দীপেন্দু চৌধুরী
কলকাতা শহরে কুকুরের সঙ্গে ‘যৌন সংসর্গ’ (সেক্স) করার অপরাধে গ্রেপ্তার এক
যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। বরিষার একটি
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার প্রান্তিক চ্যাটার্জী বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন। তার
নিজের ভাষায় ‘’Mahato
tied the dog’s mouth a rope. The dog’s mouth was tied.’’
‘’আমি যখন হাতেনাতে ধরি তখন কুকুরটির মুখ বাঁধা ছিল।‘’ প্রান্তিকবাবু বলেন।
কমলেশ মাহাতো নামে অভিযুক্ত যুবকটি বিহারের বাসিন্দা। কলকাতায়
শ্রমিকের কাজ করে একটি পেপার মিলে। পুলিশ সূত্রে খবর সে থাকে লেকটাউন পাতিপুকুর
অঞ্চলের শ্রমিক আবাসনে। প্রান্তিক চ্যাটার্জীর এক বন্ধু ১৫ জুলাই রাত্রি
৯টার সময়ে ঘটনাটি ঘটতে দেখে। প্রান্তিক বাবুর উদ্যোগে কুকুরটিকে বেলগাছিয়া পশু
হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের ডাক্তার মাদি কুকুরটির শারিরীক পরীক্ষা করেন। এবং
কুকুরটির যে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে সেই রিপোর্ট অভিযোগকারী প্রান্তিক চ্যাটার্জীর
হাতে তুলে দেন।
ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারায় (A case under
section 377 [vouluntarily having carnal intercourse against the order of
nature] was registered.) অভিযোগ জানান হয়। পুলিশ সূত্রে খবর কমলেশ তার
জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে সে আগেও মাদি কুকুরের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছে। পুলিশ
সূত্রে আরও খবর, তাঁকে ওইদিন বারাসত কোর্টে তুললে তার দোষ প্রমাণিত হয়। পুলিশ
জানায় কমলেশ বিবাহিত। তার তিনটে সন্তান আছে। অভিযুক্ত যুবকটি পুলিশের কাছে বলেছে
সে একাধিকবার রাস্তার মাদি কুকুরের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছে। পুলিশের অনুসন্ধানে
কমলেশের প্রতিবেশিরাও বলেছে যে সে আগেও এই ধরণের কাজ করেছে। কমলেশের দোষ প্রমান
হলে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে।
কি বিচিত্র এই দেশ! কুকুরটি যখন
তার থেকে উন্নত প্রাণী মানুষের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছিল তখন তার মুখ বাঁধা ছিল।
তদন্তে এমনটা উঠে এসেছে। তার মানে কুকুরটা চিৎকার করতে পারেনি। কি নির্মম! মানুষ
কি নির্মম হতে পারে! একটি মনুষ্যেতর প্রাণীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ? কতটা বিকারগ্রস্ত
হলে এই কাজ করা সম্ভব? প্রশ্ন উঠতেই পারে। কমলেশ নামে যুবকটি বিবাহিত। তিনটে
সন্তান আছে। তার মানে সে সামাজিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তবু সে এই কাজ করতে পারল?
তার রুচিতে আটকাল না?
ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে লেখার জন্য সমাজ বিঞ্জানীরা আছেন। এই ধরণের
অকালপক্ক বাতুলতা দেখাতে চাওয়ার সাহস কতজন অর্জন করতে পারে? কিন্তু সহজ সরল সাধারণ
বুদ্ধিতে এটুকু আমরা জানি যে বিবর্তনের সময়কালকে মনে রেখেও যুগ যুগান্তধরে বিভিন্ন
কর্মকান্ডের মানুষই একমাত্র প্রাণী যে শুধুমাত্র ইতিহাস সৃষ্টির বা ইতিহাসের উপাদন
নয়। ইতিহাস লিখে রাখার, ইতিহাস নির্মাণের অন্যতম কারিগর। বলতে চাইছি অন্য প্রাণীর মতো মানুষও প্রকৃতির নিয়মকানুন মানতে বাধ্য। আবার
এটাও ঠিক সেই সব নিয়মকানুনকে নিজের তথা সমাজ বিকাশের প্রয়োজনে প্রয়োগ করার ক্ষমতাও
মানুষের থাকে। মানুষ এটা পারে কারণ প্রাজাতিকভাবেই সে উন্নত মস্তিকের অধিকারী।
জীবজগতে যেটাকে তুলনাহীন বলা হয়ে থাকে। উন্নত মস্তিস্ক হওয়ার কারণে মানুষ উদ্ভাবনী
শক্তির অমিতধিকারী। পাশাপাশি আত্মসচেতনতার কারণে আত্মনির্মাণেও আলোচ্য প্রায়োগিক
শক্তি মানুষ কাজে লাগাতে পারে।
কিন্তু সেই আদিম বন্যযুগ থেকে আজও মানুষের
মনুষ্যত্বই নিজেদের কাজের ভুল ঠিক নিয়ন্ত্রণ করছে। মনুষ্যত্বের বহুমুখী বিকাশকেও
আটকে দিতে চায় মানুষ নামক উন্নত প্রজাতির প্রাণী। ঈর্ষা, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, লোভ, ভয়, মানসিক আলস্য
আমাদের সহজাত প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আমাদের সামাজিক সম্পর্ক, সহজাত
অনুসন্ধিৎসা, যুক্তিবাদী মন, বিবেক, প্রেম, মানুষকে সুশৃঙ্খল বন্ধনে বেঁধে রাখে।
সামাজিক সুরক্ষার চাবিকাঠি হিসেবে এই উন্নত চেতনা আমাদের সাহায্য করে। পাশাপাশি উল্টো
দিকটাও রয়েছে, উন্নত প্রাণী হিসেবে মানুষ সহজাত বোধ বুদ্ধি নিয়ে সুস্থ এবং গঠনমূলক
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। সেই সুস্থ প্রতিযোগিতা একটা সময় দ্বেষ, ঘৃণা, বিদ্বেষ
গড়ে তুলতে পরিসর ছেড়ে দেয়। মানুষ নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখতে সামাজিক বন্ধন
ছিঁড়ে বেড়িয়ে যায়। শুরু হয় বিবেকহীনতার পর্ব যেটাকে বলা হয়ে থাকে ব্যক্তি সংঘর্ষ।
এটাই বাড়তে বাড়তে সামাজিক মূল্যবোধ ভাঙতে থাকে। সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানের সর্বনাশ
অনিবার্য হতে থাকে।
আড়াইশো শব্দের এই প্রেক্ষাপট নির্মাণ করছে একজন
মানুষ। করছে নয় করতে বাধ্য হচ্ছে। মাদি কুকুরকে ধর্ষণের খবরটি আমাদের কারও কারও
নজরে পড়ে থাকতে পারে। আমাদের রাজ্যে একটি কুকুরকে ধর্ষণ করেছে একটি যুবক! অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। উন্নত প্রাণীর একজন
জীব তার থেকে হীনতর এক জীবের সঙ্গে যৌনসঙ্গ করে আনন্দ লাভ করছে? আনন্দ উপভোগ করছে?
এ কোন সভ্যতায় আমরা বাস করছি? মানুষের রুচি কতটা নিম্নগামী হলে এই ঘটনা ঘটতে পারে?
সামাজিক বন্ধনের এ কোন অবক্ষয়! সঙ্গমের সময়ে সেই কুকুরটির কী অবস্থা হয়েছিল? অবলা
প্রাণীটি নিজে কী কিছু বলতে পারবে? তার নিজের সম্প্রদায়ের ভাষায়? কুকুরের আইনজীবীর দায়িত্ব নিয়ে সেই ব্যখ্যা কতটা
প্রয়োজন আছে সেটা ভারতীয় আইন বলবে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে। এবং অভিযুক্ত ছেলেটি দোষ স্বীকার করেছে। সে নাকি আগেও এই ধরণের ঘটনা
ঘটিয়েছে। ‘ঘটনা’ এবং ‘ঘটিয়েছে’ এই দু’টি শব্দ আমাদের সামনে আছড়ে পড়ল না? আমরা কী
সুস্থ সামাজিক উন্নতপ্রাণী হিসেবে এটা ভাবতে পারি? আমাদের মনন, চৈতন্য, বিবেক,
শুভবোধ এসব কোথায় হারিয়ে গেলে একটি পশুর সঙ্গে যৌনক্রীয়ায় মাততে পারি? প্রশ্ন কী
তোলা যায় না যে ছেলেটি ‘যৌনকর্মী’-দের পাড়া চেনে না? না ওই পাড়ায় যাওয়ার মতো ওর
আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই? এটা যারা তদন্ত করছেন তাঁরা বলতে পারবেন। আবারও প্রশ্ন তোলা
যায় ছেলেটি বিবাহিত। ওর তিনটে সন্তান আছে। তবু? তবু! এই ভাবে? এই ভাবে? সমাজ বলে
কি সে কিছু চেনে না? না চিনতে চায় না? মনঃস্তত্ববিদ, সমাজ বিঞ্জানীরা এই ঘটনার
ব্যখ্যা দিতে পারবেন। এটা কোন ধরণের মানসিক বিকৃতি? বিকৃতি বাড়তে বাড়তে আরও কত
নীচে আমদের নামতে হবে? কে বলে দেবে? কার কাছে প্রশ্ন করব?
খুব সম্ভবত নব্বইয়ের দশকে বহুল প্রচারিত
প্রথমসারির একটি সাপ্তাহিকের শারদীয় সংখ্যায় একটি উপন্যাস লিখেছিলেন বর্তমান সময়ের
একজন লেখক। সেই উপন্যাসে ছাগলের সঙ্গে একজনের সঙ্গমের কথা উল্লেখ করেছিলেন সেই লেখক।
কয়েক দশক আগে প্রচার মাধ্যমের এতটা রমরমা ছিল না। ফলে গ্রাম-গঞ্জের এই ধরণের খবর
খুব একটা বাইরে আসার সুযোগও ছিল না। উপন্যাসটি প্রকাশের পরে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট
আলোচনা হয়। বিভিন্ন ধরণের মত উঠে আসে। যদিও উন্নত প্রাণী হিসেবে মানুষ এই বিষয়টির
চর্চা এক সময়ে ছেড়ে দেয়। কেউ কেউ ‘বটতলার সাহিত্য’ বলে উপন্যাসটাকে দেগে দিতে
চেয়েছিল। কিন্তু লেখক তার অভিঞ্জতার মানদণ্ডে একটা খন্ডচিত্র আমাদের সামনে যথেষ্ট
মুন্সিয়ানার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন।
বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে সবার নজরে পড়েনি। কয়েকজনকে
বলার পরে তাঁরা সোচ্চারে চিৎকার করে ওঠে। কেউ কেউ বলে, একটা অবলা, নিরীহ, নির্জীব
পশুর সঙ্গে কেউ এই ধরণের ব্যবহার করতে পারে? কতটা মানসিক বিকৃতির শিকার হলে এই কাজ
করা সম্ভব? ছেলেটি কী ‘ড্রাগস’ নেয়? তাঁরা
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফিরে আসে বর্তমান ভারতে শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনায়। তাঁদের সঙ্গে
আলোচনায় উঠে আসে আরও একটি প্রসঙ্গ ‘ছেলেধরা গুজব’-এ মৃত্যু। ভারতে ছেলেধরার গুজবে
আক্রান্তের সংখ্যা কত? বিভিন্ন রাজ্যের পরিসংখ্যান যোগ করলে দাঁড়ায় এ পর্যন্ত ৭০
জন মানুষ গণপ্রহারে আক্রান্ত। সম্প্রতি হায়দরাবাদে একজন ট্রান্সজেন্ডার খুন হওয়ার
পর পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে গণপিটুনিতে গত ১৮ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। ভারতে
গণপিটুনির ঘটনায় সুপ্রীমকোর্ট উদ্বিগ্ন। ১৭ জুলাই দেশের উচ্চ আদালত গণপিটুনির
ঘটনাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছে। এবং এই ঘটনার মোকাবিলায় সংসদকে বিশেষ আইন আনার
পরামর্শ দিয়েছে। ২১ জুলাই কলকাতায় শহীদ দিবসের জনসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘’গণপিটুনিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি
হচ্ছে।‘’ লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে ২৩ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ
বিবৃতি দিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন। গণপিটুনির ঘটনায় দোষীদের
শাস্তির দাবি জানান কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম
বলেন, ‘’গণপিটুনির নায়কদের মালা প্রালে ওই অবস্থাই হবে।‘’
শিশু অপহরণ এবং শিশু ধর্ষণ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট
সম্প্রতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশন্যাল ক্রাইম ব্যুরো (এনসিআরবি)। ওই রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য থেকে
জানা যাচ্ছে সারা দেশে অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের তুলনায় শিশু অপহরণের হার অনেক
বেড়ে গেছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ এই পাঁচ বছরে শিশু অপহরণের হার দ্বিগুণ হারে
বেড়েছে। সাধারণ ক্ষেত্রের অপহরণের হার বাড়লেও এনসিআরবি-র তথ্য বলছে শিশু অপহরণের
হার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০০৬ সালে শিশু অপহরণের হার ছিল ২৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে ছিল
৬০ শতাংশ। বৃদ্ধির হার উল্কার গতিতে বাড়ছে। ২০১৮ সালের এনসিআরবি-র সাম্প্রতিক এই
তথ্য ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চলমান ছবিটা আমাদের সামনে আরও প্রকটভাবে তুলে ধরেছে। রিপোর্টে
আছে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশুদের উপর ধর্ষণের ঘটনা ৮২ শতাংশ বেড়েছে। এই
ঘটনায় আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। কিন্তু উন্নত গণতন্ত্রের দেশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা দেখুন। ২০ জুলাই, ২০১৮ ইউএসটুডে সূত্রে খবর, মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রাজ্যে ১০০-এর বেশী ছাত্র যৌন নিগ্রহের শিকার। তাঁদের
অভিযোগের আঙ্গুল জনৈক প্রাক্তন টিম ডাক্তারের বিরুদ্ধে। উন্নত মানবিক এবং
গণতন্ত্রের দেশেও এই অভিঞ্জতার খবরের সঙ্গে আমাদের আলাপ করিয়ে দেয় মার্কিন সংবাদ
মাধ্যম।
শুধুমাত্র শিশু অপহরণ, ধর্ষণ নয়। সম্প্রতি কলকাতার
উপকন্ঠে একজন মৃত শিশুর চোখ উপড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে কলকাতা শহরের একটি সরকারী
হাসপাতালে। এই খবরও আমরা সংবাদ মাধ্যম এবং এনজিও সূত্রে পাই। সংবাদ
সংস্থা সূত্রে খবর, শিশুটির পরিবার ৮ জুলাই, ২০১৮ বেলঘড়িয়া থানায় এফআইআর করে। ১২
জুলাই ভবানীপুর থানাতেও একটি অভিযোগ দায়ের করেন তারা। তাঁদের অভিযোগ হাসপাতালে
শিশুটির মৃত্যুর পরে তাঁদের হাতে যখন দেহ তুলে দেওয়া হয় তখন শিশুটির দু’চোখে মোটা,
গোল ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। এই অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার জন্য কাকে বা কাদের দায়ী করবেন? এটাও কী মানবতার
অবক্ষয় নয়। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের অধঃপতনের ইঙ্গিত নয়? কার কাছে কৈফিয়ৎ চাইবেন? কে কাকে
উত্তর দেবে? উন্নত মননের, উন্নত চেতনার মানুষের অঞ্জাতসারেই কী এইসব ঘটনা ঘটছে?
দেশের বিবেকমান মানুষ আছেন, আইন আছে, আদালত আছে, প্রশাসন আছে তবু মানুষ এত নীচে
নামছে? কেন?
সভ্যতা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির বিকাশ
হয়। একুশ শতাব্দীতে আমরা পেয়েছি ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ নামক এক শক্তিশালী মাধ্যম। যে
মাধ্যমে ‘ ‘পর্ণগ্রাফি’-র যেমন রমরমা পাশাপাশি দেখলে প্রাথমিক শিক্ষার হার কতটা
বেড়েছে? সমাজ কতটা সচেতন হয়েছে? কেন কমবয়সী মেয়েরা আজ আক্রান্ত? আধুনিক প্রযুক্তির
যেমন আশীর্বাদ হিসেবে আমাদের কাছে আসে আবার অভিশাপের দিকটাও থাকে। একটি উন্নত
অর্থনীতির দেশে ‘স্মার্টফোন’ কর্মক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন দাবি করে, উন্নতশীল
রাষ্ট্রে কি সেই একই দাবি করা যায়? অনুন্নত দেশের অবস্থা কী হতে পারে? অথচ কম
দামের সস্তার ‘স্মার্টফোন’ বাজারে সহজলভ্য। ইন্টারনেট সহযোগে বিভিন্ন পোর্টালের
মাধ্যমে কমবয়সী ছেলেমেয়েরা খবরের মোড়কে পণ্য-সংস্কৃতি তথা পর্ণ-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত
হচ্ছে।
প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং বর্তমানে বাংলা
সাহিত্য অ্যাকডেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে...’ নামে
তার একটি বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটি লিখেছেন নারী নিগ্রহ এবং কাপুরুষতা বিষয়ে। ‘এরকম
ঘটেই থাকে’ শিরোনামে তিনি লিখছেন, ‘’ইতিহাসের যত পিছনেই হঠি না কেন, পৃথিবীর যে
দেশেই যাই, তাপসীরা ছিল, থাকে। এ বড় দুর্ভাগ্যের এবং কলঙ্কের ইতিহাস। আর বর্তমান
ইঙ্গিত দেয়, তাপসীরা শুধু ছিল নয়, তাপসীরা থাকবে। যে তন্ত্রের ধব্জাধারীই থাকুন না
কেন শাসনপ্রক্রিয়ার কান্ডারী, নারীর এ অপমান সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে চলবেই।‘’
(পৃষ্ঠা- ১)
শাঁওলীদি
আরও লিখছেন ‘’.........কাপুরুষদের পৌরুষ দেখাবার সবচেয়ে প্রশস্ত জায়গা যে সত্যিই
এইটা তা বিশ্বসুদ্ধ লোক জানেন এবং মানেন। আর সেইমতই ব্যবহার করে থাকেন জীবনে।
ইবসেন কবে যেন ডাঃ স্টকমানকে দিয়ে বলিয়েছিলেন, ‘’এ দেশে পুরুষ নেই একটাও, সব
কাপুরুষ!’’ তাঁরা এস্টাব্লিশমেন্ট-এর বিপক্ষে গিয়ে ডাক্তারের বৈঞ্জানিক আবিষ্কারের
পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমর্থন করতে ভয় পেয়েছিল। আমার কেমন ধারণা হয়, যারা এইরকম
পদক্ষেপ নিতে ভয় পান, সাহসে ভর করে সত্যি কথা বলতে ভয় পান, তাঁদেরই নিজ নিজ পৌরুষ
সম্বন্ধে এক অদ্ভুত হীনমন্যতা জন্মায়। আর সেই থেকেই বোধহয় অনেক অস্বাভাবিক মানসিকতা
তৈরি হয়, যা অনেক সময়ে জন্ম দেয় বিকৃতির। মনোবিঞ্জানী বলতে পারবেন এ অনুমান অমূলক
কিনা!’’ (পৃষ্ঠা- ১, প্রকাশক- অর্ঘ, পঞ্চম বৈদিক, ২০০৭)
No comments:
Post a Comment