Friday 4 December 2015

পাথ্রচাপুড়ি

আমি বীরভূমের লোক। ধানের শীষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণ। কত সব পোষ-পাবনের মেলা। ধর্ম, জাত, সংস্কার সব মিলে মিশে একাকার। নামে ফাটে বা নামে কাটে 'শান্তিনিকেত্ন', 'জয়দেব মেলা'। কিন্তু নামের ভীড়েও আলাদা করে চিনে নিতে হয়। রুখম লাল পাথরের আলখাল্লার মধযেই। এক শান্ত দাতা সাহেবের মাজার। আমরা আশির দশকে যেতাম।  মেলার সময় যেমন যেতে ভালো লাগত। অন্য সময়েও রাজনগর যাওয়া-আসার পথে টুপ করে নেমে পড়তাম।
'পাথ্রচাপুড়ির মেলা' কথ্য ভাষায় হয়েছে 'পাথ্রচাপড়ির মেলা'। বীরভূম জেলার সদর শহ্র সিউড়ি থেকে ১২ কিমি, দূরতব। বাসে চেপে যেতে হবে। একজন মুস্লিম স্নত তিনি। নাম শাহ মেহবুব। যিনি সাধারণ মানুষের কাছে 'দাতা সাহেব' নামে পরিচিত। দাতাবাবার মাজারের ছাই বযবহার করলে মানুষের বহু দুরারোগ্য বযধি ভালো হয়ে যায়। এমনটাই লোকমত বিশ্বাস। যতদূর জানা যাচ্ছে 'দাতা সাহেবের' মৃত্যু হয়েছিল ১০ই চৈত্র, ১২৯৮ সালে (বাংলা ক্যালেন্ডার)। এই চৈত্র মাসেই 'পাথ্রচাপুড়ির' মেলা হয়। প্রায় এক লাখ লোকের সমাগম হয়। শুধু বীরভূম জেলা নয় ভারত তথা ভারতীয় উপ-মহাদেশ থেকেও ভক্ত্রা আসেন এই মেলায়। এ ছাড়া বছরের সারা মাস ভকতদের ভিড় হয়েই থাকে। ১৯৯৮ সালে খান বাহাদুর পাথ্রচআপুড়ি মাজার প্রিচালন কমিটির প্রথম সভাপতি নিরবাচিত হ্ন। জেলার প্রথম জেলা শাস্ক জে সি দত্ত এই কমিটি গঠন করেন। চৈত্র মাসের প্রখ্র দাব দাহের মধযেও সব ধর্মের মানুষ এই মেলায় হাজির থাকেন। প্রাঙ মুখো রামধনু মেঘেদের 'আউল-বাউলের' মাটি মেখে সব ঘুরে বেড়ায়।
বীরভূমের এই অঞ্চলটিকে নিয়ে আলাদা করে 'পর্যটনের' কথা ভাবতে পারে রাজ্য সরকার। কারণ 'ছোট-নাগপুরের' পাহাড়ি অঞ্চল। পাহাড়ি উপত্যকা। সাওতাল পরগণা জেলার সীমান্তে।  আপন খেয়ালে প্রাচীন বৃক্ষদের অনুশাসনের আদিমতায় প্রকৃতি হাসছে। আদিবাসিদের নীম তেলের মতই আলাদা করে চিনে নেওয়া যায়। আহবান করছে আমাদের। 'বাধ্না' পরবের 'ধামসা-মাদলের' ছন্দে ছন্দে 'রাজাদের' গ্রাম 'রাজনগর' কে কেন্দ্র করে এই পর্যটন ভাবা যেতে পারে।
গ্রামীন সংসকৃতিকে বিষয় ভেবে নিলে কিছু প্রথাগত ধযান ধারণা খুঁজে পাওয়া যায়। সেটাই কি লোক-সংসকৃতি? যা অনযভাবে বল্লে হয় লোকের জন্য সংসকৃতি। পাথ্রচাপুড়ির 'দাতা সাহেবের' মাজারে চাদর চাপানো থেকেই লোকসমাজের উদার সংসকৃতি আমাদের চিনতে অসুবিধা হয় না।        

No comments:

Post a Comment