উদ্ভাবনী শক্তির খোঁজে সি আই আই:
প্রথম সারির শিল্প সংস্থার কর্তাও উদাহারণ হিসাবে বিদেশি সংস্থাকেই বেছে
নিচ্ছেন। অত্যন্ত ছোট একটি সংস্থাকে সুপরিকল্পিত রূপরেখার দ্বারা সঠিকভাবে পরিচালন
করলে প্রথম সারিতে চলে আসতে বাধ্য। দেশে বিদেশে এমন উদাহারণ অসংখ্য পাওয়া যাবে।
ভারতে যার অন্যতম উদাহারণ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রী। বর্তমান ভারতে আর্থ-সামাজিক এবং
আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রিলায়েন্সের প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না। ঠিক একই রকম
তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা আলিবাবা। ৩০০+ বিলিয়ন ডলার কোম্পানীর উচ্চতায় পৌচেছে এই
সংস্থা। এই উদাহারণ টাটা স্টীলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (হিউম্যান রিসোর্স
ম্যানেজমেন্ট) সুরেশ দত্ত ত্রিপাঠীর। এই বক্তব্য বলার জন্য ত্রিপাঠী বেছে
নিয়েছিলেন সিআইআই (পূর্বাঞ্চল)-এর মঞ্চকে। ৩০ জানুয়ারি কলকাতার বাইপাসের ধারের
একটি পাচতারা হোটেলে সি আই আই (পূর্বাঞ্চল) এইচ আর কনক্লেভের মঞ্চকে বেছে
নিয়েছিলেন তিনি। পদাধিকার বলে সুরেশ দত্ত ত্রিপাঠী সি আই আই পূর্বাঞ্চল
এইচ আর এবং আই আর সাবকমিটির চেয়ারম্যান। আলোচ্য প্রতিবেদক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত
ছিল। এই সংস্থার কর্পোরেট কমিউনিকেশন হেড অরুনাভ দাস ই-মেল করে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানের সারাদিনের প্রোগ্রাম আমাদের হাতে আসতেই
আমরা বুঝতে পারলাম মানবাধিকার কর্মী গড়ে তোলাই সি আই আই প্রধানতম এবং অন্যতম কাজ
হিসেবে ভাবছে। অনুষ্ঠানের প্রথম বিভাগে ঘোষণা ছিল,
‘Opening plenary on
Managing Tomorrow’s world-Innovate Suceed’
Creating a culture of innovation is of utmost
importance across industries today and the ability to help create and protecet
innovative people solution is a critical role for HR to play. This will enable
organizations to differentiste themselves and compete externally as well as
internally to create value. The Session will share the perspectives of CXO on
how organizations are reconciling to these issues and focus on understanding
the critical importance of innovation in HR today and how to contribute towards
imbiding a culture of innovation in the HR practices by creating and utilizing
knowledge resources.
আমরা বুঝতে পারলাম সি আই আই দেশের শিল্প, মেধা,
শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে আরও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাইছে। তরুণ প্রজন্মের
উদ্যোগপতিদের সামনের সারিতে আনতে গেলে এই বিশেষ আয়োজন এবং গুরুত্ব অবশ্যই প্রয়োজন।
এই বিষয়গুলিকে নিয়ে ভাবতে গেলে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে মানবাধিকার কর্মীদের।
মানব সম্পদকে ব্যবহার করতে গেলে মানবাধিকার কর্মী আগে প্রয়োজন। একজন তরুণ
উদ্যোগপতি যেমন বললেন, ‘’Needs more Humaism in the Technology.’’
কনক্লেভের প্রারম্ভিক ভাষণে সুরেশ দত্ত ত্রিপাঠী
আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায় আমাদের দেখতে হবে কোনটা বেশি প্রয়োজন। সেই
মডেলকে ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘’পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম তাঁরা জানে ‘পিপল
ম্যানেজমেন্ট’। নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন আছে। ওদের ট্যালেন্ট আছে। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মের
উপর নির্ভর করতে হবে। সংস্থাগুলিকে নতুন ট্যালেন্ট খুঁজে নিতে হবে। আমরা প্রশ্ন
করব আগামী বিশ্বের জন্য। সংস্থার এইচ আর কর্মীরা এই দায়িত্ব নিতে পারেন। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে এইসব সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী (ইনোভেটিভ) শক্তি আছে এমন কর্মীদের আমাদের সংস্থার জন্য কাজের সুযোগ করে
দিতে হবে।‘’
শ্রাচী গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবি টোডি এদিন
বলেন, ‘’ ইউনিক চ্যালেঞ্জ কি করে সামলাতে হবে সেটা আমাদের জানতে হবে। নতুন
চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে হবে। মিস্টার ত্রিপাঠী যে বক্তব্য রেখেছেন তাঁর থেকে আমরা এই
কনক্লেলেভের ভাষা খুঁজে পেয়েছি। মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট আমাদের ভাবতে হবে। বর্তমান
সময়ে সারা বিশ্ব প্রযুক্তি বিষয়ে জটিলতা এবং সমস্যা নিয়ে ভাবছে। ওলা-উবের-এর মত
নতুন উদ্ভাবনী ব্যবস্থাকে মানতেই হবে আমাদের। সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত
সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ককে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী করা উচিত। সেজন্য
আমাদের তরুণ প্রজন্মের উপর নির্ভর করতে হবে।‘’
মানবাধিকার কর্মী তৈরি করাটা যে শিল্প সংস্থাগুলির
কতটা প্রয়োজন সেটা আমরা বুঝতে পারি এদিনে অন্যতম বক্তা কৃষাণ গুপ্তার বক্তব্য
থেকে। তিনি সেই সত্যকেই মেনে নিচ্ছেন যে সত্য নির্ভর করে তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী
শক্তির উপর। কৃষাণ গুপ্তা বলছেন, ‘’উদ্ভাবনী শক্তিই আমাদের পুনর্জীবন দিতে পারে। আমরা
সংস্থায় অনেক কিছুর যত্ন নিয়ে থাকি। কিন্তু মানবাধিকার? মানবাধিকার কর্মীদের
উদ্ভাবনী শক্তিকে সংস্থার জন্য গড়ে তুলতে হবে। ওদের গুরুত্ব দিতে হবে। ডিজিটাল
মিডিয়াকে সংস্থার মানবাধিকার কর্মী গড়ে তোলার জন্য আমাদের কাজে লাগাতে হবে।‘’ কৃষাণ
গুপ্তা ‘অরগানিক ওয়েলনেস’-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে নিজের দায়িত্বের কথাও এদিন
বলেন।
ও সি এল সংস্থার সি ই ও অমনদীপ গুপ্তা বলেন, ‘Lack of information era’ সময় চলছে। আমাদের এই বিষয়ে কিছু কাজ করতে হবে। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। ভারত আবার অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে সামনের সারিতে উঠে
এসেছে। একটি সংস্থার প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে ‘Human fundamental Rights.’।
এদিনের আলোচনা সভা থেকে জানা গেল এই প্রজন্মের
নতুন ইঞ্জিনিয়াররা চাকরি জীবনে প্রথমে গাড়ি কেনে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে চায় না। গাড়ি কিনলে কাজ করার
অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। এই বিষয়টাকে সামনে রেখে সি আই
আই-এর ম্যনেজার বি এস রাও বলেন, ‘’উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীতে ছিল ‘ancient Learning’, গুরু শিষয পরম্পরা। একবিংশ শতাব্দীতে ‘ই-লারনিং’
নতুন উদ্যোগপতিদের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা বিনা ব্যায়ে ওয়েবনার প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করেছি। আপনারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। ম্যানেজমেন্ট বৈচিত্র আমাদের
জানতে হবে। ‘ই-লারনিং’ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ খুব কাজে
লাগবে।‘’
এদিনের কনক্লেভে কর্পোরেট বিষয়ক বিভিন্ন প্যানেল
ভিত্তিক আলোচনার ব্যবস্থা ছিল। তরুণ উদ্যোগপতিদের আগ্রহ ছিল নজরে পড়ার মত। বাংলায়
নতুন বাঙালি উদোগপতিদের আমরা দেখলাম। তরুণী উদ্যোগপতিদের সংখ্যা ছিল তুলনা
মূলকভাবে বেশি। একটি নাম করা কর্পোরেট সংস্থার একজন মহিলা ম্যনেজার আলোচনা সভায়
বললেন, শিক্ষা, পিতামাতার দায়িত্ব এবং কারিগরি ব্যবস্থাকে একসঙ্গে ভাবতে হবে। তবেই
উন্নয়ন সম্ভব এবং নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে। এদিনের কনক্লেভে মহিলা উদ্যোগপতিরা
এসেছিলেন বেশি সংখ্যায়। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত সি আই আইয়ের পরিচালকদের।
৩০ জানুয়ারির সি আই আই (পূর্বাঞ্চল) কনক্লেভ থেকে
জানা গেল, এবছর থেকে সি আই আই (পূর্বাঞ্চল) প্রতি বছর পাঁচ জন শিশু কন্যার উচ্চ
শিক্ষার দায়িত্ব নেবে। সংস্থার তরফে সুরেশ দত্ত ত্রিপাঠী একান্ত সাক্ষাৎকারে
জানালেন, ‘’এবছর থেকে সি আই আই (পূর্বাঞ্চল) পাঁচজন শিশুকন্যার উচ্চ শিক্ষার
দায়িত্ব নেবে। এ বছর ১৭ বছরের মহিমা বারুই এবং দশ বছরের অঙ্কিতা ঘোষকে বেছে নেওয়া
হয়েছে। ওদেরর দু’জনের হাতে চেক তুলে দেওয়া হল। দু’জনকে বিশেষ সাহজ্য করার জন্য এই
আর্থিক সাহায্য দেওয়া হল। আগামীতে অন্যন্যদের আমরা একইভাবে বেছে নেব।‘’
তিনি আরও বলেন, ‘’সি আই আই এমন একটি সংস্থা ভারতের
আর্থিক উন্নয়ন এবং সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দেশের বৃদ্ধিই পারে আমাদের এই
দেশকে প্রথম সারিতে তুলে ধরতে। আর তাঁর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। আমরা দেশের শিল্প,
মেধা, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে আরও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাইছি। তবেই
উদ্ভাবনী শক্তি উঠে আসবে।‘’
আজ সংসদে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
এই দিনে সি আই আই প্রসঙ্গে লেখায় একটি তথ্য উল্লেখ করছি। সূত্রের খবর ভারতে ৮ কোটি
শিল্পের বৃদ্ধি হয়েছে ৪%। এই হিসেব ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের। ২০১৭ সালের নভেম্বর
মাসে এই ধরণের শিল্পে বৃদ্ধি ছিল ৭.৪%। এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ছিল ৫.৬%।
No comments:
Post a Comment