Friday 10 June 2016

ভাঙ্গা-গড়ার সংস্কৃতি

আবার এ বছর ২০১৬ সালে সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ নামক দলটি সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করেছে। এই বিষয়টা কিছুটা পুরনো হয়ে গেছে। কাকতালীয় বিষয়টা হচ্ছে। ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ আসন সংখ্যার নিরিখে ২১১ তে এসে থামল। একটা সময় নয় অনেকগুলি বছরেরে যোগ-বিয়োগের ফসল ২০১৬ সাল। বিশেষত এই বাংলায়। কী রকম কাকতালিয় ঘটনা দেখুন। ২০১১ সালে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের জমানার অবসান হয়েছে। আবার ২০১৬ সালের ষোড়শ বিধানসভা নির্বাচনে ২১১ টি আসন পেল 'তৃণমূল কংগ্রেস'। 
 নির্বাচন চলাকালীন আমি নিয়মিত ‘নেট’ ব্যবহার করলেও মধ্যে কিছুদিন ‘নেট’ ব্যবহার করিনি। এই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় চাপানউতর  ভালোই চলেছে বলে মনে হয়।
ওই সময় তীব্র গরম ছিল। প্রখর তাপপ্রবাহ চলছে। আমরা যে বাড়িটায় ভাড়া থাকি, সেটা তিন তলা বাড়ি। আমরা তিন তলায় থাকি ‘আম-জাম’ আদমির মত প্যাঁচ পেঁচে গরম সহ্য করে থাকি। ছাদের কিছুটা অংশ ফাঁকা। মাথায় প্লাস্টিকের ছাউনি। ছাদের রেলিঙে কাক, শালিক, বুলবুলি, টুনটুনি পাখি এসে বসে। ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। আবার চলে যায়। আমি ঘরের জানলা দিয়ে ওদের দেখি। মাস খানেক আগের কথা। দুটো শালিক জোড়া পায়ে হাটতে হাটতে জানলার কাছে এসে খুব চেচামেচি করল। জানলার পর্দা তোলা ছিল। আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘’গরমে ওরা জল খেতে পারছে না। একটা পাত্রে ওদের জল দিয়ে দ্যাখতো। ওরা সম্ভবত জল চাইছে। সেদিন থেকে একটা প্লাস্টিকের ছোট বাটিতে ওদের পরিষ্কার জল দিচ্ছি। শালিক পাখি দুটি এখন শীস দেয়। জানলার পর্দা তোলা থাকলে জানলার কাছে এসে ঘাড় কাত করে অবুঝ ভাষায় আনন্দ প্রকাশ করে। কখনো কখনো আবার জোড়া পায়ে নাচে। ওরা আমার বন্ধু হয়ে গেছে। কিন্তু একদিন বিড়ম্বনায় পড়তে হল। ‘হুতোম’ সেদিন ছাদের রেলিঙ-এ বসে বলল, ‘’এবার আমাকে ভুলে যাবি নাতো?’’
আমি বললাম, ‘’না ভুলব কেন? ওরা জল চাইছিল। এই গরমে ওদের জল দিলাম।‘’
হুতোম বলল, ‘’এটা ভালো কাজ সবাই জানে। এতে ‘বাহবা’ কুড়োবার মতো কিছু হয়নি। যাই হোক এবার বল ভোটের ফল প্রকাশের পর তুই ইন্টারনেট ব্যবহার করলি না কেন?’’
আমি বললাম, ‘’সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি সবাইকে বলব কেন?’’
হুতোম বলল, ‘’ঠিকই। তোকে বলতে হবে না। কিন্তু তুই ‘ফেসবুকে’ ‘ট্যুইটারে’ অনেক মেসেজ মিস করেছিস। আমার একটা মেসেজ খুব ভালো লেগেছে। কেউ একজন লিখেছিল, ’১২ কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে ‘বামপন্থী ভোটার’ করনি।‘’ আমি রবি ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ পড়তে পড়তে হুতোমের কথা শুনছিলাম। বললাম, ‘’আমি এসবের মধ্যে নেই।‘’ মুখ তুলতেই দেখলাম হুতোম চলে গেছে। একটা কাক বাটির জল খেয়ে বাটিটা উলটে দিয়ে চলে গেল।
ভাঙ্গা গড়ার সংস্কৃতি কী একেই বলে? গণতন্ত্রে এটা হয়েই থাকে। ‘মসনদ সংস্কৃতি’র বয়ান আমরা চিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার উজ্জ্বল উদাহারণ। কিন্তু ভারত নামক একটি গণতান্ত্রিক দেশে ‘মসনদ সংস্কৃতি’ খুব বেশিদিন টেনে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব? ‘দলদাস সংস্কৃতি’ অথবা মধ্যমেধার সংস্কৃতি? ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতি বলে কী কিছু হয়? নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ নেত্রী বলেছিলেন, ‘’সাংস্কৃতিকভাবে আগে বাংলাকে এগিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে থাকবে ছাত্র যুব।‘’ আর পরে কি বললেন তিনি? মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে তিনি বিধানসভায় বললেন, ‘’যাদের একজন সদস্য আছেন আমি তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিধানসভায় আমরা অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করব।‘’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘’কটূক্তি, কুৎসা করবেন না, যাতে একে অপরের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক হয়। যা হওয়ার হয়েছে। সুন্দর সীমারেখা রেখে সকলের বোঝাপড়া, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে শুভ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নজির সৃষ্টি করতে হবে। যা পশ্চিমবঙ্গ, ভারতকে পথ দেখাবে।‘’ তিনি এরপরও থামেননি। গত পাঁচ বছরের অভিঞ্জতার মান দন্ডে বিরোধীদের কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে  চেয়েছেন। দেশ নিয়ে যারা ভাবেন। রাজ্যের উন্নয়নের কথা যারা ভাবেন। সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের কথা মনে রেখে তিনি আস্থার সঙ্গে বলেছেন, ‘’হয়তো বলে যাব। হয়তো হবে না। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?’’ সময়ের পরম্পরায় কূটনীতি বাস্তবকে চিনে নিতে চায়। বাস্তব সব সময় সামগ্রীক স্বার্থের কথা বলে সম্ভবত। ইতিহাস যে তথ্য সযত্নে ভবিষ্যতে আমাদের সামনে চয়ন করে আনে।
২০১৬ হাটি হাটি পায়ে এই বাংলায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বাংলার মানুষ গণতন্ত্রকে কি ফিরিয়ে আনছে? গ্রাম বাংলার আটচালায়, উঠনে, নাগরিক সভ্যতার ‘বহুতল’ বাড়িগুলির গাড়ির শান বাঁধানো ঝা চক চকে চাতালে, দুর্গা মণ্ডপে কি নতুন মহালয়ার সুর বাংলার মানুষ শুনতে পাচ্ছে? এবার এই রাজ্যের বিধানসভার চালচিত্রটা দেখুন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ‘ওরে বিহান হল’ বলে বিধানসভায় বিরোধী আসনে বসল। ১৫ বছর পর। আনুপাতিক হারে ২০১৬ সালের ষোড়শ বিধানসভা নির্বাচনের পরে মুসলিম বিধয়কের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১১ সালে মোট মুসলিম বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৫৯ জন। ২০১৬ সালে তুলনামুলকভাবে অনেকটা বেড়েছে। এবারের বিধানসভায় তৃণমূল, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মিলিত মুসলিম বিধায়ক সংখ্যা সর্বমোট ৬১ জন। বামফ্রন্টকে নিয়ে ভারতীয় বামপন্থীদের যে চিন্তা ছিল, সেটার অনেকটা উত্তর মিলেছে। কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব নিয়েছিল বলেই হয়ত এই ছবি আমারা দেখতে পেলাম। রাজ্যের পোড় খাওয়া নেতা কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে রাজ্য কমিটি নতুন পরিষদীয় নেতৃত্ব তুলে আনতে পেরেছেন। সময় বলবে এই নেতৃত্ব মানুষের জন্য, এই বাংলার জন্য কতটা দায়িত্ব নিতে পারছেন। পাশাপাশি বিজেপি তাঁদের দলের নতুন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে একের জায়গায় তিনজন বিধায়ক নিয়ে বিধানসভায় হাজির। গণতন্ত্রের সার্বিক বিতর্ক উপভোগ করার অপেক্ষায় বাংলার মানুষ। কিন্তু এরপরও বলতে হয় পঞ্চাশ বছরের পুরনো বামপন্থীদের ভূমিকা এবগ দায়িত্ব আর সকলের থেকে আজ এই রাজ্যে অনেক অনেক বেশী নয়? যেহেতু তাদরে অতীত ছায়া আমরা বয়ে বয়ে বেড়াচ্ছি।           
তথাকথিত একটা তীব্র সাংস্কৃতিক অভিঘাত এই রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কম বেশি প্রায় চল্লিশ বছরের ‘বামপন্থী’ সংস্কৃতি এই রাজ্যে অন্য একটা মনন দিয়েছিলশুধু এই রাজ্যে নয় সারা দেশে তার প্রভাব বিস্তার করেছিল। গণনাট্যের সময়কালকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু তারপর? কিছুটা তাত্ত্বিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, কখনও আদর্শগত কারণে বাংলার উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক নক্ষত্রদের আমরা অপাংক্তেয় করে দিয়েছিলাম। এবং কিছু বেনোজল এসে প্রথম সারির সাংস্কৃতিক নেতৃত্বকে ‘স্তাবক’ করতে না পেরে বাংলার উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। নামগুলি মনে পড়ছে। দেবব্রত বিশ্বাস, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, বিজন ভট্টাচার্য, তৃপ্তি মিত্র, ঋত্বিক ঘটক, শম্ভু মিত্র, সতীনাথ ভাদুড়ী, তারশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র এবং আরও অনেকে। আমি ‘জি নিউজ’ এ চাকরি করার সময় এক সাংবাদিকের কাছে শুনেছিলাম সে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’ পড়েছে কিন্তু ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস এর’ নাম শোনেনি। আমার কাছে শোনার পরে প্রেস ক্লাবে বসে সে আমাকে বলেছিল, ‘আমি বামপন্থী পরিবারের ছেলে অথচ দাদা দেখ,  আমাকে এই বইটার নাম কোনওদিন বলা হয়নি। তোমার কাছে শুনে বইটা পড়লাম। অসাধারণ উপন্যাস।‘’
জেলে বসে তিনি জাগরী লিখেছেন। পরাধীন ভারতের অন্যতম সৈনিক সতীনাথদেশে স্বাধীনতা এল। নতুন সরকার। সতীনাথ ভাদুড়ীর নাম সাংস্কৃতিক জগতে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয় তিনি। মন্ত্রিত্বের জন্য তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হল। তিনি সম্মানের সঙ্গে পরিহার করলেন। সতীনাথ বললেন, ‘’আর কী দরকার? দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছিলাম, দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, এবার রাজনীতিতে থাকলে ক্ষমতার লোভ আসবে মনে।‘’
আর তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়? যে বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে তার কাজ সেখানে একজন ব্যক্তি মানুষের পক্ষে সবটা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। সত্তরের দশকে আমার থেকে বয়সে আট বছরের বড় এক অধ্যাপক দাদা বলেছিলেন। ‘আরোগ্য নিকেতন’ নোবেল পেতে পারত। ভদ্রলোকের দেশ-বিদেশের ধ্রুপদী সাহিত্য অনেকটা পড়া ছিল। আমার যতদূর মনে পড়ছে ‘আরোগ্য নিকেতন’ জীবন মশাইয়ের প্রস্থানের গল্প। নতুন সময়কে, নতুন কালকে,  বর্তমান সময়ের চিকিৎসা বিঞ্জানকে মেনে নেওয়ার সময়ের কথা তিনি বলেছেন। পাশাপাশি ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসে একই রকমভাবে বা একই ছন্দে তারশঙ্কর ‘করালী’র নেতৃত্বের কথা আমাদের বলে গেছেন। তিনি শিল্পের (ইন্ড্রাস্ট্রী) আহ্বানের কথা বলেছেন। বনোয়ারির ভূমিকার বেলা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেই কথা আমরা শুনেছি। কালউত্তীর্ণ উপন্যাস।
গোপাল হালদার একটি প্রবন্ধে লিখছেন, ‘’......নরেনবাবু বলেছিলেন তারাশঙ্করের কথা—‘কংগ্রেসের আন্দোলনে (১৯৩১-এ) জেলে গিয়েছিল। আর যাবে না বলেছে। ওর দেশবোধ যাবে কোথায়? ঠিকই, সাহিত্যের কামড়ই শুধু কচ্ছপের কামড় নয়, ওই রাজনীতির কামড়ও কচ্ছপের কামড়—যাকে ধরে তাকে আর ছাড়ে না। ছাড়লেই কি ঘা শুকোয়?’ তারাশঙ্করের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে বুঝেছিলাম—বাইরের ঘা শুকিয়েছে, কিন্তু মনের ঘা শুকোয়নি, না ভেবে পারেন না—দেশের কী হচ্ছে কী হওয়া চাই।‘’ (পশ্চিমবঙ্গ, ১ অগাস্ট, ১৯৯৭)।
রাজ্যের বামপন্থীদের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশার কথা আমরা বললাম, সেই অবস্থান থেকে চিনের বিতর্কিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রসঙ্গে মাও ৎসে তুং যে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছিলেন (২রা মে, ১৯৪২), ‘সাহিত্য ও শিল্পকলা প্রসঙ্গে’ (ইয়েনানের আলোচনা সভায় প্রদত্ত ভাষণ) নামে পরিচিত। কিছু অংশ উল্লেখ করা যাক। ‘’.........চীনা জণগনের মুক্তির জন্য পরিচালিত আমাদের সংগ্রামে বিভিন্ন ফ্রন্ট আছে; সেগুলির মধ্যে লেখনী ও বন্দুকের ফ্রন্ট, অর্থাৎ সাংস্কৃতিক এবং সামরিক, এই দুটি ফ্রন্টই রয়েছে।...... মনোভাবের সমস্যা। শ্রেণী দৃষ্টি থেকেই যে কোনো বিষয়ের প্রতি আমাদের বিশেষ মনোভাব প্রকাশ পায়। দৃস্টান্তস্বরূপ ধরা যাক, কাউকে প্রশংসা করতে হবে, না তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে হবে? এ প্রশ্নটি হচ্ছে মনোভাবের প্রশ্ন। কোন মনোভাবের আমাদের প্রয়োজন? আমি বলি, উভয় মনোভাবেরই প্রয়োজন আছে। কাদের নিয়ে কাজ সেটাই হল প্রশ্ন ।‘’ আধুনিক চিনের রূপকার দেং জিয়াওপিং এর নেতৃত্বে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৮১ সালে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’কে ভুল বলে সেই অধ্যায় মুছে ফেলেছে। উন্নয়ন কে হাতিয়ার করেই ‘নতুন চিন’ এর বুনিয়াদ গড়ে তুলতে চাইছেন বর্তমান চিনা নেতৃত্ব।  সমাজ বিঞ্জানীরা বলছেন ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’। তাই অতীতের যে অংশটা অপ্রয়োজনীয় সেটা ফেলে দেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপাদান আছে সেটাকে কাজে লাগাতেই হবে। বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে।
আমেরিকান এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্তির যুগ কি বলছে? ‘’অষ্টাদশ শতকে আমেরিকান এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্তির প্রধান ঝোঁক ছিল ঐতিহ্যের বদলে যুক্তি, প্রশ্নহীন ধর্মীয় বিশ্বাসের বদলে বৈঞ্জানিক অনুসন্ধান এবং রাজতন্ত্রের বদলে নির্বাচিত সরকারের ওপর। আলোকপ্রাপ্ত চিন্তাবিদ ও লেখকরা ছিলেন ন্যায়, স্বাধীনতা, সমানাধিকার ও মানুষের প্রকৃতিদত্ত অধিকার রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ।‘’ (মার্কিন সাহিত্যের রূপরেখা, মার্কিন বিদেশ দপ্তর, আন্তর্জাতিক তথ্য কর্মসূচি ব্যুরো)
ভারতেও নববই দশকের পর ‘বাজার অর্থনীতি’র ন্যায্য দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। সেই মানদণ্ডে এই রাজ্যেও তার প্রভাব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রয়োজন এক ঝাঁক ঝাঁ চক চকে ছাত্র-যুব। ১৯৮৭ সালে শান্তিনিকেতনে সমাবর্তনে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধি কি   বলেছিলেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দেশ’ (৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭) সংখ্যায় লিখছেন, ‘’শান্তিনিকেতনে এসে প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই মতামত অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন। আগেও তাঁর এই মত জানা ছিল এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা নীতিতেও এই মত কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু শান্তিনিকেতনে এসে তিনি এত তীব্রভাবে কথাগুলো বলেছেন যে, এবার বোধহয় সকলেরই নড়েচড়ে বসার কথাতিনি নিঃসংকোচে জানিয়েছেন, সমাজবাদের নামে মাঝারিয়ানাকে আর বরদাস্ত করা হবে না। মাঝারি মাপের মানুষ নয় বড় মাপের প্রতিভাবান চাই। রাজীব বলেছেন, তিনি ‘’ইনটেলেকচুয়াল এলিটিজম’’ চান। এ ব্যাপারে কোনও আপসে তাঁর বিশ্বাস নেই।.........রাজীবও বারবার বলছেন, অনুগত, বাধ্য, দীনাতিদীন, ছাত্র চাই না; ছাত্রদের আক্রমণাত্বক, বৈপ্লবিক, সাহসী ও অশান্ত হতে হবে।‘’                         

                            

No comments:

Post a Comment