Saturday 2 December 2017

কে কাকে দায়িত্ব চেনাবে? এই সমাজে আমরা স্বর্ণ চেয়ারের ভাষা চিনি

কে কাকে দায়িত্ব চেনাবে? এই সমাজে আমরা স্বর্ণ চেয়ারের ভাষা চিনি: 
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গণমাধ্যমকে তার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।  তিনি বলেছেন, গণ মাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনিউপদেশ দেওয়ার দায়িত্ব তারই।  তিনি নির্দিষ্টভাবেই ভারতীয় গণমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু আড়ালে থেকে গেছে সরকারের সমালোচনা সাংবাদিক সুলভ ভাষায় না করলেই ভালো। সাংবাদিকের ভাষাকে সবাই সমীহ করে! সেই ধ্রুপদী সত্যের সরণীতে আমাদের চলা ফেরার দায়িত্ব কে কাকে চেনাবে? এই সমাজে আমরা স্বর্ণ চেয়ারের ভাষা চিনি। আপনারা যারা এখনও বড় বড় মানুষের ভাষায় কথা বলেন। বা যারা ‘বোকা বাক্স’-এর গরম খবর দেখে সন্তুষ্ট হতে চান তাঁদের কাছে সবিনয় নিবেদন করি ‘হাতে গরম’ খবর নয়। ধ্রুপদী সাংবাদিকতায় যারা নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। যারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুকে মেনে নিয়েছেন তাঁদের খুঁজে খুঁজে চিনুন। আপনার বাড়ি, আমার আঙ্গিনায় তারা আজও নিঃসঙ্গ। অর্বাচীন। সংবাদ মাধ্যমের সেইসব সৎ, নির্ভীক, নিরপেক্ষ কর্মীরা কব্জির মোচড়ে দেশ দুনিয়ার প্রশাসনের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারে। আমাদের দেশে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যু যেমন এই দেশের সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘প্যারাডাইস পেপার্স’ কেলঙ্কারি ফাঁস করে দেওয়া অন্যতম সাংবাদিক ড্যাফনে কায়ারুয়ানা গালিজিয়াতিনি সামনের বারান্দা  থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। সেই অসম সাহসী মহিলা খুন হয়ে গেলেন কিছুদিন আগে। গৌরী লঙ্কেশ খুনের মাত্র কিছুদিন পরেই এই ঘটনা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর পানামা পেপার্স দুর্নীতি ফাঁস করে দেওয়া সাংবাদিক ড্যাফনে কায়ারুয়ানা গালিজিয়া মাল্টায় একটি শক্তিশালী গাড়িবোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তার। ওইদিন বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামীরও। ঘটনারদিন দুপুরে বিস্ফোরণের মাত্র আধঘণ্টা আগেই তিনি ব্লগে একটি লেখা পোষ্ট করেছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘চারিদিকে দুর্নীতিবাজরা ছেয়ে গিয়েছে, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।’ আন্তর্জাতিক দুর্নীতি ফাঁস করে দেওয়া সাংবাদিক ছিলেন ড্যাফনে। মৃত্যুই কি তাঁর বা তাঁদের ভবিতব্য?
গৌরী হত্যা প্রসঙ্গে একটি মার্কিন পত্রিকা লিখেছে, ‘নরেন্দ্র মোদী যদি এই হত্যাকান্ড এবং হিন্দু সন্ত্রাসের   সমালোচকদের হেনস্থার নিন্দা না করেন, তা হলে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ ভারতে সাংবাদিক হত্যা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট, বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক বাতাবরনের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিবেকের কাছে ঠোক্কর খেয়ে ফিরে আসছে। ভারতের এক এক রাজ্যে এক এক রকম চেহারায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত। তথাকথিত উচ্চবিত্ত কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি কি সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকের চোখের ভাষাকে সমীহ করছেন? সেই কারণে প্রথমে হুমকি, পরে সরকারি কার্ড কেড়ে নেওয়া বা রিনিউ না করা। যে ভাবে হোক কর্মচ্যুত করে রেখে দেওয়া। সংগঠিত একটি দুটি বা সংখ্যায় আরও বেশি চক্র স্বক্রিয়ভাবে এই কাজ করে থাকে। দীর্ঘদিন কর্মচ্যুত করে রাখা। অর্থনৈতিক সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া। চিকিৎসার অধিকার, পারিবারিক অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা সব কিছু কেড়ে নিতে থাকে ওইসব সংগঠিত এবং সুশিক্ষিত চক্র। গঠনমূলক সাংবাদিকতায় যারা বিশ্বাস রাখে, যারা কলম ধরে তাঁদের ভবিতব্য অনিবার্যভাবেই এই পরিণতি ভোগ করতে বাধ্য হয়। অথবা বাধ্য করা হয়। সংগঠিত এবং স্বক্রিয় কিছু গোষ্ঠী দেশে আছে, যারা কালো টাকা বা অবৈধ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর অঙ্গুলী হেলনে মৃত্যু হচ্ছে সাহসী, নাগরিক সচেতন, ভদ্র, সৌজন্যবোধ আছে এমন কিছু সাংবাদিকের। গত পনেরো বছরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কমপক্ষে চল্লিশজন সাংবাদিকের মৃত্যুর কোনও কিনারা হয়নি। উল্লেখিত একই সূত্র বলছে, গত দেড় বছরে আমাদের দেশের নানা রাজ্যে চুয়ান্নজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থা এবং ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হয়েছে। এই ধরণের মামলার সংখ্যা পয়তাল্লিশটি। কারও ক্ষেত্রে মামলা তাঁর অজান্তে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই সাংবাদিকের কলমকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছেন। যারা তাঁর কলমকে পছন্দ করেন তারাই এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেইসব ব্যক্তিরা যেমন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের পদস্থ ব্যক্তি আছেন। আবার রাজনৈতকি সাংস্কৃতিক জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা ওইসব আক্রান্ত সাংবাদিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি কিছু পরশ্রীকাতর ব্যক্তি আছেন যারা সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যকে নিজেদের বৃত্তে রাখতে বাধ্য করেন। নিজেদের গোষ্ঠীর খবর নিজেদের মত করে প্রকাশ করার জন্য। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার রিপোর্ট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খবর করার জন্য ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৫২ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। যে সব মৃত্যু সরকারীভাবে নথিভুক্তি করা সম্ভব হয়েছে সেই হিসেব ধরে এই রিপোর্ট।
ভারতে গৌরী লঙ্কেশ হত্যার পরে কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি অভিযোগ করেছিলেন, এখন বিজেপি আরএসএসের আদর্শের বিরুদ্ধে যিনি কথা বলবেন, তাঁর উপরেই চাপ বাড়বে, আক্রমণ হবে, এমনকী হত্যাও করা হবে। রাহুল গাঁধি আরও বলেন, ‘’প্রধানমন্ত্রী একজন দক্ষ হিন্দু নেতা তাঁর শব্দের দু’টি অর্থ থাকে। একটি নিজেদের ভিত্তির জন্য, অন্যটি বাকি দুনিয়ার জন্য। তিনি এমনিতে কিছু বলেন না। অনেক ঘটনা ঘটে গেলে তার পর ভাবেন, কিছু বলে দিই।‘’ সাংবাদিক গৌরী খুনের কিছুদিনের মধ্যে বিজেপি দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের মাঝে নিতিন গড়কড়ী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘’অসহিস্নুতার প্রশ্নে বিরোধ হলেও কোনও সাংবাদিককে হত্যা করাটা নিন্দনীয় ঘটনা। তবে একই কারণে অন্য দলের রাজনৈতিক কর্মীদেরও হত্যা করা হয়। নিন্দনীয় সেটাও।‘’  আমাদের রাজ্যে গৌরী লঙ্কেশ হত্যার প্রতিবাদে কলকাতায় (৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭) সাংবাদিকদের যে মোমবাতি মিছিল হয়েছিল সেই মিছিলে আমাদের সঙ্গে হেঁটে ছিলেন বাংলার অগ্নি কন্যা তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশ্বের সাংবাদিকরা যে কতটা আক্রান্ত সেই তথ্য আমরা পাই ডন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে। ৭ জুন ২০১৭ সংস্করণে পত্রিকাটি লিখছে,
‘’A global body that seeks to protect the right of journalists across the world to work in a free environment has decried legislation introduced by the South African government that threatens a free and independent press.
The board of the World Association of Newspapers and News Publishers (WAN-IFRA), which represents 18,000 publications in 120 countries, called on the South African government to ensure an environment that better protects media freedom and independence of journalists.
"WAN-IFRA has expressed its deep concern that the [South African] government is considering a range of measures 'that will intimidate the press, promote self-censorship and silence criticism',” said a press statement issued by the body following a board meeting in Durban, South Africa.
The WAN-IFRA board criticised a number of proposed bills that it said, once approved, are likely to expand the South African government's powers to suppress journalists and censor content.
ADVERTISEMENT
In particular, it termed a cybercrime bill currently tabled before the South African parliament as an “assault on the right to digital privacy” and denounced the draft Prevention and Combating of Hate Crimes and Hate Speech Bill, which would criminalise "bringing contempt and ridicule" onto figures of authority,
"The Board also noted that the controversial Secrecy Bill could still be signed into law after Parliament recommended President Jacob Zuma give it his final approval, despite vigorous opposition from media and civil society groups."
The board separately expressed deep concern over the detention of some 150 journalists and the sacking of thousands of media employees en masse in Turkey.
The state suppression of press "removes accountability from Turkey’s ruling elites and severely damages Turkey’s democratic credentials", the board's statement said.
"The Board [...] dismisses the Turkish authorities’ persistent and deliberate attempts to smear journalists by association with terrorism or terrorist-related activities," it said, and called on Turkish authorities to immediately free all detained journalists.
The WAN-IFRA board also passed six other resolutions in support of media facing state authority in Turkey, Botswana, Cameroon, Tanzania, Zambia and Mexico.’’ 
উন্নত গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা। রিপাবলিক দলের শাসন চলছে আমেরিকায়। নেতৃত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমান আমেরিকার কোনও এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে হয়ে গেল ট্রাম্প জমানায় মুক্ত চিন্তা এবং সংস্কৃতি নিয়ে এক বিতর্কসভা। বর্তমান সময়ে এই বিতর্ক আমেরিকার মতো উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে ‘জাতীয় বিতর্ক’-এর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া’ একটি অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় অভিজাত স্নাতক তৈরির অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে এক সপ্তাহ ধরে চলেছে ‘Free Speech week’ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ থেকে ‘মুক্ত চিন্তা’ বা ‘উদার সংস্কৃতি’ বিষয়ক বিতর্কসভা শুরু হয়ে সাতদিন টানা চলে। ‘দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার প্রতিবেদক থমাস ফুলার লিখছেন, ‘’............But simplectic geometry will not be meeting for its scheduled session on Tuesday because the professor, Kartin Wehrheim, is one of dozens of faculty members who have cancelled classes ahead of a series of scheduled appearances by Right-Wing speakers next week in the latest round of Berkeley’s free speech wars.
‘It’s just safe to hold class’, Professor Wehrheim said. ‘’This is not about free speech. These people are coming here to pick a fight.’’
Berkeley, which has become during the Trump presidency an ideological battle ground in the national debate over free speech on college campuses, is bracing for several days of disruption when a group of conservative speakers is set to appear on campus as part of an event billed ‘’Free Speech Week’’.
Invited by a small student group calling itself Berkeley Patriot, the speakers will feature Milo Yiannopoulos, the Right-wing provocateur, whose appearance on campus in February was cancelled when protesters attacked the building where he was scheduled to speak.
Other speakers initially invited included Stephen K. Bannon, Ann Coulter and Mike Cernovich, a far-Right blogger. However a number of them have now said they will not appear, leaving the final line-up unclear.
দেশটি আমেরিকা বলেই কি গণতন্ত্রের হৈ চৈ করা এই উৎসব? বৃহত্তর এবং উন্নত গণতন্ত্রে বিতর্ক থাকবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, সামাজিক সোউজন্য থাকবে এবং অবশ্যই সংসদীয় সৌজন্যের মাপকাঠি মেনে। এই অধিকার এবং দাবিকে সভ্যতা বিকাশের পরম্পরা হিসাবেই দেখা হয়। কিন্তু ভারত নামক দেশটি বারে বারে ফিরে যেতে চাইছে সামন্ত মূল্যবোধের ধারাবাহিকতায়।     
এই সংলাপ লেখার সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এলো আরও এক আন্তর্জাতিক দুর্নীতির খবর। যে খবর আমাদের সামনে তথা ভারতীয় রাজনীতি এবং সংবাদ মাধ্যমের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা কোন দেশে বাস করি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিক ৭ নভেম্বর, ২০১৭ সালের প্রভাতি সংখ্যায় লিখছে, ‘’সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের তদন্তে জানা গিয়েছে, কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত দেশগুলিতে টাকা পাচার, লগ্নি বা লেনদেন সংক্রান্ত নথিতে ৭১৪ জন ভারতীয়ের নাম রয়েছে। দেশের বহু কর্পোরেট সংস্থার নামও রয়েছে ‘প্যারাডাইস পেপারস’ নামের এই নথিতে। ‘’
ওই দিনের দৈনিকটি আরও লিখছে, ‘’কী এই ‘প্যারাডাইস পেপার্স’? প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ নথি মূলত বারমুডার আইন সংস্থা আ্যাপলবাই ও সিঙ্গাপুরের এশিয়াটিক সংস্থার মধ্যে তথ্যের আদান প্রদান। এই সংস্থা দু’টি মূলত কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন সংস্থাকে কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত দেশে লগ্নিতে সাহায্য করে। বহু দেশের রাঘববোয়ালেরই নাম রয়েছে তাতে। কোন দেশ থেকে কতজন রয়েছেন, সেই হিসেবে ভারতের স্থান প্রথম সারিতেই। ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৯ নম্বরে।‘’
একতরফাভাবে রাজনীতির ময়দান বা কর্পোরেট দুনিয়াকে সমালোচনার মঞ্চে এনে লাভ হবে কি? দায়িত্ব আমাদেরও মানে সংবাদ মাধ্যমেরও রয়েছে। আমরা সাংবাদিককুল কোন বাধ্য বাদকতার কারণে সমঝোতা করি? অথবা সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণেই কি রাজনীতির মঞ্চে মুক্তির পথ খুঁজি? আমরা সাংবাদিকদের রাজনীতিতে যোগদান করার বিষয়টা ভেবে দেখতে চাইছি। বা পর্যালোচনা করে দেখতে পারি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা না করাটাই গঠনমূলক প্রতিবেদকের কাজ হবে বলে মনে হয়। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর ভারতে আমরা দু’জন খ্যাতনামা ভারতীয় সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করতে পারি। এক, অরুণ শৌরি। যার দৃষ্টি ছিল প্রখর। কলম ছিল কালবৈশাখী ঝড়ের আগের মুহূর্ত। যে কোন ঝড়কে তিনি তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে গভীর মনযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করতেন। তারপর শব্দের মোহময়তার ঝড় তুলতেন। কিন্তু রাজনীতি তাঁর সেই জাদুকরী কলম ছিনতাই করে সংবাদ মাধ্যমকে মোক্ষম জবাব দিয়েছে সম্ভবত। রয়েছেন দ্বিতীয়জন। এম জে আকবর। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের তারকা ছাত্র। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সানডে’, ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার ঠাস বুনোট সকালের আটটা নটার সূর্যের মতো আলো বিচ্ছুরিত করেছিলেন। বর্তমানে এম জে আকব্র এবং অরুণ শৌরি মহাশয় আপনারা রাজনীতিতে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কি সাহায্যে এলেন? আমেরিকার সাম্প্রতিক ঘটনা আমরা মনে করতে পারি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক সময়ের মুখ্য ব্যানন সাহেবের কথা বলছি। তিনিও বর্তমানে প্রাক্তন। সাদা বাড়ির পাট চুকিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন পুরনো পেশায়। বর্তমানে ব্যানন সাহেব এখন পুরোদস্তুর সাংবাদিক সম্পাদক। আমাদের রাজ্যের তিক্ত অভিঞ্জতার পরে তৃণমূল দলের প্রধান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন আর কোনও সাংবাদিককে তিনি রাজ্যসভা বা লোকসভার সদস্য করবেন না। সময় বলবে তিনি আবার কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন!
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জানতে পারছি বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা। সেই দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা সময়ে এসে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা মেনে নিয়েছেন। প্রায় এক বছর আগে আমেরিকায় সংবাদ মাধ্যম নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, “It keeps us honest,” he continued. “It makes us work harder. You’ve made us think about how we are doing what we do and whether or not we’re able to deliver upon what’s been requested by our constituents.” (The Huffington Post, 19/01/2017)   
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রায় চার বছর দেশ শাসনের পর দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে ‘রাজ ধর্ম’ পালনের কথা বলতে এগিয়ে এলেন। ৬ নভেম্বর, ২০১৭তে প্রধানমন্ত্রী মোদী চেন্নাইয়ে একটি তামিল সংবাদপত্রের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হয় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেইদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় মোদী বলেন, ‘’সংবাদমাধ্যমের উচিত নয় ক্ষমতার অপব্যবহার করা। এটা অপরাধ। আর সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের মানুষের স্বার্থেই হওয়া উচিত। লেখার স্বাধীনতার অর্থ কখনওই ভুল তথ্য দেওয়ার স্বাধীনতা হতে পারে না।‘’        

       আসুন আমরা প্রথমেই উচ্চারন করা একটি বাক্য আবার পুনরাবৃত্তি করি। সেই ধ্রুপদী সত্যের সরণীতে আমাদের চলা ফেরার দায়িত্ব কে কাকে চেনাবে? এই সমাজে আমরা স্বর্ণ চেয়ারের ভাষা চিনি। শেষ পরিচ্ছেদে  এসে উল্লেখ করি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বন্ধুসুলভ আবেদন। জাতীয় সংবাদমাধ্যম দিবসে আমাদের পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত দেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্য এক উজ্জ্বল গণতন্ত্রের ভিত্তিই হলো সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা। ১৬ নভেম্বর এক ট্যুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘’স্বাধীন সংবাদমাধ্যম তো সফল গণতন্ত্রের ভিত্তি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।‘’ জাতীয় সংবাদমাধ্যম দিবসে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। খুব ভালো। কিন্তু আপনারা কি অভুক্ত, অর্ধভুক্ত, সমাজচ্যুত, পরিবারচ্যুত, একঘরে হয়ে যাওয়া, আক্রান্ত, সমাজ বিচ্ছিন্ন সাংবাদিকদের পাশে আছেন? ন্যায় এবং সত্যের জন্য যাঁরা ‘রাজ ধর্ম’-এর প্রয়োজনে কলম ধরেন। জাতীয়তাবাদী এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং নিরন্ন ভারতবাসীর তথ্যচিত্র আঁকেন। দেশের যে কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন অচেনা ফুটপাথে হাঁটা নবীন প্রবীণ কলমচিরা। আলোক সন্ন্যাস নেওয়া সংবাদ মাধ্যমের উল্লেখিত কর্মীদের পাশে আছেন আপনারা? পাশে থাকবেন আপনারা? দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক এবং নৈতিক সংবাদ মাধ্যমের দাবী মেনে আপনারা ওইসব কর্মীদের কতটা নিরাপত্তা দিতে পারবেন?              

No comments:

Post a Comment