Sunday 10 June 2018

সহিংস নয় একুশ শতাব্দীর কলম হোক অহিংস



দীপেন্দু চোধুরী
কিছুদিন আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বিঞ্জানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে একটি আলোচনাসভায় ক্লাবের বিদায়ী সভাপতি তথা  বিশিষ্ট সাংবাদিক স্নেহাশিষ সুর তার বক্তব্যে বলেন, ‘’আমরা কলকাতা প্রেসক্লাবকে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। এখানে শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা আসবেন এমনটা নয়। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের বিশিষ্টজনেরা আমাদের ক্লাবে আসবেন মত বিনিময় করবেন।‘’
বিদায়ী সভাপতির এই আহ্বান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ২০১৭-২০১৮ সংবাদ-সংগঠনের আর্থিক বছরের অনুষ্ঠানসূচীর মাধ্যমে। গত একবছর আমাদের ক্লাবে যে সব অনুষ্ঠান হয়েছে। সবগুলির মধ্যেই ছিল নতুনত্বের স্বাদ। নতুনের স্পর্শ। নববস্ত্রের আহ্বান। নব ফাল্গুনের গুঞ্জন। নতুন শব্দ-ভাষার আল্পনা। পলাশ সিমুল ফুলের গন্ধহীন আভিজাত্যের আহ্বান জানিয়েছে এই বছরের প্রেসক্লাব পরিচালন সমিতি। এরমধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয়, রাজ্য সরকারকে বুঝিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের জন্য কিছুটা আর্থিক সুরাহা করা। দুর্দশাগ্রস্ত সাংবাদিকদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা। গত বিদায়ী কমিটির ক্লাবের সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক এবং সভাপতি স্নেহাশিস সুরের নেতৃত্বে এক নতুন চৌকাঠ তৈরি করেছে।          
আমরা মনে করতে পারি ভারতে উনবিংশ শতাব্দীর রেনেসাঁর সময় যেমনটা ছিল। অথবা তারও আগে রাজা রামমোহন রায় ‘ব্রাহ্ম সমাজ’-এর ছাদপেটাই করা খিলান দেওয়া আভিজাত্যের সভাঘরে সকলকে আহ্বান করতেন। সমাজের উন্নয়নের জন্যনতুন নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য। সবধর্মের সবশ্রেণীর মানুষ এসে সেই মতবিনিময় সভায় হাজির হতেন। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে। অপরকে আপন করে নিজের উপলব্ধ ঞ্জান অন্যের সঙ্গে বিনিময় করার প্রয়াস নিয়ে। আমরা রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাস পড়লে এই সত্য খুঁজে পাই। গোরার মিথ্যে অহংকার, ছদ্ম অহং এক সময় ভেঙে খান খান হয়ে হয়ে যায়। ‘গোরা’ উপন্যাসে স্বদেশপ্রেম তথা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার যে সামাজিক ছবি সেদিন বিশ্ববরেণ্য লেখক আমাদের সামনে হাজির করেছিলেন সেই চিরসত্যের সন্ধান আমি আজও করি। গোরা একদিন অনুভব করেছিল স্বদেশপ্রেম যখন আমাদের সামনে স্বাভাবিকভাবে দেখা দেবে, তখন ‘সে আমার ধন প্রাণ, আমার অস্থিমজ্জা, রক্ত আমার আকাশ-আলোক, আমার সমস্তই অনায়াসে আকর্ষণ করে নিতে পারবে।’ স্বদেশের ‘সেই সত্যমূর্তি যে কী আশ্চর্য অপরূপ, কী সুনিশিচত সুগোচর, তার আনন্দ তার বেদনা যে কী প্রচণ্ড প্রবল’ হয়ে এসেছিল। আমার অনুভবে আজও ‘গোরা’ আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করতে পরে।            
প্রেসক্লাবের এই বছরের নির্বাচন হয়ে গেল। ৯ জুন নির্বাচনের পরে পুনর্বারের জন্য স্নেহাশিষ সুর সভাপতি এবং কিংশুক প্রামাণিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ৯ জুন শনিবার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে যে বাৎসরিক সাধারণ সভা হল সেখানেও বিষয়টা উঠে এল। আমরা সদ্য নির্বাচিত সভাপতির সঙ্গে গলা মিলিয়ে উচ্চচারণ করলাম সংবাদ মাধ্যম হচ্ছে সমাজের অভিভাবক। এই মাধ্যমের একজন সম্পাদক, সাংবাদিক, ডেস্কের কর্মী, এবং মালিক সকলকেই ভাবতে হবে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের উর্ধে উঠার কথা। বলতে হবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা
আমার নিজস্বতা বলতে তেমন কিছু আছে কি? মধুর খোঁজে গ্রাম সভ্যতার আল ভেঙে। আল পথ ধরে হেঁটে রেল লাইন টপকে, পায়ে হেঁটে পায়ে হেঁটে অপু-দুর্গার দেখানো কাশবনের একফালি পথ চিন চিনে কালো ধোঁয়ার কলকাতায় এসেছিলাম। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’-র করালির খেটো ধুতির ছায়া দেখে দেখে। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিতাহ্নিমান’ উপন্যাস পড়েই কলকাতায় এসেছিলাম। অমলেন্দু চক্রবর্তীর ‘গোষ্ঠ গোপাল’-এর খোঁজে। আশাপূর্ণা দেবীর ‘সত্যবতী’-র সঙ্গে যদি দেখা হয়। অথবা ‘কালবেলা’-র অনিমেষকে যদি খুঁজে পাই। আশির দশক সেটা। সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি সেই ১৯৭৮ সালে।
আমাদের জেলা বীরভূমে দু’টি প্রথমসারির সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে আমার সাংবাদিকতায় হাতেখড়িগরিব ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান আমি। যে কোনও ঠাকুরদালানের সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বভাব লাজুক সংস্কৃতির প্রথা মেনে শেষের সারিতে বসে থাকতে অভ্যস্ত আমি। দলিত সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে নিজেকে এর জন্য গর্বিত মনে করি। নাগরিক কলকাতায়, নাগরিক সাংবাদিকতায় আজও আমি উদ্বৃত্ত। আমি নিজেকে মনে করি আমি সংবাদ মাধ্যমে ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’। উচ্চ শিক্ষিত, অভিজাত এবং মাখন খাওয়া সম্পাদকের দলের কেউ অসুস্থ হলে কয়েকদিনের জন্য আমাদের মত কলমচিদের ডাক পড়ে। অনেকটা বোসে বোসে ‘বাংলা দাঁড়াতে শিখল’ প্রবাদের মত। আমি আজও বসে বসে হামাগুড়ি দিচ্ছি একটু আলো দেখার জন্য। নিজের কথা আরও বেশি বললে একটা সময় ‘ঠাকুরমার ঝুলি’-র কথা ভুলে যাব। ‘সোনার কেল্লা’-এর কথা ভুলে যাব। হুতোম বলে সামনের ভাঙা আয়নায় পিছন ফিরে মুখ দেখবি। যখন ট্রেন যাবে তখন ভাঙা আয়নাটা কাঁপবে। যেমন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন অভিনিত বাংলা স্বর্ণ যুগের ছবির পরিচালক আমাদের ‘সপ্তপদী’ ছবিতে দেখিয়েছেন। ফিরে দেখা যে আবেগে অনুভূত কম্পন নেই। আত্মসমালোচনা নেই, সেই আবেগ স্থায়ী হয় না।     
মেঘে মেঘে বেলা হয়েছে। ২৩৭ বছর আমরা পার হয়ে এলাম।  প্রেসক্লাব যথার্থভাবেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীকে সংবর্ধনার দিনে একটি তথ্যসম্বলিত (আলোচ্য বিষয়ক) পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। বইটির চাহিদা তুঙ্গে। এই বছরের কলকাতা বইমেলার প্রেসক্লাবের স্টলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পরিলক্ষিত করেছি। পাশাপাশি ২৯ জানুয়ারি এই বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল প্রেসক্লাব। আমরা ই-মেল সহযোগে যে আমন্ত্রণপত্র পাই তার বয়ান ছিল, ‘Press Club, Kolkata organizes Commemoration of 237th Anniversary of publication of First News Paper in India. Speaker: Prof. Subir Ghosh, Principal, Asutosh College of ‘Communication & Management and formerly of The Statesman & Hindustan Standard
ভারতে প্রথম সংবাদপত্র ‘হিকির গেজেট’ প্রকাশের পরের সময়গুলি নিয়ে ওইদিন আলোচনা করেন সুবীরবাবু এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট প্রবীণ সাংবাদিক। আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল কলকাতা বিশবিদযালয়ের সংবাদ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের। এবং মিজোরামের কয়েকজন সাংবাদিক সম্পাদক ওইদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন।      
‘হিকির গেজেট’ প্রকাশের পর এতগুলি বছর আমরা জ্ঞানের আলোয়, ধারালো কলমের খোঁচায়, আধুনিক ‘কি বোর্ডে’-র মসৃণ স্পর্শে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় বদল এনেছি। বদল এনেছি প্রকৌশলে। সংবাদ পরিবেশনের গভীরতায়, আফিসের আঙ্গিকে, ব্যঙ্গচিত্রের পরিভাষায়, ডিজিটাল শব্দ, অক্ষর ছবির গতিশীলতায়। এরপরেও এই একুশ শতাব্দীর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় সংবাদ মাধ্যম কতটা স্বাধীন? কতটা সহনশীল? সহকর্মীদের প্রতি কতটা স্পর্শকাতর? অথবা কতটা পরশ্রীকাতর?  কতটাই বা প্রতিহিংসাপরায়ণ? আজকের এই নিবন্ধে কারও প্রতি অভিমান থেকে নয়। গত এক দশকের ভারত তথা বাংলার সংবাদ মাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমের সাধারন কর্মীদের আর্থ–সামজিক ছবিটা পর্যালোচনা করলে আমরা সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব এবং স্বচ্ছতা বিষয়ে আরও সচেতন হয়ে উঠার দাবি জানাতে পারব।
গত দু’তিন বছরে আমাদেরকে কয়েকজন সাংবাদিকের শোকসভায় যেতে হয়েছে। প্রেসক্লাব আয়োজিত এই শোকসভায় আমরা ম্লান মুখে শোকাহত হয়ে বসে থেকেছিযে সহকর্মীরা চলে গেলেন তাঁদের এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কথা কি ছিল? আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি তাঁদের কোন পর্যায়ে নিয়ে গেল? ওরা কেউ কি ‘ফেক নিউজ’ করেছিলেন? ওরা কেউ কি সত্যের জন্য সাংবাদিকতা করেছিলেন? তবে কেন ওরা আর চাকরি পাচ্ছিলেন না। সংগঠিত অথবা অসংগঠিত কোনও সংবাদ মাধ্যমের টেবিলে? ওরা কি চিহ্নিত হয়ে গেছিলেন? ‘আমরা-ওরা’ নামক তথাকথিত শব্দবন্ধের রাজনৈতিক ঘুল-ঘুলাইয়ায়? বিগত দু’ই দশকে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকায় সংবাদ মাধ্যমে কালোটাকার অনুপ্রবেশ কিভাবে ঘটেছে সেই ছবি আজ আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কালোটাকা বিনিয়োগের সব থেকে নিরাপদ আধার হচ্ছে সংবাদ মাধ্যম। ‘আধার কার্ড’-এর থেকেও সংবাদ মাধ্যমের কার্ডের শক্তি অনেক অনেক বেশি। ভারতে সংবাদ মাধ্যমে কালো টাকা অনুপ্রবেশের পরে এপর্যন্ত কতজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন? কতজন সাংবাদিক মারা গেছেন? গত ৩ মে ছিল ‘World Press Freedom Day’ সেদিন কলকাতায় নজরে পড়ার মত কোনও সংবাদ মাধ্যমের কোনও অনুষ্ঠান নজরে পড়েনি। কিন্তু আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল কলকাতা আমেরিকান সেন্টারে ৩০ মে ‘World Press Freedom’ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
৩০ মে আমেরিকান সেন্টারে আমরা একটি দু’ঘণ্টার পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি দেখি। যে ছবি আমরা দেখলাম আমাদের দেশে ভারতে এই ছবি আদৌ তৈরি করা সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন তোলা যায়। সেদিনের ছবির বিষয় ছিল আমেরিকার ক্যাথলিক চার্চের ভেতরে চলতে থাকা স্বেচ্ছাচারিতা। তথা শিশুদের যৌন হয়রানি। এবং ওই ধরণের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা। ছবির পরতে পরতে উঠে এসেছে একটি ধর্মীয় ব্যবস্থার মধ্যে কতরকমের অসামাজিক মানুষ থাকে। আমেরিকার মত একটি উন্নত গণতন্ত্রের দেশে এই ব্যবস্থা সেলুলয়েডের পর্দায় অভিযোগ হিসেবে উঠে এলে কি ধরণের ঝড় উঠতে পারে আমরা অনুমান করতে পারি। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি, সম্পাদক একাধিকবার আক্রান্ত হন। তবু শেষ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যম জয়ী হয়। সিনেমার পরে ছিল আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রশ্ন ধেয়ে আসতে থাকে। একজন প্রশ্ন করে চার্চের কারও কারও ভূমিকা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে তখন আমেরিকান রাজনীতিতে এর প্রভাব কতটা পরে?
উত্তর দিলেন কলকাতা আমেরিকান সেন্টারের ডিরেক্টার জেমি ড্রাগন। তিনি বলেন, ‘’আমেরিকায় দু’টি স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে। চার্চের পরিচালন ব্যবস্থা আলাদা। এবং রাজনীতি তথা দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা আলাদা। আমেরিকার গণতন্ত্র সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। যেটা আপনারা এই ছবিতে দেখলেন।‘’ এই একই কথা কিছুদিন আগে ভিন্ন একটি অনুষ্ঠানে আমরা শুনেছিলাম আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল ক্রেগ হলের কাছ থেকে। তিনি বলেছিলেন, ‘’আমেরিকা আজও সেই দেশ, যে দেশে সাংবাদিক, সংবাদ মাধ্যমের সব রকমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা মেধাকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।‘’
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে আসার পরে আমরা জানি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে তার কিছুদিন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ট্রাম্প সাহেব প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘ফেক নিউজ’ নিয়ে। বর্তমান আমেরিকায় ‘রিপাবলিকান দল’ নিয়ন্ত্রিত শাসনে সংবাদ মাধ্যম স্বমহিমায় নিজেদের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু ভারতে? সম্প্রতি ‘এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন’ একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ৩১ মে প্রকাশিত সেই বিবৃতি থেকে আমরা ভারতের ছবিটা বুঝতে পারছি।
‘’ALRC is deeply concerned with the deteriorating climate for the freedom to voice one’s opinion in India, especially when speaking up against the majoritarian, populist narrative or standpoint in the country. Then the 2018 World Press Freedom Index, India dropped two more ranks to be placed at 138 out of 180 countries, a dismal rank for the so-called ‘largest’ democracy in the world. The reasons cited for this were manifold, but mainly the misuse of Section 124A of the Indian Penal Code which defines the offence of sedition, and one that has been severely misused to target journalists speaking out against injustice.'' Courtesy- AHRC
আমাদের দেশে সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণের পরে বিরোধী দলের নেতৃত্ব সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষত গৌরী লঙ্কেশ খুনের পরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধি গর্জে উঠেছিলেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রতিবাদ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধযায় প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মিছিলে পা মিলিয়েছেন।  আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় প্রশাসনকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।   
সংবাদ মাধ্যমে কালোটাকা অনুপ্রবেশের ফলে এক সময় পণ্য সাংবাদিক এবং হলুদ সাংবাদিকতার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু গঠনমূলক সংবাদ যারা করেন সৎ সাংবাদিকতা যারা করেন তাদেরই জয় হয়েছে। ভারতীয় তথা কলকাতার সংবাদ মাধ্যম বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক স্বনির্ভর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবাদপত্রের ভূমিকা আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যে দায়িত্ব দাবি করত আজও সেই দাবি করা যায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন (১৮০১-১৮০৯) বলেছিলেন, ‘’আমার সামনে বেছে নেওয়ার জন্য যদি এমন দু’টি বিষয় দেওয়া হয় যেখানে (১) সংবাদপত্রবিহীন শাসন ব্যবস্থা এবং (২) শাসন ব্যবস্থাবিহীন সংবাদপত্রের মধ্যে একটিকে গ্রহণ করতে হবে সে ক্ষেত্রে আমি নির্দ্বিধায় শেষোক্তটিকে বেছে নেব।‘’
পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘’আমি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সংবাদপত্রকেই পছন্দ করি। যদিও জানি যে অবাধ স্বাধীনতার ঝুঁকি অনেক, কারণ প্রতি মুহূর্তে অথবা যে কোনও মুহূর্তে স্বাধীনতা অপব্যবহার হতেই পারে।   এতৎ সত্বেও অবদমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র আমার একদম পছন্দ নয়।‘’
বিশ্ববরেণ্য এই দু’ই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে আমরা কি বলতে পারি না, সহিংস নয়, একুশ শতাব্দীর সাংবাদিকতার কলম হোক অহিংস। সুস্থ প্রতিযোগিতা হোক। ভেঙে পড়া অসহিষ্ণু সংবাদ সমাজমাধ্যমকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে আসুন এগিয়ে আসি আমরা। চন্দ্রমল্লিকা হাতে নিয়ে বলি আমাদের কোনও রঙ নেই। আমাদের কোনও জাত নেই। আমাদের কোনও ধর্ম নেই। আমরা সাংবাদিক।
 

No comments:

Post a Comment