Wednesday 19 September 2018

আপনারা ঘুমতে যান, আমরা শুল্কযুদ্ধে...... পরমাণু বোমার আর ভয় নেই


দীপেন্দু চৌধুরী  
প্রায় চারমাস আগের কথা। একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সঙ্গীত, সাহিত্য, খেলা, বাণিজ্য, শুল্কবাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং কূটনীতির এক নতুন বাতায়নের ভাষা আমরা পেয়েছি। সম্মিলিত ঐকতানের আশায় ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য’-র অতিথিপরায়ণ মানুষ দুই দেশের আঙিনায় বিনিময়ের নতুন ঘরানায় অবগাহন করতে চাইছি। কূটনীতির এই নতুন ঘরানাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিশ্ববাণিজ্য ও বিশ্ব রাজনীতির আঙিনায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। অভিঞ্জ পাঠক, নাগরিক সমাজ সচেতন মানুষ আশা করি বুঝতে পারছেন আমরা কোন দেশের কথা বলছি। এবং কাদের কথা বলছি।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে সিঙ্গাপুরে অভিজাত সভাঘরে বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর দুই নেতার প্রস্তাবিত বৈঠকটি ১২ জুন, ২০১৮ তে হয় বৈঠকের কুশীলব ছিলেন বিশ্বের তাবড় সংবাদ মাধ্যমে বহু আলোচিত শব্দবন্ধ ‘বেঁটে রকেটম্যান’ আর ‘খ্যাপাটে বুড়ো’। ‘খ্যাপাটে বুড়ো’ মানে বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ‘বেঁটে রকেটম্যান’ কে নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। তবু নামটা উল্লেখ করি। উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। ক্যাপিলা হোটেলে বৈঠকের আগে বা পরে বিশ্বের কাছে পরিচিত ‘স্মল রেড ডেট’ নামে পরিচিত সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে কেউ ‘কালো পতাকা’ দেখায়নি। এই লক্ষণের অন্যতম কারণ সিঙ্গাপুর সহ সমস্ত বিশ্বের শান্তিপ্রিয় নাগরিক কেউ ‘পরমাণু যুদ্ধ’ চায় না। ২০১৮ সালের সংবাদ মাধ্যমের সোজন্যে প্রথম সারির এবং চিরকালের বড় খবর হয়ে থাকবে ‘মোটা আর খ্যাপাটে’ বুড়োর এই ঐতিহাসিক বৈঠক। একুশ শতাব্দীর এক নয়া অধ্যায়। প্রায় সাত দশক পরে জুন মাসের হাই প্রোফাইল ওই বৈঠকের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ দাবি তুলেছিলেন ১২ জুন সিঙ্গাপুর সরকার ছুটি ঘোষণা করুক। বিশ্ব শান্তি প্রয়াস দিবস উপলক্ষে। বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের প্রায় ১২০০ প্রতিনিধির সামনে এবং আড়ালে এই বৈঠক হয়েছে। সব থেকে বেশি আলোচিত চলতি বছরের ১১ জুন দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের দু’ই রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য ব্যবস্থাও ছিল ঢালাও। সূত্রের খবর সিঙ্গাপুর সরকার কিম এবং তাঁর পারিষদদের হোটেল খরচ সহ আরও বিভিন্ন খাতে প্রায় দুকোটি টাকা খরচ করেছে। সেসময় সিঙ্গাপুরের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল এই খরচ করে সিঙ্গাপুর কী পাবে?মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন জি-৭ বৈঠকের টাটকা উত্তেজনা সঙ্গে নিয়ে। হাত মেলাতে গিয়ে বয়সে ছোট ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-এর হাতে প্রায় কালশিটে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এসব কিছুর উত্তেজনা সেদিন উবে গিয়েছিল। কিমের পরশ ট্রাম্পকে নতুন উত্তেজনা দিয়েছিল। ‘বেঁটে  রকেটম্যান’-ও নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। বৈঠক শুরুর আগেই ‘মোটা আর খ্যাপাটে’ বুড়োর হাতে হাত রেখে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন বলেছিলেন, ‘’গোটা দুনিয়ার কাছে এই মুহূর্ত নির্ঘাত কল্পবিঞ্জানের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাই বাস্তব।‘’
কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণীর দৈনিক ১৩ জুন লিখল
·         পারস্পরিক শান্তি ও সমৃদ্ধি, নতুন সম্পর্ক স্থাপনের অঙ্গিকার
·         কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি রক্ষায় একজোটে কাজের প্রতিশ্রুতি
·         পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ার প্রতিশ্রুতি উত্তর কোরিয়ার। বিনিময়ে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে আমেরিকা।
·         উত্তর কোরিয়ায় নিহত মার্কিন যোদ্ধাদের দেহাবশেষ আমেরিকায় ফেরানো হবে।
বয়সে প্রায় দ্বিগুণ ট্রাম্প সাহেবকে সম্মান জানাতে ১২ জুন ৩৪ বছরের কিম বৈঠক শুরুর মিনিট সাতেক আগে ক্যাপিলায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কূটনৈতিক ভদ্রতা বলুন অথবা একটা আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশের উন্নত শিক্ষা সংস্কৃতি। সকাল ৯টা। বৈঠকে কী হতে পারে তাঁর একটা আগাম বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলে পরমাণু শক্তিধর দু’ই রাষ্ট্রনেতা। সমস্ত বিশ্ব একটা ‘ট্রেলার’ দেখে। ১২ সেকেন্ডের করমর্দন। কয়েকটি কথা। এরপর হাসিমুখে লাইব্রেরি লাগোয়া প্রাইভেট চেম্বারের দিকে হাঁটতে দেখা যায় দু’জনকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের মেজাজে বলেছিলেন ‘’এক মিনিটে বুঝে যাব কিম কী চান।‘’ কিন্তু সময়ের বিচারে বৈঠক হল ৫ ঘণ্টা ৮ মিনিট। দু’ই রাষ্ট্রপ্রধানের একান্ত বৈঠক ৩৮ মিনিটের। দু’ই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে চুক্তি বৈঠক আরও সাড়ে ৪ ঘণ্টা। এবং পরমাণু অস্ত্র সহ একাধিক বিষয়ে চুক্তিও হয়ে গেল দু’ই দেশের। যৌথ বিবৃতিতে সই করলেন ট্রাম্প এবং কিম। সইয়ের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন, ‘’সারা জীবন তো চুক্তি করেই এসেছি। তাই জানি, কে কখন কী চুক্তি চায়।‘’
কিম বলেছিলেন, ‘’চ্যালেঞ্জ আসবে সেটা বুঝছি। তবু আশা রাখছি, বৈঠক নিয়ে যাদের সন্দেহ আছে, অচিরেই তা মিটে যাবে।‘’
নিউ ইয়র্ক টাইমস ১২ জুন অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদক Mark Landler লিখলেন,
He also repeated his determination to keep imposing sanctions on the North until it abandons nuclear weapons. But he confirmed that China, the North’s largest trading partner, had eased a clampdown on cross-border trade in recent weeks — a reversal he attributed partly to the trade tensions between China and the United States.
Still, the president said he did not plan to return to bellicose threats like “fire and fury,” which fueled tensions last year and helped drive South Korea to seek a diplomatic overture to the North.
Appearing to accept the views of his predecessors, as well as most of his own military commanders, Mr. Trump said he could not imagine a war in a country where the largest city, Seoul, is only 35 miles from the border where the conflict would likely erupt.
For Mr. Trump, averting such massive bloodshed justified the risk of meeting with Mr. Kim. He bridled at critics who said he had elevated a brutal dictator by agreeing to meet, and had extracted little in return.
“If I have to say I’m sitting on a stage with Chairman Kim and that gets us to save 30 million lives — it could be more than that — I’m willing to sit on the stage,” Mr. Trump said. “I’m willing to travel to Singapore.”
Still, as ever, the president hedged his bets.
“I think, honestly, I think he’s going to do these things,” Mr. Trump said. “I may be wrong. I mean, I may stand before you in six months and say ‘Hey, I was wrong.’ I don’t know that I’ll ever admit that, but I’ll find some kind of excuse.”
David E. Sanger contributed reporting from Singapore, and Choe Sang-Hun from Seoul, South Korea.’’ 
এই চুক্তির পরেও চারমাস অতিক্রান্ত। কিন্তু উত্তর কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তির পরের অধ্যায় কী হচ্ছে বা কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আমরা আজও অন্ধকারে। রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উডরো উইলসন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ নিজেদের কূটনৈতিক দ্বন্দ মেটাতে শান্তি আলোচনায় বসেন। কিন্তু সেই আলোচনা ব্যর্থ হয়। শুরু হয় নতুন বিশ্বের ভারসাম্য। তথা দ্বিতীয় বিশ্বের মঞ্চ। সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্দান্ড প্রতাপ শাসক জোসেফ স্তালিন এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান নিজেদের দ্বন্দকে একটি ঠান্ডাযুদ্ধের ‘কূটনীতি’ হিসাবে দেখতেন। তারই ফলস্বরূপ আমাদের সামনে এল পরমাণুযুদ্ধের ভয়াবহ ছবি। দু’ই শক্তিশালী দেশের পরবর্তী দু’ই রাষ্ট্রনায়ক নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং জন এফ কেনেডি বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। যাকে বলা হয় ব্রিঙ্ক অফ নিউক্লিয়ার ওয়ার। Brink of nuclear war. যুদ্ধ। পরমাণু যুদ্ধ। জাপানের হিরোশিমার অভিঞ্জতা বিশ্বের প্রথম সারির আর্থিক এবং পরমাণু  প্রযুক্তিতে বলিয়ান শক্তিধর রাষ্ট্রের মানুষ আজও ভোলেনি। রাষ্ট্রপ্রধানরা আরও বেশি ইতিহাস সচেতন তাই তাদেরও ভোলার কথা নয়।
এই প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করতে পারি ভারত এবং মার্কিন পরমাণু চুক্তির কথা। ভারতের সঙ্গে ২০০৫ সালে  পরমাণু চুক্তি হওয়ার পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, ‘’২০০৫-এর যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে মার্কিন দেশ এই প্রথম প্রচ্ছন্নভাবে হলেও ভারতের নিউক্লিয়ার বোমার প্রকল্পটিকে মান্যতা দিয়েছে। এ ছাড়াও মার্কিন দেশের জনমত এই প্রথম মেনে নিল যে নিউক্লিয়ার গবেষণা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত একটি অগ্রগণ্য দেশ, এবং সে দেশ দায়িত্ব নিয়ে এগুলির সুরক্ষা দিচ্ছে; তাই পৃথিবীর অন্যান্য নিউক্লিয়ার শক্তিধর দেশ যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, ভারতেরও সেই সব সুযোগসুবিধা পাওয়া উচিত।...... এই ১২৩ চুক্তি করার সময় আমরা আমাদের দেশের বর্তমান ও সুদূর ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার বিষয়টি সর্বদা মাথায় রেখেছি— এটাও খেয়াল রেখেছি যে এটা যেন আমাদের ‘নিউক্লিয়ার ডকট্রিন’-এর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়।...’’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ প্রবাদ প্রতিম দেশ। আধুনিক শিল্প এবং প্রযুক্তির প্রতীক বলা চলে। এই দেশেও একটা সময় আদৌ শিল্প সম্ভব কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। উন্নত গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা। সেই দেশ উচ্চশিক্ষা, ধ্রুপদী সংস্কৃতির এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র।     
পরমাণু যুদ্ধের আতঙ্ক কী এবং কতটা হতে পারে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে অনেকটা বোঝা যায়। তাই আমরা সচেতন ভাবেই এই প্রশ্ন তুলতে চাইছি।  প্রমাণ অতীতের পরমাণু যুদ্ধের যে আতঙ্ক আমাদের সামনে রয়েছে। জাপানের মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতা ভাগ করে নিয়েই বলতে চাই বর্তমানে আমরা আরও বেশি আতঙ্কিত ‘শুল্ক যুদ্ধে’-এর ঠান্ডা লড়াই নিয়ে। একমেরু পৃথিবী এক সময় দু’টো মেরুর বুদ্ধির যুদ্ধ অথবা ঠান্ডাযুদ্ধ দেখেছে। বর্তমান বিশ্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বহুমুখী পৃথিবীর দিকে। আমরা অতীত পার হয়ে এসে পড়েছি পুঁজিবাদ বনাম সমাজতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ বনাম সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ উত্তর বিশ্বে। বিশ্বায়ন উত্তর নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় সীমান্ত বাণিজ্য বনাম ‘শুল্ক যুদ্ধ’। জাতীয় স্বাধীনতা অবশ্য সব কিছুর উর্ধে কথা বলতে এগিয়ে আসে। যে কোনও দেশের মুক্তচিন্তা এবং স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের স্বাধীন হতে শিখিয়েছে।      
এই নিবন্ধ লেখার খুব কিছু প্রয়োজন বা গুরুত্ব দাবি করে কী? হ্যাঁ করে। কারণ চলতি বছরের ১২ জুন ‘মোটা এবং খ্যাপাটে বুড়ো’-র সঙ্গে ‘বেঁটে রকেটম্যানের চুক্তির পরে আরও একটা নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেই যুদ্ধ হচ্ছে ‘শুল্ক যুদ্ধ’। পরিবর্তনশীল সমাজে তথা আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় ধনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্র শিবিরের একটা যুদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু সমাজতন্ত্র শিবির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে সমাজতন্ত্রের পতাকা হাতে নিজেদের দেশের আর্থসামাজিক মান একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে। যদিও এই দেশটির সামজতন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন মত উঠে আসছে। কারণ বামপন্থী মতাদর্শের চিরন্তন সত্য মানব কল্যাণ। মার্ক্সের সমাজ বিঞ্জান সেই দাবি করে। মার্ক্সের প্রঞ্জাও উল্লেখিত সত্যের জন্য মানব কল্যাণের ব্রতের কথা শোনায়। বর্তমান ধনী সমাজতান্ত্রিক দেশ, যেমন চিন নিজের দেশকে ‘কূটির শিল্প’-এর উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বের স্বীকৃতি আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের চোখে চোখ রাখতে শুরু করেছে। চিনের শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে তৈরি সস্তার পণ্য সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছিল। স্বল্প পারিশ্রমিকে চিনা শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে তৈরি দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত সামগ্রী সারা বিশ্বের বাজারে ছেয়ে গেছে। চিনের শ্রমিকের ঘামে সস্তার সামগ্রী চিনের অর্থনীতিকে আজ স্বাবলম্বী করেছে।  আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া মহাদেশে চিনের বর্তমান সরকার নিজেদের দেশের পণ্য ছড়িয়ে দিতে আরও এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘ওবর প্রকল্প’ বলি অথবা ‘ওয়ান রোড ওয়ান বেল্ট’। যদিও চিনের বামপন্থী মতাদর্শের পাশাপাশি আরও একটি অসংগঠিত আধুনিক বামপন্থী চিন্তার কথা শোনা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই নতুন কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। নতুন জীবনবোধ গড়ে তোলার জন্য নতুন বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করার মতো মতাদর্শ আজ বড় বেশি প্রয়োজন। বিষয়টা মার্ক্সবাদের আধুনিক পণ্ডিত বিদ্দজ্জনেরা ভাববেন।
আমরা নতুন বিশ্বের আলোচ্য শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ‘শুল্কযুদ্ধ’ নামক একটি বিষয়ে বেশি চিন্তিত। কারণ সমস্ত বিশ্বে বেকারি বাড়ছে, নিরক্ষ মানুষের সংখ্যা আমরা কতটা কমাতে পেরেছি? শিশু শ্রমিক ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেল। মানব পাচারের মতো সভ্যতার এক অভিশাপ আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। নতুন করে ‘শুল্ক যুদ্ধ’ নামক একটি অস্ত্র আমাদের ভাবতে বলছে। এই বিষয়ে আলাদা একটা নিবন্ধ দাবি করছে। আমরা চেষ্টা করব নভেম্বরে আমেরিকার অন্তর্বর্তী নির্বাচনের আগে এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ আলোচ্য স্তম্ভে পরিবেশন করার।                                            
                

No comments:

Post a Comment