Sunday 8 January 2017

স্বচ্ছ গণতন্ত্রের এক পাই, এক ভাই

স্বচ্ছ গণতন্ত্রের এক পাই, এক ভাই:  

কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে এন ডি এ সরকারের ৩০ মাস সম্পূর্ণ হল। প্রধাণমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন, তিনি নাকি দেশ থেকে দুর্নীতির বোলবোলা বন্ধ করবেন। প্রথমেই প্রসঙ্গ তোলা যাক আপনার দলের ৩৭ বছর বয়স হল। জনসঙ্ঘের ইতিহাস ধরলে আপনি আদবানীজী সহ যারা প্রবীণ হয়েছেন, তাঁদের আধুনিক গণতন্ত্রের কথা আমি শোনাতে চাইছি না। বা নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাইছি না। দেশ থাকলে গণতন্ত্র থাকবে। গণতন্ত্র থাকলে আম আদমি গণতন্ত্র উপভোগ করবে। কখনও প্রশংসা করে। কখনও সমালোচনা করে। ভারতে এফ ডি আই, জিএসটি এই শব্দগুলি পুরনো। ভারতের অন্যতম স্তম্ভ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ আমাদের এই শব্দগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আপনি বলছেন আপনার সরকার দেশের গরীব মানুষের উন্নতির কথা ভাবছেন। প্রশ্ন তোলা যায় গত ৩০ মাসে আপনার সরকার কত লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে? আপনি দলের কর্মসমিতির শেষদিনে (৭ জানুয়ারি) দলের নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সমালোচনা এবং অভিযোগ আসবে। সেইসব সমালোচনা উপেক্ষা করে গরিবদের জন্য কাজ করতে হবে।
খুব ভালো কথা, আপনি যে কথা আপনার অনুগামীদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই ধর্ম আপনি নিজে মানতে পারেন আশা করি। রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে যে নতুন গণতান্ত্রিক কংগ্রেস গড়ে উঠছে তাঁদের আপনাকে মেনে নিতে হবে। আগামী বুধবার ১১ জানুয়ারি রাহুল ‘জনবেদনা সম্মেলন’ করবেন। মানুষের দুর্দশায় কংগ্রেস প্রকৃত এবং একমাত্র অন্যতম প্রাচীন দল এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছেন তাঁরা। অস্বীকার করা যাবেনা রাহুল গাঁধি কংগ্রেস পরিবার থেকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন। একদশকের বেশি সময় রাহুল খুব কাছ থেকে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দলের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এমন সব রাজনৈতিক নেতাদের দেখছেন। কোন দলের কোন নেতার দেশে কতটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটা বর্তমান সময়ে রাহুল গাঁধির থেকে ভালো কেউ বোঝেন বলে মনে হয় না। যেমনটি উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের ক্ষেত্রে কিছুটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কথাও আমরা মনে করতে পারি। গণতন্ত্রের পাঠ নিতে আমাদের সব সময় দেশের আম জনতার কাছে যেতে হবে। নেতৃত্বের তঞ্চকতা ধরিয়ে দিতে মানুষের আদালত নাজুক চোখে মনে করিয়ে দেয় ভারতে থাকতে হলে ভারতীয় সংস্কৃতি মেনেই চলতে হবে।
অন্যদের মনে করিয়ে দিতে জানাই, আমার সীমাবদ্ধ পরিসর থেকে আজ সকালে মনে হল গণতন্ত্র কি? আমরা ঠকছিনাতো? সর্ব ভারতীয় দলগুলিকে বিশ্বাস করে? এটা ভেবে আজ একটা ট্যুইট করি ‘’What is the difference betwwen Democracy and invisible democracy? পরিবর্তে কংগ্রেস থেকে পালটা ট্যুইট পাই। রাহুল গাঁধি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে জল এগিয়ে দিচ্ছেন ডঃ মনমোহন সিংহ কে। ট্যুইটে ক্যাপশন ছিল ‘বড়দের সম্মান করা আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি’
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে দেশের মানুষকে চিনতে খুব বেশি সময় লাগে না। আমার কয়েকটি ছোট্ট খেরোর খাতা আছে। তারই একটি খাতায় নোট নেওয়া আছে, ‘’১৯৪০ সাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ, কংগ্রেসী নেতারা তখনও ইংরেজের সাথে দর কষাকষিতে আগ্রহী। ইংরেজ সুযোগ বুঝে দাবি জানালো— ‘’এক পাই, এক ভাই’’।‘’ প্রতিটি পরিবার থেকে এক পাই যুদ্ধ তহবিলে ও এক ভাই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। স্বামীজী* অনুভব করলেন, ‘’বঞ্চনা বাড়িয়া চলে, ফুরায় সত্যের যত পুঁজি/ কান্ডারী ডাকিছে তাই বুঝি/ তুফানের মাঝখানে/ নূতন সমুদ্রতীর পানে/ দিতে হবে পাড়ি।‘’ রামগড়ে কংগ্রেস অধিবেশন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল ‘সমঝওতা বিরোধী সম্মেলন’ বা ‘Anti Compromise Conference’১৯ ও ২০ মার্চ (১৯৪০) লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলন, সুভাষচন্দ্র বসুর পাশে দাঁড়িয়ে স্বামীজী ঘোষণা করলেন— ‘’ইংরেজকে— না এক পাই, না এক ভাই।’ (ঋণঃ বিশ্বজিত সেন, *স্বামী সহজানন্দ)      


No comments:

Post a Comment