Wednesday 23 August 2017

মানবতার পক্ষে আছি অধর্মে নেই জিরাফেও নেই

মানবতার পক্ষে আছি অধর্মে নেই জিরাফেও নেই: 

প্রকৃতি তোমার চিরনন্দিত অপরূপ শোভা তুমি কেন লুকিয়ে রাখতে পার না? অতি সাধারণ জীবনের যেটুকু অভিঞ্জতা হয়েছে, যৌবনের বিহান বেলায় প্রথম চোখের ভাষায় বিহার, ঝাড়খন্ড, অসম, ওড়িশা, মেঘালয় এই কয়েকটি পাহাড়তলীর রাজ্য একসময় দেখেছি। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, লঝমন ঝোলা, হরিদ্বার দেখেছি। আহা কি সে অপরূপ সৌন্দর্য। অকৃপণ সবুজের মায়াময়তায়, মেঘতলির সদাহাস্য কুঠুরি খুলে বসে আছে অচেনা এক নিষ্পাপ কুমারী নারী অতি সন্তর্পণে ছুঁয়ে বলে আমি তোমার সেই মেয়ে। এসো আমাকে আলিঙ্গন করো। পাশে ঝোরা আছে। নদী আছে, গঙ্গা আছে। ছুঁয়ে যাও আমাকে, সব কলঙ্ক পাপ ধুয়ে যাবে। আমি আজ তোমার প্রেমিকা হব। ভালোবাসার পাহারি জংলা রঙের ভেলা নিয়ে বসে আছি। কত রঙের প্রজাপতি উড়ছে দ্যাখ আকাশে বাতাসে। রঙিন প্রজাপতি গাছের পাতায় পাতায় ঘুরছে নব যৌবনের বাতায়ন খুলে। গাছের ডাল, পাতা, ফুলের রেণু নিঙরে প্রাগে পরাগে সম্মেলনের কবিতার চরণ লেখে। পয়ার ছন্দেপ্রেম এসে ফিরে যায় একাকি গহন বনে। এসো তুমি জলে জঙ্গলে। বলো, হে বন্য নারী আজ আমি তোমার প্রেমে তৃপ্ত। পাত্র উজাড় করে ভরিয়ে দাও আমায় আহ্বান করে অচেনা বন্য সুন্দরী তনয়া যেন বলছে, তুমি পুরুষ, তোমার ক্লান্ত শ্রান্ত ঘর্মাক্ত শরীর দেখলে আমার নারীত্ব আমাকে আরও শান্ত করে রাখে। আমার ঘৌমটা খুলে অদেখা সুন্দরকে উজ্জ্বল করো প্রজ্বলিত করো। অদেখা অচেনা সুন্দরের কাছে আজ তোমাকে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। আমি তোমার সেই বন্য নারী       
সপ্ততরীর ঢেউ ভাঙা অকৃত্রিম মেঘমল্লারের নৃত্যে ‘তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ’ ছন্দে রাজপ্রাসাদের রাজকীয়তা নিয়ে ডেকে পাঠাও সকলকে। সবুজ বৃক্ষরাশি কখনও বৈশাখী ঝঞ্ঝায়, কাল বৈশাখীর উথাল পাথাল আন্দোলনে প্রলয়ের বড় গল্প শোনায়। অবিরাম বৃষ্টি শেষে ‘টুপ টুপ, টুপ টুপ’ পাহাড়ি ঝোরার চেনা অচেনা খিল খিল হাসি। কে একজন প্রশ্ন করে ‘এ বাবু হেথাকে কখন এলি?’ শরতের এলোমেলো মেঘ সাদা সাদা বকেদের ডানায় ডানায় আবার সে ফিরে ফিরে আসে, ছোট নাগপুরের আদিবাসী গ্রামের ‘আরণ্যক’ উপাখ্যানের বহু বর্ণনায়। হে আমার অচেনা প্রকৃতি তোমার প্রলয় রুদ্র মুরতি সৃষ্টির বন্ধন ভেঙ্গে আগুনে পোড়া মানবতা ছুঁয়ে যায়।
যে আকাশে বাদলের গান শুনি সেই আকাশে সাদা কালো, লাল নীল, হাজারো রঙের পাখ পাখালির কলরব। চেনা অচেনা আকাশেও দবন্দ থাকে, অসীম আদিগন্ত কালো মেঘেদের অন্তরালে অবিরাম আকাশ দখলের সচেষ্ট অভিলাষ থাকে। ওরা পক্ষীরাজের দেশের ভাষায় কথা বলে। এতবড় আকাশ, প্রকৃতি সেও তোমার স্বপ্ন দেখানো ঘুম ভাঙা ভোরের দিগন্ত বলয়। এই বলয়ে পাখিদের দবান্দিক অবলোকন আহ্বান করে দেশ বিদেশের পরিযায়ী পাখিদের। সাগরের চরাচরে, নদীর বালুকা বেলায়, হ্রদের শীতল উষ্ণতায় পরিযায়ী পাখি অক্লান্ত যাত্রা পথে অধর্মকে শাসন করে মানবতার চড়ুইভাতির আনন্দে। পটুয়া শিল্পীর গ্রাম্যপটে ছবি হয়ে উড়ে বেড়ায় তাঁরা। বলে আমরা আকাশেও আছি, মাটিতেও আছি, তোমার আঙিনায় থাকব। এই জগৎসভায় পরিক্রমা করতে করতে বারে বারে বলি জিরাফের পীঠে বসতে চাইনা। হাঁটব জিরাফের পথরেখায়। গ্রাম্য পটুয়ার আঁকা আলভাঙা সড়কের পল্লবিত পক্ষীবালিকার নূপুরের তালে তালে। বলব অধর্মে নেই মানবতায় আছি।
সেদিন অনেকদিন পর এপাড়া ওপাড়া ঘুরে বইপাড়ায় গিয়েছিলাম। পরিযায়ী পাখিদের মত ঘুরতে ঘুরতে যাযাবর জীবনটা চিনতে কলকাতার প্রাচীন বৃক্ষরাশির ছায়াতলে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলামঅতীতের কথকতা, স্মৃতি, ভাঙা ভাঙা ছন্দে হাঁটি হাঁটি এসে আলিঙ্গন করছে। আমি উদাস চাউনিতে হেরিতেছি ক্লান্ত, পথভ্রস্ট আহত কবুতরের মতো। কলেজস্কয়ারের পূর্বদিকের গেটের সামনে তখন কিছু লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে কিছু একটা দেখছে। ভিড় দেখলেই যেমন আম বাঙালি ভিরে যায়। দেহাতী বাঙালিদের মতো আমিও গলা ঢুকিয়ে দিলাম। ভিড়ের গলতা দিয়ে দেখলাম আমাদের সমবয়সি একজন লোক হাতে একটা আড়াই ফুট লম্বা পুতুল নিয়ে কি সব দেখাচ্ছে। পুতুলটা পুরনো নতুন কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো সেলাই করে তৈরি করা হয়েছে। পুতুলের পোশাকে বোঝা গেল পুতুলটি পুরুষ চরিত্র। জিনসের প্যান্ট। দুটো পকেট দেওয়া জলপাই রঙের জামা। জামার একটা পকেটে ভারতের ‘জাতীয় পতাকা’-এর স্টীকার আলাদভাবে সেলাই করা আছে। কোমরে চওড়া চকলেট রঙের বেল্ট। পুতুলের মুখটায় সার্কাসের ‘জোকার’-এর মতো করে রাঙানো। যে লোকটা পুতুলটা ধরে আছে তাঁর বাবরি চুল। পেল্লাই বড় এক দাড়ি। পোশাক পড়ে আছে সেও এক বিচিত্র। গায়ে পুরনো দিনের বাঙলা সার্ট। গায়ক হেমন্তবাবুরা যেমন সার্ট ব্যবহার করতেন। ঢোলা পায়জামা। পায়ে কাঠের খড়ম। লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা লাঠিতে বাঁধা একটা প্ল্যাকার্ড ধরে আছে। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘মানবতায় আছি, অধর্মে নেই জিরাফেও নেই’। নীচে ছোট করে লেখা ‘তিরপিতা’ বুঝলাম ‘তিরপিতা’ মানে গোষ্ঠীর নাম।     
লোকটা বলছে, ‘এই দ্যাখেন দাদা, দিদিরা এই পুতুলটো এখনও অর দ্যাশের ভাষায় দশের ভাষায় কথা বুলে। ইটো পুতুল নাচের ইতিকথা লয়। আমি মানিকবাবুর ভাষায় কথা বলতে পারিয়ে না। আমার পুতুল কি বুলছে আপনারা শুনেন।’
লোকটা জানতে চাইল, ‘গোবরা তুমাহার বাড়ি কুথায়?’
‘ওই তিরপিতা গাঁয়ে। কাঠ ব্যবসায়ী হর্ষবাবুদের পাড়ায়।’ পুতুল উত্তর দিল।
লোকটা জানতে চাইল, ‘গোবরা তুমহার লিখা পড়া কতদূর?’
‘আঞ্জে বিপিএল কার্ড নাইখো। পঞ্চায়েতে বাবুরা বুললে বিপিএল কার্ড না থাকলে স্কুলে পড়া চলবে না। আমি বুললাম আমার বাপের বিদ্যাসাগর ছিল না আমাহার ‘বিপিএল কার্ড’ লায় বাবু। আর স্কুলে লিলে না
‘আচ্ছা গোবরা তুমি এখন কি কাজ কর?’
‘কাজ কুন্ঠি পাব? আমি বামুন-কায়েত, সদগোপ চাষির ছেলা যে আমাকে কাজ দিবে? আবার দ্যখেন আহমি সিডিউল কাস্ট লই। দলিতও লই। বাপের পদবী ছিল ‘মাল’। তবে আমার বাপ একদম মাল চিনতে শিখেনি ওই লেগি আমার এই হাল হুলো কাকা। একশো দিনের মাটি কাটার কাজেও কেউ লিছে না। আমাকে কাজ দিলে আমি নাকি ‘পুকুর চুরি’-এর কথা সবাইকে রসিয়ে রসিয়ে বুলি দিব?’ এই কথা কি ঠিক? আপনি বুলেনতো কাকা? আমি কি পঞ্জজনের ঢুলি? ধান্দা আমিও বুঝি। মাগ্যিগণ্ডার দ্যাশে পাঁচ দশ টাকা কমিশন সব্বাই খেছে।   
‘আমাকে আজ কাকা বলছ ক্যানে? ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি কাজ না করলে সারাদিনের খাওয়া খরচ, বাড়ি ঘর মেরামতির টাকা, চিকিৎসার খরচ এইসব কুথা থেকি পেছ?’
‘ এই যে আপনার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছি। পাঁচটো কথা বুলছি। সাপের পাঁচ পা দেখার কথা লয়। ওই আপনার মতো বাবুদের কথা। সেই কথা শুনি গাঁ গঞ্জের দাদা দিদিরা আনন্দ পেছে। তারপর অরা যা দিছে তার ভাগ আমাকে কিছু দিছেন আপনি মামা। তবে কিনা ফাউল করছেন আপুনি।’
‘তুমি গোবরা একবার ‘কাকা’ বুলছ, একবার ‘মামা’ বুলছ ক্যানে? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আর ফাউল কি করলাম?’
‘আপনি বুলাছিলেন আপনার একশো টাকা আয় হলে তিরিশ টাকা আমাকে দিবেন। একশো তিরিশ টাকা আয় হলেও তিরিশ টাকা আহমাকে দিবেন। আপনি কি করছেন? আমাকে তিরিশ টাকা দিছেন আপনি? ১২ টাকা দিছেন। তবে ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে ১২ টাকা পেছি। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট করি দিয়াছেন। আর ১৮ টাকা ভাউচার লিখে ছিঁড়ে দিছেন, ভাউচার ছিঁড়ে দিছেন। ১৮ টাকা আপনি পকেটে পুরছেন। ইটো ফাউল লয় জামাইবাবু? পিএফ দিছেন না, ইএসাই করি দেননি। তবু আহমার এক চোখ লিং আপনার সাথে কাজ করছি। এই গুলান ফাউল লয় জামাইবাবু?’
‘সে না বুঝলাম, তা এতসব মেনে লিং আমার সঙ্গে কাজ করছ ক্যানে শালো?’
‘এইবার ঠিক বুল্লেন, কলকাতার যে খানে যেছি সবখানে আপনাদের লোক। আমার বা দিকে দ্যাখেন যে লোকগুলান বসি আছে ওইখানে আপনার মতো জামাইবাবু অনেক পাবেন। আবার ডান দিকে দ্যাখেন ওইখানে মামা,কাকাদের দল পাবেন জামাইবাবু।’  
এতক্ষণ যে সব কোতুহলী মানুষ ‘পুতুলের কথা’ শুনছিল তাঁরা অনেকেই বিছিয়ে দেওয়া চাদরে পাঁচ টাকা, দশ টাকার নোট, একটাকা দুটাকা, পাঁচ টাকার কয়েন ফেলছিল। এদের মধ্যে থেকে একজন বলে ফেলল ‘এই যে পুতুলের মালিক তুমিও বাংলার বাইরের ব্যবসা শিখে গেছ বস?’
ভিড় পাতলা হতে থাকে। মালিক ধমক দিয়ে পুতুলকে বলে, ‘কি সব বুলছ তুমি আজ গোবর? এবার কি করবে? ভিড় যে পাতলা হুং গেল?’
‘আঞ্জে কি আর করব? হর্ষবাবু বুলাছিল কলকাতার সব রাস্তা থিকা চেতলা যাওয়ার ৩৩ নম্বর দোতলা বাস পাওয়া যায়। আমি ইবার ওই বাস ধরি ‘নবান্ন’ দেখতি যাব। পুলিশবাবুরা ভিতরে ঢুকতে দিলে পঞ্চুকাকুকে বুলব আহমাকে তিনটা কার্ড দেন। একটো ‘সিডিউল কাস্ট’ কার্ড, একটো কাজ পাওয়ার জব কার্ড আর একটো ‘হেলথ কার্ড’। আমার চোখে ‘ন্যাবা’ হলছে।’    
পুতুলের মালিক এরপর আর কথা না বাড়িয়ে গোবরকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে তখনও দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের উদ্দেশ্যে বলল, ‘গোবরের শরীরটা ভালো নেই। আজ ওকে একটু বিশ্রাম দিন। আবার একদিন আমরা ওর কথা শুনব।’                      

’                

Tuesday 22 August 2017

গ্রহণ

গ্রহণ: 
একটা সময় ছিল পৃথিবীটা
ভালো করে চিনতাম না!
এ কি এমন কথা?
আটপৌরে মানুষ মানুষের মত বাঁচে।
একটা সময় ছিল ঘর্মাক্ত শরীরটা
যৌন গন্ধের পরশ পশমে—
বর্ধিষ্ণু বাড়ির হুলো বিড়াল হতে চাইত!
পুরনো দর্শনের ভাষান্তর করে নাও—
আনন্দ পেয়েছ, আনন্দ পেয়েছি
বলেই সেদিন বৃন্ত ছেঁড়া
ফুলের পাঁপড়ি, বইয়ের ভাঁজে......
না না ছোট্ট টিলার খাঁজে রেখে এসেছিলাম!
ফুল ফুটেছে, ফুল ফুটেছিল
আবার কি সেদিনের মত
রাত জাগা শিশিরে ভিজে গোলাপ ফুটবে?
একটা সময় গোলাপের জন্ম বৃত্তান্ত জানতাম না।
একি এমন কথা?
ঘরপোড়া মানুষ মানুষের মত
বাঁচতে চায়।
সূর্যের আগুনে আজ তাপ উত্তাপ নেই,
চুলার নিষ্পাপ আগুনে সেদিনও
হাত ভিজিয়ে নিতে পারতাম—
দাঁড়িয়ে থেকনা, রোদ্দুর চিনলে
গ্রহণে কার কি এসে যায়?    

Wednesday 9 August 2017

হুজুরে হাজির নয় ভাঙা গণতন্ত্র হাঁটছে

হুজুর হাজির নয় ভাঙা গণতন্ত্র হাঁটছে: 

ভারতে সম্প্রতি সদ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়ে গেল। সেই নির্বাচন নিয়ে যে প্রেক্ষাপট ভারতের উচ্চ শিক্ষিত, মধ্য শিক্ষিত, কম শিক্ষিত এবং লেখা পড়া না জানা ভারতীয় নাগরিক দেখল সেটা আলোচনার বিষয় কেন হবেনা? চলুন বর্তমানকে একবার ফিরে দেখি। বিজেপি নামক দলটির ভারতে উত্থান নেহরুর বহু আলোচিত মিশ্র অর্থনীতির হাত ধরে। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন জনসংঘ নেতা এবং বিজেপি নামক দলটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। এই অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রদর্শিত পথেই হাঁটছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদার অর্থনীতি তথা বিশ্বায়নের উত্তর প্রজন্মের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ভারতীয় গণতন্ত্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বেই আমরা পেয়েছি উদার গণতন্ত্র, উদার অর্থনীতি এবং উদার সংস্কৃতি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বে নিজের মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে। ‘হুজুরে হাজির’ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক বাতায়ন টপকে আজ ভারত নামক দেশটি স্বতন্ত্র একটি দেশ। একথা আমারমতো অরবাচিনের কলমে আসলেও ভারতের সব দলের, বিভিন্ন মতাদর্শের পণ্ডিতজনেরা স্বীকার করছেন।
মাননীয় বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নাম বিজেপি তথা এনডিএ শিবির থেকে ঘোষণা হওয়ার পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে দলিত নেত্রী, ইউপিএ জমানার দ্বিতীয় দফার অধ্যক্ষ মীরা কুমারকে প্রার্থী করে সতেরোটি দলের বিরোধী জোট। নির্বাচনে জয়পরাজয় থাকেই কিন্তু এবছর ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভারতীয় গণতন্ত্র অনেকটা পথ হেঁটে এসে আধুনিক হয়ে উঠতে পারছে। দেশীয় রাজনীতির বর্তমান সময় আমাদের সেই আবৃত্তি করতে আহ্বান করছে বলেই মনে হয় । নিরপেক্ষ কলমচির টেবিল থেকে এমন উপলব্ধি আমার হয়েছে। পূর্বের পরিস্থিতি যদি খুঁজে দেখি তাহলে ইতিহাস বলছে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময় রাষ্ট্রপতি-পদে এ পি জে আব্দুল কালামকে সমর্থন করা নিয়ে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের মতপার্থক্য দেখা দেয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত সেই সময়ের একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক লিখেছিল, ‘’অবশেষে কংগ্রেসও রাষ্ট্রপতি-পদে এ পি জে আব্দুল কালামকে সমর্থন ঘোষণা করল।‘’
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের দ্বিতীয় বছরে কিরকম রাজনৈতিক অভিঞ্জতা ভারতবাসীর হয়েছিল? অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলি। যেমন দিল্লি, কলকাতা এবং চেন্নাই। বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কাজ করলেও চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে সাফল্য পায়নি। তার কারণ দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য রক্ষা করতে বাজপেয়ী সরকার ব্যর্থ হয়। দেশের যে চিরাচরিত বিশ্বাস, বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় পাশাপাশি বাস করেও বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের আঙিনায় আলপনা আঁকা ভারতের মানচিত্রের সীমানা ভেঙ্গে পড়েছিল। সামাজিক ঐক্যের সুর কেটে গিয়েছিল। সনাতন গ্রাম ভারতের যেটা ছিল একান্ত নিজস্বতা। সামাজিক ঐক্যের দায়িত্ব কেন্দ্র অথবা রাজ্য সব সরকারকে নিতে হয়। ভারতীয় প্রাচীন সভ্যতার বহুবর্ণের সেই সহিষ্ণুতা আজকের ভারতেও প্রশ্নের মুখে এসে দাড়িয়েছে। 
দ্বিতীয় দশকের শেষ প্রান্তে ভিন্ন ধরণের অভিঞ্জতার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এখানেই খুব সম্ভবত ভারত নামক দেশটির গণতন্ত্র নিজ স্বকীয়তায় পড়শি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই আধুনিক গণতন্ত্রের উদাহারণ হয়ে উঠতে চাইছে। আজ ৯ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে এন ডি এ সরকার। সংবাদ মাধ্যম সুত্রের খবর ২০১৭ সালের ৯ অগস্ট সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শপথ নেবেন দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, আবর্জনা, দারিদ্র, জাতিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে ভারত ছাড়া করার। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। ১৯৪২ সালে গাঁধিজি যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সে আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কেঁপে গিয়েছিল। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয়, গাঁন্ধিজি চেয়েছিলেন সেই আন্দোলন হবে একটি প্রকাশ্য আন্দোলন বা বিদ্রোহ’। পাশাপাশি তাঁর পরিকল্পনা ছিল ‘যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত ও ক্ষিপ্র’। ৮ অগস্ট কংগ্রেস অধিবেশনে গাঁধিজি এই আন্দোলনের লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া কোন কিছুই নয়। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পরাধীন ভারতের জনতার কাছে তাঁর আহ্বান ছিল— ‘হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু’।
 তাঁর আরও অভিমত ছিল আন্দোলন পরিচালনার জন্য তিনি নিজে থাকবেন একজন সাহায্যকারীর ভূমিকায়। ইতিহাস বলছে ওইদিন অর্থাৎ ৮ অগস্ট বক্তৃতায় আপসহীন সংগ্রামের আহ্বান জানানোর পরে পরেই গাঁধিজি বড়লাটের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবও দিয়ে রাখেনকিন্তু তিনি ভাবতেও পারেননি যে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেআগের দিনের বক্তৃতার পর ৯ অগস্ট ভোর চারটার সময় তিনি ঘুম থেকে ওঠেন নিয়ম মতো প্রার্থনা করার জন্য। ওই কাক ভোরেই তিনি তাঁর একান্ত সচিব মহাদেব দেশাইকে বলেন, ‘গতকাল রাতের বক্তৃতার পর তাঁরা আমাকে গ্রেপ্তার করবে না।’ ঘটনা ঘটল একদম উল্টো। ওইদিন সকালেই পুলিশ আসে গাঁধিকে গ্রেপ্তার করতে। গাঁধিরমতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিও ভাবেত চাননি তাঁকে ব্রিটিশের বড়লাট গ্রেপ্তার করতে পারে। অগস্ট আন্দোলনের শক্তি কতটা ছিল এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়।
এই ঘটনার আগে ১৯৪২ সালের ১০ই মে গাঁধিজি বলেছিলেন, ‘’The withdrawal of British rule from India was a supreme act to the realization of which I must devote my whole energy.’’   গাঁধিজি ১৯৪২ সালের ১৪ জুলাই ওয়ার্ধায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন শুরু করার জন্য নিজের সঙ্কল্পের কথা বলেন। ওইদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়া অথবা শাসকদের আরও একবার সুযোগ দেওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। আমি বলছি চূড়ান্তভাবেই এটা শাসকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ। গাঁধিজির ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে কাতারে কাতারে মানুষ আন্দোলনে নামে। ৯ অগস্ট বোম্বাই শহরের ‘গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে’ এবং শিবাজী পার্কে সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ পুলিশ নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ব্যপক লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানো গ্যাস ব্যবহার করে। অনেকেই গ্রেপ্তার হন। পুলিশের গুলিতে ৫ জন কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। আহত হন ২০-২৫ জন কংগ্রেস কর্মী। বোম্বাই শহরেই এক সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ৩৫ জন সত্যাগ্রহী কংগ্রেস কর্মীর। আহতের সংখ্যা ছিল ৫০০ এরও বেশি। কলকাতায় রিপন কলেজ, বঙ্গবাসী কলেজ, তৎকালীন যাদবপুর কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সামিল হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ভারতের কোন দলের কি ভূমিকা ছিলো সেই নিয়েই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস দল খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তর প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধএই প্রজন্মের ছাত্র যুবদের কংগ্রেসকে বলতেই হবে, ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন ছিল গাঁধিজির নেতৃত্বে কংগ্রেস ঘরানার আন্দোলন। সেইমতো কংগ্রেস গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যপক প্রচার করে। ‘ক্যুইট হেট মুভমেন্ট’ নামে একটি আন্দোলের সূচনাও একবিংশ শতাব্দীর ভারতে শুরু হয়েছে। আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত সংবাদের সঙ্গে থাকি তাঁরা ৮ অগস্ট কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। সেই সূত্রে খবর, বম্বে অধিবেশন থেকে গাঁধিজি ঐতিহাসিক ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই দিনটিতেই কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠক করে। দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধি ওই দিনের সভায় বলেন, ‘’দেশে সংখ্যালঘু দলিত, মহিলা এবং আদিবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন মানুষের স্বাধীনতায় হাত পড়ছে। যে সব সমাজবিরোধীরা তা করছে, তাদেরই হাত শক্ত করছে বহুত্ববাদ-বিরোধী মোদী সরকার।‘’      
৯ অগস্ট, ১০১৭ এই দিনের সকালের একটি বাংলা দৈনিকে পড়লাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে শুরু হওয়া প্রচার নিয়ে কিছু বক্তব্য। দৈনিকটি লিখছে, ‘’যেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধিকে পুরোপুরিই কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছেন তিনি। ‘অন্তত ভারত ছাড়ো’ নিয়ে তাঁর উৎসাহ ও আয়োজনের বহর দেখে এমনটাই মনে করছেন  জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিঞ্জানের শিক্ষক সৌম্যজিৎ রায়। ..................সৌম্যজিৎবাবুর বিশ্লেষণ, ‘এটা শুধু জাতীয়তাবাদ বা স্রেফ রাজনৈতিক চাল নয়, নির্বাচনী কৌশলও। এখনকার কংগ্রেস বস্তুত ইন্দিরা গাঁধির তৈরি। মোদী গাঁধিজির কংগ্রেস থেকে আজকের কংগ্রেসের নেতাদের বিচ্ছিন্ন করে দিতে চান। কিন্তু গাঁধিজিই কংগ্রেসের প্রধান আইকন তাঁকে নিয়ে নিলে কংগ্রেস একেবারে দেউলিয়া হয়ে পড়বে।’
সময়ের কেমন সমপতন ভাবুন, ৮ অগস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশের সাক্ষাৎকার দেখিসংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়রাম বলেন, ‘’সাম্রাজ্য গিয়েছে, কিন্তু এখনও অনেকে সুলতানের মতো ব্যাবহার করেন। অস্তিত্বের সঙ্কট চলছে কংগ্রেসে।‘’ উচ্চশিক্ষিত এবং প্রাক্তণমন্ত্রী জয়রাম আরও বলেন, ‘’নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের ভাবনাকে মোকাবিলা করতে না পারলে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে দল। পুরনো শ্লোগান, মন্ত্র, সমীকরণে আর কাজ দেবে না। দেশ বদলেছে, কংগ্রেসেরও বদল দরকার।‘’
কংগ্রেস দলে কোনও শীর্ষ নেতা বাস্তব নিয়ে ভাবলেও বিতর্ক তুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি এই কথাটা অনেকদিন থেকে বলতে চাইছেন সম্ভবত। দলের পুরনো ভাবনা চিন্তার খোল নলচে বদলে দেওয়ার সময় এসেছে। মাত্র ৩৭  বছরের পুরনো দল বিজেপি সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়েও আধুনিক ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য দল হয়ে উঠতে চাইছে। দেশের প্রধান বামপন্থী দল ৫৩ বছরের পুরনো সিপিএম নিজেদের দলে আরও গণতন্ত্রের খোঁজে বারে বারে পরীক্ষা নিরীক্ষায় যাচ্ছে। সিপিএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে গত পাঁচ ছ’ বছরে ভারতীয় ঘরানায় দলকে গড়ে তোলার কর্মসূচী নিচ্ছে।  
‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের উত্তরাধিকার যে সময় নরেন্দ্র মোদী ছিনতাই করতে চাইছেন সেই সময়কে  মাহেন্দ্রক্ষণ বেছে নিয়ে জয়রাম সঠিক কথাটা বলে দিয়েছেন। দলে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের তাত্বিক নেতা মণিশঙ্কর আয়ার জয়রামকে সমর্থন করে প্রকাশ্যে বলেন, ‘’জয়রাম যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাতে স্পষ্ট তিনি কট্টর কংগ্রেসি। বিভিন্ন মত না শুনলে আবার এগোনোও যাবে না।‘’
সমপতনের আরও একটি ঘটনা দেখুন গুজরাট থেকে রাজ্যসভার ভোটকে কেন্দ্র করে। সেটাও ৮ অগস্টের ঘটনা। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধির রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যটেল। দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা আমরা খুব কিছু প্রকাশ্যে দেখতে পাই না। কিন্তু তিনি যে কত দক্ষ নেতা সেটা আবার প্রমাণ হয়ে গেল। সব রকমের জল্পনা কল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে, বিজেপি সভাপতি অমিত সাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ‘বাপুজি’-এর রাজ্য গুজরাট থেকেই রাজ্যসভার ভোটে জিতে গেলেন আহমেদ প্যাটেল। ৯ অগস্ট সকালের খবরে দেশবাসী জানতে পারল গুজরাট রাজ্য সভার ভোটের খবর। টানটান উত্তেজনা শেষে কংগ্রেস নতুন করে শক্তি পেল।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস দলটিও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বিজেপি ভারত ছাড়ো’। ৯ অগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে সেই কর্মসূচি শুরু করলেন তৃণমূল নেত্রী। ওইদিনের সভায় মমতা বিজেপির নাম না করে বলেন, ‘’ক্ষমতায় এসে কেউ কেউ মনে করছে ৯ অগস্টের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন তারাই করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অনেকের অন্যরকম ভূমিকা ছিল। আমি মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করি না।‘’    
ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যে কোনও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশের প্রেক্ষাগৃহে বুর্জোয়া, কৃষক, জোতদার, শ্রমিক, মুটে, ক্ষেত মজুর একই নাটক বা সিনেমা দেখে। অনেক সময় শহরে গ্রামাঞ্চলে সাংসকৃতিক অনুষ্ঠানও দেখে। নিজেদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর অনুভূতি রুচি ও মূল্যবোধের তারতম্যে হাততালি দেয়, নয়তো শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। এই মুহূর্তকে কি বলা যায়? শ্রেণী নিরপেক্ষ মানবিক ইন্দ্রিয়ানুভূতি, শ্রেণী বিভক্ত সমাজে খণ্ডিত এবং সীমিত অনুভূতি? এসবের প্রকাশ আমরা দেখি শুধু কয়েকটি মৌল মানবিক বোধেই সীমাবদ্ধ থাকে। রাজনীতিতে এমনটা হবার নয়। রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। প্রতি মুহূর্তে গড়ে নিতে হয়। নতুন করে ভাঙ্গতে হয়। নব প্রভাতের সঙ্গীতে গড়ে নেওয়ার অবকাশ খুঁজে নিতে হয়। সেটা করতে না পারলে মেঠো রাজনীতির কচকচানি বাড়তেই থাকে। সতর্ক থাকতে হয় কে বন্ধু কে শত্রু চেনার সময়। রাজনীতি বড় স্পর্শকাতর বিষয়।
প্রখ্যাত উর্দু লেখক সাদাত হাসান মান্টোর লেখা যারা পড়েছেন তারা মান্টোর বহুবার ব্যবহার করা একটি শব্দবন্ধ সম্পর্কে পরিচিত। শব্দবন্ধটি হল ‘দুশমন দোস্ত’। এর অর্থ হল বন্ধুর ছদ্মবেশে আড়াল থেকে শত্রুর কাজ করা। রাজনীতি সামাজিক মানদণ্ডে বিচার করলে আমাদের ‘দুশমন দোস্ত’ সম্পর্কে বারে বারে ভাবতে হবে। না হলে বন্ধুর ছদ্মবেশে ঘরের শত্রু বিভিষণ চিনতে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। গত কয়েক দশকে কংগ্রেসে পরিবারে ‘দুশমন দোস্ত’ –এর সংখ্যা কিন্তু অনেক। ‘হুজুর হাজির’ বলার সময় এবং দিন শেষ হয়ে আসছে ভারতে। সামন্ত নেতাদের সামনে সমস্ত দলন পীড়নের অত্যাচার সহ্য করে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ –এর যুগে দলিত মানুষ মুখ খুলছে। স্বাধীনতা চাইছে। কথা বলার, গণতন্ত্রের। বই পড়ার, তথ্য জানার প্রয়োজনে। যে ব্যবস্থা ভারতবাসী কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতেই পেয়েছে। তাই কংগ্রেস নামক দলটি নিজের ভাষায় ভারতে আধুনিক গণতন্ত্রের মঞ্চ হয়েই ব্যবহার হবে এমন আশা করা খুব কিছু অন্যায় হবে বলে মনে করি না।