Wednesday, 4 July 2018

রাজ্যের আয়নায় বাংলার মুখ



দীপেন্দু চৌধুরী  
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। কেন যেন বলতে ইচ্ছে যায় ‘সাতটি ভাই পাহারা দেয় পারুল বোন আমার’। ২০১১ সালের পর থেকে অনেক বার শুনতে হয়েছে এই সরকার  ছ’ মাসের বেশি টিকবে না। পরে হয় এই ‘টার্ম’ শেষ হলেই তৃণমূল কংগ্রেস আর সরকার গঠন করতে পারবে না। সারদা, রোজভ্যালি সহ বিভিন্ন বেসরকারি লাভজনক সংস্থায় দলের নেতা কর্মীদের নামে মামলা চলছে। অতএব হত ইতি গজ। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে সামনে এল ‘নারদ তদন্ত’-এর ভিডিও ফুটেজ। তৃণমূল নেত্রী বললেন ২৯৪ আসনে আমাকে পাহারা দিন। আমাকে ভোট দিন। সাফল্য এল। ঠাকুমার রূপকথার গল্পের মত বলতে হয় ‘সাতটি গ্রাম পাহারা দেয় পারুল বোন আমার’না এরপরেও থামল না। সামন্ত প্রভুদের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত নেতাদের তথাকথিত গোষ্ঠী আওয়াজ তুললেন এই সরকার সাত বছরের বেশি টিঁকবে না।
 প্রণববাবু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব (২০১২) নিলেই এই সরকার ফেলে দেবে। এমন একটা ধারণা মানুষের মনে গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। আমরা কলাম লিখিয়েরা বিষয়টা সামনে আনতে চেষ্টা করেছিলাম। নিরপেক্ষভাবে। আজও এই কলাম লিখতে চাইছি নিরপেক্ষ ‘কি-বোর্ড’-এর আলতো সতর্ক ছোঁয়ায়। যদি পিছন থেকে আলোচনায় যাই, তবে দেখব ২০১১ সালের জুন মাস থেকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ধরলেও এক বছর হয়। কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেসের জোট সরকার এর পরেও টিকে ছিল। ‘আইন আইনের পথে চলবে’ এই আপ্তবাক্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেক মূল্য চোকাতে হয়েছে। সব মামলা এখনও মিটে যায়নি। বিভিন সময়ে মন্ত্রী বদল করে সরকার আজও চলছে। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় দফায় নতুন কিছু মুখ রাজ্য মন্ত্রিসভায়ে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘সাতটি ভাই পাহারা দেয় পারুল বোন আমার’। এই প্রসঙ্গে বলতে হয় বিরোধীদলের কয়েকজন নতুন নেতা পুরনো ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে ‘ভারতকে’ বিশ্বকাপের ফুটবলের সেমিফাইনালে দেখতে চাইছিলেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে দীর্ঘকালীন একটা প্রস্তুতি লাগে। যেমন ধরা যাক স্কুল পরিচালন কমিটিতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা। সমবায় সমিতি, সমবায় ব্যাঙ্ক সহ একাধিক গ্রামীণ স্থানীয় প্রশাসনে আগে সাফল্য পেতে হয়। তারপর আছে গ্রামপঞ্চায়েতের ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা। এবং রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা।  ২০১৮ সালের আইনি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগের ঝামেলা মিটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বহাল তবিয়তে রাজ্যের শাসন পরিচালনায় রয়ে গেল। না আমি তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে ‘আমেরিকার তামাক’ খেয়ে এই লেখা লিখছি না। অথবা তৃণমূল কংগ্রেস দলে ‘বামপন্থী স্রোত’-এর জলে গলা ডুবিয়েও এই লেখা লিখতে বসিনি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘নীল-সাদা’ ব্যানার নিয়ে ছুটতে ছুটতেও আমাদের কলাম লেখা নয়। বন্ধু ভাবতে হয়, না ভাবলে সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হয়। আমাদের কথা নয়। সময়ের এবং অসময়ের বিদ্দজ্জনেরা এই কথা বলে থাকেন।           
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাজের বিষয়ে সুলুক সন্ধান করলে সাফল্য এবং ব্যর্থতার নজির আমরা দেখতে পাব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের চেয়ারে বসে একটি কর্পোরেট সংস্থার সি ই ও হিসেবে রাজ্য সরকার পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন এবং করেছেন। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় বিভিন্ন জেলা সদরে প্রশাসনিক বৈঠক। এবং প্রতিটি দপ্তরের কাজ করার ভিত্তিতে নম্বর প্রথা চালু করা।
তৃণমূলের একটি জেলার প্রথমসারির নেতা বলেছেন ‘উন্নয়ন’ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা কতটা সত্যি? আলোচকরা আলোচনা করছে। আমরাও দেখি। রাজ্যের উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে খবর ২৫ জুন বণিকসভা বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। ওই আলোচনাসভার বিষয় ছিল ‘কৃষক ও বাণিজ্যিক সংস্থার চুক্তি’। ওই আলোচনা সভায় উদ্যানমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা জানান, চাষির হাতে প্রযুক্তি বা পুঁজি কোনোটাই নেই। ঠিক দামে ফসল বিকোবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। এই অবস্থায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা এবং রফতানিকারী সংস্থা এক সঙ্গে কৃষকের সঙ্গে হাত মেলায় তবেই কৃষিপণ্যের ব্যবসা বাড়বে। মন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘’কৃষকদের নিয়ে ছোট ছোট কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থা গড়া হয়েছে। আমরা চাইছি কৃষকদের এই সংস্থাগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি চুক্তি করুক। সংস্থাগুলির চাহিদামাফিক চাষিরা পণ্য উৎপাদন করবেন। সংস্থাগুলি বাজারদরে সেই ফসল কিনে নেবে।‘’
আরও একটি খবর, সবুজ পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নতুন কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় সেই বিষয়ে খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে গড়ে উঠবে ‘ইন্দো জার্মান সহযোগী গবেষণাকেন্দ্র’। ২৫ জুন এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন আইআইটি কতৃপক্ষ। এক সপ্তাহ আগে জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খড়গপুর আইআইটির মউ সই হয়। আইআইটি সূত্রে আরও খবর, জার্মানির অর্থ সাহায্যে চলবে এই গবেষণা কেন্দ্র। জার্মানির কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে ভারতের সফটওয়্যার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে লাগিয়ে রাজ্যের ভবিষ্যৎ পরিবহণ ব্যবস্থার নতুন পরিকল্পনার রূপরেখা গড়ে তুলবে যৌথ এই উদ্যোগ।
গুজরাট বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সেন্ট্রাল ব্যুরো অব হেলথ ইন্টেলিজেন্স’-এর এক রিপোর্ট আমাদের সামনে তুলে ধরেছে একটি ছবি। এই রিপোটে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে হাসপাতালে  চিকিৎসা বাবদ যত টাকা খরচ করতে হয় দেশের অন্যান্য রাজ্যে সেই খরচ অনেক বেশি। রাজগুলির নাম এবং খরচ উল্লেখ করা যাক। গুজরাতের গ্রামীণ হাসপাতালে খরচ ৩২৫০৩ টাকা, গোয়ায় খরচ ৩২২১১ টাকা, রাজস্থান ২৯৭৭৯ টাকা, মণিপুর ২২৪৮৬ টাকা এবং আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ১০৪৭৬ টাকা। তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, অসম, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের থেকেও পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালে ভর্তির খরচ কম। এবং ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে সারা দেশের মধ্যে গুজরাতের গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য খরচ সব থেকে বেশি করতে হয়।     
আমরা এতক্ষণ ‘রাজ্যের আয়নায় বাংলার মুখ’ দেখলাম। দ্বিতীয় পর্বে চলে যেতে যাই রাজনীতির ময়দানে। নাম দেওয়া যাক.........
 বাংলার আয়নায় রাজ্যের মুখ
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই ‘ভোট বাংলা’-র দামামা বেজে গেছে। কিছুদিন আগে প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বলছিলেন, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত, ২০১৯ সালে লোকসভা, ২০২০ সালে কলকাতা পুরসভা এবং ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা। বিজেপি উত্তর পূর্ব ভারতে আসামে সরকার গঠন করার পর ত্রিপুরায় সরকার গঠন করেছে। কংগ্রেস, তৃণমুল কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা কোণঠাসা। বাংলা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গ ঘুড়ে গেলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দু’দিনের রাজ্য সফরে এসেছিলেন তিনি। ২৭ জুন কলকাতায় এসেই তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন মমতাকে হারাতে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। সিপিএমকে হারাতে মমতা যে লড়াই করেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে হঠাতে সেই রকম বিশ্বাসযোগ্য লড়াই রাজ্য নেতৃত্ব করতে পারছে কি? প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেছেন অমিত শাহ। এবারের সফরে বিজেপি সভাপতি রাজ্যের ১৫ জন নেতার মধ্যে ৩৭টি সাংঠনিক জেলার কাজ ভাগ করে দিয়ে এখন থেকেই কাজে নেমে পড়ার পরামর্শ দিয়ে গেছেন তিনি। অন্তত ২২টি আসন জেতার জন্য সব রকমের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। ২৮ জুন বিজেপি সভাপতি পুরুলিয়ার সভায় বলেন, ‘’এত কিছুর পরেও ৬০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির পতাকা উড়ছে। ২০১৪ সালে আমরা ছিলাম চতুর্থ দল। পঞ্চায়েত ভোটের পর এখন আমরা দ্বিতীয়। ২০১৯ সালে ২২টার বেশি আসন জিতে আমরা এই রাজ্যে এক নম্বর হব।‘’
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের এই বক্তব্যকে একদমই খাটো করে দেখছে না তৃণমূল নেতৃত্ব। ওইদিনই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘’বাংলার বাইরে থেকে এসে এক জন এখানে সরকার এবং জননেত্রী সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে বাংলার মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না’’
ভোট বাংলার দামামা বেজে গিয়েছে রথের দড়িতে টান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস পুরুলিয়ার শিমুলিয়া মাঠে পাল্টাসভা করে। এদিনের সভায় রাজ্য মন্ত্রিসভার একঝাঁক মন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সেদিনের মঞ্চে হাজির ছিলেনশশী পাঁজা বলেন, ‘’মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের দল ৪২টি আসনেই জিতবে। এক ইঞ্চি জমি ছাড়া হবে না।‘’ ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘’ওরা ঝাড়খন্ডের মাওবাদীদের টাকা দিয়ে বাংলায় এনে ভোট করিয়েছে। যখন টাকা পাচ্ছে না, তখন পুরুলিয়ায় ঢুকে খুন করছে। নাম দিচ্ছে তৃণমূলের।‘’
রাজ্যে কংগ্রেস কি করছে? কংগ্রেস সূত্রে খবর ৬ জুলাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধি পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাহুল গাঁধি লোকসভা ভোটের আগে আবার একবার রাজ্যের নেতাদের মতামত নেওয়ার কাজ শুরু করে দিলেন। কারণ সম্প্রতি এআইসিসি আগামী লোকসভা ভোটে জোট মজবুত করতে যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সেই দলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। বামদের সঙ্গে ঘর করতে অভ্যস্ত বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই মুহূর্তে কি ভাবছে? সভাপতি অধীর চৌধুরী এআইসিসিকে প্রস্তাব দিয়েছেন, রাজ্যের প্রাক্তন এবং বর্তমান সাংসদ, বিধায়ক, প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি এবং প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাদের বৈঠকে ডাকা হোক। এই তালিকায় আইনজীবী এবং তাত্ত্বিকনেতা অরুনাভ ঘোষ, বর্ষীয়ান তাত্ত্বিকনেতা দেবপ্রসাদ রায় সহ অন্যান্যদের নাম আছেতো? ডাকা হবে তাঁদের? বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেসের গোষ্ঠী বিন্যাস কি বলে? বামদের সঙ্গে ঘর করতে অভ্যস্ত বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস কি করবে? সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, অধীরবাবু বলেছেন, পরিবর্তনের হাওয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস যত আসন জিতেছিল, পরে বামেদের সঙ্গে গিয়ে তার চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে।‘’    
রাজ্যের জোট সমীকরণ যতই জটিল হোক ২০০৯ সালে প্রদেশ কংগ্রেসে একজন ‘সোনার ঝিনুক’-এ দুধ খাওয়া নেতার উত্থান হয়েছে। যাকে বাংলা প্রবাদে ‘তোলা দুধের সন্তান’ বলা হয়। মাত্র ৯ বছর আগে রাজনীতিতে অভিষেক হওয়া এইরকম একজন মাঝ বয়সী নেতার মূল্যবোধ নিয়ে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা সন্দীহান। কিন্তু পারিবারের আকাশচুম্বী আর্থিক স্বচ্ছলতাকে ভয় পাচ্ছে অনেকে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস দলটাকে সাইন বোর্ডে পরিণত করার ক্ষেত্রে ওই নেতাটি এবং তার গোষ্ঠীর সদস্যরা সব রকমের কলকাঠি নেড়ে চলেছেন। যদিও রাজ্যে যারা কংগ্রেস পরিবারের সদস্য তাঁরা রাহুল গাঁধির নেতৃত্বে ভরসা করছেন বলেই খবর আছে। তরুণ বাংলার কথা ভেবেই কংগ্রেস হাইকমান্ড সাংসদ গৌরব গগৈকে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের সময় বসিরহাটে যেসব কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে তিনি সম্প্রতি দেখা করেছেন।
রাজত্ব গেলেও রাজ্যে বামেদের একদম বাদ দিলে আখেরে ঠকতে হবে রাজ্যবাসীকে। সমস্ত বিতর্ক মেনে নিয়েই বামেরা ভাবছে চারদশকেরও বেশি পুরনো বামফ্রন্টের চেনা কাঠাম নিয়ে আর কি ফিরে আসা সম্ভব? ফিরতে চাইলেই কি ফেরা যায়? বামফ্রন্টের ভিতরে নিজেরা আত্মসমীক্ষা করেছেন। আত্মসমালোচনা করেছেন। বামেরা অনেকদিন আগে থেকেই বিপিএমও নামে একটি মঞ্চ তৈরি করেছে। এই মঞ্চে সামিল হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি। পঞ্চায়েত ভোটের পরে বামেদের তৃতীয় স্থানে নেমে আসাটা মেনে নিতে পারছে না ফ্রন্টের নেতারা। তাই দাবি উঠেছে আর ৪০ বছরের বেশী পুরনো মঞ্চ বামফ্রন্ট নয়। লোকসভা ভোটের আগে গড়ে তোলা হোক ‘বাম সংহতি কমিটি’। পরে বামফ্রন্ট ভেঙ্গে গড়ে উঠুক ‘বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’।
সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী আশাবাদী। দলের ব্যর্থতার মধ্যেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। সংগঠনের কাজে রাজ্য নেতৃত্বের আরও স্বক্রিয় হওয়ার কথা বলছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সম্প্রতি বলেছেন, ‘’পুরনো নেতারা বলতেন, গরুর গাড়ির চাকা কাদায় আটকে গেলে শুধু গরুকে খোঁচা মারলে হয় না। গাড়োয়ানকে নেমে কাঁধ দিয়ে চাকা ঠেলতে হয়। এই কাজ উপরের কমিটির নেতাদেরই করতে হবে।‘’

রথ যাত্রার পরে উল্টোরথেরও মেলা হয়। ২০১৯ বলে দেবে উল্টো রথের মেলায় মেলা দেখা এবং কলা বেচা দুটো একসঙ্গে সম্ভব কিনা? এই রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হবে? না ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের মত আগামী লোকসভা ভোটেও কংগ্রেস এবং তৃণমূলকংগ্রেস রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে হাত ধরাধরি করে হাটবে? সময়ের ঘণ্টা শোনার অপেক্ষায় থাকলাম। দু’দিন আগে শোস্যাল মিডিয়ায় একটি লেখা পড়লাম। বিদেশী একজন ইংরেজিতে যেটা লিখেছিলেন তার বাংলায় তর্জমা করলে যেটা হয়, ‘পাভলভ বারের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। সেই সময় ঘণ্টা বাজল। পাভলভ কুকুরকে খেতে দিতে ভুলে গেলেন। তারপর?’                                                               

No comments:

Post a Comment