Saturday 27 May 2017

মুক্ত সংস্কৃতি গঠনমূলক সাংবাদিকতা

মুক্ত সংস্কৃতি গঠনমূলক সাংবাদিকতা:

দেখুন ছাগলটা কেমন হেলে দুলে হাঁটছে দেখুন! যেন দিল্লির না না কলকাতার তুঘলকি রাস্তায় গদাই লস্করি চালে হাঁটছে। কেউ কেউ বলে বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। কে বা কারা কাগজ স্টেনসীল কেটে ছাগলটার গায়ে কালো কালিতে দেগে দিয়েছে। লেখা আছে তৃতীয় সন্তান। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে ওই ছাগলটাকে গোপাল ভাঁড়ের আত্মীয় স্বজন বাজাড়ে ছেড়ে দিয়ে যায়নিতো? অনেকের বক্তব্য ছাগলটা আসলে অষ্টম সন্তান। তবে হাসিম শেখ, রামা কৈবর্তরা জানে ছাগলটা আসলে চতুর্থ সন্তান। এই ধরণের চটুল তর্ক বিতর্ক না থাকলে বাংলা ভাষা থাকবে কেন? বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রাখলে দাদা ঠাকুরকে বড় প্রয়োজন ছিল বাংলার। সামাজিক উচাটান বলি অথবা সমাজজীবনের টানাপড়েন বাংলার মাটিতে আজ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ভীষণ প্রয়োজন। গোষ্ঠীভুক্ত সাংবাদিকতার উর্ধে উঠে উগ্র রাজনীতির মাটিকে আর প্রশমিত করতে না দিয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করতে অসুবিধা কোথায়? এই লেখার নাম হওয়া উচিত ‘মুক্ত সংস্কৃতির পৃষ্ঠা খুলুন গঠনমূলক সাংবাদিকতায়’।
অতীতের পৃষ্ঠা- ২০০৭ সাল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজ্য সরগরম। ষাট সত্তর দশকের মত আঁচ অনুভূত হচ্ছে। আমরা যারা মহাকরণের খবরে দায়িত্বে ছিলাম তাঁদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমিয়ে এনে গঠনমূলক সাংবাদিকতা কিভাবে করা যায় সেই কথা ভাবতাম। এই বছরের কোনও একটা সময় বিদেশী কোনও বাণিজ্য প্রতিনিধিদল মহাকরণে আসবেন। সঙ্গে সেই দেশের কোনও সরকারি কর্তা। একটি প্রথম শ্রেণির ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক আর আমি দুজনে আমাদের সংবাদ মাধ্যম থেকে দেওয়া নোটবুকে সময় লিখছি। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কখন এসছেন। শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন কখন এলেন। শিল্প সচিব আসার সময় এবং বিদেশী প্রতিনিধি দল যে সময় এলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক এবং যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন। আমাদের দুজনের সময় লেখার বিষয়টা একটি জনপ্রিয় বাংলা খবরের (২৪ x ৭) চ্যানেলের একজন মহিলা সাংবাদিক ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিকের কাছে জানতে চাইল, ‘’দাদা তোমরা সময় লিখছ কেন?’’ ইংরেজি কাগজের সাংবাদিক আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘’দীপেন্দুকে জিগ্যেস কর।‘’ মহিলা সাংবাদিকের থেকেও আমি প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতায় শেষ বেঞ্চের ছাত্র তাই আমি দ্বিধা করলাম। ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদকিকে বললাম, ‘’তুই বলে দে’’। আমাদের দু’জনের মধ্যে এরকমই সম্পর্ক ছিল। পরে সেই মহিলা সাংবাদিক আমার কাছে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়। সেইদিন সাংবাদিক বান্ধবী আমায় বলেছিল, ‘’দীপুদা তুমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে এত সংকোচ কর কেন? আমারও সাংবাদিকতায় কোনও ডিগ্রি নেই। তোমাদের মত অভিঞ্জতাও নেই।‘’ ওর এই কথা আজও মনে রেখেছি সাংবাদিকতা মাঠ ময়দান থেকে শিখতে হয়। তবেই সম্ভবত গঠনমূলক সাংবাদিকতার ভাষা রপ্ত করা যায়।
অতীতের পৃষ্ঠা- ২০০৮ সাল। নন্দীগ্রাম তখনও খবরের শীরোনামে। নন্দীগ্রামে স্কুল কলেজ বন্ধ। অনেকেই ঘরছাড়া। সে বছর মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কতজন দিতে পেরেছিল সরকারি কতৃপক্ষ বলতে পারবে। ওই  বছর উত্তর কলকাতার একটি প্রেক্ষাগৃহে নন্দীগ্রাম এবং রাজ্যের আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে সেমিনার ছিল। উল্লেখিত অনুষ্ঠানে সেদিন অন্ধ্রপ্রদেশের কবি ভারাভারা রাও এসেছিলেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আমার উপর দায়িত্ব পড়ল। আমি অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির হওয়ার পর আমাকে আলাদা করে সাজঘরে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম নন্দীগ্রাম থেকে দুই ভাই-বোন এসছে। তাঁরা ঘর ছাড়া। বাবা-মার সঙ্গে ক্যাম্পে আছে। মেয়েটি মাধ্যমিক দেবে ক্যাম্প থেকেই। ছেলেটি ক্লাস নাইনের ছাত্র। চেষ্টা করলাম ওদের কষ্ট, যন্ত্রণার কথা ‘বাইটে’ তুলে আনার। নন্দীগ্রাম কেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রশ্ন কম করে স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক ‘বাইট’ নিয়েছিলাম। এবং ওদের আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার প্রশ্ন ছিল। সচেতনভাবেই রাজনৈতিক প্রশ্ন করিনি। রাজনৈতিক প্রশ্ন করেছিলাম কবি ভারাভারা রাওকে। ভারাভারা রাওয়ের সাক্ষাৎকারটি ছিল ইংরেজিতে। নিয়মমত আমরা ‘ক্যাসেট’ মুখ্য প্রডিউসারের হাতে স্ক্রিপ্ট সহ দিয়ে দিতাম। ষ্টোরি ফাইল করার প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক পরে  আমার ডাক পড়ল ‘বিজনেস’ ডেস্ক থেকে। আমাদের চ্যনেলের ‘বিজনেস’ ডেস্কের তৎকালীন এডিটর ছিলেন অভিজিৎ ঘোষাল। তিনি আমায় বললেন, ‘’দাদা এত ভালো ষ্টোরি করলে কিন্তু কিছুটা খামতি রেখে দিলে কেন?’’ আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, ‘’কোন জায়গাটায় ভুল হয়েছে?’’
এডিটর বললেন, ‘’না না ভুল কিছু হয়নি। তুমি মনে হয় দু’ই ভাই বোনকে নন্দীগ্রামের রাজনীতির ময়দানে আনতে চাওনি। তবে একটা দু’টো রাজনৈতিক প্রশ্ন করলে ভালো করতে দাদাভারাভারা রাওয়ের সাক্ষাৎকার ভালো হয়েছে। আর তোমার কাছে আমি শিখলাম ছাত্র-ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ওদের ‘তুই’ সম্বোধন না করে ‘তুমি’ সম্বোধন করা ভালো।‘’
অতীতের পৃষ্ঠা-২০০৯ সাল। লোকসভার নির্বাচন আমাদের টিভি চ্যানেলে তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অরুপ বিশ্বাসের ফোন এল। তিনি তখনও এতটা কেউকেটা হয়ে ওঠেননি। মানে বলতে চাইছি অরুপবাবু এতটা দায়িত্ব পাননি। এই মুহূর্তে অরুপবাবু যথেষ্ট পরিণত নেতা এবং মন্ত্রী। আমিও মনে করি রাজনীতি করতে গেলে সমালোচনা হবে। সেদিন আমার ফোন নম্বরে ফোন করেছিলেন তিনি। আমাকে অনুরোধ করলেন, ‘’আগামী কাল রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের রোড শো আছে। আমরা চাইছি আপনি কভারেজ করুন।‘’
আমি বললাম, ‘’আপনার প্রস্তাব শুনে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। আমি যেতেই পারি তবে আপনাকে চিফ রিপোর্টারের সঙ্গে একটু কথা বলে নিতে হবে।‘’
উত্তরে অরুপবাবু বলেছিলেন, ‘’আগেই সেই কাজ করে রেখেছি। অনুগ্রহ করে যদি আপনি কভারেজ করেন।‘’
পরেরদিন আমি বিকেল পৌনে পাঁচটায় লর্ডসের মোড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সঙ্গে তৃণমূল সমর্থক ক্যামেরা পার্সন। দিদির আসার কথা পাঁচটায়। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা জানে দিদি আসবেন একঘন্টা পরে। সেই কারণে তখনও টিভি চ্যানেল এবং প্রিন্ট মিডিয়ার কোনও সহ নাগরিক এসে পৌঁছয়নি। আমাদের অবাক করে দিয়ে ঠিক বিকেল পাঁচটায় এসে পৌঁছেলেন তৃণমূলনেত্রী নিজের গাড়ি থেকে নেমে একটি ম্যটাডোর ভ্যানে উঠেই রওনা দিলেন। আমাদের চ্যানেল আগে আসার জন্য আমরা বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ ছবি এবং মুহূর্ত পেলাম। দীর্ঘ দু’তিন ঘণ্টা একটানা ওই অঞ্চলের অভিজাত এলাকা, বস্তি অঞ্চল আমরা ঘুরলাম। আমি ফিরে এসে স্ক্রিপ্টে লিখেছিলাম ‘তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সময়কে মূল্য দিতে শুরু করলেন। এদিনের রোডশোয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক বিকেল পাঁচটায় লর্ডসের মোড়ে এসে পৌঁছেছেন। আলুভাতে বাঙালির নিয়ম এবং সময়কে অবঞ্জা করাটা আজ ‘মিথে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত।’’ খবরের প্রয়োজনেই এই বাক্য বন্ধ আমাকে সাজাতে হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক হবে উল্লেখ করা, এই খবর দেখার পরে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক এবং কাউন্সিলর ফিরহাদ হাকিম আমাকে অনুরোধ করেছিল ওর বিধায়ক এলাকায় দিদি চার পাঁচদিন পরে প্রচার করবেন আমি যেন ওই কভারেজটা করেদি। যদিও ‘ববি’র আয়োজিত ওইদিনের কভারেজ আমার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কাজের চাপে। এবং মানসিক চাপে, কারণ তখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় পাঁচ-ছ মাসের বেতন বকেয়া ছিল।  জনান্তিকে বলে রাখি বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন সময় এবং নিয়মের বিষয়ে আজও রাজ্যের রাজনীতিবিদ সহ সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে উদাহরণ।
আমার মত ছা-পোষা কলমচির ‘ফকিরের ঝোলায়’ কত আর থাকবে? যাদের অভিঞ্জতা বেশি তাঁরা আরও বেশি বেশি বলতে পারবেন। তিনটে তিন রকমের উদাহরণ টেনে আনার কারণ কলকাতায় তথা এই রাজ্যে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা আজও ছাগলের তৃতীয় সন্তান? আক্ষেপ করেন অনেক প্রবীণ সাংবাদিক। যে কোনও কারণে হোক কলকাতা প্রেস ক্লাবে গত দু’ই দশক সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য গঠনমূলক কোনও বিনোদন বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল না। যেটুকু হত সেসব নম নম করে নিয়ম রক্ষার অনুষ্ঠান। সম্প্রতি কলকাতা প্রেসক্লাবে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের গান এবং সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠে সপরিবার উপস্থিত থাকতে পেরে কলকাতার প্রেসক্লাবকে নতুন মাত্রায় পাওয়া গেল। ১৪ মে বৈশাখ মাসের শেষ প্রহরে ঘুমিয়ে থাকা বাংলা তথা ভারতীয় চেতনাকে জাগিয়ে দিলেন সেদিন দুই শিল্পী। বাড়তি মাত্রা ছিল বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের এক প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ। দুই বাংলার মিলনে সেদিন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শঙ্খ ঘোষ আমাদের হাত ধরে পাশের বাড়ি চিনিয়ে দিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সফিকুল রহমান সেদিন বলেন, ‘’আমরা আজ গর্বিত কলকাতা প্রেসক্লাব আমাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই বাংলার সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা না থাকলে আমরা আজকের বাংলাদেশ গড়তে পারতাম না।‘’
খুব অবাক হয়েই বলতে হয় জানেন? বাচিক শিল্পী সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঙ্গীত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত দু’জনেই আবেগ ভেঙ্গে বেড়তে পারছিলেন না। তাঁদের দু’জনের বক্তব্য ছিল আমাদের অনেকদিনের ইচ্ছে, যদি প্রেস ক্লাবে একটা অনুষ্ঠান করা যায়। স্বাগতালক্ষ্মী মনে করতে পারলেন খুব সম্ভবত উনত্রিশ বছর পর তিনি প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠান করছেন। এদিন ১৭ বছর পর আমি দেখা পেলাম আমার বন্ধু অমলদা। সেই অমলদার বন্ধু দেবঞ্জন চক্রবর্তীর। দেবাঞ্জনদা এক সময় ‘দূরদর্শন কলকাতা’ কেন্দ্রের অধিকর্তা (নিউজ) ছিলেন। আমি স্ট্রিঞ্জারের চাকরি চাইতে গিয়েছিলাম। ওইদিন প্রেসক্লাবে দেবাঞ্জনদা ‘অ’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন হাতে ধরিয়ে দিয়ে পড়ার জন্য বললেন। তাঁর আমলাসুলভ মেজাজে। যে মেজাজটা আমরা আশির দশক থেকে চিনি। কফি হাউসের আড্ডায়।
‘’পেছনে পেছনে ধায় পুরোনো সময়/ ধরতে চায় পিষে।/ ভুলে গেছি দেখানোর সব অভিরুচি।/ নেমে আসি পথের ধুলোয়, দেখি/ এখনও প্রতীক্ষা নিয়ে বসে আছে অবহেলাভরে ফেলে-যাওয়া/ অবসাদে ঘেরা ওই মুচি।‘’ (বর্তমান, শঙ্খ ঘোষ)          
আমরা ছাপোষা সাংবাদিকরা আশা করব আগামীদিনে নিয়মিতভাবে বাংলা নববর্ষ, ইংরেজি নববর্ষ, বড়দিন, ইদ, শুভ বিজয়া এবং বৌদ্ধ জয়ন্তিতে এই ধরণের অনুষ্ঠান হবে। বাংলার আকাশে অনেক তারা প্রজ্বলিত হোক।  
ভারতের মত বৃহত্তর গণতন্ত্রে গোষ্ঠী রাজনীতির উর্ধে উঠে গঠনমূলক সাংবাদিকতার পৃষ্ঠা খুলতে গেলে মুক্ত সংস্কৃতির চর্চা আমাদের করতেই হবে। ‘আয়ারাম গয়ারাম’ রাজনীতির যেমন কোনও ভবিষ্যৎ থাকে না। উল্টোদিকে বলা যায় ‘আয়ারাম গয়ারাম’ সাংবাদিকের বর্তমান থাকে না। খুব সম্ভবত এই কথা মাথায় রেখেই কি আমরা পেলাম একদিনের ‘ডিজিটাল সাংবাদিকতা’-এর কর্মশালা? ২০ মে ‘প্রেসক্লাব কলকাতা’ এবং ‘পাব্লিক রিলেশনস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ কলকাতা চ্যাপ্টারের যৌথ উদ্যোগে হল এই কর্মশালা। এবং অবশেষে কলকাতার সাংবাদিকরা এই সেদিন পেল ‘মাঠে ময়দানে’ কাজ করার জন্য ‘প্রেস’ নামাঙ্কিত হলুদ জ্যাকেট। তবুও কি রাজনীতির দাদা এবং পুলিশের লাথি-লাঠি থেকে আমরা বাঁচব? অনিশ্চিত সামাজিক পেশাজীবীর দল? পাঠক আপনারা কি বলেন?  মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলার সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকরাই পারে মুক্ত সংস্কৃতির প্রচার এবং প্রসার করতে। তাঁদের পাশে থাকুন। আপনার দলের সমর্থক সাংবাদিক এবং আপনার বিরোধী দলের সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কর্মজীবনের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে পারেন আপনিই।                
                                                                              

Saturday 13 May 2017

হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাত যাও

হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাৎ যাও: 

সাগর ছুঁয়েছি সেই কত কম বয়সে। আশির দশকে। দূর থেকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কি ছিল? শেকসপিয়র (খুব ভয়ে ভয়ে), ইলিয়ট (আরও ভয়ার্ত ছিলাম), জঁ পল সাত্রে, মার্ক টোয়েন, মঁপাসা, লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, নোয়াম চমস্কি, পাবলো নেরুদা, হলিউড, স্পিল বার্গের পৃথিবী, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড, টেমস নদী, বার্মিংহাম প্যালেস। এইখানে কোনও একদিন থামতে হয়েছিল। তারপর গঙ্গা, খালবিল, নদনদী, ক্যানেল, উপনদী, ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।‘ এইখানে থেমে ছিলাম একদিন। মান গেছে। মর্যাদা শব্দ আগামীতে বিলুপ্ত হবে হয়ত।  আলো গেছে। তবুও সংসার আছে। থেকে গেল গাছের নাম জানা অজানা পাখিগুলি। আজও আছে সারি সারি পিঁপড়ের দল, এই বাড়িতে যেদিন প্রথম এলাম সেদিন থেকেই ওরা আছে। এই দেওয়ালে, ওই দেওয়ালে, ওরা ওদের মত থাকে। আমাদের কোনও বিরক্ত করে না। আমরাই কখনও অমানবিক প্রশ্রয়ে ওদের মিছিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। কয়েকজন কুটুস করে কামড়ে দেয়। ব্যাথা প্রায় নেই বললেই চলে। ওই একটু চুলকুনি থাকে। পাছু চুলকতে চুলকতে আমার পাড়ার এক পাগল প্রতিদিন মেহের আলির মত করে নয়। পাগলটা নিজের মত করে বলে ‘কেউ তফাৎ যাবে না। কোনও বাপের ব্যাটা আমার কষ মুছতে আসবে না। কোনও সভ্যতা আমার লেংটি খুলতে চাইবে না। কেন আমি পাগল? হে হে!কেউ তফাৎ যাবে না। আমি গণেও আছি। তন্ত্রেও আছি। হে! হে!। কেউ তফাৎ যাবে না।’ ছাদ থেকে মাঝে মাঝে লোকটাকে দেখি। ছাদে আমি নিজেও বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। গাছে, জানলায়, ঘুল ঘুলিতে ‘বক বকম’, ‘বক বকম’ নিঝুম দুপুরে কারা হাতছানি দেয়। যদিও ওরা পুরুষ নয়। এই হাতছানি আমাকে অসামাজিক করতে চেয়েছিল। অথবা তথাকথিত অভিজাত সমাজের চুঁইয়ে পড়া সৌজন্য টেনে নিতে চায় ‘নিঝুম’ আলোর কোনও এক অচেনা ঘুলঘুলিতে। সে অন্য সখা সখির গঙ্গার ধারের গল্প। আজ থাক। লোকটাকে ছাদ থেকে একদিন দেখছি। কাকে ডেকে পাগলটা বলছে, ‘’এই যে শুনুন ভাই আপনি প্রবর্তক। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। কারও বাপের জমিদারিতে গোলাম খাটেন নাকি? আমি টিকটিকি চিনি। আমার বয়স কত জানেন? গাই বলদ নিয়ে আমি মাঠে মাঠে ঘুরেছি। কাস্তে দিয়ে ধান কেটেছি। হাতুড়ি দিয়ে নাকে মেরেছি! কেন জানেন? এই দেখুন আমার নাকের উপর দু’টো শক্ত পোক্ত চুল আছে। বাল নয় চুল আছে। আমাদের বাঙালি কর্তাদের মত দু’-দু’টো শিং আছে। কেউ, কেউ তফাৎ যাবে না। হে হে।‘’
গোবেচারা বাসন্তীর একজন সাধারণ মানুষ সে আর কি বলবে? অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পাগলটা তখনও বকে চলেছে। ‘’হাট্টিমা টিম টিম, তাঁরা মঞ্চে পাড়ে ডিম। ওদের এসইউভিতে দু’টো করে সিং। তারা হাট্টিমা টিম টিম। তাঁরা মঞ্চে পাড়ে ডিম। হে হে। কেউ তফাৎ যাবে না।’’ রিক্সা ওয়ালা হোক বা সে যেই হোক কেউ ঘাটায় না লোকটাকে।      
পাগলটা একদিন আমায় রাস্তায় ধরল। হঠাত জানতে চাইলে আমার বাড়ির কথাবললে, ‘এই লোকটা তোর বয়স কত? আমি গাছের বাদিকে থাকা পাকা আম নই। কাঁচা আমতুই যে বাড়িতে থাকিস সেই বাড়িতে তুই ছ-সাত বছর আগে যখন এলি তোর সঙ্গে দু’তিনটে ইঁদুর এসছিল। ইঁদুর দু’টো অনেকদিন ছিল। তোকে পাহারা দিত ওরা। হে হে আমি জানি। আমার নেংটি কেউ খুলবে না। ন্যাংটার আবার বাটপাড়ের ভয়? বল আমি ঠিক বলছি?’
উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়নি। উত্তর দিলাম না। লোকটা আবার বলল, ‘তোর এই বাড়িতে কয়েকটা চামচিকে আছে। সন্ধ্যের সময় ওরা আসে। ছাদের ঘুলঘুলিতে থাকে। কিরে নেংটি পড়া লোকটা ঠিক বলছে? কেউ তফাৎ যাবে না। হে হে।’
লোকটা তারপর চলে গেল। হলুদ দাঁত, একটা ময়লা প্যান্ট, গায়ে একটা বড় সাইজের জামা। এক পায়ে একটা মহিলাদের চটি, অন্য পায়ে পুরুষ ব্যবহার করে এমন কালো জুতো। দু’ পায়েই দামি মোজা। মাথা ভর্তি কালো চুল। দাড়ি গোফ নেই। ধব ধবে ফর্সা গায়ের রঙ। কিন্তু লোকটা আমাদের ভাড়া বাড়ি নিয়ে যা যা বলে গেল সব ঠিক। আমি যখন এই ভাড়া বাড়ির তিন তলায় এলাম তার কিছুদিন পর দেখলাম দু’তিনটে ইঁদুর অবাধে নেচে বেড়াচ্ছে আমাদের দু’ই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে। পা তুলে তুলে নাচতআর মুখে ভেংচি কাটত। অনেকটা টিভিতে দেখা জেরির মত। শারিরীক ভাষা ছিল আমাকে কিচ্ছুটি করতে পারবিনে। তুই যতই লাথখোর হ। এখন মনে হচ্ছে ওই পাগলটার কথাই কি ইঁদুর দু’টো আমায় বলত? কেউ তফাৎ যাবে না। আচ্ছা বলুনতো তফাৎ কেন যাব? কেউ তফাৎ যায়? এমন বোকামো কেউ করে? মেহের আলি তফাৎ যেতে বলেছিল কয়েক যুগ আগে। সেই বাবাঠাকুরও নেই। তবে আর তফাৎ কেন? হলুদ সাংবাদিকতায় এমনটা হয়ে থাকে। এই সময় কি আর সম্ভব? ‘ফেক নিউজ’ করলেই ‘টম-জেরি’ ছুটে আসবে না? কেউ জিভ ভেংচি দেবে। কেউ কান দুলিয়ে দুলিয়ে ব্যঙ্গ করবে। ফড়িং-এর মতই ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ কেউ করে? আত্মার সঙ্গে আত্মীয়তা থাকলে তবেই না সাংবাদিক?
১৯৭৮ সাল আমি রামপুরহাট কলেজে পড়ি। জেলার সাপ্তাহিক কাগজে সাংবাদিকতা শুরু করেছি। কয়েক মাস পরে হাতে ‘সাপ্তাহিক চন্ডিদাস’ পত্রিকার ‘প্রতিনিধি’ কার্ড পেয়েছি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের গরম, তাও আবার বীরভূমের গরম। সকাল থেকে ‘লু’ বইছে। পাড়ার একটি ছেলের মুখে খবর পেলাম, কোঠাতলার আম বাগানে একটা লোক গলায় ফাঁস দিয়ে আম গাছে ঝুলছে। অনেক লোক দেখি এসছে। তখন হার্ড নিউজ বা সফট খবরের কি আর বুঝি? তবু কয়েক কলম কালি দিয়ে লেখা যাবে শুনে কাধে ব্যগ ঝুলিয়ে ‘রানার’ সাংবাদকি হয়ে পৌঁছে গেলাম ‘কোঠাতলা’ নামক বিখ্যাত আম বাগানে। দূর থেকেই দেখলাম পুকুর পাড়ের আম বাগানে অনেক লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আসতে আসতে ভিড় ঠেলে ঝুলন্ত দেহটার সামনে গেলাম। দু’একজনকে জিগ্যেস করলাম লোকটা কোন গ্রামের কেউ চেনে কিনা। হঠাৎ মাটিতে বসে থাকা একটা লোক আমার হাত ধরে টেনে বলল, ‘’এই ব্যাটা তুই খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছিস। বস এখানেআমি তোকে থানায় নিয়ে যাব।‘’
আমি রীতিমত ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেছি। তবে বুঝেছি লোকটা পুলিশ। সাদা পোশাকে মাটিতে বসে হাঁড়িয়া  খাচ্ছে। আর মাছি তাড়াতে তাড়াতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে খিস্তি করে বলছে, ‘’উঃ উঃ কাল রাত থেকে আছি আমি। এটা খুন। এই ছেলাটা খুন কোরাছে‘’ লোকটার মুখে বড় বড় মাছি ভন ভন করে উড়ছে। ডান হাতের চেটো দিয়ে মাছি ঠোঁট থেকে সরাচ্ছে। আবার বিড়িও খাচ্ছে। আমি ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেলি এমন অবস্থা। কোঠাতলা এমনিতেই আমাদের কাছে ভয়ের জায়গা। রাত বিরেতে তেম কেউ তখন যেত না। সেই পুকুর পাড়ে আম বাগান। আম গাছে মৃতদেহ ঝুলছে। আত্মহত্যা না খুন? মাতাল পুলিশকর্মী আমাকে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখল। আমাদের পাড়ার কেউ একজন আমাদের বাড়িতে এবং বন্ধুদের খবর দিয়েছিল। তাঁরা আসাই আমি কিছুটা সাহস পাই। কিছুক্ষণ পর একজন সাব ইনস্পেক্টর দু’জন কনস্টবল, একজন হোমগার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।  মাতাল পুলিশটাকে আর আমাকে পুলিশ অফিসার গাড়িতে উঠতে বলে। মনে মনে তখন বলছি ‘সবার উপর বাবা-মা সত্য তাহার উপর নায়’। আর সাংবাদিকতা কে করে? পেট ভর্তি খাবার জোটেনা কব্জির মোচড়  মাপার অত কালি কোথায় পাব? কম বয়সে বেপরোয়া ব্যপারটা থাকে? কিন্তু পুলিশের হয়রানি? ভয়তো হবেই। থানাই গেলাম। বড়বাবুর ঘরে মাতাল পুলিশ এবং আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। বড়বাবু তার মাতাল পুলিশকে জিগ্যেস করলেন? ‘’কটা হাড়ি শেষ করলে পটল?’’
‘’আঞ্জে স্যার তিনটা! আমি স্যার হোমগার্ড। কতটাকা মাসহারা পাই স্যার বোলেন! তবে খুনিটাকে ধরতে পেরাছি।‘’ পটল হাতের তালু দিয়ে ঠোটের থুথু মুছে নেয়। 
‘’ছেলেটা যে খুনি তুমি কি করে জানলে? কম বয়সের সাংবাদকিও হতে পারে।’’
‘’হ্যা পারে স্যার। তবে কিনা সাংবাদিকেরতো কার্ড থাকে বুলে জানি।‘’
থানার বড়বাবু আমার নাম ধরে ডেকে বললেন, ‘’দীপেন তোমার ‘করেসপন্ডেন্ট কার্ড’ আছে না?’’
‘’মনে মনে বললাম ‘সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নায়’, পকেট থেকে কার্ড বার করে বড়বাবুকে দেখেয়ি বললাম, ‘’আছে স্যার’’
মাতাল পুলিশ কি করল জানেন? আমাকে সামনে থেকে জাপটে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘’এই আপনার কাছে গড় হুং বুলছি। কোঠাতলা ভূতের দিব্যি করে বুলছি খোকাবাবু আমার ভুল হুং জেলছে।‘’ শুধুই মুখে বলা নয়। আমার হাঁটুর কাছে দু’টো হাত জোড় করে প্রায় পা ছুঁয়ে ফেলে। আমি কোনরকমে ছিটকে সরে গেলাম। ২০১৭ সালের পাগলটার কথা আজ ওইদিনের সঙ্গে মনে পড়ল কেউ তফাৎ যায় না। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৭ সালের বৈশাখ মাসের শেষ হয়ে আসছে। গরমের প্রখরতা আরও আরও বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ আজ নতুন সভ্যতার কথা বলছে। সাংবাদিকতার ভাষা বদলে গেছে। উত্তর বিশ্বায়ন এক মেরু দু’ই মেরু বলে কিছু নেই। সীমান্ত প্রাচীর কাকে বলে সেসবও আজ ‘নীল আকাশের নীচে’। স্পীলবার্গ আমাদের ডাইনাসোর সভ্যতা চিনিয়েছেন আধুনিক ‘সিলিকন ভ্যালি’-এর প্রযুক্তির সাহায্যে। ‘পথের পাঁচালি’র রাস্তা শেষে এখন ‘বাহুবলি’-এর জয়যাত্রা। নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার উন্নত দেশেই হোক বা উন্নয়নশীল দেশে সময়ের দাবিতে দেশ এবং প্রদেশের উন্নয়ন করবেই। সেই উন্নয়ন কতটা বেকার সমস্যা বা কর্ম সমস্যা বাড়াতে পাড়ছে সেটা বুড়ো হুতোম বলতে পারবে না।
আমার আলো দেখার নিষেধাঞ্জা ছিল। এখন কেটে গেছে। তাই মানবতা চিনতে বুঝতে মাঝে মাঝে বেড়তে হয়। উত্তর বামফ্রন্ট বাংলার সভ্যতায় কলকাতা বদলে যাচ্ছে। আলোয় আলোক বার্তা। নতুন নতুন বিতর্কে ট্রেন, বাস, রাস্তা, কফি হাউস, মল, পাব, কফিবার সর্বত্র তুফান ছুটছে। আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বড় ক্লাবটার কাছে যেতেই দেখলাম পাগলটা ক্লাবের লনে বসে কলাপাতা হাতে নিয়ে ভাত খাচ্ছে। ওকে দেখলেই কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে লোকটার কথা শোনে। খুব মজার মজার কথা বলে। তাই না? আজ আমিও কিছুটা দূরতব রেখে ওর কথা শুনছিলাম। লোকটা বলছে, ‘’এই দেখুন আমি কলা পাতায় ভাত, ভাঙ্গা ডিমের সব্জি খাচ্ছি। হাত দিয়ে খাচ্ছি। আপনারা পারবেন? পারবেননি। আমি ডিম পাড়ি না। বাবুরা ডিম পাড়ে। আমি কলাপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই, শালপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই। পদ্মপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই। ঘাসের গালিচায় বসে হাত দিয়ে ভাত খাই। আমার দেশ ছিল মুর্শিদকুলী খাঁর দেশে। নবান্ন হত। আজ এই শহরে নবান্ন হয়? হে হে।
‘নবান্ন’ নামটা শুনতেই কেন জানি মনে পড়ল বিজন ভট্টাচার্য, গননাট্য সঙ্ঘ, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং আরও কত নাম। কত নাটক, কত গান। কত রক্ত। স্বাধীনতা। কথা বলার স্বাধীনতা, সংস্কৃতির স্বাধীনতা। মসি ছেড়ে অসির স্বাধীনতা। বাম ঘরানার সংগ্রাম। দেশ স্বাধীন করার কংগ্রেসের সংগ্রাম। কংগ্রেস নামক মঞ্চের অক্লান্ত সংগ্রাম। আজ সেই ‘নবান্ন’ রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৪ সালে আমি প্রথম এই বাড়িতে যাই। বাড়িটির কাজ তখনও শেষ হয়নি। ‘জি নিউজ’ এর একজন প্রতিনিধি হয়ে খবর করতে গিয়েছিলাম। আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সিপিএম দলের হাওড়া কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তী। স্বদেশ চক্রবর্তী হাওড়া পোর্ট ট্রাষ্টের চেয়ারম্যানও ছিলেনওই বাড়িটি করার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলাহাট স্থানান্তরিত করে নতুন বাড়িতে নিয়ে আসা। সেটা সম্ভব হয়নি। পরে ২০০৮ সালে আমি আবার বার কয়েক ‘নবান্ন’ নামক প্রশাসনিক বাড়িতে যাইবামফ্রন্ট সরকার আমলে। কলকাতা টিভির সাংবাদিক হয়ে। যতদূর মনে করতে পারছি তৎকালীন বামফ্রন্টের শিল্প এবং পরিকল্পনামন্ত্রী নিরুপম সেনের পরিকল্পনা ছিল নতুন গড়ে ওঠা বহুতল বাড়িটিতে শিল্প দফতর নিয়ে যাবেন। সেটাও আর সম্ভব হয়নি। আরও মনে করতে পারছি ২০০৮ সালের মাঝামাঝি কোনও এক সময়ে নিরুপমবাবু আমাকে ‘বাইট’ দিয়েছিলেন। তার শীতল এবং ভদ্রস্বভাবে আমাকে ‘বাইট’ দিয়ে কৌশলী এবং কুশলী ভাষায় বলেছিলেন ‘টাটা গোষ্ঠী’ সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাবে। এই বাইটের পরে সেদিন সর্বভারতীয় মিডিয়া মহাকরণে ঝাপিয়ে পড়েছিল। উল্লেখ করা যায় ওইদিনের কিছুদিন পরে শিল্প দফতর ক্যামাক স্ট্রীটের বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়।
সাগর ছুঁয়েছি কত কম বয়সে। গঙ্গা ছুঁয়েছি সৌজন্যের পবিত্রতায়। সংস্কৃতির পবিত্রতায় গঙ্গার ধারে বড় রাস্তার উপর নবান্ন। উন্নয়ন আছে। সংস্কৃতি আছে। কিন্তু তবুও কি যেন হারিয়ে গেছে। সামাজিক শিক্ষা? সামাজিক সৌজন্যবোধ? কি হারিয়ে গেছে? কাকে জিঞ্জেস করব? হুতোম? না হুতোম এ বিষয়ে মুখ খুলবে না। ওই পাগলটাকে? সে অনেক কথা বলে। কোনটা ঠিক? রবিবাবু কি বলছেন? ‘জাপান-যাত্রী’ বইয়ে অনেকগুলি রচনার বিশ্বপথিক এক জায়গায় বলছেন, ‘’জগতে যা-কিছু মহান তার চারিদিকে একটা বিরলতা আছে, তার পটভূমিকা (ব্যাকগ্রাউন্ড) সাধাসিধে। সে আপনাকে দেখবার জন্যে আর কিছুর সাহায্য নিতে চায় না। মানুষ সংসারের সঙ্গে বিশ্বের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে বলেই বড়ো করে প্রাণের নিশ্বাস নেবার জন্যে তাঁকে সংসার ছেড়ে বিশ্বের দিকে যেতে হয়। এত বড়ো অদ্ভুত কথা তাই মানুষকে বলতে হয়েছে-মানুষের মুক্তির রাস্তা মানুষের কাছ থেকে দূরে।‘’            
আরো আরো দাও প্রাণ। আরও দাও কথা বলার স্বাধীনতা। দাও শিক্ষার অধিকার। স্বাস্থ্যের অধিকার। আরো আরো দাও তথ্য জানার অধিকার। মুক্ত সংস্কৃতির অধিকার। বেঁচে থাকার অধিকার। মানবতার অধিকার। হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাত যাও।                             
                                                   

Monday 8 May 2017

মহুল ফুলের কথাকলি

মহুল ফুলের কথাকলি: 

কৃষ্ণপাথর তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ?
কালো ম্যাঘেদের জল লয় উখানে,
কৃষ্ণপাথর কৃষ্ণপাথর তুমহার
চোখের জলে স্বপ্নের খাদানে—
ভাসছে দ্যাখ ওই মহুল ফুলের কাথাকলি!
বুড়ো হুতোম এল দ্যাশে, এই কৃষ্ণ তিথির বারবেলায়।
হাটি হাটি পায়, নলহাটি বাড়ি তার।
শুকনো গাছটার কোষ থেকে
আজও চুঁইয়ে চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়ছে
গন্ধহীন কৃষ্ণ রক্তের ধারা!
কৃষ্ণপাথর তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ?
ঘুম পাথরের দ্যাশে.........?
তোমার এক চোখে সূর্যাভিমান!
কৃষ্ণ পাথর তোমার অন্য চোখে দেখি বৃক্ষালোক।
হৃদয় নিঙড়ানো যন্ত্রণার শব্দ তুমি শুনেছ?
হ্যা সমাজকে বলছি, কাজ দাও কাজ—
অক্লান্ত শ্রম দাও ক্লান্ত হয়ে ঘুমোব,
শুন্য মাথা নারীর আলিঙ্গন চায়, চুম্বন চায়,
নারী যতই পর হোক, সেতো দেবদারু গাছের মত।
তার ভোগ শেষে পাতা ফেলে সে ঋজু হয়!
ভালোবাসাকে গোপন কোষে লালন করে......।
শুন্য মস্তিস্কের পুরুষকে কাছে টানতে  চায়!
আমি সমাজ চিনি-নারী অবলা,
যত দোষ পুরুষের, অজানা চাঁদের কলঙ্ক,
আর কতদিন নিজের সঙ্গে যুঝব?
বাড়ি আছে ঘর নেই, মাঠ আছে ঘাস নেই,
বন্ধু আছে মানুষ নেই, গান আছে সুর নেই।
সমাজ আছে, আরও সামাজিক হব!
এই জমিতে চাষ হয় না।
দিকে দিকে চতুর্দিকে পাহাড় ঘেরা আকাশসীমা,
সূর্য আলো, চাঁদ আলো......
আঁধার মাঠে আবাদ হয় না।
তবুও গোধূলিবেলার পাখিরা গান গায়।
আড়ম্বর মেঘেদের অনাড়ম্বর সৌজন্যে,
সাজ সন্ধ্যায় শাঁখের আওয়াজ,
আজ না হোক অনাবাদী জমি—
একদিন তোমার অহল্যা দুধেলা বুকে
সন্তানের ঠোঁট ঠেকাবো।
আজকের সন্তান কালকে জানি সুঠাম পুরুষ হবে,
ট্রাক্টরের অনেক ফলার সঙ্গমে.........
তুমি কি মাতৃদুগ্ধ দেবে না?
এসো পাহাড়ের অন্ধকারকে ভ্রুকুটি দেখাই।
এসো মেঘলা আকাশকে বলি,
প্রকৃতির পরিবার তুমি কেন ভেসে ভেসে যাও?
আমার ঘরে এসো আমাকে ভেজাও,
আবাদী দুগ্ধের প্রশ্রয়ে।
আমার স্বামী আমাকে আলিঙ্গন করেছে।
আমার সন্তান দুধের অপেক্ষায়,
আমার সমাজ, তোমার সমাজ
এই দিনেইতো অনেক পাখির গানের আওয়াজ।        
  
 

Wednesday 3 May 2017

স্বতন্ত্র ভারত, উন্নয়ন এবং নতুন গণতন্ত্র

স্বতন্ত্র ভারত, উন্নয়ন এবং নতুন গণতন্ত্রঃ

মুখবন্ধঃ এই লেখা ২৫ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল। কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে আমার ব্লগে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। সময়ের নিয়মে পরিবর্তিত রাজনীতি এবং সমাজ তার ছন্দে নিজেরমত গড়িয়ে চলেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে নকশালবাড়িতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মধ্যাহ্ন ভোজনের  খবর নিয়ে সারা দেশ তোলপাড় হয়েছে। আজকের আপডেট নকশাল বাড়ির রাজু মাহালি এবং তার স্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। রাজনীতির এই দোলাচল নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এক বাঁকে এসে দাঁড়াল কি? একুশ শতাব্দীর সমাজ-রাজনীতির ভাষা কি বদলে যাচ্ছে?                 
২৫ এপ্রিল, ২০১৭ বিজেপি দলের সভাপতি অমিত শাহ আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এলেন। আগে থেকে করে রাখা সব ব্যবস্থামত সটান চলে গেলেন সত্তর দশকের সশস্ত্র বিপ্লবের ধাত্রীভূমি ‘নকশাল বাড়ি’। উত্তরবঙ্গের একসময়ের অখ্যাত গঞ্জ। নকশালবাড়ি এই  নামটি বামপন্থী আন্দোলনের (অতিবাম) আঁতুড়ঘর বলে কথিত ভারতবর্ষ এবং সারা বিশ্বে। সেখানে গিয়ে তিনি ভারতের জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে আক্রমণ করলেন নকশাল বাড়ির সশস্ত্র আন্দোলনের লাইনকে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর অমিত শাহ ওইদিন বলেন, ‘’নকশালবাড়ির অবস্থানগত গুরুত্ব অপরিসীম। হিংসাত্মক নকশাল আন্দোলনও এখান থেকে শুরু হয়েছিল। তাই এখান থেকেই বাংলা জয়ের অভিযান শুরু হল।‘’ কলকাতায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি সভাপতি আরও বলেন, ‘’গণতান্ত্রিক দেশে আমার সব জায়গায় যাওয়ার অধিকার আছে।‘’
  জনান্তিকে বলে রাখা ভালো নকশাল বাড়ির সশস্ত্র আন্দোলনের লাইনকে তৎকালীন চিনের শীর্ষ নেতৃত্ব অনুমোদন করেননি। এবং সশস্ত্র আন্দোলনের লাইনের তাত্বিক দুর্বলতা ইতিহাসবিদ প্রমোদ সেনগুপ্ত তার ‘বিপ্লব কোনপথে’ বইয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। এছাড়াও নকশাল বাড়ির সশস্ত্র বিল্পবের লাইন যে ভুল ছিল সে কথা কলকাতার গোপন মিটিঙে ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের তৎকালীন খ্যাতনামা শীর্ষ নেতা নাগি রেড্ডি প্রথম উল্লেখ করেন। বিতর্ক চলা কালীন কমরেড নাগি রেড্ডি নিজের বক্তব্য বলে সেদিনের সভা ছেড়ে চলে আসেন। সেদিনের সভাটি ছিল খুব সম্ভবত ‘এ আই সি সি সি আর’ গঠনের পরে সিপিআই (এমএল) গঠনের প্রাক বৈঠক। সাল তামামি এখানে উল্লেখ করলাম না। কাকতালীয় হলেও সত্যি। বিজেপি সভাপতি যেদিন পশ্চিমবঙ্গে এলেন তার আগেরদিন ছত্তিসগঢ়ের সুকমায় বড়সড় হামলা চালায় মাওবাদীদের সশস্ত্র ক্যাডারের দল। একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের প্রায় বোকা বানিয়ে একমাসে পর পর  দু দু’বার হামলা।  সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ২৪ এপ্রিলের হামলায় কম করে ২৫ সিরপিএফ জোয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৭ জওয়ান। সিআরপিএফ কতৃপক্ষের দাবি একাধিক মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসেও মাওবাদীদের হামলায় প্রাণ হারান সিআরপিএফের ১২ জওয়ান। সুকমার সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উল্লেখ করতে চাইছি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কথা। তিনি ওইদিন নকশাল বাড়িতে আরও বলেন, ‘’হিংসাত্মক কাজ দীর্ঘদিন চললেও একদিন শেষ হয়। উন্নয়ন দিয়ে হিংসাকে জয় করব।‘’  
২০০৪ সালে সিপিআই (মাওবাদী) গঠনের পরে এইমাস পর্যন্ত আধুনিক ভারত সরকারে কতজন সশস্ত্র জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে? আর্থিক মূল্যের যেমন বিচার করতে হয়, রয়েছে সাধারণ পরিবারের জওয়ানদের পরিবারের মানসিক যন্ত্রণার দিকটিও। ভুলটা কোথায়? পাশাপাশি একই প্রশ্ন তোলা যায় সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণে কতজন মাওবাদী সশস্ত্র জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে? প্রশাসনিক এবং মানবিক এই বিতর্ক চলছে এবং চলতে থাকবে বলেই মনে হয়। ভারত নামক দেশটি বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বছরের পর বছর সামাজিক স্তরে আনবে তবুও মাওবাদী সমস্যা কোথাও কোথাও থেকে যাবে। আলোচোনার প্রয়োজনে এবং সুবিধার জন্য যদি আমরা বিজেপি নামক দলটিকে একটি বুর্জোয়া দল হিসাবে ধরে নিতে চাই তবে দেখব দলটির নেতাদের বাস্তব থেকে শিক্ষা নেওয়ার পাঠ। ভারতের মাটিতে সাধারণ সমর্থক কর্মীদের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজনের অহংকার রয়েছে কংগ্রেস নামক দলটির আদি অকৃত্তিম নেতা তথা দেশের জাতীয় পিতা মহাত্মা গাঁধির। ওই সংস্কৃতি ধারাবাহিভাবে ইন্দিরা গাঁধি, রাজীব গাঁধি হয়ে রাহুল গাঁধির মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি বহুল প্রচারিত প্রথম শ্রেণির বাংলা দৈনিকের ২৭ এপ্রিলের সম্পাদকীয় স্তম্ভে লেখা হয়েছে, ‘’কাহারও হয়ত এই প্রসঙ্গে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর কথা মনে পড়িবে। সঙ্গে মনে পড়িবে সরোজিনী নাইডুর সেই উক্তিওঃ ‘বাপু যদি জানিতেন, তাহাকে গরিব রাখিতে কত টাকা খরচ করিতে হয়!’ মনে পড়া ভাল। তাহাতে বৈপরীত্যটি প্রকট হয়।‘’  
১৯৪৬-এ বেলেঘাটা- বাস পর্বের শেষে গাঁধী নিজের হাতে বাংলায় লিখিয়া দিয়াছিলেন, ‘আমার জীবনই আমার বানী’ আর কোনও মানুষের ক্ষেত্রে বুঝি কথাটি এতখানি সত্য নহে। দরিদ্র মানুষের সঙ্গে থাকিবার অধিকারটি গাঁধী তাঁহার জীবন দিয়া অর্জন করিয়াছিলেন।‘’  একই সংস্কৃতি আমরা দেখি ভারতের প্রাচীন বামপন্থী দল সিপিআইয়ের সুশিক্ষিত কমরেডদের মধ্যে। এবং অবশ্যই সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং নকশাল বাড়ির আদর্শে পথ চলে এমন কয়েকটি বামপন্থী দলের ক্যাডারদের আমরা নিরাভরণ সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে বরাবর পাই। তবে অবশ্যই ‘বাবু কমরেড’-এর দল নয়। যারা সবসময় ‘নাগরিক জীবন’-এর অনভ্যস্ত সামাজিকতায় নাক উঁচু করে চলেন। কিন্তু বিজেপি নামক দল? এই দলটিকে আমরা চিনতাম বড়লোক অর্থাৎ কিনা ব্যাবসায়ী গোষ্ঠীর দল। যাদের নাক একটু উঁচু। সেই দলের সভাপতি অমিত শাহ নকশাল বাড়ি নামক এক ঐতিহাসিক গঞ্জ শহরে আসনপিঁড়ি হয়ে কলাপাতায় ভাত রুটি খাচ্ছেন। সঙ্গে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অবশ্যই নিরামিষ আহার। দেশ বিদেশের নাগরিক বৈদ্যুতিন মাধ্যমে লাইভ দেখলেন।  এই সংস্কৃতি আপনাদের কতটা স্পর্শ করে আমার জানা নেই। কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে গেল। কারণ আমি ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামক এমন একটি রাজ্যে থাকি। যে রাজ্যে ৩৫ বছর ‘বামফ্রন্ট’ নামক বামপন্থীদের একটি গোষ্ঠী রাজ্য প্রশাসনে ছিল। সেই ফ্রন্টের কতজন নেতা আজ পর্যন্ত বিজেপি নামক একটি দক্ষিণপন্থী দলের সর্বভারতীয় সভাপতির মত অজ গ্রামের এক দলিত পরিবারের রান্নাভাত দুপুরের খাবার হিসাবে খেয়েছেন? কেউ কি মনে করতে পারবেন? আমারমত ক্ষণস্থায়ী,  শ্রমজীবী তথা বর্ণচ্যুত সাংবাদিকের মনে পড়ছে, কোনও একটি জেলার স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না এবং খাওয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষত সেই বিতর্ক ছিল নিম্নবর্ণ জাতির হাতের রান্না করা খাবার উচ্চবর্ণের ছাত্ররা খাবে না। এই খবর সংবাদ মাধ্যমে আসার পর বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান কমরেড বিমান বসু সেই স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে আসনপিঁড়ি হয়ে বসে মিড-ডে মিলের খাবার খান। এই ঘটনার আগে কলকাতায় প্রথম মিড-ডে মিল চালু হওয়ার সময় কলকাতা পুরসভার তৎকালীন (২০০৫ সাল) মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পূর্ব কলকাতার একটি ঘিঞ্জি বস্তির স্কুলে ছাত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খেয়েছেন। সেদিন আমিও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক হিসাবে খবর যেমন করেছি আবার বিকাশবাবুর সঙ্গে একসঙ্গে মোটা চালের ভাত, ডাল, ডিম-আলুর ডালনা দিয়ে ‘মিড-ডে মিল’ খেয়েছিলাম।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির বাংলা সফর তথা রাজ্য দখলের যে অভিযান সেই বিষয়ে গত দু’দিন রাজ্যের বিরোধী দলগুলি সম্ভবত জল মাপছিল। রাজ্যের সরকার চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুদিন আগেই সম্ভবত উপলব্ধী করতে পেরেছে রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের একটা চেষ্টা বিজেপি করতে চাইছে। সেই পরিসর যাতে হাতছাড়া না হয় সেই কথা মাথায় রেখে কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয় নেত্রী ঘোষণা করেছেন দলীয় কর্মীরা রবীন্দ্রনাথ থেকে বুদ্ধ জয়ন্তী পালন করবেন। রাজ্য সরকারের তরফে শেষ সংযোজন বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা। ২৬ এপ্রিল কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘’অমিত শাহ ঘুরপথে সত্যি কথাটা বলে দিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ক্রমাগত ভেঙে বিজেপির হাত শক্ত করছেন।‘’
কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্রে দলের বুথ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিজেপি সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের নীতির দুর্বলতার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘’দুর্গাপুজোর বিসর্জনের জন্য আদালতের কাছ থেকে অনুমতি আনতে হবে? সরস্বতী পুজো করার অধিকারকে রক্ষা করতে পারবে না বাংলার সরকার? এসব কি হচ্ছে?’’ কলকাতায় ২৬ এপ্রিল এবং ২৭ এপ্রিল দু’দিনের সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক ছিল। সূত্রের খবর, প্রথমদিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বিজেপির রাজ্যে উত্থান নিয়ে নিজের রিপোর্টে বলেছেন, আর কোনওরকম বাহানা দিয়ে সত্য আড়াল করা যাবে না। সেটা হচ্ছে রাজ্যে বিজেপি বাড়ছে। বিজেপি নামক দলটির বাড়বাড়ন্ত বামপন্থীদের কাছে উদ্বেগের বিষয়। ওইদিন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘’তৃণমূল মেরুকরণের রাজনীতি করছে। আর ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন অমিত শাহ।‘’ মানবাধিকার কর্মী এবং এপিডিআর সংগঠনের সহ সভাপতি রঞ্জিত শুর বলেন, ‘’মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য নকশাল বাড়ির আন্দোলন। অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন, মৌলিক অধিকারগুলি আদায়ের জন্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে অমিত শাহ নকশালবাড়িতে সভা করা মানে মৌলিক অধিকারের জন্য যেসব মানুষ লড়াই করেছিলেন তাঁদের অপমান করা।‘’   
বিজেপি তোষণের রাজনীতি করছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস মনে করে। দলের এক শীর্ষনেতা বুধবার বলেন, ‘’আমরা দেখলাম বিজেপি সভাপতি শিলিগুড়িতে আদিবাসী মহিলার বাড়িতে বসে খাবার খেলেন। আবার মুসলিম বস্তিতে গিয়ে সভা করলেন। কারা করছেন তোষণের রাজনীতি?’’ প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তর বিজেপি দিতে পারবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং বিশ্লেষকদের বক্তব্য বিজেপি নামক একটি কর্পোরেট দলের হোম ওয়ার্ক না থাকলে এমনটা কি আদৌ সম্ভব? কিন্তু বিজেপি এই পরিসর পেল কি করে? অমিত শাহ তাঁর শুরুটায় বা নকশালবাড়ি থেকে করলেন কেন? সূত্রের খবর এই বছর নকশালবাড়ির আদর্শকে সামনে রেখে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই আন্দোলনের ৫০ বছর হচ্ছে। সেই উপলক্ষে নকশালপন্থীদের বহুধা বিভক্ত গোষ্ঠীগুলি পৃথক পৃথক অনুষ্ঠান করছে। সিপিআই (এমএল)  গোষ্ঠী ‘২৫ মে চলুন শিলিগুড়ি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে তাঁদের সাধ্যমত প্রচার করছে। দলের পোস্টারে লেখা হয়েছে ‘নকশালবাড়ির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিপিআই (এম এল) লিবারেশনের আহ্বানে জনসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাঘাযতীন পার্ক, শিলিগুড়ি। লিবারেশন গোষ্ঠী সূত্রে খবর দলের তরফে নকশালবাড়ি আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শিলিগুড়িতে সভা হবে। সেই সভায় অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এই সভার পরে ২৬ থেকে ২৮ মে প্রায় ৫ বছর পর সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-এর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে। 
উল্লেখিত দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘’বিজেপি ২০১৪ সালে বলেছিল কংগ্রেস মুক্ত ভারত করতে হবে। বর্তমানে ওদের কাছে টার্গেট কমিউনিস্ট মুক্ত বা সোসালিস্ট মুক্ত ভারত। দু’টো বিষয়ের কর্মসূচীকে সামনে রেখেই অমিত শাহের নকশালবাড়ি সফর। অমিত শাহের প্রতীকি উপস্থিতি। একটি সর্বভারতীয় বুর্জোয়া দলের সভাপতি বাংলা সফর নকশালবাড়ি দিয়ে শুরু করবেন কেন? এই রাজ্যে বিজেপি রাজনৈতিক পরিসর পেল কি করে? আমদের মানে বামগণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের দুর্বলতা বিজেপিকে সুযোগ করে দিয়েছে’’
 দীপঙ্করবাবুর অভিমত একজন বিপরীত মেরুর মানুষ নকশাল বাড়ি আসছেন। অবশ্যই মতাদর্শগত সংঘাতের জন্যই আসছেন। নকশালবাড়ির আন্দোলন ছিল কৃষকের আন্দোলন। তেভাগা, তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নকশালবাড়ি আন্দোলন। বিজেপির যে মতাদর্শ তাঁদের আমরা বিরধিতা করি। ওই দলের মতাদর্শ, কর্মসূচীর আমরা কমিউনিস্টরা অর্থাৎ বিপ্লবী কমিউনিস্টরা ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করছি। আমরা নকশাল বাড়ির সুবর্ণজয়ন্তী বছরের ঐতিহাসিক সমাবেশে সমস্ত বিপ্লবী কমিউনিস্টদের স্বাগত জানাচ্ছি।
সিপিআইএমএল (লিবারেশন) গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘’আজকের বর্তমান ভারতে আমরা চারটে বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি। (১) কৃষক আন্দোলন। তামিলনাড়ুর কৃষকরা গত দু’মাস হয়েগেল দিল্লিতে অবস্থান করছে। ওদের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। ভাঙড়ে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি। (২) ছাত্রযুবদের আন্দোলন। (৩) শ্রমিক আন্দোলন। (৪) ভারতের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের জন্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে মনে রাখতে হবে। ইতিহাসকে বিকৃত করা চলবে না। দেশে জাত-পাত সমস্যা, পুরুষতন্ত্র, সংখ্যালঘুদের অধিকার এই সবকে আমরা শ্রেণি আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেখি। তিনদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি দিয়ে যে সফর শুরু করলেন সেটা শুধুমাত্র নকশালপন্থীদের বার্তা দিতে? অথবা রাজ্যের শাসক দলকে শক্তি দেখাতে? না গভীরে আরও কিছু আছে? সম্প্রতি তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার ভারতের অঙ্গরাজ্য অরুণাচলপ্রদেশ সফর নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, দলাই লামার সফর চলাকালীন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের সঙ্গে তিব্বতের সীমান্ত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেস। অরুণাচলপ্রদেশ কংগ্রেসের কথায়, ইতিহাস না জেনে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য দু’দেশের সম্পর্ককে জটিল করেছে। ভারত সরকার তিব্বতকে চিনের অধীনস্ত এলাকা বলে আগেই মেনে নিয়েছে। প্রবীণ ধর্মগুরু দলাই লামা নিজেও বলেছেন, তিব্বত চিনের অধীনে থেকে স্বশাসন চায়। স্বাধীন তিব্বত নয়। তিব্বত সহ চিনের অন্যান্য প্রদেশ নিয়ে যেসব বিতর্ক আছে সেগুলি চিনেরমত এক বিপুল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু তথ্য এবং ইতিহাস বলছে চিনের ‘এক চিন’ নীতিকে আমেরিকা ১৯৭২ সালেই স্বীকার করেছে। খ্যাতনামা কবি, সাংবাদিক এবং সম্পাদক সমর সেন ১৩৮৭ সালের শারদীয় সংখ্যা ‘অনুস্টুপ’ পত্রিকায় ‘সত্তর দশকের চালচিত্র’ নিবন্ধে লিখছেন, ‘’১৯৭১-এ কিসিংগার পিকিং-এ তার বিখ্যাত গোপন ভ্রমণ সারলেন, শক্তি ভারসাম্যে শুরু হল নাড়াচাড়া; ভারত পালটা মার হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে করল মৈত্রী চুক্তি। এই রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস তখনকার ‘দুই মেরুবর্তী’ দুনিয়ায় ফেলল এক সুদূরপ্রসারি প্রভাব। পরের বছর নিকসন পিকিং গিয়ে ‘এক চীন’ নীতি স্বীকার করেন। ...... কয়েক সপ্তাহ বাদে তিনি গেলেন মসকো। (পৃষ্ঠা- ২)
চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক ভারতের? একদিকে সীমান্ত নিয়ে চলছে ধারাবাহিক চাপান উতোর। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে নৌ মহড়ায় অংশ নিতে চলেছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে এই প্রথম ভারতের নৌ মহড়া। সঙ্গে থাকবে জাপানও। চিন এই মহড়া নিয়ে ইতিমধ্যেই ফুসতে শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ‘পিপলস ডেইলি’-এর একটি রিপোর্টে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে। চিনের সামরিক প্রশাসন ভারতকে উপদেশ দিয়ে বলেছে, নয়াদিল্লির উচিত সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে জোর দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি শুনতে পেলেন? চিনের সামরিক শক্তির অভিজাত উপস্থিতি ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। একসময় চিনের ঐতিহাসিক প্রাচীর টপকে বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম কোনও খবর পেত না। সম্প্রতি জিনহুয়া সংবাদ সংস্থা চিনের সামাজিক ক্ষেত্রের নীতি আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। কি আছে সেই রিপোর্টে?
Chinese lawmakers advise improved environment tax rules
Posted: December-21-2016Adjust font size:
BEIJING, Dec. 20 (Xinhua) -- Chinese legislators hailed the country's draft environment tax law as "clear and practical," and called for improved rules on the use of tax revenue and penalties for tax frauds.
During panel deliberations on Tuesday afternoon, legislators discussed the draft, which was submitted for a second reading at the ongoing bimonthly session of the National People's Congress Standing Committee.
"The draft should include provisions that ensure environment tax income being used for environmental protection," legislator Lyu Wei said during the discussion.
Legislator Chen Weiwen also called for specific rules clarifying punishments for tax dodgers, and stressed that environment authorities should cooperate with the tax watchdog to strengthen supervision over violators. Sources: Xinhua
Legislators propose more support for small, medium-sized firms
Posted: November-5-2016Adjust font size:
BEIJING, Nov. 3 (Xinhua) -- Legislators discussed a draft amendment to the law on promoting small and medium-sized enterprises on Thursday.
The draft was submitted to the National People's Congress (NPC) Standing Committee for its first reading on Monday.
The draft aims for equal rights, rules and opportunities for all firms, and suggests favorable tax policies and easier financing procedures for small and micro-businesses.
Legislators widely solicited opinion while drafting the amendment, and learned about the problems troubling small and medium-sized firms such as difficulties in financing, said legislator Li Shenglin at Thursday's panel discussion.
The draft has clarified how to support small and medium-sized enterprises with government funds and bank capital, Li said.
The amendment is expected to solve the problems "at the source," said legislator Long Chaoyun, adding that if passed, its implementation must be ensured by strengthened supervision.
Long suggested authorities regulate the development of agencies offering financing services, improve their credit rating system and ensure better service for small and medium-sized enterprises.
By the end of 2015, the majority of the country's 21.9 million registered enterprises were small or medium-sized businesses, according to government data. In industry, for example, small and medium-sized businesses accounted for about 99.6 percent of all firms.
A current problem is "blind development." Many small enterprises engage in redundant, outdated business and seek quick success but end up "dying rapidly," according to legislator Li Andong.
He suggested the government better guide their development and encourage innovation to sustain their long-term growth. Sources: Xinhua


Legislators review draft decision on law on private education
Posted: November-3-2016Adjust font size:
BEIJING, Nov. 1 (Xinhua) -- Legislators discussed a draft decision on amending the law on private education Tuesday.
A draft amendment to the law is up for a third reading at the ongoing session of the National People's Congress (NPC) Standing Committee, which proposes banning for-profit private schools from engaging in the 9-year compulsory education that covers the primary and junior high school phases.
The proposal is consistent with a stipulation in the Law on Compulsory Education, which says compulsory education is a free, charitable cause with national financial support, said legislator Wu Heng at Tuesday's panel discussion.
The compulsory education is a legal obligation of governments at various levels, said law professor Feng Liucai, who is also deputy head of Taizhou municipal education bureau in Jiangsu Province, in an interview.
If the law is revised, some for-profit private schools may choose to become non-profit, which means they will no longer charge the students and have their revenue reduced, according to legislator Wang Gang. The government should help and support them during their transformation, Wang said at the panel discussion.
Legislators agreed that the new draft defines clearly for-profit and non-profit private schools and specifies different supportive measures for them, which is expected to promote the healthy development of the private education cause.
They agreed that the draft is feasible and "mature," suggesting it be passed at the ongoing NPC session. Sources: Xinhua
সামাজিক ক্ষেত্রের যে রিপোর্ট আমরা পাচ্ছি পাশাপাশি আলোচ্য পরিপ্রেক্ষিত দাবি করছে বিশ্বের দারিদ্র নিয়ে একটি রিপোর্ট। ২০১৩ সালের ১ জুন The Economist পত্রিকায় ‘Towards the end of poverty’  শিরোনামে যে লেখা প্রকাশ হয়। লেখার শিরোনামের নীচে উল্লেখ করা হয় ‘Nearly 1 billion people have been taken out of extreme poverty in 20 years. The world should aim to do the same again. ’
IN HIS inaugural address in 1949 Harry Truman said that “more than half the people in the world are living in conditions approaching misery. For the first time in history, humanity possesses the knowledge and skill to relieve the suffering of those people.” It has taken much longer than Truman hoped, but the world has lately been making extraordinary progress in lifting people out of extreme poverty. Between 1990 and 2010, their number fell by half as a share of the total population in developing countries, from 43% to 21%—a reduction of almost 1 billion people.
Now the world has a serious chance to redeem Truman’s pledge to lift the least fortunate. Of the 7 billion people alive on the planet, 1.1 billion subsist below the internationally accepted extreme-poverty line of $1.25 a day. Starting this week and continuing over the next year or so, the UN’s usual Who’s Who of politicians and officials from governments and international agencies will meet to draw up a new list of targets to replace the Millennium Development Goals (MDGs), which were set in September 2000 and expire in 2015. Governments should adopt as their main new goal the aim of reducing by another billion the number of people in extreme poverty by 2030.
Take a bow, capitalism
Nobody in the developed world comes remotely close to the poverty level that $1.25 a day represents. America’s poverty line is $63 a day for a family of four. In the richer parts of the emerging world $4 a day is the poverty barrier. But poverty’s scourge is fiercest below $1.25 (the average of the 15 poorest countries’ own poverty lines, measured in 2005 dollars and adjusted for differences in purchasing power): people below that level live lives that are poor, nasty, brutish and short. They lack not just education, health care, proper clothing and shelter—which most people in most of the world take for granted—but even enough food for physical and mental health. Raising people above that level of wretchedness is not a sufficient ambition for a prosperous planet, but it is a necessary one.
The world’s achievement in the field of poverty reduction is, by almost any measure, impressive. Although many of the original MDGs—such as cutting maternal mortality by three-quarters and child mortality by two-thirds—will not be met, the aim of halving global poverty between 1990 and 2015 was achieved five years early.
The MDGs may have helped marginally, by creating a yardstick for measuring progress, and by focusing minds on the evil of poverty. Most of the credit, however, must go to capitalism and free trade, for they enable economies to grow—and it was growth, principally, that has eased destitution.
Poverty rates started to collapse towards the end of the 20th century largely because developing-country growth accelerated, from an average annual rate of 4.3% in 1960-2000 to 6% in 2000-10. Around two-thirds of poverty reduction within a country comes from growth. Greater equality also helps, contributing the other third. A 1% increase in incomes in the most unequal countries produces a mere 0.6% reduction in poverty; in the most equal countries, it yields a 4.3% cut.
China (which has never shown any interest in MDGs) is responsible for three-quarters of the achievement. Its economy has been growing so fast that, even though inequality is rising fast, extreme poverty is disappearing. China pulled 680m people out of misery in 1981-2010, and reduced its extreme-poverty rate from 84% in 1980 to 10% now.
That is one reason why (as the briefing explains) it will be harder to take a billion more people out of extreme poverty in the next 20 years than it was to take almost a billion out in the past 20. Poorer governance in India and Africa, the next two targets, means that China’s experience is unlikely to be swiftly replicated there. Another reason is that the bare achievement of pulling people over the $1.25-a-day line has been relatively easy in the past few years because so many people were just below it. When growth makes them even slightly better off, it hauls them over the line. With fewer people just below the official misery limit, it will be more difficult to push large numbers over it.
So caution is justified, but the goal can still be achieved. If developing countries maintain the impressive growth they have managed since 2000; if the poorest countries are not left behind by faster-growing middle-income ones; and if inequality does not widen so that the rich lap up all the cream of growth—then developing countries would cut extreme poverty from 16% of their populations now to 3% by 2030. That would reduce the absolute numbers by 1 billion. If growth is a little faster and income more equal, extreme poverty could fall to just 1.5%—as near to zero as is realistically possible. The number of the destitute would then be about 100m, most of them in intractable countries in Africa. Misery’s billions would be consigned to the annals of history. 
আমদের আলোচ্য নিবন্ধের শিরোনাম স্বতন্ত্র ভারত, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘নতুন ভারত’ গড়তে যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন সেগুলি বারবার আলোচনায় আসছে। যেমন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্রার্টআপ ইন্ডিয়া’, জনধন যোজনা প্রকল্প, আঁধার, স্কিল ইন্ডিয়া, মোবাইল জ্যাম ট্রিনিটি ইত্যাদি। এইসব সামাজিক এবং কর্পোরেট প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে দেশের স্বতন্ত্রতা তিনি কতটা ভাবছেন? কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছে, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় সাধারণ নাগরিক এবং জওয়ানদের মৃত্যু বেড়েছে। সাম্প্রতিক জম্মু-কাশ্মিরের অস্থীরতা স্বতন্ত্র ভারতরে সুদৃঢ় ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একই ঘটনা নকশালপন্থীদের হামলাতেও। চিনা অনুপ্রবেশও বেড়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কি আদৌ ভাবছেন? নরেন্দ্র মোদীর জাতীয়তাবাদের স্লোগানের অঙ্গ  জাতীয় নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এই ইস্যুতেই তিনি অভিযোগ করতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের ভূমিকা নিয়ে
যতদূর মনে পড়ছে ইউপিএ সরকারের আমলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র ভারতের লক্ষে ‘ভীশন ২০২০’ ঘোষণা করেছিলেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ‘ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড’ (আইএমএফ) ঘোষণা করেছে, ২০২২ সালে ভারত বিশ্বের পাঁচটি রাষ্ট্রের তালিকায় চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে জার্মানি এবং ব্রিটেনকে টপকে যাবে ভারত নামক একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। স্বতন্ত্র ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি দলের একমাত্র সারেঙ কি নির্বাচনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন? না আধুনিক ভারতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সচেতনতা, ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ প্রভৃতি ক্ষেত্রের বিস্তার এবং স্থিতিশীলতাকে সামনে রেখে আধুনিক গণতন্ত্র আমাদের সামনে উপহার দেবেন?