Thursday 6 April 2017

বৈশাখ বশিতা

বৈশাখ বশিতা:

এবছর শীত ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ বলে থেকে গেল কিছুদিন। ‘বসন্ত দূত’ কুহু রবে দিকচিহ্ন মেপে চলে গেছে। এমনটা কথা ছিল না। তবু চলে যায়। প্রকৃতির খামখেয়ালির সঙ্গে মানানসই করে এপাড়া ওপাড়ায় থাকলেও। সময় কি বুঝতে পারে না ওরা? তাই হবে হয়ত। বসন্তের প্রখরতায় শীত ছিলঅনুভবে তুমিও ছিলে এবছর। আরও কত বছর কত দিন থাকবে তুমি? চেনা বাউলের একতারায়। অচেনা বৈশাখের খেজুর পাটিতে? তাল পাতার পাখার হাওয়ায় হাওয়ায় লাগে যখন দোল। তুমি থেক সব সময় আমার হয়ে আমার পাশে। তাপ-উত্তাপ না থাকলে মানব ধর্ম মানবতা চিনবে কোন মন্ত্রে? শীতের প্রখরতায় রুদ্র উত্তাপ দিতে চায়নি এই সেদিনের সকাল দুপুরেঅথবা দিতে পারেনি। তপনায়ন যদি চোখ নত করে বিনম্র ভঙ্গিমায় চৈত্রের সময়কালকে ভ্রুকুটি করে, তবে বসন্তের রানী অভিমান করে অভিসারে যেতে চায়কি কোনও দিন?  আজ আবার কুহু কলরবে শীত শেষের বেলা অনুভব হচ্ছে। ‘বসন্ত বৌরি’ ফিরে যায়নি। প্রখর গ্রীষ্মের আহ্বানকে অচেনা লাগেনি ওদের। ওরা আজও প্রেম চেনে, ভালোবাসা চেনে। বৈভবে আছে ওরা। সূর্য তুমি উত্তাপ দাও ওরা তোমার উত্তপ্ত আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করবে। সূর্য ভালো থেক এই বসন্তের অপরাহ্ণ বেলায়। আকাশে, গাছে দূর দিগন্ত চরাচরে ওরা দুই ভিন্ন প্রজাতির পাখি সখা হয়ে ছিল। আজও সখা হয়ে থাকে। ওরা পারে আমরা পারি না। জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘বৌ কথা কও’, ‘চোখ গেল’ বা পিঁউ কাঁহা’, পুচ্ছের নীচে লাল আর মাথায় ঝুঁটি নিয়ে বুলবুলি, ঘুঘু, বসন্তের দূতের মতই বৈশাখকে আমন্ত্রণ করে। আমরা পারি না। এই বাংলার গর্ব ‘বাংলা নববর্ষ’ আজ কি জৌলুস হারিয়ে ফেলছে?
মন টানে সত্তর আশির দশকে। শৈশব কৈশোর পেরনো স্মৃতি রুদ্রতপ্ত ঘর্মাক্ত সকাল সন্ধ্যের ‘নষ্টালজিয়া’ হেচকা টান দেয়। গ্রাম, প্রত্যন্ত গ্রাম, গঞ্জ, শহর বিভক্ত বাংলার প্রাচুর্য দেখেছি ছোট ছোট দোকানে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে, দোকানে মাঙ্গলিক সুতোয় বাঁধা আমের পাতা। সেই পাতায় সিঁদুর লাগানো। দোকানের দরজার চৌকাঠে, বাড়ির দেওয়ালে, চৌকাঠে সিঁদুর, হলুদ দিয়ে আঁকা মাঙ্গলিক চিহ্ন। ধর্ম আমার যাই হোক সেদিন আমার শ্লোগান ‘শুভ নববর্ষ’। লেটার প্রেসে ছাপা ‘পোস্ট কার্ড’ বা আমন্ত্রণপত্র আম বাঙালি, আপেল বাঙালির বাড়ি পৌঁছে যেত। তারপর সকাল থেকে বৈশাখি সন্ধ্যে, রাত দশটা, এগারটা ‘হালখাতা’ করে বাড়ি ফেরা ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী গণেশ’ কখণ চুপি সারে এই বাংলার ‘রিচুয়াল’ হয়ে গেছে। ধর্ম নয় উৎসব হয়ে আছে আজও আমার আমাদের বয়সী বাঙালির কাছে। সাদা-রঙ্গিন পায়জামা, পাঞ্জাবি সব সময় এই ভারতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। বাঙালি তাঁর মধ্যে অন্যতম সেই মাত্রার নতুন গন্তব্যে পৌঁছে দেয় আমাদের। আক্ষেপ করার কথা যারা বলে তাঁদের আহাম্মক বলতে চাই না। বা বলার মত প্রশ্রয় আমার নেই। সারা বাংলায় আমাদের মামা, মাসি, কাকা পিসিদের বাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। সেই কারণে যেমন সমস্ত বাংলার জেলাগুলি ছুঁয়ে দেখেছি, ঠিক একইরকমভাবে গণসংগঠন করার সময় প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলা দেখেছি। সাংবাদিকতা সূত্রেও অনেক জেলা ঘুরতে হয়। উত্তর বঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে বাংলা নববর্ষের হৈ চৈ উপস্থিতি ছিল। আজ কতটা আছে? বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান বা রাঢ় বাংলার ‘বাংলা নববর্ষ’ শিমূল, পলাশের বাসন্তিকা ডাক দিয়ে দিয়ে নিয়ে যেত ধূ ধূ প্রান্তর ভাঙ্গা মহুল ফুলের শান্ত ভাষায়। লাল সরানে। ‘ই বাবু আমার টাকা লায়, এই লে দশঘড়া ধান লে’। সব টাকা তুর শুধ করি দিলুম। লয়?’ শুভ নববর্ষ বাংলার অহংকার। বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার পাটুলিতে আমার মামার বাড়ি। অনেকটা সময়ের শৈশব কৈশোর কেটেছে মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে। পাটুলিতেও দেখেছি গঙ্গার চরে টিনের দেওয়াল দেওয়া এক কামরা দু কামরার ঘর। টিনের ছাউনি। কাঠের জানলা। সেইসব বাড়ির দোকান, গৃহস্থ ঘরে একই সুরে ‘বাংলা নববর্ষ’ পালন হত। গঙ্গায় নৌকা ভাসত কাঠের দেওয়ালে সিঁদুরে আঁকা মাঙ্গলিক চিহ্ন নিয়ে। নৌকার ছইয়ে আঁকা সেই লাল হলুদ সিঁদুরের প্রাচুর্য। এই শতাব্দীর প্রথম দশকে দেখেছি। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাতলা, বিদ্যাধরি, হাতানিয়া দেয়ানিয়া সহ বিভিন্ন নদীর বুকে ভেসে থাকা নৌকায় মাঝিরা ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে নৌকা নিয়ে পাড়ি দিয়েছে মাঝ দরিয়ায়। কখনও কখনও স্মৃতি ফিরে এসেছে নির্মলেন্দু  চৌধুরীর গলায় ‘ও আমার তিস্তারে......।’  এসো হে বৈশাখ এসো এসো। বৈশাখ তুমি হারিয়ে যেওনা। জণসংযোগের এত বড় উৎসব বাঙালির একান্ত নিজস্ব। দুর্গা পুজোর পর বাঙালির জীবনে এতবড় উৎসব আর কটা আছে? বর্তমান বিশ্বে ৩০ কোটি বাঙালি। আচ্ছা ভাবুন আমাদের দেশের রাজধানী দিল্লির কথা। ১৯১১ সালে কলকাতার বাবু বাঙালিদের সাহেবরা দিল্লি নিয়ে গেলেননতুন রাজধানীর আমলাতন্ত্র সামলানোর জন্য। এই শ্রেণির বাঙালি দীর্ঘদিন দিল্লিতে। এটা যদি প্রথম শ্রেণির বাঙালির দিল্লি যাওয়া হয়। দ্বিতীয়বার গেলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কর্মসূত্রে যারা দিল্লি গেলেন এবং দিল্লিতে থেকে গেলেন যেসব বাঙালি। তৃতীয় দফায় গেলেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বাঙালি। যারা বাবু বাড়ির বিভিন্ন কাজ করেন। এবং রিক্সা চালান। দিল্লির এই তিন শ্রেণির বাঙ্গালিকে বাংলা নববর্ষের দিন দেশের রাজধানী শহরে এক ঘণ্টার জন্যা রাস্তায় আনতে পারলে বাংলা তথা বাঙালির অস্তিত্ব জানান দেওয়া যায়। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলছিলেন, ‘’দিল্লিতে আমি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন থাকি। আমি নিজেও কর্মসূত্রে দিল্লির বাঙালি। দিল্লিতে ৭০০ সর্বজনীন এবং কালীবাড়ির মত দুর্গাপুজা হয়। দিল্লির বাঙালিরা যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ‘শুভ বাংলা নববর্ষ’ করে তাহলে বাংলার সংস্কৃতির গভীরতা আমরা জানান দিতে পারি। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরা যেভাবে গুরু পরব করে।‘’        
আহা যদি একটা মিছিল করতে পারতাম! অথবা এমনটা কি ভাবা যায় সারা বিশ্বের বাঙালি ১লা বৈশাখ ‘শুভ নববর্ষ’ উদযাপন করবে পরস্পরে হাতে হাত রেখে। যে ভাষায় সংহতি দিবস পালন করা হয়। সেখানে কোনও ধর্ম থাকবে না। সম্প্রদায় থাকবে না। থাকবে শুধু মানুষ। মানব বন্ধন বলতে পারেন। আমি মানব শৃঙ্খল বলার অনুমতি চাইছি আপামর বিশ্বের বাঙালির কাছে। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার পর নায়।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা যায় কিনা সেই প্রশ্ন নিয়ে এই বাংলার দু’একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বললাম। প্রায় সকলেই একমত বর্তমান সময়ে ‘বাংলা নববর্ষ’ আমাদের স্বত্বা চেনাতে সাহায্য করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, কেন্দ্রীয়ভাবে কোনওদিন সেভাবে করা যায়নি। কারণ এআইসিসি এবং পিসিসি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে দেশের জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছেন সব থেকে বেশি মানুষ। সেটা স্বাধীনতার আগে হোক বা পরে। মান্নান সাহেব আরও বলেন, ‘’তবে বাংলা নববর্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে করা উচিত। কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক শাখা সারা রাজ্য জুড়ে বাংলা নববর্ষ উৎসব ব্যাপকভাবে পালন করতে পারে। এই ধরণের উৎসবে নানা বর্ণের মানুষ সামিল হয়ে থাকে। এখানে ধর্মের কোনও ভেদাভেদ থাকে নাকোনদিন ছিলও না। হালখাতার অনুষ্ঠানে সব মানুষ সামিল হয়। এটা আমার মত বাঙালিদের কাছে উৎসবেরমত। সমস্ত বাঙালির অহংকার এই উৎসব।‘’
 পরে কংগ্রেসের প্রবীন এবং বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা যুক্তি দিয়ে বোঝান বাংলা নববর্ষ কংগ্রেস রাজ্য জুড়ে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে করলে দলগতভাবে যেমন লাভ। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সামাজিকভাবেও কংগ্রেস লাভবান হবেকংগ্রেস এই উৎসব পালন করলে কংগ্রেসের অনেক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধুতি পাঞ্জাবী পরে পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলার এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রভাবিত করতে পারবে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দলের এক অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েছেন। রাজ্যে দলগতভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বাংলা নববর্ষ’ উদযাপন করার জন্য। সূত্রের খবর তৃণমূল কংগ্রেস সারা রাজ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক নেতা বললেন, ‘’আমরা আইপিটিএ আন্দোলনের সময় থেকেই ‘বাংলা নববর্ষ’ পালন করি। নিশ্চয়ই দলগতভাবে নয়। সাংস্কৃতিক শাখা এই ধরণের অনুষ্ঠানে সামিল হয়। ৩৪ বছরের বাম জমানায় যে সব ছোট ছোট দোকান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এই অনুষ্ঠান করেছে তাঁরা আমাদের গণ সংগঠনের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। গেরুয়া ঝড় আটকাতে দিদিভাই কি করছেন?’’ কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি রামনবমী উৎসব উপলক্ষে বলেছেন, ‘’ভারত এমনই একটা দেশ, যে দেশে ইন্দ্রধনুষের বৈচিত্র আছে। আমার এই দেশে সব ধর্মের এবং সংস্কৃতির গভীরতা রয়েছে। সেই গভীরতার ঝলক আমি সারা দেশে দেখতে পাই।‘’
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে। কলকাতায় একটি রাজনৈতিক দলের রামনবমী উপলক্ষে পরপর দু’দিন মিছিল। বড় থেকে শুরু করে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে ছিল তরোয়াল, ত্রিশূলের মত ধর্মীয় অস্ত্র। বিরোধীরা এই মিছিলের মধ্যে দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা দেখতে পাছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘’দেশ চূরান্ত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যারা আন্তরিকভাবে রামনবমী পালন করে আসছেন সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নায়। কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় রামমন্দির গড়ে তোলার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে সব শিবির হয়েছে সেখানে রামমন্দির নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। রাজ্যে রামরাজাতলা অনেক আগে থেকেই আছে। রামচন্দ্র বাংলার মানুষের কাছে পূজিত হতেই পারেন। সেটা নিয়েও আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে একটি দু’টি শিবির থেকেসেই নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।‘’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, ‘’কেউ রামে আশ্রয় নিয়েছে কেউ হনুমানে আশ্রয় নিয়েছে। যা হচ্ছে সেটা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের পরম্পরা তার বিরোধী। এটা সর্বনাশের পথ। কেউ ওই পথে যাবেন না। একদল বুদ্ধিজীবী অরাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে চাইছেন। এই সময় নীরব থাকা, নিশ্চুপ থাকা আমরা অনুমোদন করতে পারি না। আমাদের দেশ, আমাদের রাজ্য আমাদের সংবিধান আক্রান্ত। ঝান্ডা ছাড়া দলমত নির্বিশেষে শান্তি মিছিল, সভা ইত্যাদি হতে পারে। চূড়ান্ত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত মানুষের কাছে আমাদের আবেদন আপনারা এগিয়ে আসুন। আমরা বামপন্থীরা সঙ্গে আছি।‘’
কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, ‘’ধর্মের নামে বিপজ্জনক এক রাজনৈতিক খেলা।‘’ বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিংহ বলছেন, ‘’তরোয়াল, ত্রিশূল এগুলো আবার অস্ত্র নাকি? এখন আগ্নেয়াস্ত্র হচ্ছে অস্ত্র। যে মিছিল রামনবমী উপলক্ষে হয়েছে এই ধরণের মিছিল আগেও হয়েছে।          
এই বাংলার ভাবার সময় এসেছে। পণ্য সংস্কৃতি উৎপন্ন এবং পরিবেশন যারা করছেন তাঁরা তাঁদের ব্যবসার অভিমুখ সময় উপযোগী করবেন। এবং শিল্প বাণিজ্য মহল তাঁদের ব্যবসা করার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেবার তাঁরা নেবেই। কিন্তু বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই বাংলার নতুন প্রজন্মের বুধিজীবীরা কি ভাবছেন? গত কয়েক বছরে বাংলা সহ সমস্ত দেশে দলিত সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষেরা কেমন আছেন? সম্প্রতি (৪ এপ্রিল, ২০১৭) ‘কাউন্টার ভিউ’ পোর্টালে রাজীব শাহ লিখছেন। আসুন সেই ছবি আমরা পড়ি।
‘’National Campaign on Dalit Human Rights (NCDHR), the apex body of India’s Dalit rights organizations, has in a report submitted to the United Nations (UN) insisted that the country’s reservation measures “must be extended to Dalits of all faiths, especially to Dalit Christians and Muslims.”
Pointing out that Dalit Christians and Muslims are “presently excluded from the reservation benefits owing to religion-based discrimination”, NCDHR report insists, “The Constitution Scheduled Castes Order 1950, Paragraph 3's religious ban ought to be removed/deleted or amended by Union of India for the extension of Scheduled Castes privileges to Christians and Muslims of Scheduled Castes origin.”
Prepared following consultations with 563 Dalit rights bodies across India with the help of the All-India Dalit Mahila Adhikar Manch, Dalit Ardhik Adhikar Andolan, the National Dalit Movement for Justice, and the National Dalit Watch, the NCDHR report, titled “Joint Stakeholders’ Report on Caste-based Discrimination in India” has been submitted for discussion at the 27th Session of the Universal Periodic Review of the UN Human Rights Council – India, scheduled in May 2017.
A year ago, a 
US State Department report on the human rights situation in India had said that though “some Christians and Muslims were identified as Dalits”, the Government of India had preferred to limit “reservations for Dalits to Hindus, Sikhs, and Jains.”
The US report had come had come following a report submitted in 2014-end to the Narendra Modi government by a high-level committee headed by well-known academic Amitabh Kundu, which 
insisted that “the Dalit Muslims must be taken out of the other backward classes (OBC) list and incorporated in the scheduled caste list.” 
কংগ্রেসের সভাপতি সনিয়া গাঁধিও কি দেশবাসিকে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন? তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন, ’Secularism is more than a majority-minority issue. It is a struggle between those who wish to preserve the essence of their religion and those who seek to deliberately distort that essence.’’
পশ্চিমবঙ্গে ‘বাবু বাঙালি’ গণেরা (হিন্দু এবং মুসলিম-উভয় সম্প্রদায়) নিজেরা উচ্চশিক্ষিত হলেও নিম্নবর্গের মানুষদের শিক্ষিত করে তোলার দায় কোনদিনই নেয়নি। তাই রাজ্যের আপামর মানুষ আজও আধুনিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত নয়। এই রাজ্যকে ‘বাম’ আন্দোলনের আঁতুর ঘর বলা হয়। দেশ ভাগের অভিশপ্ত বিছার কামড়ে উদ্বাস্তু জঙ্গমের ঢেউকে এই রাজ্য আপন গড়িমায় জায়গা করে দেয়। তাই হয়তবা ‘জাতিভেদ’ প্রথার বিরুদ্ধে কোনও সচেতন দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে ওঠেনি আমাদের পশ্চিমবঙ্গেহয়তবা এই কারণেই জ্যোতিবা ফুলে, ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর অথবা রামস্বামী নাইকার পেরিয়ারের মতো নেতা আমাদের রাজ্য পায়নি। পাশাপাশি এটাও আরও একটি বাস্তব যে ‘মারাঠি’ অস্মীতার স্বত্বা নিয়েও মহারাস্ট্রে যে আন্দোলন (ধ্বংসাত্বক হোক বা আত্মরক্ষার প্রয়োজন) গড়ে উঠেছে তাও এই বাংলায় দেখা যায়নি। ‘মারাঠি’ জাতির স্বঘোষিত সেনা নায়ক বাল কেশব ঠাকরের বা বাল ঠাকরের মতো দীর্ঘ পুরুষও এই বাংলা পায়নি।            

সেই শুন্যস্থানে বাঙালির বারমাসে তের পার্বণের মধ্যে ‘বাংলা নববর্ষ’ ‘শারদ উৎসব’ এর মত আলো, প্যান্ডেল, থিম ইত্যাদির ভীড়ে আজও আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠেনি। এই জন্যই সম্ভবত ‘বাংলা নববর্ষ’ কে আলাদা করে নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের সঙ্গে দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আজ এই বাংলায় চৈতন্য, গুরু নানক, কবির, গৌতম বুদ্ধের খুব প্রয়োজন।  গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রের প্রশ্রয়ে নববর্ষের দিন বাঙালি সকাল সন্ধ্যে শুধুমাত্র ‘টিভিঘরে’ লাইভ অনুষ্ঠানে নিজেদের বন্দী না রেখে শুরু হোক প্রভাত ফেরি। আছেন, ছিলেন থাকবেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু, রামমোহন, বিবেকানন্দ, কাজি নজরুল, মুজতবা আলি, হেমন্ত, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পুরনো দিনের গান। কান্তকবিরাও ফিরে আসুক আধুনিক কন্ঠশিল্পিদের বৃন্দগানে। এ বছর দিনটা উৎসব মুখর হোক কীর্তন, বাউল, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি সহ বিভিন্ন ঘরানার লোকগীতি হোক। বাচিক শিল্পিরা দায়িত্ব নেবেন বৈশাখকে মনে করিয়ে দিতে। গানে, কবিতায়, ব্যানারে, ফেস্টুনে, ফ্লেক্সের কথামৃত হোক শুধু বাংলায়। সূর্যালোক আলিঙ্গন করুক স্পর্ধাকে। বাঙালির ঔদ্ধত্যকে। বাঙালির ঞ্জানকে। আপামর বাঙালির উদারতাকে। শুভ নববর্ষ ১৪২4.

No comments:

Post a Comment