Wednesday, 28 March 2018

এই বাংলার কাব্যিক জমিতে ফরাসি লেখক

এই বাংলার কাব্যিক জমিতে ফরাসি লেখক: 
বছরটা ‘পরিবর্তন’ শুরুর হওয়ার বছর। ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১। এই শতাব্দীর আগের দশকের উল্লেখিত ছ’টা বছর এই সেদিন পর্যন্ত আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখত। ‘বদলা নয় বদল চাই’। এই স্লোগানের শক্তি আমরা ২০০৬ সালেই বুঝতে পারছিলাম। তারপর হুগলী নদী, সুবর্ণরেখা, দামোদর, হলদি নদী দিয়ে হিমশীতল ঠান্ডা জলের স্রোত বয়ে গেছে। কেউ কেউ বলে রক্ত নদীর উপখ্যান লেখা যায়। সেই পরিবর্তনকে বলতে হবে, অবশ্যই এই শতাব্দীর আমাদের বাংলায় পরিবর্তন। গত শতাব্দীর সাতের দশকে এই বাংলায় একবার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৯৭৭ সালের সেই বদলে যাওয়া সমাজের দর্শন, সমাজনীতি, আর্থসামাজিক কাঠামো, নতুন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং কৃষি অর্থনীতির বিকাশ দেখতে দেখতে আমাদের চুলে পাক ধরল। আমরা একটি গোষ্ঠী তথা একটি দলের আভ্যন্তরীণ মেধা এবং জঙ্গিশক্তি (রেজিমেন্টেশন) সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলাম।
তারপর ওই দলের নীতির ব্যর্থতা অথবা অর্থের প্রাচুর্য আমাদের রাজ্যে এক মাৎস্যন্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। পণ্ডিতজনেরা বলেন এটাই ভবিতব্য। সত্যকে ফাঁকি দিলে সত্যই একদিন ‘টুটি’ চেপে ধতে পারে। কিন্তু আলোচনার স্বার্থে উল্লেখ করতেই হবে ‘কৃষি নির্ভর শিল্প’? না ‘শিল্প নির্ভর কৃষি’? এই শতাব্দীর ফেলে আসা দশকের বিতর্ক ছিল এটাই। সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের শিল্পায়ন কেন্দ্রিক সদিচ্ছা মুখ থুবড়ে পড়ল ‘কৃষ জমি’ অধিগ্রহণ প্রশ্নে। হুগলী নদীর আন্দোলিত স্রোত গিয়ে আছড়ে পড়ল হলদি ঘাটের দু’ই পাড়ে। তথা সারা রাজ্যে, সমস্ত দেশে এবং বিদেশের মাটিতেও ‘নন্দীগ্রাম’ নামক একটি জনপদ আমাদের ‘জমি অধিগ্রহণ’ প্রশ্নে নতুনভাবে ভাবতে শেখালো। বিশ্বায়ন উত্তর বাংলায় নন্দীগ্রাম নামক একটি ছোট্টগ্রাম, গ্রামের মানুষ এই বাংলায় ‘পরিবর্তন’ এনে দিলেন। একটি সূত্র বলছে পশ্চিমবঙ্গের ২০০৫-০৬ আর্থিক বছরে বেকার ছিলেন সাড়ে চৌদ্দ লক্ষ মানুষ। ওই আর্থিক বছরে আরও প্রায় আঠারো লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সময়ের অনুপাতে বেকার ছিলেন। আবার ২০১০ সালে পনেরো থেকে ঊনষাট বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা প্রত্যেক বছর বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রায় তেরো লক্ষ করে।
২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ছিল টাল মাটাল। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পাছিলাম না। ‘আমরা-ওরা’ এই শব্দযুগলের ভুল-ভুলাইয়ায় প্রত্যেকে নিজের আইডেন্টটিটি হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি নিজেও সাংবাদিক হিসাবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কেন্দ্রিক একধিক খবর করেছি। ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ তৎকালীন রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব প্রসাদ সেন আমার কাছে খবর ব্রেক করলেন। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। পরের ইতিহাস আমাদের জানা। ১৪ মার্চ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, অজিত পাঁজা সহ একাধিক আইনজীবির নেতৃত্বে হাইকোর্ট থেকে মহাকরণ পর্যন্ত মিছিল। সেসব খবর আমাকেই করতে হয়েছিল। হাইকোর্ট এবং মহাকরণের দায়িত্বে থাকার সুবাদে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পরে বাংলার হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজে একটাই স্লোগান। ‘তোমার নাম আমার নাম ‘নন্দীগ্রাম-নন্দীগ্রাম’।   
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল কাজ চাই। যে কোনও ধরণের কর্মসংস্থান এবং জীবীকার গ্যারান্টি। এই সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার বিরোধী তথা প্রতিষ্ঠান বিরোধী একটি ফ্রন্ট আমাদের রাজ্যে গড়ে ওঠে। ওই ফ্রন্টে সেসময় এসে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, পুরনো কংগ্রেসী, অতিবামপন্থী কর্মী, নেতা, এবং অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ কয়েকজন অফিসার। ২০১১ সালের সাধারন নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের জোট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এল।  ২০০৮ থেকে কয়েকটা বছর সেই আগুনভেজা, বারুদের গন্ধেভেজা গ্রামের জনপদে ল্যাপটপ, লেখার খাতা, নোটবুক, লাল কালির পেন, কালো ছাতা নিয়ে ঘুরেছেন একজন ভিন্নভাষী পৌঢ়। ভিনদেশের সেই পৌঢ়ের নাম মার্ক হাটজফেল্ড। আমরা এই লেখায় আমাদের প্রিয় ফরাসী লেখককে মার্ক বলে সম্বোধন করব।
২২ মার্চ কলকাতার ‘সম্পর্ক’ নামক প্রকাশনা সংস্থা এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ যৌথভাবে একটি সাহিত্যের আড্ডার আয়োজন করে। আমি আমন্ত্রণ পেয়ে ‘বোকা বোকা’ হয়ে যাই। কারণ আমি কোনদিনই ‘ব্রাহ্মণ গোত্রীয়’, ‘ক্ষত্রীয় গোত্রীয়’ সমাজে সহজ হতে পারি না। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রীয়দের ঘোঁটকে দূর থেকে প্রণাম জানাই। প্রসাদী এবং প্রণামী সহ। বরং ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ খুঁজে পেলে নিজেকে অনেক সহজ মনে হয়। মানবতার উচ্চতা যেমন খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি আন্তরিকতাও স্পর্শকাতর বাঙালিসুলভ অনুভবে গ্রীষ্মের সন্ধ্যে মনে হয়। এই সভ্যতায় বড় ঝালর লাগানো বড় বড় পাঙ্খা না থাকলেও চলে যায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের আতিথিয়াতা নিয়ে কেউ কোনদিন প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? ২২ মার্চ ই-মেল মারফৎ আমন্ত্রণপত্র পাই। ‘Sampark Lit Adda with Mark HarZfeld at Alliance Francaise du Bengale.     
ফরাসী জাতি, ফরাসী দেশ, ফরাসি লেখক, কবি, সঙ্গীতশিল্পী, ছাত্র, শিক্ষক বুদ্ধিজীবী একগাল হাসি নিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার একজন অধ্যাপক বন্ধু বলেন, ‘’ফরাসি রাষ্ট্রবিঞ্জানী মন্টেস্কু রাষ্ট্রীয় দর্শন ব্যাখ্যা করার সময় বেছে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত রাষ্ট্রীয় দর্শন। এই দর্শনের পথরেখায় তিনি দিয়ে গেছেন নতুন তত্ব। আইন প্রণয়ন, প্রশাসন পরিচালনা এবং বিচার ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের এই তিনটি শাখার স্বাতন্ত্রের কথা বলে গেছেন তিনিসেই দর্শনের ধারা আজও আমরা ফরাসী সরকারি অফিসে দেখতে পাই। অভ্যর্থনার ব্যতিক্রমী উদাহারণ।    
সেদিনের সন্ধ্যেটা ছিল সেরকমই। আমি নিজেকে সঙ্কুচিত করে রাখি আমি ছোট থেকে বরাবরই অন্তর্মুখী। আমাকে নিয়ে যত হাসি ঠাট্টা হয় ততটাই আমি উপভোগ করি। বিদ্রুপ হলে আরও মানসিক শক্তি পাই। ভারতীয় সভ্যতার সহিষ্ণু সংস্কৃতি আমাকে এই অধ্যায়ের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। পাথুরে ইটের সভ্যতা চিনে চিনে রেল নাইন টপকে বড় রাস্তায় যেতে শিখেছি। ‘নাগরিক কলকাতা’-য় আমার প্রবেশে অনেক নিষেধ-উপনিষেধ আছে। কারণ নাগরিক সভ্যতার উপবীত আমার নেই। আমার সুন্নত হয়নি। দেশের ব্রাহ্মনী-ময়ূরাক্ষী নদীর ‘বালুকা বেলায়’ মাখা নীল তেলের মেজাজ আমার আজও আছে। আদিবাসী সভ্যতার উগ্র গন্ধের ‘উপত্যকা’ আমার আজও আছে এবং পরেও থাকবে। মহুলরসে আকন্ঠ ভিজিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নীচে বসে তুম্বনীর লাল মোড়ামের মাঠের আড্ডা ছিল আমাদের মুক্তির আনন্দ। লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আমাদের এক গায়িকা বান্ধবীকে বলতেন, ওই গানটা করো আবার। ‘লাল মাটির সড়ানে ওরে সড়ানে/ উয়ার সাথে দিখা হবে বাবুর বাগানে’।  
 কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে কলকাতার অভিজাত সভ্যতায় উপবীত না নিয়ে যখন যাওয়া যায় না তবে আমি কেন যাই? ওই বললুম ‘ঢিলটো ছুড়ে দেখলুম’। সভাসদরা কি বলেন! মাস কয়েক আগে হঠাত করে কলকাতার ফরাসী দূতাবাসের তরুণ কনস্যুলেট জেনারেল ড্যমিয়েন সৈয়দের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। প্রথম দিনের সাক্ষাতেই ড্যমিয়েন সাহেব বাংলায় কয়েকটি কথা বলেন। এবং আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলা শিখতে চাই। বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ফরাসী দেশের সংস্কৃতির অনেকটা মিল আছে
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, কলকাতার ডিরেক্টর ফ্যাব্রিক প্ল্যাঙ্কন ২২ মার্চ আমাকে বন্ধুর মর্যাদা দিয়ে যে আন্তরিকতায় কাছে টেনে নিলেন, আমার মনে হল আমার নিজের খড়ের চালের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে ফিরে এলাম। তারপরেই সেদিনের সাহিত্যের আড্ডায় আত্মসমর্পণ করলাম। সেদিন আমার মনে হচ্ছিল প্যরিস শহরের মুক্ত গণতন্ত্রের আলোর দিশারী হয়ে আমরা হাঁটছি। কারণ প্রশ্ন যতবার ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ডস’-এর লেখক মার্কের দিকে ছুটে যায় মার্ক শান্ত সহাস্য গলায় উত্তর দিচ্ছেন। তাঁর ঠোটের কোনে স্মিত হাসি। তিনি বলেন, আমার কোনও মডেল নেই। আমি কোনও মডেলে বিশ্বাস করি না। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। আমি মানবতা চিনি। মানুষের দুঃখ যেখানে আমার কলম সেখানে কথা বলবে। আমি কবিতার রাস্তায় হেঁটে বাংলার নন্দীগ্রাম চিনেছি। আমি কবিতার উপত্যকায় ঘুরে ঘুরে গ্রাম সভ্যতার উন্নয়ন খুঁজছি। এ ছাড়া মানব সভ্যতার কাছে আমি কি চাইতে পারি? দিতেই বা কি পারব?
২২ মার্চ সন্ধ্যেয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ছোট্ট সভাঘরে একটা চেয়ারও খালি ছিল না। আলোচনা সভার শুরুতেই  সম্পর্ক প্রকাশনার কর্ণধার সুনন্দন রায়চৌধুরী লেখকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুনন্দন বললেন, ‘’সাহিত্যের আড্ডা একটু অন্যরকম। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এর সঙ্গে যৌথভাবে এই রকম অনুষ্ঠান এই প্রথম হচ্ছে। আজ সাহিত্য বিষয়ে হলেও পরে রাজনীতি এবং দর্শন বিষয়েও আমরা যৌথভাবে বই প্রকাশ করব। মার্ক ফরাসি ভাষার একজন সম্মানজনক লেখক। তিনি লেখক হিসাবে ফ্রান্সের সম্মানজনক পুরষ্কার পেয়েছেন। কলকাতায় আগে এসেছেন। ৯ বছর আগে এসেছেন। নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলের উপর এই বইটা লেখা।
মার্ক বলেন, ‘’রাজনীতির জন্য সময় দিতে হয় সবাইকে। সচেতন নাগরিক আছেন পশ্চিমবঙ্গে। ২০০৮ সালটা এই বাংলায় ‘পরিবর্তন’-এর সময়। ব্রিটেনের মানুষ জমির মূল্য বোঝে। আমেরিকার মানুষও জমির গুরুত্ব বোঝে। জমিকে কেন্দ্র করে যে পরিবর্তন এটা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই হয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাবকে অস্বীকার করা যাবে না। আমি পরিবারের মূল্য বুঝি। আমি সমাজের মূল্য বুঝি। আমি শহর কেন্দ্রীক উন্নয়নে বিশ্বাস করি। গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন না হলে একটা শহরের উন্নয়ন হবে না।‘’
লেখক মার্ক দাবি করছেন রাস্তা, হাসপাতাল, এয়ারপোর্ট একটা অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এই ক্ষেত্রগুলিতে উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলির উন্নয়ন প্রয়োজন। মার্ক আরও বলেন, ‘’সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শিল্প করতে চাইলেও রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারেনি। অথবা রাজ্য সরকার বোঝানোর দায়িত্ব নিতে পারেনি।‘’
ওইদিনের অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার ব্যুরো অব চিফ (কলকাতা) শুভজিৎ বাগচী। তিনি বলেন, ‘’আমি বইয়ের পুরোটা পড়িনি। ভূমিকা পড়েছি। তবে বিষয় যখন নন্দীগ্রাম তখন বলতেই হবে জমিকে কেন্দ্র করে ভারতের সব গ্রামে সংঘাত আছে। ছত্তিসগড়ের মানুষের কথা বললে সেই জমির প্রসঙ্গ আসবে। আদিবাসীদের সঙ্গে বৃহৎপুঁজির সংঘাত আছে। নন্দীগ্রামেও ছিল। নন্দীগ্রাম শহরের খুব কাছে কিন্তু বস্তার নয়। তাই মার্কের সঙ্গে কথা বলে আমারো মনে হয়েছে মানবতার জন্য যে কোনও কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।‘’
আমি নিজেও ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ড’ পড়তে পারিনি। ৩২০ পৃষ্ঠার বইয়ের ভূমিকা পড়লাম। ভুমিকায় লেখা হয়েছে, ‘’This book owes its content to so many farmers, villagers, Poets, filmmakers, economists, politicians, industrialist, activists, novelists, artist, researchers, ordinary citizens who accepted to engage into conversations with me, so many that I cannot name them all. They are grateful thanked here. It couldn’t have happened either without the help of………’’ ভূমিকা পরেই বুঝতে পারলাম নন্দীগ্রামের মানুষের দৈনন্দিন ঘরসংসারের ভেতরে লেখক দাদার মতো, বাবার মতো, বন্ধুর দাবি নিয়ে ঘুরেছেন। অভিভাবকের আবদারে ঘুরেছেন। সমাজকর্মীর অধিকার নিয়ে তাঁদের চিনতে চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন। যে কথা সুনন্দন আমাদের শুনিয়েছেন। নন্দীগ্রাম নামক একটি গদ্যের গ্রামকে তিনি কবির মনন নিয়ে দেখেছেন। তাই তিনি বলতে পারছেন নন্দীগ্রাম একটি কাব্যময় উপত্যকা।
প্রকাশকের আসনে বসে সুনন্দন রায়চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ‘’আমাদের রাজ্যের চা বাগানগুলির অবস্থা কি? চা শ্রমিকরা পুষ্টির অভাবে ভুগছেন। সাংবাদিক, লেখক, সমাজকর্মীরা কি ভাবছেন? আগামীদিনে আমাদের এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। যে কথা ‘দ্য পোয়েটিক ল্যান্ড’-এর লেখক আমাদের ভাবতে বলছেন। সামনের দিকে হাঁটতে হলে এই ধরণের বিষয় নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।‘’
সুনন্দন রায়চৌধুরী আপনাকে রাবীন্দ্রিক অভিনন্দন। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে মার্ক লিখেছেন আপনি সেই বিষয়ের আরও গভীরতা খুঁজছেন। আলোচ্য বইয়ের লেখক মার্ক হাটজফেল্ড আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট কোনও মডেল নয়। সবার উপরে মানবতা সত্য তাহার উপর নায়। আমরা অপেক্ষায় থাকব ‘সম্পর্ক’ প্রকাশনার নতুন বইয়ের জন্য।                                
             

1 comment:

  1. দৈনন্দিন দাস-বৃত্তির জীবন যখন ক্রমশ বাঙলা ভাষা থেকে দূরত্ব তৈরি করে চলেছে,হঠাৎ একটা অধিবাস্তবতায় মোড়ায় লেখা মন কে ভীষণ ভালো করে দিল।

    ReplyDelete