চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করলে তৎকালীন তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নায়ডু আহমেদাবাদে সাংবাদিকদের বলেন, 
"It is unfortunate that everyone is bent upon learning English because it guarantees employment. Hence I want the nation to discuss, promote and learn our mother languages more and at the same time learn Hindi as well," Mr Naidu told reporters at an event in Ahmedabad.( Sources:News agency)  

গত ৭২ দিন পেরিয়ে গেছে। পাহাড়ে টানা বনধ চলছে। সাধারণ মানুষ সমাধানের রাস্তা কি হতে পারে সেই ধন্দে রয়েছে। কেউ কেউ রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার উপর ভরসা করে রয়েছে। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছে। পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে মানুষ আজ ক্লান্ত। যে করেই হোক দুর্গা পুজোর আগে একটা সমাধানের রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে। পাহাড়ের পর্যটন না হলে সাধারণ মানুষ কাজ হারাচ্ছে। রাজ্য সরকার এবং ভারত সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। আমি মনে করতে পারছি ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বার দু’ই তিনেক ‘লেপচা’ জনজাতি গোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তখন সন্তর্পণে মহাকরণে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। ২০১০ সালে আমি যে দৈনিকে চাকরি করতাম সেই দৈনিকের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আমার পরিষ্কার মনে আছে। দার্জিলিং-এ লেপচা বোর্ড গঠনের পরে একটার পর একটা বোর্ড গঠন হয়েছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন ইউপিএ সরকার এবং বর্তমান এনডিএ জোট সরকারের নির্দেশিকা মেনেই এই সব বোর্ড গঠন করেছেন পাহাড়ের উন্নয়নকে মাথায় রেখে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এমনটা হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
দুর্গা পুজোর আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। সেই কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯ অগস্ট, ২০১৭ রাজ্যের সদর দপ্তর নবান্নে পাহাড়ের দলগুলিকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রাজ্যের প্রথম সারির বিরোধী দলগুলি অংশগ্রহণ করেনি। এই বিষয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে সিপিএমের পাহাড়ের বর্ষীয়ান নেতা এবং বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘’আমাদের মতো বামপন্থী দলকে কি রাজ্য সরকারে কোন প্রয়োজন আছে? পাহাড়ে সমস্যা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে সিপিএম থাকার কি প্রয়োজন? তাই না? এই বিতর্কিত সময়ে সব কথা না বলাটাই সৌজন্য হয়, তাই নয় কি? আমাদের প্রস্তাব রাজ্য সরকার, গোর্খা জনমুক্তি এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধি রেখে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক। বর্তমানে পাহাড়ের যা অবস্থা একটা দল আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশদের কথা মনে পড়ছে। এরপর পাহাড়ে কি হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকছি।‘’
বিজেপির সর্ব ভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘’পাহাড়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সহ যে সব দল পাহাড় ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত তাঁদের সর্বদলীয় বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। এবং এটাই যুক্তি সঙ্গত বলে মনে করি। ওই বৈঠক নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান হচ্ছে গোরখাল্যান্ড ইস্যুতে যা কিছু করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই করতে হবে। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে কিছু করা হবে না।‘’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাহাড়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘’মুখ্যমন্ত্রীর উচিত পাহাড়ের উত্তেজনাকে কমিয়ে আনা। সৌহার্দপূর্ণ আলোচনায় সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।‘’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা আব্দুল মান্নান একান্ত সাক্ষাৎকারে কিছুটা উস্মা প্রকাশ করে বললেন, ‘’আমি যা বলছি সেটাই লিখবে। রাজ্য সরকারের কাছে যে ধরণের গণতান্ত্রিক সৌজন্য পাওয়া উচিত আমরা সেটা পাই না। সেই সৌজনা এবং সম্মান না পেলে আমরা কি করে আমাদের অবস্থান জানাব?’’ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, ‘’রাজ্য সরকারের ডাকা সর্ব দলীয় বৈঠকে আমাদের অবশ্যই যাওয়া উচিত ছিল। কারণ গোরখ্যাল্যান্ড চুক্তি নতুন ভাষায় আমাদের সরকার করেছিল। বর্তমানেও আমরা ঐক্যবদ্ধ ভারতের কথা বলি। গোর্খা, নেপালি সহ অন্যান্য ভাই বোনেদের সঙ্গে নিয়েই অখন্ড ভারতের কথা বলতে হবে। সেটাই আমাদের অবস্থান।‘’
তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘’আমাদের দিদি তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য এবং দেশের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা পাহাড়ের মানুষের ভালো হবে এই ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী চান পাহাড়ে শান্তি ফিরুক। পাহাড়ে ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে হোক। জনজীবন স্বাভাবিক হোক। পর্যটন মরশুমে পাহাড়ে শান্তি ফিরুক। পাহাড়ে শান্তির বাতাবরণ ফেরাতে রাজ্য প্রশাসন সব রকম সাহায্য করবে।‘’
উত্তর পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হচ্ছে শিলিগুড়ি। পাহাড়তলির মেঘেদের কোলে কোলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। কাছেই ‘চিকেন নেট’। এ বছর ১৫ অগস্ট আমরা ভারতের স্বাধীনতার ৭০বছর আড়ম্বরপূর্ণ মেজাজে উদযাপন করলাম। কিন্তু উত্তর পূর্ব ভারত? উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষের শিক্ষা, গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার, তাঁদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির গ্রহণ বিষয়ে আমরা এই সেদিন পর্যন্ত উদাসিন ছিলাম। উত্তর ভারতের নাগরিকদের আমাদের মতো সুশিক্ষিত নাগরিক কিছুটা নাক উঁচু করে দেখে থাকি। দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা ওইসব রাজ্যের নাগরিকদের ভাবেত বাধ্য করছিল ওরা ‘অন্য মানুষ’। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ নতুন নীতি আনলেন। সেই নীতি ছিল ‘লুক ইস্ট’ পলিসি। এই নীতির পরে উত্তর পূর্ব ভারতের নাগরিক জীবনে ‘পোষ্ট ট্রুথ’ ভারতের আলো এসে অন্ধকার থেকে মুক্তির রাস্তা বলে দিচ্ছে। ওই সব রাজ্যের মানুষজন ‘নেশন স্টেট’ নিয়ে কি আদৌ চিন্তিত ছিলেন? ওইসব রাজ্যের নাগরিকদের প্রতি ধারবাহিক উদাসীনতা ছিল এক অকথিত অধ্যায়। রাজনীতি আর রাষ্ট্রনীতির অপরিনীত এক অমোঘ দর্শন ছিল কি সেটা? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্ব ভারতের উন্নয়নের কথা বলছেন। এই কথা শুধু বললে হবে না। ভারত নামক অখন্ড এক আধুনিক রাষ্ট্রের কথা বলব। অথচ সারা দেশের নাগরিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করব সেটা আম নাগরিকের কাছে আজও প্রশ্ন ‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়’? উত্তর পূর্বের মানুষ ভারতে সামাজিক অধিকার এবং নাগরিক অধিকার কবে পাবে?

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানতে পারছি সুপ্রিম কোর্টের নয়জন বিচারপতি তাঁদের রায়ে ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলেছেন। ৫৪৭ পৃষ্ঠার রায় তাঁরা শেষ করেছেন ইতি পূর্বে বহুবার উচ্চারিত একটি পঙক্তি উধৃত করে। ‘দি ওল্ড অর্ডার চেঞ্জেথ, য়িল্ডিং প্লেস টু নিউ’। বাংলায় বলা যায় পুরানো ব্যবস্থা বদলায়, নতুনের পরিসর ছেড়ে দিতে। রবীন্দ্রনাথের গানেও আমরা পাই ‘কতবার ভেবেছিনু আপন ভুলিয়া/ তোমার চরণে দেব হৃদয় খুলিয়া.........’’