Wednesday 28 March 2018

এই বাংলার কাব্যিক জমিতে ফরাসি লেখক

এই বাংলার কাব্যিক জমিতে ফরাসি লেখক: 
বছরটা ‘পরিবর্তন’ শুরুর হওয়ার বছর। ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১। এই শতাব্দীর আগের দশকের উল্লেখিত ছ’টা বছর এই সেদিন পর্যন্ত আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখত। ‘বদলা নয় বদল চাই’। এই স্লোগানের শক্তি আমরা ২০০৬ সালেই বুঝতে পারছিলাম। তারপর হুগলী নদী, সুবর্ণরেখা, দামোদর, হলদি নদী দিয়ে হিমশীতল ঠান্ডা জলের স্রোত বয়ে গেছে। কেউ কেউ বলে রক্ত নদীর উপখ্যান লেখা যায়। সেই পরিবর্তনকে বলতে হবে, অবশ্যই এই শতাব্দীর আমাদের বাংলায় পরিবর্তন। গত শতাব্দীর সাতের দশকে এই বাংলায় একবার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৯৭৭ সালের সেই বদলে যাওয়া সমাজের দর্শন, সমাজনীতি, আর্থসামাজিক কাঠামো, নতুন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং কৃষি অর্থনীতির বিকাশ দেখতে দেখতে আমাদের চুলে পাক ধরল। আমরা একটি গোষ্ঠী তথা একটি দলের আভ্যন্তরীণ মেধা এবং জঙ্গিশক্তি (রেজিমেন্টেশন) সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলাম।
তারপর ওই দলের নীতির ব্যর্থতা অথবা অর্থের প্রাচুর্য আমাদের রাজ্যে এক মাৎস্যন্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। পণ্ডিতজনেরা বলেন এটাই ভবিতব্য। সত্যকে ফাঁকি দিলে সত্যই একদিন ‘টুটি’ চেপে ধতে পারে। কিন্তু আলোচনার স্বার্থে উল্লেখ করতেই হবে ‘কৃষি নির্ভর শিল্প’? না ‘শিল্প নির্ভর কৃষি’? এই শতাব্দীর ফেলে আসা দশকের বিতর্ক ছিল এটাই। সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের শিল্পায়ন কেন্দ্রিক সদিচ্ছা মুখ থুবড়ে পড়ল ‘কৃষ জমি’ অধিগ্রহণ প্রশ্নে। হুগলী নদীর আন্দোলিত স্রোত গিয়ে আছড়ে পড়ল হলদি ঘাটের দু’ই পাড়ে। তথা সারা রাজ্যে, সমস্ত দেশে এবং বিদেশের মাটিতেও ‘নন্দীগ্রাম’ নামক একটি জনপদ আমাদের ‘জমি অধিগ্রহণ’ প্রশ্নে নতুনভাবে ভাবতে শেখালো। বিশ্বায়ন উত্তর বাংলায় নন্দীগ্রাম নামক একটি ছোট্টগ্রাম, গ্রামের মানুষ এই বাংলায় ‘পরিবর্তন’ এনে দিলেন। একটি সূত্র বলছে পশ্চিমবঙ্গের ২০০৫-০৬ আর্থিক বছরে বেকার ছিলেন সাড়ে চৌদ্দ লক্ষ মানুষ। ওই আর্থিক বছরে আরও প্রায় আঠারো লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সময়ের অনুপাতে বেকার ছিলেন। আবার ২০১০ সালে পনেরো থেকে ঊনষাট বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা প্রত্যেক বছর বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রায় তেরো লক্ষ করে।
২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ছিল টাল মাটাল। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পাছিলাম না। ‘আমরা-ওরা’ এই শব্দযুগলের ভুল-ভুলাইয়ায় প্রত্যেকে নিজের আইডেন্টটিটি হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি নিজেও সাংবাদিক হিসাবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কেন্দ্রিক একধিক খবর করেছি। ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ তৎকালীন রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব প্রসাদ সেন আমার কাছে খবর ব্রেক করলেন। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। পরের ইতিহাস আমাদের জানা। ১৪ মার্চ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত পাঁজা সহ একাধিক আইনজীবির নেতৃত্বে হাইকোর্ট থেকে মহাকরণ পর্যন্ত মিছিল। সেসব খবর আমাকেই করতে হয়েছিল। হাইকোর্ট এবং মহাকরণের দায়িত্বে থাকার সুবাদে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পরে বাংলার হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজে একটাই স্লোগান। ‘তোমার নাম আমার নাম ‘নন্দীগ্রাম-নন্দীগ্রাম’।   
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল কাজ চাই। যে কোনও ধরণের কর্মসংস্থান এবং জীবীকার গ্যারান্টি। এই সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার বিরোধী তথা প্রতিষ্ঠান বিরোধী একটি ফ্রন্ট আমাদের রাজ্যে গড়ে ওঠে। ওই ফ্রন্টে সেসময় এসে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, পুরনো কংগ্রেসী, অতিবামপন্থী কর্মী, নেতা, এবং অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ কয়েকজন অফিসার। ২০১১ সালের সাধারন নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের জোট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এল।  ২০০৮ থেকে কয়েকটা বছর সেই আগুনভেজা, বারুদের গন্ধেভেজা গ্রামের জনপদে ল্যাপটপ, লেখার খাতা, নোটবুক, লাল কালির পেন, কালো ছাতা নিয়ে ঘুরেছেন একজন ভিন্নভাষী পৌঢ়। ভিনদেশের সেই পৌঢ়ের নাম মার্ক হাটজফেল্ড। আমরা এই লেখায় আমাদের প্রিয় ফরাসী লেখককে মার্ক বলে সম্বোধন করব।
২২ মার্চ কলকাতার ‘সম্পর্ক’ নামক প্রকাশনা সংস্থা এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ যৌথভাবে একটি সাহিত্যের আড্ডার আয়োজন করে। আমি আমন্ত্রণ পেয়ে ‘বোকা বোকা’ হয়ে যাই। কারণ আমি কোনদিনই ‘ব্রাহ্মণ গোত্রীয়’, ‘ক্ষত্রীয় গোত্রীয়’ সমাজে সহজ হতে পারি না। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রীয়দের ঘোঁটকে দূর থেকে প্রণাম জানাই। প্রসাদী এবং প্রণামী সহ। বরং ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ খুঁজে পেলে নিজেকে অনেক সহজ মনে হয়। মানবতার উচ্চতা যেমন খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি আন্তরিকতাও স্পর্শকাতর বাঙালিসুলভ অনুভবে গ্রীষ্মের সন্ধ্যে মনে হয়। এই সভ্যতায় বড় ঝালর লাগানো বড় বড় পাঙ্খা না থাকলেও চলে যায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের আতিথিয়াতা নিয়ে কেউ কোনদিন প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? ২২ মার্চ ই-মেল মারফৎ আমন্ত্রণপত্র পাই। ‘Sampark Lit Adda with Mark HarZfeld at Alliance Francaise du Bengale.     
ফরাসী জাতি, ফরাসী দেশ, ফরাসি লেখক, কবি, সঙ্গীতশিল্পী, ছাত্র, শিক্ষক বুদ্ধিজীবী একগাল হাসি নিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার একজন অধ্যাপক বন্ধু বলেন, ‘’ফরাসি রাষ্ট্রবিঞ্জানী মন্টেস্কু রাষ্ট্রীয় দর্শন ব্যাখ্যা করার সময় বেছে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত রাষ্ট্রীয় দর্শন। এই দর্শনের পথরেখায় তিনি দিয়ে গেছেন নতুন তত্ব। আইন প্রণয়ন, প্রশাসন পরিচালনা এবং বিচার ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের এই তিনটি শাখার স্বাতন্ত্রের কথা বলে গেছেন তিনিসেই দর্শনের ধারা আজও আমরা ফরাসী সরকারি অফিসে দেখতে পাই। অভ্যর্থনার ব্যতিক্রমী উদাহারণ।    
সেদিনের সন্ধ্যেটা ছিল সেরকমই। আমি নিজেকে সঙ্কুচিত করে রাখি আমি ছোট থেকে বরাবরই অন্তর্মুখী। আমাকে নিয়ে যত হাসি ঠাট্টা হয় ততটাই আমি উপভোগ করি। বিদ্রুপ হলে আরও মানসিক শক্তি পাই। ভারতীয় সভ্যতার সহিষ্ণু সংস্কৃতি আমাকে এই অধ্যায়ের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। পাথুরে ইটের সভ্যতা চিনে চিনে রেল নাইন টপকে বড় রাস্তায় যেতে শিখেছি। ‘নাগরিক কলকাতা’-য় আমার প্রবেশে অনেক নিষেধ-উপনিষেধ আছে। কারণ নাগরিক সভ্যতার উপবীত আমার নেই। আমার সুন্নত হয়নি। দেশের ব্রাহ্মনী-ময়ূরাক্ষী নদীর ‘বালুকা বেলায়’ মাখা নীল তেলের মেজাজ আমার আজও আছে। আদিবাসী সভ্যতার উগ্র গন্ধের ‘উপত্যকা’ আমার আজও আছে এবং পরেও থাকবে। মহুলরসে আকন্ঠ ভিজিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নীচে বসে তুম্বনীর লাল মোড়ামের মাঠের আড্ডা ছিল আমাদের মুক্তির আনন্দ। লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আমাদের এক গায়িকা বান্ধবীকে বলতেন, ওই গানটা করো আবার। ‘লাল মাটির সড়ানে ওরে সড়ানে/ উয়ার সাথে দিখা হবে বাবুর বাগানে’।  
 কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে কলকাতার অভিজাত সভ্যতায় উপবীত না নিয়ে যখন যাওয়া যায় না তবে আমি কেন যাই? ওই বললুম ‘ঢিলটো ছুড়ে দেখলুম’। সভাসদরা কি বলেন! মাস কয়েক আগে হঠাত করে কলকাতার ফরাসী দূতাবাসের তরুণ কনস্যুলেট জেনারেল ড্যমিয়েন সৈয়দের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। প্রথম দিনের সাক্ষাতেই ড্যমিয়েন সাহেব বাংলায় কয়েকটি কথা বলেন। এবং আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলা শিখতে চাই। বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ফরাসী দেশের সংস্কৃতির অনেকটা মিল আছে
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, কলকাতার ডিরেক্টর ফ্যাব্রিক প্ল্যাঙ্কন ২২ মার্চ আমাকে বন্ধুর মর্যাদা দিয়ে যে আন্তরিকতায় কাছে টেনে নিলেন, আমার মনে হল আমার নিজের খড়ের চালের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে ফিরে এলাম। তারপরেই সেদিনের সাহিত্যের আড্ডায় আত্মসমর্পণ করলাম। সেদিন আমার মনে হচ্ছিল প্যরিস শহরের মুক্ত গণতন্ত্রের আলোর দিশারী হয়ে আমরা হাঁটছি। কারণ প্রশ্ন যতবার ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ডস’-এর লেখক মার্কের দিকে ছুটে যায় মার্ক শান্ত সহাস্য গলায় উত্তর দিচ্ছেন। তাঁর ঠোটের কোনে স্মিত হাসি। তিনি বলেন, আমার কোনও মডেল নেই। আমি কোনও মডেলে বিশ্বাস করি না। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। আমি মানবতা চিনি। মানুষের দুঃখ যেখানে আমার কলম সেখানে কথা বলবে। আমি কবিতার রাস্তায় হেঁটে বাংলার নন্দীগ্রাম চিনেছি। আমি কবিতার উপত্যকায় ঘুরে ঘুরে গ্রাম সভ্যতার উন্নয়ন খুঁজছি। এ ছাড়া মানব সভ্যতার কাছে আমি কি চাইতে পারি? দিতেই বা কি পারব?
২২ মার্চ সন্ধ্যেয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ছোট্ট সভাঘরে একটা চেয়ারও খালি ছিল না। আলোচনা সভার শুরুতেই  সম্পর্ক প্রকাশনার কর্ণধার সুনন্দন রায়চৌধুরী লেখকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুনন্দন বললেন, ‘’সাহিত্যের আড্ডা একটু অন্যরকম। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এর সঙ্গে যৌথভাবে এই রকম অনুষ্ঠান এই প্রথম হচ্ছে। আজ সাহিত্য বিষয়ে হলেও পরে রাজনীতি এবং দর্শন বিষয়েও আমরা যৌথভাবে বই প্রকাশ করব। মার্ক ফরাসি ভাষার একজন সম্মানজনক লেখক। তিনি লেখক হিসাবে ফ্রান্সের সম্মানজনক পুরষ্কার পেয়েছেন। কলকাতায় আগে এসেছেন। ৯ বছর আগে এসেছেন। নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলের উপর এই বইটা লেখা।
মার্ক বলেন, ‘’রাজনীতির জন্য সময় দিতে হয় সবাইকে। সচেতন নাগরিক আছেন পশ্চিমবঙ্গে। ২০০৮ সালটা এই বাংলায় ‘পরিবর্তন’-এর সময়। ব্রিটেনের মানুষ জমির মূল্য বোঝে। আমেরিকার মানুষও জমির গুরুত্ব বোঝে। জমিকে কেন্দ্র করে যে পরিবর্তন এটা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই হয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাবকে অস্বীকার করা যাবে না। আমি পরিবারের মূল্য বুঝি। আমি সমাজের মূল্য বুঝি। আমি শহর কেন্দ্রীক উন্নয়নে বিশ্বাস করি। গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন না হলে একটা শহরের উন্নয়ন হবে না।‘’
লেখক মার্ক দাবি করছেন রাস্তা, হাসপাতাল, এয়ারপোর্ট একটা অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এই ক্ষেত্রগুলিতে উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলির উন্নয়ন প্রয়োজন। মার্ক আরও বলেন, ‘’সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শিল্প করতে চাইলেও রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারেনি। অথবা রাজ্য সরকার বোঝানোর দায়িত্ব নিতে পারেনি।‘’
ওইদিনের অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার ব্যুরো অব চিফ (কলকাতা) শুভজিৎ বাগচী। তিনি বলেন, ‘’আমি বইয়ের পুরোটা পড়িনি। ভূমিকা পড়েছি। তবে বিষয় যখন নন্দীগ্রাম তখন বলতেই হবে জমিকে কেন্দ্র করে ভারতের সব গ্রামে সংঘাত আছে। ছত্তিসগড়ের মানুষের কথা বললে সেই জমির প্রসঙ্গ আসবে। আদিবাসীদের সঙ্গে বৃহৎপুঁজির সংঘাত আছে। নন্দীগ্রামেও ছিল। নন্দীগ্রাম শহরের খুব কাছে কিন্তু বস্তার নয়। তাই মার্কের সঙ্গে কথা বলে আমারো মনে হয়েছে মানবতার জন্য যে কোনও কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।‘’
আমি নিজেও ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ড’ পড়তে পারিনি। ৩২০ পৃষ্ঠার বইয়ের ভূমিকা পড়লাম। ভুমিকায় লেখা হয়েছে, ‘’This book owes its content to so many farmers, villagers, Poets, filmmakers, economists, politicians, industrialist, activists, novelists, artist, researchers, ordinary citizens who accepted to engage into conversations with me, so many that I cannot name them all. They are grateful thanked here. It couldn’t have happened either without the help of………’’ ভূমিকা পরেই বুঝতে পারলাম নন্দীগ্রামের মানুষের দৈনন্দিন ঘরসংসারের ভেতরে লেখক দাদার মতো, বাবার মতো, বন্ধুর দাবি নিয়ে ঘুরেছেন। অভিভাবকের আবদারে ঘুরেছেন। সমাজকর্মীর অধিকার নিয়ে তাঁদের চিনতে চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন। যে কথা সুনন্দন আমাদের শুনিয়েছেন। নন্দীগ্রাম নামক একটি গদ্যের গ্রামকে তিনি কবির মনন নিয়ে দেখেছেন। তাই তিনি বলতে পারছেন নন্দীগ্রাম একটি কাব্যময় উপত্যকা।
প্রকাশকের আসনে বসে সুনন্দন রায়চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ‘’আমাদের রাজ্যের চা বাগানগুলির অবস্থা কি? চা শ্রমিকরা পুষ্টির অভাবে ভুগছেন। সাংবাদিক, লেখক, সমাজকর্মীরা কি ভাবছেন? আগামীদিনে আমাদের এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। যে কথা ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ড’-এর লেখক আমাদের ভাবতে বলছেন। সামনের দিকে হাঁটতে হলে এই ধরণের বিষয় নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।‘’
সুনন্দন রায়চৌধুরী আপনাকে রাবীন্দ্রিক অভিনন্দন। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে মার্ক লিখেছেন আপনি সেই বিষয়ের আরও গভীরতা খুঁজছেন। আলোচ্য বইয়ের লেখক মার্ক হাটজফেল্ড আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট কোনও মডেল নয়। সবার উপরে মানবতা সত্য তাহার উপর নায়। আমরা অপেক্ষায় থাকব ‘সম্পর্ক’ প্রকাশনার নতুন বইয়ের জন্য।                                
             

Sunday 25 March 2018

রাজ্য সরকারের নারী স্বশক্তিকরণের কর্মশালা

রাজ্য সরকারের নারী স্বশক্তিকরণের কর্মশালা: 
সম্প্রতি আমন্ত্রণের ঘনঘটা লেগেছে। ইন্দ্রজালের মতই অন্তর্জালের প্রান্তর প্রান্তরে আমন্ত্রণের আন্তরিক স্বাগত বার্তা। উপভোগ করতে ভালোই লাগে, সবগুলিতে যাওয়াও সম্ভব নয়। যাওয়া উচিতও নয়। কারণ স্বীকৃতি কতটাই বা আছে এবং অনুমোদন কী রকম থাকে সেটা দেখে নেওয়া সচেতন প্রতিবেদকের কাজ।  সম্প্রতি প্রেসক্লাব থেকে একটি চিঠি পাই। তাতে উল্লেখ করা মানে যুক্ত করা হয়েছিল কেরল রাজ্য সরকারের একটি চিঠি। প্রেস ক্লাবের চিঠির সঙ্গে কেরল শ্রমদপ্তরের একটি আমন্ত্রণপত্র ছিল। আমাকে কেরল যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণপত্রের প্রথম ছত্রের কিছুটা অংশ এখানে উল্লেখ করছি। চিঠিটি পাঠাচ্ছেন,
 (for Labour Ministry,Kerala and Labour Commissioner) Sd/ C.F. DileepKumar, Labour Publicity Officer, GoK, Dep. Of Labour and skills.
GOVERNMENT of KERALA  , LABOUR and SKILLS Department has expressed interest to initiate a visit cum study tour of interstate media to  Kerala for studying the Best Practise On schemes which are being implemented in kerala namely  Aawas and  Apna Khar project for Interstate migrant workers(Guest Workers) .It is the pioneering effort in the history of India envisaged by Government of Kerala.Interstate media team representing the vivid media have scheduled to visit Kerala from 26/03/2018 to 28/03/2018.
যদিও শেষ পর্যন্ত যেতে পারলাম না। যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। দক্ষিণ ভারতের সব থেকে শিক্ষিত রাজ্যের ‘ইডলি’, ধোসা, খেতে কার না ভালো লাগে? নারকেল-ডাবের জলে মন ভিজিয়ে ‘রামনবমীর’ জ্যোৎস্নায় স্নান করতে চেয়েছিলাম। বিষ্ণুপক্ষের লাল সূর্যের আলোয় আন্দোলিত সাগরের জলে স্নান করতে চেয়েছিলাম। হাতের পাঞ্জায় লেখা থাকত আমি নাগরিক ভারতের বৃহত্তর গণতন্ত্রের রাজ্য ‘কেরালা’-য় আছি।  বিশেষত আমার কাছে আমন্ত্রণটা লোভনীয় ছিল। ছ-সাতটা বছর গৃহবন্দি থাকার পর গণতন্ত্রের প্রৌঢ় আলো আমার দরজায় চুঁইয়ে পড়ছে।  তাই আমার মত ভবঘুরে ছন্ন ছাড়া এক সুফি-ফকির, বাউল ফকিরের দর্শনআশ্রিত ব্যক্তির কাছে লোভনীয় ছিল আমন্ত্রণ। বলুন ছিল না? আমি এক সময় কৈশোর যৌবনে আমাদের রাজ্যের রাঢ় অঞ্চলের ‘মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার’ বা ‘পরিযায়ী শ্রমিক’-দের আমাদের রাজ্যের কৃষিঅর্থনীতির সুজলা সুফলা জেলা বর্ধমানে কাজ করতে যেতে দেখেছি। তাঁদের আমরা ‘বাবু’-দের দল ‘জন’, ‘মুনিষ’ নামে আখ্যান করতাম। কাউকে জিগ্যেস করলে গ্রামগঞ্জের পরিচিত কৃষিশ্রমিক বলত, ‘মুনিষ খাটতে যাচ্ছি’। আদিবাসীরা সপরিবারে যেত। একমাস দু’মাসের জন্য কাজের ডাকে যাওয়া। একজন আদিবাসী  শ্রমিকের কাঁধে বাঁক। বাঁকের একদিকে পরিযায়ী জীবনের বিছানা বাসনপত্র। অন্যদিকের বাঁকে সন্তান সন্ততি। রামকিঙ্কর বেইজের মানস ভাস্কর্য।          
আমি কেরল যাওয়ার প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সময় কম ছিল তাই যেতে পারলাম না। ২১ মার্চ সকালে রাজ্য শ্রমদপ্তরের যুগ্ম শ্রমসচিব তথা স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা সমীরকুমার বসুর স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণপত্র পেলাম। আমন্ত্রণপত্রটি আমার হাতে দিলেন সহকারী লেবার কমিশনার কালীদাস দত্ত। আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়েছিল, Request for coverage in your esteemed Media, Progrmme of Awarness Generation for Working Women on 23. 03. 2018 at 10 a.m. at the Nurses’ Training Centre. ESI Hospital, Maniktala, Annex Building.’   
এই বিষয়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রাজ্যের শ্রমদপ্তর আয়োজিত বিষয়টা গভীরতায় যতটা গুরুত্ব দাবি করে অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং অংশগ্রহণ ছিল ততটাই আন্তরিক। আমি নিজে উপস্থিত থেকে উপলব্ধি করেছি।   আন্তর্জাতিক নারীদিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতই এই দিনের অনুষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। যে কথা শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময়। কর্মক্ষেত্রে সমস্যা নিয়ে এই কর্মশালায় পরতে পরতে সাজানো ছিল কর্মসূচী। আমাদের রাজ্যে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি নিজে এই বিষয়টা নিয়ে আন্দোলন করেছি। ‘বিশাখা কমিটি’-এর বিষয়ে বেশিরভাগ মহিলা সচেতন নয়। এই রাজ্যের গ্রাম-গঞ্জের মহিলা, নাগরিক কলকাতার স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই বা কতটুকু সচেতন? দিল্লীর ‘নির্ভয়া’ ঘটনার পরেও এই রাজ্যের প্রান্তিক পরিবারের মেয়েরা জানেননা ‘পারিবারিক হিংসা’ আইন কী? ‘যৌন হিংসা আইন’ কী? কার কাছে গেলে এই বিষয়ে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে?  সমস্যাগুলি পর পর সাজালে দাঁড়ায় ১) কর্মক্ষেত্রের মহিলারা নিজেদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন? কাজের বিনিময়ে যথাযথ পারিশ্রমিক না পেলে কী করতে হবে। কর্মস্থলে হেনস্থার ঘটনা ঘটলে কী করতে হবে? কোথায় গেলে কী সুবিধা পাবেন? শুক্রবার (২৩ মার্চ, ২০১৮) মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালের সভাঘরে  উল্লেখিত সচেতনতামূলক কর্মশালায় মনন গড়ে তুলতে আলোচনা করলেন এই প্রজন্মের আলোচকরা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরের আলোচনা ছিল টগবগে প্রাণবন্ত। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি জানান, অসংগঠিত মহিলারা সমস্যায় পড়লে আইনি সাহায্যের জন্য অনেক পথ খোলা রয়েছে। সংগঠিত ক্ষেত্রের শিক্ষিত সচেতন মহিলারা যে সুযোগগুলি পেয়ে থাকেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলারাও সেই সুযোগ পাবেন। শ্রমমন্ত্রী আরও জানান, মহিলা শ্রমিকেরা কর্মক্ষেত্রে সমস্যায় পড়লে তাঁর দপ্তরে আসতে পারেন। তাঁর দপ্তরের সচেতন দক্ষ আধিকারিক এবং কর্মচারীরা তাঁদের সাহায্য করবেন। দুপুরের খাওয়ার পরে সাফল্যের সঙ্গে প্রথম এই দায়িত্ব নিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের অতিরিক্ত সহকারি নগরপাল অনুরাধা মণ্ডল। তিনি  প্রথমেই বলেন, ‘’ভারতে নারীশ্রমিক আছেন সারে ১৪ কোটি। নারীদের স্বশক্তিকরণ করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আইন সম্পর্কে আমরা অধিকাংশ মহিলা সচেতন নই। পারিবারিক হিংসা আইন, যৌন হেনস্থা বিরোধী আইন বিষয়ে আমাদের রাজ্যের মেয়েরা কতটা সচেতন?’’ এরপরে অনুরাধা স্লাইড সহযোগে আইনগুলির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
পরের সেশন ছিল কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা এবং যৌন হেনস্থা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণাধার রেশমি ভট্টাচার্য গাঙ্গুলি ভীষণ আন্তরিক ছিলেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায়। বিশাখা কমিটির বিস্তারিত বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন। কেন প্রত্যেকটি অফিসে ‘বিশাখা কমিটি’ প্রয়োজন। সরকারি বেসরকারি প্রতিটি অফিসে ‘বিশাখা কমিটি’ গড়ে তোলার দাবি জানাতে হবে। কমিটিতে কতজন সদস্য থাকবেন। কার কাছে অভিযোগ করতে হবে। ইত্যাদি। এদিনের অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন নার্স, সরকারি কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য, বিভিন্ন কারখানার মহিলা শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। মতবিনিময় সভায় ওইদিনের অনুষ্ঠানে ১৫ জন মহিলা নিজেদের অভিঞ্জতার মানদণ্ডে নারী স্বশক্তিকরণের প্রসঙ্গে আন্তরিক এবং বিস্তারিত আলোচনা করেন।  
শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেই এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘’আমরা গর্বিত আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছেন। আমাদের রাজ্যে অনেক মহিলা জেলা শাসক আছেন। আরও একটা বিষয় এই রাজ্যে আগে জনসংখ্যার (২০১১ সালের জনগণনায় সারা দেশে ৪৮% মহিলা) ৮৫% মহিলাদের ক্ষেত্রে স্কুলছুট ঘটত। স্কুলে এক কোটির বেশি মেয়ে ভর্তি হত। শেষে দেখা যেত ৭-৮ লক্ষ স্কুলে পড়ছে। সেই অবস্থার পরিবর্তন এই রাজ্যে হয়েছে।  মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ এই ছুট রুখতে সক্ষম হয়েছে। এখন গ্রামের দিকে তাকান ১০জন স্কুল ছাত্রের ৮জন মেয়ে সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসছে।‘’
শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারা রাজ্যে এই ধরণের কর্মশালা আরও করা উচিত। তাতে আমরা রাজ্যে মহিলাদের জন্য কি করা যায় সেটা জানতে পারব। এবং পরে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করব। মহিলাদের সচেতন করার ব্যাপারে যদি আমাদের দপ্তর থেকে ছোট ছোট পত্রিকা করা যায় সেটা আমরা ভেবে দেখছি। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দায়িত্ব নিতে বলব।‘’
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সচিব ও লেবার কমিশনার জনাব জাবেদ আখতার, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সহকারী লেবার কমিশনার কালীদাস দত্ত এবং যুগ্ম লেবার কমিশনার তথা স্টেট লেবার ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা সমীরকুমার বসু। সমীরবাবু পরে একটি খসড়া সঙ্কল্পপত্র (রেজুলেশন) আলোচ্যসভায় পেশ করেন। অনুমোদিত সঙ্কল্পপত্রে বলা হয়েছে, ‘’ 1) In spite of so many legal provisions to protect the interest of the working women since so many years, the injustice against women workers in general has not declined noticeably. The awareness among working women about their legal entitlements is mainly restricted to the boundary of the urban area. It failed to trickle down to the grass root level. Generating awareness among them is the need of the hour. 2) Women labour intensive proffessions/ industries should be short listed drive may be made in industry wise/ are wise manner to generate awareness among these women workers who are available at a time in large number in these areas. 3) a ‘Task Force’, dedicated to spread awareness among the working women of the State, may be formed by the Labour Department and wide publicity should be made along with a help line number. This task force will operate with a singular objective of empowering the women working force of the State. Under the guidance and direction of our Hon’ble Minister-in-charge, Department of labour, Government of West Bengal, this task force may be made operational at all parts of our state. It will steadily enhance the progress of empowerment of women.‘
শ্রমদপ্তর সূত্রে খবর, এই বছর থেকে শ্রমদপ্তরের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই এই ধরণের কর্মশালা আরও করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এবং চা বাগানগুলির মহিলাদের স্বশক্তিকরণ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিতে বলেছেন ‘পরিযায়ী মহিলা শ্রমিক’-দের পরিসংখ্যান নথিভুক্তির ক্ষেত্রে। এবং ওইসব মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে সরকারি খরচে শেল্টার করে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রেও কর্মশালা করতে হবে।
রাজ্য সরকারের ‘Labour in West Bengal, Annual Report 2015-2016’ সংখ্যায় ‘(ix) Empowerment of Women’ পরিচ্ছেদে লিখছে, ‘1) Consttiutional Provisions and women, The Indian consttiution- the fundamental law as emerged out of the constitutent assmbly, treated both men and women equaly and also provided for protective discrimation for women in view of their pecular position in the human society.
Under Article 15 (3) the State has been empowered to make special provisions for women. The empowerment of women is an input which is intended to eliminate their subordination and establish equality.                                                              

Friday 9 March 2018

শহরের মেয়েদের স্বশক্তিকরণ করার দাবি উঠছে

শহরের মেয়েদের স্বশক্তিকরণ করার
দাবি উঠছে: 
কিছুদিন আগে একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত নারী আমাকে বলছিলেন, ‘’আমি কলকাতায় এসেছি গ্রাম থেকে। নব্বই দশকের প্রথমদিকে তখন কলকাতা শহর এত চকচকে ছিল না। এত আলো ছিল না। কিন্তু মানুষের মনে আলো ছিল। আমরা গ্রাম থেকে শহরে এসে পথ হাতড়াতাম। লেখাপড়া শিখেও আমাদের পথ হাতড়াতে হয়েছে। শুধু নারীর নিরাপত্তা নয়। মানুষের যে মন থাকে সেই মন কলকাতা শহরে তখন ছিল। কিন্তু তারপর নগরায়ণেরকাজ যত এগতে থাকল শহরের মানুষের মন ততই যান্ত্রিক হয়ে পড়ল। এই বিষয়টা আমার চোখে পড়েছে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই‘’ উচ্চশিক্ষিত ভদ্রমহিলা নামপ্রকাশে আপত্তি করেছেন, সেই কারণে আমি নাম প্রকাশ করতে পারলাম না।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার (৭ মার্চ, ২০১৮) দু’টি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাই। আমি দ্বিতীয়টা আগে বেছে নিচ্ছি। দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক বৈচিত্রের জন্যই আগে লিখতে চাইছি। আমার যেতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। কারণটা ছিল আমাকে যে ভদ্রলোক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি সময়টা সঠিক জানতেন না। তবুও বলব সন্ধ্যে ৬.৩০ থেকে ৭টা পর্যন্ত আধঘণ্টা যে সময় আমি পেয়েছি সেইটুকু সময়ে আমি নিজে মুগ্ধ বর্ণময় অনুষ্ঠানের গভীরতায়। অনুষ্ঠান ছিল সন্ধ্যে ৬টা থেকে। আমাকে জানান হয়েছিল অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যে ৭টায়।  আলিপুরের নব নির্মিত মুক্ত মঞ্চ ‘উত্তীর্ণ’-এ। অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌঁছে সাদর অভ্যর্থনা পেলাম। আমার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করতেন আমার এক সময়ের সহকর্মী এক ভদ্রমহিলা তিনি কর্ম কর্তাদের একজন। তিনি আমাকে মিডিয়া গ্যালারীতে পৌঁছে দিলেন। মঞ্চের আলোকিত ফ্লেক্সে লেখা ‘বঙালি’ লোগোর নীচে ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের প্রশিক্ষণে লিলুয়া হোমের মেয়েদের তৈরি পোশাক ও সজ্জাসম্ভার ব্রান্ড ‘বঙালি’ এখন বিশ্বের দরাবের‘’ ফ্লেক্সের নীচে লেখা, নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগ।
মঞ্চের এক পাশে একটি গানের দল। তাঁদের মাথায় নতুন গামছা। মঞ্চে লিলুয়া হোমের যে সব মেয়েরা নাচলেন। তাঁদের মাথায় নতুন গামছা। মঞ্চের পিছনে সেলাই মেশিন নিয়ে পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত হোমের মেয়েরা। মঞ্চের সামনে চরকায় সুতো কাটছেন হোমের মেয়েরা। এবং তাঁদের পাশের স্টলে সাজিয়ে রাখা রয়েছে হোমের মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী। অনবদ্য প্রয়াস। প্রশংসনীয় কাজ। মঞ্চে নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও এসেছিলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম নায়ক এবং চরিত্র অভিনেতা প্রসেনজিৎ। তার সঙ্গে ছিলেন ইন্দ্রাণী হালদার। জুন মালিয়া। বিদ্দিপ্তা চক্রবর্তী। চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। এছাড়া ছিলেন সমাজ কর্মী অলোকানন্দ রায়। যার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার নেই। তিনিই প্রথম আরও কয়েকজনের সঙ্গে শুরু করেছিলেনরাজ্যের সংশোধনাগারগুলির অন্ধকূপ থেকে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বাইরে এনে মানবিক প্রশ্রয়ে আরও সামাজিক বাতায়নে পৌঁছে দেওয়ার কাজ। এদিনের মঞ্চে বিবি রাসেলের কাজ ভিন্ন ধরণের হলেও বলতেই হবে সামাজিক উত্তরণ। সেই উত্তরণ শুরু হল নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের কর্মদক্ষ মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজার নেতৃত্বে। অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি বললেন, ‘’আমরা ‘বঙালি’ ব্র্যান্ডের এই ধরণের আরও উদ্যোগ নিচ্ছি। ‘বঙালি’ ব্র্যান্ডের লোগো এঁকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন হোমের আবাসিকদের এইসব কাজে যুক্ত করতে চাইছিহোমের মেয়েদের ব্যস্ত রাখতে পারলে হোমগুলিতে যেমন নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে পাশাপাশি রাজ্য সরকারও লাভবান হবে।‘’
বিবি রাসেল বলেন, ‘’এই ধরণের কাজ আমি প্রথম করলাম। আমি গর্বিত এই কাজ করে। আগামীদিনে আরও এই ধরণের কাজের সুযোগ পেলে করব। সামাজিক পরিসরের জন্য আমি সব রকমের সহযোগিতা করতে চাই।‘’
দপ্তরের সচিব অনন্যা চক্রবর্তী একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘’পুরো কাজটা বিবি রাসেলের উদ্যোগে হয়েছে। উনি কোনও পারিশ্রমিক নেননি। আমাদের দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজার পরিকল্পনায় আমরা এই অনুষ্ঠান করেছি। আগামীতে আরও এই ধরণের কাজের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।‘’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বুধবারের প্রথম অনুষ্ঠানটা ছিল আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন সভাঘরে। ‘কুচিনা ফাউন্ডেশন’ এবং আমেরিকান সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। আমরা ‘কুচিনা’ নামক সংস্থাটির প্রেস বিবৃতির কিছুটা অংশ এখানে উল্লেখ করছি। ‘Kuthina Foundation, Her Dream, Our Mission’, 7th March 2018- On Wednesday afternoon. Kutchina Foundation celebrated International Women’s Day in collaboration with the American Centre, Kolkata through an engaging panel discussion on how inclusion empowers women and develops a nation under the topic ‘’Towards a women inclusive city’’.  
অবশ্যই মানতে হবে আমরা শহরে যে মানবিক আলো খুঁজছি সেই আলো আমেরিকান সেন্টারের উদ্যোগে আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করলেন কুচিনা ফাউন্ডেশনের অন্যতম পরমার্শদাতা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। বাপ্পাদিত্য নিজে ‘প্রান্তকথা’ নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন। বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘’একটা শহরে দোলের দিন পুরুষের সংখ্যা বেশি কেন? বিদেশীরাও প্রশ্ন তুলছেন। আমাদের প্রয়াস শহরগুলির সামাজিক অনুষ্ঠানে মহিলাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের সমাজ নামক একটা গাছের কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে? গাছটার শিকড়ে, কান্ডে না পাতায়?’’
আলোচ্য অনুষ্ঠানের বিষয়ক লেখায় বাপ্পাদিত্যকে প্রথম উল্লেখ করলাম এই জন্য যে বাপ্পাদিত্য ‘প্রান্তবাসী’ মহিলাদের নিয়ে কাজ করছেন, এমন ছ' সাতজন মহিলাকে আমাদের সামনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। এক একজনের অভিঞ্জতার কথা আমরা যত শুনলাম ততই বুঝতে পারলাম কলকাতায় বিদ্যুতের আলো ঠিকরে এসে পড়ছে। শহর উজ্জ্বল হচ্ছে কিন্তু মানবিক শহরকে ফিরে পেতে ওইসব মহিলারা কতটা লড়াই করেছেন এবং করছেন। মঞ্চের আলোচনায় যাঁদের পেলাম তাঁদের নামগুলি উল্লেখ করছি। রন্তাবলী রায়। অধ্যাপক মারিয়া ফার্না ন্ডেজ, সমাজকর্মী বৈতালী মুখার্জী, শাশ্বতী আরোরা।
 রত্নাবলী এমন একটা বিষয়ে কাজ করছেন যেটা অত্যন্ত কঠিন এক মাধ্যম। সরকারী হাসপাতালে রুগীদের মানসিক স্বাস্থকে কি ভাবে দেখা হয়? এবং ওইসব রুগীদের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা কিরকম ব্যবহার করেন সেই ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন তিনি। রত্নাবলী বলছেন, ‘’উন্নয়নের কর্মকান্ডের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। আমি প্রশ্ন তুলছি নারীর প্রতি সম্মান, সমনাধিকারের লড়াই, হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার কাজ সব দেশের সব শহরে কি সমানভাবে রয়েছে? কিছু মানুষ আমাদের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণ মহিলাদেরই সমাজে গ্রহণযোগ্যতা নেই। সেখানে একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলার কি হতে পারে! টুম্পা আছে। ও বলবে। ওর পুরো জীবনচক্রটা আমি জানি।‘’
আসুন আমরা এই অনুষ্ঠানের অন্যতম লড়াকু মেয়ে টুম্পার গল্প শুনি। টুম্পা অধিকারী লালবাতি এলাকার মেয়ে। কালীঘাটে টুম্পার মা যৌনকর্মীর কাজ করে টুম্পাকে লেখা পড়িয়ে শিখিয়েছেন। পড়াশোনা করতে গিয়ে ‘লালবাতি’ এলাকার আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের যে ধরণের অভিঞ্জতা হয় টুম্পার ক্ষেত্রেও একইরকম হয়েছে। টুম্পা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন ওর সহপাঠীরা জানতে পারে টূম্পার মা ‘যৌনকর্মী’। টূম্পার কথায়, ‘’ আমার বন্ধুরা যখন জানতে পারল আমার মা কালীঘাটে কি কাজ করে, তারপর থেকে শুরু হল আমার উপর অত্যাচার। বন্ধুরা বলত ‘তুইতো একজন বেশ্যার মেয়ে। বেশ্যার মেয়ে বেশ্যাই হয়’তখন আমার কি যন্ত্রণা হয়েছিল। মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করেছিলাম। চিৎকার করতাম। রেগে যেতাম। আমার  তথাকথিত বাবা তার অত্যাচার ছিল। আমার সৎ দাদার অত্যাচার সহ্য করেছি। টানা দু বছর সহ্য করেছি।‘’
টুম্পার কথা থামতে চায় না। সাবলীলভাবে বলে চলেছেন। কোনও দ্বিধা ওর মধ্যে কাজ করছে না। টুম্পা আরও বলে, ‘’আমি হতাশ হয়ে ভাবতাম মায়ের জীবনটা বেছে নি। পুরুষ বন্ধুরা কেউ কেউ স্কুলের ব্যাগে মদ এনে দিতে বলত। কেউ কেউ টাকা দিয়ে আমাকে ব্যবহার করতে চাইত। আমি একটা সময় ক্লান্ত, হতাশ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু মায়ের কথা শুনে স্কুল বদলে আমি পড়াশোনা করেছি।‘’
টুম্পার উপলব্ধি। টুম্পা বলছে, ‘’এরপর আমার লড়াই শুরু হল। বুঝলাম তথাকথিত এই সমাজের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে একজন টুম্পা দিয়ে হবে না। প্রয়োজন আরও অনেক টুম্পার। আমরা আমদের কালীঘাট অঞ্চলে সচেতনতা আনার চেষ্টা করছি।আমাদের কালীঘাট পাড়ায় এখন কোনও মেয়েকে এনে আর বিক্রি করা যায় না।  আমাদের পাড়ায় কারও মাকে তার বাবা মারলে সে নিজেই থানায় ফোন করে খবর দিয়ে দেয়। আজ আমি নিজের কথা বলতে পেরে অনেকটা হাল্কা বোধ করছি।‘’ সাবাশ টুম্পা শাবাস। একঝাঁক সাদা হাঁস ভেসে এলো আকাশে।
লিঙ্কন সভাঘরের মঞ্চে উপবিষ্ট টুম্পার অন্যান্য সহ আলচকরা নিজেদের কথা হারিয়ে ফেলেছেন। মঞ্চে বসে আছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য মারিয়া  ফার্নান্ডেজ। সমাজকর্মী বৈতালী গাঙ্গুলী। এবং শাশ্বতী আরোরা। প্রত্যেকেই প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে আজ বর্তমান সমাজে এক একজন উল্লেখযোগ্য নারীযারা সমাজের পিছিয়ে পড়া, আলো না দেখা নারীদের নিয়ে কাজ করছেন নিজেদের অকৃত্রিম উজার করা ভালোবাসায়। টুম্পার কথা শেষ হওয়ার পরেই আমাদের সামনে এলেন কবি শামসাদ। শামসাদ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার শিরাকোল গ্রামের মেয়েছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। শামসাদ ভাবত নিজের পায়ে নিজেকে দাঁড়াতে হবে। হ্যা শামসাদ এখন স্বনির্ভর। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারী নার্সিং হোমের নিরাপত্তা কর্মীদের ‘ইনচার্জ’। এবং অবসর সময়ে কবিতা লেখেন। ‘আম’ নামে একটি কবিতা আমরা শামসাদের মুখে শুনলাম। মিষ্টি আমের মতই তার শব্দচয়ন। নিজের জীবনের অনুভূতি আমের রসে জারিয়ে পাঠকদের পরিবেশন করেছেন।
শামসাদ বলছেন, “খুব ছোট বেলায় গ্রাম থেকে উঠে এসেছি। আমি টিউশানি করতাম। আমার ছাত্রদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে নিতাম। ওই টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামের গরিব ছাত্রদের স্লেট, বই, খাতা কিনে দিতাম। আমার স্বামীর কাছে টাকা চাই না। আমি স্বনির্ভর। মেয়েরা স্বনির্ভর না হলে পরিবারে, সমাজে অত্যাচার বন্ধ হবে না।‘’
টুম্পা, শামসাদ বাহ। আমার আন্তরিক অভিনন্দন রইল তোমাদের জন্য। তোমাদের লড়াই আমাকে প্রেরণা দিচ্ছে। আমি নিজেও প্রান্তবাসী অঞ্চল থেকে উঠে এসেছি। প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তোমাদের লড়াইয়ের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি পারব। আমি আলো খুঁজে খুঁজেই আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন হলে তোমাদের দেখা পেলাম। আমেরিকান সেন্টারের কতৃপক্ষ বাংলা তথা কলকাতার মনন গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন। যে কথা প্রথমেই উল্লেখ করেছেন আমেরিকান সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভশ্রী সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘’আমি খুশি আজকের বিষয়ের উপর আলোচনার আয়োজন করতে পেরে। আমরা এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান হায়দারাবাদে করেছি। অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান ছিল সেটা। আপনারা সবাই খোলা মনে আলোচনা করবেন।‘’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন ৮ মার্চ ধর্মতলায় ছিল একটি অনুষ্ঠান। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক মহিলা সম্মেলন। প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলনের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধযায়, অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টপাধযায়, শিক্ষাবিদ ভারতী রায়, ফুটলার শান্তি মল্লিক সহ আরও অনেকে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ করেছি। আমাদের নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি হচ্ছে ৩৩%। বিল পাশ করার আগে আমরা করে দেখিয়ে দিয়েছি। রাজ্যের ৪৮ শতাংশ মেয়েরা ১০০ দিনের কাজে নিযুক্ত আছেন। আমাদের রাজ্যে ‘কন্যাশ্রী’-এর মত প্রকল্প চালু আছে। যে প্রকল্পে আমরা ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। রাজ্যের গরিব পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে চায় রাজ্য সরকার। এপ্রিল মাস থেকে আমরা আরও একটা প্রকল্প আনছি। এই প্রকল্পে একটি গরিব পরিবারের মেয়ের বয়স ১৮ হলে সেই মেয়েটির বিয়ের জন্য ২৫ হজার টাকা করে দেবে আমাদের সরকার। আমি নিজে যে লড়াই করেছি। আমি বিশ্বাস করি নারীর স্বক্ষমতা তখনই সম্ভব একজন নারী আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হলে।‘’
টুম্পা তোমাদের চেনা অন্ধকার, অচেনা আলো ভেঙে আমাদের সামনে এগিয়ে আসতে বলছ। শরৎচন্দ্রের চন্দ্রমুখীর সময়কাল ছূটে পেরিয়ে এসেও আমাদের কলকাতা তথা নাগরিক কলকাতায় আজও আমরা আলো খুঁজছি। কালীঘাটে। হাড়কাটা লেনে, বৌ বাজারের বড় রাস্তায় সন্ধ্যের ফুটপাথে। সোনাগাছির ঝা চক চকে অলিতে গলিতে। কৃত্রিম আলো নয়। মনের জানলা খুলে দেওয়া জ্যোৎস্নায় আমরা স্নান করতে চাইছি। অবগহন করতে চাইছি। চুঁইয়ে পড়া সভ্যতার আলোয় আরও সামনে হেঁটে যাব আগামীর পদাতিক হয়ে। তোমরা সবার সঙ্গে থেক। নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে যদি আবার কোনদিন বেরতে হয় তবে অবশ্যই টুম্পাদের নতুন পাড়ায় যাব। নতুন মাটি নিয়ে গ্রাম বাংলার সরস্বতী আরাধনার মণ্ডপে মণ্ডপে ছড়িয়ে দেব। ভালো থেক কলকাতা। ভালো থেক টুম্পা। ভালো থেক শামসাদ। ভালো থাকবেন আমার সহ নাগরিক বাপ্পাদিত্য।         

          

Saturday 3 March 2018

রঙ ফাগুয়ার বিষ্ণুপুরে বসন্তের রাগ রাগিণীর ডাক

রঙ ফাগুয়ার বিষ্ণুপুরে বসন্তের
রাগ রাগিণীর ডাক:  
রাঢ় বাংলার আকাশ দেখে যারা বড় হয়েছে তারাই বলতে পারে, ‘বসন্ত দীর্ঘজীবি হোক’। অশোক, শিমূল, পলাশের তাজা রঙ, মহুল ফুলের শান্ত স্নিগ্ধ মৌতাত, সোনালী রঙের তরুণ তাজা রোদ, মেখলা পড়া আচ্ছন্ন নীল সাদা মেঘেদের চুপি চুপি গুঞ্জন। লাল মোড়ামের ধূলো উড়ি লাল রাস্তায়, আদিবাসীদের ‘রাঢ় বাংলা’-র মাদলের তালে তালে, চেনা অচেনা সুরে কেউ বলে উঠে আজ বসন্ত। কিন্তু এই বছর নতুন ভাষায় জানলাম ‘টেরাকোটা শহরে ধ্রুপদী বসন্ত’। ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান’। যত সময় যায় চুলের রঙ কালো থেকে সাদা হয়। চকচকে চামড়ার স্পর্ধা কমতে থাকে। মুখের বলিরেখা জানান দেয় অস্তমিত সূর্যের আলোকপ্রভা ম্লান হচ্ছে। স্মৃতি মন্থর হতে থাকে।
‘আমন্ত্রণ’ নামক শব্দের পরিচিতি আমার অভিধানে নেই বললেই চলে। কিন্তু এটাই শেষ বাক্যবন্ধ হলে মানব সভ্যতা থমকে যাবে। ‘তোমার আপন হারা প্রাণ......’। ‘আহা আজই এই বসন্তে কত পাখি গায়/ কত ফুল ফোটে’।
‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান’। আন্তরিক আমন্ত্রণের কোনও ঘনঘটা ছিল না। অপ্রত্যশিত এক অভিজাত দাবি ছিল ‘বিষ্ণুপুর বসন্ত যাপন সমিতি’-র কার্যকরী সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের। আমাকে যেতে হবে এবং বিষ্ণুপুর নিয়ে লিখতে হবে। যদি এখান থেকে শুরু করি তুষারদা কি আমাকে অমনোযোগী বলবেন? কেন বলবেন? লেখার কোনও কি ধারা উপধারা হয়? সৃষ্টির কি কোনও বন্ধন থাকে? প্রাণচঞ্চল শৈশব- কৈশোরের যে বাঁকা ঠোঁটের কলকাকলি শুনেছি সেই অ-আকাঙ্খিত প্রাপ্তির ছবি আমি কোন ভাষায় কোন লিপিতে একে দেখাব? টেরাকোটা শহরের টেরাকোটা শিল্প, পোড়ামাটির কুশলী প্রশিক্ষণ আমার নেই। আমার হ্রদয়ে যে ছবি এসে বাসা বাঁধল সেই ছবি আমি পেলাম বিষ্ণুপুর ‘যদুভট্ট মঞ্চে’বসন্ত যাপন সমিতি’-র গোধূলি বেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। দু’জন শিল্পী ক্যানভাসে ছবি আঁকলেন। ‘আজই দখিন দুয়ার খোলা.../ এসো হে এসো হে এসো হে/ আমার বসন্ত এসো’বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। দু’টি পাখি দু’টি দিকে উন্মুক্ত আকাশে উড়ে যাচ্ছে। বলছে ‘টেরাকোটা শহরে ধ্রুপদী বসন্ত’।
শিল্পীর তুলিতে ক্যানভাসে আমরা পেলাম নতুন বসন্তের কলকাকলি। পেছনের ‘ডায়াসে’ বেহালার ছড় আমাদের বসন্তকথা শোনাচ্ছে। সঙ্গে রবি ঠাকুরের লেখা থেকে দু’ই বাচিক শিল্পীর ‘বসন্ত কথা উচ্চারণ’। এই সপ্তম সুরের প্রথম বন্দনা আমরা পাই সকাল সাতটার প্রভাতি অনুষ্ঠানে। সাঁওতালি মাদল, আদিবাসী মেয়েদের কলস মাথায় নৃত্য। সবুজ, লাল হলুদ আবিরের রঙ ফাগুনের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলিত শহর পরিক্রমা। বাংলার ঢোলক, খঞ্জনী আর রবীন্দ্র গানের আহ্বান, ‘ওগো পুরোবাসি খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল/ স্থলে জলে বনতলে লাগলো যে দোল/ দ্বার খোল, খোল দ্বার খোল’ সোনালী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবী ছিল সোনালী রোদের সহযাত্রী। সকালের বিষ্ণুপুর আপনহারা প্রাণের টানে দ্বার খুলে বেড়িয়ে এসেছে। প্রাণের মেলায়। বাঙালির আরও একটি বিশ্বজনীন সংস্কৃতির টানে। রাধাকৃষ্ণের ফাগ ফাগুয়ার বসন্তের ডাকে। বাঁকুড়া জেলার মহকুমা শহরের ৪৬ টা সংস্থা ১৪২৪ সালের দোল উৎসবে অংশ নিয়েছিল। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, সঙ্গীতের স্কুল, নাচের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই রাস উৎসবে অংশ নেয়। অনুষ্ঠানসূচী অনুযায়ী সমাবেশ হয় মদনমোহন মন্দিরের বাইরে। সকাল ৭টায়। ফুলের পাঁপড়ি, আবির দিয়ে মন্দিরের বিগ্রহকে পূজো দেওয়া হয়। আনুস্থানিকভাবে শঙ্খ এবং কাঁসর ঘণ্টায় গ্রাম সভ্যতার ঐতিহ্যের সংলাপ আমরা শুনি। শোভাযাত্রা এগিয়ে চলে। শেষ হয় ‘চিলড্রেন্স পার্ক’-এ। দশ বছরের এক কিশোরী সোনালী শাড়ি পড়ে, কপালে চন্দনের ফোঁটা, চুলে বেল ফুলের মালা গাঁথা। পায়ে ঘুঙ্গুর। ক্লান্তিহীন চোখে আমায় বলল, ‘জেঠু ওদের বল না। সামনের বছর আমরা সবাই বাড়ির ছাদ থেকে ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে দেব। আবির ছড়িয়ে দেব। আমাদের মায়েরা শাখ বাজাবে।’ আপনহারা প্রাণ আমার আন্দোলিত হয়ে উঠল, আমি বললাম, ‘হ্যা বলব’। আমার চোখে অদৃশ্য অশ্রু। সকালের সূর্য একটু একটু করে জানান দিচ্ছে আগামীর পথের আলো খুঁজে নাও।               
আমি নিজেও আপ্লুত হয়ে গানফাগুনের ‘যদু ভট্ট’-র শহরে গলা মেলাতে মেলাতে পুরনো বিষ্ণুপুরে চলে গিয়েছিলাম। এই লেখায় একটি বিষয়কে নিয়ে চর্চা করব আমরা। কারণ টেরাকোটার শহর। যদুভট্টের শহর। বিষ্ণুপুর তথা মল্লরাজত্বের চিরন্তন সংস্কৃতির সঙ্গীত ঘরানাকে আপামর মানুষের হ্রদয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন মল্লরাজ দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ। তথ্য বলছে দ্বিতীয় মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ সঙ্গীতাচার্য তান সেনের বংশধর বাহাদুর সেনকে বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন। বাহাদুর শাহের কাছে গান এবং সঙ্গীতযন্ত্রের প্রশিক্ষণ হয় মহান সঙ্গীত সাধকের। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সঙ্গীত সাধক ছিলেন গদাধর চক্রবর্তী, রামশঙ্কর ভট্টাচার্য, অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধিকা প্রসাদ গোস্বামী, ঞ্জানেন্দ্র প্রসাদ গোস্বামী এবং যদুভট্টের মত সাধকের জন্ম এই বিষ্ণুপুরে। যে তথ্য এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে সেই তথ্য আমার ব্যক্তিগত গবেষণার নয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমি এই তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাই ঐতিহাসিক ভিত্তি কতটা আছে সেটা আমি বলতে পারব না। ধ্রুপদী সঙ্গীতের শহর এই বিষ্ণুপুর সংস্কৃতির বিভিন্ন বাখ্যা বিভিন্ন গুণীজনেরা দিয়েছেন। এবং এখনও দিচ্ছেন। সংস্কৃতি বলতে বোঝায় অনুশীলনের মাধ্যমে লব্ধ বিদ্যা, চর্চিত রীতিনীতির উৎকর্ষ। যেটা যে কোনও সভ্যতার উৎকর্ষের পরিচয়। একটি সভ্যতার সংস্কৃতির সূচক কাকে বলব আমরা? চিত্রকলা, নৃত্য, সঙ্গীত, সাজসজ্জা, গৃহ, সভাঘরের অলঙ্করণ, আহার্য, পানীয় আরও অনেক কিছু। জানলে আশ্চর্য লাগে বিষ্ণুপুরে  রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় নামে একটি কলেজ আছে। স্থানীয় নাগরিক সমাজের দাবি ছিল বিষ্ণুপুর ঘরানা সহ ভারতীয় হিন্দুস্থানী ঘরানার একটি সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয়ের। ‘টেরাকোটা শহরে ধ্রুপদী বসন্ত’ (১৪২৪)-এর সাংস্কৃতিক সান্ধ্য অনুষ্ঠানে ‘যদুভট্ট মঞ্চ’-এ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন। তিনি প্রস্তাব গ্রহণ করে বললেন, ‘’আমি ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব লিখিত আকারে শিক্ষা দপ্তরের উর্ধতন কতৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছি। যদি আমাদের এই প্রস্তাব মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তথা রাজ্য সরকার অনুমোদন করে, তবে বলব এই সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিক রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়।‘’
বিধায়ক তথা ‘বসন্ত যাপন সমিতি’-এর কার্যকরী সভাপতি তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘’আমরা এই অনুষ্ঠান করছি গত দু’বছর হল। বিষ্ণুপুরের চিরায়ত সংস্কৃতির অঙ্গ ‘টেরাকোটা শহরে ধ্রুপদী বসন্ত’। বিষ্ণুপুরের লোকায়ত শিল্পের বিভিন্ন ধারা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম রাধাকৃষ্ণের রাসউৎসব। মল্লরাজারা এটাকে সঙ্গীতের মূর্ছনায় নগরবাসীর বাৎসরিক উৎসবে পরিণত করেছিলেন। আমরা সেই স্মৃতিকে মনে রেখে ‘দোলের দিন’ এই ধ্রুপদী উৎসবকে বেছে নিয়েছি। শুধু রঙ খেলা নয়। বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি ‘আজ সবার রঙে রঙ মেলাতে হবে’ অনুভব থেকে আগামী দিনে এই উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলব। এমন পরিকল্পনা আমাদের আছে।‘’
সাংসদ সৌমিত্র খান বলেন, ‘’এই নতুন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আগামীদিনে এই উৎসবকে আরও রঙ্গীন করতে আমরা অন্যন্য ভাবনা চিন্তা করছি।‘’      
‘বসন্ত যাপন সমিতি’-এর অন্যতম সদস্য (জনসংযোগ) এবং সমাজসেবী পার্থসারথী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে আইনজীবী। কলকাতার আলিপুর জর্জকোর্টের কাজ সামলে এই অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পার্থসারথীবাবু বলেন, ‘’গত দু’বছর ধরে বিষ্ণুপুর ঘরানার বসন্ত উৎসব আমরা করছি। নতুন অভিঞ্জতা হচ্ছে। জাতি ধর্মের উর্ধে সমস্ত স্তরের মানুষ আমাদের এই প্রভাতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। বসন্তের আহ্বানে আমরা পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করি। বিষ্ণুপুরের রাস উৎসবের এই অনুষ্ঠান আমাদের কাছে  বাঙালির শারদ উৎসবের মত।‘’
পার্থবাবু আরও বলেন ‘’আমরা বিষ্ণুপুর শহরকে অশোক, পলাশ, মহুল গাছে ভরিয়ে তুলব। ইতিমধ্যে এই কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং সাংসদ সৌমিত্র খান দু’জনেই অত্যন্ত আন্তরিকভাবে গাছের চারার জন্য জেলা বনদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। টেরাকোটা শহরে ভবিষ্যতে পর্যটকরা যখন আসবেন শুধু ছায়াশীতল শহর নয়। বসন্তের মরশুমি ফুলের পাঁপড়িতে স্নান করবেন।‘’                                                 
বিষ্ণুপুর ঘরানায়  আরও একাধিক বিষয় রয়েছে। যারমধ্যে অন্যতম প্রাচীন ‘শিল্প-বাণিজ্য’। এবং ‘হেরিটেজ শহর’-এর দাবি। আমরা পরের লেখায় এই দু’টি বিষয়কে ধরে এগবো। আজ আমার উপলব্ধি রাঙা ফুলের রঙ ফাগুয়ার ধ্রুপদী বসন্তের আবির মেখে/ যতন ভাঙা যতন রাঙা/ বিষ্ণুপুরের পলাশ রঙে, /ফিরে এলাম শহর কলকাতায়/ নাগরিক আমন্ত্রণে।‘’