Friday 20 October 2017

ভারতের বামপন্থীরা চ্যালেঞ্জ নিতে চাইছেন?

ভারতের বামপন্থীরা চ্যালেঞ্জ নিতে চাইছেন? 
আসুন প্রথমে আমরা উল্লেখ করি ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার ৯৮তম দিনে  কলকাতায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার। আমাদের দেশের প্রথম সারির বামপন্থী দল সিপিএম এই আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এই আলোচনা সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এবং দলের পলিটব্যুরোর  অন্যতম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র তাঁর কমরেডদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, দলের আসন্ন সম্মেলন গুলিতে শুধু ব্যক্তি সমালোচনা ছেড়ে নীতির আলোচনায় জোর দিতে হবে। আমরা যারা সূর্যকান্তবাবুকে চিনি তারা বলতে পারি, যে অবস্থান থেকে তিনি নগর সভ্যতায় উঠে এসেছেন এবং দলের প্রথমসারির নেতা হয়েছেন তিনিই এই সত্য কমরেডদের মনে করিয়ে দিতে পারেন। পেটিবুর্জোয়া মূল্যবোধ ভেঙ্গে বেড়তে না পারলে এই বক্তব্য রাখা সম্ভব কি? প্রশ্ন তুলে দেওয়া যায়। 
সংসদীয় গণতন্ত্রে ভারতীয় বামপন্থীদের একটা অংশ যে উচ্চতায় সামাজিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন সেইদিন বামপন্থীদের আজ আর নেই। ‘গোলাভরা ধান’, ‘বইভরা স্বপ্ন’,  ‘ক্যানভাসে আঁকা ফ্যান্টাসী’, ‘দলীয় বন্ধন’ প্রভৃতি বিলাসিতা ছিল কি? ‘সদর দুর্গ’ আগলে না রাখতে পারার কারণে আজ রাস্তার লালগাঁধা ফুলের মত লালপতাকার মিছিল দেখে অতীতের স্মৃতি হেঁটে এসে মুচকি হাসে।  সব কিছু কি বর্তমান ভারতে ঘোলাটে হয়ে গেছে বামপন্থীদের কাছে? খুব সম্ভবত। বিজেপি নামক দলটির ভারতে ধুমকেতুর মতো উত্থানের পরেই কি বাস্তব আর স্বপ্নের এই পরিহাস? ‘মানবতা’, শিকল ছেঁড়া হাতকে ভুলে থাকা, বামপন্থার শিকড়কে ভুলে যাওয়া এই সবই কি বর্তমান ভারতের বামপন্থীদের কাছে একমাত্র পরিহাসের কারণ? ভালো খাওয়া, আরও ভালো ভোগ করা, নিজেদের বৃত্তে নিজেদের মুল্যায়নে ‘তুই খা আমি খাই’, ‘আমরাই সর্ব শ্রেষ্ঠ’, ‘আমরাই একমাত্র পৃথিবীর এগিয়ে থাকা অংশ’ ভেবেই কি এই বাংলা তথা ভারতের বামপন্থীরা চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যর্থ হচ্ছিল? দিল্লি, হায়দারাবাদ সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের তরুণ ছাত্রনেতারা পথ দেখিয়ে বামপন্থী নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এই আন্দোলন একটা আলোর রেখা অবশ্যই তবে দেশের বর্তমান রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেক্ষাপট আরও কিছু দাবি করে।    
আমার সীমাবদ্ধ ঞ্জান এই অভিমত অনুমোদন করে না যে দেশের বামপন্থীদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছেআমাদের রাজ্যে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠনের পর বামপন্থীরা বিশেষত সিপিএম নামক দলটি নিজেদের নীতি, কৌশল নিয়ে অনেক ময়নাতদন্ত করেছে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, শিল্পায়ন নিয়ে নিজেদের ভুলগুলি চিহ্নিত করে আবার আন্দোলনে ফিরতে চাইছে। এই সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। ২০১১ সালের পর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি নামক ভারতের একটি দক্ষিণপন্থী দলের উত্থান। নেতৃত্বে নরেন্দ্র মোদী নামক এক ঝড় বা আঁধি এবং অমিত শাহ নামক তাঁর অনুগত এক ম্যনেজার। বিজেপি দলের অর্থের প্রাচুর্য, সংবাদ মাধ্যমকে সুচতুরভাবে ব্যবহারে বামপন্থী নেতৃত্বের দিশাহারা অবস্থা ছিল। ভারতে বিজেপি নামক দলটির অশ্বমেধের ঘোড়া যত টগবগিয়ে ছুটছিল বামপন্থীরা নিজেদের ঘরানার আদর্শ এবং দর্শন মেনেই পিছনের দিকে চলে যাচ্ছিল। অবশেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে একদল নতুন প্রবীণ (বর্তমানে) বামপন্থী তারকা উপলব্ধি করলেন অতীতের ঘটনা এবং অভিঞ্জতার মতই দেশের ‘ছোট শত্রু’, ‘বড় শত্রু’ তথা প্রধান শত্রুকে চিহ্নিত করতে হবে। এই দুই শত্রু চিহ্নিত করতে গিয়ে সিপিএম নামক দলটির সদর দুর্গে জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি দলের তিনদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও এই বিতর্ক হয়েছে এবং সেই বিতর্ক পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক পর্যন্ত মুলতুবি রাখা হয়েছে। উল্লেখিত বিতর্ককে মাথায় রেখেই সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত দলের পলিটব্যুরো বৈঠকের পর সিপিএম যে প্রেস বিবৃতি দিয়েছিল আমরা সেটা একবার পড়ে নিতে পারি।

September 7, 2017
Press Communique
The Polit Bureau of the Communist Party of India (Marxist) met in New Delhi on September 6 & 7, 2017. It has issued the following statement:
Dismal Economic Scene
All the latest data coming in shows that the economic slowdown has accelerated after demonetisation and the threat of recession is looming ahead. The estimated GDP growth in the quarter of the current financial year i.e. April to June is 5.7 per cent. The GDP growth rate has fallen four quarters in a row. The index of industrial production for this quarter shows a growth rate of only 1.8 per cent. Exports are stagnant; and the non-performing assets of nationalised banks has increased to Rs. 8.26 lakh crores at the end of June 2017 (without adding interest).
The agrarian distress continues to deepen. Unemployment is soaring across all sectors of the economy and the latest data in the services sector show a contraction of economic activity.
The Modi government’s economic policies are proving to be disastrous for the country.
Growing Resistance & Struggles
The Polit Bureau noted with appreciation reports about the growing resistance to the neo-liberal economic policies and to the danger from the communal forces to democracy and polity of the country. It heard reports about the mounting struggles by various sections of the people.
The Polit Bureau decided to lend its support and solidarity with the September 18 all India convention being held by mass and class organisations Jan Ekta Jan Adhikar Andolan, the mobilisation by the youth against unemployment on September 28 and the three-day massive sit in before parliament by central trade unions and federations from November 9 to 11, 2017.
Rohingya Issue: Humanitarian Crisis
The expectations that Prime Minister Narendra Modi during his visit to the Myanmar capital would take up the issue of Rohingyas was belied. Unfortunately, the issue affecting lakhs of people in Myanmar who in the face of widespread attacks in their country have fled to neighbouring Bangladesh and India in their thousands did not find place in the talks between the Indian Prime Minister and the Myanmar leaders.
The Government of India must treat this as a humanitarian issue and immediately take this up with the governments of Burma and Bangladesh to resolve this issue. Those Rohingyas who have crossed over to India should be treated as refugees and not pushed back or deported. The matter should be taken up with the United Nations Human Rights Commission and the International Red Cross and the issue should be raised in other international fora as well.
NEET
There have been widespread protests in Tamilnadu and elsewhere against the NEET examinations. Following the unfortunate death of an aspiring student, Anitha in Tamilnadu, protests have escalated in the state.
Given the opposition to this mode of entrance tests from some states, especially from Tamilnadu which is seeking exemption, the central government should consider the opinion of the Tamilnadu people.
22nd Party Congress
The Polit Bureau would propose to the next Central Committee to hold the 22nd Party Congress at Hyderabad from April 18-22, 2018. The preparation of the documents and the agenda to be considered at the Congress has begun.

বলা চলে সীতারাম ইয়েচুরি অনেকটা এগিয়ে যেতে পারলেন। এগিয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ সিপিএম বৃহত্তম বামপন্থী দল হিসাবে বামফ্রন্টের অন্য তিনটি দল সহ আরও ১৩টি ছোট দলকে নিজেদের ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছে। মোট ১৭টি দলের জোট গণআন্দোলন কতটা করতে পারছে সেটা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি। কিন্তু ১৭ দলের জোট রক্তকরবীর মিছিল কলকাতার রাজপথ সহ জেলাস্তরে মিছিল করতে পারছে। বাম গণ সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বিপিএমও-র আহ্বানে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে ২২ অক্টোবর জাঠা কর্মসূচী আছে। এটাকে বামেদের বৃহত্তম সাফল্য হিসাবে না দেখলেও সাধারণ সাফল্য বলা যেতেই পারে।
২০১১ সালের পর সিপিএম নামক দলটির পর পর দু’দুটো পার্টি কংগ্রেস হয়ে গেছে। সেইসব কংগ্রেসে দলকে ভারতের সংস্কৃতির জলবায়ুর মত করে গড়ে তোলার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দলের খোল নলচে বদলে ফেলার কাজটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা করতে পেরেছেন? আমরা আমাদের রাজ্যে দেখতে পাচ্ছি বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময় যে সব জেলা স্তরের নেতা ক্ষমতা ভোগ করেছেন এবং ‘মাতব্বর’ ছিলেন তাঁরা আবার পুরনো মূল্যবোধ নিয়েই ফিরে এসেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করার ক্ষেত্রে ওইসব নেতৃত্ব অত্যন্ত দড়। নিজেদের দলের শক্তিতে না পারলেও তৃণমূল এবং বিজেপির কর্মীদের মোটা অর্থের  বিনিময়ে  কেউ কেউ  কাজে লাগাচ্ছেন। দলের উল্লেখিত কয়েকজন তথাকথিত বামপন্থী নেতা আর্থিক ক্ষমতায় আজও বলিয়ান। এরাই অতি কৌশলে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ‘সাধারণ মানুষ’-কে বিভ্রান্ত করছেন। কেউ কেউ আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে নিজেদের গোষ্ঠীকে সক্রিয় রেখে ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ করছেন। এইসব নেতৃত্ব নিজেদের এতটাই ‘মাতব্বর’ এবং ‘সবজান্তা’ সংস্কৃতির প্রতিনিধি মনে করেন দলের সাধারণ কর্মীরা এদের কাছে ‘দলিত’ হয়েই থেকে গেছে। অবহেলা অপপ্রচার করে ওইসব কর্মীদের কোণঠাসা করতে পারাটাই তথাকথিত বামপন্থীদের অন্যতম কাজ। অভিঞ্জতা বলে ছাত্রনেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্র্যাজিক উপাখ্যান। দল থেকে বিতাড়িত হলেও ঋতব্রতের প্রশ্নে বামপন্থীদের মধ্যে সৎ, কর্মঠ, সংসদীয় গণতন্ত্রের শিক্ষায় বিশ্বাস করে এমনসব শিক্ষিত কর্মীরা প্রশ্ন তুলছে। তরুণ নেতা ঋতব্রতের এই অবস্থা হওয়ার জন্য তথাকথিত ওইসব ভোগী নেতাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা মানে অন্যের মতটাও মেনে নেওয়া। দলে তথা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন রকমের মতামত উঠে আসতে পারে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতকে মেনে নিয়েই অন্যের মতকে খন্ডন করতে হয়। ২০ অক্টোবর আমেরিকায় দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন সেটা প্রণিধান যোগ্য।
দুজনেই বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসুরী। একজন তাঁর নিজের দল রিপাবলিকের। আর একজন সদ্য প্রাক্তন ডেমোক্র্যাটিক দলের। যাঁর জায়গায় ক্ষমতায় এসেছেন ট্রাম্প। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা আলাদা জায়গায় ভাষণ দিলেও তাঁদের বক্তব্যের সুর একই ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিরস্কার।
মার্কিন রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে ট্রাম্পকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বুশ ও ওবামা। গতবছরে মার্কিন নির্বাচনের সময় থেকেই বুশ ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত। তিনি নিজের রিপাবলিক দলের প্রার্থী থাকলেও ট্রাম্পকে ভোট দেননি। যা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছিল।
বুশ বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সরকারের উপরে মানুষের আস্থা কমেছে। প্রয়োজনের সময়ে প্রশাসন মুখ থুবড়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে নানা বাধা তৈরি হচ্ছে। অসন্তোষ বাড়ছে, ফলে বিরোধের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। যার ফলে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের অবকাশ তৈরি হচ্ছে যা কাম্য নয়।
এই অনুষ্ঠানে বাকী অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বুশের সহধর্মিনী লরা বুশ, প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব কন্ডোলিজা রাইস, রাষ্ট্রপুঞ্জের বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি। আর একটি অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা-ও হাজির ছিলেন। এই প্রথমবার নাম না করেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিষোদ্বাগার করেন তিনি। যে রাজনৈতিক সংষ্কৃতি ট্রাম্প আমদানি করেছে তার তীব্র সমালোচনা করেন ওবামা।
ওবামা বলেন, রাজনীতিতে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে আমাদের উনবিংশ শতাব্দিতে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটা সঠিক নয়। এর আগে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের এভাবে বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। বুশ ও ওবামা ট্রাম্পের নাম না নিলেও যেভাবে তাঁকে কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন তা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্রঃ সংবাদ সংস্থা
আমরা জানি একটা ক্লাবে যদি গোষ্ঠী রাজনীতি হয় সেখানে সিপিএম একটি শৃঙ্খলাপরায়ণ কমিউনিস্ট পার্টি। সর্বপরি আমরা বাঙালি। তিনজন একজায়গায় হলেই তিনরকমের মত। তিনরকমের গোষ্ঠী। যদিও ইতিহাসের সার সত্যিটা হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সব কিছু বোঝে। তাঁদের উপলব্ধিই সংগঠককে সামনের দিকে নিয়ে আসে। তাঁরা ভালো করেই জানে কোনটা নাটক আর কোনটা বাস্তব। দীর্ঘ সময় ওইসব তথাকথিত বামপন্থী নেতা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল বলেই দলের হাল হকিকত এই অবস্থায় এসেছিল। ২০১১ সালের পর রাজ্যের সব রকম উপনির্বাচনে বামেদের ভোট কমেছে। ভোট বেড়েছে বিজেপির। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটের আগে ওইদিনের সভায় কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘কেউ কেউ ভাবছেন, তৃণমূলকে দিয়ে বেজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। যে হেতু উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মুখে অনেক কিছু বলছেন। আবার কেউ কেউ ওঁকে নিয়ে তিতিবিরক্ত। তাঁরা ভাবছেন, বিজেপি-কে দিয়েই তৃণমূলের মোকাবিলা হবে। আমরা বলছি, এই দু’টোই আত্মহননের পথ।‘’ কমরেড মিশ্রের এই বক্তব্যকে সংবাদ মাধ্যম ব্যাখ্যা করছে নাম না করেও তৃণমূলত্যাগী মুকুল রায়কে নিয়ে বাম কর্মীদের ‘মোহ’ রাখার কিছু নেই। এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন সিপিএম দলের রাজ্য সম্পাদক।
আমাদের আলোচনায় কিছু ‘মাতব্বর’ গোছের বামপন্থী নেতাদের যে প্রসঙ্গ এসেছে তাঁদের প্রসঙ্গেই কি সতর্ক করলেন রাজ্য সম্পাদক? দলের কর্মীদের এটাই কি মনে করালেন যে অতীতে মুকুল রায়কে ব্যবহার করে সিপিএমের ক্ষতি করেছেন অনেকেই। নিজেদের গোষ্ঠীর রাজত্বকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুকুলবাবু ছিলেন তথাকথিত বামপন্থী নেতাদের সেরা অস্ত্র। এবং মুকুল রায় দক্ষ রাজনীতিবিদের মতই সিপিএমের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের ঘর গুছিয়ে নিয়েছিলেন। সেইকথা পোড় খাওয়া নেতা সূর্যকান্তবাবু মনে রেখেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘’একজন এর মধ্যে থেকে বাইরে বেরিয়ে কিছু কথা বলছেন। কোথায় গেলেন, কত দূর গেলেন? এটাও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। কিছু লোক নির্বোধ হতে পারেন! কিন্তু ওঁকে আমরা আগেও দেখেছি। লড়াইয়ের ময়দানেই আসল পরিচয় পাওয়া যাবে।!’’
১৯৪৬ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় সেই দেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল। এই কংগ্রেসে কমিউনিস্ট নেতা ডিমিট্রফ যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেই বইয়ের বাংলা অনুবাদ করিয়েছিলেন মুজফফর আহমদ। বাংলায় অনূদিত বইয়ে আছে ‘’আমাদের পার্টি; শ্রমিক শ্রেণীর পার্টি; অন্য রাজনৈতিক দল হইতে মার্কসবাদী পার্টি হিসাবে আমাদের মূলগত প্রভেদ আছে। অনেক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নিতান্তই সাময়িক, বিশেষ কয়েকটি উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তাহাদের উৎপত্তি, নির্দিষ্ট লক্ষ্য সাধন হওয়া মাত্র তাহারা মিলাইয়া যায়। আমাদের পার্টি ইহাদের মতো নয়। আমাদের পার্টির একটা ঐতিহাসিক রূপ আছে। সংগ্রামের মধ্যে আমাদের জন্ম, অবিচ্ছিন্ন লড়াই-এর ভিতর দিয়াই আমাদের পার্টির বৃদ্ধি ও প্রসার।‘’

সিপিএম দলকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। একথা আমরা আগেও বলেছি। আজও বলছি ভারতের গণতন্ত্রের এবং শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে যে শক্তি অন্তরায় হয়ে উঠবে সেই শক্তিকে চিহ্নিত করার দায়িত্ব বামপন্থীরা নিয়েছে। দেশকে জাতপাত, অসহিষ্ণুতার ভূগোলক থেকে সামনে আনার দায়িত্ব সমাজবাদী এবং মিশ্র অর্থনীতির জনক  জওহরলাল নেহরু নিজে নিয়েছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর ভারতকে একুশ শতাব্দীতে উত্তরণ ঘটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ছায়ায় কংগ্রেসের নতুন অগ্রদূত রাহুল গাঁধি দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায়। নতুন ভারতে নতুন নেতার সঙ্গে যোগ্য এবং গঠনমূলক সঙ্গত বামপন্থীদেরই করা উচিত।                                               

Wednesday 18 October 2017

স্পর্শকাতর সামাজিকতায় আলোর মুক্তি

স্পর্শকাতর সামাজিকতায় আলোর মুক্তি: 
দুর্গা পুজোর চারদিনের মধ্যে একদিন বিনা আমন্ত্রণে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। সময়ের নিয়ম নেই। বন্ধন নেই। উৎসবের সামাজিকতা নেই। আত্মীয়দের আত্মা এই কলকাতায় থাকলেও তাঁদের সীমান্ত বেড়া টপকানোর আমার অনুমতি নেই। যে অঞ্চলে থাকি সেই অঞ্চলের বড় রাস্তায় গত আট বছরে কতদিন হাঁটার সুযোগ হয়েছে? হুতোমকে জিগ্যেস করলে বলে দিতে পারে। এতটাই নিয়ন্ত্রিত সামাজিক আকাশ। কাঁধে সস্তার ঝোলা, খোলা আকাশ, মুক্ত মন নিয়ে আমি বেড়িয়েছিলাম। সামাজিক আলোর মুক্তির খোঁজে। কেউ বলে কাদের বন্ধনে বাইরে ঘোরেন? হুতোম বলে, ‘চাল নেই চুলো নেই যার সে গাজন সন্ন্যাসী সাজতে পারে না।’ সে তুমি আখড়ায় যাও, মঠে যাও, আশ্রমে থাক, কোথাও বন্ধন নেই। মরুতীর্থ হিংলাজে গেলেও কি মুক্তি আছে? কাঠ পোকার নিরাপত্তাও নেই আমার! প্রকৃতি যে মানব সত্তা চেনা এবং আপন সত্তার জন্য নিরাপত্তার শক্তি দেয়। আমি সেই সামাজিক কৌশল কবে কোন অগোচরে হারিয়ে ফেলেছি। নিজেই কি জানি? সল্টলেকের দিকটা কিছুটা ফাঁকা বলে চলে গিয়ে ছিলাম। গত বছরের মত নয়। প্যান্ট পাঞ্জাবিও নয়। পায়জামা পাঞ্জাবি ভাবতেও পারি না। নতুন জামার গন্ধ নিতে ভুলে গেছি, যেদিন আমার মাকে গভীর রাতের গঙ্গায় রেখে এলাম। মায়ের চিতায় শেষ জল কে দিয়েছিল? মনে নেই। বিন্দু বিন্দু সেই জল দেখে জঙ্গিপুর গঙ্গার জল আমার বুকে আজও ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল জলের আলোর ঢেউ হয়ে দুলতে থাকে। ওই গভীর রাতের শশ্মানের গঙ্গায় আলোর ঢেউ মায়ের সাদা থানের আচলের ঢেউয়ের মত ছিল। মা তুমি চলে গেছ। একবুক যন্ত্রণা আর অভিমান নিয়ে। আমরা আজও হেঁটে চলেছি লম্বা লম্বা পায়ে। আলুর ক্ষেত ধরে। ধান ক্ষেতের আল ধরে। সাদা খই, অচল পয়সার উপর দিয়ে হেঁটে চলেছি।  আমাদের নলহাটির বাড়ি, জবা, শিউলি, টগর, বেলি, রজনী গন্ধ্যা ফুলের ঘ্রাণ আমার চেতনায় আছে মা। পাতি লেবু, গন্ধরাজ লেবুর স্মৃতি বাবার ফেলে যাওয়া বিড়ির কৌটো, পিতলের লাইটার আজও নলহাটি গেলে খুঁজতে ইচ্ছে করে। হ্যা এইমাত্র আমি পেট্রোলের গন্ধ পেলাম। বাবা পিতলের লাইটারে তুলো গুজে পেট্রোল দিতেন। যতক্ষণ তুলো ভিজে থাকবে ততক্ষণ লাইটার জ্বলবে। আজও সেই অঘ্রানের ঘ্রাণ আমায় ছুটিয়ে নিয়ে যায়। আমায় প্রশ্ন করে আমার পিতৃ পুরুষেরা। আমাদের ‘কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি’ কোথায় গেল? কার জন্য হারিয়ে গেছে? চৌধুরী বাড়ির ঐতিহ্য? দীপকবাবু আপনি কি ফিরিয়ে দেবেন? আমাদের কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি? আনুমানিক ১৫০-২০০ বছরেরে পুরনো পিঁড়ি। আজও কি মাটি কাদায় হাবু ডাবু খাচ্ছে সেই পিঁড়ি? কত বই আমার ওই বাড়িতে রয়ে গেল। লিটিল ম্যাগ। কত লেখার খাতা! কত বন্ধু-আত্মীয়ের চিঠি। সব কিছু খন্ডহর হয়ে গেছে। কে খুঁজে দেবে? শরৎচন্দ্রের পেনসিল স্কেচ, চন্দ্রের আঁকা অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট। কোন ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ফেলে এলাম? কে ফিরিয়ে দেবে আমার শৈশব, আমার কৈশোর, আমার যৌবন, আমার নস্টালজিয়া। আমার মা চলে গেছেন। আমার শাশুড়ী মা চলে গেছেন। কুড়ি কুড়ি বছর আত্মার আত্মীয়রা হারিয়ে গেছে। এক মিথ্যের ‘মিনার’ গড়ে ওরা আমাকে একা করে দিতে পেরেছে! ওদের হাতে সমাজ ছিল। ওদের হাতে সংবাদ মাধ্যম ছিল। ওদের হাতে বৈধ অবৈধ অর্থ আছে। ওদের ষড়যন্ত্রের নিবিড় জালে আমি কবে আটকে গেছিলাম আমি নিজেও জানতাম কি? আমার আত্মার আত্মীয়রা সব সেই ষড়যন্ত্রের রশি টানতে টানতে আজ সম্ভবত ক্লান্ত। কর্দমাক্ত গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে ওরা এখনও অপেক্ষায় আছে আবার কবে কোথায় কিভাবে সুযোগ নেওয়া যায়।        
মা যেদিন তোমার প্রাণহীন দেহটা আমার সামনে খুলে দেওয়া হল আমি চমকে উঠেছিলাম। কলকাতা গঙ্গার জলে তুমি স্নান করে কেন জঙ্গিপুর গেলে? তোমার কঙ্কালসার দেহটা দেখে আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম। এটা কে? আমার মা নয়? ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলাম। আক্ষেপ হচ্ছিল আমি পারিনি। পারিনি মায়ের চিকিৎসা করাতে। পারিনি পেট ভরে খাবার দিতে। মা তুমি উব্দাস্তু হয়ে এই দেশে এসেছিলে। আপন শক্তিতে আপন গরিমায় এদেশের বৈধ নাগরিক হয়েছিলে। কত বিনিদ্র রাত তুমি কাটিয়েছ আমাদের সামাজিক করতে। আমি সেই ঘরানা মনে রেখে তোমার গড়ে দেওয়া মঞ্চে আমাদের পরিবারকে এনেছিলাম। কিন্তু তারপর কাদের শক্তি আজ সব  টুকরো টুকরো করে দিল। মান নেই, সম্মান নেই, ঘর নেই, বন্ধন নেই, একটা দেহ বয়ে চলেছি তোমার বংশজ হয়ে। আজ থেকে ন’বছর আগে তোমার মৃত্যুর দিন জঙ্গিপুরে আমার পাশে ছিল আমাদের বংশের চেনা এবং স্বার্থপর আবেগহীন মানুষের মিছিল ওরা আজও আছে ওদের পরিমণ্ডলে। তুমি চলে গেলে। চলে গেছ। চলে গেছেন আমার আরও এক আপনজন। তুমি কুড়ি বছর আগে যেদিন কলকাতার গঙ্গায়, দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্নান সেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলে তার পাঁচ বছর পর আমার শাশুড়ী ঠাকরুন মারা যান। সেই বছর থেকে ধরলে গত কুড়ি কুড়ি বছর আমাদের আত্মীয় নেই। স্বজন নেই। আমন্ত্রণ নেই। আবাহন নেই। তোমরা দুই মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছ। আমরা স্বজনহীন মানবতার উঠোন আঙিনায় বেঁচে আছি। গত কুড়ি কুড়ি বছর প্রতিদিন আমাবস্যার গহন রাতে জেগে থাকি। যখন ঘুম আসে, স্বপ্নে তুমি এসে দাঁড়াও। গায়ে হাত দিয়ে বল, কিরে ওঠ। চা করব? তুই ভেঙ্গে পড়ছিস কেন? তুই এরকম আগে ছিলিনাতো? তোর মনের জোরেই যে সবাই বেঁচে আছে। তোকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই বেলা দশটাতেও পাখি ডাকছে। কাঠবিড়ালি আমাদের প্রাচীরে কুমড়ো গাছের ডালের  উপর খেলা করছে। পেয়ারা গাছে টিয়ার দল এত বেলাতেও শান্ত হয়ে পেয়ারা খাচ্ছে। এবার উঠে পড় বাবা।                
মায়ের অভিমান সব ছেলেমেয়েই চেনে। বড় বড় নামজাদা বাবুরা মা-বাবার নামে স্মৃতি সৌধ করে। তৈলচিত্র করে বনেদি ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে অথবা ইজেলে সাজিয়ে রাখেন। অন্ধকার ঢেকে যায় উজ্জ্বল দামি আলোর ঝাড় লন্ঠনে। আমার আমাদের ঘর নেই। সেই কবে একদিন আমার বাবা-মা ‘উদ্বাস্তু’ হয়ে এসেছিলেন। তাঁরা চলে গেছেন। আমার ঘরও নেই। তৈলচিত্রের দেওয়াল কোথায় পাব? তবে ইচ্ছের ইজেল আছে। সেই ইজেলে আমার মা আছেন।
এবার পুজোর সময় মা তোমার তোমাদের অবিভক্ত বাংলার সৌজন্য আমাদের চিনিয়ে নিয়ে গেল। ঐতিহ্যের বাংলায়। সহিষ্ণু বাংলায়। আমার শহর, আমার গ্রাম নলহাটী যে ভাষা আমাকে দিয়েছে। আমার মা, আমার পরিবার যে সংস্কৃতি আমাকে দিয়েছে। সেই ভাষা চিনতে বেড়িয়েছিলাম। যাদবপুর-বাঘাযতীন-নেতাজী নগর অঞ্চলের উব্দাস্তু কলোনি ঘুরে দেখছিলাম। উৎসবের আঙিনায় সবাই ব্যস্ত। দুর্গা ঠাকরুন চলে যাবেন তার প্রস্তুতি চলছে। আমি কলোনিগুলিতে আগেও ঘুরেছি। তবে এদিন নতুন করে চিনলাম। আমাদের রাজ্যে এবছর বিজয়া দশমী এবং মহরম পরপর দু’দিন ছিল। বিসর্জন নিয়ে আইন আদালত। প্রশাসনিক হেলদোল। এসবের পরেও ‘সবার উপর মানুষ সত্য’। পিঠোপিঠি বেঁচে থাকা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেরাই শান্তি বজয় রাখা এবং সহিষ্ণু সমাজের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। শুধু আমাদের রাজ্য কেন? প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশও সম্প্রীতির নতুন বার্তা দিয়েছে। এবছর (২০১৭) বাংলাদেশের বহু দুর্গাপুজো কমিটি তাঁদের পুজোর বাজেট কমিয়ে ত্রাণ তহবিল গড়েছিল। পুজোর আলো, প্যান্ডেল প্রভৃতি সমারোহের খরচ কমিয়ে ত্রাণ তহবিলে জমা করা অর্থ অসহায়, দেশছুট, সভ্যতাছুট ‘রোহিঙ্গা’ উদবাস্তুদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্প্রীতি বাতাবরণের উদাহারণ হয়ে থাকল। মনে পড়ছে ২০১৬ সালে দুর্গা পুজোর সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ এই আহবানের মধ্যেই নিহীত আছে ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক বন্ধনের দৃঢ়তার সংস্কৃতি। সহিষ্ণু পরিবারের একাগ্রতা। প্রখ্যাত সাংবাদিক এডগার স্নো তার ‘গান্ধীবাদের নির্যাস ও অন্যান্য’ বইয়ের ‘গান্ধী ও নেহরু’ পরিচ্ছদে লিখছেন, ‘’গান্ধীজী রাজনীতিকে ধর্মের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে একটা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রমের জন্ম দিয়েছিলেন। কেননা ধর্ম হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় শিল্প। রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা আর বিপ্লবী রাজনীতিতে অসম্ভবের শিল্পচর্চা— আমার মাথায় ঢোকে না। অথচ তাঁর সত্যানুসন্ধিৎসায় গান্ধীজী এই দুটোকে মেলাতে চেয়ে তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। আমি এ ব্যাপারে গান্ধীজীকে প্রশ্ন করলে তিনি আমাকে ‘আরও কিছুটা পড়াশুনা করার’ পরামর্শ দেন।‘’ পৃষ্ঠা- ১৩, প্রকাশক- চর্যা প্রকাশনী      

যাদবপুর-বাঘাযতীন-নেতাজী নগর কলোনি অঞ্চলে উৎসব সময়ের বামপন্থী দলের বইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে উদ্বাস্তু নিয়ে লেখা একটি বইয়েয় অনেকটা অংশ পড়ে ফেললাম। বইটি ছিল ‘হ্রদয়ের টুকরোয় গাঁথা/ দেশভাগ ও একাত্তরের স্মৃতি’এটি একটি সংকলন। বইটি সম্পাদনা করেছেন ঝর্ণা বসু। বইটির শেষ লেখাটি একজন অধ্যাপকের। অধ্যাপক হৃষিকেশ হালদার লিখছেন, ‘একজন উদ্বাস্তুর দেশ হারানোর দুঃখ আশ্রয় নেওয়া দেশের মানুষ বুঝতে চায় না, বুঝতে পারে না। পূর্ববঙ্গের ভদ্রলোক উদ্বাস্তুরা কলকাতা শহর বা অন্যান্য শহরাঞ্চলগুলিতে নিজেদের ঠাঁই করে নিতে পেরেছে। সেই সব জায়গায় বা কলোনিগুলিতে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের ঠাঁই মেলেনি।’ এই সত্য আমি গত ষাট বছর ধরে চিনতে চেষ্টা করছি। সম্প্রতি ‘রোহিঙ্গা উদবাস্তু’দের নিয়ে একই কথা বলা যায় সম্ভবত। যার দেশ নেই তাঁর আত্মীয় নেই। তাঁর সমাজ নেই। তাঁর ঘর নেই। বাড়ি নেই। তাঁদের মা আছেন। আমার মা আছেন।                      

Monday 16 October 2017

লগ্নছুট

লগ্নছুট: 
আল্পনা আঁকার লগ্নজাগা ভোরে তুমি কে?
গোলা রঙে ভাঙা নৌঘাটে প্রবাসে
বনবাসে আছি!
সপ্তম সুরের হাওয়ায় শিশির পড়ছে—
ঢাকের আওয়াজে বারোয়ারি ঘুঙুট,
নব নৃত্যের পল্লবিত ছন্দে
তারকামণ্ডলী থাকে বড় কাছাকাছি।
আল্পনা আঁকা লগ্নজাগা ভোরে তুমি কে?
কেন এসেছিলে?
রঙহীন প্রদ্যোত বেলায় নূপুর বাজে,
অগ্নী-উপবীত ধর্ম সন্ধ্যেয়
সপ্তরঙের গোধূলি সাজে—
কাঁঠাল কাঠের পিঁড়িতে,
পানপাতার সিঁদুর আড়াল ভাঁজে
হেসেছিলে লাজুক লাজে,
কাঁঠালিচাঁপা ফুলের বর্ণালী অনুভবে
তুমি কে? কেন এসেছিলে?
পালকখোলা পালকী চড়ে?
চলে গেছ দূরে, অদূর দেখা আদুর গ্রামে-দর্পণ শহরে
গোলা রঙে ভাঙা চৌকাঠে—
প্রবাসে বনফুলে বসে আছি!
আল্পনা আঁকা লগ্নছুট ভোরে
তুমি কে? কেন এসেছিলে?