Thursday 28 April 2016

গণতন্ত্রের পরিভাষা

সবিনয় নিবেদন,
আপনাদের সমীপে অবান্তর আলাপ করার ঔদ্ধত্য দেখাতে সাহস করে উঠলাম ‘সামাজিক সাংবাদিকতা’ (Social Media) এর খোলা বাতাসের প্রশ্রয়ে। নিজের বাড়বাড়ন্ত দেখানোর অনধিকার চর্চা না করে শুধু এই কথাটা রাখব। রাখব অযত্নলালিত ‘শিল্পসংস্কৃতির’ এক উঠোন আড়ম্বর প্রশ্রয়ে।
আকাশের সঙ্গে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যোগ্যতা নেই। আবেগ কখন ঘুমিয়ে পড়ল। তবুও বড় কথার মানুষ নেই পাশে। বাতাসের সঙ্গে বেড়াতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গাছেরা বড় শান্ত। প্রশ্রয় দেবার আকাশে তারা নেইত। আজ নেই। সেও না হয় মেনে নেবার অবকাশ খুঁজে নেওয়া যাবে। মাকড়সার আঠা মাখানো শিল্পীর তুলিতে আঁকা বহুকথিত সমাজ আছে। আপনারা কি একমুঠো প্রশ্রয় দেবেন? আপনাদের তিলত্তমা প্রশ্রয়ে যদি নিজের অবস্থান হয়, জানি অচল পয়সার মত নিজেকে আড়াল করতে করতে শুনতে হবে। কেটে পড়ুন মশায়। সটান এবং সপাটে বলতে চাই, বুদ্ধবাবু হেলে নয় ‘কেউটে’ ধরেছেন। বুদ্ধুবাবু হেলেও ধরতে পারেন। কেউটেও ধরতে পারেন। যার কথা ধার করে লিখলাম তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে বমাপন্থী দলে নেই। কিন্তু চাষার ব্যাটা রেজ্জাক মোল্লা, সিপিএমের উত্তর অনিল বিশ্বাস যুগে ‘দ্বন্দমূলক বস্তুবাদ’ বোঝার অন্যতম কারিগর। আমি জানিনা, আমার মত জনপদের সাংবাদিককে রেজ্জাকদার মনে আছে কিনা। আমার মত ‘হারমাদদের সর্দারকে’ রেজ্জাকদা কতটা মনে করতে পারবেন। সেই রেজ্জাকদার কথা উল্লেখ করেই বলছি, বুদ্ধুবাবু কেউটে ধরেছেন।
কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধির শৈশব, কৈশোর আক্রান্ত। তিনি এক বাঁও, দো বাঁও গুনতে গুনতে এগিয়ে আসছেন দেশের যোগ্য নেতা হওয়ার দাবিতে। বুদ্ধবাবুকে এদিন যতটা আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল বহু বছর এই আবেগ দেখা যায়নি। যে কথা তিনি তাঁর তাত্ত্বিক বক্তব্যের ভাঁজে ভাঁজে বুঝিয়ে দিতে চেস্টা করেছেন।     
কিছুদিন আগে ‘মানুষের জোট’ গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছিলাম হাজরা পার্কে ‘কংগ্রেসের সভা মঞ্চে’ দীপা দাশমুন্সির পাশে একসঙ্গে কি বুদ্ধবাবুকে দেখা যাবে? আমার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে। ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ কলকাতার ‘পার্ক সার্কাস’ ময়দানে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যৌথ নির্বাচনী প্রচারসভা ছিল। মঞ্চে হাজির কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধি সহ এক ঝাঁক প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা নেত্রী এবং অবশ্যই দীপা দাশমুন্সি। সিপিএমের কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ কয়েকজন সিপিএমের যুব নেতা।
সিপিএমের রাজ্য কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীকে ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত এই বাংলার বৃহত্তর স্বার্থে ‘কংগ্রেসের সভামঞ্চে’ বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতাকে পাঠানোর জন্য। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিকেও ধন্যবাদ। যদিও এর আগে কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গাঁধির দুটি জনসভায় সিপিএম প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারছি, বুদ্ধবাবুকে কংগ্রেসের সভায় পাঠানোর জন্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ ক্ষুব্ধ। এই বিষয়ের সাংবাদিকদের  প্রশ্নের মুখে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন বলেছেন, ‘’পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই এখন বাস্তব প্রয়োজন। মানুষ যা চাইছে, উপর তলায় তারই প্রতিফলন ঘটছে। তা ছাড়া বুদ্ধদেব এখন পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন।‘’
  ক্ষোভের কারণ যাই থাক। যে দলের ‘লৌহ কপাট’ ভাঙ্গছে সেই দলের ‘ক্ষোভ’ বাইরে আসা মানে বৃহত্তর গণতন্ত্রের পরিভাষা তৈরি হওয়া। কারণ পরিভাষায় গণতন্ত্রকে বলা হয় ‘বৃহত্তর সাধারণ মণ্ডল’ ইংরেজিতে ‘The greater common good’কিন্তু এর পরে কি? আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরে বাংলার ‘জনতার আদালত’ রায় দেবে। সম্প্রতি একটি সূত্রে জানতে পারলাম রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতৃত্ব এই মুহূর্তে সরকারে যেতে আগ্রহী নয়। দলের কয়েক জন প্রথম সারির শীর্ষ নেতা দলটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে আগ্রহী। যতটা সম্ভব ‘বেনো জল’ বের করে দলটার খোল নলচে বদলে দিতে চান এইসব নেতৃত্ব। সেই কারণে আগামী দুবছর বামপন্থিরা ‘বিরোধী’ আসনে বসে ‘দায়িত্বশীল বিরোধী’ দলের ভূমিকায় নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। বাংলার ‘শিল্পায়ন’ ‘গণতন্ত্র’ এবং বাঙ্গালির মূল্যবধকে তার স্ব মহিমায় ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী এই গোষ্ঠীটি। সম্ভবত খুব সঠিক সিধান্ত। কারণ দলের পুরনো কিছু ‘বেনোজল’ আবার মাথা তুলতে চাইছে। দাঁত নখ বের করে তাঁরা নিরীহ মানুষের উপর খবরদারি করতে চাইছে। রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে একদল ‘কংগ্রেসের মূল্যবোধে’ বিশ্বাস করে এমন নতুন যুবক-যুবতি এই বাংলার উন্নয়ন দেখতে চাইছে। সময় বলব কোন গাছের ছায়া শীতল হবে।      
যদিও আমারা জানিনা ১৯ মে কি হবে। ‘সোসাল মিডিয়া’ মারফৎ  বামপন্থীদের একটি সান্ধ্য দৈনিকে দেখালাম ‘জোট’কে দেওয়া হয়েছে ১৬৭ টি আসনআর তৃণমূলকে দেওয়া হয়েছে ১২৭টি আসনএই হিসাব ধরলে বিজেপি সহ অন্য দল গুলি শূন্য। যদি ধরে নেওয়া যায় কাগজটি তার পাঠককে টার্গেট করে এই খবর করেছে তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু এই হিসাব ধরে কোনও আহাম্মক ‘উত্তর সম্পাদকীয়’ লিখবে না। মূল্যবোধ আছে এমন উচ্চ শিক্ষিত কিছু নির্বাচিত ‘তৃণমূল’ বিধায়ক নতুন ঘরানায় না থেকে অন্য কিছু ভাবতে পারেন। বিগত পাঁচ বছরের মূল্যায়ন করে এই সব নব নির্বাচিত তরুণ বিধায়করা পূর্বাশ্রমের মঞ্চে ফিরে আসলেও অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না। সর্বপরি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নিজের দায়িত্বে ভোট চাইছেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তিনি আবার নিজে পরখ করে দেখতে চাইছেন। এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ‘বিজেপি’ তাদের আসন সংখ্যা বাড়ানোর সব রকম প্রচেষ্টা করছে। বেশ কয়েকটি আসনে তুল্য মূল্য বিচারের লড়াই আমরা দেখব। পাশাপাশি থাকবে এসইউসি, নকশালপন্থীর মত দল। 
গত প্রায় চার দশকের পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে জটিল অবস্থা সম্ভবত মানুষের মূল্যবোধের। ১৯৭৭ সালে বাম্পন্থীরা যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন দীর্ঘকালীন লড়াইয়ের কারণে সামাজিক মূল্যবোধের কারণটা ছিল অনেক অনেক গভীরে। উদবাস্তু জীবনের স্বজন এবং দেশ হারানোর একটা নিবিড় যন্ত্রণাও ‘বাংলার সংস্কৃতি’ গড়ে ওঠার কারণ ছিল। পশ্চিমের হাওয়ার ঝাপ্টাকেও মনে রাখতে হবে। ফরাসী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব এই দেশে তথা এই বাংলায় ব্যপকভাব দেখা যায়। তার কিছুদিন আগেই ‘তে ভাগা আন্দোলন’ ছুঁয়ে এসেছে এই বাংলা। কৃষক আন্দোলনের নেতারা এই সেদিন পর্যন্ত কমরেড লেনিনকে উধৃত করে লিখেছেন, We are told: ‘’If the peasants seize the land now, it is the richer peasants who will get it those who have animals, implements etc.; would this, therefore, not be dangerous from the point of view of the poor peasants.’’ Comsade, I must dwell on the argument, because our party, in all our divisions, programs and appear to the people, dulaares: ‘We are the party of wage-workers and poor plasants’,  it is their inbereals we are to protect; it is through them, and through them alone, through those clause, than mankind can excape the horrors (First Congress of peasant deputies-Vol, 24, page 402)বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সত্তরের দশকেও রবীন্দ্র উত্তর যুগে ‘বামপন্থী সংস্কৃতির’ সঙ্গে ‘জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতির’ সংঘাত থাকলেও বাংলা তথা বাঙ্গালির ‘মূল্যবোধ’ ভেঙ্গে পড়েনি। বিশ্বায়ন সংস্কৃতির যতই দাপট থাক পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসব কেন? এই প্রশ্ন তুলে আমরা চণ্ডী মণ্ডপে, পাড়ার রকে, চায়ের দোকানে, অশ্বত্থ গাছের ছায়া শীতল বৈঠকি আড্ডায় মশগুল ছিলাম। পারিবারিক, সামজিক আভিজাত্যের অহংকারে।
কিছুদিন আগে উচ্চ শিক্ষিত এক প্রবীণ মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। একটি পাক্ষিক পত্রিকার অফিসে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় বললাম, আগে পরস্পরকে চিনি। সামাজিক সম্পর্কটা আগে হোক। তারপরে রাজনৈতিক বিষয়টা আলোচনা করা যাবে। তিনি অট্টহাসিতে আমাকে আলিঙ্গন করে বললেন, ‘’অসম্ভব ভালো কথা বলেছেন। আজ আমাদের প্রয়োজন পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করা। সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা। সুনন্দ সান্যালের মত অধ্যপককে যদি অসম্মান করা হয় সেটা আপনারা মেনে নিতে পারেন আমরা মেনে নিতে পারব না।‘’

পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সব স্তরের নাগরিকের। কোনও একটি দলের কয়েকজন নেতার দায়িত্ব নয়। কংগ্রেস, বামপন্থীরা যেমন করে ভাবছে, তৃণমূল দলের কিছু নেতা সম্ভবত নিজেদের মত করে ভাবতে চাইছেন কিভাবে দলটির পুনঃনবীকরণ করা যায়। প্রায় গত দু’দশকের ঘনঘটা ভুলে ‘পশ্চিমবঙ্গকে’ নতুন করে তোলার শপথ নিতে হবে নির্বাচিত সরকার এবং বিরোধী বেঞ্চের বিধায়কদের। এই ক্ষেত্রে মারটিন লুথার কিংকে আমরা মনে করতে পারি তিনি বলেছিলেন, ‘যে কোনও জায়গায় অন্যায় ঘটলে সেটা সব জায়গায় ন্যায়ের পক্ষে বিপজ্জনক’’                               

No comments:

Post a Comment