Monday 12 June 2017

ভাঙড়ে কি নতুন অধ্যায় শুরু হবে?

ভাঙড়ে কি নতুন অধ্যায় শুরু হবে?:  
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় থেকে নেমে এসে ভাঙড় যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পে ভাঙড়ের টোনা মৌজায় ৪০০/২০০ কেভির দুটি সাব-স্টেশন এবং ২৮টি টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা আছে। গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্তার দাবি ২০১৪ সালে সাব-স্টেশন এবং টাওয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় অধিগৃহীত জমির টাকা চেক মারফৎ জমি মালিকদের দেওয়া হয়। সেই সময় স্থানীয় বিডিও সহ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। ইউপিএ সরকারে দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালে ১৩.৪৪ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের উন্নয়নের  শ্লোগানকে সামনে রেখে। এবং তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল দেশের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। একটি গ্রামও যেন বিদ্যুৎহীন না থাকে সেই সিদ্ধান্তমতই জমি অধিগ্রহণ হয়। সংস্থা সূত্রে খবর, ১৩.৪৪ একর জমি অধিগ্রহণের সময় প্রতিটি জমি মালিকদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করা হয়েছিল। পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন  কর্তাদের দাবি কোথাও কোনওরকম ফাঁক ফোঁকর রাখা হয়নি। সিঙ্গুরের অভিঞ্জতার কারণে গ্রিড কর্তারা অনেক বেশি সতর্ক ছিলেন।  সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাঙড়ের জমি মালিকদের একর প্রতি ১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্ষেত্রে তৎকালীন বাজার দর ছিল প্রতি একরে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা। সূত্রের খবর এক একটি টাওয়ার বসানোর জন্য জমি মালিকদের প্রায় চার লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ভাঙড়ে জমি অধিগ্রহণে এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।   
গত সাতমাস ধরে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ‘ভাঙরে জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ আন্দোলন করছে। গত ১৭ জানুয়ারি পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন প্রকল্পের বিরোধিতায় আগুন জ্বলেছিল ভাঙড়ের ওই অঞ্চলে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম না মেনে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধ হয়। এলাকার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিরোধী দলেনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পরে অঞ্চলে পৃথক পৃথকভাবে সভা করেন। বিজেপির থেকেও জনসভা করা হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব দলীয় স্তরে নিজেদের ব্যার্থতা মেনে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করে। সাতমাস ধরে চলতে থাকা সেই আন্দোলন বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেটা এলাকার মানুষ ভালো টের পাচ্ছেন। আন্দোলনের আঁচ যে এখনও রয়েছে তাঁর প্রমাণ রাজ্য পুলিশ প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা প্রকল্পের কাছে তপোবন মাঠে না করে সরিয়ে নিয়ে গেছে বাসন্তী হাইওয়ের কাছে ‘ভোজেরহাট’ মাঠে।  কারণ রাজ্য প্রশাসন ভাঙড়ে যে কোনও ধরণের হিংসাত্বক আন্দোলন বন্ধ করতে চাইছে। তাই কনও ঝুঁকি না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার নিরাপত্তার কথা ভেবে জায়গা পরিবর্তন। রাজ্যে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে গেলে এই ধরণের আন্দোলনকে মুখ্যমন্ত্রী বরদাস্ত করবেন না। গত ছ বছরের অভিঞ্জতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের দিশা রাজ্যবাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি দার্জিলিং নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী কতটা কঠোর হতে পারেন সেই উদাহরণ রাজ্যবাসী অনুভব করছেন। যদিও বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখছেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নিচ্ছেন না অথবা নিতে চাইছেন না। কারণ হিসাবে তাঁদের বক্তব্য রাজ্য প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ভাঙড় থেকে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়েছে। বিরোধীদের এমনই অভিযোগ। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ভাঙড়ের জমি নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাঁদের নেতৃত্বে একটি ফোরাম দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা শাসকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ এবং ডেপুটেশন কর্মসূচীতে সামিল হয়। সেদিন দুপুর ১টা নাগাদ আলিপুরে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র বাড়ির সামনের রাস্তা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। গাড়ি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ওইদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করেন। ওইদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে ভাঙড়ে গুলিকান্ডে নিহত মফিজুলের বাবা শুকুর আলি বলেন, ‘’কোটি কোটি টাকা চুরি করে নেতারা ঠান্ডা ঘরে থাকবে আর যারা মাঠে ক্ষেতে ঘাম ঝরিয়ে শ্রম দেবে তাদের জমি জীবিকা রক্ষার সংগ্রাম দমন করতে জেলে ঢোকানে হবে এটা চলতে পারে না।‘’ ওইদিন সমাবেশ থেকে ৯ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। ওইদলে ছিলেন জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির পক্ষে শুকুর আলি, রুহুল আমিন, মহাদেব মণ্ডল, ভাঙড় সংহতি কমিটির পক্ষে দিবাকর ভট্টাচার্য, অনুরাধা দেব, স্বপন গাঙ্গুলি, গৌতম চৌধুরী, সিপিএম নেতা শমীক লহিড়ী এবং তুষার ঘোষ।    
মুখ্যমন্ত্রী ইতিপূর্বে ভাঙড় প্রসঙ্গে যে কথা বলেছিলেন সেই কথার সঙ্গে আমরা শুকুর আলির কথার মিল কি খুঁজে পাচ্ছি না? মুখ্যমন্ত্রীর কথা যতদূর মনে করতে পারছি। তিনি বলেছিলেন ভাঙড়ে জমি মাফিয়াদের খুঁজে বের করতে হবেকৃষকদের একছটাক জমিও রাজ্য প্রশাসন অধিগ্রহণ করবে না। তাঁর ভাষায় ‘আমার কাছে সব খবর থাকে। কে বা কারা এইসব জমি মাফিয়াদের সাহায্য করছে সেইসব খবরও আমি জানি। আমারদের দল এসব অনুমোদন করে না বাংলার উন্নয়ন নিয়ে আমি রাজনীতি করতে দেব না। সে বিরোধীদল করুক অথবা আমাদের দলের কেউ। কোনও সমঝোতার জায়গা নেই।’  
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা আজও কতটা পিছিয়ে আছে সেটা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরলে বুঝতে পারা যায়। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি ভাঙড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হবে। এতদঅঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য যেটা অত্যন্ত প্রয়োজন। এত বড় একটি কর্মযঞ্জ শেষ হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই অঞ্চলে একটি উপনগরী গড়ে উঠবে। অঞ্চলের সমাজ সচেতন মানুষের বক্তব্য এইজন্যই কি ভাঙড় অঞ্চলে কেউ কেউ অথবা কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে গণ্ডগোল তৈরি করতে চাইছে? যাতে এলাকার উন্নয়ন না হয়। পাপাপাশি তাঁদের আরও বক্তব্য উন্নয়নের নামে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। প্রকৃত জমির মালিকরা যেন ন্যায্যমূল্য পায়। মুখ্যমন্ত্রীকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি আজ মুখ্যমন্ত্রী ভাঙড়ে নতুন কোন অধ্যায় শুরু করেন?

                                                  

No comments:

Post a Comment