Wednesday 31 August 2016

যুগান্তের প্রণাম

যুগান্তের প্রণাম

কেউ বলে একুশে আইন। আমরা বলি একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার দিন ভাষার দিবস। মুক্তির দিন। বন্ধন মুক্তির দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতির দিন। ভাষা দিবস। বসন্ত পলাশের লালে লাল আকাশের নীল প্রান্ত থেকে কৃষ্ণ চূড়া ছুঁয়ে আদিগন্ত প্রাচুর্যের স্পর্শকাতরতা। রাধাচূড়ার হলুদে হলুদে অবিশ্রান্ত স্মৃতি। নীলকণ্ঠ পাখির ডানায় চড়ে ফিরতে ইচ্ছে হয় কবি জীবনানন্দের গ্রাম বাংলায়, বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’-র পথে পথেঅতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জল জংলার দেশে। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় রাঙামাটির আটচালায় নিয়ে গেলেন। নীল আকাশের সামিয়ানা চেনালেন। নিজের দেশের ভাষা চেনালেন বাংলা ভাষা। সেখানে আজও সাদা বকেদের ঠোটে সবুজ নালী ঘাস। শরতের কাশফুল বর্ষার মেঘ শেষে ঠাকুর বাড়ির দালানে। পেঁজা তুলোর মত আগমনী ভৈরবী। ‘ঢাক কুড় ঢাক কুড়’ উদুম গায়ে ঘর ছুট বালকবেলা। শিউলীর মেঘমল্লার যেন কাঠালী চাঁপার ঘ্রাণ। শরতের ইমন রাগের সুরে ‘বার ঘর এক উঠোন’আমার বাংলা মাছরাঙা নদী ঘাটের প্রথম প্রেমের নূপুরের ছন্দ। পুকুরের জলে শাপলা খেলে। কলস কাঁখে কাজলা গাঁয়ের বধূর লাজুক পদচারনা। খোঁপায় গাদা ফুল। বাঁশ বনের নিঝুম দুপুড়ে অচেনা পাখির ঐকতান। আমার বাংলা। বাংলার মাটি ভারতভাগ্যবিধাতা। প্রাচীন ভারত যত আধুনিক হয়েছে ততই ভারতবর্ষে বাঙালির পরিচয় আমরা পেয়েছি তার সাহিত্য ও তার স্বাধীনতার সংগ্রামে।
তথ্য বলছে এই বাংলা, বাংলাদেশ, উত্তর পূর্ব ভারত সহ দেশের অন্য রাজ্যের প্রবাসী বাঙালি এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে বসবাসকারী বাঙালির সংখ্যা আনুমানিক ৩০ কোটি হবে। বাজার অর্থনীতির বণিকসভা বলবে বিরাট ‘মার্কেট’। আমাদের জানার প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা সময় বলবে। তবে নিজেদের ভাষার টানে, ভাষার অধিকারে আমরা স্বাধীন এক ভূমন্ডল চাই। কোনও কবি এক সময় বলেছিলেন আমরা ভাষায় এক। আমরা মানবতায় এক। এই ছন্দে উচ্চারণ করি আমরা চেতনায় এক, আমরা ভালোবাসায় এক।
বাংলা ভাষা, বাংলা জাতি নিয়ে পণ্ডিতরা আরও বিস্তারিত লিখতে পারেন। আগেও লিখেছেন। আগামীতেও লিখবেন। আমি সময়ের দাবি মেনে দু’চারটে তামাটে বাক্যালাপ করতে চাইলাম। এই সুযোগে বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল লেখকের কিছু কথা উল্লেখ করি।
‘’হাজার বছরের পুরাণ বাঙলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’-এই নামে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’, সেই সঙ্গে সরোজ বজ্রের (সরহপাদের) ‘দোহাকোষ’ ও কাহুপাদের ‘ডাকার্ণব’ এই তিনখানা পুঁথি একত্র সম্পাদিত করে স্বর্গীয় মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের’ পক্ষ থেকে বাঙলা ১৩২৩ সালে (ইংরাজি ১৯১৬ খ্রীস্টাব্দে) একখানা কবিতা-সংগ্রহ প্রকাশ করেন। এর মধ্যেকার ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ই একমাত্র খাঁটি বাঙলায় লেখা পদ বা গান বলে গ্রাহ্য হয়েছে। সাধারণত ‘চর্যাপদ’ বলেই বাঙলা সাহিত্যে এর পরিচয়, যদিও আসল নাম কারও কারও মতে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’, ‘চর্যাশ্চর্য বিনিশ্চয়’, ইত্যাদি। অর্থাৎ নামের সম্বন্ধে বিনিশ্চিত হবার এখন আর নেই; তবে ‘চর্যাপদ’ নামটিই আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে প্রচলিত।‘’ (বাঙলা সাহিত্যের রুপরেখা, গোপাল হালদার, এ, মুখার্জী, পৃষ্ঠা- ৩ )
আমরা বাঙালি জাতি হিসাবে নিজেদের কবে থেকে চিনতে শিখলাম? অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ ইত্যাদি আলোচনা, বিতর্ক ছিলই। সমাজতাত্ত্বিকরা ভাবছেন। ভাষাবিদরা ভাবছেন। ইতহাসবিদরা ভেবেছেন। আরও আলোচনার জন্য ভাবছেন। নীহার রঞ্জন রায়ের মতে, ‘বাঙলার ইতিহাসে পালবংশের আধিপত্যের চারিশত বৎসর নানাদিক হইতে গভীর ও ব্যপক অর্থ বহন করে। বর্তমান বাঙলাদেশ ও বাঙালী জাতির গোড়াপত্তন হইয়াছে এই যুগে; এই যুগই প্রথম বৃহত্তর সামাজিক সমীকরণ ও সমন্বয়ের যুগ’।                      
ভাষা এবং জাতি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। গত পঞ্চাশ বছরে বাংলা ভাষা আরও আধুনিক হয়েছে। বিস্তার হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া নামক আরও এক নতুন মাধ্যম নতুন ভাষায় কথা বলছে। সম্প্রতি বাংলা ভাষা সহ ভারতের প্রধান প্রধান আঞ্চলিক ভাষার অভিভাবকরা চিন্তিত। আধুনিক প্রজন্মের নাগরিকরা গতিশীল দুনিয়ায় নিজেদের মত করে ভাষা তৈরি করে নিচ্ছে। কেউ কেউ হিন্দি+ ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করে কথা বলছেকেউ কেউ বাংলা+হিন্দি+ইংরেজি তিনটে ভাষার শব্দ ব্যবহার করে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা নষ্ট করছে। অভিযোগ সমাজের ভাষা অভিভাবকদের। আমার ব্যক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যতটুকু জানি ‘বাংলা’ ভাষার বপু অনেক অনেক বড়। সাগরের থেকেও বড়। বাংলা ভাষা এতটাই উদার যে এই ভাষা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে আজ এক সমৃদ্ধ ভাষা। তৎভব সময়কাল পেরিয়ে এসে তৎসম যুগে আমরা পৌঁছেছিলাম। তারপর অপভ্রংশ পরম্পরা ভেঙ্গে চলিতভাষা। এই দীর্ঘ সময়কালে বাংলাভাষা আপন ছন্দে নিজস্ব অভিধান গড়ে নিয়েছে। আগামীতেও আমরা সেইসব তাত্ত্বিকপন্থা অবলম্বন করেই ‘বর্তমান প্রগতি’ খুঁজে নেব ভাষাবিদ ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাকরণ অনুসরণ করে। উইলিয়ম কেরি, রামমোহন রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্ব গৌড়ীয় বাংলা ব্যকরণ এবং ভাষা নিয়ে  আলোচনা করলেও বৈঞ্জানিকভাবে ভাষা চর্চার কাজ শুরু হয়েছিল সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। মনে রাখতে হবে ডঃ সুকুমার সেনের তিন খন্ডে ‘বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস’-এর কথা। বৈজাত্য সংবিধান ভেঙ্গে। বাগীশ্বরী নদীর সাধনায়।  
যে সময়টাই আমরা আজ দাঁড়িয়ে আছি এটা একটা যুগ সন্ধিক্ষণের সময়। পাতায় পাতায় মর্মরিত হচ্ছে নতুন যুগের আহ্বান। কান পাতলে টাপুর টুপুর শিশির পড়ার আওয়াজ শুনতে পাইপল্লীসমাজ ভেঙ্গে গড়ে উঠছে ভুবনগ্রাম। বাণিজ্যিক গ্রাম। কর্পোরেট ভিলেজ। মনে পড়ে যাচ্ছে প্রাচীন এক জনপদের কথা। প্রাক ‘রেনেসাঁ’ সময়ের কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন এমনই এক যুগসন্ধিক্ষণে ভারতীয় নবজাগরণের মাঝামঝি সময়ে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি এলেন তার সমস্ত সামগ্রীকতা  নিয়ে। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সাল। উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ বিষয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে দীর্ঘায়ত এক বিতর্ক রয়েছে। দেশের ইতিহাস বেত্তা বা বুধিজীবীদের অনেকে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। বিদেশীদের মধ্যেও নানারকম মতামত রয়েছে। ইউরোপীয় আলোকপ্রাপ্তির সময় সেটা। ওই সময় যেসব ভারতীয় প্রাণপুরুষ নবজাগরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাঁদের আমরা চিনিতারা তাঁদের চিন্তায়, বিভিন্ন সামাজিক কাজে এ দেশে নবজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন। আমাদের দেশে সবরকম প্রগতিশীল সামাজিক মূল্যবোধ গঠন, জাতীয় আন্দোলন, আন্তর্জাতিক চেতনার প্রাথমিক প্রেরণা আমরা পেয়েছি সেইসব ইউরোপীয় আলোকপ্রাপ্ত যুগপুরুষদের কাছ থেকে। এই নবজাগরণের খ্যপাটে বাতাস কখনও এসেছে সম্মিলিতভাবে। কখনও ব্যক্তিগতভাবে। আবার অনেক সময় গোষ্ঠীগতভাবে। বিতর্ক থাকতে পারে তাঁদের সবটা ঠিক ছিল না। কিন্ত তাঁদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। বিশেষত প্রধান চারজনকে আমরা খুঁজে নিতে পারি। রাজা রামমোহন, পণ্ডিত বিদ্যাসাগর, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র এবং কালীপ্রসন্ন সিংহ
তিনজনকে নিয়ে রবি ঠাকুর অকৃত্রিম উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। ভগ্ন আশা, বা এক আশাহীন সময়ে যে পটভূমি তখন ছিল, রবীন্দ্রনাথ গভীর এবং অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দীর্ঘকায় এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে দেখেছেন। তিনি বলছেন, ‘রামমোহন রায় যখন ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেন তখন এখানে চতুর্দিকে কালরাত্রির অন্ধকার বিরাজ করিতেছিল। আকাশে মৃত্যু বিরাজ করিতেছিল। মিথ্যা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে তাঁহাকে সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল।...... অঞ্জানের মধ্যে মানুষ যেমন নিরুপায় যেমন অসহায়, এমন আর কোথায়। রামমোহন রায় যখন জাগ্রত হইয়া বঙ্গসমাজের চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিলেন তখন বঙ্গসমাজ সেই প্রেতভূমি ছিল।’ (রামমোহন রায়)
রবীন্দ্রনাথ দেশের সামগ্রিক ঐতিহ্যের কথা আমাদের মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন।  তিনি রামমোহন রায় এবং বিদ্যাসাগরকে একই বন্ধনীতে রেখে বলেছেন, ‘একদিকে যেমন তাঁহারা ভারতবর্ষীয়, তেমনি অপরদিকে যুরোপিয় প্রকৃতির সহিত তাঁহাদের চরিত্রের বিস্তর নিকট সাদৃশ্য দেখিতে পাই। ...... বেশভূষায়, আচারে-ব্যবহারে তাঁহারা সম্পূর্ণ বাঙালি ছিলেন। স্বজাতীয় শাস্ত্রঞ্জানে তাঁহাদের সমতুল্য কেহ ছিল না; স্বজাতিকে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের মূল পত্তন তাঁহারাই করিয়া গিয়াছেন......’ (বিদ্যাসাগর চরিত), ঋণ- নবজাগরণ ও রবীন্দ্রনাথ, সুশীল জানা।
কালীপ্রসন্ন সিংহ ঘোষণা করেছিলেন, যে ব্যক্তি বিধবা বিবাহ করবেন তাঁকে এক হাজার টাকা পুরষ্কার দেবেন। 
ব্রিটীশ ভারতে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী এই বাংলার কলকাতা। ব্রিটিশ ভারতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাঙালির জীবিত অভিভাবক। মৃত্যুর পরে আজও তিনি আমাদের অভিভাবক রয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আম বাঙালির উচ্ছাস একটুও কমেনি। সম্প্রতি আমি আমার স্ত্রীর বান্ধবী মঞ্জুলার  বাড়ি গিয়েছিলাম। বালিগঞ্জে। আমার স্ত্রীও সঙ্গে ছিল। মঞ্জুলা বললেন তাঁর ব্যক্তিগত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা। মঞ্জুলার কথায়, ‘’আমার প্রথম সন্তান ১৯৯১ সালে প্রসবের সময় মারা যায়। তারপর আমরা আবার চেষ্টা শুরু করি। কলকাতার এক প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষঞ্জকে দেখাই। তিন চারটে বৈঠকের পরে ডাক্তারবাবু জানান, আমার স্বামীর শুক্রাণু পরীক্ষা করাতে হবে। তাঁর পরামর্শ মত তাঁর ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়।
রিপোর্ট আসে আনুপাতিক হারে আমার স্বামীর শুক্রাণু কম আছে। তাই মেনে নিয়ে আমরা ভাগ্যের হাতে নিজেদের সঁপে দিয়ে বসে থাকি। কারণ তখন ‘টেস্টটিউব বেবি’ নেওয়া ছিল যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ।   আমাদের একজন নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে অন্য আর এক বড় ডাক্তারকে দেখাই। তিনিও শুক্রাণু পরীক্ষা করান বড় একটি ল্যাব থেকে। সেই পরীক্ষার রিপোর্টে আমার স্বামীর শুক্রাণুর হার ঠিক এল। আমার দিক থেকে অসুবিধা ছিল। ডাক্তারবাবু বললেন, ‘আপনার গর্ভে সন্তান নষ্ট হওয়া এবং শুক্রাণু কাউন্টের হার কম করে দেখানো সবটা একটা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সেটা আমার বিষয় নয়। বললাম এই জন্য যে আপনারা এসেছেন আমার এক বিশেষ বন্ধুর রেফারেন্সে।’ এই ঘটনার পর আমি একদম ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মুক্তি দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প। আমি সুযোগ পেলেই রবীন্দ্র সাহিত্য পড়ি।‘’
মঞ্জুলা অভিজাত পাড়ার এক পোড় খাওয়া নারী। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত বাঙালি নারীব্যথা বেদনা থেকে মুক্তি পেতে খুঁজে নিয়েছে বাংলা সাহিত্য। রবীন্দ্র সাহিত্য। বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা যুগান্তের পদচারণায় যতই সামনে এগিয়ে যাবে, আমরা ততই নিকট থেকে দূরে রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে নেব এই বাংলায় এবং সমস্ত চরাচরেসীমাবদ্ধ ঞ্জান নিয়ে আর না এগিয়ে আবার এক মাঠ ঘাটের অভিঞ্জতা শুনি আমরা। একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছি, ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির শুটিং-এর আগে সন্তোষ দত্ত বিঞ্জানীর চরিত্রটির ডায়ালেক্ট কেমন হবে তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। সন্তোষ দত্তের কথায় ‘’মানিকদাকে বললাম। উনি বললেন, শোনো, যখন ধড়াচূড়া গায়ে উঠবে, দেখবে সংলাপ নিজের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। যেটা তখন বলবে, সেটাই হবে তোমার স্টাইল! কী অদ্ভূত শেখানোর কায়দা বলতো!’’
হিন্দোল সেই ধড়াচূড়া গায়ে নিয়েই সম্ভবত কথা বলে। হিন্দোল আমার থেকে দু বছরের ছোটই হবে। হিন্দোল আমার ছোট বেলার বন্ধু। কিছুদিন আগে বীরভূমে দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম। নিজের বাড়িটাওতো নেই। আমি নিজেও দেশ ভাগের যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। বীরভূম গেলে তাই হোটেলেই থাকি। কিন্তু এবার বাধ্য হলাম হিন্দোলদের বাড়িতে একরাত থাকতে। গরীব ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে হিন্দোল। পূর্ব বঙ্গের ‘ডাঙ্গা’ নামের একটি গ্রাম থেকে ওর বাবা, আমার বাবা সবাই পরিবার নিয়ে এসেছিল ১৯৪৭ সালের দাঙ্গার সময় হিন্দোলদের বর্তমান পাড়ার নাম সম্ভবত ডাঙ্গাল পাড়া। হিন্দোল ক্লাশ নাইন টেন পর্যন্ত পড়েছে। ওর বাবার যে জীবীকা ছিল হিন্দোলের জীবীকা একই। সকাল সকাল বাড়ি থেকে ধুতি-গেঞ্জি পড়ে হাতে পিতলের ফুলের সাজি নিয়ে শহরের বিভিন্ন দোকানে ফুল-বেলপাতা দিয়ে পুজো করে। মাসোহারা চুক্তিতে। ছোটবেলা থেকেই ওর টিকি ছিল। সেই কারণে ওকে ছোটবেলায় অনেকে ‘হিলাইলা’ বলে ডাকত। হিন্দোল অনেক সময় রেগেও যেত। তবুও ওকে নিত্যপুজো করতেই হত। আজও সেই একই কাজ করে ও।
হিন্দোলদের মাটির এক কামরার বাড়ি এখন বারান্দা, রান্নাঘর, পায়খানা, বাথরুমসহ দু’কামরার ইটের  বাড়ি। টিনের ছাউনি। সেদিন অনেক কথা হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ হিন্দোল ওর নাতিকে বলল, ‘’এই পুলা তর মুখোশটা কোথায় আসে?’’
নাতি বলল, ‘’রাক্ষসের মুখোশ আইনা দিমু?’’
হিন্দোল মুখোশ পড়ে বলল, ‘’শুনো গিয়া আমাগো ঘরে পুরানো একখান ঘূর্ণায়মান চেয়ার আসে। চেয়ারডার দুইডা চাকা এহন খালি খুইলা যায়। আমি যখনই চাকা দুইখান লাগাই একখান ছোট নেংটি ইঁদুর কান খাড়া কইরা বইয়া থাকে। কয়, ‘চোখ দিয়া দেখাতাসি কত্তা, কান দিয়া দেখতাসি না।’                                           
                                                      

বাংলায় সামাজিক পরিবর্তন

বাংলায় সামাজিক পরিবর্তন

দশ বছর পর সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ মামলার রায় বেরল। মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় সিঙ্গুরের জমিহারাদের পক্ষে গেছে। সিঙ্গুরে ইতিমধ্যে বিজয় উৎসবও শুরু হয়ে গেছে। রায় নিয়ে বিস্তারিত এই স্তম্ভে লেখাটা কিছুটা ঔদ্ধত্য হয়ে যাবে হয়ত। কারণ সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অনেক অনেক তত্পড়তার সঙ্গে আমাদের কাছে খবর পৌচ্ছে দিচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ২০০৬ সালে সাংবাদিকতার সুবাদে সিঙ্গুর নিয়ে অনেকগুলি খবর করি। ওই বছর আমি কলকাতা হাইকোর্ট কভার করতাম একটি প্রথমসারির বাংলা সংবাদ চ্যনেলের সাংবাদিক হিসাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে আমার ব্লগে সিঙ্গুর নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম আমার পুরনো নোটবুক অনুসরণ করে। লেখাটির কিছুটা অংশ আবার নীচে উল্লেখ করলাম।
 ২০০৬ সালে ‘ফুড ফার্স্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড নেট ওয়ার্ক’ তথা ‘ফিয়ান’ এর সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালিম একটি সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেন, “জল, জমি, জঙ্গল সরকার বা শিল্পপতিদের হাতে। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ ঠিক না ভুল সেটা মহামান্য আদালতের বিচার্য বিষয়। কিন্তু সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে মানুষকে খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা হুগলীর জেলা শাসক বিনোদ কুমারকে চিঠি দিয়ে ২১ দফা প্রশ্ন করেছি। জমি অধিগ্রহণের তথ্য সংক্রান্ত আইনে। হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে ‘সিঙ্গুর’ সংক্রান্ত তথ্য ‘ফিয়ান’ কে জানানো হোক। কৃষকরা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন সেটাই জানার বিষয়।”
ওই মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায় সিঙ্গুরের জমি এবং চাষিদের যেসব তথ্য রয়েছে সেগুলি কোর্ট এবং ফিয়ান-কে জানাতে হবে বলে রায় দেয়
এদিনের (৩১ অগস্ট, ২০১৬) রায়ের পর বাংলার আকাশে নতুন বসন্ত এসেছে বলেই আমরা ভাবতে পারি। ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণে কোথায় কি ভুল ছিল সেইগুলি মহামান্য আদালত আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনসিঙ্গুর আন্দোলন এই রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ নামক শব্দের যে প্রাচুর্য আমাদের সামনে এনে দিয়েছে সেটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। এই নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করা বাতুলতা হবে। কারণ তাপসী মালিক সহ যারা শহীদ হয়েছেন বা আন্দোলনের জন্য যাদের মৃত্যু হয়েছে সেটা মর্মান্তিক। এবং কঠোর বাস্তব।   বর্তমান বাংলায় দাঁড়িয়ে ‘এগিয়ে বাংলা’ এই নতুন শ্লোগান হোক আগামী প্রজন্মের আভিধান। কারণ ২০১৬ বিধান সভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের নেতৃত্বে ‘শিল্পের জন্য পদযাত্রা’ শ্লোগান সামনে রেখে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কমরেড বিমান বসু, কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র ‘সিঙ্গুর থেকে শালবনী’ দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। এই কর্মসূচি বা এজেন্ডার পর আমরা বুঝে নিতে পারি সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সেদিনও বৃহৎ শিল্পের পক্ষে ছিল আজও ক্ষয়িষ্ণু দল নিয়েও ‘এগিয়ে বাংলা’ শ্লোগানকে নিজেদের দলীয় মঞ্চ থেকে সমর্থন করছে।
সিপিএম রাজ্যে যতই ছোট হয়ে যাক এখনও একটি সংগঠিত দল। মতাদর্শগত তাত্ত্বিক লড়াই দলে আছে। দলটির সীমাব্দধতাও অনেক। তবু ‘ভারতীয় আলোয়’ দলীয় উচ্চতম নেতৃত্ব দলটিকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে চাইছে।
তৃণমূল খুব স্বাভাবিকভাবেই শাসকদল হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের যে রায় আমাদের সামনে এসেছে সমস্ত দিক থেকে তার সুফল নেওয়ার জন্য মাঠে নেমে পড়েছে। দলীয়ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস আগামী শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬) সমস্ত ব্লকে ‘সিঙ্গুর দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে উল্লেখযোগ্য কিছু কথা বলেছেন। তারমধ্যে অন্যতম ‘’রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার সিধান্ত নেওয়ার পর এই রায় আমাদের কাছে উপহার। বাংলাই শিল্পের শেষ স্তম্ভ।‘’ পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন বিরধীদের। মনে করিয়ে দিয়েছেন এই বলে, ‘’শিল্পের জন্য সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ তৎকালীন সরকারের ঐতিহাসিক ভুল ছিল।''
''সিঙ্গুর কারখানার জমি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত সেটি স্পষ্ট নয়। এই রায়ের খুঁটিনাটি পাওয়া যায়নি। জমি অধিগ্রহণ বৈধ না অবৈধ এই নিয়ে দুইবিচারপতি সহমতে আসতে পারেননি। কিন্তু যেহেতু ঐ জমিতে শিল্প হয়নি, তাই তা কৃষকদের ফেরত দেওয়ার পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যখন তৃণমূল সরকার সিঙ্গুরে জমি ফেরতের কথা বলে, তখনই বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছিল যে কৃষকদের জমি ফেরতের ব্যাপারে কোনও বিরোধিতা করা হবে না। কীভাবে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব সেই সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে সাহায্য করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তামিলনাড়ুর জমি অধিগ্রহণ আইনের একটি সংশোধনী সম্পর্কেও সরকারকে জানানো হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, জমি ফেরতের সময় ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক জমিদাতাদের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না। কিন্তু সরকারের তরফে সেই কথা শোনা হয়নি। রাজ্য সরকারের আইনের বৈধতা নিয়ে এখনো মামলা চলছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অনুযায়ী কৃষকদের নির্দিষ্ট সময়ে জমি ফেরত দেওয়া ও ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও নতুন কতগুলি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে – প্রথমত, যারা ক্ষতিপূরণ নিয়ে জমি দিয়েছেন তাদের কী হবে, যারা ক্ষতিপূরণ নেননি, তাদেরই বা কী হবে? দ্বিতীয়ত, ফেরতযোগ্য জমি কী চাষের উপযোগী? আদালতের রায় অনুযায়ী চাষযোগ্য জমি না হলে পাশাপাশি জমি থেকে ঐ কৃষককে জমি দিতে হবে, কিন্তু সেই জমি দিতে গেলেও অন্য কারো জমি অধিগ্রহণ করেই দিতে হবে।
সিঙ্গুরে ৯০শতাংশ জমির মালিক স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন এবং ক্ষতিপুরণ নিয়েছিলেন। ফলে জোর জমি নেওয়ার অভিযোগ এক্ষেত্রে খাটে না।
আদালতের রায়কে ঠিক কী করে কার্যকরী করবে রাজ্য সরকার তা স্পষ্ট করতে হবে। সি পি আই (এম)-র অবস্থান হলো, কৃষকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। কৃষকদের কাছে জমি অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যাপার, তাই শিল্প বা পরিকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে তা অধিগ্রহণ করতে হলে কৃষকদের মতামত নিয়ে সম্মতির ভিত্তিতে করতে হবে। কিন্তু শুধুমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করে কোনও দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। পৃথিবীর ইতিহাস প্রমাণ করে, কোনও দেশের অগ্রগতির জন্য শিল্পই ভবিষ্যৎ।'' 

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র সাংবাদিক সম্মেলন করে রায়কে স্বাগত জানিয়ে কতগুলি প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী দলের শীর্ষনেতা হিসাবে তিনি কিছু প্রশ্ন  তুলবেন সেটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেছেন, (৩১অগস্ট, ২০১৬) ''


 তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলনে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে কৃষক, শ্রমিক, মজুর সহ যেসব বুদ্ধিজীবী, বিদ্দবজ্জনেরা পাশে ছিলেন তাঁদের স্মরণ করেছেন। সেই সূত্র ধরে বলতে হয় সিঙ্গুর আন্দোলনে কংগ্রেস মুখ্য ভূমিকায় ছিল। বর্তমানে কংগ্রেস রাজ্য বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল। তাই সর্বভারতীয় দল হিসাবে প্রদেশ কংগ্রেসের ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তায় সিঙ্গুরে বৃহৎ শিল্পের দাবিতে প্রচার কর্মসূচী নেওয়ার। যত ছোট হোক অথবা বড় কলকাতা সহ সারা রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসকে এই দায়িত্ব নিতে হবে বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে। কারণ ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় বাংলার উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন। যেমন ‘কানু বিনে গীত নায়’ তেমনি বৃহৎ শিল্প ছাড়া আধুনিক সমাজ হয় না।                   

Saturday 20 August 2016

আত্মার আত্মীয় কাশ্মীর

আত্মার আত্মীয় কাশ্মীর 
কম বেশি প্রায় দেড় মাস টানা কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা রয়েছে। আমি কাশ্মীর যাইনি। সাধারণ বোধ থেকে একটা সময় হতাশ হয়ে কাশ্মীর নিয়ে আর ভাবতে চাইতাম না। কিন্তু কিছুদিন আগে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়ায়’ একটি লেখা দিয়েছিলাম। সেই লেখায় আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম কাশ্মীরে ভারতভুক্তির প্রেক্ষাপট এবং তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা। কাশ্মীর আমাদের আত্মার আত্মীয়। ২২ জুলাই, ২০১৬ বাংলা দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকায় একটি লেখা পড়লাম। লেখাটি লিখেছেন শ্রীনগর ডায়রেক্টরেট অব স্কুল এডুকেশন, কাশ্মীর-এর নির্দেশক শাহ ফয়জল। তিনি লিখছেন, ‘’এক দিকে আজদির শ্লোগান, অন্য দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটার শব্দ। আমি দেখলাম, সেই মুহূর্ত থেকেই ইতিহাস আমার ছেলেকে দখল করে নিল, সে কাশ্মীরি হয়ে উঠল। তিন দশক আগে এমনই একদিন আমার বাবা আমায় ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন, আর ক্রমাগত মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজে তাঁর সেই চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল। সে দিন আমি কাশ্মীরি হয়েছিলাম।‘’  
তিনি আরও লিখছেন ‘’............ নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন পথে চলবে, ভারতে তার একটি নির্দিষ্ট পথ ছিল। সেই পথ সংলাপের, জায়গা করে দেওয়ার— হুমকির নয়। সেই পথ উন্নয়নের হিংস্রতার নয়।  ভারতীয় রাষ্ট্র কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব কিছু বোধহীন মানুষের হাতে ছেড়ে রাখতে পারে না। তারা জাতীয় স্বার্থের স্বঘোষিত রক্ষক হলেও নয়।‘’
সম্প্রতি কাস্মীর নিয়ে এশিয়ান মানবাধিকার কমিশনের একটি রিপোর্ট আমাদের সামনে এসেছে। দেখা যাক সে রিপোর্টে কি আছে?
   
AHRC-STM-127-2016
19 August, 2016
A Statement by the Asian Human Rights Commission
INDIA: For peace, end impunity in Kashmir
The Indian state of Jammu and Kashmir has seen curfew for the last 41 days. Sixty-six persons have been killed, as a result of the “actions” of government forces. Most of the channels of communication remain blocked. It is reported that the authorities have gagged the media. There are concerns that even essential supplies are failing to reach most citizens. This is what the state has been witnessing in the last 41 days.
Violence, State-sponsored or by armed militants operating in the state, is nothing new to Jammu and Kashmir. The state is one of the more unsafe places of India, where peace is a daily casualty. Armed militant activities in the state and the Indian State's attempt to combat this has affected every aspects of life in Jammu and Kashmir since 1989, though there have been brief spells of calm.
A generation has grown up not knowing what peace; this is the state of the state. How many lives have been lost to conflict and how many have been disappeared and now feared to have been extrajudicially executed, either by State forces or by armed militants in Jammu and Kashmir, is anyone's guess. A large number of Indian armed forces personal also have lost their lives in the conflict, thereby increasing the human cost of this conflict to a high level.
Despite the intense nature of the conflict, the attempts made by the Indian State to find a sensible solution to the problem, at its very best, have been half-hearted. For instance, the State Human Rights Commission claims that it has proof regarding the burial of 2,156 bodies over the past 20 years in 40 gravesites spread across the state. The Asian Human Rights Commission (AHRC) has reported this in 2011.
The AHRC's partners, based on investigative research conducted between November 2006 and November 2009, documented 2,700 unknown, unmarked, and mass graves, containing 2943+ bodies, across 55 villages (in 62 sites within these villages), in Bandipora, Baramulla, and Kupwara Districts of Kashmir. Of these, 2,373 were unidentified and unnamed graves. So far, there has been no attempt whatsoever to undertake an independent investigation into this claim. At the very least, such an investigation would have been a confidence building gesture, and helped in cementing an assurance by the Indian State to the local population that the State is interested in protecting the people and not merely in retaining territorial control.
Despite the nature of the conflict, the Indian State cannot absolve itself from the constitutional and international law obligations that are binding. The Indian State cannot refuse its obligation to explain an estimated 70,000 and more disappearances reported from the state, so far. Merely passing it off as “persons who have illegally crossed over to Pakistan occupied Kashmir” validates the suspicion that the Indian State is involved in these disappearances. The refusal to investigate disappearances also rivets in public perception that the State and its forces are unaccountable, just like the militant forces operating in Jammu and Kashmir.
There would be no solution to the unrest, anger, and consequent bloodbath in Jammu and Kashmir until the Indian state starts engaging with the people of Jammu and Kashmir politically. A firm step in this direction is to account for the past violence that the Indian armed forces have committed in the state and to its people. There must also be processes put in place to ensure that, while combating armed militancy, State agencies do not commit crimes. Owning up to this responsibility is what differentiates an armed militia group and a disciplined State force. To pass off this responsibility with the excuse that it is engaged in combatting armed militants that are undermining the security of the State is not an option available to the Indian State.
Only when the Indian State owns up its responsibility, internally, can it effectively protect its citizens from being devastated by militancy and external threats. It is only then that the people state of Jammu and Kashmir could be expected to have a meaningful conversation with the Indian State.
  কাশ্মীর সমস্যা কেন এই শতাব্দীতেও জ্বলন্ত বিষয় হয়ে থাকল? কেনই বা থাকবে? প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সত্তর বছর ধরে পরস্পরকে দোষারোপ করে কিছুদিনের জন্য রাষ্ট্র নায়করা ট্র্যাক টু বা ট্র্যাক থ্রী নীতির খেলা খেলতে পারেন কিন্তু স্থায়ী সমস্যার সমাধান কি হয়? ভারতের কাশ্মীর এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের উত্তেজনা থাকলে দেশের উন্নয়ন কতটা সম্ভব? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯ জুলাই বলেছিলেন, ‘’কাশ্মীর নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ ছিল বড় ভুল।‘’ সম্প্রতি তিনি ‘ইন্ডিয়া টুডে’ পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন, কাশ্মীর নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা পশ্চিমের দেশগুলিতে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 
  ‘’Nobel laureate Amartya Sen told India Today that the recent unrest in Kashmir has been grossly mishandled by the Indian government to the extent that the region reflects as the biggest blot on Indian democracy in the West.
"It is the biggest blot on Indian democracy. There's no question about that. There are a number of claimants to that position of being a blot. It is a case that figures a lot in foreign discussions. On my first night when I came here, a long CNN coverage on the brutality of policing and law and order was aired," said Sen, one of the world's greatest scholars, Nobel Prize winning economist, former master at Trinity College, Cambridge, and a Harvard University professor.
Kashmir mishandled for decades
"I don't deny that Kashmiris are meant to be Indians. The Kashmiris' attitude to rest of India has varied a lot. Basically, we have mishandled it for a number of decades. Right now, we are mishandling it very badly indeed," said Sen in an exclusive interview with Karan Thapar on his show To The Point.

"It is not a law and order problem. It is the people of Kashmir we are looking at. It is quite important to do the law and order right. The kind of horrific and violent treatment of protest and also banning newspapers will isolate Kashmiris. All these are penalising Kashmiris in a way is giving them absolutely no reason to feel close to India," he said.
Will it put off Western investors?
"I don't know and don't really care. But I do think that the lives and freedom of Kashmiris and the sense of pride and belonging of Indians to India is more important than whether Modi gets his investment or not," said Sen.
Sen also said that China spends about 3 per cent of their GDP on healthcare and India spends about 1 per cent, and it was no surprise that the Chinese get much better healthcare and much greater benefits from the high growth rate than India does. The real issue for the Modi government was not whether the growth rate is high, but what are the poor getting out of that, he said.India Today, July 18, 2016
 সূত্রের খবর কাশ্মীর পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার কথা ঘরোয়া আলোচনায় কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাঠ সিংহ। গত ৮ অগস্ট বিজেপি-পিডিপি জোটের জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেনপরে তিনি আবেদন করেন, ‘’আমি মনে করি উপত্যকার মানুষের ক্ষতে মলম লাগানোর প্রয়োজন আছে। আশা করি এই সুযোগে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর কায়দায় উপত্যকার মন জয় করবেন তিনি।‘’ ইতিপূর্বে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধি বলিষ্ঠ ভাষায় কেন্দ্রীর সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কাস্মীর নিয়ে সতর্কভাবে এগতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।  
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে প্রধানমন্ত্রী ১২ অগস্ট সর্বদলীয় বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে তার বক্তব্য জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি পুরনো তাস নতুন করে খেলতে চাইলেন। পাকিস্তানকে নিশানা করেই দায় সামলেছেন। সূত্রের খবর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বৈঠকে জানিয়েছেন, ইউপিএ সরকারের কিছু খামতি ছিল। এই সরকারেরও আছে। সে সব পূরণ করেই এগতে হবে সব পক্ষকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অতীত অভিঞ্জতা থেকেই তিনি বর্তমান সরকার কে এই কথা মনে করাতে চেয়েছেন সম্ভবত। কারণ ২০১০ সালে ব্যপক সংঘর্ষে কাশ্মীর উত্তাল হয়েছিল। সেই সময় উপত্যকার মানুষের মন বুঝতে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ সরকার।  ৮ অগস্ট রাজ্য সভায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘’ওই প্রতিনিধি দল উপত্যকায় ঘুরে আসার পরে অশান্তি অনেক কমেছিল। এখনও তেমন পদক্ষেপ করা যেতে পারে।‘’
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় নভেম্বরে পাকিস্তানে ‘সার্ক’ শীর্ষ বৈঠকের আগে পাকিস্তানে যে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে সেই বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মোদী সরকারের প্রশংসনীয় সিধান্ত। সেদিন ইসলামাদের রাস্তায় দু’হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সেদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামনের সারিতে দেখা গেছে জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মিশেল মালিককে। সত্তর বছরের অতীত নিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকাকে কি ইতিহাস ক্ষমা করবে? উত্তর বিশ্বায়ন এই সময়ে উপত্যকার যুব সমাজের কাছে যে সব সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃত্বের গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে তাঁদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা প্রয়োজন। উল্লেখ করা যায় সৈয়দ আলি শাহ গিলানির নাম। ১২ অগস্ট সর্বদলীয় বৈঠকে যে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের অভিঞ্জ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘’কাশ্মীরের বয়স্ক নেতারা ক্রমশ বিচ্ছিন হয়ে পড়ছেন। তাই যুব সমাজকে পাশে পেতে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে সরকারকে।‘’
স্বাধীন ভারতে উদার অর্থনীতির প্রভাবে দেশের একতা, উন্নয়ন, শিলাপয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা, আইআইএম, আইবিএম প্রভৃতি ক্ষেত্রের এক সম্মিলীত নতুন ঐতিহ্যের সুর আমরা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কাশ্মীর আর কতদিন? ধামাচাপা আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে কাশ্মীর বিশেষঞ্জদের মত ছাব্বিশ বছর আগে ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। তারপর? ডাল লেকের রক্তস্নাত পানি বা জল জমে রক্তের বরফ হচ্ছে। বরফ গলে ফ্যাকাসে পানি স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। তবু কেন যেন উপত্যকায় নীলাভ আকাশ শ্রান্ত বর্ষণ ক্লান্ত মেঘেদের নিয়ে সময়ের দাবি জানায়। প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান কি?
কাশ্মীরের নতুন প্রজন্মের নাগরিকদের আস্থা অর্জন করতে প্রয়োজন মানবিক পরশ। আত্মার আত্মীয়তা। প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। প্রয়োজন ভারতীয় নাগরিকত্বের সম্মানজনক স্বীকৃতি। এসব তখনই সম্ভব শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ নয়। বেসরকারি বিশেষঞ্জ দল, সমাজ বিঞ্জানী এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে একটি স্থায়ী সমাধান। প্রয়োজন সীমান্ত বাণিজ্য প্রতিবেশি দেশগুলির সঙ্গে।                                          


রাষ্ট্র কি নিদ্রা গিয়েছে?

রাষ্ট্র কি নিদ্রা গিয়েছে?
ভারতে কে বা কারা রাষ্ট্রদ্রোহী? আইন আদালত এটা ঠিক করে। কিন্তু আমাদের দেশে ইতিমধ্যে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ নামক শব্দটি নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে রাস্ট্রের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহ করেছিলেন আমরা তাঁদের ‘স্বদেশী’ বলে সম্মান করতাম। আবার ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ বলেও তাঁদের প্রাপ্য সম্মান স্বাধীন ভারত নামক নতুন রাষ্ট্র দিয়ে থাকে। ভারত এখনও কি প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠেছে? পুরোপুরি গড়ে না উঠলেও ‘রাষ্ট্র’ হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি পেয়েছি আমরা। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ভারতের এই চিরায়ত সংস্কৃতিকে মেনেই ভারতীয় সংবিধানে আছে ১২২টা প্রধান ভাষার স্বীকৃতি। ১৫৯৯টি অন্যান্য ভাষা। ৬৪০০ জাতি। ২৯টি প্রধান উৎসব। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়েও ৭০টা বসন্ত হেঁটে এলাম ধনী দরিদ্র, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের আলিঙ্গনে। কখনও ছন্দপতন হয়েছে আবার আপন ছন্দে ফিরেছে ভারত নামক এক নতুন স্বপ্নের দেশ। কংগ্রেস জমানা, জনতা পার্টীর শাসন, এনডিএ জমানা, যুক্তফ্রন্ট জমানা আবার কংগ্রেস তথা ইউপিএ এবং আবার এনডিএ। এই দীর্ঘ ছায়াপথে তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি নামে কিছু নাগরিককে আমাদের চেনানো হয়েছে। কিন্তু ‘দলিত’ এই সম্প্রদায়কে আমরা জানলেও, ব্যক্তিগতভাবে আমি সম্মান করলেও সরকারি দলিল দস্তাবেজে লিখিতভাবে আমাদের চেনানো হয়েছে কি? জানি না। আমার জানা নেই।
নতুন ভারত গড়ে তোলার শ্লোগান নিয়ে তিনি এলেন। উদার অর্থনীতির প্রথমসারির অভিভাবক তিনি। তাঁর দাবি তিনি ভারতীয় সংস্কারের অন্যতম ভগীরথ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের উত্তরসূরি হিসাবে নিজেকে বাজার অর্থনীতির অন্যতম অভিভবাক বলে দাবি করেন। তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বণিক সমাজের প্রতিনিধি। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর শাসনকালে নিজের হাতে গড়েতোলা উন্নত এক রাজ্য থেকে ভারতীয় সংস্কৃতির অতীত এক মূল্যবোধ আছাড় দেবে? রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর পর পরই কি ভারতীয় গরিমায় আঁচড় লাগল? আমরা পিছনের ফেলে আসা গ্রাম ভারতকে দেখলাম? এখানেই শেষ নয়। অতীত ভারত নামক রাষ্ট্রকে এক পা এগতে দিলেও দু’পা পিছনে টানছে। নাগরিক ভারত ফিরে যেতে চাইছে সামন্ত্র সংস্কৃতির দোলাচলে। বাজার অর্থনীতির সঙ্গে প্রাচীন ভারতের উপরিকাঠামোর সংঘাত সম্ভবত এখানেই। এটাকে চিহ্নিত করা গেলেও উত্তরণ প্রয়োজন। মন্দের ভালো প্রায় প্রত্যেকটি জাতীয় এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থে তথা রাষ্ট্রের স্বার্থে দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠতে পারছে। গত কয়েকমাস ভারতে ‘দলিত’ সমস্যা এবং কাশ্মীর সমস্যা রাষ্ট্রের ঘুম কেড়ে নিয়েছে? তবুও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদে উচ্চারণ করতে হবে না রাষ্ট্র নিদ্রা যায়নি।
দলিত সমস্যা
মধ্যযুগের কবি বলেছিলেন ‘’চন্ডালেতে রাঁধে ভাত, ব্রাহ্মণেতে খায়/ এমন সুধন্য দেশ, জাতি নাহি যায়।‘’ সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের লেখা অমর সাহিত্য ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ উপন্যাস (সুবর্ণরেখা, প্রথম প্রকাশ ১৩৬৯) শুরু হচ্ছে এইভাবে ‘’আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল গত হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পুনর্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে।‘’ (পৃষ্ঠা-১)
শেষের দিকের একটি অংশ ‘’বিস্ফারিতনেত্রা যশোবতী দুর্দশা দেখিলেন, তাঁহার পদদ্বয় ঘর্মাক্ত হইল, তাঁহার কর্তব্যবুদ্ধি ফিরিয়া আসিল। তিনি ছুটিতে গিয়া দেখিলেন তাঁহার হাত এখনও চন্ডাল ধরিয়া আছে। তিনি শিশুর মত আপনকার পা মৃত্তিকায় ঠুকিতে লাগিলেন, গগন শঙ্কিত হইল। আর যে, হঠাৎ তিনি চন্ডালের হস্তে কামড় দিতেই বৈজুনাথ হাত ছড়াইয়া লইল। এত জোরে তিনি কামড়াইয়াছিলেন যে বৈজুনাথের হাতের চুল ছিঁড়িয়া মুখে আসিয়াছিল। থু-থু করিতে করিতে তিনি তড়িৎবেগে ভেড়িপথেই ছুটিতে লাগিলেন, কখন আপনার হস্ত দর্শন করিলেন, কখনও আবার দেখা গেল আপনারগন্ডে চপেটাঘাত করিতে করিতে ছুটিতেছেন।‘’ (পৃষ্ঠা-২১০)                
তথ্য বলছে ভারতে ৪৫ শতাংশ আদিবাসী এবং ৩২ শতাংশ তফসিলি জাতির মানুষ আজও দারিদ্র সীমার নীচে। একটা সূত্র থেকে পাওয়া আরও খবর এঁদের বৃহত্তম অংশই ভূমিহীন। শুধু তাই নয় এঁরা নিম্ন মজুরির পেশায় আবদ্ধ। আমরা জানি সংরক্ষণের কারণে তফসিলি জাতির উপস্থিতি ১৭ শতাংশ, আদিবাসী ৮ শতাংশ। বেসরকারি চাকরিতে এই সব মানুষদের উপস্থিতি অতি নগন্য। অর্ধেকের কাছাকাছি তফসিলি জাতি ও আদিবাসী ছাত্র ক্লাস সেভেন পর্যন্ত কষ্ট করে পড়তে পারে। স্কুলছুট পড়ুয়াদের ৮৫ শতাংশের বেশি অংশ তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আসে। আবার দলিত শ্রেণীর মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, উনায় চার দলিত যুবককে হেনস্থার প্রতিবাদে জুলাই মাসে সরকারি নিরাপত্তা এবং পরিচয় পত্রের দাবিতে গুজরাটের একাধিক সংগঠন ধর্মঘটে সামিল হয়। একটি সংগঠনের সদস্য নাতু পার্মার জানান, ‘’আমদের প্রধান দাবি মরা জন্তুর দেহ ভাগাড়ে ফেলে আসার কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁদের সরকারি পরিচয় পত্র দেওয়া হোক।‘’ আমরা আবিষ্কার করলাম আঁধার কার্ড করাটা বাধ্যতামূলক হলেও দলিতদের কর্ম পরিচিতির কার্ড নাগরিক ভারত করতে পারেনি বা করতে চায়নি। কেন?
প্রাবন্ধিক শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় ১৯৮৬ সালের একটি মাসিক পত্রিকার দ্বিমাসিক সংখ্যায় লিখছেন, ‘’ভারতবর্ষে সমাজ বিঞ্জানের আলোচনায় জাতিপ্রথা বা ‘কাস্ট সিস্টেম’ এক উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র। ‘কাস্ট’ কথাটি ল্যাটিন শব্দ ‘Castus’ থেকে উদ্ভূত। Castus কথাটির অর্থ বিশুদ্ধ। পর্তুগীজরা ভারতের অসংখ্য জাতিকে ‘কাস্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রাচীন ভারতের বর্ণ বিভাগ এক ধরনের শ্রেণী বিভাগ। কালক্রমে বর্ণ বিভাগের কাঠামোর মধ্যে অসংখ্য জাতি ধীরে ধীরে উদ্ভূত হয়। বর্তমান ভারতে প্রায় তিন হাজার জাতির দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানের জাতিপ্রথা আজও আবর্তিত হয় প্রাচীন সনাতন বর্ণপ্রথার কাঠামোর মধ্যে যা এখন শুধুই একটা ধারণা। রক্তের বিশুদ্ধতা আজ আর কোন উচ্চ জাতিরই নেই।
বর্ণবিভাগ বা জাতি প্রথার ক্রম বিকাশ আর সমাজকর্তার দ্বারা এর পরিচালনায় ইতিহাসে ‘ইডিয়লজি’ বা ধর্ম যুগে যুগে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। অনেকে বর্ণবিভাগ বা জাতি প্রথাকে ফাংশানাল বলে মনে করেন, তাঁদের মতে এক সংহতিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি হল জাতি প্রথা এবং এই কাঠামতে ‘সোশ্যাল মোবিলিটির (অর্থাৎ নিম্নবর্ণ থেকে উচ্চবর্ণে আরহণ বা এর বিপরীত গমন।) অভাব ছিল না। কিন্তু আমাদের ধারণা বর্ণ বিভাগ বা জাতি প্রথা অতি অবশ্যই এক ধরণের শ্রেণী বিভাগ, একে অস্বীকার করলে সমাজ কর্তারা ‘Correction’ বা দমন পীড়নের বিধানই দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দিয়েছেন তাত্ত্বিক অর্থাৎ ধর্মগত নির্দেশ।‘’ খুব সম্ভবত কংগ্রেস মহাত্মা গাঁধির নেতৃত্বে একটা পথ খুঁজে নিতে চেয়েছিল। তাই ‘হরিজন’ শব্দের মধ্যে অচ্ছুত শ্রেণীর আশ্রয় হয়েছিল। জওহরলাল নেহরুর পশ্চিমী শিক্ষার আলো এবং মিশ্র অর্থনীতি ভারতকে অনেকটা ‘জাতপাত’এর সমস্যা থেকে বাইরে টেনে আনতে পেরেছিল। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘’আয়বৃদ্ধির হার যে অলিম্পিক্স এর রেস নয়, এই কথাটা ভারতে মাঝেমাঝেই গুলিয়ে যায়। বৃদ্ধির হার কত, তার চেয়ে বেশি জরুরি হল সেই আয়বৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌছোছে কিনা। ভারতে নেহরুর আমল থেকেই সর্বজনীন উন্নয়নের দিকে ঝোঁক ছিল। সম্প্রতি সেটা খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে তো বটেই।‘’   
নাগরিক ভারত আড়ালে পরিবারে জাতিপ্রথা মানলেও ধীরে ধীরে অফিস কাছারিতে এক ‘ফিল্টার’এর জল খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সভ্যতার আলো সম্ভবত এভাবেই আমাদের চুপি চুপি বলে তুমি আধুনিক ভারতের সন্তান? না......?
কিন্তু সংবাদ মাধ্যম যতই আধুনিক মিশ্র সংস্কৃতির গল্প ফাঁদুক। বলিউড হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বেদ পুরাণ, রামায়ন, মহাভারতের গল্পগাঁথাকে আধুনিক ক্যানভাসে আমদের পরিবেশন  করুক না কেন। গ্রাম ভারত যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গেছে। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ আধুনিক সমাজ গড়তে অনেক অনেক সাহায্য করছে তাই হয়ত রাষ্ট্র নেতারা আপন ভদ্রাসন থেকে নেমে আসছেন। মানুষের দাবিতে। মানুষের বর্ণীল আন্দোলনের আলোকছটায়। সমস্ত দেশ জুড়ে দলিত নিগ্রহ নিয়ে তোলপাড় হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সামনে এলেন। রাজধর্ম পালন করলেন বা করতে বাধ্য হলেন। একুশ শতাব্দীর বাধ্য বাধকতায়। ৭ অগস্ট তিনি বললেন, ‘’যদি আক্রমণ করতেই হয়, আমাকে করুন। যদি গুলি করতেই হয়, আমাকে গুলি করুন। আমার দলিত ভাইদের নয়। এই খেলা বন্ধ হোক।‘’
৩১ জুলাই সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানতে পারছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ প্রকাশ করে। ৩০ জুলাই মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জন কার্বি বলেন, ‘’ধর্ম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে এবং অসহিষ্ণুতার বিরোধিতায় আমরা ভারতবাসী, ভারত সরকারের পাশে আছি। সরকারকে আর্জি জানাচ্ছি, তাঁরা যেন সর্বশক্তি দিয়ে নাগরিকদের রক্ষা করেন। দোষীরা যেন শাস্তি পায়।‘’
ভারতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল উনার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধি নিজে তাঁর সংসদীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে পীড়িতদের সঙ্গে দেখা করেন। সংবাদ পত্রের সেদিনের ওয়েব পাতার সংস্করণ থেকে আমরা জেনে নিতে পারি।
‘’Congress vice president Rahul Gandhi Thursday met members of the Dalit family who were assaulted allegedly by Gau Rakshaks for skinning a cow carcass.
“In Mota Samadhiyala, Una to meet the family members of the Dalit youths who were so brutally assaulted,” he tweeted.
The Congress vice-president assured Balu Bhai, the father of the Dalit youths, that justice will be served.

“We told Rahul ji everything, how we were all beaten up. He said they will do everything to get us justice,” said one of the victims.
“Why should we leave this village? The people, who have hurt us should leave,” he added.
Rahul left for Rajkot to visit the victims receiving treatment at PDU General Hospital.
This comes a day after Rahul was found “dozing off” in the Parliament, when the issue of atrocities against Dalits in Gujarat was raised. Bahujan Samaj Party (BSP) supremo Mayawati said this incident showed Rahul’s lackadaisical attitude towards the sensitive matter.
On Wednesday, there was a near total bandh in Gujarat called by Dalit groups as protesters took to the streets, downing shutters, attacking public transport and halting trains and vehicle traffic. Chief Minister Anandiben Patel also met the victims on Wednesday, but it did little to help calming the protesters.
Seven youths of the Dalit community were beaten up last week by some people claiming to be ‘gau rakshaks’ (cow protectors) when they were reportedly skinning a dead cow in Mota Samadhiyala village.’’ By: Express Web Desk | New Delhi | Updated: July 21
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন। উনায় তৃণমূলের সংসদীয় দল পাঠিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে কলকাতায় বলেছেন, ‘’আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমার বন্ধুরা রয়েছেন। ওঁদের এগিয়ে দিতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে চাই আমি।‘’  
সনিয়া গাঁধি কংগ্রেসের ধারাবাহিকতা মনে রেখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও দলের নেতা-সাংসদদের নিয়ে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর বিকেলে সংসদ চত্বর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত হাটেন। সেদিন রাহুল গাঁধিও ছিলেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে দলিত নিগ্রহের প্রতিবাদে কংগ্রেস সভাপতি ওইদিন স্মারকলিপি জমা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সনিয়া বলেন, ‘’গোটা দেশে ভয়, হুমকি ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ কায়েম হয়েছে। কিছু লোক দেশের বর্ণময় সংস্কৃতিকে নষ্ট করতে চাইছেন।‘’

Sunday 14 August 2016

আবেদন

আবেদন

মাটির পাত্র দাও আমি বৌদ্ধ ভিক্ষুক হব।
বটসম সেগুন বৃক্ষের কাঠ দাও......  
ক্রশ গড়ে দেবে কেউ,
সভ্যতার আলোয় প্রভাতের সভ্যতায়......
আমি ভিক্ষুক হব।
মদিনার পবিত্র ফতুয়ায় আছে
ভিক্ষার ধুলি।
আমি ভিক্ষুক হব আমার দেশে,
আমার দেশ ভারতে।
চিকাগো শহরে হেঁটে এসেছেন
স্বামী বিবেকানন্দ।
ভারত পথিক রামমোহন ভিক্ষা করেছেন,
আমি ভিক্ষুক হব, আমাকে ভিক্ষা দাও।
অপরাহ্ণ শেষে সায়াহ্ন বেলায়
পৃথিবী হাঁটছে অর্ধনির্মীলিত
এক চোখের আলোয়।
আমাকে স্বাধীনতা দাও.........
অখন্ড আকাশের আলো খুঁজতে,
আমি ভিক্ষুক হব।
হাঁটতে হাঁটতে বলে যাব,

আমরা মধ্য রাতের সন্তান।      

Tuesday 2 August 2016

দুনিয়া কাঁপানো একদিন (Brexit)

দুনিয়া কাঁপানো একদিন
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের এক ধারাবাহিক আন্দোলনকে ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ নামে আমরা জেনেছিলাম। সেই আদর্শ, দর্শন, অর্থনীতি, সামাজিক নীতি এসব এখন সমাজ বিঞ্জানী এবং ঐতিহাসিকদের বস্তুনিষ্ঠ চর্চার বিষয়। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দর্শন নিয়ে গবেষণা চলতেই থাকবে। আমরা সেই দশদিনের সঙ্গে আলোচ্য বিষয়কে এক সরণিতে রাখতে আগ্রহী নই। ওই নাম করণের অনুকরণে ২৪ জুন, ২০১৬ দিনটিকে নামকরণ করতে চাইছি। এই দিনেইতো ব্রিটেন নতুন করে ‘গণতন্ত্র’ পেল। এমনটাই দাবি একুশ শতাব্দীর ব্রেক্সিটপন্থীদের। তিরিশ বছর আগে বেরিয়ে গিয়েছিল গ্রিনল্যান্ড। এখন ব্রিটেন। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন ৫১.৯ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক। ইইউতে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন ৪৮.১ শতাংশ।
গত ২৫ বছর ধরে যে ব্যক্তিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনকে আলাদাভাবে স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চাইছিলেন তিনি হলেন ‘ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টী’এর (ইউকেআইপি) নেতা নাইজেল ফারাজ। তাঁর কথায় এই দিনটিকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে দেখা উচিত আমাদের। লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মন্ত্রীসভার বিদেশ সচিব বরিস জনসনের কথায়, ‘’............সবাইকে বলছি বিটেন ভেঙ্গে যায়নি। কম ইউরোপীয়ও হয়ে যায়নি।‘’ বরিস আরও বলেন, ‘’ ২১ শতকে এসে একটা সরকার কেন ব্রাসেলসের (ইইউ-এর সদর দফতর) দিকে তাকিয়ে বসে থাকবে? অতীতে সেটা মহৎ মনে হলেও ব্রিটেনের মানুষ এখন গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।‘’
১৯৬৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপ তথা ব্রিটেনের বৃহত্তর স্বার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল। প্রায় সাড়ে চার দশক ইইউ এর সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি এবং কূটনীতির খসড়া দলিল তৈরি করতে সক্রিয় থেকেছে। বলা ভালো ইউনিয়ন চালানোর বিভিন্ন নীতি এবং কৌশলের অংশীদার ছিল ব্রিটেন। ২০০৪ সালে পূর্ব ইউরোপের দশটা দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। এরমধ্যে সাতটা দেশ ছিল পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়া নিয়ন্ত্রীত গোষ্ঠীর। কি এমন হল যে ব্রিটেন নামক প্রাচীন এক রাষ্ট্রের প্রথম সারির কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতা ‘ব্রেক্সিট’-এর জন্য গণভোটের আবেদন করলেন? তথ্য বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১,৭৪,১০,৭৪২ জন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার জন্য ব্রিটেনের প্রতি সপ্তাহে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছিল। সংবাদ সংস্থার খবর, জিডিপির ০.৫ শতাংশের দায় নিয়েও নিজেদের দেশের কোনও লাভ হচ্ছিল না। বিষয়টা যথেষ্ট জটিল। নিজেদের দেশের অর্থনীতি, করব্যবস্থা, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা, শুল্ক-বাণিজ্য এবং অভিবাসন নীতি, সর্বপরি বিদেশনীতির বিষয়ে ব্রিটেনকেও নির্ভর করতে হচ্ছিল ব্রাসেলসের উপর।
৩০৯ বছর আগে যে গ্রেট ব্রিটেন গড়ে উঠেছিল সেই মঞ্চে ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ড ছিলতবু দেখা গেছে ব্রিটিশ শাসকদের কতৃত্ব। অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই ইংরেজরা প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। বিষয়টা উল্লেখ করলাম আলোচনার মঞ্চটাকে বিস্তৃত করার অভিপ্রায়ে। যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এক সময় সূর্য অস্ত যেত না সেই জাতি এতগুলো দশক পরাধীনতা মেনে নিল কি করে? স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালের আগে থেকে আমাদের কিছুটা পেছনে হাটলে সম্ভবত সুবিধা হয়।
ষাটের দশকের শেষ নাগাদা আন্তর্জাতিক মঞ্চে জার্মানি এবং জাপান নিজের নিজের দেশের অর্থনীতিকে পুনঃসংগঠিত করলো। এই দশকের শেষে উল্লেখিত দুটি দেশ আমেরিকার সঙ্গে বাজার দখলের লড়াইয়ে নামে। ১৯৯৩ সালেই রাষ্ট্রবিঞ্জানীদের মত ছিল জার্মানী এবং জাপানের আন্তর্জাতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। ‘ব্রেটন উড’ চুক্তি অনুসারে জাপান ও জার্মানীতে সামরিক ব্যায় বরাদ্দ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে দুটি দেশের সরকারের সাহায্যে শিল্পপতিদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়িয়ে নিতে অনেকটা সুবিধা হয়। মার্কিন অর্থনীতিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ জানাতে দুটি দেশ ময়দানে নেমে পড়ে। তথ্য বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর অনেক আগে থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে চাইছে। সেই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর না করে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাজারে ভারসাম্য আনতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু ধাক্কা আসে। অ্যাথেন্স, মাদ্রিদ, লন্ডন। ইউরোপের উত্তর থেকে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে থেকেই। গ্রীসের অভিঞ্জতা আমাদের এই সঙ্কটকে মনে করিয়ে দেয়। পরস্পরের দোষারোপকেও মনে করতে পারি। যেমন পর্তুগাল, ইটালি, গ্রীস, রোম বা ‘PIGS’ নামক চারটি দেশের অতি ব্যয় তথা অপরিকল্পিত ব্যয়ের কারণে সমস্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বোঝা টানতে হচ্ছে। এমন সব অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। খুব সম্ভবত গত ২৫ বছরের যে টানা লড়াই ব্রিটেনবাসী করল তার ফসল ২৪ জুন, ২০১৬। অভিযোগ আরও আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কয়েকটি দেশের দায় ব্রিটেনকেও নিতে হচ্ছিলঅভিবাসীরা মুক্ত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়ছে বিনা বাঁধায়। সীমাহীন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ব্রিটেনবাসী অনুভব করেছে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব  বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ব্রিটেনের বেরিয়ে আসাটা কি এই সত্য প্রমাণ করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বলে মুক্ত সমাজের কথা। যে সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতা শেষ কথা বলার দায়িত্ব নিতে পারে। আধুনিক গণতন্ত্রের আইন অনুযায়ী। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগকেও সম্মানজনকভাবে ‘স্পেস’ করে দেওয়ার সামাজিক সংস্কৃতি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি উৎপাদনমুখী ব্যাবস্থাকে আহ্বান করা হয় মার্কিন অর্থনীতিতে।
উল্লেখ করতে চাইছি প্রথম বিশ্বের তথ্য। ঐতিহাসিকরা বলছেন, ‘’ব্রিটিশ শ্রমিক শ্রেণীর বড় অংশ অন্ততঃ প্রথম মহাযুদ্ধ অবধি জনকল্যাণ রাষ্ট্রের বদলে সমস্ত (অন্ততঃ পুরুষ) শ্রমজীবীর জন্য মোটামুটি উচ্চ মজুরী সম্পন্ন চাকরি চাইত। অর্থাৎ সামাজিক মজুরীর (Social wage) এর তুলনায় নগদ মজুরী ছিল তাঁদের কাছে অধিক কাম্য।‘’ এই সময়ের সূত্র ধরে এগলে ঠিক ওই সময়কালে পাচ্ছি এক রাস্ট্র নেতার বক্তব্য। প্রথম মহাযুদ্ধের পরে পরেই ব্রিটেনে বেকার ভাতা চালু করার প্রস্তাবে ওই রাষ্ট্র নেতা বলেছিলেন, ‘’ছেলেরা বন্দুক ধরতে শিখে এসেছে। যদি এবার ওদের চাকরি বা ভাতা কোনটাই না দিই, তাহলে ওরা হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে বন্দুক ঘোরাবে।‘’
ব্রেক্সিট উত্তর ব্রিটেনকে কি সেই সত্যের দিকে ধাবিত হতে দেখব আমরা? বর্তমান ইউকে নামক এক প্রাচীন সভ্যতাকে কি আরও জটিল দিকে ঠেলে দিতে চাইছে? সম্প্রতি বিবিসি সূত্রে খবর ব্রিটেনে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে মন্দা চলছে। আমরা আগেই জানি গত তিন দশকের মধ্যে পাউন্ড সবচেয়ে তলানিতে নেমেছে। অন লাইন সংস্করণ পত্রিকায় Global Financial Integrity, 20 June, 2016, Daniel Neale লিখছেন    
With just days remaining until Britain decides on its EU membership, the UK is at a crossroads. It has a historical choice to make, with various consequences attached to the decision on the 23rd of June on whether it becomes the first ever country to leave the EU. Those consequences could include undermining the leading role that Britain has taken in the global fight against corruption and transforming Britain into an even greater tax haven for multinationals.
According to a recent report by the British Treasury, £36 billion would be sucked out of the UK’s financial sector by 2030 due to the economic costs of pulling out from the EU. Taxpayers will be forced to pay 8p more in income tax on every pound earned, and the economy risks shrinking between 3.4 percent and 9.5 percent by 2030 depending on the exit strategy it chooses.’’


খুব সম্ভবত ব্রিটেনের আর্থিক সমস্যা, বেকার সমস্যা তথা ব্রিটেনের উন্নয়নের বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সজাগ আছেন। তাই তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে বলেছেন,  “In the coming weeks, I will set out [how] to take our economy through this period of uncertainty, to get the economy growing strongly across all parts, to deal with Britain’s long-standing productivity problem, to create more well-paid jobs, to negotiate the best terms for Britain’s departure from the EU and to forge a new role for ourselves in the world,”

  দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি আর বলেন, “We the Conservatives will put ourselves at the service of ordinary working people and we will make Britain a country that works for everyone.”Theresa May
বিশ্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক ব্রিটেনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় রানী এলিজাবেথ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘’Of course we all live and work in an increasingly complex and demanding world where events and developments can and do take place with remarkable speed, and retaining the ability to stay calm and collected can at times be hard.’’ (Simon Johnson, The Daily Telegraph, July 2, 2016)
         ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসাকে আমেরিকাও স্বাগত জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘’The people of the UK have spoken, and we respect their decision. The special relationship between the United States and the United Kingdom’s membership is enduring, and  in NATO remains a vital corner-stone of US foreign, security and economic policy. The UK and the EU will remain indispensible partners of the US even as they begin negotiating their ongoing relationship to ensure continued stability, security and prosperity for Europe, Great Britain and Northern Ireland, and the world.’’
রিপাবলিকান দলের মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও ব্রিটেনের নাগরিকদের গণভোটকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘’They’re angry about many, many things in the UK, the US and many other places. This will not be the last. I said this was going to happen and I think it is a great thing. Basically, they took back their country. That’s a great thing.’’ (John Reynolds, The Times, London, June 24, 2016)
    ব্রিটেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়া’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন। যুগোস্লাভিয়ার বিষয়টির অনেক আগে ইতিহাস বলছে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে। ১৯৯২ সালে নজিব সরকারের পতন এশিয়ার মানচিত্রে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছিল। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম এক নতুন শতাব্দীর। সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের অবসানে একুশ শতক এল বিশ্বায়নের বার্তা নিয়ে। একুশ শতক শুরু হল ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান দিয়ে। বাজার অর্থনীতির বাস্তব মুনশিয়ানায়। আমরা খুঁজে পেলাম রাস্ট্রের কল্যাণের জন্য উন্নয়নের রাস্তা।  কিছুদিনের মধ্যে বার্লিন প্রাচীরও ভেঙ্গে ফেলা হল। শেষ ঘণ্টা শুনলাম ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার কণ্ঠে। সোভিয়েত রাশিয়া পতনের কিছুদিন পর ফুকোয়ামা লিখলেন, ‘দি এন্ড অফ হিস্ট্রি অ্যান্ড দি লাস্ট ম্যান।’
একুশ শতাব্দী শেষ হল ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান দিয়ে। নতুন রাশিয়ারও জন্ম হল। ‘ব্রেক্সিট’ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট দু’বছর আগে থেকে শুরু হয়েছিল বলেই মনে হয়। ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়ার স্বাধীন হয়ে আত্মপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে কি নতুন অক্ষ তৈরি হতে যাচ্ছে? তথ্য বলছে ১৯৫৪ সালে ক্রিমিয়ান পেনিনসুলা রাশিয়া থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ইউরপিয়ান ইউনিয়ন ক্রিমিয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি। সংবাদ সংস্থার খবর, ‘’EU decided that individual members should choose whether they would recognize Kosovo’s independence or not. The majority did, with the notable exception of Spain, which faces separatism, trend in the Basque country and Catalonia.’’
‘’The EU rejected the Crimean referendum and said would not consider its result. EU foreign policy chief Catherine Aston said, the referendum is illegal under the constitution of Ukrine and under international law. He added more, you can’t simply sit back and say this situation can be allowed to happen.’’ (March, 2014)
যুগোস্লাভিয়ার অভিঞ্জতা আমাদের সামনে আসার আগে আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর পরিস্থিতিটা উঁকি দিয়ে দেখে নিতে চাইছি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর পনেরোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে এগারোটি প্রজাতন্ত্র মিলে গড়ে তুলেছিল ‘Commonwealth of Independent States’. এগারোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একমাত্র রুশ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে (Security Council) সদস্য পদ আছে। বর্তমানে রুশ প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান। Commonwealth of Independent States তৈরি হওয়ার পরেও ‘সিস’ নয় রাশিয়াই সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থান নিয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পরে রাশিয়ার অবস্থান যেমন বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি যুগোস্লাভিয়ার অভিঞ্জতাও অত্যন্ত সময় উপযোগী হবে ‘ব্রেক্সিট’ পরবর্তী সময়ে। যুগোস্লাভিয়ার অন্যতম অঙ্গ রাজ্য সার্বিয়ার কসভো প্রদেশের কসভান-আলবেনিয়ানরা যুগোস্লাভিয়ার থেকে বিছিন্ন হতে চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছিল। ন্যাটো গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়েই তাঁরা স্বাধীনতা পেয়েছিল। ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়ার জন্ম ১৯১৯ সালে। শুরুতে ৬ টি রিপাবলিক নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই ফেডারেল রিপাবলিক। সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, ম্যাসেডেনিয়া, মন্টেনগ্রো এবং বসনিয়া।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর জাতীয়তাবাদের দাবিতে ১৯৯১-৯২ এই এক বছরে ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হারডোগোভিনা ও ম্যাসেডেনিয়া পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে। ১৯৯২ সাল থেকে সার্বিয়া এবং মন্টেনগ্রো নিয়েই গঠিত যুগোস্লাভিয়া যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান ইউকে-এর পরিস্থিতির পরে যুগোস্লাভিয়ার থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।   
এই প্রসঙ্গে Fedia Buric এর লেখাটি আশা করি সাহায্য করতে পারে।

BREXIT: A LESSON FROM YUGOSLAVIA

On June 23, 2016 the UK decided to leave the European Union. The Brexit referendum, like any other, was supposed to let the people speak. The trouble is, that they did not speak in unison and now the raison d’être of this multinational state has disappeared. In the early 1990s, Yugoslavs also went to their referendums to determine their willingness to stay in another federation. The result was bloodshed and the fragmentation of Yugoslavia into squabbling, dysfunctional mini nation-states. What can a dead country teach the (barely) alive one?
The UK has a lot in common with Yugoslavia. Like Yugoslavia, the UK is a complicated multinational state born out of a contentious historical project that often overlapped with the imperial project of the country that would form the core of the multinational federation. For Yugoslavia, this was Serbia, and for the UK, this was England. Like the English in Scotland and Ireland, the Serbs in Croatia, Kosovo and Bosnia were sometimes perceived as brute conquerors.
Like the English, the Serbs felt misunderstood by the populations they were trying to integrate, accusing them of ungratefulness at all the sacrifices they are making for the common cause. Like the non-English in the UK, the non-Serbs in Yugoslavia felt patronised, bullied, and colonised by their more powerful big brother. The creations of both unions were preceded by periods of terrible interethnic and inter-religious violence.
And yet, despite the pull of history, the elites managed over time to assemble messy, but durable, multinational experiments. Complicated compromises were hammered out and historical animosities became more predictable and controllable, if not entirely extinguished. Local self-rule and autonomy to ethnically distinct regions was the modus operandi in both the UK and Yugoslavia.
For the minorities stuck in areas where their political desires were not shared, there were also special provisions. For the Protestants in Northern Ireland maintaining cultural and political links to their brethren in England was as important as the free flow of cultural capital between the Serbs of Bosnia and the Serbs of their motherland, Serbia.
Aware of the unprecedented nature of multinational federations in an era of nation-states, the elites in both federations were reluctant to push any notion of a multinational identity that would supersede the deeply entrenched national identities of the constitutive units. Put more concretely, ‘Britishness’ was never really an official policy of the UK, just as ‘Yugoslavness’ was never really an official policy of post-World War II Yugoslavia. Instead, the elites must have hoped that out of years, decades, and centuries of interethnic interactions, the English, Welsh, Scots and Northern Irish would come to see themselves as Brits, just as the Serbs, Croats, Muslims, Slovenes,Macedonians and Montenegrins would come to see themselves as Yugoslavs.
For the UK, membership of the EU distracted the internal destructive forces — of English nationalism for example — redirecting their ire towards Brussels. For Yugoslavia, the Cold War and the consequent special relationship the country had with both blocs tamed internal nationalisms — at least for a while — by buttressing a sense of national pride at such a small country occupying such a large world stage. Then, the Berlin Wall fell down and so too did Yugoslavia: the Yugoslavs lost their special place, internal nationalisms roared back and democratic populism took the centre stage.
The Yugoslav case defies the notion that democracy is an essential good in itself, that it brings stability and that it liberates people. In Yugoslavia, the 1990s began with a genuine mobilisation of grassroots engagement with the political process. New political parties sprang up overnight. People demonstrated, asking for all sorts of things. Referendums were announced. New futures were promised. The decade ended in a bloodbath, the country tearing itself apart into dysfunctional or non functional nation-states.  The end tally: over 100,000 dead, more than 2 million displaced, new borders erected and a future poisoned by hate, division and nationalist-coloured corruption.
If there is one lesson the UK should take from Yugoslavia it is this: referendums are terrible. These brief exercises in direct democracy not only fail to solve existential societal questions, but they bring to the fore societal divisions that had previously been channeled into civil political discourse (like in the UK) or, yes, been politically repressed (like in the case of Yugoslavia).
Because they are almost always organised around issues that seem existential, their disruptiveness is also due to the fact that they are, mostly, irreversible. Unlike in elections, the losing side cannot redirect its anger into winning the next round because the matter had supposedly been settled forever.
Take the example of the Bosnian Serbs in Bosnia. In 1992, the newly, democratically elected, Muslim-Croat government organised a referendum on whether or not Bosnia-Herzegovina should leave the Yugoslav federation after two of its richest republics, Slovenia and Croatia, had already opted out. The Bosnian Serbs, overwhelmingly in favour of staying in Yugoslavia where they could maintain their links to Serbia, boycotted the referendum knowing that the fact that they composed slightly over 30 percent of the population. Their participation would see them outvoted, but still legitimise the referendum. Predictably, the referendum returned an overwhelming ‘yes’ for independence. Equally predictably, the referendum led to war, as Bosnian Serbs carved out their piece of Bosnia which they wanted to remain in Yugoslavia.
Following the Brexit referendum, the UK is facing a startlingly similar situation. To a large extent, the vote fell across the national lines and made the lack of national consensus a matter of life and death for the country. The end of the UK outside of the EU seems as predictable as the end of the unified Bosnia-Herzegovina outside of Yugoslavia: the Scots secede, the Northern Irish ask for their own self-determination and eventual reunification with Ireland, while the Protestants retreat from politics, and resort to who knows what, fully aware that the political process had already turned them into a minority.
 ‘ব্রেক্সিট’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে এর কতটা প্রভাব পড়তে পারে? প্রভাব যে পড়বে সে নিয়ে সন্দেহ রাখার কোনও অবকাশ নেই। কারণ সূত্রের খবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বে আর্থ-সামাজিক ঝুঁকি বাড়বে বলে G-20 নেতৃত্ব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ভারতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদায়ী গভর্নর এবং অর্থনীতির শিক্ষক রঘুরাম রাজন ইতিপূর্বে বলেছেন, ‘’ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইয়নিয়ন ছাড়ার গণভোটের রায়ে বিশ্বের অর্থনীতি কিছুটা হলেও টালমাটাল হবে।‘’ রাজনের দাবি, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও ভারতের অর্থনীতি বহু দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। সম্প্রতি বিশেষঞ্জদের অভিমত, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে আমেরিকায় কর্মসংস্থান বাড়ায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা পোক্ত হয়েছে। 
‘ব্রেক্সিট’ পরবর্তী ইউকের মানুষ তাঁদের যোগ্য নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়েই ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নেবে এমনটা আশা করা যায়। কারণ ব্রিটেনের নিজস্ব স্পর্শকাতর ঘরানা রয়েছে। সেই ঘরানার নাম ‘Commonwealth wave’.  এই আন্দোলন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘’Commonwealth is a voluntary association of 54 countries that support each other and work together towards shared goals in democracy and development.’’
আমরা ব্রিটেনের সঙ্গে ছিলাম পরাধীন হিসাবে। আমরা ব্রিটেনের সঙ্গে থাকব স্বাধীন ভারতীয় হিসাবে। কারণ ব্রিটেনের ধ্রুপদী আভিজাত্য চিরকালীন থাকবে। বিগ বেন, শেক্সপিয়র, উইমবলডন, রানী এলিজাবেথ, অক্সফোর্ড এবং সেভিল রো নামক আভিজাত্যের চিরকালীন আবেদনে।