Saturday 13 May 2017

হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাত যাও

হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাৎ যাও: 

সাগর ছুঁয়েছি সেই কত কম বয়সে। আশির দশকে। দূর থেকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কি ছিল? শেকসপিয়র (খুব ভয়ে ভয়ে), ইলিয়ট (আরও ভয়ার্ত ছিলাম), জঁ পল সাত্রে, মার্ক টোয়েন, মঁপাসা, লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, নোয়াম চমস্কি, পাবলো নেরুদা, হলিউড, স্পিল বার্গের পৃথিবী, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড, টেমস নদী, বার্মিংহাম প্যালেস। এইখানে কোনও একদিন থামতে হয়েছিল। তারপর গঙ্গা, খালবিল, নদনদী, ক্যানেল, উপনদী, ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।‘ এইখানে থেমে ছিলাম একদিন। মান গেছে। মর্যাদা শব্দ আগামীতে বিলুপ্ত হবে হয়ত।  আলো গেছে। তবুও সংসার আছে। থেকে গেল গাছের নাম জানা অজানা পাখিগুলি। আজও আছে সারি সারি পিঁপড়ের দল, এই বাড়িতে যেদিন প্রথম এলাম সেদিন থেকেই ওরা আছে। এই দেওয়ালে, ওই দেওয়ালে, ওরা ওদের মত থাকে। আমাদের কোনও বিরক্ত করে না। আমরাই কখনও অমানবিক প্রশ্রয়ে ওদের মিছিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। কয়েকজন কুটুস করে কামড়ে দেয়। ব্যাথা প্রায় নেই বললেই চলে। ওই একটু চুলকুনি থাকে। পাছু চুলকতে চুলকতে আমার পাড়ার এক পাগল প্রতিদিন মেহের আলির মত করে নয়। পাগলটা নিজের মত করে বলে ‘কেউ তফাৎ যাবে না। কোনও বাপের ব্যাটা আমার কষ মুছতে আসবে না। কোনও সভ্যতা আমার লেংটি খুলতে চাইবে না। কেন আমি পাগল? হে হে!কেউ তফাৎ যাবে না। আমি গণেও আছি। তন্ত্রেও আছি। হে! হে!। কেউ তফাৎ যাবে না।’ ছাদ থেকে মাঝে মাঝে লোকটাকে দেখি। ছাদে আমি নিজেও বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। গাছে, জানলায়, ঘুল ঘুলিতে ‘বক বকম’, ‘বক বকম’ নিঝুম দুপুরে কারা হাতছানি দেয়। যদিও ওরা পুরুষ নয়। এই হাতছানি আমাকে অসামাজিক করতে চেয়েছিল। অথবা তথাকথিত অভিজাত সমাজের চুঁইয়ে পড়া সৌজন্য টেনে নিতে চায় ‘নিঝুম’ আলোর কোনও এক অচেনা ঘুলঘুলিতে। সে অন্য সখা সখির গঙ্গার ধারের গল্প। আজ থাক। লোকটাকে ছাদ থেকে একদিন দেখছি। কাকে ডেকে পাগলটা বলছে, ‘’এই যে শুনুন ভাই আপনি প্রবর্তক। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। কারও বাপের জমিদারিতে গোলাম খাটেন নাকি? আমি টিকটিকি চিনি। আমার বয়স কত জানেন? গাই বলদ নিয়ে আমি মাঠে মাঠে ঘুরেছি। কাস্তে দিয়ে ধান কেটেছি। হাতুড়ি দিয়ে নাকে মেরেছি! কেন জানেন? এই দেখুন আমার নাকের উপর দু’টো শক্ত পোক্ত চুল আছে। বাল নয় চুল আছে। আমাদের বাঙালি কর্তাদের মত দু’-দু’টো শিং আছে। কেউ, কেউ তফাৎ যাবে না। হে হে।‘’
গোবেচারা বাসন্তীর একজন সাধারণ মানুষ সে আর কি বলবে? অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পাগলটা তখনও বকে চলেছে। ‘’হাট্টিমা টিম টিম, তাঁরা মঞ্চে পাড়ে ডিম। ওদের এসইউভিতে দু’টো করে সিং। তারা হাট্টিমা টিম টিম। তাঁরা মঞ্চে পাড়ে ডিম। হে হে। কেউ তফাৎ যাবে না।’’ রিক্সা ওয়ালা হোক বা সে যেই হোক কেউ ঘাটায় না লোকটাকে।      
পাগলটা একদিন আমায় রাস্তায় ধরল। হঠাত জানতে চাইলে আমার বাড়ির কথাবললে, ‘এই লোকটা তোর বয়স কত? আমি গাছের বাদিকে থাকা পাকা আম নই। কাঁচা আমতুই যে বাড়িতে থাকিস সেই বাড়িতে তুই ছ-সাত বছর আগে যখন এলি তোর সঙ্গে দু’তিনটে ইঁদুর এসছিল। ইঁদুর দু’টো অনেকদিন ছিল। তোকে পাহারা দিত ওরা। হে হে আমি জানি। আমার নেংটি কেউ খুলবে না। ন্যাংটার আবার বাটপাড়ের ভয়? বল আমি ঠিক বলছি?’
উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়নি। উত্তর দিলাম না। লোকটা আবার বলল, ‘তোর এই বাড়িতে কয়েকটা চামচিকে আছে। সন্ধ্যের সময় ওরা আসে। ছাদের ঘুলঘুলিতে থাকে। কিরে নেংটি পড়া লোকটা ঠিক বলছে? কেউ তফাৎ যাবে না। হে হে।’
লোকটা তারপর চলে গেল। হলুদ দাঁত, একটা ময়লা প্যান্ট, গায়ে একটা বড় সাইজের জামা। এক পায়ে একটা মহিলাদের চটি, অন্য পায়ে পুরুষ ব্যবহার করে এমন কালো জুতো। দু’ পায়েই দামি মোজা। মাথা ভর্তি কালো চুল। দাড়ি গোফ নেই। ধব ধবে ফর্সা গায়ের রঙ। কিন্তু লোকটা আমাদের ভাড়া বাড়ি নিয়ে যা যা বলে গেল সব ঠিক। আমি যখন এই ভাড়া বাড়ির তিন তলায় এলাম তার কিছুদিন পর দেখলাম দু’তিনটে ইঁদুর অবাধে নেচে বেড়াচ্ছে আমাদের দু’ই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে। পা তুলে তুলে নাচতআর মুখে ভেংচি কাটত। অনেকটা টিভিতে দেখা জেরির মত। শারিরীক ভাষা ছিল আমাকে কিচ্ছুটি করতে পারবিনে। তুই যতই লাথখোর হ। এখন মনে হচ্ছে ওই পাগলটার কথাই কি ইঁদুর দু’টো আমায় বলত? কেউ তফাৎ যাবে না। আচ্ছা বলুনতো তফাৎ কেন যাব? কেউ তফাৎ যায়? এমন বোকামো কেউ করে? মেহের আলি তফাৎ যেতে বলেছিল কয়েক যুগ আগে। সেই বাবাঠাকুরও নেই। তবে আর তফাৎ কেন? হলুদ সাংবাদিকতায় এমনটা হয়ে থাকে। এই সময় কি আর সম্ভব? ‘ফেক নিউজ’ করলেই ‘টম-জেরি’ ছুটে আসবে না? কেউ জিভ ভেংচি দেবে। কেউ কান দুলিয়ে দুলিয়ে ব্যঙ্গ করবে। ফড়িং-এর মতই ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ কেউ করে? আত্মার সঙ্গে আত্মীয়তা থাকলে তবেই না সাংবাদিক?
১৯৭৮ সাল আমি রামপুরহাট কলেজে পড়ি। জেলার সাপ্তাহিক কাগজে সাংবাদিকতা শুরু করেছি। কয়েক মাস পরে হাতে ‘সাপ্তাহিক চন্ডিদাস’ পত্রিকার ‘প্রতিনিধি’ কার্ড পেয়েছি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের গরম, তাও আবার বীরভূমের গরম। সকাল থেকে ‘লু’ বইছে। পাড়ার একটি ছেলের মুখে খবর পেলাম, কোঠাতলার আম বাগানে একটা লোক গলায় ফাঁস দিয়ে আম গাছে ঝুলছে। অনেক লোক দেখি এসছে। তখন হার্ড নিউজ বা সফট খবরের কি আর বুঝি? তবু কয়েক কলম কালি দিয়ে লেখা যাবে শুনে কাধে ব্যগ ঝুলিয়ে ‘রানার’ সাংবাদকি হয়ে পৌঁছে গেলাম ‘কোঠাতলা’ নামক বিখ্যাত আম বাগানে। দূর থেকেই দেখলাম পুকুর পাড়ের আম বাগানে অনেক লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আসতে আসতে ভিড় ঠেলে ঝুলন্ত দেহটার সামনে গেলাম। দু’একজনকে জিগ্যেস করলাম লোকটা কোন গ্রামের কেউ চেনে কিনা। হঠাৎ মাটিতে বসে থাকা একটা লোক আমার হাত ধরে টেনে বলল, ‘’এই ব্যাটা তুই খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছিস। বস এখানেআমি তোকে থানায় নিয়ে যাব।‘’
আমি রীতিমত ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেছি। তবে বুঝেছি লোকটা পুলিশ। সাদা পোশাকে মাটিতে বসে হাঁড়িয়া  খাচ্ছে। আর মাছি তাড়াতে তাড়াতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে খিস্তি করে বলছে, ‘’উঃ উঃ কাল রাত থেকে আছি আমি। এটা খুন। এই ছেলাটা খুন কোরাছে‘’ লোকটার মুখে বড় বড় মাছি ভন ভন করে উড়ছে। ডান হাতের চেটো দিয়ে মাছি ঠোঁট থেকে সরাচ্ছে। আবার বিড়িও খাচ্ছে। আমি ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেলি এমন অবস্থা। কোঠাতলা এমনিতেই আমাদের কাছে ভয়ের জায়গা। রাত বিরেতে তেম কেউ তখন যেত না। সেই পুকুর পাড়ে আম বাগান। আম গাছে মৃতদেহ ঝুলছে। আত্মহত্যা না খুন? মাতাল পুলিশকর্মী আমাকে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখল। আমাদের পাড়ার কেউ একজন আমাদের বাড়িতে এবং বন্ধুদের খবর দিয়েছিল। তাঁরা আসাই আমি কিছুটা সাহস পাই। কিছুক্ষণ পর একজন সাব ইনস্পেক্টর দু’জন কনস্টবল, একজন হোমগার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।  মাতাল পুলিশটাকে আর আমাকে পুলিশ অফিসার গাড়িতে উঠতে বলে। মনে মনে তখন বলছি ‘সবার উপর বাবা-মা সত্য তাহার উপর নায়’। আর সাংবাদিকতা কে করে? পেট ভর্তি খাবার জোটেনা কব্জির মোচড়  মাপার অত কালি কোথায় পাব? কম বয়সে বেপরোয়া ব্যপারটা থাকে? কিন্তু পুলিশের হয়রানি? ভয়তো হবেই। থানাই গেলাম। বড়বাবুর ঘরে মাতাল পুলিশ এবং আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। বড়বাবু তার মাতাল পুলিশকে জিগ্যেস করলেন? ‘’কটা হাড়ি শেষ করলে পটল?’’
‘’আঞ্জে স্যার তিনটা! আমি স্যার হোমগার্ড। কতটাকা মাসহারা পাই স্যার বোলেন! তবে খুনিটাকে ধরতে পেরাছি।‘’ পটল হাতের তালু দিয়ে ঠোটের থুথু মুছে নেয়। 
‘’ছেলেটা যে খুনি তুমি কি করে জানলে? কম বয়সের সাংবাদকিও হতে পারে।’’
‘’হ্যা পারে স্যার। তবে কিনা সাংবাদিকেরতো কার্ড থাকে বুলে জানি।‘’
থানার বড়বাবু আমার নাম ধরে ডেকে বললেন, ‘’দীপেন তোমার ‘করেসপন্ডেন্ট কার্ড’ আছে না?’’
‘’মনে মনে বললাম ‘সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নায়’, পকেট থেকে কার্ড বার করে বড়বাবুকে দেখেয়ি বললাম, ‘’আছে স্যার’’
মাতাল পুলিশ কি করল জানেন? আমাকে সামনে থেকে জাপটে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘’এই আপনার কাছে গড় হুং বুলছি। কোঠাতলা ভূতের দিব্যি করে বুলছি খোকাবাবু আমার ভুল হুং জেলছে।‘’ শুধুই মুখে বলা নয়। আমার হাঁটুর কাছে দু’টো হাত জোড় করে প্রায় পা ছুঁয়ে ফেলে। আমি কোনরকমে ছিটকে সরে গেলাম। ২০১৭ সালের পাগলটার কথা আজ ওইদিনের সঙ্গে মনে পড়ল কেউ তফাৎ যায় না। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৭ সালের বৈশাখ মাসের শেষ হয়ে আসছে। গরমের প্রখরতা আরও আরও বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ আজ নতুন সভ্যতার কথা বলছে। সাংবাদিকতার ভাষা বদলে গেছে। উত্তর বিশ্বায়ন এক মেরু দু’ই মেরু বলে কিছু নেই। সীমান্ত প্রাচীর কাকে বলে সেসবও আজ ‘নীল আকাশের নীচে’। স্পীলবার্গ আমাদের ডাইনাসোর সভ্যতা চিনিয়েছেন আধুনিক ‘সিলিকন ভ্যালি’-এর প্রযুক্তির সাহায্যে। ‘পথের পাঁচালি’র রাস্তা শেষে এখন ‘বাহুবলি’-এর জয়যাত্রা। নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার উন্নত দেশেই হোক বা উন্নয়নশীল দেশে সময়ের দাবিতে দেশ এবং প্রদেশের উন্নয়ন করবেই। সেই উন্নয়ন কতটা বেকার সমস্যা বা কর্ম সমস্যা বাড়াতে পাড়ছে সেটা বুড়ো হুতোম বলতে পারবে না।
আমার আলো দেখার নিষেধাঞ্জা ছিল। এখন কেটে গেছে। তাই মানবতা চিনতে বুঝতে মাঝে মাঝে বেড়তে হয়। উত্তর বামফ্রন্ট বাংলার সভ্যতায় কলকাতা বদলে যাচ্ছে। আলোয় আলোক বার্তা। নতুন নতুন বিতর্কে ট্রেন, বাস, রাস্তা, কফি হাউস, মল, পাব, কফিবার সর্বত্র তুফান ছুটছে। আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বড় ক্লাবটার কাছে যেতেই দেখলাম পাগলটা ক্লাবের লনে বসে কলাপাতা হাতে নিয়ে ভাত খাচ্ছে। ওকে দেখলেই কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে লোকটার কথা শোনে। খুব মজার মজার কথা বলে। তাই না? আজ আমিও কিছুটা দূরতব রেখে ওর কথা শুনছিলাম। লোকটা বলছে, ‘’এই দেখুন আমি কলা পাতায় ভাত, ভাঙ্গা ডিমের সব্জি খাচ্ছি। হাত দিয়ে খাচ্ছি। আপনারা পারবেন? পারবেননি। আমি ডিম পাড়ি না। বাবুরা ডিম পাড়ে। আমি কলাপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই, শালপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই। পদ্মপাতায় হাত দিয়ে ভাত খাই। ঘাসের গালিচায় বসে হাত দিয়ে ভাত খাই। আমার দেশ ছিল মুর্শিদকুলী খাঁর দেশে। নবান্ন হত। আজ এই শহরে নবান্ন হয়? হে হে।
‘নবান্ন’ নামটা শুনতেই কেন জানি মনে পড়ল বিজন ভট্টাচার্য, গননাট্য সঙ্ঘ, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, দেবব্রত বিশ্বাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং আরও কত নাম। কত নাটক, কত গান। কত রক্ত। স্বাধীনতা। কথা বলার স্বাধীনতা, সংস্কৃতির স্বাধীনতা। মসি ছেড়ে অসির স্বাধীনতা। বাম ঘরানার সংগ্রাম। দেশ স্বাধীন করার কংগ্রেসের সংগ্রাম। কংগ্রেস নামক মঞ্চের অক্লান্ত সংগ্রাম। আজ সেই ‘নবান্ন’ রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৪ সালে আমি প্রথম এই বাড়িতে যাই। বাড়িটির কাজ তখনও শেষ হয়নি। ‘জি নিউজ’ এর একজন প্রতিনিধি হয়ে খবর করতে গিয়েছিলাম। আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সিপিএম দলের হাওড়া কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তী। স্বদেশ চক্রবর্তী হাওড়া পোর্ট ট্রাষ্টের চেয়ারম্যানও ছিলেনওই বাড়িটি করার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলাহাট স্থানান্তরিত করে নতুন বাড়িতে নিয়ে আসা। সেটা সম্ভব হয়নি। পরে ২০০৮ সালে আমি আবার বার কয়েক ‘নবান্ন’ নামক প্রশাসনিক বাড়িতে যাইবামফ্রন্ট সরকার আমলে। কলকাতা টিভির সাংবাদিক হয়ে। যতদূর মনে করতে পারছি তৎকালীন বামফ্রন্টের শিল্প এবং পরিকল্পনামন্ত্রী নিরুপম সেনের পরিকল্পনা ছিল নতুন গড়ে ওঠা বহুতল বাড়িটিতে শিল্প দফতর নিয়ে যাবেন। সেটাও আর সম্ভব হয়নি। আরও মনে করতে পারছি ২০০৮ সালের মাঝামাঝি কোনও এক সময়ে নিরুপমবাবু আমাকে ‘বাইট’ দিয়েছিলেন। তার শীতল এবং ভদ্রস্বভাবে আমাকে ‘বাইট’ দিয়ে কৌশলী এবং কুশলী ভাষায় বলেছিলেন ‘টাটা গোষ্ঠী’ সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাবে। এই বাইটের পরে সেদিন সর্বভারতীয় মিডিয়া মহাকরণে ঝাপিয়ে পড়েছিল। উল্লেখ করা যায় ওইদিনের কিছুদিন পরে শিল্প দফতর ক্যামাক স্ট্রীটের বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়।
সাগর ছুঁয়েছি কত কম বয়সে। গঙ্গা ছুঁয়েছি সৌজন্যের পবিত্রতায়। সংস্কৃতির পবিত্রতায় গঙ্গার ধারে বড় রাস্তার উপর নবান্ন। উন্নয়ন আছে। সংস্কৃতি আছে। কিন্তু তবুও কি যেন হারিয়ে গেছে। সামাজিক শিক্ষা? সামাজিক সৌজন্যবোধ? কি হারিয়ে গেছে? কাকে জিঞ্জেস করব? হুতোম? না হুতোম এ বিষয়ে মুখ খুলবে না। ওই পাগলটাকে? সে অনেক কথা বলে। কোনটা ঠিক? রবিবাবু কি বলছেন? ‘জাপান-যাত্রী’ বইয়ে অনেকগুলি রচনার বিশ্বপথিক এক জায়গায় বলছেন, ‘’জগতে যা-কিছু মহান তার চারিদিকে একটা বিরলতা আছে, তার পটভূমিকা (ব্যাকগ্রাউন্ড) সাধাসিধে। সে আপনাকে দেখবার জন্যে আর কিছুর সাহায্য নিতে চায় না। মানুষ সংসারের সঙ্গে বিশ্বের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে বলেই বড়ো করে প্রাণের নিশ্বাস নেবার জন্যে তাঁকে সংসার ছেড়ে বিশ্বের দিকে যেতে হয়। এত বড়ো অদ্ভুত কথা তাই মানুষকে বলতে হয়েছে-মানুষের মুক্তির রাস্তা মানুষের কাছ থেকে দূরে।‘’            
আরো আরো দাও প্রাণ। আরও দাও কথা বলার স্বাধীনতা। দাও শিক্ষার অধিকার। স্বাস্থ্যের অধিকার। আরো আরো দাও তথ্য জানার অধিকার। মুক্ত সংস্কৃতির অধিকার। বেঁচে থাকার অধিকার। মানবতার অধিকার। হিংশুটে মানবতার দৈত্য তফাত যাও।                             
                                                   

No comments:

Post a Comment