Tuesday 31 January 2017

উত্তর ওবামা আমেরিকা এবং.........

উত্তর ওবামা আমেরিকা এবং.........

আমেরিকায় অনেক অনেক বিতর্কের পর সাদা বাড়িতে আবার সাদা আমেরিকান এলেন। আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সফল ব্যবসায়ী। তাঁর ব্যাবসার পরিসর বহুতল থেকে আবাসন, হোটেল, ক্যাসিনো, গল্ফ কোর্স, মিডিয়া এই সব ছাড়াও আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। সারা বিশ্বের বণিকসভায় তাঁর নাম পরিচিত। কিন্তু তাঁর আলোচক এবং সমালোচকরা বলছেন ট্রাম্প সাহেব রাজনীতিতে এলেন কিছুটা অনিচ্ছা নিয়েই। আবার অনেকে এমনটাও বলছেন নতুন রাষ্ট্রপতি আমেরিকার কোন দলের নেতা? ডেমোক্র্যাট তিনি নন এটা আমরা জেনে গেছি। তবে অবশ্যই রিপাবলিকান দলের। কারণ তিনি নির্বাচনে লড়াই করেছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হয়ে। আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দলের অত্যন্ত দায়িত্বশীল নেত্রী তথা সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের প্রথম দফার বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে তিনি বিশ্বের অত্যন্ত শক্তিশালী এক রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে, নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্রের দেশে বিতর্ক শুর হয়েছে। তাঁর কিছু একরোখা অথবা কর্পোরেট মেজাজকে আমেরিকার ঐতিহয্যবাহী সংবাদ মাধ্যমও ঠিকমত চিনতে পারছে বলে মনে হয় না। সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আদৌ রিপাবলিকান? না স্বতন্ত্র এক ব্যক্তি। দেশ বিদেশে সমাজনীতি, রাজনীতি,  রাষ্ট্রনীতির খ্যাতনামা বিশেষঞ্জরা আছেন। তাঁরা আগামী চার বছর আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ব্যস্ত রাখবেন।
আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ আলোয় আমেরিকার হিন্দোলিত, পল্লবিত এবং কলকোলাহলময় রামধনু সংস্কৃতির কয়েকটি পৃষ্ঠা খুঁজতে চাইছি। ২০০৮ সালে সারা বিশ্বে ‘মন্দা’ নামক একটি শব্দের জন্য সমাজঅর্থনীতিতে কার্পেট বম্বিং হয়েছিল সম্ভবত সম্প্রতি জানুয়ারি মাসের শীতের কলকাতায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ বছর উপলক্ষে দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতার অতিথি-বক্তা ছিলেন টুলুস স্কুল অব ইকনমিক্স-এর স্বনামধন্য অধ্যাপক জঁ তিরোলতাঁর কাছে প্রশ্ন করলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু, ‘’২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটকে কি ‘কর্পোরেট গভরন্যান্স ফেলিওর’ হিসেবে দেখা উচিত নয়? উত্তরে তিরোল বলেন, ‘’তার চেয়েও বেশি, শুধু সরকারের ব্যর্থতা। সরকার ব্যাঙ্কগুলোকে যথেচ্ছাচার করে যেতে দিয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলো জানত, বিপদে পড়লে সরকারই উদ্ধার করবে।‘’                        পাশাপাশি Crisis of Identity’ এবং  ‘Clash of Civilization’ এর চেনা অচেনা স্রোত সারা বিশ্বে প্রবাহিত হছে। ঠান্ডাযুদ্ধ উত্তর বিশ্বে এ এক নতুন লড়াই। এইরকম এক উত্তাল সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন বারাক ওবামা। আমেরিকার গণতন্ত্র, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রশ্রয় দিয়েছিল বলেই তিনি আট বছর বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেন। নিজে নতুন বিশ্বঅর্থনীতি গড়তে সাহায্য করলেন। এবং নতুন বিশ্বের ভারসাম্য গড়ে তুলতে পেরেছেন সম্ভবত।  এই পরম্পরায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর বিদায়ী ভাষণে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘’যদি আট বছর আগে আমি বলে থাকি, আমেরিকা মন্দা কাটিয়ে উঠবে, গাড়ি শিল্প বেঁচে উঠবে, কর্মসংস্থান হবে- যদি বলে থাকি কিউবার সঙ্গে নতুন পর্ব শুরু করব, একটাও গুলি না ছুড়ে ইরানে পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ করব, যদি বলে থাকি বৈবাহিক আইনে সমতা আসবে, দু’কোটি নাগরিক স্বাস্থ্যবিমার আওতায় ঢুকবেন— আপনারা বলতেই পারতেন বড্ড বেশি ভাবছি। কিন্তু এটাই আমরা করতে পেরেছি। আপনারা করতে পেরেছেন। আপনারাই পরিবর্তন।‘’
ইংরেজি মূল টেক্সট থেকে আমরা কিছুটা ছুঁয়ে নিতে চাই প্রেসিডেন্ট ওবামার বাগ্মীতা,
‘’So that's what we mean when we say America is exceptional. Not that our nation has been flawless from the start, but that we have shown the capacity to change, and make life better for those who follow.

Yes, our progress has been uneven. The work of democracy has always been hard, contentious and sometimes bloody. For every two steps forward, it often feels we take one step back. But the long sweep of America has been defined by forward motion, a constant widening of our founding creed to embrace all, and not just some.

If I had told you eight years ago that America would reverse a great recession, reboot our auto industry, and unleash the longest stretch of job creation in our history .if I had told you that we would open up a new chapter with the Cuban people, shut down Iran's nuclear weapons program without firing a shot, and take out the mastermind of 9/11 . if I had told you that we would win marriage equality, and secure the right to health insurance for another 20 million of our fellow citizens - you might have said our sights were set a little too high.

But that's what we did. That's what you did. You were the change. You answered people's hopes, and because of you, by almost every measure, America is a better, stronger place than it was when we started.

In ten days, the world will witness a hallmark of our democracy: the peaceful transfer of power from one freely-elected president to the next. I committed to President-Elect Trump that my administration would ensure the smoothest possible transition, just as President Bush did for me. Because it's up to all of us to make sure our government can help us meet the many challenges we still face ‘’
আমেরিকার বেকার সমস্যা সেই সময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মূল আলোচনার বিষয় ছিল। সেই জটিল পরিস্থিতি থেকে কি করে বেরিয়ে আসা যায় তাঁর জন্য সবরকমের প্রচেষ্টা বারাক ওবামা করেছেন। কর্মসংস্থান বিষয়ে দ্য ওয়াল স্ত্রীট জার্নাল ২০১৩ সালে লিখছে, ‘’……..The U.S. economy will generate 55 million job openings by 2020 according to the Georgetown University Centre on education and the workforce, and 65% of those jobs will require some training beyond a high-school education.
Off the 55 million openings, 24 million are projected to be new positions with the balance coming from retirements of older workers. Among the fastest—growing sectors will be healthcare, Community Services, and science-and technology related fields. ………………..Several organization have shown that the majority of jobs created since the 2007-2009 recession have been low-skill, low wage positions, primarily in fields such as retail sales, home healthcare and food service. A 2012 report from the National Employment Law project, for example found that 58% of the jobs added during the recovery were in categories like these (The wall Street Journal./CAREERS At work, June 26, 2013.)
 প্রেসিডেন্ট ওবামা দায়িত্ব নেওয়ার চার বছর আগে বিশ্বে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় যে তথ্য পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে উধৃত করে ১৬ এপ্রিল, ২০০৪ সালে সংবাদ মাধ্যম আমাদের সামনে প্রকাশ করে।
‘’উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দুর্নীতির ফলে যে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে, তা হল বার্ষিক ১ লক্ষ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারণা থেকে একটু সরে গিয়ে এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, দুর্নীতি কেবলমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যা নয়। এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই একটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, যে সব দেশে মাথাপিছু আয় ৯০ হাজার টাকা বা ২ হাজার মার্কিন ডলার, দুর্নীতি দূর করতে পারলে সুশাসনের মাধ্যমে ওই আয় প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বা ৮ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়ানো যায়। নচেৎ দুর্নীতির কবলে পড়ে দারিদ্র ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ড্যানিয়েল কফম্যান বলেন, ‘সমীক্ষা থেকে এ কথা পরিষ্কার যে, সারা বিশ্বে এই একলক্ষ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলতেই হবে, দুর্নীতি কেবলমাত্র উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা নয়।’ ২০০১-০২ সালে আনুমানিক ১৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা বা ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতির তুলনায় এই ১ লক্ষ কোটি ডলার ডলারের দুর্নীতির হিসাব পাওয়া গিয়েছে। তবে এর মধ্যে জনগণের অর্থ তছরুপ বা জনসম্পদ চুরির কোনও হিসাব ধরা হয়নি।
কফম্যানের মতে, দারিদ্র, শিশু মৃত্যু এবং সামাজিক অসাম্য দূরীকরণের পথে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এ কথা উন্নয়নশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে আরও বেশি করে প্রযোজ্য। এমনকি, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সব দেশ সুশাসনের মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে, সেই সব দেশে জাতীয় আয় বেড়ে গিয়েছে প্রায় চার গুণ। শিশু মৃত্যুর হারও ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।‘’  
আট বছরের প্রশাসন চালাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা সব ক্ষেত্রে সফল এমনটা বলা যাবে না। আবার সব সাফল্য বিনা লড়াইয়ে এসেছে এমনটাও নয়। একের পর এক সংস্কার করতে গিয়ে ওবামাকে স্থিরচিত্তে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাঁর ওবামাকেয়ার নামক ঐতিহাসিক স্বাস্থ্যবিমা সংস্কার নীতিটি অতি অল্প ব্যাবধানে পাশ করাতে পেরেছিলেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর কাছে অতি স্পর্শকাতর বিষয় ছিল বন্দুক সংবরণ নীতি। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষায় এই নীতি সফল হয়নি। পশ্চিম এশিয়া নীতি নিয়েও তাঁকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবু তিনি থামতে রাজি নন। একজন সফল বিশ্বনেতা, একজন সফল মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বারাক ওবামা আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রাজনীতির পাঠশালা খুলতে চলেছেন। তাঁর নিজের শহর শিকাগো শহরে। প্রত্যক্ষ জনসংযোগের রাজনীতির কেন্দ্র গড়ে তুলছেন তিনি। যেখানে গ্রাসরুটের মানুষ এসে খোলামেলা কথা বলবেন। রাজনীতি নিয়ে তাঁদের নিজস্ব ভাবনার কথা বলবেন তাঁরা।
এই বিষয়ে ‘পলিটিকো’ পত্রিকায় ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, Edward-Isaac Dovere লিখছেন, “The way he views his role is not that he himself, Barack Obama, is going to be out there giving fiery speeches and leading marches, but he wants to play a role in empower and lifting up the next generation of leaders,” said Jen Psaki, his White House communications director and an alum of both his presidential campaigns. Already, former aides are revamping Organizing for Action, the group formed out of his old campaign structure. No longer about backing up Obama’s agenda in the White House, it will be a nexus for training activists and candidate recruitment, reshaped both by Trump’s win and some of the factors that contributed to Hillary Clinton’s loss.
Though OFA has been mostly quiet over the last two months and made no formal announcements, its Chicago headquarters has been filling up with new hires, including several old campaign aides, who are planning to focus on the mechanics of campaigns, from running Obama-style persuasion programs, integrating data and running paid canvassing operations. Though the first goal is designing the program for what they’ll aim to make hundreds of workshops nationwide, there’s already talk moving toward endorsing candidates. ‘’
প্রেসিডেন্ট ওবামা চুপ থাকতে পারেন না। বা পারবেন না। আমি ৬ বছর আগে আমার ব্লগে লিখেছিলাম তিনি একজন সফল স্বামী, সফল পিতা এবং সফল বন্ধু। ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর শেষ সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ছিল, ‘’এই নির্বাচনে যা হলো, সেটা আপনি ও ফার্স্ট লেডি মেয়েদের কাছে কি ভাবে ব্যাখ্যা করছেন?’’ তাঁর উত্তর এল আগামীর পথের আলোর দিশারী হয়েবাগ্মীতার সপ্তম সুরের আভিজাত্যে  তিনি বললেন, ‘’মেয়েদের বুঝিয়েছি, কখনও, কোনও অবস্থাতেই হাল ছাড়বে না। পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়াবে, জামা থেকে ধুলো ঝেড়ে ফের হাটতে শুরু করবে।‘’
আমরা সদ্য প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকে এতদিন যে আভজাত্যে দেখেছি সেদিন তাঁর বক্তব্যেও ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া। তিনি বললেন, ‘’Our glorious diversity— our diversities of faiths, and colors, and creeds— that is not a threat to who we are; it makes us who we are,…….’’ (New York Times News Service, Jan 7, 2017)   
উত্তর ওবামা এবং
প্রেসিডেন্ট ওবামা উত্তর আমেরিকায় আজকের স্বতন্ত্র এক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমরা পেলাম রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতাদের তাঁকে অবঞ্জার কারণে। ট্রাম্পকে নিয়ে নির্বাচনের আগে যত রকমের ‘তুচ্ছ তাচ্ছিল্য’ হয়েছে এর আগে অন্য কোনও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে নিয়ে এমনটা হয়েছে বলে জানা নেই। খুব সম্ভবত ট্রাম্প নিজেও অচেনা এরিনায় এসে নিজেও মজা পেয়েছেন তাঁর দলের কিছু শীর্ষ নেতার অসহায় অবস্থা দেখে। এবং তিনি এখনও মজা পাচ্ছেন। ট্রাম্প জিতে এলেন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গণতন্ত্রে। ৫৫-৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ৪০এর বেশি যাদের বয়স তাদের কাছ থেকেএদের সবাই সাদা সম্প্রদায়ের যুবক৩৩-৩৪ শতাংশ ল্যাটিনো ভোট পেয়েছেন তিনি। এবং ৩২ শতাংশ অন্যান্য জাতি ভুক্তের। অন্যান্য জাতিদের মধ্যে ভারতীয়রাও আছেন। একুশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ‘ফার্স্ট আমেরিকা’ শ্লোগান সামনে রেখে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আমেরিকাকে নতুন করে গড়তে চাইছেন। আমরা আশাবাদী তিনি মানবতার প্রয়োজনে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি আদৌ কি আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রেসিডেন্ট? কারণ এই গোষ্ঠীর ৮৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৯৪ শতাংশ মহিলা সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দেয়নি।
সংবাদে প্রকাশ, ট্রাম্প সাহেবকে নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা যথেষ্ট অস্বস্তিতেএমতবস্থায় শপথের পাঁচদিন আগে মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়ার) এর ছেলের সঙ্গে বৈঠক করেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকের পরে ট্রাম্প কোনও কথা না বললেও তৃতীয় মার্টিন লুথার কিং বলেন, ‘’ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।‘’      
বিশ্বায়নের পর আমরা বিশ্ববাসী প্রায় ২৫ বছর সময়কাল পেরিয়ে এলাম। মুক্তবাণিজ্যের সুফল এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা সহ প্রায় সব দেশের মানুষ উপভোগ করছে। সেটা পরোক্ষ হোক বা প্রত্যক্ষ। এই সময় কালের মধ্যে পুঁজির কাব্যিক উপস্থিতি অর্থনৈতিক উদারাবাদকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেটা যেমন সত্যি উল্টোটার কথাও বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা বলছেন। বিশ্বায়নের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাও নজরে পড়ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা রাগ বিক্ষোভের আকারে আছড়ে পড়ছে। নির্বাচনের প্রথম প্রহরে ট্রাম্প সাহেব বলেছিলেন ভারত-চিনের মতো দেশ থেকে তিনি আউটসোরসিং ব্যবস্থা কমিয়ে দেশেই কর্মসংস্থান বাড়াবেন। সম্ভবত বলতে চাইছেন ‘ফ্রি ট্রেড’ নয় ‘ফেয়ার ট্রেড’। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখে তিনি এখন বলছেন ‘মেক ইন আমেরিকা’। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছেন তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের প্রেসিডেন্ট দেশের নামজাদা কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে বোঝাতে পারবেন। আমেরিকার শ্রমিকরা বেশি বেশি সংখ্যায় চাকরি পাবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পরে তিনি যে বক্তব্য রেখেছিলেন, আমরা সেই বক্তব্যের কিছুটা অংশ পড়ে নিতে পারি।
‘’DONALD TRUMP: Amazing guy. Our partnership with the RNC was so important to the success in what we have done. So I also have to say I've gotten to know some incredible people, the secret service people. They're tough and they're smart and they're sharp, and I don't want to mess around with them, I can tell you. And when I want to go and wave to a big group of people and they rip me down and put me back down in the seat, but they are fantastic people. So I want to thank the secret service. And law enforcement in New York City, they're here tonight. These are spectacular people, sometimes underappreciated unfortunately, but we appreciate them.
We know what they go through. So it has been what they call a historic event, but to be really historic we have to do a great job. And I promise you that I will not let you down. We will do a great job. We will do a great job. I look very much forward to being your president, and hopefully at the end of two years or three years or four years, or maybe even eight years, you will say, so many of you worked so hard for us, but you will say that that was something that you really were very proud to do, and I can thank you very much.
I can only say that while the campaign is over, our work on this movement is now really just beginning. We're going to get to work immediately for the American people, and we're going to be doing a job that, hopefully, you will be so proud of your president, you will be so proud. Again, it’s my honor. It was an amazing evening. It's been an amazing two-year period, and I love this country.
Thank you. Thank you very much. Thank you to Mike Pence. Thank  you to everybody.’’ (ABC News, Nov 9, 2016)  
ওবামা পরবর্তী আমেরিকাকে তার মত করে গড়ে তুলতে চাইছেন সেই দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট। সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে যত বিতর্কই থাকচার বছর থাকবেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পআমেরিকার প্রথমসারির দৈনিক লিখছে,
‘’Invest in infrastructure to create jobs.
Mr. Trump will find bipartisan support in Congress for his proposal to create jobs and stimulate the economy by building and repairing highways, bridges, water systems and other public works. But many Republicans may balk at a big spending program that adds to the federal budget deficit.
Some Democrats will resist Mr. Trump’s proposal to offer tax breaks to private companies in return for infrastructure investments, notably because the federal government is able to borrow money at exceptionally low rates. Democrats are also likely to resist efforts to waive environmental rules or prevailing-wage protections for construction projects.

Allow the Keystone XL pipeline to move forward.
Pipelines that run between the United States and Canada must obtain presidential approval. In November 2015, President Obama refused to grant permission to the Keystone XL pipeline, which would carry oil from the tar sands of Canada to the southern edge of Nebraska, where it would connect to existing pipelines.
Mr. Trump has encouraged the company behind the project, TransCanada, to submit a new application once he takes office. He also has suggested, however, that TransCanada should share its profits with taxpayers.
Nominate a Supreme Court justice.
Mr. Trump says that in his first 100 days, he will begin the process of selecting a replacement for Justice Scalia from his list of 21 judges “who will uphold and defend the U.S. Constitution.”
This promise will be easy to keep. Just winnowing the names of court candidates could qualify as beginning the process of replacing Justice Antonin Scalia, who died in February.
Reduce federal business and personal taxes.’’ ( BINYAMIN APPELBAUM and ROBERT PEAR, New York Times, DEC. 7, 2016)
 
যদিও নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর ভাষা বদলাতে শুরু করেছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বার্তা দিচ্ছিলেন যে তিনি সমস্ত আমেরিকানদের প্রেসিডেন্ট। শপথ নিলেন তিনি সেই বার্তা বোঝাতে। আব্রাহাম লিঙ্কন যে বাইবেল হাতে শপথ নিয়েছিলেন, সেই বাইবেল হাতে নিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বাইবেল হাতেই শপথ নিয়েছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু তার পরেই আমরা বৈপরীত্য লক্ষ করি। প্রেসিডেন্ট তার ওভাল অফিস থেকে মানবাধিকার আন্দোলনের প্রথমসারির নেতা মারটিন লুথার কিং জুনিয়ারের আবক্ষ মূর্তি সরিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন উইনস্টন চার্চিলকে। কেউ কেউ বলছেন ব্রেক্সিট উত্তর ব্রিটেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এই সিদ্ধান্ত। অনেকের অভিমত খ্যাতনামা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের দুই ব্যক্তির আবক্ষ প্রতিমূর্তি ওভাল অফিসে রাখতেই পারতেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি ট্রাম্প সাহেবের মামার বাড়ি স্কটল্যান্ড। কিন্তু এটাই কি একমাত্র এবং অন্যতম কারণ? সম্ভবত নয়। কয়েকদিন আগে হোয়াইট হাঊসে প্রেসডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। আমেরিকায় নির্বাচন চলাকালীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ই-মেল ফাঁস সহ একাধিক অভিযোগ শোনা গেছে। এফবিআই তদন্তও হয়েছে। তা সত্বেও দুই দেশের চাপানউতোর এখনো রয়েছে। এর আগে ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে ‘দুনিয়া কাঁপানো একদিন’ শিরোনামে একটি লেখা আমার ব্লগে লিখেছিলাম। সেখানে যে বিষয়টা উল্লেখ করেছিলাম,
‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর পনেরোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে এগারোটি প্রজাতন্ত্র মিলে গড়ে তুলেছিল ‘Commonwealth of Independent States’. এগারোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একমাত্র রুশ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে (Security Council) সদস্য পদ আছে। বর্তমানে রুশ প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান। Commonwealth of Independent States তৈরি হওয়ার পরেও ‘সিস’ নয় রাশিয়াই সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থান নিয়েছে।’ ট্রাম্প সাহেবের কি এই নতুন অক্ষে নজর পড়েছে? কারণ তিনি ইতিমধ্যে ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের দিকে অনেকটা এগিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ‘’সোমবার ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, এ নিয়ে বিশেষ প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেন তিনি।‘’ (ABP News, January, 25, 2017)
যদিও প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও গভীরতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী। নির্বানের প্রাককালে নিউ জার্সির ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে যারা ট্রাম্প সাহেবের সমর্থক, তাঁরা একটি সভার আয়োজন করে। সেই সভায় তিনি বলেন, ‘’আমার শাসনে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বাড়বে। বাড়বেই বা বলছি কেন, বন্ধুত্ব সব চেয়ে ভালো হবে।‘’
সেই কথা তিনি রেখেছেন। সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোন-তালিকার প্রথম পাঁচে ভারতের নাম। ২৪ জানুয়ারি ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘’মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে প্রকৃত বন্ধু বলে মনে করেন। দুই নেতাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রতিঞ্জাবদ্ধ।‘’
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মেনে নিতে পারছেন না মার্কিন সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে হলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী। প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর সিআইএ-র সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘’পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মিথ্যে কথা বলেন সাংবাদিকরা।‘’ (সংবাদ সংস্থা)।
এই লেখার শেষের দিকে এসে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথাই যেন মিলে গেল। তিনি তাঁর বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘’গণতন্ত্রের কাছে এই বিপদটা গাড়িবোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।‘’ মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলা দিয়ে শুরু। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক প্রশাসনিক নির্দেশে ৭ টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বেআইনি অভিবাসী রুখতে এই সিদ্ধান্ত। ভাবা যায়? সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকরা আমেরিকায় অবাঞ্ছিত! আত্মমর্যাদা যাদের আছে তাঁরা কি সম্মানের  সঙ্গে এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারবে? যদিও সিলিকন ভ্যালির তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার শীর্ষ কর্তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই মতামত দিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে নির্দেশিকা জারির দিনই ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ নামে  এক মানবাধিকার সংগঠন নিউ ইয়র্কের এক আদালতে মামলা করেছে। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। সেইদিনই গভীর রাতে প্রেসিডেন্টের নির্দেশের উপর সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ জারি করেছে নিউ ইয়র্কের ওই আদালত। জানুয়ারির ৩০ তারিখের পর এ পর্যন্ত আপডেট, এদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘’আমি কোনওভাবে মুসলিমদের উপর নিশেধাঞ্জা চাপানোর কথা বলিনি। আমেরিকায় প্রবেশ নিষেধের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ রাখতেই এই নির্দেশ।‘’
পিটিআই সূত্রে খবর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্ত মত অগ্রসর হলেন।
 ‘’Washington: A legislation has been introduced in the US House of Representatives which among other things calls for more than doubling the minimum salary of H-1B visa holders to $130,000, making it difficult for firms to use the programme to replace American employees with foreign workers, including from India. The High-Skilled Integrity and Fairness Act of 2017 introduced by California Congressman Zoe Lofgren prioritises market based allocation of visas to those companies willing to pay 200 per cent of a wage calculated by survey, eliminates the category of lowest pay, and raises the salary level at which H-1B dependent employer are exempt from non-displacement and recruitment attestation requirements to greater than $130,000.
This is more than double of the current H-1B minimum wage of $60,000 which was established in 1989 and since then has remained unchanged.
"My legislation refocuses the H-1B programme to its original intent - to seek out and find the best and brightest from around the world, and to supplement the US workforce with talented, highly-paid, and highly-skilled workers who help create jobs here in America, not replace them," said Lofgren.
"It offers a market-based solution that gives priority to those companies willing to pay the most. This ensures American employers have access to the talent they need, while removing incentives for companies to undercut American wages and outsource jobs," he said.
Lofgren said it removes the 'per country' cap for employment based immigrant visas so that all workers are treated more fairly and to move to a system where employers hire the most skilled workers without regard to national origin.’’ PTI
এই ঘটনার পরে প্রায় ২৪০ বছরের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলা মার্কিন সংবাদমাধ্যম আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় পালটা মিছিল করে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একটি সংবাদপত্র লিখেছে, ‘’শনিবার আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় যে মিছিলগুলো বেরিয়েছে, তার ভিড়ের কাছে ট্রাম্পের শপথের ভিড় নস্যি।‘’ (ABP News)
Trump Resistance Movement’ নামে একটি মঞ্চ তৈরি করেছেন আমেরিকার গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকসমাজ২০১৫ এর ডিসেম্বর এবং  এই বছরের জানুয়ারি মাসে ‘ফেসবুকে’ একটি পোস্ট নজরে আসে। ‘Donald Trump will become the 45th president of the United States, it will not be a day for celebration. It will instead be a tragic day in the history of this country. Please join me in boycotting his swearing in and not listening to or watching his inaugural address. The worst thing that can happen to Trump is that no one pays attention to him. His nightmare is low ratings. Robert Reich, Trump Resistance Movement.       
বিশ্বের সবথেকে বেশি আলোচিত, প্রাচীন তথা উন্নত এক গণতন্ত্রের দেশেই সম্ভবত এমনটা সম্ভব। যে কথা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন কিংবদন্তি নায়িকা মেরিল স্ট্রিপ। আমেরিকার বিবেক আমাদের মনে করিয়ে দেয় দায়বদ্ধতার কথা। গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠান মঞ্চে জীবনকৃতি গ্লোব হাতে নিয়ে মেরিল স্ট্রিপ বলেন, ‘’ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করার ক্ষমতা থাকতে হবে নীতিনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমের হাতে। সাংবাদিককেও সমর্থন জোগাতে হবে তাঁর সত্য লড়াইয়ে।‘’ সম্প্রতি গণতন্ত্রের অন্যতম পীঠস্থান আমেরিকায় পোস্টার পড়ছে, ‘’ভয়ে আর হিংসায় কুঁকড়ে থাকা এ আমেরিকা আমার নয়।‘’                                                       

  

Thursday 19 January 2017

গণতন্ত্র উচ্ছন্নে গেলে আমার কি?

গণতন্ত্র উচ্ছন্নে গেলে আমার কি?:  

পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নতির কি আর কোনও প্রয়োজন নেই? রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি কি ভাবছে? গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি, ২০১৭) রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভাঙড়ে ‘পাওয়ার গ্রিড’ এর জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। যার পরিণতি অতি সাধারণ দু’জন নিরীহ গ্রামবাসী তথা তরতাজা তরুণের মৃত্যু। সংঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন আহত। পুলিশের ৩০-৪০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। চার পাঁচজন নিরস্ত্র মহিলা পুলিশকর্মীকে গ্রামের মহিলারা আশ্রয় দেয়। পরে তাঁদের নিরাপদে গ্রাম থেকে বেড়িয়ে যেতে সাহায্য করে আক্রান্ত গ্রামবাসী। সংবাদ মাধ্যম লিখছে ভাঙড়ে এই ঘটনার প্রস্তুতি তিন মাস আগে থেকে। আমাদের কাছে যে খবর আছে সেটা তিন মাসের নয়। আরও অনেক অনেক আগের। ভাঙড়ে গড়ে ওঠা ‘পাওয়ার গ্রিড’ এবং পরে প্রস্তাবিত ‘তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিসর দখলের লড়াই শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে থেকেই। যে খবর রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন জানলেও সম্ভবত চুপ করে ছিলেন। এবং গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ঠিকঠাক খবর ছিলনা। এমনটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই উল্লেখ করা যাক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাঙড়ের ঘটনা নিয়ে বৈঠক। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর নবান্নে বসেই বৈঠক করলেন। ওই বৈঠকের পরে সরকারিভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জনানানো হয়, (১) ‘পাওয়ার গ্রিড’ প্রকল্প স্থগিত রাখা হল। (২) এলাকার কৃষি জমির চরিত্র বদল করা যাবে না। (৩) পুলীশকে আরও বেশি সংযত থাকতে হবে।
অথচ বুধবার তিনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নবান্ন যাওয়ার পথে বেলা বারোটা নাগাদ ভবানী ভবন চলে যান। সংবাদ মাধ্যম লিখছে, ‘’মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যান চারতলায়, সিআইডি-র এডিজি রাজেশকুমারের ঘরে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং এডিজি (আইন- শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানান, বৈঠক ছিল একদমই ‘রুটিন’।‘’ বৈঠক ‘রুটিন’ ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে বলতেই হবে। কিন্তু খুব সাধারণভাবে একটি কথা মনে আসে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ পুলিশের হেড কোয়ার্টারে বৈঠক করতে এলেন কেন? প্রশাসনের কোথাও কি ছিদ্র হয়েছে? মাত্র কয়েক মাস আগে একাই ২১১ বলে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় দফার জন্য দায়িত্ব নিলেন, তাঁর প্রশাসনের বাসর ঘরে কি কাল সাপ ঢুকে পড়ল?
এই লেখাটি লেখার আগে আমার পূর্ব পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) সভাপতি অর্ণব রায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘’আমরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে ঘটনা স্থলে যাই। নিহত দুই পরিবার এবং আক্রান্ত পরিবারগুলির বাড়িতে যাই। খুব খারাপ লাগছিল গ্রামবাসীদের কথা শুনে। গ্রামের কয়েকজন জানাল, এই ঘটনা দু’ই নেতার গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে হয়েছে। এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। পুলিশের ভয়ে অনেকে সেদিন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। প্রার্থনা বাড়িতেও গ্রামবাসী আশ্রয় নিয়েছিল। সেইসব প্রার্থনা বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালায়।‘’
ভাঙ্গরে অপপ্রচার যে হয়েছে। অর্ণব বাবুর কথা থেকে পরিষ্কার। ভদ্রলোক যে হেতু দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন তাই ওই অঞ্চলের নাড়ীনক্ষত্র তিনি জানেন। রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণে তিনি আমার কাছে বিস্তারিত বলতে চাইলেন না। 
অর্ণববাবু আরও জানান, ভাঙড়ের ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এই অঞ্চলের ৭০০ বিঘে জমি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কম দামে কিনে রেখেছেন। শাসক দলের অনেকেই অনেক কিছু জানলেও চুপ করে আছেন। ভাঙড়ে শাসক দলের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব আছে। পুরো বিষয়টা মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনা উচিত।‘’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বুধবার ভাঙড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘’তৃণমূলের  লোকজন পুলিশের পোশাক পরে গুলি চালিয়েছে।‘’
বুধবার সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল ভাঙ্গরে যান। পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে এক বাম প্রতিনিধি দল ওইদিন ভাঙ্গরে যান। প্রতিনিধি দলে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক শমীক লাহিড়িও ছিলেন। বুধবার সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলার উদ্যোগে যে সমাবেশ হয়, সেই সমাবেশে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘’চোখ রাঙিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করে দেওয়ার দিন শেষ! আমরা আগের বারের চেয়েও বেশি লোক নিয়ে এবার নবান্নে যাব।‘’
পাশাপাশি কলকাতায় ভাঙ্গড়ের ঘটনার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (APDR) ওইদিন মিছিল করে।   
সাংবাদিকতা করার সুবাদে ভাঙড় অঞ্চলে একাধিকবার গেছি। ভাঙড় বিধানভার কিছুটা অংশ জয়নগর সংসদীয় ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে। কিছুটা অংশ যাদবপুর সংসদীয় কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। মনে পড়ছে ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসুর সঙ্গে ওইসব  অঞ্চলে কভার করতে যেতাম। ‘জি নিউজের’ প্রতিনিধি হয়ে। সেই সময় ওই অঞ্চলের গ্রামগুলি দুর্গম ছিল। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে বিদ্যুৎ প্রায় ছিল না বললেই চলে। রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ ছিল। একমাত্র বাসন্তি রোডকে কেন্দ্র করে ভাঙড় মোড় কিছুটা জমজমাট ছিলসেই সময় যে হেতু বাম জমানা তাই গোষ্ঠী লড়াই, মাসল ম্যান, মস্তানদের উপদ্রব খুব কিছু কম ছিল না। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি ছিল সাধারণ ব্যাপার। এই সময় কৃষ্ণাদি বলেছিলেন, ‘’মজার গল্প শুনেছি, স্বাধীনতার আগেও নেতৃবৃন্দ মাসলম্যান না হোক, নিজস্ব সমর্থক বাহিনী, বলা যায় চিয়ারলিডার পুষতেন। নেতার বক্তৃতা শেষ হলে তাঁরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলত, ‘আভি ক্যায়া? তালিয়া? ইয়া ছেম ছেম?’ হাততালি দেবে কখন বা শেম শেম বলবে কখন, তা বুঝে উঠতে পারত না। এককালে মাসলম্যানরা নেতাদের অধীন ছিল। এখন অনেক ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি হওয়ার ফলে তাদের উপর কারও নিয়ত্রণ নেই। এদের প্রবল প্রতাপ বন্ধ হওয়া জরুরী।‘’ আমার খেরোর খাতা থেকে লেখাটি তুলে দিলাম। গত বছর এপ্রিল মাসে কৃষ্ণাদি কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিকে উত্তর সম্পাদকীয় কলমে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন।                      

‘পাওয়ার গ্রিড’ যে অঞ্চলে হচ্ছে ভাঙড়ের মাত্র ৭-৮ টা গ্রাম এই আওতায় আসছে। বাকি সমস্ত এলাকা নিউ টাউন-রাজারহাট সন্নিহিত। সূত্রের খবর রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াটাই মূল লড়াই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের উন্নয়ন কোন রাজনৈতিক দল চায় না? সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ট্রাজিক রাজনীতির পরে উন্নয়ন নিয়ে কোন দল আহাম্মকের মত ঝুঁকি নিতে যাবে? বাংলার অভিঞ্জ বামপন্থী নেতৃত্ব ‘ঘর পোড়া গরু’। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে তাঁরা জানেন তাঁদের কি করতে হবে।
অতীত অভিঞ্জতা থেকে বলা যায় বর্তমান পুঁজি নির্ভর শিল্পে অদক্ষ চাষীদের নিয়গের সম্ভবনা খুবই কম। উদাহারণ হলদিয়া পেট্রকেমিক্যালস। একটি তথ্য বলছে, ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই রাজ্যে ১ লক্ষ ২৩ হাজার একর কৃষি জমি লুপ্ত হয়েছে। ওইসব জমিতে গড়ে প্রতি একরে ১১ কুইন্টাল চাল উৎপন্ন হত। আনুমানিক ৭ লক্ষ মানুষের এক বছরের খাবারের যোগান দিত। প্রশ্ন ঠিক এই জায়গা থেকেই। সিঙ্গুরের পরিণতি আমরা দেখলাম। জমি অধিগ্রহণ না হলে শিল্পায়ন হবে কি করে? রাস্তা প্রশস্ত না হলে শিল্পায়নের শর্ত পূরণ করবে কে? ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ রাজ্যের মুখ্যসচিবদের নিয়ে প্রথম বাৎসরিক সম্মেলন করেন। সেই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রাখেন সেই বক্তব্যের পুরো অংশটা পুস্তিকা আকারে ভারতীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক প্রকাশ করে। ওই পুস্তিকা থেকে দু’টি বিষয় উল্লেখ করছি।
Inclusive Growth is Essence of Development Process
‘’AS you are all well aware, inclusive growth is the centre-piece of our development process. Fast economic growth has little meaning if it does not lead to the well being of the poor and the disadvantaged, of our farmers, workers, our children, students and women. The benefits of the development process have to percolate to every part of our country and to every section of our society if we want to progress in the true sense of the term and be a strong and cohesive nation. The Central Government has attached the highest importance to our growth being inclusive in nature. But India lives in States. Unless the States move ahead and move forward at a pace that is adequate to the challenges that we face, I think we cannot claim that we have delivered inclusive growth. The inclusive growth that we talk about is reflected in the launching of schemes like the Mahatma Gandhi National Rural Employment Programme……………’’ Page- 3
Rule of Law is Prime Responsibility
‘’It is one of the primary responsibility of any government to ensure the rule of law. In addition, an atmosphere of peace and communal harmony is also a pre-requisite for rapid economic growth. The law and order machinery has to be sensitized to the key security concerns that affect us. Terrorism, insurgency and extremism need to be tackled with a firm but effective and sensitive hand. You have to be aware not only of local and regional happenings but also of pan-India and trans-boarder developments. It is my hope that this conference will help you in getting a better perspective on some of these issues. ‘’ Page- 4/5
পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক মানচিত্রে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ৮ নভেম্বর, ২০১৬, কালো টাকা চিহ্নিত করতে যে অভিযান হয়েছে সেটা নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি রয়েছে। আপত্তি রয়েছে ‘নোট বাতিল’ করার সিদ্ধান্ত তথা সময় নিয়েও। শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন বিরোধীরা কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে একজোট হয়ে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরাও ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় নিজেও দিল্লী গিয়েছিলেন। এর পরে বিজেপি শিবির থেকে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস এক সুরে এক মঞ্চে কি ভাবে রাজনীতি করে আমরাও দেখছি।
খুব ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলছি, খড়গপুর, ভাঙড় এবং বাকড়াহাটের রসপুঞ্জের ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থান কি হবে? কারণ পঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পরে কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে কংগ্রেস তুলনামূলকভাবে  ভালো অবস্থানে থাকবে। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টীর সঙ্গে কংগ্রেসের জোট গড়ে ওঠা আমাদের সেই বার্তা দিচ্ছে। দেশে এবং আমাদের রাজ্যে বিরোধীদের কাছে রাজনৈতিক পরিসর তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছেবিষয়টা তাই গণতন্ত্র উচ্ছন্নে গেলে আমার কি এসে যায় এমনটা নয়। দেশের সাধারণ নাগরিক আমরা। তাই ‘Liberal democratic bargain’ বা উদার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করব না?                       
                                             

Sunday 8 January 2017

স্বচ্ছ গণতন্ত্রের এক পাই, এক ভাই

স্বচ্ছ গণতন্ত্রের এক পাই, এক ভাই:  

কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে এন ডি এ সরকারের ৩০ মাস সম্পূর্ণ হল। প্রধাণমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন, তিনি নাকি দেশ থেকে দুর্নীতির বোলবোলা বন্ধ করবেন। প্রথমেই প্রসঙ্গ তোলা যাক আপনার দলের ৩৭ বছর বয়স হল। জনসঙ্ঘের ইতিহাস ধরলে আপনি আদবানীজী সহ যারা প্রবীণ হয়েছেন, তাঁদের আধুনিক গণতন্ত্রের কথা আমি শোনাতে চাইছি না। বা নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাইছি না। দেশ থাকলে গণতন্ত্র থাকবে। গণতন্ত্র থাকলে আম আদমি গণতন্ত্র উপভোগ করবে। কখনও প্রশংসা করে। কখনও সমালোচনা করে। ভারতে এফ ডি আই, জিএসটি এই শব্দগুলি পুরনো। ভারতের অন্যতম স্তম্ভ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ আমাদের এই শব্দগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আপনি বলছেন আপনার সরকার দেশের গরীব মানুষের উন্নতির কথা ভাবছেন। প্রশ্ন তোলা যায় গত ৩০ মাসে আপনার সরকার কত লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে? আপনি দলের কর্মসমিতির শেষদিনে (৭ জানুয়ারি) দলের নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সমালোচনা এবং অভিযোগ আসবে। সেইসব সমালোচনা উপেক্ষা করে গরিবদের জন্য কাজ করতে হবে।
খুব ভালো কথা, আপনি যে কথা আপনার অনুগামীদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই ধর্ম আপনি নিজে মানতে পারেন আশা করি। রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে যে নতুন গণতান্ত্রিক কংগ্রেস গড়ে উঠছে তাঁদের আপনাকে মেনে নিতে হবে। আগামী বুধবার ১১ জানুয়ারি রাহুল ‘জনবেদনা সম্মেলন’ করবেন। মানুষের দুর্দশায় কংগ্রেস প্রকৃত এবং একমাত্র অন্যতম প্রাচীন দল এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছেন তাঁরা। অস্বীকার করা যাবেনা রাহুল গাঁধি কংগ্রেস পরিবার থেকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন। একদশকের বেশি সময় রাহুল খুব কাছ থেকে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দলের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এমন সব রাজনৈতিক নেতাদের দেখছেন। কোন দলের কোন নেতার দেশে কতটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটা বর্তমান সময়ে রাহুল গাঁধির থেকে ভালো কেউ বোঝেন বলে মনে হয় না। যেমনটি উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের ক্ষেত্রে কিছুটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কথাও আমরা মনে করতে পারি। গণতন্ত্রের পাঠ নিতে আমাদের সব সময় দেশের আম জনতার কাছে যেতে হবে। নেতৃত্বের তঞ্চকতা ধরিয়ে দিতে মানুষের আদালত নাজুক চোখে মনে করিয়ে দেয় ভারতে থাকতে হলে ভারতীয় সংস্কৃতি মেনেই চলতে হবে।
অন্যদের মনে করিয়ে দিতে জানাই, আমার সীমাবদ্ধ পরিসর থেকে আজ সকালে মনে হল গণতন্ত্র কি? আমরা ঠকছিনাতো? সর্ব ভারতীয় দলগুলিকে বিশ্বাস করে? এটা ভেবে আজ একটা ট্যুইট করি ‘’What is the difference betwwen Democracy and invisible democracy? পরিবর্তে কংগ্রেস থেকে পালটা ট্যুইট পাই। রাহুল গাঁধি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে জল এগিয়ে দিচ্ছেন ডঃ মনমোহন সিংহ কে। ট্যুইটে ক্যাপশন ছিল ‘বড়দের সম্মান করা আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি’
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে দেশের মানুষকে চিনতে খুব বেশি সময় লাগে না। আমার কয়েকটি ছোট্ট খেরোর খাতা আছে। তারই একটি খাতায় নোট নেওয়া আছে, ‘’১৯৪০ সাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ, কংগ্রেসী নেতারা তখনও ইংরেজের সাথে দর কষাকষিতে আগ্রহী। ইংরেজ সুযোগ বুঝে দাবি জানালো— ‘’এক পাই, এক ভাই’’।‘’ প্রতিটি পরিবার থেকে এক পাই যুদ্ধ তহবিলে ও এক ভাই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। স্বামীজী* অনুভব করলেন, ‘’বঞ্চনা বাড়িয়া চলে, ফুরায় সত্যের যত পুঁজি/ কান্ডারী ডাকিছে তাই বুঝি/ তুফানের মাঝখানে/ নূতন সমুদ্রতীর পানে/ দিতে হবে পাড়ি।‘’ রামগড়ে কংগ্রেস অধিবেশন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল ‘সমঝওতা বিরোধী সম্মেলন’ বা ‘Anti Compromise Conference’১৯ ও ২০ মার্চ (১৯৪০) লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলন, সুভাষচন্দ্র বসুর পাশে দাঁড়িয়ে স্বামীজী ঘোষণা করলেন— ‘’ইংরেজকে— না এক পাই, না এক ভাই।’ (ঋণঃ বিশ্বজিত সেন, *স্বামী সহজানন্দ)      


Tuesday 3 January 2017

বিহানবেলার ঘর সংসার

বিহানবেলার ঘর সংসার
একটা দেশ ভারত নামক একটা দেশ এতটা পথ এগিয়ে এসে আবার কি পিছনের দিকে হাটতে চাইছে? আমার এই লেখার মুখবন্ধে প্রথমেই সশ্রদ্ধ আবেদন রাখছি ভারতের সব ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে। বিশেষত ইসলাম ধর্মের সেইসব শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে। বিশ্বের আপামর জনতার আদালতে আমার সীমাবদ্ধ ঞ্জাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি। যেসব ঞ্জাণী শিক্ষিত মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করেন তাঁদের সিঞ্চিত ধ্যান সাধনার প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা রেখে আমার নিরপেক্ষ নিবেদন। এই লেখায় কোনও ব্যক্তি, কোনও বিশেষ গোষ্ঠী যদি মনে করেন তিনি ভিন্ন মত পোষণ করেন তাহলে আপনি বা আপনারা আমার ব্লগের কমেন্ট বক্সে আপনার এবং আপনাদের মতামত জানাবেন। আপনাদের মতামত আমি পুনরায় সংযোজন করব।  
ইসলাম ধর্মের তিন তালাক বিষয়টা নিয়ে ‘তর্কপ্রিয়’ বাঙালি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধির সতর্ক পদচারণার আগে খুব কিছু আলোচনা করার কথা ভাবেনি। আমাদের আলোচনা বাংলার সীমান্ত ভেঙ্গে সর্ব ভারতীয় হয়ে ওঠার দাবি রাখে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ ‘’তিন তালাক প্রথার বিলোপের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। মুসলিম মহিলাদের একটি সংগঠন সেই মামলা করেছে। তার ভিত্তিতেই সম্প্রতি এ ব্যাপারে আদালত কেন্দ্রের মতামত জানতে চেয়ে নোটিস দেয়। এর পরই জাতীয় আইন কমিশন তিন তালাক এবং বহুগামিতা নিয়ে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে পার্সোনাল ল বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে মোদী সরকারের স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে আইন কমিশনের প্রশ্নমালা বয়কটের জন্য ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।‘’
তিন তালাক বিলোপ বিষয়ক মামলায় আরও পরে পর পর দু’টি হাই কোর্টের রায় আবেদনকারীদের পক্ষে গেছে। ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে প্রকাশিত খবর ছিল, ‘’ইলাহাবাদ হাইকোর্টের পর কেরল হাইকোর্ট। তিন তালাক ভারতীয় মুসলিম মহিলাদের আইনের চোখে সমতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলে জানাল বিচারপতি এ মুহামদ মুস্তাকের বেঞ্চ। বিবাহবিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের তিনটি মামলার রায় দিতে গিয়ে শুক্রবার আদালত বলেছে, এই প্রথা গোটা দেশকে দেখিয়ে দিচ্ছে, মুসলিম মহিলারা সুবিচার পান না। বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের বিধিবদ্ধ করণেই রয়েছে এর সমাধান। আদালত জানিয়েছে, কোরান কোথাও সটান তিন তালাকের সমর্থন করেনি। বরং বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বোঝাপড়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। সৌদি আরব, মিশরের মতো মুসলিম দেশও তিন তালাককে বাতিল করেছে।‘’ (ABP news)      
ইতিহাস আমাদের টেনে নিয়ে যায় আশির দশকে। তখন আমার বয়স কত হবে?
সালটা ১৯৮০-১৯৮১ হবে। আমাদের পাড়ার একটি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চশিক্ষিত বর্ণ হিন্দু পরিবার ‘বিবাহবিচ্ছিন্ন’ বা ‘ডিভোর্স’ এই জাতীয় শব্দ সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতেন। কিন্তু নিজেদের পরিবারে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবতে পারতেন না। যেমন ভাবতে পারেননি আমার বড়দাদার অভিজাত এবং উচ্চ শিক্ষিত শ্বশুর বাড়ি। আমার বড়দা অল্প শিক্ষিত এবং সরকারি চাকুরে ছিলেন। রামপুরহাট মহকুমার একটি গ্রামের এক প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার সেই ভদ্রলোক তাঁর এক মেয়ের সঙ্গে আমার বড়দার বিয়ে দেন। সালটা ১৯৬৯। সেই ডাক্তারাবুর উচ্চশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ছেলেরাও এই অসম বিয়েতে মত দেন। আমার দাদার বিয়ের পর দু’তিন বছরের ব্যবধানে দুই সন্তান হয়। খুব সম্ভবত বছরটা ১৯৭৩ সাল। একদিন বৌদির বাবা ডাক্তারবাবুর বাড়ি থেকে অভিজাত গরুর গাড়ি আসে। সেই গরুর গাড়ি করে আমি আমার মাতৃসম বৌদিকে বাপের বাড়ি ফেরত দিয়ে আসি। সঙ্গে বৌদির ছোট ছেলে। আসা যাওয়া প্রায় ১০-১৫ মাইল রাস্তা হবে। ১৯৭৩ সালের পর বড়দার প্রথম স্ত্রী আমাদের বাড়ি কোনওদিন আসেনি। বড় বৌদি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন শুনেছি। তাঁর ছোট ছেলেও কোনদিন বাবাকে দেখতে আসেনি।
১৯৭৪ সালে বড়দা তাঁর পুরনো প্রেমিকাকে বিয়ে করে। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে আইনি বিবাহ বিচ্ছেদ না নিয়ে ভদ্রলোক দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। বড়দার উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার শ্বশুর, ডাক্তার শ্যালক, ইঞ্জিনিয়র আরও দুই শ্যালক এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রাক্তন বামপন্থী ছাত্র নেতা, সিউড়ি শহরের একটি নাম করা স্কুলের শিক্ষক ছোট শ্যালকও ‘ডিভোর্স’ নিয়ে উচ্চবাচ্চ করেননিকেন? সে প্রশ্ন কেউ কোনদিন করেন নি। যদিও বর্তমানে আমার বড়দা এবং তাঁর দ্বিতীয় বৌ কেউ বেঁচে নেই। আর্থিক কষ্টের মধ্যেও সামাজিক অবমাননা সঙ্গে বয়ে তাঁরা চার পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরপুর সংসার করেছে। চলুন শুরুর গল্পে ফিরে যাই।
আশির দশক। ১৯৮০-৮১ সাল। নলহাটি, রামপুরহাটে সমাজকর্মী হিসাবে বেশ নাম ডাক হয়েছে আমার। সেই সময় আমাদের পাড়ার সেই বর্ণহিন্দু বাড়ির বড় মেয়েটি বিয়ের এক বছরের মাথায় বাপের বাড়ি ফিরে এলো। উচ্চশিক্ষিত বাবা, দাদা, সরকারি উচ্চপদে চাকুরে তাঁরা। গ্রামে চল্লিশ বিঘে জমি আছে বাবার। তবু পরিবারটি জানে না এর পর কি করতে হবে? ডিভোর্স-এর জন্য আবেদন করা যায় জানলেও সামাজিক তথা লোক লজ্জার ভয়ে তাঁরা আদালতে যেতে পারছিল না। অথচ সেই সময় আমাদের রাজ্যে প্রগতিশীল বামফ্রন্ট সরকার ছিল। পাশে পেলেন আমাদের মত উচ্ছন্নে যাওয়া সমাজকর্মীদের। ওই বছর গুলিতে পরিবারটির সামনে থেকে তাঁদের সাহায্য করতে চেয়েছি। না আমি রবি ঠাকুরের ‘নিষ্কৃতি’ কবিতার কাহিনী নতুন করে বাঁধতে বসিনি। ওই বছরগুলিতে আদালতের নির্দিষ্ট তারিখে মেয়েটি তাঁর দাদা, বাবার সঙ্গে নিয়মিত সিউড়ি যেত। আমাকেও তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যেতে হত। এমনই একদিন সিউড়ি কোর্টের সামনে বসে আছি। হঠাৎ দেখি লিয়াকত আমাকে ডাকছে। লিয়াকত আমার সঙ্গে নলহাটি হরিপ্রসাদ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়েছে। তারপর আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেনি। তখন ও নলহাটি বাজারে রিক্সা চালাত। আমি বললাম, কিছু বলবি?
লিয়াকত বলল, ‘’আমার সঙ্গে খানিক আসবা। আমার কিছু কথা আছে তুমার সঙ্গে।‘’
দূরে একটা চায়ের দোকানে আমরা বসলাম। আদালত চত্বরে কত অসহায় মুখ। মানসিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য তাঁরা ঘুরছে। লিয়াকত এক কাপ লাল চা নিয়ে বলল, ‘’আমার ছোট বহিনকে বাবা ১৩ বছর বয়সে বিহা দিয়াছিল। এখন দুই ছেলা এক মেয়ার মা। বয়স মাত্র ১৮ বছর। ওর সুয়ামী ‘তিন তালাক’ দিয়াছে। আমার দিদি আর দাদা বুলাছে বোনকে খোরপোষ দিতে হবে। কে কার কথা মানে! জামাই আবার নিকাহ কোরাছে। আমি আমার দিদি মিলে সিউড়ি কোর্টে মামলা কোরাছি। একবছর হুং গেল। তুমি দীপেন সবার লেগি কত উপকার কর। আমাদের পাশে খানিক দাঁড়াও ক্যানে।‘’
লিয়াকতের পুরো কথা শোনার পর আমি থতমত হয়ে গেছিলাম। কারণ সেই সময় শরিয়ত আইন বা মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বিষয়ে আমার একদমই ধারণা ছিল না। লিয়াকতকে বললাম, আইন আদালতের বিষয়। আমি এই ব্যাপারে কোনও সাহায্য করতে পারব বলে মনে হয় না। তবে পুলিশ এবং সামাজিক বিষয়ে আমি চেষ্টা করব তোদের জন্য কিছু করার।
সেই মত আমি আমার তৎকালীন মান্যগণ্য বন্ধুমহলকে লিয়াকতদের পরিবারের লড়াইয়ের কথা জানাই। তাঁরা সম্ভবত সাহায্যও করেছিল। তারপর কয়েকটা বছর কেটে গেছে। আমি কলকাতায় থাকি। একমাস দু’মাস অন্তর বাড়ি যাই। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরের কোনও এক বিহান বেলায় লিয়াকত আমাদের বাড়ি এল। ভেতরে ঢুকল না। রিক্সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সেই রিক্সায় করে আমাকে একরকম জোর করে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল। ওদের বাড়ির মাটির সীমান্ত প্রাচীরে লিয়াকতের বোন তখন ঘুঁটে দিচ্ছিল। বাইরে তিন চারটে ছেলেমেয়ে নাকের পোঁটা মুছতে মুছতে পিট্টু খেলছে। আমরা যেতেই লিয়াকতের বোন ছুটে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। লিয়াকতের মা আর দিদি সামনে এসে দাঁড়াল। দিদির হাতে বেতের মোড়া। রিক্সার পুরনো টায়ার দিয়ে উপর আর নীচের ঘের সেলাই করা। আমি সেই মোড়ায় বসে ওদের লড়াই শুনেছিলাম। লিয়কতের মা গাজরের হালুয়া, ডিমের হালুয়া আর পড়টা খেতে দিয়েছিলেন। বিহানবেলার ঘর সংসারের কথা সেদিন শুনেছিলাম। সিউড়ি আদালতের রায় লিয়াকতের বোনের পক্ষে গেছিল। কিন্তু জামাই খোরপোষ ছ’মাস দিয়ে বন্ধ করে দেয়। লিয়াকতরা খোরপোষের জন্য আর চেষ্টাও করেনি। পরে বোনকে সেলাই স্কুলে ভর্তি করে সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে নিয়েছে।
গ্রাম বাংলার এই ধরনের বিহান বেলার গল্পকথা আকছার শোনা যায়। রাজনৈতিক টানাপোড়েন নোট আকালেও সমানে চলছে। পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। যে হেতু বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয় সেই কারণে আমার ব্যক্তিগত কোনও মতামত নেই। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহয়ের সঙ্গে আলোচনা থেকে জানা যায় ১৯৭৩ সালের সংশোধিত আইনের সি আর পি সি ১২৫ ধারা মোতাবেক জেলা শাসকরা খোরপোষ দেওয়ার বিধান দিতেন। পরে এই আইন সংশোধন হয়। ১৯৭৩ এর পরে ১৯৮৬ সালে পুনরায় সংশোধিত আইন আসে।    
সম্প্রতি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ কলকাতার ইরান সোসাইটি সভাঘরে Justice K. M. Yusuf Memorial Trust & Iran Society-এর যৌথ উদ্যোগে তিন তালাকের বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আমি সেই সভায় আমন্ত্রিত ছিলাম। আলোচনার বিষয় ছিল, ’Triple Talaq: In the light of Islam and present Scenario’’ সেদিনের আলোচনা সভায় বক্তা ছিলেন যথাক্রমে Kawal Sing Walia, President of the Iran Society, Khwaja iftekhar Yusuf, Trustee, Justice K. M. Yusuf Memorial Trust, Khwaja Jaweed Yusuf, General Secretary, Justice K. M. Yusuf Memorial Trust, Nasir Ahmed, Life Member, Iran Society, Dr. M. Firoze, General Secretary, Iran Society, Kolkata, Intaj Ali Shah, Chairman, West Bengal Minorities’ Commission Government of West Bengal, এবং Ms. Uzma Naheed, An eminent woman social activist from Mumbai and member of the All India Muslim Personal Law Board.
ইন্তাজ আলি শা সাহেব সেদিনের ইরান সোসাইটি সভাঘরে যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই সুরে আলাদাভাবে আমাকে বলেন, ‘’আমি কৃষ্ণনগরে ১৯৮৭ সালে ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। একজন মহিলা পাঁচজন ছেলে মেয়ে নিয়ে এসেছিল। তাঁর দাবি ছিল স্বামী তালাক দিয়েছেকি খাওয়াব ছেলে মেয়েদের? আমি সেই মামলায় খোরপোষের বিধান দিয়েছিলাম। এর আগে ১৯৮১ সালে আমি প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট। তখন আমার কাছে দু’টো তিন তালাকের মামলা আসে। একটা মামলায় অভিযোগ ছিল স্ত্রী ঘর ঝাট দেয়নি। তরকারিতে নুন দেয়নি। সেই জন্য স্বামী তালাক দিয়েছে। আমি ওই মামলাতেও খোরপোষের রায় দিয়েছিলাম।‘’
ইন্তাজ সাহেব আরও বলেন, ‘’আমাদের দেশে ১৯৩৭ সালে শরিয়ত আইন আসে ১৯৩৯ সালে Dissolution of Muslim act আসেআমি বলতে চাইছি জ্বলন্ত ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ৮০ শতাংশ মুসলিম পরিবার আইন বিষয়ে অঞ্জ। এইসব পরিবারকে শিক্ষিত এবং সচেতন করা প্রয়োজনতিনটে চান্দ্রমাসে এবং ‘তুহর’ এর সময় এই তিন তালাক দেওয়া হয়। জেলাস্তরে একজন কাজি রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আধুনিক সময়ের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রতিবেশি দেশ পারলে আমরা পারব না কেন?’’
ইন্তাজ সাহেবের বক্তব্যকে মাথায় রেখে আমরা এই রাজ্যের বর্তমান মুসলিমদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটটা একবার দেখে নিতে পারি। বছর দশেক আগে একটি রিপোর্ট আধুনিক বাংলার অহংকার ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে প্রকাশিত সাচার কমিটির রিপোর্ট থেকে রাজ্যের মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থার কথা রাজ্যবাসী তথা দেশবাসী জানতে পেরেছিল। তারপর আমরা দশ দশটা বছর পেরিয়ে এলাম। উল্লেখযোগ্যভাবে কিছু কি পাল্টেছে? রাজ্যের মুসলিমদের আর্থসামাজিক অবস্থান? পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন এমন সংখ্যালঘূদের মধ্যে মুসলিমরা আছেন ২৮ শতাংশ। তাঁদের পরিস্থিতি ২০০৬ সালের পর কি আদৌ বদলেছে? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট একই কথা বলছে। ৩৮ শতাংশ মুসলমান পরিবার মাসে আড়াই হাজার টাকার কম রোজগার করে। মাত্র ১.৫৪ শতাংশ সরকারি চাকরিতে আছেন। ১.৫৫ শতাংশ  মুসলমান পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী স্কুল শিক্ষক। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন মাত্র ১ শতাংশ। রাজ্যের মুসলমান বাবা-মা ৪২.৫ শতাংশ ছেলে এবং ৪০.৪ শতাংশ মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেই পারেন না। মুসলমান ছেলেমেয়েদের স্কুলছুটের সংখ্যা এইরকম ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ১৪.৫ শতাংশ মাঝপথে স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার হাল আরও শোচনীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে ৪৭.১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
তিন তালাক নিয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত ১৮ অক্টোবর, ২০১৬ সংবাদ পত্রে প্রকাশ করে ভারতের বৃহত্তম বামপন্থী দলটিআমরা যে প্রেস রিলিজ পাই সেটি উল্লেখ করলাম
The CPI (M) supports the demand of Muslim women against the practice of arbitrary and instant triple talaq. This specific practice is not permitted in most Islamic countries. Acceptance of this demand will bring relief to affected women.
All personal laws including those for the majority community require reform.
In this context the claims being made by Government spoke persons that personal laws for Hindu women have already been reformed shows that their interest is not in securing women’s equality but in targeting the minority Communities, particularly the Muslim minority. Even now laws concerning, adoption, property rights and even the right to choose your own partner discriminate against Hindu women.
With the offensive of the communal forces on the very identity of minority communities, any move to push the agenda of uniform Civil Code as is being done by the Government directly and through its institutions is counterproductive for the rights of woman. Uniformity is not the guarantee for equality.
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের সঙ্গে আমার ব্যগতিগত আলাপ রয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিন তালাক বিষয়ে তাঁর অবস্থানঅত্যন্ত সুশিক্ষিত মীরাতুনদি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে আমাকে এসএমএস করে তাঁর বক্তব্য জানান। তিনি বলেন, ‘’আমি মুসলিম মেয়েদের তাৎক্ষণিক তালাকজনিত কষ্ট দূর করার পক্ষে। কেন্দ্রীয় সরকার অথবা মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড সে বিষয়ে সদিচ্ছা পোষণ করে না। এই সত্য স্পষ্ট হয়েছে সাপ্রতিক বিতর্কে। তাঁরা মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করুক এটাই চাই।‘’
এই লেখায় যিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন মুম্বাইয়ের সমাজকর্মী সেই উজমা নাহিদ কলকাতার ইরান সোসাইটির সভাঘরে যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল নিকাহ। উজমা বলতে চাইছেন আধুনিক ভারতীয় সমাজে মহিলাদের ‘নিকাহ’ করা উচিত সুস্থির এবং গঠনমূলক চিন্তার পর। তাহলে হয়ত তাৎক্ষণিক ‘তিন তালাক’ বিষয়টা এত সহজে আসেনা। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক স্ত্রী শিক্ষা। বিশিষ্ট সমাজকর্মী পরে তিনিও তাঁর বক্তব্য আমার অনুরোধমত এসএমএস করে পাঠান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ তে। লেখাটি উল্লেখ করলাম।
‘’Nikah is 3letter word in Quran which is a noun, grammatically it means to absorb. Eg. The rain married with the land or sleep married with eyes. So there are multi meanings of this word which brings peace satisfaction in man and woman’s life. They are secure by doing sins.
We must concentrate more to secure Nikah inspite of discussing Talaq. Nikah works like mexicine in human lice it secure from instinctive pressure. Or safe guard from serious diseases. Just think when rain marries with earth it brings Zarkhezi’’ (fruits? Vegetable grains) and when sleep marries with eyes how much peace it provides to human being so if there is no rain the earth is dead and if you don’t have sleep the eyesight is effected. Then, water cannot be separated from earth and sleep cannot be separated from eyes. So we must secure ‘Nikahas’ much as we can. The word Talaq has 14 menings. Like Talaq’ means to open up talaqat’ to be separated atlaq’ to make free. almost the meanings are revoke able like if your stepping ahead you may come back too. If you are flying the came you may open too. This word is so stretchable that you can stretch at as  much as you can but in the end it will come on the same point. So understanding the language of Quran which has eleven meanings of each word. We must work put on mercy’’ which is the purpose of the facility of divorce. If they both don’t like to live together they can use talaq, but Quran says to be just with women and use its given process of three months long period.’’