দীপেন্দু চৌধুরী
গত কয়েকবছর আগে থেকে আমরা হাহুতাশ করছি। কলকাতা শহরের হারিয়ে যাওয়া পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িগুলির স্থাপত্য নিয়ে। কিছুদিন আগে ‘হেরিটেজ ওয়াক’ শিরোনামে একটি পদযাত্রায় প্রাক্তন আইএএস অফিসার এবং বর্তমানে জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক জহর সরকার বলছিলেন, ‘’গত কয়েক দশকে কলকাতা শহরের হেরিটেজ বাড়িগুলি নিয়ে বাংলায় কোনও উপন্যাস পড়েছ? বা বড় গল্প? এই প্রজন্মের কোনও লেখক এটাকে বিষয় হিসেবে ভাবল না! আক্ষেপ হয় না?’’ তিনি আরও বললেন একজন লেখক চেষ্টা করেছিলেন। আমি বললাম, বিমল মিত্র? ‘সাহেব বিবি গোলাম’? জহরবাবু বললেন, ‘হ্যাঁ তবে খুব বিস্তারিত কিছু আমরা পাইনা। আমাদের বাঙালিদের অভ্যেস হচ্ছে আমরা অনেক কিছু নিয়ে ভাবি। কিন্তু নিজেদের সভ্যতা, ঐতিহ্য এগুলিকে আড়ালে রেখে দিতে চাই। তোমার কি মনে হয়?’’
জহর স্যারের কথাটা আমার চিরদিন মনে থাকবে। তিনি অনেক বাঙালির মতই ঠিক বলেছেন। উচ্চশিক্ষিত বাঙালির দল আদিম, পুরনো এবং আধুনিক বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে আমরা গর্ব করি। অতীতচারণায় নিজেদের সম্পর্কে ‘এগিয়ে বাংলা’ বলতে কেউ দ্বিধা করবে কি? ভাবে যতটা প্রকাশ পায় বাস্তবে সেই প্রয়োগ অজলচল হয়ে থাকে। কে কাকে অভিযোগ করবে। অকৃত্তিম অনুভূতি সর্বেক্ষণ মনন নিয়ে আমরা টেবিলে থাপ্পর মেরে সারা বিশ্বকে কফি হাউসের টেবিলে আনতে পারি। ইতিহাস, বর্তমান ঘটনার ঘটমান সময়, রাজনৈতিক কারণ, সমাজতত্ব, উন্নয়ন, বিশ্বায়ন, সব কিছু ব্যাখ্যা করতে পারি। এবং চূলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করে থাকি। কিন্তু নিজেদের স্বত্বা নিয়ে একদম সচেতন নই। নিজেদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, লোকাচার, লোকসংস্কৃতি, লোকগান, হেরিটেজ সংরক্ষণ বা পুরাতত্বকে বাঁচিয়ে রাখার আগ্রহ আমাদের কতটাইবা আছে? কে প্রশ্ন তুলবে? কাকে প্রশ্ন করবে? কারণ আমরা কমবেশি প্রত্যেকে গড্ডালিকাপ্রবাহ ভালোবাসি। শুন্য এক চরাচর নিজেদের অজান্তে নিজেরাই রচনা করি। সেই চরাচর ভেঙে সোনালী আলো আনতে আর চেষ্টা করি না।
সূত্রের খবর, ‘Calcutta Architectural Legacies’ (CAL) নামে একটি সংস্থা কলকাতার পুরনো বাড়িগুলির সংরক্ষণের প্রয়োজনে সচেতনতার কাজ শুরু করে। কলকাতায় হেরিটেজ বিষয়টাতেও গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। কলকাতা শহর নিয়ে সম্প্রতি ইংরেজিতে কয়েকটি উপন্যাস গল্প লেখা হয়েছে। এরমধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য লেখকের নাম অমিত চৌধুরী। লেখক অমিত চৌধুরী ‘CAL’ নামক সংস্থাটির প্রধান হিসেবে এই ধরণের আন্দোলন শুরু করেছেন। চলতি বছরের ২১ মার্চ কলকাতায় ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে হেরিটেজ বিষয়ক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় বক্তারা ছিলেন যথাক্রমে অমিত চৌধুরী, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য, আর্কিটেক্ট পার্থরঞ্জন দাস, গুজরাট রাজ্যের আমেদাবাদ শহরকে বিশ্ব হেরিটেজ তালিকায় তোলার কথা ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে। আমেদাবাদ শহরের ইউনেস্কো মনোনীত সম্মানীয় সদস্য রবীন্দ্র বাসাভাদা (Rabindra Vasavada) ওই দিনের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
২১ মার্চের আলোচনা সভায় অমিত চৌধুরী বলেন, ‘’২০১৫ সাল থেকে আমাদের সংস্থা কলকাতায় হেরিটেজ বিষয়টায় গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা ইতিহাস। অবশ্যই ব্যতিক্রমী ইতিহাস। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, রাজকাপুরের ছবিতে আমরা কলকাতা শহরের পুরনো বাড়ির স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি পাই। পুরনো ক্যানেল ওয়ারর্থ হোটেলের বিল্ডিং শহরের অন্যতম স্থাপত্যের উদাহারণ। থিয়েটার রোডের বাড়িগুলি পুরনো স্থাপত্যের স্বাক্ষর বহন করছে। হেরিটেজ তালিকাভুক্ত বাড়িগুলি বাদ দিলে এখনও অনেক পুরনো বাড়ি রয়েছে যেগুলিকে ‘হেরিটেজ পর্যায়ে’ আনা যায়।‘’
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস বলেন, ‘’আমাদের কলকাতা শহরের জন্য প্রয়োজন ‘টাউন স্ক্যানিং প্ল্যান’, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে আছে। হেরিটেজবাড়িগুলি যারা দখল করে আছে সেখানে অনেক আইনি সমস্যা আছে। কারণ মালিক একজন নয়। অনেক মালিক আছেন। কেউ কেউ বিদেশে আছেন। আলিপুর জেল, প্রেসিডেন্সী জেলকে সংরক্ষণের তালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। আলিপুর জেলে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, নেতাজী সুভাষ, ঋষি অরবিন্দ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মত ব্যক্তিত্বরা এই জেলে ছিলেন। প্রেসিডেন্সী এবং আলিপুর জেলকে মিউজিয়াম করার প্রস্তাব দিয়েছি। নৈতিকভাবে রাজ্য সরকার রাজি হয়েছে।‘’
ইউনেস্কোর মনোনীত আমেদাবাদ শহরের সম্মানিত সদস্য রবীন্দ্র বাসাভাদা বলেন, ‘’টিডিআর ঘোষণা হয়েছিল বাড়িগুলি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে। আমি আমেদাবাদের কথা বলছি। সরকার টাকা না দিলে কে কাজ করবে? ৬২ হাজার বাড়ি আছে কিন্তু মাত্র ৩ হাজার বাড়ি চিহ্নিত হয়েছে। ৩০% দখল হয়ে গেছে। আমেদাবাদের এই বিষয়গুলি ভীষণ জটিল। আমি মনে করি হেরিটেজ তালিকা তৈরি করার সময় আইনি বিষয়টা আগে দেখা উচিৎ।‘’
কলকাতা সহ সারা রাজ্যের হেরিটেজ ধারাবাহিকতা মাথায় রেখে ১৮ এপ্রিল কলকাতায় একটি মিছিল হয়। মিছিলের আয়োজক সংস্থা ছিল CAL, INTACH, PUBLIC. বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে কলকাতার পুরনো বাড়ি ও ঐতিহ্য বাঁচাতে ওইদিনের প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটেছিলেন, লেখক অমিত চৌধুরী, প্রক্তন আই এ এস এবং বর্তমানে প্রাবন্ধিক জহর সরকার। জহরবাবু বর্তমানে Chairman, Center for Studies in Social Sciences, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব অপর্ণা সেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সুপ্রিয়া চৌধুরী, শিল্পী চিত্রভানু মজুমদার, লেখক কল্যাণ রায়, প্রদীপ কক্কর (PUBLIC), কুশল চৌধুরী সহ আরও অনেকে। কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও ওইদিনের মিছিলে হাঁটে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ দিবসে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু হয়ে মিছিল শেষ হয় কলকাতা পুরসভায়। তিনটে সংগঠনের দাবি ছিল, যে সব হেরিটেজ চিহ্নিত বাড়ির তকমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে সে সব ফেরৎ দিতে হবে। মুম্বাই, দিল্লি, আমেদাবাদ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরকে হেরিটেজ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কলকাতার সমৃদ্ধশালী ইতিহাস আছে। ৩০০ বছরের বেশি পুরনো শহর। অথচ এই শহরের কোনও হেরিটেজ জোন হয়নি।
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে অপর্ণা সেন বলেন, ‘’ That like people, an old city also has a face. If this face is struck at continuously, it becomes disfigured, unrecognizable.’’ জহর সরকার বলেন, ‘’CAL Calcutta’s Architectural Legacy, INTACH, PUBLIC & Purono Kolkata got together to raise awareness of citizens to protest because once an old unique architecture — Colonial, Neo-classical, Baroque, Indo-European Hybrid, Art Deco (like Metro, Roxy, Lighthouse, Elite) are destroyed a part of Kolkata’s unique legacy is slaughtered — without any scope for revival. We need to convince house owners that their old beautiful heritage architecture can be preserved and generate income as Heritage Tourism —- so that selling to greedy builders and political Syndicates is not the only option।‘’
অমিত চৌধুরি বলেন, ‘’This is perhaps the first citizens’ march on heritage in the city. And the letter mention three broad points that needed to be discussed with the CMC.’’ অমিত চৌধুরি, সুপ্রিয়া চৌধুরীদের নেতৃত্বে ওইদিন কলকাতা পুরসভায় একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। স্মারকলিপির বিষয় ছিল, 1) The delisting of buildings on the CMC’s heritage list should be stopped immediately, 2) Documentation of buildings that require preservation. 3) Authentication of the incomplete heritage list that the city has and putting together a plan that will create heritage precincts, so that Calcutta’s unique neighborhoods do not disappear in the name of development.
জহর সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে তাল রেখে বলতে হয় একটা শহরের পুরনো সুদৃশ্য বাড়িগুলির ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি কিনা সেটা আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ। যে কাজটা পুদুচুরি শহরে ফরাসী সরকার করেছে। চন্দননগর শহরকে কেন্দ্র করে একই দাবি উঠেছে। কারণ চন্দননগর নৌবাণিজ্যের শহর হিসেবে পূর্ব পরিচিতি রয়েছে। বাংলার এই প্রাচীন শহরে ফরাসী, ডাচদের প্রাধান্য বেশি ছিল। পরে পুরো শহরটা ফরাসী স্থাপত্যের শহর হয়ে ওঠে। ইউরোপিয় ঘরানার নগরস্থাপত্যের অন্যতম উদাহারণ ছিল এই শহর। ১৬৯৬ সালের হুগলী নদীর তীরে নির্মিত চার্চ আজও ফরাসী স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৬৮৮ সালে ফ্রান্স প্রশাসন স্থায়ী ভিত্তিতে চন্দননগরের দায়িত্ব পায়। তারপরে এই চার্চ তৈরি হয়। ১৭৩০ সালে জোসেফ ফ্রাঙ্ককোলিন ডুপ্লেক্স (Joseph Francois Duplex) চন্দননগর শহরের গভর্নর হিসেবে নিয়োগপত্র পান।
তার শাসনকালে প্রায় কয়েক লক্ষ ইঁটের তৈরি ফরাসী স্থাপত্যের বাড়ি তৈরি হয়। এবং চন্দননগর শহর গঙ্গা নদীর উপকূলবর্তী বাণিজ্যনগরী হিসেবে প্রসিদ্ধিলাভ করে। একটা সময় চন্দননগর ইউরোপিয়ান বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল হিসেবেও প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল।
চন্দননগরের ফরাসী স্থাপত্যের আরও একটি অন্যতম বাড়ি ‘রেজিস্ট্রি বিল্ডিং’ জরাজীর্ণ, পাকুড় গাছের আশ্রয়ে আচ্ছাদিত আছে এই বাড়ি। শহরের রানিঘাট জেটির কাছে অবস্থিত ঐতিহাসিক ফরাসী স্থাপত্যের এবং ফরাসী সরকারের রেজিস্ট্রি অফিস। এই বাড়িটির স্থাপত্য এখনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কয়েক বছর আগে চন্দননগর পুরনিগম ঘোষণা করেছিল উনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি এই বাড়ি এখন নিরাপদ নয়। তাই এই বাড়ি ভেঙে ফেলতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা, এবং যারা শহরের ফরাসী স্থাপত্যের-ঐতিহ্য ভালোবাসেন তারা এগিয়ে আসেন। সঙ্গ দিলেন কিছু এনজিও। তাঁদের উদ্যোগেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কলকাতায় ফরাসী কনস্যুলেট জেনারেল ড্যামিয়েন সৈয়দকে বিষয়টি জানানো হয়। তার কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনে চন্দননগরের ‘রেজিস্ট্রি বিল্ডিং’- এর বিষয়ে ফরাসী কনস্যুলেট জেনারেলকে জানানো হয়। সেদিনের আলোচনায় ড্যামিয়েন সৈয়দ শুধুমাত্র ‘রেজিস্ট্রি বিল্ডিং’ নয় উনবিংশ শতাব্দীর ফরাসী এবং ডাচ নৌবাণিজ্য নগরীর অন্যান্য পুরনো বাড়ির সংরক্ষণের বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, ফরাসী সরকার চন্দননগর শহরকে তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে সাহায্য করবে। সেই মোতাবেক চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
গত ২৯ মে ‘How does heritage work for you’’ শিরোনামে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ কলকাতায় আরও একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্লাইডে আমাদের দেখান হয় ‘How does heritage work for you, Citizen engagements in heritage conversation: a case of Chandannagar.’ Cultural heritage and urban development. আলিয়সঁ ফ্রঁসেজ-এর ডাইরেক্টর ফ্যাব্রিক প্ল্যাঙ্কন বলেন, ‘’চন্দননগর শুধু ফরাসীদের গর্ব নয়। এই বাংলার গর্ব। এই শহরকে তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে দিতে পারলে আমরা চন্দননগরের মানুষের কাছে কৃতঞ্জ থাকব। রাজ্য সরকার আমাদের সাহায্য করছে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।‘’
ওইদিনের আলোচনা সভায় বক্তা ছিলেন র্যাফেল গ্যাস্টেবোইস (Raphaell Gastebois) এবং ঐশ্বর্যা টিপনিস। আলিয়সঁ ফ্রঁসেজ থেকে আমন্ত্রণপত্রে আলোচক দুই ব্যক্তির সম্পর্কিত বিষয় আমরা উল্লেখ করলাম।
A discussion on the value of heritage to community and the importance of a community effort in its restoration and preservation.
This session will discuss how heritage is helpful to us as citizens and how the latest developments are to take its promotion from the realm of academia to a more citizen driven process.
About the panellists:
This session will discuss how heritage is helpful to us as citizens and how the latest developments are to take its promotion from the realm of academia to a more citizen driven process.
About the panellists:
Raphaël Gastebois is an expert in urban development. In 2016, he joined the Ministry of Europe and Foreign Affairs as part of the Smart City program.
He is trained in the conservation and restoration of heritage.
Aishwarya Tipnis is an award winning architect and urban conservationist.
Tipnis is currently directing the project 'House of the Moon' in Chandernagore,
with the aim to restore centuries-old heritage buildings in the former French colony. In recognition of her commitment to the preservation of French heritage in India, she has been conferred the Chevalier des Arts et des Lettres by the Ambassador of France to India in January 2018.
কলকাতায় র্যাফেল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘’আমি গত দু’ বছর ধরে এই কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গায় আমি কাজ করছি। ১০০টি শহরকে ভারতে বেঁছে নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সংরক্ষণ গাইডলাইন মেনে এই বাছাইপর্ব হয়েছে। পৃথক পৃথক শহরের আলাদা আলাদা ভাবনা চিন্তা রয়েছে। ফ্রান্সের ‘প্যারিস শহর’-এর মত করে আমি ভাবছি। একটা শহরের তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়া মানে শুধু পুরনো বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া নয়। সেই শহরকে আধুনিক মানদণ্ডে গড়ে তুলতে হবে। শহরের পরিকাঠামো, পরিশুদ্ধ পানীয় জল, স্নানের জলের ব্যবস্থা করতে হবে। জ্যামজট মুক্ত, জঞ্জাল মুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা পুদুচুরি শহরকে এইভাবে সাজিয়েছি। পুরনো ফরাসী স্থাপত্যে এমনই ভাবনা এবং নকশা ছিল। রাজনীতি অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারে স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে। ৬৩টা প্রকল্প আমাদের হাতে আছে।‘’
ঐশ্বর্যা টিপনিস বলেন, ‘’আমরা চন্দননগরে কাজ করছি ৮ বছর হল। চন্দননগর-চুচুড়াকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সুযোগ আছে। ৬০টার কিছু বেশি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। চন্দননগর শহরের হেরিটেজ সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা চন্দননগরের হেরিটেজ বিষয়ক একটি প্রদর্শনী করি। সেই প্রদর্শনীতে হুগলী জেলার জেলা শাসকের নেতৃত্বে জেলার সমস্ত শীর্ষ আধিকারিকরা এসেছিলেন। চন্দননগরকে ফরাসী স্থাপত্য ফিরিয়ে দেওয়া যায় না?’’
কলকাতার ফরাসী কনস্যুলেট জেনারেল ড্যামিয়েন সৈয়দ ২১ মার্চের আলোচনায় উল্লেখ করেছিলেন ‘’ ৯৯টি ফরাসী স্থাপত্যের বাড়ি আছে। ইন্দো-ফ্রেঞ্চ হেরিটেজ। কিছু স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেই আমাদের কাজ করতে হবে।‘’ এদিন তিনি বলেন, ‘’আমরা পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ফরাসী স্থাপত্যের বাড়িগুলি সংরক্ষণের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমরা ভাবছি। এই বাড়িগুলি ঐতিহাসিক স্মারক। চন্দননগরের স্থাপত্যগুলিকে কেন্দ্র করে ‘হেরিটেজ অব সিটি’-এর জন্য আমরা পরিকল্পনা করছি। পর্যটক আকর্ষণের বিষয়টাও আমাদের মাথায় আছে। ‘’
কলকাতার আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল ক্রেগ হল ১৮ এপ্রিল ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডে’ উপলক্ষে উত্তরবঙ্গে ছিলেন। আমেরিকান সেন্টার সূত্রে খবর ওইদিন উত্তরবঙ্গে ক্রেগ হল হেরিটেজ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের ‘হেরিটেজ বাড়ি’ এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘’শহরের উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন। কিন্তু সেইসঙ্গে দেখতে হবে, একটি শহরের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি আমরা কতটা ধরে রাখতে পারছি।‘’
No comments:
Post a Comment