Monday 24 December 2018

উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বর্গ এবং সাত পাহাড়ি বোনের দেশ



দীপেন্দু চৌধুরী
সময়ের হের ফের নিয়ে কিছুদিন আলোচনা হল। কিন্তু অখন্ড ভারতের সাত বোনের আছে অখন্ড সময়। চুঁইয়ে পড়া বরফে ভেজা জংলা গাছের পাতায় আছে সাত বোনের হাতছানি। প্রকৃতি তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয়। রঙের প্রজাপতি ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয়। পাহাড়ি বাঁশির সুরে সাত বোনের আহ্বান শুনতে আমাদের হবেই। এমনটাই দাবি আলোকচিত্রশিল্পী এবং লেখক বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর।। সম্প্রতি কলকাতার অক্সফোর্ড বুকস্টোরে ‘’নর্থ ইষ্ট ইন্ডিয়া, বাইয়ো-রিসোর্স, পিপল এন্ড কালচার’’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ হল। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটা রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং হিমালয়  পাহাড়ের উপত্যকার রাজ্য সিকিম। এই সাতটা রাজ্যের জীববৈচিত্র, স্বতন্ত্র ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, হেরিটেজ, জীবনযাত্রা, আদিবাসী সম্প্রদায়ের উৎসব প্রভৃতি বিষয় রয়েছে ‘বি-বুকস’ থেকে প্রকাশিত  এই বইয়ে।
প্রকৃতির বৈচিত্রপূর্ণ পাহাড়ি সভ্যতার খোঁজে দু’বছর ধরে ছবি তুলেছেন বইটির আলোকচিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী। বইটি লিখেছেন দীনবন্ধু সাহু। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত বোনের দেশের গল্প অনেকটাই ছবিতে ধরতে চেয়েছেন যৌথভাবে লেখক দীনবন্ধু সাহু এবং বিশ্বজিৎবাবু। বইটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে ‘-Book To Throw Light on the Bio-Diversity of the Seven Sisters’ এই বই আলোর খোঁজ দিতে চেয়েছে ভারতীয় পাঠকদের। এবং অবশ্যই আপামর বিশ্বের প্রকৃতি পিপাসু বই পড়ুয়াদের। আদিবাসী সমাজ সম্পর্কে আগ্রহী সংস্কৃতি পিপাসু মানুষকে। উত্তর পূর্বের সাতটি রাজ্য ব্যতিক্রমী উদাহারন হিসেবে ভারতের মানচিত্রে সংযোজিত হয়েছে। যে অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য এতটাই যে প্রকৃতি নিজের অভিভাবকত্বে পরিবেশ রক্ষা করে।
বইটি প্রকাশ করে বলছিলেন আমেরিকান কনসাল জেনারেল, কলকাতার প্যাট্টি হফম্যান। তিনি বইটি প্রকাশ করে গর্ব অনুভব করেন। তিনি বলেন, ‘’আমি মাস কয়েক হল দায়িত্ব নিয়েছি। উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটা রাজ্য সহ মোট ১১টা রাজ্য আমার দায়িত্বে রয়েছে। এই অঞ্চলের পোশাক, খাদ্য, সামাজিক এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র আমাকে মুগ্ধ করেছে। এতদ অঞ্চলের খাদ্য বৈচিত্রও এক অনন্য অভিঞ্জতা। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে না মিশলে এই অভিঞ্জতা হবে না। আমি উত্তর পূর্ব ভারতের কয়েকটা রাজ্য ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছি। ওই সব অঞ্চলের জীব বৈচিত্র, সঙ্গীত, নৃত্যশৈলী, বন্যপ্রাণ আমাদের নতুনের আহ্বান জানায়। এই অঞ্চলেই সূর্য ওঠার ছবি নয়নভরে দেখতে হয়। সেই ছবি এই বইয়েও আছে।‘’
এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন আইএএস অফিসার রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং প্রাবন্ধিক প্রসাদরঞ্জন রায়। তিনি বলেন, ‘’এশিয়ার বন্যপ্রাণ অথবা পশুপাখির অন্যতম অঞ্চল উত্তর পূর্ব ভারতের এই সাতটি রাজ্য। বইটা আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পড়েছি। রেফারেন্স বই হিসেবে খুব কাজে লাগবে। গবেষণার কাজেও বইটা কাজে আসবে। অনেক ভালো ভালো ছবি আছে। ছবির টানেই অনেকে এই বইটা পড়বেন আশা করা যায়।‘’
সঞ্চালক সোমেন সেনগুপ্ত জানতে চেয়েছিলেন এই বইয়ের ছবি তোলার সময় উত্তর পূর্ব ভারতের কোন বিষয়টা তাঁকে বেশি টেনেছে? উত্তরে আলোকচিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘’তিনটে বিষয়ের কথা আপনি উল্লেখ করলেন। বন্যপ্রাণ, আসামের কাজিরাঙ্গা পার্ক বা পশুপাখি এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমাকে টানে ল্যান্ডস্কেপ। অসাধারণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে আর কিছু টানে না।‘’
বিশ্বজিৎবাবু আরও বলেন, ‘’এই প্রকল্প আমরা দুবছর সময় নিয়ে করেছি। ৫৫০ পাতার বই। ছবি আছে প্রায় ৩০০ টি। বই প্রকাশের পর আমার মনে হয়েছে জীববৈচিত্রে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ভারতের প্রথম সারিতে আছে। নাগাল্যন্ডের অরণ্য মণিপুরের মত নয়। আমাদের এই কাজে সামজিক বৈচিত্র এসেছে। তাই চার্চের ছবিও আমি তুলেছি। তবে এই কাজ করে আমরা সন্তুষ্ট নই। পরে আরও গভীরে গিয়ে কিছু কিছু বিষয় সংযোজিত করার ইচ্ছে আছে।‘’
প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে বইয়ের লেখক দীনবন্ধু সাহু জানিয়েছেন, ‘’আমরা এক শৃঙ্গ গণ্ডারে ছবি যেমন বইয়ে ব্যবহার করেছি, আছে অর্কিডের ছবিও এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সম্পর্কে লেখা। উত্তর পূর্বের বাঁশের কাজ সম্পর্কেও আমরা তথ্য তুলে দিয়েছি। যেটাকে ক্র্যাফটসের কাজ বলা হয়ে থাকে। আমাদের আশা পাঠক এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় আগ্রহ খুঁজে পাবেন।‘’                       

No comments:

Post a Comment