দীপেন্দু চৌধুরী
আজও যদি গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান তাহলে ‘বিনিময় প্রথা’-এর প্রচলন দেখতে পাবেন। শুধু গ্রাম বাংলা কেন ভারতে তথা ভারতীয় উপমহাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্ষেত্র সমীক্ষা করলে ‘পণ্য বিনিময়’ প্রথা অথবা পণ্যের বিনিময়ে মুদ্রা নেওয়ার চল আমরা দেখতে পাব। গ্রাম ভারতে এই সময়ে আরও বেশি নজরে পড়তে পারে। কারণ শরৎ ঋতুর পরেই হেমন্তকাল। হেমন্তকাল থেকে শুরু হবে ফসল কাটা। ধান কাটার মরশুম। চলবে বসন্তকাল পর্যন্ত। শ্রমজীবী মানুষ ধান কেটে যে মুদ্রা বা অর্থ পাবে সেই অর্থ দিয়ে শহরগঞ্জ থেকে সংসারের প্রয়োজনে অন্যান্য যে মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী লাগে সেগুলি অর্থের বিনিময়ে কিনতে অভ্যস্ত। ধান কাটা অথবা ফসল কাটার সময় ক্ষেতমজুররা জমি থেকে কিছু ধান সংগ্রহ করে থাকে। আবার অন্য রকম ব্যবস্থাও দেখা যায় ৫ বিঘা জমির মালিক থেকে ৩০ বিঘার জমির মালিক ক্ষেতমজুরকে তাঁর শ্রম থেকে প্রাপ্য মজুরির পুরোটা টাকায় দিতে চায় না। কিছুটা নগদ অর্থে বাকিটা এক দু’কিলো ধান দিয়ে দেয়। আলোচ্য নিবন্ধের ক্ষেতমজুরটি গ্রামগঞ্জের স্থানীয় মুদির দোকানে সেই ধান দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন চাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল, লবণ এসব সামগ্রী ক্রয় করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষেত মজুরটির দু’দুবার তাঁর শ্রমের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন এসেছে। মানবসভ্যতায় ‘গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন’-র উদাহারণ আদিম সমাজেও ছিল আজও আছে। সামাজিক উৎপন্নের উপর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সামাজিক অধিকার যতদিন আমরা মেনে নিয়েছি, ঠিক ততদিন ওদের নিয়মে বন্টনপ্রথার ব্যপক প্রচলন ছিল। পাশাপাশি শ্রম বণ্টনও গোষ্ঠীর নিয়মে হত। বর্তমানে সেই জায়গা দখল নিয়েছে বিভিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নামক সংগঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাম্পরা মেনেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার আরও শক্তিশালী হল। পুঁজির বিকাশের ফলে এই নীতি বা কৌশল বৃহৎ ব্যবসায়ীগোষ্ঠী বিঞ্জান, প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তিকে প্রয়োজনীয় সময়ে প্রত্যুৎপন্ন মেধা তথা মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে শ্রম এবং পুঁজির দ্বন্দকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে। বামপন্থী নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তাত্বিক লড়াইকে সামনে রেখেই ধনতান্ত্রিক বিশ্ব এই কাজে সফল হয়েছে। হয়ত সেই কারণে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বাস্তবে একথা উল্লেখ করা মানে আমি ‘মানবিক মঞ্চ’ থেকে নেমে আসছি এমন ভেবে নেওয়াটা আরও একটা পদস্খলনের সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রাচীন মানব সভ্যতার ‘বিনিময় প্রথা’-এর যে সংস্কৃতি আমরা চিনি সেই সংস্কৃতি আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের অনুন্নত কিছু দেশে। এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশেও। সামন্ত ব্যবস্থার পুরনো সেই আর্থিক কাঠামো বিশ্বায়ন উত্তর বিশ্বে জোড়ালো একটা ধাক্কা দিতে চাইছে। আধুনিক মোড়কে। ২০০৮ সালে আমেরিকার ‘লে-ম্যান ব্রাদার্স’-এর পতনের পরে বিশ্ব অর্থনীতির টাল মাটাল অবস্থা হয়েছিল। ২০০৮ সালের পরে এটা ২০১৮ সাল। বিশ্ব অর্থনীতি ১৯২৯ সালের মহমন্দার পরের অবস্থা যে ভাবে সামলে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা। গত দশ বছরে আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত, জাপান এবং চিনের নেতৃত্ব দ্রুত অর্থনীতিতে একটা গতি আনতে পেরেছে এমন দাবি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা করছেন। আবার অনেক অর্থনীতিবিদ উল্টো কথাও বলছেন। বিশ্ব অর্থনীতি এখনও স্থিতিশীল নয়। যদিও সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন তাঁর শিল্পউন্নত দেশ আজও বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিগত একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে আধুনিক বিশ্বে আধুনিক শিল্প এবং প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবিদ, বিঞ্জানী, প্রযুক্তিবিদ, ব্যাবসায়ীদের গোষ্ঠী এই অভিমত প্রকাশ করে এসেছেন। অথচ আমেরিকায় আদৌ শিল্প স্থাপন করা সম্ভব কিনা এই নিয়েই মতভেদ ছিল।
পুঁজির বিকাশের জন্য একটা দৃশ্যমান নীতি লাগে। আবার একটা অদৃশ্যমান নীতি প্রবলভাবে অন্তরাল থেকে শিল্প-বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা সূর্য ওঠার মত সত্য। যে কথা ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী লৌহ-মানবী বলে খ্যাত মার্গারেট থ্যাচার বলেছিলেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘’আমি যে শুধু আর্থিক নীতি পরিবর্তনের সূচনা করেছি এমন নয়। বাস্তবে আমি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের শুরু করেছি। আমরা জানি অর্থনীতির পরিবর্তন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের হাতিয়ার। আপনি যদি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন তা হলে আপনি জাতির হৃদয় ও আত্মার দখল নিতে চলেছেন। অর্থনীতি হল প্রকরণ; উদ্দেশ্য হ্রদয় ও আত্মার পরিবর্তন।‘’
উত্তর বিশ্বায়ন বিশ্বে বাজার অর্থনীতি বা উদার অর্থনীতি বনাম সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির একটা দ্বন্দ আমরা পরিলক্ষিত করেছি। এরপরেই আমরা পেয়েছিলাম সীমান্তবাণিজ্য নামক এক নতুন পুঁজিবাদী অর্থনীতি। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং এই ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটা মোক্ষম চাল চেলেছেন। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবর) প্রকল্প। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ৩ হাজার কিলোমিটার লম্বা সড়ক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে যাবে। ২০১৭ সালে চিনে অনুষ্ঠিত এই প্রকল্পের সম্মেলন ভারত বয়কট করেছিল। কিন্তু সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল ৩০টিরও বেশি দেশ। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডর তৈরির আগেই চিনের কতৃপক্ষ রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানায়। রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে চিনের সরকার সেখানকার সামাজিক এবং পরিবেশগত মূল্যায়ন নিয়ে একটি রিপোর্ট চেয়েছিল। ২০১৭ সালের মে মাসে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া প্যাসিফিক’ (এসক্যাপ) ৯৪ পাতার যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেটা চিনের পক্ষে যায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘’কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেহেতু এই করিডর ওই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ফলে ভারতে ভূ- রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হবে। ফলে আরও বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।‘’
চিনের এই প্রকল্পের পাল্টা হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প চালু করেছেন। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের বক্তব্য দেশে বেকারির সংখ্যা দেখে বলা যায় এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ভারতে ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনার কথা আমরা জানি। বোঝাই যায় চিনের ওবর প্রকল্পের রোডম্যাপ মেনেই ভারতের সীমান্ত ‘ডোকলাম’ চিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাথুলাপাশের পরে ডোকলাম। ভারত-ভূটান-চিনের ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকা ‘ডোকলাম’-এ দু’মাস মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল চিন এবং ভারতের সেনা। ভারতের অভিযোগ ছিল ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছিল চিনা সেনা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সেই সময় টুইটারে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কড়া সমালোচনা করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধি। তিনি বলেন, ‘’সুষমাজির মতো এক জন ভদ্রমহিলা যে কী ভাবে চিনা শক্তির কাছে মাথা নত করে মুখে বকলস আটকে রয়েছেন, তা দেখে অবাক হতে হয়। নেতার আত্মসমর্পণ করার অর্থ, সীমান্তে বীর জওয়ানদের ঠকানো।‘’
চলতি বছরের লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের সাংসদ সুগত বসুর একটি প্রশ্নের উত্তরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘’.........‘পরিণত কূটনীতি’-র মাধ্যমে ডোকলাম সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।‘’
পুঁজির বিকাশের জন্য একটা দৃশ্যমান নীতি লাগে। আবার একটা অদৃশ্যমান নীতি প্রবলভাবে অন্তরাল থেকে শিল্প-বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখিত লাইন দু’টি আবার ব্যবহার করলাম। দৃশ্যমান কূটনীতি কী ছিল? আমেরিকা তথা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল আগামীতে ‘পরমাণু যুদ্ধ’ হতে পারে এই আশঙ্কায়। উত্তর কোরিয়ার একটার পর পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার কারণে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমেরিকা এবং চিন দু’ই বৃহৎ শক্তির টানটান স্নায়ুযুদ্ধ মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে সঙ্গে তামাম দুনিয়ার মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। চলতি বছরের ১২ জুন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে আমেরিকা। এই ঘটনা দৃশ্যমান ছিল আমাদের কাছে।
কিন্তু অদৃশ্যমান কূটনীতি আমরা প্রথম পেলাম, ৮ জুলাই। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ৮ জুলাই মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো বলেন, ‘’আমাদের অনুরোধ যদি কারও গ্যাংস্টার সুলভ মনে হয়ে থাকে, তাহলে বলব গোটা বিশ্বই গ্যাংস্টার’। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ কিন্তু অনেক আগে থেকেই উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র ছাড়ার কথা বলে আসছে।‘’ কিছুদিন আগে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবিতে আমেরিকা ‘গ্যাংস্টারের মতো’ আচরণ করছে বলে সুর চড়িয়েছিল পিয়ং ইয়ং। সেই কথা মাথায় রেখে মার্কিন বিদেশ সচিব এ কথা বলেন। মার্কিন বিদেশ সচিবের ৮ জুলাইয়ের এই প্রতিক্রিয়ার পরে ৯ জুলাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রথম সারির বাংলা দৈনিক লিখছে, ‘’ব্যর্থ হয়েছে যাবতীয় আলোচনা। বহু দিন ধরে চলতে থাকা হুমকি পালটা হুমকি আর দোষারোপের পরে ...... শুল্ক যুদ্ধের ময়দানে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছে আমেরিকা এবং চিন। ৩, ৪০০ কোটি ডলারের চিনা পণ্যে ২৫% শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাঘাতের কথা জানিয়ে দিয়েছে বেজিং।‘’ আমরা চিনের পত্রিকায় এই প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম। উল্লেখ করা যাক। অনলাইন পোর্টাল CAIXIN এ ৮ জুন ‘Congress Can Do Little To Derail Trump’s ZTE Decision, Observers Say’ শিরোনামে দু’জন প্রতিবেদক Zhang Qi, Jiang Mengjie and Jason Tan যৌথভাবে লিখছেন, ‘’The U.S. Congress can do little to stop President Donald Trump’s decision to relax penalties on ZTE Corp., China’s second-largest telecommunication-equipment maker, industry watchers said.
The U.S. Commerce Department said Thursday that ZTE had agreed to pay a $1 billion fine, replace its board and senior management, and allow the U.S. to send in a compliance team. This is in exchange for the lifting of a seven-year ban imposed in April that prevents the company from buying American products, which sent a shock wave through the Chinese technology sector and immediately brought ZTE’s major operations to a halt.’’
অনলাইন এই যুদ্ধ চলাকালীন ৮ জুলাই মুখ খোলেন আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের (আইএমএফ) কর্ণধার ক্রিস্টিন ল্যাগার্দ। ইউরোপকে অত্যন্ত কৌশলী তকমা দিয়ে ল্যাগার্দে বলেন, ‘’ইউরোপীয়রা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়ালে বৃহৎ এক শক্তি। একজোটে তাদের তোলা দাবিকে গুরুত্ব দিতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপ বহু দেশের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।‘’
ওই একই দিনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তরফে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ব্রুনো লে মেয়ার বলেন, ‘’কাল যদি গাড়ির মতো ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়, তবে পালটা হিসেবে গোটা ইউরোপ জোট বেঁধে দাঁড়াবে এবং অত্যন্ত জোরালো ভাবে তার জবাব দেবে।‘’
শুল্ক যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে চিন থেকে ব্যবসা গোটাতে শুরু করছে বিভিন্ন দেশের বহুজাতিক সংস্থা। ২৪ সেপ্টেম্বর নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ডেইলি স্টার’ লিখছে
‘’The imposition of US tax on Chinese goods has led to new problems. In that country, investors are taking away their business from other Asian companies in other countries.
A report by Reuters news agency said that other Asian countries including Japan and others were withdrawing their investments from China. As a result, starting from memory chips to heavy machinery manufacturing factories, other countries are moving away from China. The impact of US taxation on Chinese goods is behind this.
Japan's Mitsubishi Electronic, Toshiba Machine Company and Komatsu and South Korean SN Hynex have started leaving China since July. Also, Taiwan's computer construction company Compal Electronics and South Korean LG Electronics are also thinking of rolling out their business from China.’’
চলতি বছরের ১ অগস্ট চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘’আমেরিকার এই ব্ল্যাকমেল করার পন্থা চিনের উপর তেমন কাজ করবে না।‘’
চিনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে আমেরিকা পিছিয়ে যেতে রাজি না থাকলেও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কের কথা ভাবছে আমেরিকা। ৩০ অগস্ট সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর শুল্কযুদ্ধ এড়াতে রফতানি পণ্যকে বেছে নিতে চায় আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন রফতানি পণ্যে শুল্ক এড়াতে ভারত আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল দিল্লীর সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনা করে গেছেন। এই বৈঠকের পরে দ্বিতীয়বার একই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বেশ কয়েক মাস ধরে চিনা পণ্যে শুল্ক চাপালেও চিনের বাণিজ্য রেকর্ড করছে। সূত্রের খবর, আমেরিকার সঙ্গে বেজিংয়ের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সেপ্টেম্বরে ফের নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধে আখেরে বিশ্ব অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)। এই সতর্কবার্তার পরেও শুল্ক যুদ্ধের উত্তাপ কমাতে রাজি নয় আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল অভিযোগ ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তোয়াক্কাই করে না বেজিং। অবাধ বাণিজ্যের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বরং চাপ খাটিয়ে হাতিয়ে নেয় সে দেশে ব্যবসা করা মার্কিন সংস্থার মেধাস্বত্ব।’ (সংবাদ সংস্থা, ১৫ অক্টোবর)
চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ই গ্যাং দাবি করছেন শুল্ক যুদ্ধ সারা বিশ্বের উন্নয়ন এবং অর্থনীতির পক্ষেই খারাপ। তিনি বলতে চেয়েছেন, শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিশ্বে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলা করতে ও গঠনমূলক রফাসূত্র বার করতে সব দেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
নতুন করে তৈরি হওয়া এই বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের কত মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে? একটা সূত্র বলছে ১৯৬০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩০০ কোটির কিছু বেশি। সেই হিসেবে তখন প্রতি বছর ৩০০ কোটির ২.২ শতাংশ অথবা ৬.৬ কোটি মানুষ বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটির বেশি। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশ হলেও এখন বিশ্বের জনসংখ্যা প্রতি বছর ৭০০ কোটির ১ শতাংশ মানে ৭ কোটি করে বাড়ছে। এই বৃদ্ধির হিসেবে ১ শতাংশ ক্রিমি লেয়ার বাদ দিলে বিশ্বের ৬৯৩ কোটি মানুষ শুল্ক যুদ্ধের শিকার হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment