দীপেন্দু চৌধুরী
আজকের এই নিবন্ধের সঙ্গে প্রথম যে উধৃতিটি উল্লেখ
করছি সেটা কতটা সাযুজ্য দাবি করতে পারে?
সেটা বিচার করার দায়িত্ব বিদগ্ধ পাঠকমণ্ডলীর। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কোনও সময় একটি লেখায়
লিখেছিলেন, ‘’যা দেখি খারাপ লাগে, যা শুনি খারাপ লাগে, যা পড়ি খারাপ লাগে, যার
সঙ্গে কথা বলি খারাপ লাগে, কোথাও সত্যিকার বুদ্ধি, প্রঞ্জা বা প্রতিভার পরিচয়
পাইনা। শুধু সমস্ত অন্ধকারের মধ্যে শিবরাত্রির সলতে হয়ে একা জ্বলছেন অন্নদাশঙ্কর।
... তাই শত রাজনৈতিক মতভেদ সত্বেও অন্নদাবাবুকে আমরা মাথায় করে রাখি।‘’
আমি এই জন্মে কোনওদিন এমন ধৃষ্টতা দেখানো বা
চিন্তার করার কথা ভাবতে পারি না। যে আমি
অন্নদাশঙ্কর রায়ের সমগোত্রীয় হয়ে যাব । পরজন্মে হতে চেষ্টা করব। এমনটাও ভাবতে চাইছি না। কারণ আমার সীমাবদ্ধ ঞ্জানে আমি ‘পরজন্মে’ বিশ্বাস করি না। জীবনের কৈশোর
থেকে এ পর্যন্ত আর্থ-সামাজিকভাবে এবং আর্থ-সাংস্কৃতিক মানদন্ডে পিছড়ে বর্গের মানুষ
হয়ে থেকে গেলাম। অথবা অদৃশ্য এক রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক ‘জোটঘোট’ এবং তাঁদের অনুগামী দল
(স্বার্থান্বেষীর দল) নোনা ঘামের স্রোত দেখতে অভ্যস্ত। আমাদের মতো ‘অপর’-দের দেখে হাসি ঠাট্টা, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ করেই এঁরা
আনন্দ পায়। আমরা আমাদের কাজ করে যাই। একদল ঠান্ডা ঘরের সুচতুর সাংস্কৃতিক ‘জোটঘোট’
আজ পর্যন্ত আমাকে ‘ক্যামেরাম্যান’, ‘অচ্ছুৎ’ (Untouched), দলিত, জোকার, ভাঁড় ইত্যাদি পদবীতে খ্যাত করেছেন। বিভিন্ন উপায়ে আমদের মতো
অক্ষম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঘৃণা ছড়িয়েছেন। ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হিসেবে
চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। তাঁদের পরিকল্পিত আক্রমণে আমাদেরমতো ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা থাকে না। বারে বারে কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁদের দুর্বলতা তাঁরা নিজেরা হয়ত
বর্তমান সময়ে বুঝতে পারছেন। আমাদেরমতো মানুষদের যত ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ এবং কুখ্যাত
করে প্রচার বা অপপ্রচার করা হয় ততই আমাদের মতো মানুষরা, মানুষের হ্যাঁ সাধারণ
মানুষের সমর্থন পাই। জনান্তে এটাও বলে রাখা যায় এইসব গোষ্ঠী তাঁদের নিজেদের
অজান্তে আমাদের মতো ‘মূর্খ’-দের নামে অপপ্রচার করতে গিয়ে প্রচার করে বসে। এই
প্রসঙ্গটির খুব কিছু প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আমার পরিচিত এক দক্ষিণপন্থী ভদ্রলোক
আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি অরুন্ধতী রায়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন? ভদ্রমহিলা উগ্র
বামপন্থী’। আমি জানতে চাইলাম, ‘আরবান নকশাল’? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ তাই’। আমি এর পর
আর কথা না এগিয়ে বলেছিলাম, ‘চলুন শুনি ওনার বক্তব্য’। অরুন্ধতী রায়ের বক্তব্য
শোনার পরে আমার সঙ্গে অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া ভদ্রলোক মেনে নিলেন যে ‘অরুন্ধতী রায়’
একজন বিদগ্ধ লেখিকা এবং প্রতিবাদী সমাজকর্মী।
সাম্প্রতিককালে
ভারতের বুকারজয়ী ইংরেজি লেখিকা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ঞ্জান ছিল বাংলা এবং
ইংরেজি দৈনিকের সংবাদের উপর। কিন্তু ১০ নভেম্বর তাঁর সঙ্গে প্রায় পৌনে দুঘণ্টা
কাটানোর পর মনে হল প্রকৃত ঞ্জানী এবং সাহিত্যঋদ্ধ, শিল্পের শৈলী, সৃষ্টির উন্মাদনা
যে যে লেখকের, বুদ্ধিজীবীর আছে তিনি আর যাই হোক নিজেকে ফাঁকি দিতে পারবেন বলে মনে
হয় না। ব্যক্তি সচেতন এবং সমাজ সচেতন হতে বাধ্য। ‘দ্য ক্যালকাটা ক্লাব’ এবং ‘কলাম
ক্লাব’ মতভেদে ‘কলম ক্লাব’ যৌথ উদ্যোগে ১০ নভেম্বর ক্যালকাটা ক্লাবে আয়োজন করেছিল মুক্তমনা
লেখিকা অরুন্ধতি রায় (‘Arundhati Roy UNPLUGGED’)। আমন্ত্রণপত্রে ইংরেজিতে আরও লেখা ছিল, ‘The
acclaimed of The God of Small Things and The Ministry of Utmost Happiness will
be in conversation with Sandip Roy.’ এই অনুষ্ঠানে আমার আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা ছিল
না। কারণ ভিন্নতর এবং বিভিন্নতর। হঠাত আমার সঙ্গের বন্ধুর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের
বিষয়ে জানতে পারি। এবং আমন্ত্রণপত্র ‘গেমপ্ল্যান’ থেকে নিজের পরিচয় দিয়ে সংগ্রহ
করি। আমার মনে ছিল না যে, ‘ক্যালকাটা ক্লাবে ভারতের জাতীয় পোশাক ‘পায়জামা,
পাঞ্জাবী’ এবং ‘ ‘জওহর কোর্ট’ পরে যাওয়া
যাবে না। আমি অবশ্য সেদিন ওই তিনটি পোশাক পরেই গিয়েছিলাম। আমাকে কেউ আটকায়নি।
কোনওরকম বাড়তি প্রশ্নও করেননি। কিছুটা কৌতূহল হয়ত ছিল। পোশাকের আদিখ্যেতায়। কারণ
আধুনিক কলকাতার সাহেব-বিবিদের মাঝে গোলাম হয়ে ছিলাম।
আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। এদিন সত্যি সত্যি হুতোম
এসেছিল। মুহূর্তের জন্য। মঞ্চের পিছনের দিকে ‘ডিসপ্লে বোর্ড’- এর উপরে এসে বসেছিল।
আমাকে ঈশারায় বলল, ‘তুই এখানে কী করছিস?’ আমি বললাম, ‘বক্তব্য শুনতে এসেছি।’
হুতোম বলল, ‘’এইসব ‘সাহেব-বিবিদে’-র মাঝে তোকে
গোলামের মতো দেখাচ্ছে। তুই ইংরেজি বই পড়তে জানিস না। এই লেখিকার একটাও বই পড়িসনি।
সাহেবি আদব-কায়দা জানিস না। ‘বাপুরাম-সাপুড়ে’ হয়ে থেকে গেলি। আলকাপ-পঞ্চরসের
‘পাঁচু’ হয়ে থেকে গেলি।‘’ আমি আর উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না বুঝে চুপ করে থাকলাম।
হুতোম লেখিকা অরুন্ধতীর মাথার উপর চক্কর খেয়ে একটা গাছের ডালে গিয়ে বসে পড়ল। হয়ত
ওর অনুষ্ঠান শোনার আগ্রহ আছে। গাছটা কি শিমূল গাছ ছিল? পড়ন্ত সূর্যের আলোয় হাল্কা
লালছে রঙের লম্বা লম্বা ফুলের পাঁপড়ি দেখতে পেলাম।
জীবনের শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে ১ নভেম্বর, ১৯৯৭
সালে একটি প্রথম সারির জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় শ্রী নীরদচন্দ্র চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘’............এই
উপলক্ষে বিশেষ উপরোধে লিখিতেছি, কিন্তু কী লিখিব ভাবিয়া পাইতেছি না। আমার মনের ভাব
কী? এমন কি, স্থির বুঝিতে পারিতেছি না। তবে ইংরেজি ১৯৪৭ সালের ৫-৬ মে তারিখে কী
ধারণার বশে আমার আত্মজীবনী (যাহা The autobiography of an Unknown Indian এই নামে
১৯৫১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে Macmillan কতৃক প্রকাশিত হইয়াছিল) লিখিতে আরম্ভ
করি তাহার কথা বলি।‘’
‘আত্মঘাতী বাঙালি’ নীরদচন্দ্র চৌধুরীর প্রথম
আত্মজীবনী প্রকাশ হয়েছিল ৫৪ বছর বয়সে। অরুন্ধতী রায়ের প্রথম আত্মজীবনী ‘The God of Small Things’ (Random House) ১৯৯৭ সালে ৪১ বছর বয়সে প্রকাশ হয়। তিনি তাঁর মধ্য যৌবনে এই উপন্যাস লেখেন। এই উপন্যাস ১৯৯৭ সালে ম্যান বুকার
পুরষ্কার পায় ‘ফিকশান’ বিভাগে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমালোচকদের ভাষায় অরুন্ধতীর
প্রথম উপন্যাস The God of Small Things একজন অপরিচিত ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের লেখকের সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া
বই। তাঁর প্রথম উপন্যাস The God of Small Things বিক্রি হয়েছে ছয়
মিলিয়ন কপি। অনুবাদ হয়েছে চল্লিশটি ভাষায়। সমালোচকদের ভাষায় অরুন্ধতী রায় ভারতীয়
সমাজের তথাকথিত মূল্যবোধের বিরোধী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ‘India’s most anti National writer’. তাঁর লেখায় সামন্ত ভারতের ছবি, জাতপাতের ছবি, সাম্প্রদায়িক ভারতের ছবি উঠে
আসে। ২০১০ সালে অরুন্ধতী রায়ের নামে ‘রাজদ্রোহ’- এর মামলা হয়। কারণ তিনি সে সময়
বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়’। যদিও পরে তিনি আত্মরক্ষার্থে বলেন, ‘’আমি
কাশ্মীরের নির্যাতিত মানুষের কথা ভেবে বলেছিলাম। রাষ্ট্র সাধারণ মানুষের উপর যে
ধরণের চাপ তৈরি করতে চাইছে তার প্রতিবাদ করতে চেয়েছি।‘’
১০ নভেম্বর শীত শুরুর সন্ধ্যায় কলকাতা শহরের সব
থেকে পুরনো অভিজাত পাঁচতারা ক্লাবের খোলা মাঠে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। কোনওরকম
দ্বিধাদ্বন্দ না রেখেই বলা যায় ইংরেজি সাহিত্য পড়া অভিজাত পাঠকমণ্ডলীর সামনে
অরুন্ধতী বলতে শুরু করলেন। প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন লেখক এবং সেদিনের সঞ্চালক সন্দীপ
রায়। লেখিকা তাঁর বই The God of Small Things থেকে একটি পরিচ্ছেদ আমাদের জন্য পড়ে শোনালেন। তিনি লিখেছেন, বাংলায় তর্জমা করলে যেটা হয়, কিছুক্ষণ আগে সূর্য অস্তমিত
হয়েছে কিন্তু সূর্যের আলো এখনও থেকে গেছে। এই বর্ণনা শোনার পর আমাদের আর অপেক্ষা
করতে হয় না। লেখিকা তাঁর স্বমহিমায় নিজস্ব স্বকীয়তায় হাজির হলেন। সঞ্চালক সন্দীপ
রায়ের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘’হ্যাঁ ভারতে জাতপাত একটা বড় বিষয়। আমি কেরলে
বড় হয়েছি। এই প্রগতিশীল রাজ্যে আজও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র রয়ে গেছে। ‘টাচেবল’- মানুষের
দল ‘আনটাচেবল’ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম রেখেছে। আমি শুধু কেরলের কথা বলছি না। উত্তর
বিশ্বায়ন ভারতে এই সমস্যা বর্তমান ‘সিস্টেম’-এও খুব জটিল।‘’
সন্দীপ রায় জানতে চেয়েছিলেন বামপন্থীদের বিষয়ে। অরুন্ধতী বললেন, ‘’কোনটা
বামপন্থা বলবেন? কোনটা সামাজিক গণতন্ত্র বলবেন? কেরল রাজ্যে গণতন্ত্র মেনেই পাঁচ
বছর অন্তর সরকার পরিবর্তন হয়। আবার দেখুন পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর বামপন্থীরা সরকার
চালাল। এটা কী করে সম্ভব?’’ হুতোম গাছ থেকে আমাকে বলল, ‘শুনলি কিন্তু কিছু লিখবি
না। লিখলে আবার ‘ভাঁড়’ শুনতে হবে। এই রাজ্যে বামপন্থীদের সমালোচনা করিস না।
ওরা ‘হুকোমুখো হ্যাংলা’ পেটুক, হাকিম
কবরেজ বলবে। তুই কোনও পার্টিতে গেলে তোর খাওয়ার ছবি তুলে রাখে যে ‘বাবু মশায়’-রা।’
হুতোমের কথা শুনলাম, কিন্তু উত্তর দিলাম না।
আলোচ্য লেখিকা মনে করেন ভারতের আর্থ-সামাজিক
পরিস্থিতর পরিবর্তন শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। পোখরানে পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর। তিনি
মনে করেন ভারত এর পরেই আরও জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠছে। অনেকটা সংগ্রামপ্রিয় দেশপ্রেমিকেরমতো।
তিনি সেই সময়ের একটি লেখায় লেখেন, ‘What wonderful, willing, well-behaved, gullible
subjects.’ তিনি তাঁর ‘The
End of Imagination’ নিবন্ধে আরও লেখেন, ‘’We have turned out to
be.’’
ভারতের দক্ষিণপশ্চিম রাজ্য কেরালাকে তাঁর লেখা
আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের বিচরণভূমি করেছেন আলোচ্য লেখিকা। কারণ তিনি বড় হয়েছেন কেরালার সিরিয়ান-খ্রীস্টান সম্প্রদায় পরিবারে। তাঁর আসল নাম সুজানা অরুন্ধতী রায়। এই
সম্প্রদায় কেরালার মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। একটি সাক্ষাৎকারে অরুন্ধুতী বলেছেন, ‘’Kerala is home to four of
the world’s great religious: Hinduism, Islam. Christianity, and Marxism.’’
তাঁর সাক্ষর আমরা পাই এদিনের
উপন্যাসের আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে। নিজের স্বাক্ষর নিজের ভাষায় তিনি উল্লেখ করেন।
নারী বিষয়ক উপন্যাস, গল্প, ছোট গল্প রবীন্দ্রনাথ সহ একাধিক বাংলা এবং ভারতীয় ভাষার
মরমী লেখকদের লেখায় পাওয়া যায়। আলোড়নকারী গ্রন্থ ফরাসি সাহিত্যিক সিমোন দ্য
বোভোয়ারের ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’। ভারতীয় লেখিকা অরিন্ধতী রায় নিজের লেখা উপন্যাসে
শুধুমাত্র ‘নারী’ শব্দে সীমাবদ্ধ থাকেননি। কাশ্মীরের প্রসঙ্গ বারে বারে ঘুরে ফিরে
আসছিল একটি মুসলিম মহিলার চরিত্রকে কেন্দ্র করে। ইংরেজিতে বলছিলেন। অত্যন্ত সহজ
এবং সাবলীলভাবে। তাঁর দ্বিতীয় বই ‘The Ministry of Utmost Happiness’ উপন্যাস, প্রথম উপন্যাস The God of Small Things লেখার ২০ বছরে পরে এই বই লেখেন
অরুন্ধতী। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে পুস্তক সমালোচকরা বলছেন বিপ্লব দাশগুপ্ত নামে একজন
বুদ্ধিদীপ্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় আমলার চরিত্র আছে। তিনি কোন একটি
প্রসঙ্গে বলছেন, ‘I feel a rush of anger’। আর এখান থেকেই এদিনের মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন ছুটে আস্তে থাকল কলকাতার অভিজাত
ক্লাবের খোলা আকাশের নীচের প্যাভিলিয়নের মাঠ থেকে। ‘মি-টু’ আন্দোলন থেকে ‘শবরীমালা’। বিভিন্ন বিষয়ে।
ভারতে ‘মি-টু’ আন্দোলনকে অরুন্ধতী মনে করেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে অবশ্যই
‘বিপ্লব’ নয়। আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল। ছদ্মবেশী পিতৃতন্ত্রের মুখোশ খুলে পড়ছে।
শবরীমালা বিষয়ে তাঁর অভিমত ভারতে লোকসভা ভোটের আগে
বিষয়টাকে চাগিয়ে তোলা হচ্ছে। ১৯৫০ সালে যে বিষয়টা ছিল আদালতের রায়ের পরে ভারতীয়
গণতন্ত্রে এই বিষয়টা নিয়ে আবার নতুন করে হৈ চৈ করার কি থাকতে পারে?
তিনি যত না লেখেন তার থেকে অনেক বেশি আলোচনায়
থাকেন রাজনৈতিক সমাজকর্মী হিসেবে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট রাজ্যে তার
সামাজিক কাজের ক্ষেত্র। নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েই তিনি কাজ করতে চান।
চলতি বছরের নভেম্বর মাসের কলকাতা সফরে অরুন্ধতী এদিনের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় উল্লেখ করেছেন। বিঞ্জান এবং তথ্য
প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে মানবসম্পদ উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ছে। এই
উদ্বৃত্ত মানবসম্পদ ভবিষ্যতে সারা বিশ্বে জটিল সমস্যা ডেকে আনতে পারে। যেটাতে
আমাদের এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। বুকার পুরষ্কারজয়ী লেখিকা ২০১৫ সালে ভারতে
অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে নিজের ‘জাতীয় পুরস্কার’ ফিরিয়ে দিয়েছেন। ১০ নভেম্বর কলকাতায়
একগুছ কর্মসূচী ছিল তাঁর। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর হাওড়ার টিকিয়া পাড়ার ‘সামারিটান
হেল্প মিশন’- এর ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান তিনি এবং বিভিন্ন
প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। বালিগঞ্জের ‘হোপ স্কুল’-এ অনুন্নতশ্রেণীভুক্ত
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও তিনি সময় কাটান। অরুন্ধতী হাওড়া এবং বালিগঞ্জের দুটি
অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘’No one ever said a particular
writer was a social activist because that’s what writers did. They used to
write about the society in which they lived. Writers were jailed, writers were
killed.’’
No comments:
Post a Comment