রাজ্য সরকারের নারী স্বশক্তিকরণের কর্মশালা:
সম্প্রতি আমন্ত্রণের ঘনঘটা লেগেছে। ইন্দ্রজালের মতই অন্তর্জালের প্রান্তর
প্রান্তরে আমন্ত্রণের আন্তরিক স্বাগত বার্তা। উপভোগ করতে ভালোই লাগে, সবগুলিতে
যাওয়াও সম্ভব নয়। যাওয়া উচিতও নয়। কারণ স্বীকৃতি কতটাই বা আছে এবং অনুমোদন কী রকম
থাকে সেটা দেখে নেওয়া সচেতন প্রতিবেদকের কাজ। সম্প্রতি প্রেসক্লাব থেকে একটি চিঠি পাই। তাতে
উল্লেখ করা মানে যুক্ত করা হয়েছিল কেরল রাজ্য সরকারের একটি চিঠি। প্রেস ক্লাবের
চিঠির সঙ্গে কেরল শ্রমদপ্তরের একটি আমন্ত্রণপত্র ছিল। আমাকে কেরল যাওয়ার আমন্ত্রণ
জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণপত্রের প্রথম ছত্রের কিছুটা অংশ এখানে উল্লেখ করছি। চিঠিটি পাঠাচ্ছেন,
(for Labour
Ministry,Kerala and Labour Commissioner) Sd/ C.F. DileepKumar, Labour Publicity Officer, GoK, Dep. Of Labour and
skills.
GOVERNMENT
of KERALA , LABOUR and SKILLS Department has expressed
interest to initiate a visit cum study tour of interstate media
to Kerala for studying the Best Practise On schemes
which are being implemented in kerala namely Aawas
and Apna Khar project for Interstate migrant workers(Guest Workers)
.It is the pioneering effort in the history of India envisaged by
Government of Kerala.Interstate media team representing the vivid
media have scheduled to visit Kerala from 26/03/2018 to
28/03/2018.
যদিও শেষ পর্যন্ত যেতে পারলাম না। যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। দক্ষিণ ভারতের সব
থেকে শিক্ষিত রাজ্যের ‘ইডলি’, ধোসা, খেতে কার না ভালো লাগে? নারকেল-ডাবের জলে মন
ভিজিয়ে ‘রামনবমীর’ জ্যোৎস্নায় স্নান করতে চেয়েছিলাম। বিষ্ণুপক্ষের লাল সূর্যের
আলোয় আন্দোলিত সাগরের জলে স্নান করতে চেয়েছিলাম। হাতের পাঞ্জায় লেখা থাকত আমি
নাগরিক ভারতের বৃহত্তর গণতন্ত্রের রাজ্য ‘কেরালা’-য় আছি। বিশেষত আমার কাছে আমন্ত্রণটা লোভনীয় ছিল।
ছ-সাতটা বছর গৃহবন্দি থাকার পর গণতন্ত্রের প্রৌঢ় আলো আমার দরজায় চুঁইয়ে পড়ছে। তাই আমার মত ভবঘুরে ছন্ন ছাড়া এক সুফি-ফকির, বাউল
ফকিরের দর্শনআশ্রিত ব্যক্তির কাছে লোভনীয় ছিল আমন্ত্রণ। বলুন ছিল না? আমি এক সময়
কৈশোর যৌবনে আমাদের রাজ্যের রাঢ় অঞ্চলের ‘মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার’ বা ‘পরিযায়ী শ্রমিক’-দের
আমাদের রাজ্যের কৃষিঅর্থনীতির সুজলা সুফলা জেলা বর্ধমানে কাজ করতে যেতে দেখেছি।
তাঁদের আমরা ‘বাবু’-দের দল ‘জন’, ‘মুনিষ’ নামে আখ্যান করতাম। কাউকে জিগ্যেস করলে গ্রামগঞ্জের
পরিচিত কৃষিশ্রমিক বলত, ‘মুনিষ খাটতে যাচ্ছি’। আদিবাসীরা সপরিবারে যেত। একমাস দু’মাসের
জন্য কাজের ডাকে যাওয়া। একজন আদিবাসী শ্রমিকের
কাঁধে বাঁক। বাঁকের একদিকে পরিযায়ী জীবনের বিছানা বাসনপত্র। অন্যদিকের বাঁকে
সন্তান সন্ততি। রামকিঙ্কর বেইজের মানস ভাস্কর্য।
আমি কেরল যাওয়ার প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সময় কম ছিল তাই
যেতে পারলাম না। ২১ মার্চ সকালে রাজ্য শ্রমদপ্তরের যুগ্ম শ্রমসচিব তথা স্টেট লেবার
ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা সমীরকুমার বসুর স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণপত্র পেলাম।
আমন্ত্রণপত্রটি আমার হাতে দিলেন সহকারী লেবার কমিশনার কালীদাস দত্ত। আমন্ত্রণপত্রে
জানানো হয়েছিল, ‘Request for coverage in your esteemed Media, Progrmme of Awarness
Generation for Working Women on 23. 03. 2018 at 10 a.m. at the Nurses’ Training
Centre. ESI Hospital, Maniktala, Annex Building.’
এই বিষয়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রাজ্যের শ্রমদপ্তর আয়োজিত বিষয়টা গভীরতায় যতটা গুরুত্ব দাবি করে
অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং অংশগ্রহণ ছিল ততটাই আন্তরিক। আমি নিজে উপস্থিত থেকে উপলব্ধি
করেছি। আন্তর্জাতিক নারীদিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতই এই দিনের অনুষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। যে কথা শ্রমমন্ত্রী
মলয় ঘটক প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময়। কর্মক্ষেত্রে সমস্যা নিয়ে
এই কর্মশালায় পরতে পরতে সাজানো ছিল কর্মসূচী। আমাদের রাজ্যে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের
বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি নিজে এই বিষয়টা নিয়ে আন্দোলন করেছি। ‘বিশাখা কমিটি’-এর
বিষয়ে বেশিরভাগ মহিলা সচেতন নয়। এই রাজ্যের গ্রাম-গঞ্জের মহিলা, নাগরিক কলকাতার
স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই বা কতটুকু সচেতন? দিল্লীর ‘নির্ভয়া’
ঘটনার পরেও এই রাজ্যের প্রান্তিক পরিবারের মেয়েরা জানেননা ‘পারিবারিক হিংসা’ আইন
কী? ‘যৌন হিংসা আইন’ কী? কার কাছে গেলে এই বিষয়ে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে? সমস্যাগুলি পর পর সাজালে দাঁড়ায় ১) কর্মক্ষেত্রের
মহিলারা নিজেদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন? কাজের বিনিময়ে যথাযথ পারিশ্রমিক না পেলে
কী করতে হবে। কর্মস্থলে হেনস্থার ঘটনা ঘটলে কী করতে হবে? কোথায় গেলে কী সুবিধা
পাবেন? শুক্রবার (২৩ মার্চ, ২০১৮) মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালের সভাঘরে উল্লেখিত সচেতনতামূলক কর্মশালায় মনন গড়ে তুলতে
আলোচনা করলেন এই প্রজন্মের আলোচকরা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরের আলোচনা ছিল টগবগে
প্রাণবন্ত। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয়
ঘটক। তিনি জানান, অসংগঠিত মহিলারা সমস্যায় পড়লে আইনি সাহায্যের জন্য অনেক পথ খোলা
রয়েছে। সংগঠিত ক্ষেত্রের শিক্ষিত সচেতন মহিলারা যে সুযোগগুলি পেয়ে থাকেন। অসংগঠিত
ক্ষেত্রের মহিলারাও সেই সুযোগ পাবেন। শ্রমমন্ত্রী আরও জানান, মহিলা শ্রমিকেরা কর্মক্ষেত্রে
সমস্যায় পড়লে তাঁর দপ্তরে আসতে পারেন। তাঁর দপ্তরের সচেতন দক্ষ আধিকারিক এবং
কর্মচারীরা তাঁদের সাহায্য করবেন। দুপুরের খাওয়ার পরে সাফল্যের সঙ্গে প্রথম এই
দায়িত্ব নিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের অতিরিক্ত সহকারি নগরপাল অনুরাধা মণ্ডল। তিনি প্রথমেই বলেন, ‘’ভারতে নারীশ্রমিক আছেন সারে ১৪
কোটি। নারীদের স্বশক্তিকরণ করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আইন সম্পর্কে আমরা অধিকাংশ
মহিলা সচেতন নই। পারিবারিক হিংসা আইন, যৌন হেনস্থা বিরোধী আইন বিষয়ে আমাদের
রাজ্যের মেয়েরা কতটা সচেতন?’’ এরপরে অনুরাধা স্লাইড সহযোগে আইনগুলির বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করেন।
পরের সেশন ছিল কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা এবং যৌন
হেনস্থা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণাধার রেশমি ভট্টাচার্য গাঙ্গুলি ভীষণ
আন্তরিক ছিলেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায়। বিশাখা কমিটির বিস্তারিত বিষয়ে তিনি আলোচনা
করেন। কেন প্রত্যেকটি অফিসে ‘বিশাখা কমিটি’ প্রয়োজন। সরকারি বেসরকারি প্রতিটি
অফিসে ‘বিশাখা কমিটি’ গড়ে তোলার দাবি জানাতে হবে। কমিটিতে কতজন সদস্য থাকবেন। কার
কাছে অভিযোগ করতে হবে। ইত্যাদি। এদিনের অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন নার্স, সরকারি
কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য, বিভিন্ন কারখানার মহিলা শ্রমিক এবং ট্রেড
ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। মতবিনিময় সভায় ওইদিনের অনুষ্ঠানে ১৫ জন মহিলা নিজেদের অভিঞ্জতার
মানদণ্ডে নারী স্বশক্তিকরণের প্রসঙ্গে আন্তরিক এবং বিস্তারিত আলোচনা করেন।
শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেই এই
প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘’আমরা গর্বিত আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০%
সংরক্ষণ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছেন। আমাদের রাজ্যে অনেক
মহিলা জেলা শাসক আছেন। আরও একটা বিষয় এই রাজ্যে আগে জনসংখ্যার (২০১১ সালের জনগণনায়
সারা দেশে ৪৮% মহিলা) ৮৫% মহিলাদের ক্ষেত্রে স্কুলছুট ঘটত। স্কুলে এক কোটির বেশি
মেয়ে ভর্তি হত। শেষে দেখা যেত ৭-৮ লক্ষ স্কুলে পড়ছে। সেই অবস্থার পরিবর্তন এই
রাজ্যে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের
প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ এই ছুট রুখতে সক্ষম হয়েছে। এখন গ্রামের দিকে তাকান ১০জন স্কুল
ছাত্রের ৮জন মেয়ে সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসছে।‘’
শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারা রাজ্যে এই ধরণের কর্মশালা
আরও করা উচিত। তাতে আমরা রাজ্যে মহিলাদের জন্য কি করা যায় সেটা জানতে পারব। এবং
পরে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করব। মহিলাদের সচেতন করার ব্যাপারে যদি
আমাদের দপ্তর থেকে ছোট ছোট পত্রিকা করা যায় সেটা আমরা ভেবে দেখছি। আমি সংশ্লিষ্ট
দপ্তরকে দায়িত্ব নিতে বলব।‘’
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সচিব ও লেবার
কমিশনার জনাব জাবেদ আখতার, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সহকারী লেবার
কমিশনার কালীদাস দত্ত এবং যুগ্ম লেবার কমিশনার তথা স্টেট লেবার ইনস্টিটিউটের
অধিকর্তা সমীরকুমার বসু। সমীরবাবু পরে একটি খসড়া সঙ্কল্পপত্র (রেজুলেশন) আলোচ্যসভায়
পেশ করেন। অনুমোদিত সঙ্কল্পপত্রে বলা হয়েছে, ‘’ 1) In spite of so many legal
provisions to protect the interest of the working women since so many years,
the injustice against women workers in general has not declined noticeably. The
awareness among working women about their legal entitlements is mainly
restricted to the boundary of the urban area. It failed to trickle down to the
grass root level. Generating awareness among them is the need of the hour. 2)
Women labour intensive proffessions/ industries should be short listed drive
may be made in industry wise/ are wise manner to generate awareness among these
women workers who are available at a time in large number in these areas. 3) a ‘Task
Force’, dedicated to spread awareness among the working women of the State, may
be formed by the Labour Department and wide publicity should be made along with
a help line number. This task force will operate with a singular objective of
empowering the women working force of the State. Under the guidance and
direction of our Hon’ble Minister-in-charge, Department of labour, Government
of West Bengal, this task force may be made operational at all parts of our
state. It will steadily enhance the progress of empowerment of women.‘’
শ্রমদপ্তর সূত্রে খবর, এই বছর থেকে শ্রমদপ্তরের
উদ্যোগে ইতিমধ্যেই এই ধরণের কর্মশালা আরও করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এবং চা বাগানগুলির
মহিলাদের স্বশক্তিকরণ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিতে বলেছেন ‘পরিযায়ী মহিলা শ্রমিক’-দের পরিসংখ্যান
নথিভুক্তির ক্ষেত্রে। এবং ওইসব মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে সরকারি খরচে
শেল্টার করে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রেও কর্মশালা করতে হবে।
রাজ্য সরকারের ‘Labour in West Bengal, Annual
Report 2015-2016’ সংখ্যায় ‘(ix) Empowerment of Women’ পরিচ্ছেদে লিখছে, ‘1)
Consttiutional Provisions and women, The Indian consttiution- the fundamental
law as emerged out of the constitutent assmbly, treated both men and women
equaly and also provided for protective discrimation for women in view of their
pecular position in the human society.
Under Article 15 (3) the State has been
empowered to make special provisions for women. The empowerment of women is an
input which is intended to eliminate their subordination and establish equality.
After long time a really good write up.
ReplyDeleteAfter long time a really good write up.
ReplyDeleteকোনো কিছু ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে বলা সবার আয়ত্তাধীন নয়। সারাদিনের অনুষ্ঠানটিকে একটা ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন দ্বৈপায়ন কবির তার স্বভাবসিদ্ধ ভাষায়। আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
ReplyDelete