দীপেন্দু চৌধুরী
অসমের নাগরিকপঞ্জি ৩০ জুলাই প্রকাশের পরে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টা ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসলেও আলোচনা, মতবিনিময় সভা, তর্কবিতর্ক কিন্তু চলছে। পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ এবং পিপলস স্টাডি সার্কেল যৌথ উদোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ যোগেশ মাইম মঞ্চে এই আলোচনা সভা ছিল। উল্লেখিত দু’টি সংস্থা গত দু’বছর যাবৎ রাজ্যের কলকাতা শহর সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় সমাজ সচেতন সিনেমার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করছে। ছোট ছোট সিনেমা তথা তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনা সভার আয়োজন করে এই আলোচ্য গোষ্ঠীটি। কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত, সমাজ সচেতন তরুণতরুণী সামাজিক দায়িত্বের অবস্থান থেকে বর্তমানে ‘টক অব দ্যা টাউন’ হয়ে উঠছে বলা যায়। এই গোষ্ঠীর উদ্যোগেই আমরা দেখেছি একটি বস্তুনিষ্ঠ তথ্যচিত্র। ভারতের বিভিন্ন শহরে পরিচারিকাদের দৈনন্দিন জীবনের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেই বিষয়ের উপরে ছবি দেখেছি। যে বিষয়টি নিয়ে আমি আমার একটি ব্লগে লিখেছিও। ওই তথ্যচিত্রে যে পরিচারিকা ছবির মুখ্য চরিত্র ছিল তাঁর পরিচয় পত্র ছিল না। সেই প্রসঙ্গে আসে ‘আধার কার্ড’। অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে ছবিটিতে বক্তব্য হাজির করেছিলেন পরিচালক। সঙ্গে ছিল আলোচনা।
পরে আরও একটি ছবি আমরা দেখি। নকশাল বাড়ি আন্দোলনের প্রথম সারির প্রবাদ প্রতিম নেতা তথা সাংবাদিক, লেখক এবং স্বনামধন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি সরোজ দত্তকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছবিটি। সরোজ দত্তের বিতর্কিত মৃত্যু অথবা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়াকে বিষয় করে এধরণের ছবি গত চার-পাঁচ দশকে হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। ছবিটির নাম ছিল ‘সরোজ দত্ত অ্যান্ড হিজ টাইমস’, পরিচালনায় কস্তুরী এবং মিতালী। ছোট্ট একটা ওয়েবক্যাম ক্যামেরায় তোলা হয়েছে ছবিটি। অনেক অজানা তথ্য এই ছবিতে আমরা দেখতে পেয়েছি। কস্তুরী এবং মিতালীকে অভিনন্দন। সীমিত আর্থিক সহায়তায় স্বউচ্চারিত শব্দের নস্টালজিয়া, তথ্য, সংলাপ এবং প্রশ্ন তুলে দেওয়ার জন্য। আমরা অভিনন্দন জানাব কলকাতার জার্মান কনস্যুলেট জেনারেলকেও। সম্প্রতি কলকাতার ম্যাক্সম্যুলার ভবন ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল।
৯ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলার আগে আমরা একটু প্রাককথন সেরে নিতে চাইছি। চলতি বছরের ৩০ জুলাই অসম নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পরে দেশবাসির উদ্বেগ ছিল। বড় ধরণের কোনও গন্ডগোল হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার, অসম রাজ্যসরকার সহ উত্তর পূর্ব রাজ্যের সরকারগুলি সব রকমের নিরাপত্তার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। সূত্রের খবর সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেনা বাহিনীকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা আছে। অসম এবং প্রতিবেশী রাজ্য গুলিতে ২২০০০ আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকে আমরা জানতে পেরেছি মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন এনআরসিতে আবেদন করেছিলেন। নাম বাদ পড়েছে ৪০ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৭ জনের। সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে কাদের নাম বাদ পড়েছে নাগরিকপঞ্জি কতৃপক্ষ জানাবে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসএমএসের মাধ্যমে অথবা অনলাইনে বা হেল্পলাইনে ফোন করে জেনে নেওয়া যাবে। কেউ মনে করলে সেবাকেন্দ্র থেকে জেনে নিতে পারবে।
৩০ জুলাই নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করে এনআরসি রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া শৈলেশ বলেছিলেন, ‘’ আজ শুধু অসম নয়, দেশের পক্ষে ঐতিহাসিক দিন। এত বিরাট, জটিল প্রক্রিয়া আজ পর্যন্ত দেশ তো বটেই বিশ্বেও হয়নি। ১৯৫৫ ও ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন ও নির্দেশিকা মেনে স্বচ্ছভাবে প্রক্রিয়া চলেছে। সাড়ে ৬ কোটি নথিপত্রের অনেক তদন্ত, যাচাই ক্রমাগত হয়ে চলেছে। ২০১৩ সাল থেকে শুরু। কেন্দ্র ও রাজ্যের করা পরিশ্রম, হাজেলা এবং তাঁর দল মিলিয়ে ৫০ হাজার কর্মী এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। এটা খসড়া মাত্র। সকলে নিজের নাম ঢোকানো বা সংশোধনের পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। যারা পাবেন না, তাঁদের সাহায্য করবে দফতর। সম্পূর্ণ ন্যায় বিচার পাবেন প্রত্যেক ভারতীয়।‘’
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে ‘আসামের নাগরিক পঞ্জির সাতকাহন’ বইটি ‘পিপলস স্টাডি সার্কেল’ এর তরুণ প্রকাশক দ্বৈপায়ন ব্যানার্জী লেখক দেবর্ষি দাসের হাতে তুলে দিয়ে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘোষণা করেন। বইটির প্রচ্ছদে লেখা আছে ‘’আসামে নাগরিকপঞ্জি বা ‘এন আর সি’-র খসড়া বেরিয়েছে ৩০ জুলাই। ৪০ লক্ষ মানুষ নাগরিক তালিকাতে জায়গা পান নি। নাগরিকপঞ্জির পিছনের ইতিহাস কী? পূর্ববাংলা থেকে আসা আসামের প্রজন্মের সাথে ‘এন আর সি’-র দাবির কী সম্পর্ক? কোন রাজনীতি নাগরিক পঞ্জির পেছনে রয়েছে? ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে? ৪০ লক্ষ দেশহীন মানুষকে নিয়ে কী করা উচিৎ? প্রশ্ন অনেক। প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে পড়ুন এই ছোট বই।‘’
দেবর্ষি বলেন, ‘’আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রাক ইতিহাস আছে। নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। সেই ট্রাজিক দিকটা আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি আমার এই ছোট্ট বইয়ে। আমি বলতে চেয়েছি লড়াইটা অত্যন্ত মানবিক এবং স্পর্শকাতরতার।‘’ দেবর্ষি এর পরে নাগরিকপঞ্জির তৈরির ইতিহাস শোনান আমাদের। ভারতের স্বাধীনতা এবং ভারত ভাগের আগে থেকে অসম জাতি, উচ্চবর্ণ বাঙালি, উচ্চবর্ণ অহমজাতি, জনজাতি, বিহারের ছোট নাগপুর থেকে চা বাগানে কাজ করতে যাওয়া নতুন ‘চা-জাতি’। এঁদের সম্পর্কে তিনি বলেন। আমি নিজে দেবর্ষির লেখা বইটি এখনও পড়ে উঠতে পারিনি। তাঁর বিষয়গুলি তিনি এদিন আলোচনায় আনলেন। ১৮৯০ সাল থেকে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা ছোটচাষি, ভূমিহীন চাষিদের অসমে আসার কথা উল্লেখ করেন দেবর্ষি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসমের জনবিন্যাস বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন।
দেবর্ষি মূলত পাঁচটা বিষয়ে আলোকপাত করতে চেয়েছেন তাঁর লেখা বইয়ে। ১) আসামের নাগরিকপঞ্জি মানে কী? ২) বিদেশী তাড়ানো নিয়ে গোলমাল কেন? ৩) আদৌ কি বিদেশী আছে? ৪) নাগরিকপঞ্জির অন্যায়ের বিষয়গুলি কী? ৫) বর্তমান অবস্থায় কী করতে হবে?
‘পিপলস স্টাডি সার্কল’ অসম নাগরিকপঞ্জি বিষয়ে ৬টি বই প্রকাশ করবে। সংস্থার আমন্ত্রণপত্র থেকে আমরা এই বিষয়টা জানতে পারি। আমন্ত্রণ পত্রে লেখা হয়েছে।
‘’Dear Friends,
The People's Study Circle was formed in Kolkata in April 2017, as a group of individuals - alarmed by the rise and rise of fascism in the country - came together feeling the urgent need to create an accessible independent and non-partisan study space where activists and academics could converge to study the society with an interventionist approach but without losing the discipline and rigour that serious and in-depth study demands.
The Study Circle successfully ran a monthly lecture series on Fascism, Nationalism and Religion for 8 months. After that, we began our Group Study sessions, held every 3 weeks, where we extensively read primary texts concerning communal polarisation, the migration issue, critical texts on the Hindutva iconography in Bengal and even went over some of the Rightwing texts and books.
We are happy to announce a series of six 'Little Books', to be published by the People's Study Circle over the next 3-4 months. The first two titles (on the NRC in Assam, and an appraisal of the myths around Shyamaprasad Mukherjee) are as follows. The Little Books are typically 40 pages long, cost Rs. 15 each, and are written in lucid, jargon-free, attractive styles, which we hope will appeal to one and all!
Please spread the word. Buy our books, place bulk orders, and also donate generously to our 'Little Books' publishing fund. We will fight the rightwing propaganda machine with all mediums at our disposal.’’
আমাদের যে সময় চলে গেছে সেই সময়ের কথা নতুন করে ভাবেত বলছেন দেবর্ষি। তিনি আরও বলেন, ‘’আসাম জাতীয়তাবাদী একটি এনজিও ২০০৯ সালে একটি জনস্বার্থের মামলা করে। ২০১৪ সালে সেই মামলার রায় বের হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় খসড়া প্রকাশ হয়। ২ কোটি ৯০ লক্ষের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। ৪০ লক্ষের নাম ওঠেনি। যাঁদের নাম ওঠেনি তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা সব থেকে বেশি। আমার নিজের বাড়ি কাছাড় অঞ্চলে। আমাকেও বার কয়েক ডেকে পাঠানো হয়েছে। আমি নিজের অঞ্চলে থেকে ক্ষেত্র সমীক্ষা করেছি।‘’
৪ জুলাই, ২০১৮ সালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ফার্স্ট পোস্ট’- সংস্করণে সুশান্ত তালুকদার অসম নাগরিকপঞ্জির বিষয়ে একটি লেখা লেখেন, সেই লেখায় তিনি অসমের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পরে মহিলাদের সমস্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লেখেন,
‘’Sometimes, it can be the other way round and it turns out in the hearings that the three have ganged up together to deprive the fourth lone person who is the real descendant. As such, during the hearings that were held from February this year onwards, it was found that some persons who had already been included in the part draft were not the true descendants. The state coordinator, however, explained that all those 65,694 excluded due to family tree investigation would be able to appeal for reconsideration of their application or submit new documents for verification during the claims and objection after the publication of the complete draft.
When asked about the exclusion of 48,456 married women from the complete draft, who earlier were included in Part Draft, the NRC State Coordinator explains that at the time of publication of the part draft there was little time left for detail verification as directed by the Supreme Court on 5 December on the panchayat certificates submitted by married women.
Hence, based only on verification of authenticity by issuing authority and field verification results, names of some married women who had submitted such certificates were erroneously included by the field officers. However, the Supreme Court made it clear in the judgment dated 5 December 2017 that the certificates issued by the GP Secretary/Executive Magistrate will be acted upon only to establish a linkage between the holder of such certificate and the person(s) from whom a legacy is being claimed.
The apex court said in the judgement the certificate will be put to such limited use only if the contents of the certificate are found to be established on due and proper enquiry and verification.
Thorough verification of the panchayat certificates submitted by married women could not be taken up before publication of part draft and some such applicants were inadvertently included in the part draft. Exhaustive verification as directed by the Supreme Court was started only in April this year and in respect of these women it has been found that the contents of the certificates submitted to claim that she is the daughter of the person whose legacy data has been used were not established during the verification and therefore their linkages were rejected," Hajela says.
However, after the publication of the complete draft, they would be able to appeal during claim and objection process for re-verification of the certificates or submit additional authentic documents that prove their eligibility.’’
দেবর্ষি চিন্তিত শুধুমাত্র অসমের জনবিন্যাস বা উত্তরপূর্ব ভারতের জনসংখ্যা নিয়ে নয়। তিনি তাঁর ক্ষেত্র সমীক্ষা থেকে উঠে আসা যে ছবি তাঁর বইয়ে এঁকেছেন সেখান থেকে আরও বলেন, ‘’আসামে ৬টি বন্দিশিবির রয়েছে। যেগুলিকে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ বলা হচ্ছে। তালিকায় নাম নেই এমন কিছু মানুষকে এইসব বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে। আসামের ৬টি জেলকে বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যাদের নাম ৩১ ডিসেম্বরের পরেও উঠবে না তাঁদের দেশ থেকে চলে যেতে হবে না। ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’- এ রাখা হবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে। এইসব নাগরিকদের ভোটের অধিকার থাকবে না। জমি কিনতে পারবে না। ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অনেকটা মেক্সিকো থেকে আসা অবৈধ নাগরিকদের বিষয়ে আমেরিকা সরকার যেটা করে থাকে। ২০১৬ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে সংযোজনী হিসাবে একটি বিল এনেছে এনডিএ সরকার। এই বিল পাশ হয়ে আইন হিসাবে আসলে আসামের নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে কী হতে পারে?’’
দেবর্ষি আগামী দিনের ভয়াবহ এক ছবির কথা আমাদের ভাবতে বলছেন। তবে তিনি এটাও বলছেন, ‘’সীমান্ত ভেঙে ফেলা যাবে। অথবা আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনও সীমান্ত থাকবে না। আমি এখনই আকাশকুসুম এই স্বপ্নবিলাসিতায় থাকতে চাইছি না। সেইদিনের কথা সুদূরপ্রসারি সময়ের অপেক্ষায় তুলে রাখা ভালো। তবে ভোট রাজনীতির জন্য গরিব এবং সাধারণ অশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষের পাশে আমাদের থাকতেই হবে। সেখানে নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বলে কিছু হয় না। হতে পারে না‘’
ভারতের বৈধ নাগরিক হিসাবে আমাদের এই কথা বলতে হবে অসমের ২০১৮ সালের নাগরিকপঞ্জি যেন আমাদের দেশে তথাকথিত এক অভিশপ্ত দিন ডেকে না আনে। সাধারণ মানুষ, ভারতের নাগরিক সমাজকে সামনে এগিয়ে আস্তে হবে। মানবিক সমাধান কী হতে পারে এটা ঠিক করতে। এখনও অনেকটা সময় আছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে দেশের বিদ্বৎ সমাজ সেমিনার ডাকুক। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আলোচনা হোক। কেন্দ্রীয় সরকার আরও আলোচনায় যাক। লোকসভা, রাজ্যসভায় বিরোধীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুক। সমাধান বেরিয়ে আসবেই। ভারতের মতো উন্নত গণতান্ত্রিক একটি দেশ মানবিক সমাধান ঠিক খুঁজে নিতে পারবে বলেই মনে হয়।
No comments:
Post a Comment