Friday 25 May 2018

ছাতিম গাছের ছাওয়ায় ভাষা এবং কূটনীতি


ভারতীয় উপ-মহাদেশ হোক অথবা  যে কোনও উপ-মহাদেশপ্রতিবেশী রাষ্ট্রের দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে যখন আলোচনা হয় তখন কূটনীতি থাকবেই। এমনটা ধরে নেওয়া যায়। আজ শুক্রবার (২৫ মে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত একটি বৈঠক হচ্ছে। এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবের পরে এই বৈঠক হওয়ার কথা। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে উপস্থিত থাকবনে। এদিনের সমাবর্তন মঞ্চে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করতে। সমাবর্তন এবং ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে দু’ই দেশের প্রধানমন্ত্রী আলাদাভাবে বৈঠকে বসবেন। এমনটাই এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়ে আছে।
উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই বৈঠক দু’ই দেশের প্রধানের শেষ বৈঠক। যে কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে ছাপিয়ে  দুই দেশের কূটনীতিকদের কাছে বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সূত্রের খবর, বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিক সম্মেলন করেন।  বাংলাদেশের সাংবাদিকদরা দুই প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে আবুল হাসান মাহমুদ আলী কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর
মোদি চাইলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই মন্ত্রীর বক্তব্য
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘’ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া সহ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের যে অবদান তা বাংলাদেশ কখনো লেনি। কাজেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকতেই পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসতেই পারে‘’
তিনি আরও বলেন, ‘’দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট, বিশেষত বাস্তুচ্যুতদের ফেরাতে ভারতের কার্যকর সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মোদ সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে পরিকাঠামো তৈরিতে ভারত সহযোগিতা করবে বলে এর আগে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষীক বৈঠকে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন‘’
বাংলাদেশ সচিবালয় সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর মন্ত্রীসভার যে উচ্চ পর্যায়ের দল এসেছে সেই দলে বাংলাদেশ জলসম্পদমন্ত্রী নেই। ফলে ধরে নওয়া যায় এইপর্বে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে খুব একটা অগ্রগতি হওয়ার সম্ভবনা নেই। যদিও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় শান্তিনিকেতনে পৌঁছে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘’বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন আছে। বাংলাদেশ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আমিও থাকব। কথা হবে। পরের দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা করেও কথা হবে।‘’
শুক্রবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন। এর পরে রয়েছে মোদী-হাসিনার বৈঠক। বৈঠক চলবে একঘণ্টা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থ জড়িত আছে এমনসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। প্রাসঙ্গিক এই আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ এসেই যাবে। সেই কারণে সরকারি নিয়ম কানুনের বাইরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে নেওয়া হতে পারে।
 নির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচী অনুযায়ী ২৬ মে (শনিবার) আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক ডিলিট নিতে যাবেন হাসিনা। কলকাতায় ফিরে নেতাজী ভবনে যাওয়ার কথা তাঁর। সেখান থেকে ফিরে তিনি আলাদা করে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন।  বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে তাঁর হোটেলে দেখা করতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। এবারের ভারত সফরে আসার তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য অবিভক্ত বাংলার স্মৃতিকে উসকে দেওয়া। বাংলাদেশ বিদেশ দপ্তর সূত্রে খবর ‘বাংলাদেশ ভবনে’ বাংলা ভাষা এবং বাংলা সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষনার সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। এই ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক থিয়েটার, প্রদর্শনী কক্ষ, বিশাল লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কিত গ্রন্থ বাংলা ভাষা এবং বাংলা জাতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজের অনুভূতির কথা লিখেছেন সম্প্রতি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রথম সারির বাংলা দৈনিকে আজকের প্রভাতি সংস্করণে হাসিনা লিখেছেন, ‘’বিশবকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন হতে চলেছে, এটা কত যে আনন্দের এবং গৌরবের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। শান্তিনিকেতনে এই ভবন স্থাপনের সুযোগ প্রদানের জন্য আমি বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার, ভারত সরকার এবং সর্বোপরি ভারতের বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি গভীর কৃতঞ্জতা জানাচ্ছি। আমি আনন্দিত এ জন্য যে, ভবনটি  প্রতিষ্ঠায় যৎসামান্য হলেও আমার সম্পৃক্ততা থাকল।‘’    
২৫ মে বিশ্বভারতী বিশব্দ্যাল্যের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দো্যপাধ্যায়ের বলা কিছু অংশ আমরা উল্লেখ করছি। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প - ২০৪১ বাস্তবায়নে পূর্ণ সহায়তা এবং সমর্থন দিবে ভারত,,,
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে দুদেশের অমিমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে আশাবাদ; রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ভারতের পূর্ন সহযোগীতা কামনা,,,,,

- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভবনটি উদ্বোধনের তারিখটিকে ‘গর্বের দিন’ উল্লেখ করে তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় কৃতজ্ঞতা জানান মমতা। বলেন, ‘ভবনটি দারুণ’ হয়েছে’।
‘এত সুন্দর লেগেছে, আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে, বিউটিফুল’।
‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নামেও একটা একটা ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ করতে চাই। যখনই দেবেন সুযোগ, আমরা কবর।’
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ। 



 

No comments:

Post a Comment