Friday 26 October 2018

মেঠো খাতা

মেঠো খাতা
দীপেন্দু চৌধুরী

স্মৃতি ছিলো স্মৃতি আছে
   স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে,
মাঘ রজনীর কুয়াশা মাখা
স্মৃতি ছিলে ঘাসের
      খাঁজে খাঁজে।
মেঠো ইঁদুর ছুটছে আজও, আল ভাঙা
জমির মুড়ো ধান ক্ষেতে,
তেমনি করে খুঁজতে থাকি.........
গন্ধ লেবুর লতায় পাতায়,
 খুঁজছি আমি অনুভবের ডালপালা,
 স্মৃতি আমার হারিয়ে গেছে 
হারিয়ে গেল তোমার আমার ছেলেবেলা।    

Sunday 21 October 2018

‘বাঘাদা বাঘাদা হীরে নিলে কত শুনি? সময় কি আছে গুনি?’


দীপেন্দু চৌধুরী
উৎসবের মরশুম আর কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতে তথা আমাদের বাংলায় লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিসগঢ় সহ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা  ভোট নিয়ে দেশের দু’টি প্রথমসারির দল কংগ্রেস আর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত। ভারতের এই সেমিফাইনাল ভোটের আগে পশ্চিমবাংলায় একটি ছোট্ট টোকায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বে পরিবর্তন এসে গেছে। কংগ্রেসের অন্দরের খবর কংগ্রেস নিজের ‘ডিএনএ’ ফিরে পেয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর বাংলা প্রভাতি দৈনিকে আমরা প্রথম পাতায় খবর দেখলাম ‘বাংলায় সোমেনের হাতেই কংগ্রেস’। সোমেন মিত্রকে আচমকা প্রদেশ কংগ্রেস দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল এমনটা সম্ভবত নয়। লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গেছে সেই সময় রাহুল গাঁধি এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল গত বছর কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড আরও একটা বছর অপেক্ষা করলেন। চলতি বছরের অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে রাহুল গাঁধি বাংলার নবনির্বাচিত নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বাংলায় সংগঠনকে স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দিকেই বেশি করে নজর দিতে হবে। পার্টির লাইন ঠিক করে এক সুরে সবাইকে কথা বলতে হবে। রাহুল গত কয়েক বছরে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বের অতীত এবং বর্তমান ঘেঁটে সম্ভবত এটা বুঝতে পেরেছেনসোমেন মিত্র হতে পারেন দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত বাংলা কংগ্রেসের অন্যতম কাণ্ডারীপোড় খাওয়া ৭৫ বছরের নেতা এক সময়ের দক্ষ সংগঠক বাংলার কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকতে পারেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর ওইদিনের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি তাহুল গাঁধি খোলসা করে বলে দিয়েছেন, ‘বাংলার ৪২টা লোকসভা আসনের একটাও কংগ্রেস না পেলেও কিছু এসে যাবে না। কিন্তু আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে জোট হবে না, সংগঠনের আগে কোনও কিছুর অগ্রাধিকারও থাকবে না।’        
সোমেন মিত্র এবং কংগ্রেস
সালটা ১৯৯৭।  আমি একজন নকশাল নেতার সঙ্গে তাঁর অনুরোধে হাবড়া যাচ্ছি। একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়িতে। হাবড়ায় একটা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আছে। ১৯৯৭ সালে একটি নকশালপন্থীগোষ্ঠী হিসেবে সেই নেতাটি বামফ্রন্টের খাতায় নাম তুলতে পেরেছিলেন। হাবড়ায় বামফ্রন্টের একটি জনসভায় আমাদের যেতে হবে এটাই জানতাম। সেই নেতার কাছে জানতে পারলাম আমাদের সামনের গাড়িতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের এক ডাকসাইটে মন্ত্র আছেন। তিনি উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সিপিএমের প্রথমসারির নেতা। তার গাড়ির সামনে পুলিশের কনভয় আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি শুনেছিলাম হাবড়ার ওইদিনের জনসভায় সিপিএমের জনপ্রিয় গণনেতা সুভাষ চক্রবর্তী থাকবেন। পরের ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা হাড়ায় কোনও একটি ক্লাবে অথবা কারও বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলামএখন ঠিকঠাক মনে করতে পারছি না। তবে ওইদিনের ‘জনসভা’ কোনও এক অঞ্জাত কারণে বাতিল হয়েছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সুযোগ তখনও ভারতে এসে পৌছয়নি। তাই ‘মোবাইল ফোন’ কারও হাতে ছিল না। থাকলে হয়ত বামফ্রন্টের ডাকসাইটে ওই মন্ত্র আগে খবর পেতেন। এই পর্যন্ত আমার দেখা প্রত্যক্ষ ঘটনা। পরেরটা যেমনটা শুনেছি।
সেদিন কোনও জনসভা ছিল না। ‘পিডিএস’ নামক একটি নতুন সংগঠন অথবা সিপিএম দল ভেঙে আরও একটি নতুন সর্বভারতীয় সমাজ গণতান্ত্রিক তথা বামপন্থী নতুন একটি দল তৈরির প্রাক প্রস্তুতির অন্যতম একটি বৈঠক। দলটির মডেল হিসেবে সামনে ছিল ১৯৭৭ সালের ‘জনতা পার্টি’। যে দলের মঞ্চে কংগ্রেস বিরোধী ভারতের প্রায় সব রাজনীতির নেতারা সম্মিলিত হয়েছিলেন। যদিও কংগ্রেসনেত্রী ইন্দিরা গাঁধির নিবিড় রাজনৈতিক মেধা এবং কূটনৈতিক চালে জনতা দল খন্ড খন্ড হয়ে যায়। সেদিনের হাবড়ার ওই বৈঠকে কোন কোন দলের কোন কোন তাবড় নেতা থাকতেন আমি জানি না। তবে পরে শুনেছিলাম বামফ্রন্ট বিরোধী নতুন একটি গণতান্ত্রিক মঞ্চ গঠনের প্রাক প্রক্রিয়ায় সোমেন মিত্র প্রাথমিকভাবে থাকতে রাজি হয়েছিলেন। এই নতুন মঞ্চটি মূলত তৎকালীন যুবকংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে গড়ে উঠছিল। যে কারণে সুভাষ চক্রবর্তী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সিপিএম দলের দৈনিক মুখপত্র ‘গণশক্তি’ পত্রিকার পালটা একটি দৈনিক ‘সোনার বাংলা’ প্রকাশ হয়ে গেছে। নতুন সমাজগণতান্ত্রিক বাপপন্থী দলটির চিন্তা ছিল সিপিএমের এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় যুবনেতা তথা সাংসদ সৈফুদ্দিন চৌধুরী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরে এই দু’ই নেতাকেই সিপিএম দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়।   
অবশেষে যদিও সিপিএম ভেঙ্গে অথবা বামফ্রন্ট ভেঙে আরও একটি নতুন সর্বভারতীয় দল গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। সিপিএমের চাণক্য নামে যাকে অভিহিত করা হয় তাঁর এক গভীর দূরদৃষ্টির চালে এই দল গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কমরেড অনিল বিশ্বাসের বিদুরের ন্যায় এক পাশার চালে ভারতের  প্রস্তাবিত নতুন কমিউনিস্ট পার্টির সলিল  সমাধি হয়। কিন্তু সিপিএম বা কমরেড অনিল বিশ্বাস যেটা আটকাতে পারলেন না সেটা হচ্ছে তৃণমূলকংগ্রেস নামক দল। ১৯৯৮ সালে এই দল আত্মপ্রকাশ করল কংগ্রেস দলের উজ্জ্বল নক্ষত্র যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। ২০০১ সালে সারা বাংলায় রব উঠেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন হবে। সেই সরকারে সুভাষ চক্রবর্তী, সৈফুদ্দিন চৌধুরীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি মঞ্চ অংশ নেবে।  শোনা কথা নিজের যোগ্যতা মত এতদিন নিজের মনের খাতায় রেখেছিলাম। কমরেড অনিল বিশ্বাসের কূটচালে তৎকালীন সময়ে স কিছু ভেস্তে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় একা ‘অনাথ’-এর মত জীবন কাটাতে হয়েছে। বিভিন্ন রকমের মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে সংখ্যালঘু দলের সাংসদ হিসেবে। দিল্লিতে, কলকাতায় পদে পদে হেনস্থা হতে হয়েছে। রাজনীতির এমনই খেলা। ২০১১ সালে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে যে জোট সরকার গঠন হয় তার দু’বছর আগে অনিলদা মারা গেছেন। সিপিএম দল যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ধুঁকছে। গোষ্ঠী দ্বন্দে বিদীর্ণ। সেই সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছিলেন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত পাঁজা, মদন মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। পরেরটা ইতিহাস। ২০০৬ সালের সিঙ্গুর ইস্যু, ২০০৭-০৮ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭-৯৮ সালের অভিঞ্জতাকে কাজে লাগালেন। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সৈফুদ্দিন চৌধুরী, সুভাষ চক্রবর্তী প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ফ্রন্টে বিক্ষুব্ধ সিপিএম, পিডিএস, বিভিন্ন নকশালপন্থী গোষ্ঠী, এস ইউ সি দলের নেতাকর্মীরা এসে সামিল হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে আমি সাংবাদিক হিসেবে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার পূজালিতে সোমেন মিত্র একটি কর্মীসভা করছিলেনপূজালি পুরসভা সেই সময় কংগ্রেসের দখলে ছিল। বৈঠক চলাকালীন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‘আমাকে ১০ মিনিট সময় দিন। আমি এই মিটিং শেষ না করে কিছু বলতে পারব না।’ এতটাই সুশৃঙ্খল তিনি। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা সুবিদিত।  ২০১১ সাল থেকে তৃণমূল আড়েবহরে বিড়াট আকাড় নিয়েছে।  কংগ্রেস দলের ভাঙ্গন ২০০৯ সালেই শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের বাংলার একজন সর্বভারতীয় নেতার প্রশ্রয়ে এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়া চলতে থাকে গঙ্গার ভাঙ্গনের মত তাঁর দেওয়া অর্থ এবং প্ররোচনা এক্ষেত্রে বড় রকমের ভূমিকা নেয়। সেই ভদ্রলোক ২০০৬ সাল থেকে প্রদেশ কংগ্রেস এবং কংগ্রেস দলের দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে ওঠেন। দলবদল নিয়ে রাজ্যে একটা ছড়া কাটার প্রচলন শুরু হয়েছিল। ছড়াটা কি ছিল?   
১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সোমেন মিত্র প্রদেশকংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। তিনি সভাপতি থাকাকালীন কংগ্রেস দলে এই ছড়া কেউ কাটতে সাহস পায়নি। ছড়াটা কি? সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘হীরক রাজার দেশে’ একটা গান আছে ‘’মোরা করব এখন ডাকাতি/ রাতারাতি/ডাকাতি রাতারাতি।/ বাঘাদা বাঘাদা হীরে নিলে কত শুনি? সময় কি আছে গুণি?/ নিয়েছি যথেষ্ট।‘’ তৃণমূলকংগ্রেসে যে সব নেতারা চলে যাচ্ছেন তাঁদের আমচে চামচেদের মুখে এই গানের কলি আমি সাংবাদিক হিসেবে শুনেছি। 
সোমেন মিত্র ২০০৯ সালে লোকসভার ভোটের সময় তৃণমূল কংগ্রেসে গেলেন। তার কারণ হয়ত রাজ্য কংগ্রেস দলে দোদুল্যমানতা এবং প্রদেশ কংগ্রেসে কোণঠাসা অবস্থা। কংগ্রেসের কেউ কেউ বলে থাকেন বাংলা তথা ভারতে ‘নাট বল্টু’ গোষ্ঠীর একচেটিয়া আধিপত্য অনেককেই কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। পাশাপাশি আরও একটা সম্ভবনা থেকে যায় ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারে তৃণমূল কংগ্রেসের অংশগ্রহণ। ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সোমেন মিত্র যে দূরদৃষ্টি নিয়ে সোমেন মিত্র তৃণমূল কংগ্রেসে গেলেন হল ঠিক তার উল্টো। তাঁকে উপেক্ষা করা শুরু হল। তৃণমূল দলে সোমেনদাকে জনৈক এক নেতা কোণঠাসা করে রেখে দিয়েছিল। যত রকমের হেনস্থা করা যায় সব কিছু করা হয়েছিল। তৃণমূলের অন্দরে যেমন এই হেনস্থার ব্যাপারে প্ররোচনা ছিল দলের বাইরেও অন্য দলের একটি গোষ্ঠীর পরোক্ষ প্ররোচনা ছিল। ওই তৃণমূলনেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে ঘোড়া কেনাবেচায় নিজেকে বড় এবং দক্ষ ম্যানেজার হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিলেন। ২০১১ সালের পর থেকে কংগ্রেসের ঘড় ভেঙে বিধায়ক, গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, বিভিন্ন পুরসভা থেকে সমস্ত কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধি ভাঙ্গিয়ে আনতে তিনি পটু হয়ে উঠলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সেই বিতর্কিত নেতাটিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যিনি তৃণমূল দলে ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন সেই নেতা বিজেপিতে গিয়ে নতুন করে আর কংগ্রেসকে ভাঙতে পারছেন না। কারণ সোমেন মিত্র নিজের ঘরে ফিরে এসেছেন। কংগ্রেসের ‘ডি এন এ’ তে নিজেকে মিশিয়ে দিতে পেরেছেন।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের শ্রমদপ্তরের একজন আই এ এস অফিসার আমার এক বরিষ্ঠ সাংবাদিক বন্ধুকে বলেছেন ‘দীপেন্দুদাকে করুণা করা যায় না। যারা ভাবছে ওনাকে করুণা করে সাংবাদিকতা অথবা লেখকের কাজ করাবে তাঁরা ভুল ভাবছে।‘’ আই এ এস অফিসারটি আমাকে আশির দশক থেকে চেনেন। তিনি আমার থেকে বয়সে কিছুটা ছোট। আমি সলজ্জভাবে বলছি এই প্রশংসা সমানভাবে সোমেন মিত্রেরও প্রাপ্য। আর যাই হোক সোমেন মিত্র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈফুদ্দিন চৌধুরী, কানু সান্যাল, সুভাষ চক্রবর্তীদের মত ব্যক্তিত্বদের করুণা করা যায় না। অনেকের কাছে শুনেছি সোমেন মিত্রকে দেখে অনেক কংগ্রেসি নেতা, সমর্থক নিজেদের হাতে গড়ে তোলা সংগঠন ছেড়ে তৃণমূলকংগ্রেসে গিয়েছিলেনসোমেন মিত্র নীরবে এসব দেখেছেন। সহ্য করেছেন। অপমান হজম করে চুপ করে ছিলেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাই তৃণমূলকংগ্রেস ছাড়ার সময় সাংসদ হিসেবে পদত্যাগ করে কংগ্রেসে ফিরে আসেন। এটা তারিফ করার মত রাজনীতি। সততার রাজনীতি। বিশ্বাসের রাজনীতি। নিজেকে প্রমাণ করার রাজনীতি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সভাপতি হিসেবে তিনি ‘ফেসবুক’- এ যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটা এই লেখায় কিছুটা তুলে দিচ্ছি। তাঁর মতো একজন প্রবীণ নেতা ‘ক্ষমা’ চাইছেন ভাবা যায়?  ভারতীয় রাজনীতিতে যেটা ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
‘’যদি আমার প্রতি কারো কোনো ক্ষোভ- বিক্ষোভ থাকে তাঁদের কাছেও করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলছি চলুন না একসাথে জোটবদ্ধভাবে আবার লড়াই এ নামি আমরা।‘’ সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন ‘’অতীতে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের সাময়িক লাভ হয়েছে। কিন্তু তার পরে আমাদেরই ঘর ভেঙ্গেছে। এখনও পর্যন্ত পনেরোজন কংগ্রেস বিধায়ককে তৃণমূল ভাঙ্গিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাঁদের পদত্যাগ করতে বলার নৈতিকতা তাঁরা দেখায়নি।‘’ সোমেনদা সংবাদ মাধ্যমে আরও বলেন, ‘’যারা চলে গিয়েছেন। এখন তৃণমূলে আছেন, এমন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে। একা কিছু করা যাবে না। অনেক মতপার্থক্য, ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে সবাইকে নিয়ে কংগ্রেস পরিবারের জন্য কাজ করতে হবে।‘’           
সিপিএম এবং কংগ্রেসের তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে শুনেছি সোমেন মিত্র এবং অনিল বিশ্বাসের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রে যে ধরণের সম্পর্ক হয়ে থাকে। সোমেন মিত্র কোনদিন কংগ্রেস ‘ডিএনএ’ থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতি করতে চেয়েছেন এমনটা খুব একটা শোনা যায় না। ২০০৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমি যে সাক্ষাৎকার নিয়েছলাম সেদিন আমার প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি সিপিএম আমলে এতদিন বিধায়ক থাকলেন কি করে?’ উত্তরে সোমেনদা বলেছিলেন, ‘রসায়নটা হচ্ছে কংগ্রেসের রাজনীতি। শিয়ালদহ বিধানসভার মানুষ আমাকে চেনে। আমি অঞ্চলের মানুষের প্রতিটি ঘরের লোককে চিনি ওই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে। আর সিপিএমের সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াই করেই আমাকে জিততে হয়।‘’
খুব কিছু অপ্রাসঙ্গিক হবে না হয়ত একটি লেখার কিছুটা অংশ উধৃতি হিসেবে উল্লেখ করলে। ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘ভগ্নমুখ শেকড়ছেঁড়া মন’ সংখ্যা ( ৭ মার্চ ১৯৯৮) ‘প্রজন্ম ব্যবধান তীক্ষ্ণ এবং ব্যাপক হতে শুরু করলো ’৬৮ থেকে’ শিরোনামে প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং লেখক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য লিখছেন, ‘’......না হলে যে প্রজন্ম প্রথম যৌবনে আগুনে ঝাপ দিল তাঁরা পরিণত বয়সে সব চেয়ে চূড়ান্ত cultural regimentation, সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ ও বলবন্ধনের প্রণেতা হলেন কী করে? নিজেরা যে-ব্যক্তিসাফল্যের পথ থেকে হেলায় সরে গিয়েছিলেন, শেষে সেই পথে নিজেদের পুত্রকন্যাকে এত প্রবল বেগে নিক্ষেপ করলেন কেন? নিজদের জীবনের প্রথম যৌবন ও প্রাথমিক প্রৌঢ়ত্বের মধ্যে এই সামুদ্রিক পরিবর্তন কেন? অথচ তাঁদের পিতৃপ্রজন্মের মতো নিজেদের সন্তানদের মতিগতি না বোঝার হতাশাও এঁরা ব্যক্ত করতে পারবেন না। তাঁদের যৌবনের সেই সব দিন ও অভিঞ্জতা কোনও আদর্শই নয় সন্তানদের কাছে। মার্গারেট মিড মনে করেন যে, ষাট-সত্তর দশকের সঙ্গে আশি-নব্বই দশকের যে জেনারেশন  গ্যাপ, অত বড় প্রজন্ম বিচ্ছেদ নাকি ইতিহাসে নেই। আমরা ষাটের দশকের ছাত্রকুল এটা হাড়ে হাড়ে টের পাই; পরের প্রজন্মের মুখোমুখি আমরা এক রিক্তহস্ত শ্রেণী। (ব্যবধানে-ব্যাবধানে প্রজন্মও শ্রেণী হয়ে যায়), আমাদের পূর্বের প্রজন্ম ও পরের প্রজন্মের মধ্যে আমরা মূর্ত মূল্যবোধ সঙ্কট, সাত্রের ভাষায় এক চলমান স্ববিরোধ।‘’
শঙ্করলালদার লেখাটির এই অংশটি বর্তমান সময়ের প্রজন্মের সঙ্গে আমরা আজও তুলনা করতে পারি। একুশ শতাব্দীর প্রথম প্রহরে আমরাও আজ এক নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট। রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দল কংগ্রেস। আবার বিধানসভার বাইরে তৃণমূলকংগ্রেসের বিরোধী দল বিজেপি। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি নামক একটি সর্বভারতীয় দল সিপিএম এবং বামপন্থীদের মহাজোট বিপিএমওকে ছাপিয়ে সামনের সারিতে চলে এসেছে। বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের কারণ কারা? রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব বলছে তৃণমূলকংগ্রেস তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক আত্ম সমালোচনা করছেন। সীতারাম ইয়েচুরি ২০১৭ সালের ৫ মে কলকাতায় কার্ল মার্ক্সের জন্ম দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসে জানান, বিজেপির কৌশল বুঝতে তিন বছর আগেই তাঁদের ভুল হয়েছিল। এবং সিপিএম দলের ব্যর্থতা যে তার পরেও অব্যাহত রয়েছে সেটাও খোলাখুলি মেনে নিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের সতর্কও করে দিয়েছিলেন। ইয়েচুরির অভিমত ছিল বামেদের ব্যর্থতার জন্যই পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নিজেকে বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দি হিসাবে তুলে ধরতে পারছেন।
সিপিএম দলের মতাদর্শগত লড়াই এবং আর্থিক উদারনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘’বিজেপি ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে গুজরাত মডেলের কথা বলেছিল। গুজরাত কেন আদর্শ মডেল নয়, সেটা বোঝাতে আমরা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। অসীমবাবু (রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রি) গুজরাতের শিল্প, কৃষি বা মানবোন্নয়ন নিয়ে নানা তথ্য বার করেছিলেন। কিন্তু গুজরাতকে ব্যবহারের পিছনে বিজেপির আসল উদ্দেশ্যটা বুঝিনি।‘’
২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে জোট       
সামনের বছর লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূলকংগ্রেস জানুয়ারি মাসে ব্রিগেডে জনসভার কথা ঘোষণা করেছে। ব্রিগেডে সর্বভারতীয় বিরোধী নেতৃত্বকে একজোট করে নিজেদের মঞ্চে আনতে চান তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলের ব্রিগেড জনসভায় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যোগ দেওয়ার আগে প্রদেশ কংগ্রেসের মতামত নেবে। ৬ অক্টোবর কলকাতায় বিধান ভবনে একথা জানান কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তিনি আরও বলেন, ‘’ব্রিগেডের প্রস্তাবিত জনসভা তৃণমূলের নিজস্ব কর্মসূচি। সেখানে সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কেউ থাকবেন কি না, তা ঠিক হবে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই। গোটা দেশের জন্য একের বিরুদ্ধে একের সাধারণ কোনও ফর্মুলা নির্ধারিত করা যাবে না। রাজ্যভেদে আমাদের অবস্থান ঠিক করতে হবে।‘’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘’তৃণমূল এখানে বিরোধীদের প্রতি স্বৈরাচারী মনোভাবই নিয়েছে। তাই আমাদের কাছে জোটের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো।‘’ 
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধির অগস্ট মাসের নির্দেশ ছিল, ‘বাংলার ৪২টা লোকসভা আসনের একটাও কংগ্রেস না পেলেও কিছু এসে যাবে না। কিন্তু আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে জোট বা ভোট হবে না, সংগঠনের আগে কোনও কিছুর অগ্রাধিকারও থাকবে না।’ প্রদেশ সভাপতির বক্তব্য থেকেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস একটাও আসন পাবে না? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত অবশ্য ভিন্ন। তাঁরা বলছেন বর্তমানে কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা চারজন। একজন রাজ্যসভার সদস্য। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই রাজ্য থেকে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়তে পারেসেই সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে কারা অদৃশ্য সাহায্য করবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে এবং রাজ্যে বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে আস্তে পারে। আবার সিপিএমের নেতৃত্বে বামেদের একটা অংশ গোপন বোঝাপড়ায় কংগ্রেসকে সাহায্য করতে পারে। ২০১৯ সালের লোকসভায় কংগ্রেস দলের সাংসদ হিসেবে সোমেন মিত্রকে দেখতে পেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। বর্তমান সময়ে বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা ৭৫ বছরের এক প্রবীণ পোড় খাওয়া নেতার হাতে নিজেদের সমর্পণ করেছেন।            
                



Wednesday 17 October 2018

আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে পণ্য বসতি শুল্ক



দীপেন্দু চৌধুরী
আজও যদি গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান তাহলে ‘বিনিময় প্রথা’-এর প্রচলন দেখতে পাবেন। শুধু গ্রাম বাংলা কেন ভারতে তথা ভারতীয় উপমহাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্ষেত্র সমীক্ষা করলে ‘পণ্য বিনিময়’ প্রথা অথবা পণ্যের বিনিময়ে মুদ্রা নেওয়ার চল আমরা দেখতে পাব। গ্রাম ভারতে এই সময়ে আরও বেশি নজরে পড়তে পারে। কারণ শরৎ ঋতুর পরেই হেমন্তকাল। হেমন্তকাল থেকে শুরু হবে ফসল কাটা। ধান কাটার মরশুম। চলবে বসন্তকাল পর্যন্ত। শ্রমজীবী মানুষ ধান কেটে যে মুদ্রা বা অর্থ পাবে সেই অর্থ দিয়ে শহরগঞ্জ থেকে সংসারের প্রয়োজনে অন্যান্য যে মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী লাগে সেগুলি অর্থের বিনিময়ে কিনতে অভ্যস্ত। ধান কাটা অথবা ফসল কাটার সময় ক্ষেতমজুররা জমি থেকে কিছু ধান সংগ্রহ করে থাকে। আবার অন্য রকম ব্যবস্থাও দেখা যায় ৫ বিঘা জমির মালিক থেকে ৩০ বিঘার জমির মালিক ক্ষেতমজুরকে তাঁর শ্রম থেকে প্রাপ্য মজুরির পুরোটা টাকায় দিতে চায় না। কিছুটা নগদ অর্থে বাকিটা এক দু’কিলো ধান দিয়ে দেয়। আলোচ্য নিবন্ধের ক্ষেতমজুরটি গ্রামগঞ্জের স্থানীয় মুদির দোকানে সেই ধান দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন চাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল, লবণ এসব সামগ্রী ক্রয় করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষেত মজুরটির দু’দুবার তাঁর শ্রমের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন এসেছে। মানবসভ্যতায় ‘গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন’-র উদাহারণ আদিম সমাজেও ছিল আজও আছে। সামাজিক উৎপন্নের উপর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সামাজিক অধিকার যতদিন আমরা মেনে নিয়েছি, ঠিক ততদিন ওদের নিয়মে বন্টনপ্রথার ব্যপক প্রচলন ছিল। পাশাপাশি শ্রম বণ্টনও গোষ্ঠীর নিয়মে হত। বর্তমানে সেই জায়গা দখল নিয়েছে বিভিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নামক সংগঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাম্পরা মেনেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার আরও শক্তিশালী হল। পুঁজির বিকাশের ফলে এই নীতি বা কৌশল বৃহৎ ব্যবসায়ীগোষ্ঠী বিঞ্জান, প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তিকে প্রয়োজনীয় সময়ে প্রত্যুৎপন্ন মেধা তথা মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে শ্রম এবং পুঁজির দ্বন্দকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে। বামপন্থী নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তাত্বিক লড়াইকে সামনে রেখেই ধনতান্ত্রিক বিশ্ব এই কাজে সফল হয়েছে। হয়ত সেই কারণে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বাস্তবে একথা উল্লেখ করা মানে আমি ‘মানবিক মঞ্চ’ থেকে নেমে আসছি এমন ভেবে নেওয়াটা আরও একটা পদস্খলনের সম্ভাবনা থেকে যায়।             
 প্রাচীন মানব সভ্যতার ‘বিনিময় প্রথা’-এর যে সংস্কৃতি আমরা চিনি সেই সংস্কৃতি আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের অনুন্নত কিছু দেশে এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশেও। সামন্ত ব্যবস্থার পুরনো সেই আর্থিক কাঠামো বিশ্বায়ন উত্তর বিশ্বে জোড়ালো একটা ধাক্কা দিতে চাইছে। আধুনিক মোড়কে। ২০০৮ সালে আমেরিকার ‘লে-ম্যান ব্রাদার্স’-এর পতনের পরে বিশ্ব অর্থনীতির টাল মাটাল অবস্থা হয়েছিল। ২০০৮ সালের পরে এটা ২০১৮ সাল। বিশ্ব অর্থনীতি ১৯২৯ সালের মহমন্দার পরের অবস্থা যে ভাবে সামলে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা। গত দশ বছরে আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত, জাপান এবং চিনের নেতৃত্ব দ্রুত অর্থনীতিতে একটা গতি আনতে পেরেছে এমন দাবি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা করছেন। আবার অনেক অর্থনীতিবিদ উল্টো কথাও বলছেন। বিশ্ব অর্থনীতি এখনও স্থিতিশীল নয়। যদিও সম্প্রতি মার্কিন  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন তাঁর শিল্পউন্নত দেশ আজও বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিগত একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে আধুনিক বিশ্বে আধুনিক শিল্প এবং প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবিদ, বিঞ্জানী, প্রযুক্তিবিদ, ব্যাবসায়ীদের গোষ্ঠী এই অভিমত প্রকাশ করে এসেছেন। অথচ আমেরিকায় আদৌ শিল্প স্থাপন করা সম্ভব কিনা এই নিয়েই মতভেদ ছিল।        
 পুঁজির বিকাশের জন্য একটা দৃশ্যমান নীতি লাগে। আবার একটা অদৃশ্যমান নীতি প্রবলভাবে অন্তরাল থেকে শিল্প-বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা সূর্য ওঠার মত সত্য। যে কথা ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী লৌহ-মানবী বলে খ্যাত মার্গারেট থ্যাচার বলেছিলেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘’আমি যে শুধু আর্থিক নীতি পরিবর্তনের সূচনা করেছি এমন নয়। বাস্তবে আমি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের শুরু করেছি। আমরা জানি অর্থনীতির পরিবর্তন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের হাতিয়ার। আপনি যদি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন তা হলে আপনি জাতির হৃদয় ও আত্মার দখল নিতে চলেছেন। অর্থনীতি হল প্রকরণ; উদ্দেশ্য হ্রদয় ও আত্মার পরিবর্তন।‘’          
উত্তর বিশ্বায়ন বিশ্বে বাজার অর্থনীতি বা উদার অর্থনীতি বনাম সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির একটা দ্বন্দ আমরা পরিলক্ষিত করেছিএরপরেই আমরা পেয়েছিলাম সীমান্তবাণিজ্য নামক এক নতুন পুঁজিবাদী অর্থনীতি। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং এই ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটা মোক্ষম চাল চেলেছেন। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবর) প্রকল্প। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ৩ হাজার কিলোমিটার লম্বা সড়ক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে যাবে। ২০১৭ সালে চিনে অনুষ্ঠিত এই প্রকল্পের সম্মেলন ভারত বয়কট করেছিল। কিন্তু সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল ৩০টিরও বেশি দেশ। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডর তৈরির আগেই চিনের কতৃপক্ষ রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানায়। রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে চিনের সরকার সেখানকার সামাজিক এবং পরিবেশগত মূল্যায়ন নিয়ে একটি রিপোর্ট চেয়েছিল। ২০১৭ সালের মে মাসে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া প্যাসিফিক’ (এসক্যাপ) ৯৪ পাতার যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেটা চিনের পক্ষে যায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘’কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেহেতু এই করিডর ওই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ফলে ভারতে ভূ- রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হবে। ফলে আরও বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।‘’
চিনের এই প্রকল্পের পাল্টা হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প চালু করেছেন। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের বক্তব্য দেশে বেকারির সংখ্যা দেখে বলা যায় এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ভারতে ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনার কথা আমরা জানি বোঝাই যায় চিনের ওবর প্রকল্পের রোডম্যাপ মেনেই ভারতের সীমান্ত ‘ডোকলাম’ চিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাথুলাপাশের পরে ডোকলাম। ভারত-ভূটান-চিনের ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকা ‘ডোকলাম’-এ দু’মাস মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল চিন এবং ভারতের সেনা। ভারতের অভিযোগ ছিল ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছিল চিনা সেনা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সেই সময় টুইটারে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কড়া সমালোচনা করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধি। তিনি বলেন, ‘’সুষমাজির মতো এক জন ভদ্রমহিলা যে কী ভাবে চিনা শক্তির কাছে মাথা নত করে মুখে বকলস আটকে রয়েছেন, তা দেখে অবাক হতে হয়। নেতার আত্মসমর্পণ করার অর্থ, সীমান্তে বীর জওয়ানদের ঠকানো।‘’
চলতি বছরের লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের সাংসদ সুগত বসুর একটি প্রশ্নের উত্তরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘’.........‘পরিণত কূটনীতি’-র মাধ্যমে ডোকলাম সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।‘’
পুঁজির বিকাশের জন্য একটা দৃশ্যমান নীতি লাগে। আবার একটা অদৃশ্যমান নীতি প্রবলভাবে অন্তরাল থেকে শিল্প-বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখিত লাইন দু’টি আবার ব্যবহার করলাম। দৃশ্যমান কূটনীতি কী ছিল? আমেরিকা তথা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল আগামীতে ‘পরমাণু যুদ্ধ’ হতে পারে এই আশঙ্কায়। উত্তর কোরিয়ার একটার পর পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার কারণে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমেরিকা এবং চিন দু’ই বৃহৎ শক্তির টানটান স্নায়ুযুদ্ধ মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে সঙ্গে তামাম দুনিয়ার মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। চলতি বছরের ১২ জুন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে আমেরিকা। এই ঘটনা দৃশ্যমান ছিল আমাদের কাছে।
কিন্তু অদৃশ্যমান কূটনীতি আমরা প্রথম পেলাম, ৮ জুলাই। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ৮ জুলাই মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো বলেন, ‘’আমাদের অনুরোধ যদি কারও গ্যাংস্টার সুলভ মনে হয়ে থাকে, তাহলে বলব গোটা বিশ্বই গ্যাংস্টার’। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ কিন্তু অনেক আগে থেকেই উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র ছাড়ার কথা বলে আসছে।‘’ কিছুদিন আগে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবিতে আমেরিকা ‘গ্যাংস্টারের মতো’ আচরণ করছে বলে সুর চড়িয়েছিল পিয়ং ইয়ং। সেই কথা মাথায় রেখে মার্কিন বিদেশ সচিব এ কথা বলেন। মার্কিন বিদেশ সচিবের ৮ জুলাইয়ের এই প্রতিক্রিয়ার পরে ৯ জুলাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রথম সারির বাংলা দৈনিক লিখছে, ‘’ব্যর্থ হয়েছে যাবতীয় আলোচনা। বহু দিন ধরে চলতে থাকা হুমকি পালটা হুমকি আর দোষারোপের পরে ...... শুল্ক যুদ্ধের ময়দানে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছে আমেরিকা এবং চিন। ৩, ৪০০ কোটি ডলারের চিনা পণ্যে ২৫% শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাঘাতের কথা জানিয়ে দিয়েছে বেজিং।‘’ আমরা চিনের পত্রিকায় এই প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম। উল্লেখ করা যাক। অনলাইন পোর্টাল  CAIXIN এ ৮ জুন ‘Congress Can Do Little To Derail Trump’s ZTE Decision, Observers Sayশিরোনামে দু’জন প্রতিবেদক Zhang QiJiang Mengjie and Jason Tan যৌথভাবে লিখছেন, ‘’The U.S. Congress can do little to stop President Donald Trump’s decision to relax penalties on ZTE Corp., China’s second-largest telecommunication-equipment maker, industry watchers said.
The U.S. Commerce Department said Thursday that ZTE had agreed to pay a $1 billion fine, replace its board and senior management, and allow the U.S. to send in a compliance team. This is in exchange for the lifting of a seven-year ban imposed in April that prevents the company from buying American products, which sent a shock wave through the Chinese technology sector and immediately brought ZTE’s major operations to a halt.

অনলাইন এই যুদ্ধ চলাকালীন ৮ জুলাই মুখ খোলেন আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের (আইএমএফ) কর্ণধার ক্রিস্টিন ল্যাগার্দ। ইউরোপকে অত্যন্ত কৌশলী তকমা দিয়ে ল্যাগার্দে বলেন, ‘’ইউরোপীয়রা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়ালে বৃহৎ এক শক্তি। একজোটে তাদের তোলা দাবিকে গুরুত্ব দিতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপ বহু দেশের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।‘’
ওই একই দিনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তরফে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ব্রুনো লে মেয়ার বলেন, ‘’কাল যদি গাড়ির মতো ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়, তবে পালটা হিসেবে গোটা ইউরোপ জোট বেঁধে দাঁড়াবে এবং অত্যন্ত জোরালো ভাবে তার জবাব দেবে।‘’
শুল্ক যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে চিন থেকে ব্যবসা গোটাতে শুরু করছে বিভিন্ন দেশের বহুজাতিক সংস্থা। ২৪ সেপ্টেম্বর নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ডেইলি স্টার’ লিখছে  
‘’The imposition of US tax on Chinese goods has led to new problems. In that country, investors are taking away their business from other Asian companies in other countries.
A report by Reuters news agency said that other Asian countries including Japan and others were withdrawing their investments from China. As a result, starting from memory chips to heavy machinery manufacturing factories, other countries are moving away from China. The impact of US taxation on Chinese goods is behind this.
Japan's Mitsubishi Electronic, Toshiba Machine Company and Komatsu and South Korean SN Hynex have started leaving China since July. Also, Taiwan's computer construction company Compal Electronics and South Korean LG Electronics are also thinking of rolling out their business from China.’’ 

চলতি বছরের ১ অগস্ট চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘’আমেরিকার এই ব্ল্যাকমেল করার পন্থা চিনের উপর তেমন কাজ করবে না।‘’
চিনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে আমেরিকা পিছিয়ে যেতে রাজি না থাকলেও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কের কথা ভাবছে আমেরিকা। ৩০ অগস্ট সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর শুল্কযুদ্ধ এড়াতে রফতানি পণ্যকে বেছে নিতে চায় আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন রফতানি পণ্যে শুল্ক এড়াতে ভারত আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল দিল্লীর সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনা করে গেছেন। এই বৈঠকের পরে দ্বিতীয়বার একই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বেশ কয়েক মাস ধরে চিনা পণ্যে শুল্ক চাপালেও চিনের বাণিজ্য রেকর্ড করছে। সূত্রের খবর, আমেরিকার সঙ্গে বেজিংয়ের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সেপ্টেম্বরে ফের নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধে আখেরে বিশ্ব অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)। এই সতর্কবার্তার পরেও শুল্ক যুদ্ধের উত্তাপ কমাতে রাজি নয় আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল অভিযোগ ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তোয়াক্কাই করে না বেজিং। অবাধ বাণিজ্যের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বরং চাপ খাটিয়ে হাতিয়ে নেয় সে দেশে ব্যবসা করা মার্কিন সংস্থার মেধাস্বত্ব।’ (সংবাদ সংস্থা, ১৫ অক্টোবর)  
চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ই গ্যাং দাবি করছেন শুল্ক যুদ্ধ সারা বিশ্বের উন্নয়ন এবং অর্থনীতির পক্ষেই খারাপ। তিনি বলতে চেয়েছেন, শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিশ্বে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলা করতে ও গঠনমূলক রফাসূত্র বার করতে সব দেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
নতুন করে তৈরি হওয়া এই বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের কত মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে? একটা সূত্র বলছে ১৯৬০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩০০ কোটির কিছু বেশি। সেই হিসেবে তখন প্রতি বছর ৩০০ কোটির ২.২ শতাংশ অথবা ৬.৬ কোটি মানুষ বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটির বেশি। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশ হলেও এখন বিশ্বের জনসংখ্যা প্রতি বছর ৭০০ কোটির ১ শতাংশ মানে ৭ কোটি করে বাড়ছে। এই বৃদ্ধির হিসেবে ১ শতাংশ ক্রিমি লেয়ার বাদ দিলে বিশ্বের ৬৯৩ কোটি মানুষ শুল্ক যুদ্ধের শিকার হচ্ছে।           
 

Monday 15 October 2018

কলকাতা জাদুঘরে একঘণ্টার দুর্গাপুজো








                                                                                           
                                                                                                                                                           দীপেন্দু চৌধুরী


যে নক্ষত্র মরে যায়, তাহার বুকের শীত
লাগিতেছে আমার শরীরে—
যেই তারা জেগে আছে, তার দিকে ফিরে
তুমি আছো জেগে—
(‘নির্জন স্বাক্ষর’ জীবনানন্দ দাশ, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা- ৮২)
মানুষ সমাজে থাকে। সমাজে থাকতে চায়। একক মানুষ এক গোষ্ঠীতে জন্ম নিয়ে সেই গোষ্ঠীতে মৃত্যু হয় তার। আবার অন্য গোষ্ঠীতেও মৃত্যু হতে পারে। যদি কোনও একক মানুষ গোষ্ঠী পরিবর্তন করে। আমরা একই দেশের পরম্পরার কথা মাথায় রেখে এই কথা বলছি। মানুষের সংস্কৃতি এভাবেই পরস্পর পরস্পরের হাত ধরাধরি করে সম্মিলিত এক মিলন মঞ্চ তৈরি করে। সেই মঞ্চের ব্যাপ্তি গড়ে তোলে চিরায়ত এক সংস্কৃতি। চিরন্তন সংস্কৃতির পরতে পরতে থাকে ব্যক্তি এবং সমাজের সম্পর্ক। ব্যক্তিক সম্পর্ককে ভিত্তি করেই বৃহত্তর সমাজের মধ্যে আমাদের যেতে হয়। বাঙালি নামক একটি ভারতীয় তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি মানবগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজা। যাকে আমরা আমাদের যোগ্যতা মত শব্দ চয়ন করে বলতে পারি ‘শারদ শ্রদ্ধাঞ্জলি’, ‘শারদ উৎসব’।
বাঙালির এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকশত বছর ধরে এক মোহময় মমতায় সম্মিলিত হয়। যুগে যুগে এই সম্মেলনের বাহ্যিক আবরণের পরিবর্তন হলেও ‘দুর্গা পুজার’ আচার, উপাচার, ধর্ম, চণ্ডীপাঠ, ১০৮ টা প্রদীপ, ১০৮ টা পদ্ম ফুল, আঁখ, শিউলি ফুল, কলা বৌ, সিঁদুর খেলা, বিজয়ার কোলকুলি হয়। আমরা নতুন পোশাক পরি। বাঙালির দুর্গাপুজো সমস্ত রিচুয়ালসহ আজও ভারতীয় ঘরানা তথা ঐতিহ্য মেনেই হচ্ছে। যদিও আলোচনায় আস্তে পারে পরাধীন ভারতের দুর্গাপুজোর সঙ্গে স্বাধীন তথা আধুনিক উন্নত ভারতের সমাজে দুর্গাপুজার পার্থক্য কতটা? একচালার দুর্গা পুজা থেকে বারোয়ারি দুর্গাপুজোযাকে বলা হয় সার্বজনীন দুর্গাপুজো বর্তমানে বনেদী বাড়ির সাবেকী দুর্গাপুজো বনাম সার্বজনীন দুর্গাপুজো। বলতে হবে বা মানতে হবে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দেশপ্রীতি, স্বদেশপ্রেমকে একটি পরাধীন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা সম্ভবও নয়। তবুও একথা বলাটা অত্যুক্তি হবেনা যে, ব্রিটিশ যুগের প্রথম সকাল থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রহর পর্যন্ত জননীস্বরুপা জন্মভূমির মাতৃরুপের সাধনা করেছে বাঙালি তথা ভারতীয়রা। যখন রাষ্ট্রনীতি এতটা তীব্রভাবে প্রতিনিয়ত আলোচনায় ছিল না। অথবা রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘনঘটা এতটা পরিলক্ষিত হয়নি সেই সময়কালে ভারতের তথা বাংলার কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা স্বদেশের ধ্যানমূর্তি রচনা করেছেন।
স্বাধীনতার পরে ‘দুর্গাপুজো’ ভারতের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে আরও জনপ্রিয় হয়েছে একটা বৃহতের মনন হিসেবে। দ্বিধাহীন মিলন মেলার মেলামেশার মঞ্চ হিসেবে। সম্প্রীতির সম্মেলন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা বাঙালিরা নতুন ভাষায় নতুন করে আমাদের চিনতে পারি। আমার সংগ্রহে অনেক অভিঞ্জতা আছে। তার থেকে আমি দুটো বেছে নেব। আমাদের ছোট বেলায় নলহাটীর ‘চার্চপাড়া’ অঞ্চলে একটি দুর্গাপুজো হত। রবার্ট রবীন দাস এবং তাঁদের পরিবার এই পুজোর মূল আয়োজক ছিলেন। রবীনদা একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পুজোর বাজেট বলে সেই সময় তেমন কিছু ছিল না। একটি গঞ্জ এলাকার পুজো। তাই খুব ছোট ছোট মাপে বা নমঃ নমঃ করে  দুর্গাপুজো হত। কিন্তু সেই পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের অবলিল আনন্দ  টেনে নিয়ে যেত এ পাড়া থেকে সে পাড়ায় সেখানে ‘জাতপাত’, ধর্ম ইত্যাদির কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। শৈশব কৈশোর থেকেই আমাদের মনটা গড়ে উঠেছে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য......’ এই দর্শনে। এই দর্শনে ব্রাহ্মণ নেই, ক্ষত্রীয় নেই, চাড়াল নেই, শূদ্র নেই, নমঃশূদ্র নেই, ডোম নেই, চামার নেই হাড়ি নেই। হরিজন নেই, বর্তমানের ‘দলিত’ নেই। আমরা সবাই মানুষ। যে কথা রবীন্দ্রনাথও বলছেন।
‘হিন্দু’ কোনও ধর্ম নয়। এই কথার যুক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাতে কতটা জোড়ালোভাবে এসেছে? কবি বলছেন, ‘’হিন্দু শব্দে এবং মুসলমান শব্দে একই পর্যায়ের পরিচয়কে বুঝায় না। ............হিন্দু ভারতবর্ষের একটি জাতিগত পরিণাম।‘’ (রবীন্দ্র রচনাবলী, ১৩ খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৭৫)        
পরেরটা কর্মজীবনের অভিঞ্জতা। খুব সম্ভবত ২০০৮ সাল। আমি কলকাতা টিভির সাংবাদিক হিসেবে কসবা-হালতু অঞ্চলের একটা দুর্গাপুজো কভার করতে গিয়েছিলাম। ক্যামেরাম্যান মণ্ডপের ছবি তুলতে তুলতেই আমি কাজ শুরু করে দিলাম। খুব খুবই ছোট মণ্ডপ। মানে বলার মতো তেমন কিছু নয়। মণ্ডপে একচালার একটা ঠাকুরের মূর্তি। টিম টিম করে আলো জ্বলছে। পুজোর কর্মকর্তারা সলজ্জ চাহনিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেনকেউ সামনে আস্তে চাইছে না। আমি প্রথমটায় ভাবলাম ছোট পুজো সেই কারণে কেউ কিছু বলতে চাইছে না। কিন্তু টিভির সাংবাদিক হিসেবে অতীত অভিঞ্জতা মিলছে না। পুজো যত ছোটই হোক টিভি ক্যামেরা মানে উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যস্ততা চোখে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অনেক পরে একজন মাঝবয়সী লোককে দেখলাম। তাঁকে ধরলাম। তার পরনে নতুন চেক লুঙ্গি, কোরা গেঞ্জি। দাড়িগোফহীন ভদ্রলোক ভীষণ লজ্জা লজ্জা করে আমাকে বাইট দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের এটা মুসলমান পাড়া। আমরা কয়েকজন মিলে এই পুজো করছি। আপনি খবর করলে করুন। কোনও টিভি আজ পর্যন্ত আসেনি। আপনি প্রথম এলেন। অন্ধকারে হয়ত দেখতে পাচ্ছেন না। মণ্ডপের পাশে দেখুন একটা মাজার আছে।’ এই আমার আপনার বাংলা। এটাই আপনার আমার চিরায়ত সংস্কৃতি। মিলনের সংস্কৃতি।
কয়েকদিন আগে কলকাতার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ থেকে একটা আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমার ই-মেলের ঠিকানায়। বয়ানটা তুলে দেওয়া যাক। ‘Indian Museum Kolkata Ministry of Culture, Government of India Homage to the great goddes Durga an Exhibition of photogrphs at Indian Museum, Kolkata by Mireille Josephine Guezennce-Himabindu, French professor of philosophy, a writer and photographer from 12th October to 12th November. 2018, Madame Virginie Corteval Consul General of France in Kolkata has kindly consented to inaguirate the Exhibition.’  
 ১২ অক্টোবর দুপুর তিনটের সময় আমরা জনা পঞ্চাশেক আমন্ত্রিত ব্যক্তি (সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি সহ) কলকাতার জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে একঘণ্টার বাঙালি ঘরানার পুজোর উদ্বোধন দেখলাম। পুজো উদ্বোধন করলেন কলকাতার নতুন ফরাসি কনসাল জেনারেল ভার্জিনিয়া কোর্টেভাল(Virginie Corteval) দুজন ঢাকি ঢাক বাজালেন। সকলে চটি, জুতো খুলে দুর্গা মূর্তির সামনে করজোরে প্রণাম করলেন। প্রাণচঞ্চল এক উচ্চ শিক্ষিত মহিলা। ফরাসি কনসাল জেনারেল কলকাতায় নতুন। আমার সঙ্গে প্রথম আলাপেই তিনি জানালেন তিনি নতুন দর্শনের অধ্যাপিকা ক্যামেরা শিল্পী রথের সময় মা দুর্গার কাঠামো বাঁধা থেকে, একমাটি, দো-মাটি, প্রথম রঙের প্রলেপ, দ্বিতীয় রঙের টাচ, চক্ষুদান, দুর্গাপুজার চারটে দিন, বিসর্জন, সিঁদুর খেলা প্রতিটি মুহূর্তকে ক্যামেরার চোখে, বিদেশী ক্যামেরার ভাষায় নিজের শিল্প সুষমায় তুলে এনেছেন। চার মাস সময় নিয়েছেন ফরাসি ক্যামেরা শিল্পী। ১০০টা ছবি প্রদর্শনী কক্ষে প্রদর্শনের জন্য রয়েছে। প্রদর্শনী চলবে একমাস। ১২ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীর একটি ছবির সামনের নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে, ‘’Presence and significance of the ghat (ritual pot) placed before the goddess, Before the Goddess stands a ghat, a floored Jar made of copper or clay. Containing water and various concentrated substance.’’
আরও একটি অংশে লেখা রয়েছে, এটি প্রদর্শনীর পরিচয় প্রসঙ্গে লেখা। শিরোনাম
Homage to the Great Goddess Durga.’
‘’The ancient scriptures reveal the origins of the Goddess Durga. They relate the circumstances under which ‘The one who is difficult to attain’ was born (Durga-means a fort). For the myth said that only an incredibly beautiful woman, endowed with invincible power, could kill the terrible demon king Mahishasura in a violent battle.’’   
ফরাসি প্রবীণ লেখক এবং দর্শনের অধ্যাপক মিরিল জোসফাইন (Mireille Josephine) ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘আমি বাঙালির দুর্গাপুজোর বিষয়ে ফ্রান্সে বসেই জানতে পারি। অনন্য এক ব্যতিক্রমী সুন্দরী নারীর প্রতীক তিনি। শক্তির দেবতা তিনি। নারীশক্তির প্রতীক তিনি। তাই আমি এই বিষয়টাকে আমার ক্যামেরায় তুলে আনতে চেয়েছি।‘’ সিঁদুর খেলার ছবির প্রসঙ্গে আলোচনা করার সময় ফরাসি অধ্যাপিকা জানালেন বিষয়টা তিনি জানেন। কিন্তু তাঁর কিছু করার নেই। সভ্যতা এগিয়ে গেলেও ভারতে দুর্গা পুজোর পরে বিশেষ অনুষ্ঠান সিঁদুর খেলা। এই অনুষ্ঠানে সধবা অর্থাৎ বিবাহিতা নারী ছাড়া অন্য মেয়েদের প্রবেশ এখনও অবাধ নয়। সম্প্রতি সাংবাদিক শ্রাবণী বসুর কলম থেকে জানতে পারলাম লন্ডনের বাঙালিরা তথাকথিত ওই সংস্কারের বেড়ি খুলে ফেলতে পেরেছেন। শ্রাবণী লিখছেন, ‘’......একমাত্র রয়্যাল বার্কশায়ারের বাঙালি অ্যাসোসিয়াশনই রীতিমতো প্যান্ডেল খাটিয়ে পুজো করে। এ বার তাদের দশম বছর। পুজো হবে লন্ডন থেকে ২১ মাইল দূরে স্লাও-র বেইলিস হাউসে। এই পুজো ‘ডবল ডট মুভমেন্টের’ সমর্থক। শুধু বিবাহিত মহিলারাই নন, বিজয়া দশমীর দিন মায়ের বরণে এখানে সিঁদুর খেলায় অবাধে অংশগ্রহণ করেন সব মহিলাই। এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘বিবাহিত, অবিবাহিত, বিবাহবিচ্ছিন্না কিংবা স্বামীহারা, ১৮ অক্টোবর মায়ের বরণে এবং সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করতে আমরা সকলকে স্বাগত জানাই।‘’ 
চলতি বছরের ২০ জুন কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে এলজিবিটিদের একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় রূপান্তরকামী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহা দাবি করেন, ‘’ট্রান্স জেন্ডার আমরা। আমরা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় সিঁদুর খেলতে চাই। যদি আমাদের সুযোগ দেওয়া হয়।‘’                   
গতবছর দুর্গাপুজোর সময় সুদূর আমেরিকা থেকে এসেছিলেন এক তরুণ গবেষক। ক্রিস্টোফার এল ডায়মন্ড তাঁর নাম। ‘কবি বিদ্যাপতি’ বিষয়ক গবেষণার কাজে ১০ মাস কলকাতায় ছিলেন তিনি ক্রিস্টোফার একটি সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি দুর্গাপুজার কথা জানতাম। তাই পুজোর কিছুদিন আগে এসেছিলাম। হিন্দুস্তান পার্ক থেকে পায়ে হেঁটে আমি ১৫-২০টা ঠাকুর দেখেছি।’ সম্প্রতি কলকাতার নতুন কনসাল জেনারেল প্যট্রিসিয়া হফম্যান আমেরিকান সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ এবং বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা বলেছিলেন। ১৩ অক্টোবর চতুর্থীর দিন দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ ঘুরে দেখেন সাতটি বিদেশী রাষ্ট্রের পদস্থ আধিকারিকরা। এই দলে ছিলেন ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইটালি, জার্মান, জাপান, বাংলাদেশ এবং আমেরিকার প্রতিনিধিরা। ওইদিন সন্ধ্যেয় বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘’দুর্গাপুজো আমাদের সব চেয়ে বড় উৎসব হলেও আমরা সব ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে ইদ, বড়দিন সবই সাড়ম্বরে পালন করা হয়। বড়দিনের শহরও উৎসবের সাজে সেজে ওঠে। এখানে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু বলে কোনও ভেদাভেদ আমরা করি না। এটাই আমাদের আদর্শ।‘’
সাতটা দেশ পাহারা দেয় বাংলার মা আমার। সাতটা মহাদেশ পাহারা দেয় ভারত মা আমার। আমরা অনাথ নই  বাংলা আমার মা, আমরা অনাথ নই ভারত আমার মা।
১২ অক্টোবর কলকাতা জাদুঘরে প্রদর্শনী উদ্বোধনের আগে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের কলকাতার নতুন কনসাল জেনারেল ভার্জিনিয়া কোর্টেভাল(Virginie Corteval) বলেন, ‘’আমি একমাস আগে কলকাতায় এসেছি। এসেই বাঙালির সব থেকে বড় উৎসবের কথা জানতে পারি। রাস্তায় ফ্লেক্স, হোর্ডিং দেখলাম। খুব জাগ্রত মায়ের মুখ। আমাকে ভীষণ ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছে। আমি কলকাতা এসেই এক নতুনকে খুঁজে পেলাম। আবিষ্কার করলাম এই উৎসবকে। ১১ অক্টোবর কুমারটুলি গিয়েছিলাম। মৃৎ শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হলাম। অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সেই সূত্র আর আজকের প্রদর্শনী আমাদের মিলন মঞ্চে এনে দিল। সবাইকে আমাদের শারদ শুভেচ্ছা।‘’