Wednesday 3 January 2018

নতুন শতাব্দীতে নতুন নেতা পেয়েছে ভারত কংগ্রেস কি করবে?

নতুন শতাব্দীতে নতুন নেতা পেয়েছে ভারত
কংগ্রেস কি করবে?: 

দীপেন্দু চৌধুরী 

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারত নামক একটি উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন নতুন নেতা তথা মানবতাবাদী সমাজকর্মীকে আমরা পেলাম। নিজের একক উদ্যোগে নিজেকে খুব অন্তরাল থেকে তৈরি করেছেন তিনি এবং করছেন। ২০১৬ সালের শুরুয়াত থেকেই তাঁর শারীরিক ভাষা আমাদের জানান দিচ্ছিল তিনি এসে গেছেন। বিজেপি নামক দলের অন্যতম কান্ডারী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দেওয়ার জন্য। নরেন্দ্র মোদী যেমন সুচতুর তেমনি সংসদীয় রাজনীতিতে সুদক্ষ এবং অভিঞ্জ। এই সত্য মেনে নিয়েও বলতে হবে তিনি বুঝতে পারছেন তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেতা পেয়ে গেছেযিনি সত্যি সত্যিই দেশের মানুষের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আমরা সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধির কথা আলোচনা করছি। অনেকবার আলোচিত তবু আবার উল্লেখ করা যায়, রাহুল গাঁধি যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সেই পরিবার নিয়ে বিজেপি সহ ‘নেহরু-গাঁধি’ পরিবার বিরোধীদের বাঁকা কথা আমরা আজও শুনতে পাই রাজনৈতিক কৌশল হোক অথবা ‘ব্যক্তিগত ঘৃণা’ বা ‘গোষ্ঠীগত’ ঘৃণা আবার খুব সম্ভবত উচ্চকিত ঈর্ষাপরিচিত সেই ব্যক্তিগত আক্রমণ বা তথাকথিত ভাষা পরিহার করার কথা বলছেন কংগ্রেস সভাপতি। প্রতিপক্ষ মানেই খুল্লম খুল্লা আক্রমণ করব। আধুনিক জীবন যাত্রায় নিজেকে সাজিয়ে তুলব আবার আক্রমণের সময় সামন্ত সংস্কৃতিতে ব্যবহার হয় এমনসব আচরণ করব। ভাষা প্রয়োগ করব। দুটো পাশাপাশি একসঙ্গে চলতে পারে না। উত্তর আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ভাষাও অত্যাধুনিক হওয়া উচিত। তাই তিনি বলছেন অন্য সংস্কৃতির কথা। ভারতীয় রাজনীতিতে ব্যক্তি হিংসার পরিবর্তে পেশাদারি রাজনীতির প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।   
এবং রাহুল গাঁধি তথাকথিত সেইসব ম্লেচ্ছ ভাষার উত্তর দিতে নিষেধ করছেন। যে ভাষাকে আমরা ‘খিস্তি’ খেঁউড় হিসেবে জেনে এসেছি। সেসব কোতুকের ভাসা নয়। তিনি বলছেন, যে ব্যক্তি হিংসার কথা বলে তাঁকে সহিষ্ণু ভারতীয় সমাজ সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শান্তি প্রগতি এবং ভাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে ফেলো। রাহুল গাঁধির কথা এবং রাজনৈতিক অবস্থানের এতটাই শক্তি বিজেপির শীর্ষ নেতারাও বন্ধ সভাঘরে রাহুল গাঁধির কাছ থেকে শেখার উপদেশ দিচ্ছেন দলের সদস্য এবং অধস্থন নেতাদের। সম্প্রতি কলকাতার আইসিসিআর সভাগৃহে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্বজ্জন সেলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ।
২০ ডিসেম্বর, ২০১৬তে রাজ্যের বিদ্বজ্জন সেলের বৈঠকে শিবপ্রকাশ গুজরাত প্রসঙ্গ তোলেন। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ওইদিনের বৈঠকে মোহিত রায়, অম্বুজ মহান্তি, পঙ্কজ রায়- সহ পাঁচজন নেতা তাঁদের বক্তব্য রাখেন। রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলেন মোহিতবাবু। তিনি বলেন, এই কারণের জন্য আমরা ‘বিপন্ন’ বোধ করছি। শিবপ্রকাশ নিজের বক্তব্য রাখার সময় বলেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধিকে দেখে শেখা উচিত। তিনি যেমন গুজরাতে গিয়ে ভালবাসা দিয়ে ঘৃণাকে অতিক্রম করার কথা বলেছেন, এ রাজ্যের নেতাদের তা মাথায় রাখা উচিত। বিজেপি নামক দলের এক শীর্ষ নেতা রাহুল গাঁধির রাজনৈতিক দর্শনের প্রশংসা করছেন। ভারতে ‘সাম্রদায়িক রাজনীতি’ ভালো খায়তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাহুল গাঁধি যে রাজনৈতিক প্রচারভাষা ব্যবহার করছেন, ভারতে সাপ্রতিককালে তা বিরল। কয়েকমাস আগে রাহুলের এক জনসভায় কংগ্রেস কর্মী- সমর্থকরা ‘নরেন্দ্র মোদী মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। রাহুল গাঁধি আপত্তি জানান। রাহুলের রাজনৈতিক অধ্যায়ে যেটাকে কংগ্রেস ঘরানার নতুন সংস্কৃতির সূচনা বলা যেতেই পারে। বিশেষত গত কয়েক দশকের কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে সামনে রাখলে আমরা বলতেই পারি কংগ্রেস নামক দলে খোলা হাওয়ার জন্য রাহুল গাঁধি গণতন্ত্রের ব্যবহারযোগ্য সমস্ত বাতায়ন খুলে দিতে চাইছেন। গান্ধিজী, জওহরলাল নেহরু, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ এবং আম্বেদকরদের মতো ভারতীয় মনিষীদের কথা মেনেই রাহুল গাঁধি আমাদের সত্যের সামনে টেনে আনতে চাইছেন।
উল্লেখিত ওই দিনের জনসভায় রাহুল তাঁর সমর্থকদের থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, প্রবলতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরও মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। এই আহ্বান কংগ্রেস ঘরানার আঁতুড়ঘরে ‘মানবিক রাজনীতির’ নব অধ্যায়ের শুরুয়াত নয় কি? এই ভাষা আমাদের দেশে কত দশক অথবা কত শতক আগে আমরা শুনেছি? খুব কি অপ্রাসঙ্গিক হবে বহু আলোচিত গুজরাট ভোট নিয়ে যদি আমরা আরও একবার ফিরে দেখি। গুজরাট বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে থেকেই ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ এবং অন্যান্য গণমাধ্যমগুলিতে ‘ট্রুথ অব গুজরাট’ বিষয়ে আমরা খবর রাখছিলাম। সেই খবর কতটা সত্যি হল তার উদাহারণ এরকম, গ্রামীণ গুজরাটে বিজেপির যে যে আসনে জয় এসেছে সেখানে মার্জিন অতি সামান্য। একটি সূত্র বলছে শহর কেন্দ্রিক ৩৯ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৩৩টি। গঞ্জ শহর বা মফসসল কেন্দ্রিক আসনের ক্ষেত্রে বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ২৬ টি। আসন সংখ্যা ছিল ৪৫টি। পাশাপাশি গ্রাম কেন্দ্রিক ৯৮ আসনের থেকে ২০১৭ সালের বিজেপি নামক দলটি পেল মাত্র ৪০টি। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত ‘গুজরাট অস্মিতা’ ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল।
এই পর্যালোচনা ধরে বলা যায় কংগ্রেস রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ভোটের শতাংশ অনেকটা বাড়াতে পেরেছে। ২০১৪ সালের তুলনায় এবছর আট শতাংশ ভোট বেড়েছে কংগ্রেসের। তুলনামূলক আলোচনায় ২০১২ সালের তুলনায় তিন শতাংশ। সমস্ত গুজরাট জুড়ে কংগ্রেস ভোট বাড়াতে পেরেছে। কংগ্রেস গ্রামীণ ক্ষেত্রে আরও আগে থেকে নজর দিতে পারলে পরের পাঁচ বছরের জন্য বিজেপির ফেরা সম্ভব হত না। ‘গুজরাট মডেল’ নামক সোনার পাথরবাটির মিথ বেজেপির আর কাজে আসেনি। আর সেই কারণে রাজ্যের ভূমিপুত্র দলের এক এবং একমাত্র মহাতারকা নরেন্দ্র মোদী নিজের কাঁধে সব দায়িত্ব নিয়ে এবারের মতো দলকে কোনও রকমে উদ্ধার করলেন। গুজরাটে সরকার বিজেপি তৈরি করলেও প্রতি মুহূর্তে হোচট খেতে হবে। যার সূচনা আমরা কয়েকদিন আগে দেখেছি।
‘ট্রুথ অব গুজরাট’ আমাদের সামনে যে সব ছবি তুলে দিয়েছে সেই সত্য এবার কংগ্রেস গঠনমূলক বিরোধীদল হিসাবে আরও সামনে আনবে। গ্রামীণ গুজরাটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, পরিকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে প্রশাসন নজর দেয়নি। তার ফলে গ্রামীণ গুজরাটের মানুষের ক্ষোভ ছিল। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ক্ষোভ ছিল। ‘দ্য উইক’ ( The Week) পত্রিকার ৩১ ডিসেম্বর (২০১৭) সংখ্যায় সনি মিশ্রা লিখছেন, ‘’.........The party, as a closer analysis of the results shows, came very close to upsetting the BJP in Gujrat. In 16 seats, the Congress lost by a margin of less than 3,000 votes. If the four major cities of Ahemabad, Surat, Vadodara and Rajkot are kept out, it won 71 seats against the BJP’s 53. The party’s vote percentage when compared with the Loksabha election in 2014 increased from 33.5 per cent to 41.5 per cent, whereas that of the BJP dropped from 60 per cent to 49 per cent.
 গুজরাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এআইসিসি সদস্য অশোক গেহলট গুজরাট ভোটের পর ‘দ্য উইক’ পত্রিকাকে বলেন, ‘’The BJP will from government again. But it is not a BJP victory, and neither is it a loss for the Congress.’’  গুজরাটে বিজেপি সরকার গঠন করলেও কংগ্রেসের সাফল্যকেও ছোট করে দেখা যাবে না। রাজ্য ভোটের ফল প্রকাশের পরে ১৮ ডিসেম্বর সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধি টুইট করেন, ‘’আপনারা আমাকে গর্বিত করেছেন। যাঁদের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তাঁদের থেকে আপনারা ভিন্ন। কারন, মর্যাদার সঙ্গে ক্রোধকে মোকাবিলা করেছেন। সাহস ও শালীনতাই কংগ্রেসের বড় শক্তি।‘’
কংগ্রেসের নব নির্বাচিত সভাপতি রাহুল গাঁধি ২৮ ডিসেম্বর দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে পতাকা তুললেন। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কারণ প্রতি বছরই এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না। কিন্তু এই বছরের ব্যঞ্জনা অন্যরকম। আগামী দিনে কংগ্রেস কি ভাবে চলবে তাঁর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ওই দিন থেকে। দলের ১৩৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল সেদিনওই দিনে দিল্লির কংগ্রেস সদর দপ্তরে ছিল সাজ সাজ রব। রাস্তায় বাজি ফাটছে। কর্মী সমর্থদের নজর কাড়া ভিড়। আর সেই সঙ্গে স্লোগান। নব নির্বাচিত সভাপতি নেতা, কর্মী, স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে আবেদন করলেন, দিল্লিতে কেউ ভিড় করবেন না। তাতে আপনাদের দলে নম্বর বাড়বে না। রাজধানীর নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরে কোনও লাভ হবে না। গ্রামে যান। নিজের অঞ্চলে যান। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকুন। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কংগ্রেস করুন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ (NDA) রাজনৈতিক ফ্রন্ট হিসেবে ভারতীয় জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ শাসন করছে। তুলনায় কংগ্রেস দলের নেতৃত্বে ইউপিএ মাত্র ৮ শতাংশ ভারতীয়ের শাসন ক্ষমতায় আছে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এ কে অ্যান্টনি একটি বিতর্কিত প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কংগ্রেস দলের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পর্যালোচনা হওয়া উচিত। প্রশ্ন রেখেছিলেন কংগ্রেস নামক দলটি কি কোনও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর প্রতি মাত্রারিক্ত প্রাসঙ্গিকতা দেখায়? ভারতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নামক শব্দটির ব্যঞ্জনা অনেক অনেক গভীরে। ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্ম-বিরোধিতা দু’টো একে অপরের পৃথক পৃথক বিষয়। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। সেই অভিঞ্জতা থেকেই কংগ্রেসের পোড়খাওয়া উচ্চ শিক্ষিত নেতৃত্ব ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নামক দর্শনকে আরও বেশি করে দলের ‘রীতিনীতি’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্রের যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সেই দেশের ব্যক্তি নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মীয় প্রচারকে রাষ্ট্রগতভাবে উৎসাহ দেয় না। পাশাপাশি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নিজ নিজ পৃথক ধর্ম বিশ্বাস করাকে মেনে নেয়। এবং যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না তাঁদের অধিকারের নীতিকেও স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এবারের গুজরাট বিধানসভা  নির্বাচনে কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নীতির ভারসাম্য লক্ষ করা গেছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রশংসিত রাহুল গাঁধির সেই ভূমিকাকে বিজেপির প্রথম সারির নেতা অরুণ জেটলি কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দলের ছাত্রফ্রন্ট এসএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে ১৮ ডিসেম্বর বারণপুরের ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিএমের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘’দেশে এখন বিকল্প নীতি দরকার। সম্প্রতি গুজরাট বিধানসভা ভোট প্রমাণ করল সেই রাজ্যে মোদীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ থাকলেও ভোটে বদল হল না। কারন বিজেপি তাঁদের পুরনো নীতিকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেল।‘’

ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে দেশের আরও একজন প্রধানমন্ত্রী অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গেছেন। ভারত নামক দেশটির জন্য নিজের জীবনের মূল্য চোকাতে হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি রাজীব গাঁধি। রাজীব গাঁধি বলেছিলেন, "...Secularism is the bedrock of our nationhood. It implies more than tolerance. It involves an active effort for harmony..." - 

বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ ক্ষমতায় এসেছে তিন বছর আটমাস। ক্ষমতায় আসার আগে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মিশন এবং দর্শন’ ছিল দেশের আর্থসামাজিক সংস্কার। উদার অর্থনীতি। দুর্নীতি মুক্ত ভারত গড়ে তোলা। নোট বাতিল, কর কাঠামোর সংস্কার, জিএসটি প্রচলন, রেলের সংস্কার সহ এক গুচ্ছ কর্মসূচী নিলেও তিনি উন্নয়ন  প্রশ্নে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। দেশের কৃষি ক্ষেত্রের সংস্কার বা কৃষকদের জন্য কোনরকম গঠন মূলক নীতি নিতে ব্যর্থ বর্তমান এনডিএ সরকার।    
একাধিক উদাহারণ টেনে বলে দেওয়া যায় ভারতের উদার অর্থনীতির মুখ হতে  পারছেন না নরেন্দ্র মোদীশিল্পে মন্দার জন্য কর্মসংস্থান সেভাবে হচ্ছে না। সূত্রের খবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘স্মার্ট সিটি’ মিশনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দেশবাসী এই বছরে পেয়েছে মাত্র ৬০টি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এনডিএ সরকার ৬০টি স্মার্ট সিটির জন্য খরচ করেছে মাত্র ৯,৮৬০ কোটি টাকা। স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পের জন্য ২০১৭-২০১৮ আর্থিক বছরের বাজেটে ধরা হয়েছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু অরুণ জেটলির অর্থমন্ত্রক খরচ করেছে মাত্র ৭ শতাংশশহরের বেকারদের কর্ম সংস্থান করার জন্য ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলা যেমন প্রয়োজন পাশাপাশি ‘স্মার্ট ভিলেজ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার পুরোটাই বার্থ। ফলে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ যুব সম্প্রদায় চাকরির জন্য দরজা খুঁজে পাচ্ছে না। এই যুবকরাই প্রশ্ন তুলছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কি হল? উদার অর্থনীতির ব্যবস্থা গড়ে না তুলে মোদীজি কি ভারতের তথাকথিত মূল্যবোধের সঙ্গেই সমঝোতা করছেন? সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই রাহুল গাঁধি সরাসরি আক্রমণ করলেন। তিনি বলেন, ‘’দেখুন আগুন যখন লাগে, তা নেভানো কত মুশকিল। বিজেপিকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। বিজেপি গোটা দেশে আগুন লাগিয়ে হিংসা ছড়ায়। আর তার মোকাবিলায় কংগ্রেসের শক্তি দলের কর্মীরা।‘’
প্রাসঙ্গিক হবে একটি বইয়ের উল্লেখ করা। সম্প্রতি আমি যে বইটি পড়ছি সেটি হল ‘হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’স স্ট্রাগল ফর ফ্রীডম, পারট-১, ১৬৮৬-১৮৮৫, ফ্রম আওরঙ্গজেব টু দ্য এমারজেন্স অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশন্যাল কংগ্রেস’। বইটির লেখক এ কে মুখার্জী। বইয়ের ভূমিকায় ‘দ্য রুল অব ল’ পরিচ্ছেদে তিনি লিখছেন, ‘’............ India became unified under one legal, judicial, and administrative system and the British ruled over the country by enforcing this ‘system’. It was Gandhiji who first detected this travesty of law and justice and devised his two weapons ‘non co-operation’ with the ‘system’ by boycotting schools, colleges, universities, courts, office etc. and ‘civil disobedience’ of the laws. But he entered the scene at a much latter stage. The spade work began earlier. India’s struggle for freedom has a much longer history than is usually attributed to it.’’
এই বইয়েই লেখক এ কে মুখার্জী উল্লেখ করছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ভাষণের যে অংশটা প্রচার করা হয়েছিল সেই অংশটি। লেখক লিখছেন, ‘’…………in a broadcast to the nation on 15 August 1947 as the ‘first servant of the Indian people’, Nehru proudly declared:  ‘we are a free and sovereign people today………’. ‘The burden of foreign domination is done away with, but freedom brings its own responsibilities and burdens, and they can only be shouldered in the spirit of a free people, self-disciplined and determined to preserve and enlarge that freedom.’’
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে কংগ্রেস কি পারবে রাজস্তান, ছত্তিসগঢ় এবং মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠন করতে? গুজরাট নির্বাচনের ফল বিজেপির কপালে ইতিমধ্যে ভাঁজ ফেলেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন গুজরাতের সামাজিক বিন্যাসের সমীকরণের কথা। গুজরাট ভোটে ওবিসি, দলিত এবং পাতিদার সম্প্রদায়ের তিন নেতাকে এক মঞ্চে আনতে পেরেছিল কংগ্রেস। বিজেপি উচ্চারিত ‘হজ’ (ইংরেজি অদ্যক্ষর নিয়ে) নামক তিন নেতা যথাক্রমে হার্দিক, অল্পেশ এবং জিগ্নেশের সমীকরণ মাথায় রেখে কংগ্রেস ওড়িষা, বিহার, অন্ধ্র, তেলেঙ্গনা এবং আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে একই রকম সমীকরণ করতে পারে। সেই সমীকরণ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নামক দলকে বড় ধরণের ধাক্কা সামলাতে হতে পারে।       




No comments:

Post a Comment