দীপেন্দু চৌধুরী
পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ? না পথ খুঁজিতেছ? তুমি বঙ্কিমচন্দ্রের নবকুমার
লহ। তবে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের কাছে আজ বিশ্বপথিক। তথা বিশ্বনাগরিক। তাই আমি সঙ্গে
হাটিতে চাহিতেছি। কারণ আমি পথ হারাই নাই। আমি পথ খুঁজিতেছি। তুমি আহ্বান জানাইয়াছ।
তুমি আমন্ত্রণ করিয়াছ। ‘Join The Journey’. এই যুগে আমাদের ন্যায় এই দেশে ‘নবকুমার’ হইতে
গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াইতে হয়। যাহার খবর সন্ধানে তুমি ভারতে আসিয়াছ। আমি নাগরিক
সাংবাদিকতায় স্থানও পাইতেছি না। আবার প্রস্থান করিতেও দিতেছে না। তাই সব ধরণের
লড়াই করিয়া টিকিয়া থাকিতে চাহিতেছি। আমাদের ন্যায়শীল পাঠকের কাছে ইহাই কহিবার থাকে
যে ইহা আমার ন্যায় এক শ্রমজীবী সাংবাদিকের আত্মশ্লাঘা কহিবার নিবন্ধ নহে। শুনাইবার
কোনওরূপ অহংবোধ দেখাইতেছি না। আবার সাধুভাষায় লিখিবারও আমাদিগের কোনওরূপ
স্বতঃপ্রণোদিত আত্মনিবেদনের শ্রমলব্ধ কলমচির কাজ করিতে মন চাহিতেছে না। তাই চলিত
বাংলায় আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমের এক ‘পদাতিক’ সাংবাদিক প্রসঙ্গে দু’চার লাইন
লিখিবার সাধ জাগিয়াছে।
খবর সংগ্রহের উপকথা
তাঁর নাম পল সালোপেক। তিনি সাংবাদিকতার ছাত্র নন। তিনি বিঞ্জানের ছাত্র। সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে বিশ্ব পথিক হয়েছেন। পল সালোপেক আমেরিকার প্রতিষ্ঠিত লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি কাজ করেছেন ‘চিকাগো ট্রিবিউন’, ফরেন পলিসি, দ্যা আটলান্টিক,
ন্যাশন্যাল জিয়োগ্রাফিক সহ আরও নিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার হয়ে। তিনি হেঁটে বিশ্বের কয়েকটি দেশের রাজনীতি,
অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং লোকায়ত সংস্কৃতির সুলুকসন্ধান করতে চান। সালোপেক ২০১৩
সালের জানুয়ারি মাস থেকে হাঁটতে শুরু করেছেন। আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ কী
রকম ভাবে এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেটা জানাটাও এই সফরের অন্যতম
উদ্দেশ্য। ‘’আউট অফ ইডেন ওয়াক’’ (‘’Out of Eden Walk’’) শিরোনামে তিনি হেঁটে বিশ্বভ্রমণ
করতে চান। এই পরিভ্রমণ প্রায় ২১ হাজার
মাইল হবে। আনুমানিক প্রায় ৩৩ হাজার ৭৯৬ কিলোমিটার। তাঁর এই ভ্রমণের জন্য অর্থ
দিচ্ছে ন্যাশন্যাল জিয়োগ্রাফিক সোসাইটি, দ্য নাইট ফাউন্ডেশন এবং আবুডান্স ফাউন্ডেশন।
তার এই পদব্রজে ভ্রমণ শেষ হবে ২০২০ সালে দক্ষিণ আমেরিকা সফর দিয়ে। সম্প্রতি কলকাতা
প্রেস ক্লাব এবং আমেরিকান সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হল ‘স্লো জার্নালিজম’
শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার।
ভারত সফরে এসে সালোপেক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে
দেখলেন বিহারের মানুষ কীভাবে সুরাট থেকে চলে আস্তে বাধ্য হয়েছেন। কাজের সন্ধানে
গিয়ে সেখানে ‘নাগরিক স্বীকৃতি’ না থাকার জন্য তাঁদের চলে আস্তে বাধ্য হতে হয়েছে। বিহারে
থাকার সময় এই গল্প শোনেন দু’বার পুলিৎজার বিজয়ী আলোচ্য সাংবাদিক। সারা বিশ্বের
জ্বলন্ত সমস্যা ‘মাইগ্রান্ট’ বা অভিবাসন সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন তিনি। অনুভব
করছেন বিশ্ব আত্মীয়তার। যেটা তিনি পারেন অনুভব করতে কারণ তিনি পায়ে হেঁটে, পায়ে
হেঁটে লাল, কালো, পাথুরে, কাদা, মাটি, জল মেখে, মরুভূমিতে হেঁটে চলেছেন। নাগরিক
সভ্যতা টপকে গঞ্জ সভ্যতা তারও আগে অনেক অনেক আগে গ্রামীণ সভ্যতা। স্লাইড শোয়ের মাধ্যমে ১৯ নভেম্বর কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাঘরে তিনি বললেন, ‘শিকাগো থেকে
ট্রাডিশনাল খবর করেছি। রাজনীতি, পরিবেশ, সামাজিকসহ বিভিন্ন বিভাগে সাংবাদিক হিসেবে
কাজ করেছি। আমি ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি। সাংবাদিকতার প্রয়োজনে। জেনোসাইড বা গণহত্যা
আমাকে গভীড়ভাবে ভাবায়। আমি মানবতা দেখেছি। সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যেও মানবতা দেখেছি। ফেস টু ফেস
সাংবাদিকতায় অনেক কিছু বোঝা যায়। ‘Single Journalism is my life. New story in the world.’ আমি খুঁজেছি এবং খুঁজছি জীবনের নতুন নতুন উপকথা।‘’
তিনি সন্ত্রাসবাদীদের সামনে থেকে প্রত্যক্ষ
করেছেন। আফ্রিকা এবং এশিয়ার মধ্যভাগে তাঁদের সঙ্গে সালোপেকের দেখা হয়েছে। তাই তিনি
উপলব্ধি করছেন ‘মাইগ্রেশন’ নামক এক জ্বলন্ত সমস্যার। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা হয়ে
বাকী বিশ্বের একই সমস্যা। সালোপেকের আক্ষেপ নিজের দেশ আমেরিকা উন্নত গণতন্ত্রের
গর্ব করলেও অভিবাসন নীতি ঠিক করতে হিমসিম খাচ্ছে। একশো বছর আগে থেকেই ‘মাইগ্রেশন’
একটা জ্বলন্ত সমস্যা। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলছেন। ‘’In case of India,
migration is a very important issue.’’
সাংবাদিকতা কোনও রকম ‘রেডিমেড ফুড’ নয়। সালোপেক
মনে করেন। চট জলদি একটা খবর সংগ্রহ করে ‘বৈদ্যুতিন মাধ্যম’-এ ব্রেকিং নিউজ করলেই
সাংবাদিকতার কাজ শেষ হয়ে যায়না। ‘স্লো জার্নালইজম’ বুঝতে গেলে ঞ্জান অর্জন করতে
হবে। দিনে তিন চারটে খবর সংগ্রহ করে আমরা গর্ব করতে পারি কিন্তু সংবাদের গভীরে
যেতে পারি কী? প্রশ্ন তুলছেন সালোপেক। তাঁর বক্তব্য, I am working from story to
story for digital news. গতিশীল দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা
দিতে হবে। ‘স্লো জার্নালইজম’ বিষয়ে তিনি আরও বলছেন, ‘’I believe there is space for
longer, hopefully more thoughtful storytelling in our lives, and walking accomplishes
this. By moving at 5km an hour through the main stories of our time, I think I
gather a better understanding.’’ আন্তর্জাতিক বিশ্বায়িত নাগরিকদের সঙ্গে দেখা
হয়েছে আমার। আরও দেখা হবে। আমি আরও অনেকের সঙ্গে দেখা
করতে চাই। কথা বলতে চাই।
ভারতের রাজনীতি প্রসঙ্গে সলোপেক বলেন ‘’আমি একটা
হেডলাইন দেখেছিলাম নোট বাতিলের জন্য মানুষ কি ভাবে অসুবিধায় পড়েছে। ভারতীয় সংবাদ
মাধ্যম এই খবরের গভীরে গিয়ে সেই গল্প আমাদের কতটা দিতে পেরেছে? এই বিষয়টা আরও
বিস্তারিত গেলে তবেই বলতে পারব ‘স্লো জার্নালইজম’-র শর্ত আমরা পালন করতে পেরেছি।‘’
প্রশ করেছিলাম সি এন এন চ্যানেলের সাংবাদিকের
কার্ড বাতিল প্রসঙ্গে। ট্রাম্প প্রশাসন যদিও পরে সি এন এন সাংবাদিক জিম
অ্যাকোস্টার মার্কিন সরকারের দেওয়া হুয়াইট হাউসের অনুমোদিত কার্ড (Accredited) জিমকে ফেরৎ দিয়েছেন। প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে আমি জানতে চেয়েছিলাম ‘মুক্ত
সাংবাদিতা’ (Free
Press) বিষয়ে তাঁর
মতামত কী? আমি প্রশ্ন করেছিলাম, ‘’According to news agency A federal Judge on 16 November directed the
White House to restore the press credentials of Jim Accosta of CNN, while White
house spokeswomen Sarah Sanders, said ‘’We will also further develop rules and
processes to ensure fair and orderly press conferences in the future.’’ Mr.
Salopek what is your opinion about free press Rights? পল সালোপেক উত্তরে বলেন, ‘’বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা রয়েছে। আমি
যে কোনও দেশের সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণের বিরোধী। আমার সহকর্মী আক্রান্ত
হয়েছিলেন। আমরা ওর পাশে ছিলাম। এবং এখনও পাশে আছি। ভবিষ্যতেও থাকব।‘’
No comments:
Post a Comment