Friday 23 December 2016

হেমন্তের অবতরণিকা

হেমন্তের অবতরণিকা:

আমার প্রিয় কবি শঙখ ঘোষ আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমি আজ আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। প্রশ্রয়ের সঙ্গে বলতে হয় আমার কি এমন যোগ্যতা আপনাকে নিয়ে শব্দ বাক্য রচনা করি? সত্য সে তার গতি যতই মন্থর উপলব্ধি হোক, বাস্তবের নিয়ম-অনিয়মের দোলাচলে। ন্যায়ের নিয়ম ফিরবেই। ন্যায়দণ্ড আজও ঠাকুর বাড়ি, বিশ্বভারতী, শিলাইদহে আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। আমরা নতজানু হয়ে পরস্পর পরস্পরে প্রাচুর্যকে ছুঁয়ে দেখি। আজ শান্তিনিকেতনে ছাতিমতলায় ব্রাহ্ম সঙ্গীত উচ্চারণে বাংলার বর্ণময় মেলার আরাধ্য প্রাচুর্যে আমরা কবিগুরুর চরণের কাছে বসে আছি। এইদিন আরও সমৃদ্ধ হলাম যখন শুনলাম আপনি জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার পাচ্ছেন। সময় যত গড়িয়েছে আমরা কাব্য সাহিত্যের তৃষ্ণার্ত আপামর বাঙালি প্রতীক্ষা করেছি আমাদের বাংলার গর্ব, বাংলার বিবেক জানি জগতসভায় আপন আসনে বসবেন। আর তিনি আমাদের বলবেন, ঞ্জান যেখানে মুক্তধারার মত অবগাহন করে আমি এবং আমরা সেই স্বচ্ছতোয়া অববাহিকায় থাকতে চাই।
কবি শঙ্খ ঘোষ এই সেদিন এসেছিলেন। সমর সেন শতবর্ষ অনুষ্ঠানে। ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬-এর শীত সন্ধ্যায়। এক পত্রিকার সম্পাদক তাঁর মুখবন্ধ বক্তব্যে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন। সম্পাদক বললেন, ‘’সমর সেনের মত মানুষ চলে গেছেন। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে আছেন শঙ্খ ঘোষ।‘’ পরে সভায় কিছু বলার জন্য কবিকে আহবান জানানো হল। তিনি এলেন। মুখে চপট গাম্ভীর্য। অথবা অব্যাক্ত অভিমান। নিশ্চয় নিজের জন্য নয়। বাংলা তথা ভারতের ন্যায়দণ্ডের জন্য। দেশের চেনা বিবকের খোজে। কতদিন কবি কথা বলেননি। স্বল্পবাক কবি কাশফুলের মত সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, শাল জড়িয়ে পোডিয়ামে এলেন। সমস্ত সভাঘর শব্দহীন। নিস্পলক নয়নে আমরা আলোআঁধারি মঞ্চে চেয়ে আছি কান খাড়া করে। তিনি অনেক কথা বলবেন। কোনও নতুন কথা পুরনো শব্দের ভাবগাম্ভীর্যে নতুন ছন্দে।  
শঙ্খ ঘোষ বললেন, ‘’সমর সেনের শতবর্ষে দীপেশ বক্তৃতা করবেন। আমাকে আহ্বান না জানালেও আমি চলে আসতাম। আপনাদের সঙ্গে দর্শক আসনে বসে দীপেশের কথা শুনতাম। সারা দেশে মনুষত্বের যে অবক্ষয় সেখানে সমর সেনের মত একজন মানুষের কথা আলোচনা হবে আমি আসব না? এটা কি হয়? প্রাণ শক্তিটা ফিরে আসুক।‘’
এই প্রজন্মের বাংলার তরুণদের তথা দেশের তরুণদের কবি আহ্বান জানালেন। তাঁর সেইসব দিনের চেনা পথ আমাদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। সত্তর দশকের মাঝামঝি সময়। রক্তলেখায় বাংলার ইতিহাস, সাহিত্য, কবিতা নতুন ভাষা খুজছে। বাংলার জাগ্রত বিবেক গর্জে উঠেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ভিয়েতনামের মানুষের মুক্তির দাবিতে। ফ্রান্সের ছাত্রদের উপর অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির দাবিতে। মাতৃভাষার গর্বিত অহংকারের পাশে এই বাংলার বিবেক। ওইসময় কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘’দলবদ্ধ হবার কোনও ইচ্ছে আমার নেইনিজের পখে সাধ্য যতটুকু ততটুকু করব।‘’ সম্ভবত সেই সময় তিনি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পের কয়েকটি লাইন পড়েছিলেন। ‘’শশিভূষণ.........কহিলেন, ‘জেল ভালো। লোহার বেড়ি মিথ্যা কথা বলে না, কিন্তু জেলের বাহিরে যে স্বাধীনতা আছে সে আমাদিগকে প্রতারণা করিয়া বিপদে ফেলে.........।‘’ (ঋণ- শিলাদিত্য সেন)
ষাটের দশক থেকে যদি আমরা কবি শঙ্খ ঘোষকে দেখি তাহলে জানতে পারব তাঁর ধারাবাহিকতা। যেসব প্রাঞ্জ ব্যক্তিত্ব শঙ্খ ঘোষকে কাছ থেকে দেখেছেন বা দেখছেন তাঁরা আমার থেকে অনেক অনেক ভালো বলতে পারবেন কবির কথা। আমরা শেষ যে অধ্যায় জ্ঞানত দেখলাম সেটা ‘সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম’ পর্যায়। চার দশক পর বাংলা তথা ভারতের এক অবক্ষয়ের ছবি সমস্ত পৃথিবী সেই সময় দেখতে পেয়েছে। রাজনীতির ভাষা এবং কৌশল নিজ নিজ দল ঠিক করে। যেমন নীতিও সেই দল ঠিক করে। আমাদের আলোচনা সেই নীতি বা কৌশল নিয়ে নয়। এটা সেই পরিসরের আলচ্য বিষয় বস্তুও নয়। কিন্তু তখন অবুঝ মানবতার যে পদচারণা আমরা শুনেছি। তাঁর প্রতিবাদ করাটা সমস্ত বিবেকবান মানুষের দায়বদ্ধতা ছিল। শঙ্খ ঘোষ চুপ করে থাকেননি। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। বাংলার ‘পরিবর্তন’-এর এখানেই শেষ নয়। দল, মতাদর্শ সব কিছু কেমন যেন জবুথুবুকখনো কখনো উথাল পাথাল প্লাবনে ‘আমরা-ওরা’ সব মিশে যায়। দিনের আলোয় ‘আমরা-আমরা’, ‘ওরা-ওরা’ আলাদাসন্ধের পর আকাশের তারাদের আর চেনা যায় না। উত্তরের আকাশে যে তারা আজ দেখা যায় পরের দিন দক্ষিণের আকাশেও সেই তারা উজ্জ্বল ভাস্বর। সময়ের বিবর্তনে স্বার্থানেবষি মানুষ নিজেদের মঞ্চ খুঁজে নিয়েছে। সিঙ্গুর আন্দোলনের দশ বছর পর আজ গুটি কয় মানুষ একা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি শঙ্খ ঘোষ।

১৯৭৩ সালে মণীন্দ্র গুপ্ত এবং রঞ্জিত সিংহের যুগ্ম সম্পাদনায় ‘এক বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা ১৯৭২’ প্রকাশ হয়। প্রবীণ এবং তরুণ কবিদের কবিতা আছে ওই সংকলনে। শঙ্খ ঘোষের কয়েকটি কবিতা আছে। তারমধ্যে অন্যতম কবিতা ‘মূর্খ, বড়ো, সামাজিক নয়’- ‘’ঘরে ফিরে মনে হয় বড়ো বেশি কথা বলা হলো?/ চতুরতা, ক্লান্ত লাগে খুব?/’’ ..............................কবিতার শেষ স্তবকের তিন লাইন, ‘’যদি তাই লাগে তবে ফিরে এসো। চতুরতা, যাও।/ কী বা আসে যায়--/ লোকে বলবে মূর্খ বড়ো, লোকে বল্বে সামাজিক নয়। ‘’ (পৃষ্ঠা- ৯০ )                                                                     

Monday 19 December 2016

সম্পাদক এবং রাজনীতি

সম্পাদক এবং রাজনীতি: 

দীপেন্দু চৌধুরী 
শীতের কলকাতায় ইতি উতি নানা অনুষ্ঠান। কোথাও সাংস্কৃতিক, কোথাও অ-সাংস্কৃতিক, কেউ কেউ সেমিনার করছেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি। কিন্তু সেদিন ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় ‘ভারতীয় সংগ্রহালয় কলকাতা এবং ‘অনুষ্টুপ’ ’ এর নিবেদন ছিল ‘সমর সেন শতবর্ষ স্মারক বক্তৃতা ২০১৬’সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার এক অনুষ্ঠান। মানসিকভাবে কিছুটা সয়ে উঠতে পেরেছি বুঝে সেদিনের অনুষ্ঠানে চলে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে অনুষ্টুপ পত্রিকার সম্পাদক অনিল আচার্যকে একটা ফোন করে নিয়েছিলাম পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে। সেদিনের অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ, লেখক ও লরেন্স এ. কিম্পটন ডিসটিংগুইসড সার্ভিস অধ্যাপক, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-এর দীপেশ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শঙ্খ ঘোষ এবং অনুষ্ঠানের সভামুখ্য ছিলেন নির্দেশক, সেন্টার ফর স্টাডিস ইন সোসাল সায়েন্সেস (কলকাতা) এর তপতী গুহঠাকুরতা। এদিনে বক্তব্যের বিষয় ছিল মানবিকতা, অ-মানবিকতা।
অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু সাদা চোখে ‘Humanism-in humanism’ বলেই মনে হয়েছিল আমাদের মত কম লেখা পড়া জানা আনপোড় বঙ্গজদের। অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী বলছেন, ‘’ মানবিকতা- যে চিন্তার কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ। আর অমানবিকতার কেন্দ্রেও রয়েছে মানুষ। সুনীল জানার ছবি মানবিক। দুর্ভিক্ষের সময় মৃত মানুষের দেহে মাংস নেই তবু খাচ্ছে একটা কুকুর। কুকুরটার দেহেও মাংস নেই।‘’ দীপেশবাবু আমাদের খুব কম কথায় ‘মানবিকতা এবং অমানবিকতা’ বুঝিয়ে দিলেন।
শুরুতেই ‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক তিমির বসু আমাদের মনে করিয়ে দিলেন সম্পাদক সমর সেনের হার না মানা লড়াইয়ের কথা। তিনি বললেন, ‘’বিপ্লব যখন নেই তখন ফ্রন্টিয়ার প্রকাশ করে কি হবে? এরকম মতামত আজও আছে। ফ্রন্টিয়ার কোনও ধারাবাহিক নিয়ম মেনে চলেনি। কেউ কেউ পড়ত। বিভিন্ন লেখা থেকে আমরা জানি তিনি কি কষ্টে পত্রিকা চালাতেন।‘’
আমার নিজের অভিঞ্জতাই বলতে পারি আমি দু’তিনবার আশির দশকে ‘ফ্রন্টিয়ার’ অফিস থেকে পত্রিকা নিয়ে এসেছি। দূর থেকে সমর বাবুকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নিবিড় কৌতূহল থেকেই দেখতাম। সেই সময় অতি বামপন্থীদের কাছে সমর সেন খুব সম্ভবত কমিউনিস্ট এবং বিপ্লবী ছিলেন না। তাই তৎকালীন আমাদের বামপন্থী অভিভাবকদের নিষেধ ছিল ‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকা পড়া। যদিও সেইসব নেতৃত্ব আমাদের আড়ালে সম্পাদক সমর সেন কি লিখলেন সেটা তাঁরা পড়ে নিতেন।
মনে পড়ে ১৯৮৭ সাল। তখন বিভিন্ন গণসংগঠন এবং সাংবাদিকতা করার সুবাদে বামপন্থীদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। সেই বছর খুব সম্ভবত লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন ছিল। আমি আমাদের নলহাটির বাড়িতে ছিলাম। একদিন কমরেড কানু সান্যাল আমাদের বাড়িতে এলেন। সারাদিন ছিলেন। মায়ের হাতের রান্না খেতে তিনি খুব ভালোবাসতেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমার পড়ার টেবিলে ফ্রন্টিয়ার দেখে জানতে চাইলেন, তুমি ফ্রন্টিয়ার পড়? আমি খুব ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম, নিয়মিত নয়। তা ছাড়া আমি ইংরেজি ভালো বুঝিও না।
কানুদা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পরে বলেছিলেন, ‘’একজন যোগ্য সম্পাদকের কাগজ ‘ফ্রন্টিয়ার’‘’ এই কথার প্রতিধ্বনি পেলাম অনুষ্টুপ পত্রিকার সমপাদকের বক্তব্যেঅনিল আচার্য বললেন, ‘’সমর সেনের মত একজন মানুষ ছিলেন বলেই আমরা উৎসাহ পেতাম। সমরবাবু বেঁচে থাকাকালীন শেষ পাঁচ সাত বছর ওনার বাড়িতে যেতাম। তখন কিভাবে পত্রিকা চালাতেন সেসব দেখেছি। সমরবাবু বলতেন, ‘আমি ভাবিনি মাছের তেলে মাছ ভাজতে পারব।’ ফ্রন্টিয়ার এতটাই জনপ্রিয় ছিল। অনেকের কাছে প্রশ্ন ছিল তিনি কি কমিউনিস্ট? তার উত্তর ছিল সম্পাদককে মার্ক্সবাদী হতে হয়না। নিজেকে কমিউনিস্ট হিসাবে গড়ে তুলতে হয়।‘’
অনিলদার কথার সূত্রে মনে পড়ছে সম্পাদক সমর সেনের সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসাবে ক্ষমতা   এবং উচ্চতার বিষয় বা তাঁর ঘরানা। কংগ্রেস এআইসিসির একটি বৈঠকে জওহরলাল লাল নেহরুর বক্তব্যের কিছুটা অংশ তিনি সংবাদ হিসাবে প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য স্টেটম্যান’ পত্রিকায় ১৩ নভেম্বর তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় তার কিছুটা অংশ এখানে উল্লেখ করলাম। সমর সেন কতটা সম্পাদক এবং সাংবাদিক ছিলেন?
‘’The autumn issue of Frontier, of which Samar Sen was the founder-editor, has appropriately been devoted to his centenary as a mark of profound respect for the man. 
The story goes that when Samar Sen was the Night Chief Sub-Editor of  The Statesman some time in the Fifties, the formidable Editor, George Arthur Johnson, had called up to be briefed on the day’s top stories. “I’m too busy,” was the almost astonishingly blunt retort from the gentleman in charge of the desk, marking an abrupt end to the Editor’s “night call”... during peak hour. When Johnson recounted his experience at next morning’s editorial conference, Lindsay Emerson immediately left the high table  and  drove down to Sen’s residence... to congratulate him on how he had cut the Editor off.                      
The autumn issue of Frontier, of which Samar Sen was the founder-editor, has appropriately been devoted to his centenary as a mark of profound respect for the man. Sad to reflect though, it has somehow missed such anecdotes as when he had hacked Jawaharlal Nehru’s address to the AICC session to one paragraph. It was a truly extraordinary career as poet, journalist — with AIR, The Statesman, Hindusthan Standard, and then as editor of  Now — not to forget his career as translator in Moscow and eloquent sympathies  for the Left radicals. The striking feature of his working life being that it was a brief stint wherever he went, including an advertising agency.  A brilliant student, he had distinguished himself as a poet, though it remains a mystery to this day as to why he gave up writing poems.  It is a  mystery that the contributors to the centenary edition — notably Sumanta Banerjee — have not been able to fathom for Sen reserved the right not to answer  the puzzling question — Why? Overall, his career both as a journalist and more importantly as poet is testament to his somewhat restless and non-conformist temperament, preferring to live and work on his terms, abjuring the conventional and the populist. His poems were extraordinary, of a calibre that many writers would be proud of, but few able to claim.  This is the fine print of the commemorative issue — he had distinguished himself and in a remarkably self-effacing manner long before “lit fests” ,  book fairs and book “launches”  became sales-promotion programmes and fashionable diversions for the urbanite.’

অনুষ্টু স্ম্র সেন সংখ্যায়, ১৯৮৮ তে প্রকাশিত সুম্নত বন্দ্যোপাধ্যায় 'সিমান্ত পেরিয়ে' শিরোনামে লিখছেন, 

''আনন্দবাজা‌রের' পাতায় তখন দৈ‌নিক দেশপ্রে‌মিকতার বাণী বার হ‌চ্ছে; উৎকট স্বা‌দে‌শিকতার আগুন ঝর‌ছে l একদিন সমরবাবু প‌ত্রিকার তৎকালীন মা‌লিক অশোক সরকা‌রের ঘ‌রে গি‌য়ে বই-এর তাক থে‌কে Dictionary of Quotation-এর ক‌পি বার ক‌রে পড়‌ছেন l অশোকবাবু জি‌জ্ঞেস কর‌লেন--"‌কি ব্যাপার সমরবাবু? কি খঁুজ‌ছেন?" নি‌র্বিকার মু‌খে সমরবাবু জবাব দি‌লেন--"‌দেখ‌তে এসে‌ছিলাম Dr. Johnson আস‌লে কি লি‌খে‌ছি‌লেন-- Patriotism is last resort of Scoundrels, না first resort of Scoundrels."
- সুমন্ত ব‌ন্দোপাধ্যায় , 'সীমান্ত পে‌রি‌য়ে' , অনুষ্টুপ , সমর সেন সংখ্যা,১৯৮৮


অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী খুব সম্ভবত এই প্রাসঙ্গিকতা মনে রেখেই সেদিন বললেন, ‘’আমি সাহিত্যের মানুষ নই। সমর সেনের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করি সেই সামর্থ আমার নেই। সমর সেনের কবিতা আমরা বন্ধুরা ন্যাশন্যাল লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে আবৃত্তি করতাম। আজ মনে হচ্ছে ওর বাড়ির সেদিনের আড্ডাগুলিতে যদি আমি থাকতে পারতাম। অথবা ওর বাড়ির আড্ডাটা এই সেমিনারে যদি নিয়ে আসতে পারতাম। যে অবস্থান থেকে লেখার ফলে সরোজ দত্তের সঙ্গে ওর মুখোমুখি আলোচনা হয়েছে‘’ দীপেশ আমাদের মনে করিয়ে দেন বিদেশে থাকার জন্য তাঁকেও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ হয়ে গেছেন এমনটা শুনতে হয়। কিন্তু তবু অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী বলেন ‘’কলকাতা আমার আত্মা। আমি চল্লিশ বছর সাদাদের দেশে আছি। কিন্তু কলকাতায় এলে আমার ঝগড়া হয়। আত্মীয়-ঞ্জাতি ছাড়াতো ঝগড়া হয় নাতাই কলকাতা আমার আত্মা। বাংলা আমার আত্মীয়। তবু শুনতে হয় দীপেশ এখন প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গেছে। গদ্যের প্রকরণ এবং গদ্যের চরিত্রের জন্যই আপামর স্থানিক একটা ব্যপার থেকে যাবে। যেটা গায়ত্রী স্পীভাকের বইয়ে আমরা পেয়েছি। যারা ভাবেন তাঁরা আত্মজীবনীর বাইরে সমাজের কথা বলতে চান।‘’
তিনি তার অ-অনুকরণীয় ভাষায় বলেন, ‘’সমরদা জানতে চাইলে একটা গল্প বলতাম। বিশ্বায়নের গল্প। বিশ্ব উষ্ণায়নের গল্প। কিয়োটো চুক্তির কথা বলতাম। তখন আমেরিকা রাজি হয়নি। এই উষ্ণায়ণ বিষয়গুলিকে ধনতন্ত্রের সংকট বলেই ধরা হয়। মাত্র কয়েকটি দেশ গ্রীন হাউস গ্যাসের জন্য দায়ি। মানুষের জন্য যে সাহায্য করে তার একটা ধান্দা আছে। এই চিন্তায় ‘ফুকো’ মার্কস সাহায্য করে। ‘New Temple of Modernization’- নেহরু, নাসেররা ভাবতেন। বাঁধ তৈরি। ষাটের দশকে আলোচনা হত এরপর কি হবে? যদি প্রাপ্তি শেষ হয়। ১৯৭৮-৮১ তে ফুকো বলছেন, কান্ট মানুষ এবং পৃথিবীকে পর্যাপ্ত দিয়েছেন ঠিকইকিন্তু এগুলি রাজনীতির বিষয়। ফুকো বলছেন ‘বাইয়ো পলিটিক্স’ ‘’

সেদিন অন্য কাজ থাকাই আমি শেষ পর্যন্ত সভাঘরে থাকতে পারিনি। যে বিষয় নিয়ে দীপেশবাবু বলছিলেন সেই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ আমরা আগে পড়েছি। ‘বারোমাস’ পত্রিকার বড়দিন ২০১৪ সংখ্যায় তাঁর তাত্তবিক প্রবন্ধ ‘মানুষের যুগঃ অ্যানথ্রোপোসিন’ সম্ভবত এই বিষয়গুলি ছুঁয়ে যায়।                   

Tuesday 13 December 2016

বাংলার মাটি বাংলার মেধা

বাংলার মাটি বাংলার মেধা

দীপেন্দু চৌধুরী 

এই লেখাটি লেখার জন্য প্রাক প্রস্ততি ছিল না। একদম হঠাত লিখতে বসা। কিছুটা নিজের সীমাবদ্ধতা টপকে। কলকাতা প্রেস ক্লাবের বাঞ্ছিত সদস্য না হয়েও বর্তমানে সাংবাদিক সম্মানে মেল পাই আমার বিতর্কিত ই-মেলের ঠিকানায়। আজ (১৩ ডিসেম্বর ১৬) সকালেও এমনি একটি চিঠি বা আমন্ত্রণ লিপি দেখে এই লেখার সূচনা। প্রেস ক্লাবের বর্তমান সম্পাদকের আমন্ত্রণি মেলের ভাষা ছিল ‘’This is to inform you that the U.S. Ambassador to India Mr. Richard Verma will participate at a meet the press programme at the press club, Kolkata, on 14 December 2016, (Wednesday) at 4 P.M.
I would like to request you to kindly attend the program.’’ 
প্রথমেই মনে করা যাক খুব সম্ভবত বছর তিন চার পর আবার কলকাতা আসছেন ভারতে নিযুক্ত কোনও মার্কিন রাষ্ট্রদূত। যদিও ২০১১ সালে তৃণমূল প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।  আপনাকে অভিনন্দন মাননীয় রিচার্ড বর্মা সাহেব। আপনি আসছেন নির্দিষ্ট এজেন্ডা এবং পরিকল্পনা নিয়ে। এমন একটা সময়ে আপনি কলকাতায় আসছেন যখন ভারতে ‘এফডিআই’ বিতর্ক শেষে ‘জিএসটি’ বিতর্ক বিদ্যমান। ভারতীয় অর্থনীতির সংস্কারে যেটা আবশ্যিকভাবেই প্রয়োজন। ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ-এর পথ নির্দেশিকা মেনে আধুনিক ভারত আজ আরও আধুনিক হওয়ার দাবি নিয়ে বিশ্বের দরজায় কড়া নাড়ছে। যার সূচনা করেছিলেন কংগ্রেস শাসনাধীন আরও এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। রাজীব গাঁধির হাত ধরেই আমরা ভারতে আধুনিক ‘টেলিকম প্রযুক্তি’ চিনি।
বর্তমানে কালো অর্থনীতির বোলবোলা বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে নোট বাতিলের মত সাহসী এক পদক্ষেপ। ‘ক্যাশলেস ইন্ডিয়া’ নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক না থাকলেও ‘ক্যাশলেস ভারত’ নিয়ে রয়েছে বিস্তর চাপানউতোর। বিশেষত সময়কাল সঠিকভাবে নির্ধারণ না হওয়া নিয়ে বিতর্ক। এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের হয়রানি নিয়েও সংবাদ মাধ্যমে চলছে আলোচনা। সংসদের চলতি অধিবেশন শুরুই হয়েছে টানটান উত্তেজনা দিয়ে। বিশেষঞ্জদের অভিমত ‘ডিজিটাল ভারত’ হোক। এসব নিয়ে আপত্তি নেই কিন্তু প্রস্তুতি ছাড়া এই রকম সিদ্ধান্ত কিছুটা তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা খ্যাতনামা ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ডঃ মনমোহন সিংহ বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের খেসারত দিতে হবে। এই বিষয়টা যদি জাতীয় হয় আন্তর্জাতিক সময়টা নিয়েও ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার নিজের দেশে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে শিল্পপতি। তাই আশা করা যায় গত কয়েক দশক আর্থসামাজিকভাবে অবহেলিত পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর পূর্ব ভারতকে তিনি গুরুত্ব দেবেন। ঠিক বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে দূরদৃষ্টি নিয়ে ভারতকে দেখেছেন আমরা জানি আমাদের দেশে ইউপিএ সরকার কলকাতাকে কেন্দ্র করে ‘লুকইস্ট পলিসি’ তৈরি করেছিল। সেই নীতির বর্ধিত পলিসি বর্তমান এনডিএ সরকারের ‘অ্যাক্টইস্ট’ পলিসি।
আধুনিক ভারত উত্তর আধুনিক হয়ে উঠছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় আমরা বিশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারণ করতে পারি আমাদের তরুণ প্রজন্ম তৈরি নতুন ভারতের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। যে কথা ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ তে আমাদের মনে রাখার কথা বলেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধি। তিনি বলেছিলেন, ‘’নতুন, পরিবর্তিত ভারতকে চিনতে হবে। যে ভারতে নবীন প্রজন্মের সংখ্যা বাড়ছে। তুলনায় যাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি শিক্ষিত। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য তাঁদের আকাঙ্খা, অসহিস্নুতা এবং চাহিদাও তাই বেশি।‘’
কংগ্রেস সভানেত্রী সময়টা বেছে নিয়েছিলেন ২০১৩ সালে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের উদ্বোধন মঞ্চএই চিন্তন শিবির থেকেই ভারতীয় তরুণ প্রজন্মের কাছে রাহুল গান্ধিকে তুলে ধরা হচ্ছে। রাহুল গান্ধিকে সহ-সভাপতি করে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেওয়া হয় ওই মঞ্চে।
এশিয়া মহাদেশে ভারতের গুরুত্ব অপরিসিম। বিশেষত চিন নামক একটি দেশের আধুনিক বাজার অর্থনীতির সঙ্গে তুলনায়। মার্কিন বিদেশ নীতির তাত্ত্বিক খাতায় ইতিপূর্বে বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে পুনঃ প্রকাশিত New York  Times, News Service এর Jonathan Weisman এর লেখা খবরে ছিল, ‘’Experts say that is giving rise to a more chaotic global shift, especially toward China, which even Obama administration officially worry is extending its economic influence in Asia and elsewhere without following the higher standards for environmental protection, worker rights and business transparency that have become the norms among western institutions.
…………………President Obama told ‘’The fastest-growing markets, the most populous markets, are going to be in Asia, and if we do not help to shape the rules so that our business and our workers can compete in those markets, then China will set up the rule that advantage Chinese workers and Chinese businesses.’’
ভারতের গুজরাট নামক একটি অঙ্গরাজ্য উদার অর্থনীতির সুযোগকে ধারাবাহিকভাবে কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে ‘ভাইব্রান্ট গুজরাট’ বা ‘চনমনে গুজরাট’ শিরোনামে একটি মহা সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রস্তুতির পরে গুজরাট নামক রাজ্যটি দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনায় শিল্পায়নে এগিয়ে থাকলেও সমাজ উন্নয়নে সমানতালে এগতে পারেনি এমনটাই দাবি বিরোধী দল, সংবাদ মাধ্যম এবং সমাজ কর্মীদের।  
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ২০১৫ সালের সম্মেলনে ১২টি সহযোগী দেশের রাষ্ট্রনেতা ও ১০০টি দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের ভূমিপুত্র নরেন্দ্র মোদী বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান জিম ইয়ং কিমকে মনে করিয়ে দিয়ে  বলেছিলেন, ‘’শেষ বার নয়াদিল্লি সফরে এসে আপনি জানিয়েছিলেন এ দেশে লগ্নির প্রক্রিয়া সরল করতে হবে। সরলীকরণের ক্ষেত্রে ভারত এখন ১৫০ –এর ও নীচে। তার উন্নতি দরকার।‘’ পরে প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘’আমি কথা দিচ্ছি , পুরনো জমানা শেষ। এ বার আপনারা এক কদম এগোলে আমরা দু’কদম এগিয়ে আসব। আসুন এদেশে বিনিয়োগ করুন।‘’
গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক, কেরল রাজ্যের সঙ্গে পশিমবঙ্গের তুলনা  চলে না। কারণ সেই পুরনো কাসুন্দি। অবহেলিত পূর্ব ভারতের প্রধান রাজ্য আমাদের বাংলা। এই বাংলার মাটিতে সবুজ শস্য ফলে। বাংলার নরমমাটি, বাংলার জলবায়ু সৃষ্ট প্রকৃতি অতিথি বাৎসল্য। ফুলে ফলে আমরা উন্নতি করলেও ‘শিল্পায়ন’ নামক শব্দটি আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জমানার পর থেকে। বামফ্রন্ট সরকার তাঁদের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর ‘শিল্পায়ন’-এর জন্য উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন বিতর্কে সেই প্রচেষ্টা আটকে যায়। বর্তমান তৃণমূল সরকার মাত্র তিন বছর ‘শিল্প সম্মেলন’ করছে। রাজ্য সরকার সূত্রে খবর গত দু’বছরে রাজ্যে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ আনুমানিক ৫ লক্ষ হাজার কোটি টাকা মাত্র। এমন একটা সময়ে আমাদের রাজ্যে ভারতে নিযুক্ত আমেরিকার বর্তমান রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বর্মা আসছেন। আপনাকে নতুন করে মনে করিয়ে দেব আমাদের এই বাংলা শিল্পে পিছিয়ে থাকলেও রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র,রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ রায়, রামকিঙ্কর, অমর্ত্য সেন এবং মাদার টেরেজার বাংলায় মেধার অভাব নেইবরেণ্য ব্যক্তিত্ব জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মেঘনাথ সাহা যে বাংলার ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন আমরা আজও সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছি। এই বাংলার মাটি এই বাংলার মেধা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা জানি প্রতিরক্ষা, বিমান, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সহ খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা কার্যত খুলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় শর্তও তুলে দেওয়া হয়েছে। এইসব কারণে ‘অ্যাপল’ সহ একাধিক সংস্থা নিজস্ব বিপণি খুলতে পারবে। এছাড়া ভারতে তাঁদের পণ্য তৈরি করতে পারবে। আধুনিক ভারতের এই মানচিত্রে বর্মা সাহেব পশ্চিমবঙ্গ থাকবে আশা করি। কারণ ১ জুলাই, ২০১৬, সালের প্রভাতি সংবাদ মাধ্যমে খবর ছিল, ‘’কলকাতা শহরের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বহু দিনের। ভৌগলিক অবস্থানের বিচারে এ রাজ্যের গুরুত্ব তাঁদের কাছে অনেক। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তায় তাঁরা মুগ্ধ। সুতরাং এ রাজ্য এবং রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার বার্তা দিয়ে গেলেন মার্কিন বিদেশ দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন।‘’
সেদিনের সকালের দৈনিক খবরের কাগজে আরও ছিল। নবান্নে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে শ্যানন বলেন,  ‘’ভারত মার্কিন সম্পর্ক এখন শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। কলকাতা নিয়েও মার্কিন প্রশাসনের দারুণ আগ্রহ রয়েছে। ১৭৯২ সালে এই শহরে প্রথম মার্কিন দূতাবাস তৈরি হয়েছিল।‘’
ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের এই বাংলার নিবিড় আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক আছেউচ্চশিক্ষিত বাঘা বাঘা সব বাঙালি আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের সান্নিধ্যে আমাদের এই বাংলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্র সহ নারী এবং শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার জন্য বাংলার আপামর মানুষ আপনাদের পথ চেয়ে বসে আছে। আপনারা স্মার্ট সিটি গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিন। পাশাপাশি উত্তর আধুনিক বাংলা গড়ে তুলতে আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে আপনাদের একান্ত প্রতিবেশি রাজ্যটির মনন গড়তে সাহায্য করুন ভারতে নিযুক্ত বর্তমান মাননীয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বর্মা মহাশয়, এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আপনাকে এবং নতুন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মহাশয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।                                                                              

    

Friday 9 December 2016

এপথ কাঙাল নয়

এপথ কাঙাল নয়
এপথ কাঙাল নয়। মুক্তি আছে বলেও থেমে থমকে গেছি সেদিন। মাছেরা বড় আদরণীয়। মাছেদের সংখ্যা গুনতে আছে নাকি? পিঁপড়ের লম্বা লাইন আজ হেথা থাকে। অন্যথা হলেই অন্য কোথাও চলে যেতে চায়। ক্লান্তিহীন ওই লম্বা ‘লঙমার্চ’ এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চায় এমন বাপের সাহসী পুত্তুর কজন খুঁজে পাওয়া যাবে? আজকের উত্তর বিশ্বায়ন ঝা চক চকে আধুনিক সভ্যতায়? বানরের গলায় মুক্তোর মালা দেখে অমন ‘মছলিবাবার’ মত করে চেয়ে আছ কেন? ভোগের জৌলুস চিনতে চাইবে না। তথাকথিত ত্যাগের কাহন শোনাতে চাইবে! তুমি ঘর কা না ঘাটকা হে নটবর? টিকিহীন সভ্যতার গল্পকথা স্বগর্বে চার ছয় হাঁকানোর মত করে আর কতদিন চটকাবে? এটা কি ‘তেঁতুলতলা যাবার ৩৩ নম্বর বাস? না ‘চেতলা যাওয়ার ডবল ডেকার’? কতদিন কলেজস্ট্রীটের শরবত খাওনি? কতদিন কফি হাউসে হুলো বেড়াল হয়ে বসতে পারছ না? ওই পাড়ার লিটলম্যাগ পড়তে চাইছ কেন? মাগগি গন্ডার ঞ্জান বাজারে তুমি কে হে? তর্পণ করার বই চেন না অর্থশাস্ত্রের ব্যকরণ খুঁজছ? ভালো জামার জন্য এখন গড়িয়া যাও না গড়িয়াহাট? মনে করতে পারবে নাটাটা করে ‘বাটা’ ভুললে কবে? যেদিন থেকে আট আঁটকুড়ে হলে? তোমার জামায় ঝোলানর জন্য ন্যাজ আছে? মানে টাই আছে? ধর্মতলার নিউ মার্কেটের সুখ্যাত এবং বিখ্যাত ‘নিউইয়র্ক’ দোকানটি আজ আর নেই। থাকলেই বা কি? তোমার কাছে সামাজিক কার্ড আছে? মোদীজীর মত চওড়া কাঁধ আছে? মমতাদির মত ভিন ভাষার রাজ্যে রাজ্যে ছুটে বেড়ানোর ‘হাওয়াই চপ্পল’ আছে? ‘সংসদে মুখ খুললে আমি ভূমিকম্প’ করে দেব।’ এটা আমার কথা নয় রাহুলজীর কথা। কি ভাবছ? রাহুলজী ছেলে মানুষ? এখনও এইসব ভাবার মত চওড়া বুক আর চওড়া মাথা তোমাদের আছে? কাজু খেতে চাইছ কেন? দিল্লিতে কাজু পাওয়া যায় না। দূষণ একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু আমি জানি ‘কেজরিবাল’জি একাই দিল্লির ‘কাজুকিসমিস’। এপাশে সীতারাম ওপাশে ডেরেক বাম। দুঃখিত। বাম মানে ব্যাথা বা যন্ত্রণা উপশম করার কথা কেউ বলছে না। যে মানুষটা বুদ্ধি উপচে সাধারণ ঞ্জানের ডালি সাজিয়ে কত সভাঘর ঘুরেছেন, সেই ব্যক্তিটি কম বয়সে কালো চুল সাদা করে ব্যাটিং করবেন না বোলিং করবেন ঠাউর করতে পারছেন নানা বস ঘাবড়ালে হবে না। সামিয়ানা ভাব্বেন সেটা নোট আকালেও থাকবে জোট আকালেও থাকবে। ছোট আমের জন্য পেতে পারেন আবার বড় বড় কমলালেবু, আপেল, ন্যাসপাতির জন্যও এক আনা দু আনা চিনে চিনে ঢুকে পড়লে কে আর আটকায় বস? ফকিরের কথায় দুঃখ কষ্ট পেলে মলিন হ্রদয় সাবলীল করতে সত্যি সত্যি তিন সত্যি প্লাস মাইনাস বাম লাগিয়ে নেবেন। কেমন জানেন? আমার অভিভাবক হুতোম বলে ‘সাদা গোলাপে কেউ রক্ত লাগালেই কি রক্ত লেগে যাবে? গোলাপ কাঁটা জড়িয়েই নিজেকে আলিঙ্গন করে।’ পাগলা হাওয়া কে দমকা খ্যাপাটে আগুন্তুক মনে হয় আমাদের। 

সারস্বত সাধনায় সাগরের ঢেউ মন্থর গতি থেকে সময়ে সময়ে একটা উচ্চতায় যায়। ধংস প্রলয় লয় সৃষ্টি। যেমন আমাদের সংসদ আছে। সংসদীয় আদব কায়দা মেনে বা চিনে সব সাংসদ চলতে চায়। কেউ ভোলেনি চলতি কা নাম গাড়ি। সেই গাড়ি চালাতে ডেবিট কার্ড লাগে না। ক্রেডিট কার্ড কি লাগে?                                                                  

Wednesday 7 December 2016

হাটকথা

হাটকথা
কি করে নোট আকালে হাটবি তুই?
কি করে জোট আকালে
খুঁজবি পথ?
জয়তু ‘রুপিয়া কার্ড’।
বাজার দেখে বাজার চিনে
হাটছে দেখ ওই ভিখারি,
পৌষ-পাবণের পালায় পালায়—
ছাদনাতলার মালায় মালায়—
কি করে নোট আকালে
হাটবি তুই?
কি করে জোট আকালে
খুঁজবি পথ?
‘কাক তাড়ুয়া’ দাঁড়িয়ে থাকে—
একলা মানুষ?
এই শহরে আর খুঁজব কত রঙ্গিন ফানুস?
ভাঙ্গছে বোধ! মূল্য কত?
‘বাবুঘাটে’ ঘুরছে দেখ পণ্য ফুল।
আর হেসনা, আর কেঁদনা—
পাবে পাবে অন্য পথে
আর ভেবনা ঘনঘোর এই সন্ধ্যায়,
কার্ড এসেছে বৌ বাজার বাবু বাজারে
যাত্রা গানের কাব্য গাঁথায়!
তবুও বলছি আমি, বলতে হয়
এই শহরে আর খুঁজব কত
রঙিন ফানুস?
কি করে নোট আকালে
হাটবি তুই?