Friday 9 March 2018

শহরের মেয়েদের স্বশক্তিকরণ করার দাবি উঠছে

শহরের মেয়েদের স্বশক্তিকরণ করার
দাবি উঠছে: 
কিছুদিন আগে একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত নারী আমাকে বলছিলেন, ‘’আমি কলকাতায় এসেছি গ্রাম থেকে। নব্বই দশকের প্রথমদিকে তখন কলকাতা শহর এত চকচকে ছিল না। এত আলো ছিল না। কিন্তু মানুষের মনে আলো ছিল। আমরা গ্রাম থেকে শহরে এসে পথ হাতড়াতাম। লেখাপড়া শিখেও আমাদের পথ হাতড়াতে হয়েছে। শুধু নারীর নিরাপত্তা নয়। মানুষের যে মন থাকে সেই মন কলকাতা শহরে তখন ছিল। কিন্তু তারপর নগরায়ণেরকাজ যত এগতে থাকল শহরের মানুষের মন ততই যান্ত্রিক হয়ে পড়ল। এই বিষয়টা আমার চোখে পড়েছে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই‘’ উচ্চশিক্ষিত ভদ্রমহিলা নামপ্রকাশে আপত্তি করেছেন, সেই কারণে আমি নাম প্রকাশ করতে পারলাম না।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার (৭ মার্চ, ২০১৮) দু’টি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাই। আমি দ্বিতীয়টা আগে বেছে নিচ্ছি। দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক বৈচিত্রের জন্যই আগে লিখতে চাইছি। আমার যেতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। কারণটা ছিল আমাকে যে ভদ্রলোক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি সময়টা সঠিক জানতেন না। তবুও বলব সন্ধ্যে ৬.৩০ থেকে ৭টা পর্যন্ত আধঘণ্টা যে সময় আমি পেয়েছি সেইটুকু সময়ে আমি নিজে মুগ্ধ বর্ণময় অনুষ্ঠানের গভীরতায়। অনুষ্ঠান ছিল সন্ধ্যে ৬টা থেকে। আমাকে জানান হয়েছিল অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যে ৭টায়।  আলিপুরের নব নির্মিত মুক্ত মঞ্চ ‘উত্তীর্ণ’-এ। অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌঁছে সাদর অভ্যর্থনা পেলাম। আমার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করতেন আমার এক সময়ের সহকর্মী এক ভদ্রমহিলা তিনি কর্ম কর্তাদের একজন। তিনি আমাকে মিডিয়া গ্যালারীতে পৌঁছে দিলেন। মঞ্চের আলোকিত ফ্লেক্সে লেখা ‘বঙালি’ লোগোর নীচে ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের প্রশিক্ষণে লিলুয়া হোমের মেয়েদের তৈরি পোশাক ও সজ্জাসম্ভার ব্রান্ড ‘বঙালি’ এখন বিশ্বের দরাবের‘’ ফ্লেক্সের নীচে লেখা, নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগ।
মঞ্চের এক পাশে একটি গানের দল। তাঁদের মাথায় নতুন গামছা। মঞ্চে লিলুয়া হোমের যে সব মেয়েরা নাচলেন। তাঁদের মাথায় নতুন গামছা। মঞ্চের পিছনে সেলাই মেশিন নিয়ে পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত হোমের মেয়েরা। মঞ্চের সামনে চরকায় সুতো কাটছেন হোমের মেয়েরা। এবং তাঁদের পাশের স্টলে সাজিয়ে রাখা রয়েছে হোমের মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী। অনবদ্য প্রয়াস। প্রশংসনীয় কাজ। মঞ্চে নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও এসেছিলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম নায়ক এবং চরিত্র অভিনেতা প্রসেনজিৎ। তার সঙ্গে ছিলেন ইন্দ্রাণী হালদার। জুন মালিয়া। বিদ্দিপ্তা চক্রবর্তী। চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। এছাড়া ছিলেন সমাজ কর্মী অলোকানন্দ রায়। যার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার নেই। তিনিই প্রথম আরও কয়েকজনের সঙ্গে শুরু করেছিলেনরাজ্যের সংশোধনাগারগুলির অন্ধকূপ থেকে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বাইরে এনে মানবিক প্রশ্রয়ে আরও সামাজিক বাতায়নে পৌঁছে দেওয়ার কাজ। এদিনের মঞ্চে বিবি রাসেলের কাজ ভিন্ন ধরণের হলেও বলতেই হবে সামাজিক উত্তরণ। সেই উত্তরণ শুরু হল নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের কর্মদক্ষ মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজার নেতৃত্বে। অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি বললেন, ‘’আমরা ‘বঙালি’ ব্র্যান্ডের এই ধরণের আরও উদ্যোগ নিচ্ছি। ‘বঙালি’ ব্র্যান্ডের লোগো এঁকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন হোমের আবাসিকদের এইসব কাজে যুক্ত করতে চাইছিহোমের মেয়েদের ব্যস্ত রাখতে পারলে হোমগুলিতে যেমন নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে পাশাপাশি রাজ্য সরকারও লাভবান হবে।‘’
বিবি রাসেল বলেন, ‘’এই ধরণের কাজ আমি প্রথম করলাম। আমি গর্বিত এই কাজ করে। আগামীদিনে আরও এই ধরণের কাজের সুযোগ পেলে করব। সামাজিক পরিসরের জন্য আমি সব রকমের সহযোগিতা করতে চাই।‘’
দপ্তরের সচিব অনন্যা চক্রবর্তী একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘’পুরো কাজটা বিবি রাসেলের উদ্যোগে হয়েছে। উনি কোনও পারিশ্রমিক নেননি। আমাদের দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজার পরিকল্পনায় আমরা এই অনুষ্ঠান করেছি। আগামীতে আরও এই ধরণের কাজের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।‘’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বুধবারের প্রথম অনুষ্ঠানটা ছিল আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন সভাঘরে। ‘কুচিনা ফাউন্ডেশন’ এবং আমেরিকান সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। আমরা ‘কুচিনা’ নামক সংস্থাটির প্রেস বিবৃতির কিছুটা অংশ এখানে উল্লেখ করছি। ‘Kuthina Foundation, Her Dream, Our Mission’, 7th March 2018- On Wednesday afternoon. Kutchina Foundation celebrated International Women’s Day in collaboration with the American Centre, Kolkata through an engaging panel discussion on how inclusion empowers women and develops a nation under the topic ‘’Towards a women inclusive city’’.  
অবশ্যই মানতে হবে আমরা শহরে যে মানবিক আলো খুঁজছি সেই আলো আমেরিকান সেন্টারের উদ্যোগে আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করলেন কুচিনা ফাউন্ডেশনের অন্যতম পরমার্শদাতা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। বাপ্পাদিত্য নিজে ‘প্রান্তকথা’ নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন। বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘’একটা শহরে দোলের দিন পুরুষের সংখ্যা বেশি কেন? বিদেশীরাও প্রশ্ন তুলছেন। আমাদের প্রয়াস শহরগুলির সামাজিক অনুষ্ঠানে মহিলাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের সমাজ নামক একটা গাছের কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে? গাছটার শিকড়ে, কান্ডে না পাতায়?’’
আলোচ্য অনুষ্ঠানের বিষয়ক লেখায় বাপ্পাদিত্যকে প্রথম উল্লেখ করলাম এই জন্য যে বাপ্পাদিত্য ‘প্রান্তবাসী’ মহিলাদের নিয়ে কাজ করছেন, এমন ছ' সাতজন মহিলাকে আমাদের সামনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। এক একজনের অভিঞ্জতার কথা আমরা যত শুনলাম ততই বুঝতে পারলাম কলকাতায় বিদ্যুতের আলো ঠিকরে এসে পড়ছে। শহর উজ্জ্বল হচ্ছে কিন্তু মানবিক শহরকে ফিরে পেতে ওইসব মহিলারা কতটা লড়াই করেছেন এবং করছেন। মঞ্চের আলোচনায় যাঁদের পেলাম তাঁদের নামগুলি উল্লেখ করছি। রন্তাবলী রায়। অধ্যাপক মারিয়া ফার্না ন্ডেজ, সমাজকর্মী বৈতালী মুখার্জী, শাশ্বতী আরোরা।
 রত্নাবলী এমন একটা বিষয়ে কাজ করছেন যেটা অত্যন্ত কঠিন এক মাধ্যম। সরকারী হাসপাতালে রুগীদের মানসিক স্বাস্থকে কি ভাবে দেখা হয়? এবং ওইসব রুগীদের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা কিরকম ব্যবহার করেন সেই ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন তিনি। রত্নাবলী বলছেন, ‘’উন্নয়নের কর্মকান্ডের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। আমি প্রশ্ন তুলছি নারীর প্রতি সম্মান, সমনাধিকারের লড়াই, হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার কাজ সব দেশের সব শহরে কি সমানভাবে রয়েছে? কিছু মানুষ আমাদের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণ মহিলাদেরই সমাজে গ্রহণযোগ্যতা নেই। সেখানে একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলার কি হতে পারে! টুম্পা আছে। ও বলবে। ওর পুরো জীবনচক্রটা আমি জানি।‘’
আসুন আমরা এই অনুষ্ঠানের অন্যতম লড়াকু মেয়ে টুম্পার গল্প শুনি। টুম্পা অধিকারী লালবাতি এলাকার মেয়ে। কালীঘাটে টুম্পার মা যৌনকর্মীর কাজ করে টুম্পাকে লেখা পড়িয়ে শিখিয়েছেন। পড়াশোনা করতে গিয়ে ‘লালবাতি’ এলাকার আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের যে ধরণের অভিঞ্জতা হয় টুম্পার ক্ষেত্রেও একইরকম হয়েছে। টুম্পা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন ওর সহপাঠীরা জানতে পারে টূম্পার মা ‘যৌনকর্মী’। টূম্পার কথায়, ‘’ আমার বন্ধুরা যখন জানতে পারল আমার মা কালীঘাটে কি কাজ করে, তারপর থেকে শুরু হল আমার উপর অত্যাচার। বন্ধুরা বলত ‘তুইতো একজন বেশ্যার মেয়ে। বেশ্যার মেয়ে বেশ্যাই হয়’তখন আমার কি যন্ত্রণা হয়েছিল। মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করেছিলাম। চিৎকার করতাম। রেগে যেতাম। আমার  তথাকথিত বাবা তার অত্যাচার ছিল। আমার সৎ দাদার অত্যাচার সহ্য করেছি। টানা দু বছর সহ্য করেছি।‘’
টুম্পার কথা থামতে চায় না। সাবলীলভাবে বলে চলেছেন। কোনও দ্বিধা ওর মধ্যে কাজ করছে না। টুম্পা আরও বলে, ‘’আমি হতাশ হয়ে ভাবতাম মায়ের জীবনটা বেছে নি। পুরুষ বন্ধুরা কেউ কেউ স্কুলের ব্যাগে মদ এনে দিতে বলত। কেউ কেউ টাকা দিয়ে আমাকে ব্যবহার করতে চাইত। আমি একটা সময় ক্লান্ত, হতাশ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু মায়ের কথা শুনে স্কুল বদলে আমি পড়াশোনা করেছি।‘’
টুম্পার উপলব্ধি। টুম্পা বলছে, ‘’এরপর আমার লড়াই শুরু হল। বুঝলাম তথাকথিত এই সমাজের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে একজন টুম্পা দিয়ে হবে না। প্রয়োজন আরও অনেক টুম্পার। আমরা আমদের কালীঘাট অঞ্চলে সচেতনতা আনার চেষ্টা করছি।আমাদের কালীঘাট পাড়ায় এখন কোনও মেয়েকে এনে আর বিক্রি করা যায় না।  আমাদের পাড়ায় কারও মাকে তার বাবা মারলে সে নিজেই থানায় ফোন করে খবর দিয়ে দেয়। আজ আমি নিজের কথা বলতে পেরে অনেকটা হাল্কা বোধ করছি।‘’ সাবাশ টুম্পা শাবাস। একঝাঁক সাদা হাঁস ভেসে এলো আকাশে।
লিঙ্কন সভাঘরের মঞ্চে উপবিষ্ট টুম্পার অন্যান্য সহ আলচকরা নিজেদের কথা হারিয়ে ফেলেছেন। মঞ্চে বসে আছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য মারিয়া  ফার্নান্ডেজ। সমাজকর্মী বৈতালী গাঙ্গুলী। এবং শাশ্বতী আরোরা। প্রত্যেকেই প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে আজ বর্তমান সমাজে এক একজন উল্লেখযোগ্য নারীযারা সমাজের পিছিয়ে পড়া, আলো না দেখা নারীদের নিয়ে কাজ করছেন নিজেদের অকৃত্রিম উজার করা ভালোবাসায়। টুম্পার কথা শেষ হওয়ার পরেই আমাদের সামনে এলেন কবি শামসাদ। শামসাদ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার শিরাকোল গ্রামের মেয়েছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। শামসাদ ভাবত নিজের পায়ে নিজেকে দাঁড়াতে হবে। হ্যা শামসাদ এখন স্বনির্ভর। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারী নার্সিং হোমের নিরাপত্তা কর্মীদের ‘ইনচার্জ’। এবং অবসর সময়ে কবিতা লেখেন। ‘আম’ নামে একটি কবিতা আমরা শামসাদের মুখে শুনলাম। মিষ্টি আমের মতই তার শব্দচয়ন। নিজের জীবনের অনুভূতি আমের রসে জারিয়ে পাঠকদের পরিবেশন করেছেন।
শামসাদ বলছেন, “খুব ছোট বেলায় গ্রাম থেকে উঠে এসেছি। আমি টিউশানি করতাম। আমার ছাত্রদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে নিতাম। ওই টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামের গরিব ছাত্রদের স্লেট, বই, খাতা কিনে দিতাম। আমার স্বামীর কাছে টাকা চাই না। আমি স্বনির্ভর। মেয়েরা স্বনির্ভর না হলে পরিবারে, সমাজে অত্যাচার বন্ধ হবে না।‘’
টুম্পা, শামসাদ বাহ। আমার আন্তরিক অভিনন্দন রইল তোমাদের জন্য। তোমাদের লড়াই আমাকে প্রেরণা দিচ্ছে। আমি নিজেও প্রান্তবাসী অঞ্চল থেকে উঠে এসেছি। প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তোমাদের লড়াইয়ের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি পারব। আমি আলো খুঁজে খুঁজেই আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন হলে তোমাদের দেখা পেলাম। আমেরিকান সেন্টারের কতৃপক্ষ বাংলা তথা কলকাতার মনন গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন। যে কথা প্রথমেই উল্লেখ করেছেন আমেরিকান সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভশ্রী সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘’আমি খুশি আজকের বিষয়ের উপর আলোচনার আয়োজন করতে পেরে। আমরা এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান হায়দারাবাদে করেছি। অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান ছিল সেটা। আপনারা সবাই খোলা মনে আলোচনা করবেন।‘’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন ৮ মার্চ ধর্মতলায় ছিল একটি অনুষ্ঠান। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক মহিলা সম্মেলন। প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলনের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধযায়, অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টপাধযায়, শিক্ষাবিদ ভারতী রায়, ফুটলার শান্তি মল্লিক সহ আরও অনেকে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ করেছি। আমাদের নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি হচ্ছে ৩৩%। বিল পাশ করার আগে আমরা করে দেখিয়ে দিয়েছি। রাজ্যের ৪৮ শতাংশ মেয়েরা ১০০ দিনের কাজে নিযুক্ত আছেন। আমাদের রাজ্যে ‘কন্যাশ্রী’-এর মত প্রকল্প চালু আছে। যে প্রকল্পে আমরা ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। রাজ্যের গরিব পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে চায় রাজ্য সরকার। এপ্রিল মাস থেকে আমরা আরও একটা প্রকল্প আনছি। এই প্রকল্পে একটি গরিব পরিবারের মেয়ের বয়স ১৮ হলে সেই মেয়েটির বিয়ের জন্য ২৫ হজার টাকা করে দেবে আমাদের সরকার। আমি নিজে যে লড়াই করেছি। আমি বিশ্বাস করি নারীর স্বক্ষমতা তখনই সম্ভব একজন নারী আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হলে।‘’
টুম্পা তোমাদের চেনা অন্ধকার, অচেনা আলো ভেঙে আমাদের সামনে এগিয়ে আসতে বলছ। শরৎচন্দ্রের চন্দ্রমুখীর সময়কাল ছূটে পেরিয়ে এসেও আমাদের কলকাতা তথা নাগরিক কলকাতায় আজও আমরা আলো খুঁজছি। কালীঘাটে। হাড়কাটা লেনে, বৌ বাজারের বড় রাস্তায় সন্ধ্যের ফুটপাথে। সোনাগাছির ঝা চক চকে অলিতে গলিতে। কৃত্রিম আলো নয়। মনের জানলা খুলে দেওয়া জ্যোৎস্নায় আমরা স্নান করতে চাইছি। অবগহন করতে চাইছি। চুঁইয়ে পড়া সভ্যতার আলোয় আরও সামনে হেঁটে যাব আগামীর পদাতিক হয়ে। তোমরা সবার সঙ্গে থেক। নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে যদি আবার কোনদিন বেরতে হয় তবে অবশ্যই টুম্পাদের নতুন পাড়ায় যাব। নতুন মাটি নিয়ে গ্রাম বাংলার সরস্বতী আরাধনার মণ্ডপে মণ্ডপে ছড়িয়ে দেব। ভালো থেক কলকাতা। ভালো থেক টুম্পা। ভালো থেক শামসাদ। ভালো থাকবেন আমার সহ নাগরিক বাপ্পাদিত্য।         

          

No comments:

Post a Comment