সীমানা ভাঙ্গার অমিশ্র যাত্রা
ভারতের মত একটি
উন্নয়নশীল দেশে নজরে পড়ার মত প্রসার ঘটেছে পরিষেবা ক্ষেত্রে। এই পরিষেবার পরিসরে যে অংশটি সব থেকে সুবিধা
পাচ্ছে সেটা অবশ্যই উচ্চবিত্তদের অংশ। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা তথ্যপ্রযুক্তি
বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষিত ‘ক্রিমি লেয়ার’ পরিবারভুক্ত সমাজের সদস্যদের দ্রুত বৃদ্ধি
আমরা গত কয়েক দশক থেকে লক্ষ করছি। পাশাপাশি আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রেও এই শ্রেণীর
ব্যক্তিজনেরা লাভবান হচ্ছেন। এবং দু’টি ক্ষেত্রেই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখিত
ক্ষেত্র দু’টির আর্থিক বিকাশকে সামনে রেখে ভারত তার সাফল্যের কাহিনী দেশের বাজারে
সাফল্যের সঙ্গে ফেরি করতে পেরেছে। পশ্চিমের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘ব্রিক’ (BRIC) দেশগুলির অন্যতম আমাদের দেশ ভারতকে একটি গতিশীল উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি
হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
এখন বিপরীত দিকে যদি নজর ফেরাই অর্থাৎ কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে। কি ছবি
আমরা পাচ্ছি? সমালোচকদের দাবি এই দু’টি ক্ষেত্র ভারতের জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশের
দায়িত্ব বহন করে। অথচ এই দু’টি সেক্টরে প্রগতির গতি নিম্নগামী। কৃষিতে
ধারাবাহিকভাবে মন্দা চলছে। বিশেষঞ্জদের অভিমত ‘’মূল্যবৃদ্ধি কমানোর নীতির ফল,
বিশেষ করে গ্রামীণ ভারতে, ভয়ানক খারাপ হয়েছে। সরকারি পুঁজি গঠন কমে গেছে। ‘গ্রামে
বিকাশ খাতে ব্যয়’-এর মধ্যে আমি পরিকল্পনার পাঁচটি খাত ধরেছি— ক) কৃষি, খ)
গ্রামোন্নয়ন, গ) সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ঘ) বিশেষ এলাকা কর্মসূচি, ও ঙ) গ্রাম ও
ক্ষুদ্র শিল্প। গ্রামের উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বজায় রাখার জন্য এইসব ব্যয়গুলিই
জরুরি।‘’
বিগত ইউপিএ সরকার ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ বা ১০০ দিনের কাজ এই প্রকল্পে গ্রাম
তথা প্রান্তিক কৃষি নির্ভর পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু করে। এই
প্রকল্প খাতে বরাদ্দ টাকা যতটা দেওয়া হয়েছিল,
সেই অনুপাতে ভূমিহীন কৃষিকর্মী বা দিনমজদুরদের হাতে সরকার অনুমোদিত টাকা পৌছয়নি।
মাঝপথে দালাল, জেলাস্তরের আধিকারিক থেকে পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিকরা অনুদানের অর্থ
পকেটস্থ করেছে। অবশ্যই নীচের স্তরের রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীদের মদতে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে সরকারি বিনিয়োগ ইউপিএ
আমলে কিছুটা হলেও আরম্ভ করা গিয়েছিল। ব্যপক কর্ম সংস্থানের কথা মাথাই রেখে। নতুন করে এই ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ
মনমোহন সিংহ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার আগেই ইউপিএ সরকারকে
চলে যেতে হয়। বর্তমান সরকার সামাজিক প্রকল্পে প্রথম দু’বছর ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে দেয়।
পরে অতীত অভিঞ্জতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ
জেটলী সামাজিক প্রকল্পে ব্যয়বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়েছেন। তবুও বিরোধীরা অভিযোগ করছেন
কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে। জুলাই মাসে দিল্লী সফরের সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন (১৬ জুলাই, ২০১৬), ‘’............বাস্তবে ৩৯টি
প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হয়েছে, ৫৮টি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বিপুল ভাবে
কমে গিয়েছে। ফলে উন্নয়নের মতো প্রকল্পগুলি কার্যত বন্ধ হওয়ার মুখে।‘’
গ্রামভারতের ধারাবাহিক মন্দার বিষয়টি বর্তমান সরকার এবং তার ম্যানেজারদের
কাছে উপেক্ষিত থেকে গেছে সম্ভবত। যদিও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার মাঝারি এবং ক্ষুদ্র
শিল্প (এসএমই) ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়েছে। তাতে শহর এবং গঞ্জ শহরের সাধারণ
শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক সুরাহা হলেও গ্রাম যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে আছে। গ্রামের
ঋণগ্রস্ত ছোট কৃষককে বেছে নিতে হচ্ছে অন্য জীবীকা। যদি কোনও জীবীকা না পাওয়া যায়
তাহলে চরমতম সিন্ধান্ত নিতে হচ্ছে পরিবারের আত্মসম্মান বাঁচাতে। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের
এই ছবির সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত। কিন্তু কংগ্রেসের সহ- সভাপতি রাহুল গাঁধি
এতদিন পর উত্তরপ্রদেশে ৩০ দিনের ‘খাটসভা’র মত আন্দোলনের কথা ভাবলেন কেন? তার কারণ আগামীতে উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে ভোট? ভোট একটা
কারণ হতে পারে তবে অবশ্যই অন্যতম কারণ নয় খুব সম্ভবত। ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনই
পাখির চোখ কংগ্রেস তথা কংগ্রেসের ভোট ম্যানেজারদের। এবং কংগ্রেস নামক শতাব্দী
প্রাচীন দলটিকে শীতঘুম থেকে বাইরে টেনে আনা। যেটার প্রয়োজন ভারত নামক একটি দেশের
সামাজিক গণতন্ত্রে খুব করে অনুভব করা যায়। নিন্দুকেরা যতই বলুক পরিকল্পনা আসলে
কর্পোরেট ঘরানার। তাতে কংগ্রেস বা রাহুল গাঁধির কি এসে যায়? ভারতে কংগ্রেসকে
আধুনিক ঘরানায় গড়ে তুলতে গেলে প্রশান্ত কিশোরের মত আধুনিক সমাজ বিঞ্জানীর প্রয়োজন
আছে। ২০১৪ সালে এই প্রশান্ত কিশোর আমাদের সামনে বিজেপির এক অতিথি ব্যক্তিকে
দিল্লির সাংবিধানিক মন্দিরে বসিয়েছিলেন ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ এই শ্লোগানের উপর ভর
করে। তারপর শুখা যমুনা এবং স্বচ্ছ গঙ্গা দিয়ে অনেক অনেক চেনা অচেনা জল বয়ে গেছে
এবং বয়ে যাচ্ছে। নিঃশব্দে হাওয়া ঘুরছে। পাল তোলা নৌকা ছাড়াই হাওয়া ঘুরছে। কংগ্রেস
উচ্চ নেতৃত্ব প্রস্তুত হচ্ছেন দেশের অগ্রগামী বাহিনীকে আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
যে দলের নেতৃত্বে থাকবেন রাহুল গাঁধি। ‘সুটবুটের’ সরকার আমদের চিনিয়েছেন কংগ্রেস
সহ-সভাপতি। তাই আমরা বলতে পারি তিনি নাগরিক কংগ্রেসের নেতা। তিনি শহরে বড় হয়েছেন।
শহরকে চেনেন। শহরের ‘বাবুঘরানা’ জানেন। শহর সংস্কৃতি তিনি চেনেন। জানেন না এবং
চেনেন না গ্রাম ভারতকে। যে গ্রামের ‘দলিত’, অন্ত্যজ, প্রান্তিক মানু্য এখনও জানে
‘ব্রাহ্মণ’, উচ্চবিত্ত মানুষ তাঁদের ‘মাই-বাপ’। ঈশ্বর দূত প্রেরণ করে তাঁদের এই
কথা একদিন বলে গিয়েছিল। তারপর বংশ পরম্পরায় সেইসব ‘দেহাতি’ অন্ত্যজ মানুষ উত্তর
আধুনিক ভারতে আজও বিশ্বাস করে অঞ্চলের ‘জোতদার’ জমিনদার যারা তারাই গ্রামের
‘মাইবাপ’। স্থানীয় ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রীয় যারা তারাই দেশ ও দশের ‘সমাজপ্রভু’। তাঁদের
হাতেই পঞ্চায়েত। তাঁদের হাতেই আইন। তাঁরাই গঙ্গা জল ব্যবহার করে। যাদের কাছে একশ
বিঘা থেকে হাজার বিঘা জমি আছে। খনিজ পদার্থের মালিকানা তাঁদের হাতে। আধুনিক শহুরে
হাসপাতাল, কলকারখানা সব সেই সব ‘মাইবাপ’দের হাতে। রাহুল গাঁধি এই গ্রাম ভারতকে
চিনতে চাইছেন সম্ভবত। তাই তিনি ‘কিষাণ যাত্রা’ শুরু করেছেন বিহার-নেপাল সংলগ্ন উত্তর
প্রদেশের সীমান্ত শহর দেওরিয়া থেকে। ২৫০০ কিলোমিটার রাস্তা তিনি অতিক্রম করবেন। সেখানে কোথাও কোনও গ্রামের
আটচালায় বসে ভুট্টা খাবেন। আখ খাবেন, লিট্টি খাবেন। ছাতুর সরবত খাবেন। চা খাবেন।
আর জানবেন গ্রাম ভারতের দলিত মানুষের সুখ দুঃখের ভাষা। এই সভার আমন্ত্রিতদের জন্য
২০০০ খাট আনা হয়েছে। যে কারণে প্রতীকি নামকরণ হয়েছে ‘খাটসভা’। দেহাতি মানুষ ‘উপহার’
মনে করে কেউ কেউ সেই খাট বাড়ি নিয়ে গেছেন। সমালোচকরা ময়দানে নেমে পড়েছেন। ‘খাট পে
চর্চা’ এর বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোন খুঁজতে। রাহুল গাঁধির আলোচ্য সভা নিয়ে আমরা একটি
নিবন্ধ এই লেখার সঙ্গে পড়ে নিতে পারি। লেখাটি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, Firstpost অন
লাইন সংস্করণে লিখেছেন সন্দীপন শর্মা।
‘’Rahul
Gandhi should
dread the omens from his meeting at Deoria to launch his Kisan Yatra in Uttar
Pradesh.
'Khatiya khari karna' is a popular saying in
Hindi, which, when loosely translated, means somebody has been slammed so badly
that he is almost finished.
The saying comes from the Indian
practice when the cot of a deceased person is put upright in a corner, implying
it would no longer be used by its usual occupant.
And, so it was at Deoria, a town
in eastern UP on Tuesday. In a bid to launch his party's campaign in the state,
the Congress vice-president started a 2500-km Kisan Yatra from the UP town on
the Nepal-Bihar border. To give it the look of a panchayat, nearly 2000 khats (cots) were placed at the venue for
the invitees.
Soon after the meeting ended, the
audience made a dash for the cots, scrambling with each other to take home one
on their shoulders. Even women wrestled with the crowd to take home one,
perhaps to literally sleep on what Gandhi said at the venue, when he promised
sops and waivers if the Congress is voted to power.
The post-rally loot is typical of
Indian election gatherings. It is widely believed that a majority of the people
at such venues, except die-hard supporters and party workers, are 'brought' to
election meetings with some inducements. The greedy audience, thus, is always
looking for some material benefit from their participation. Obviously, the
prospect of going home with brand new wooden cots from Gandhi's meeting may
have swelled the numbers at Deoria.
Yet, getting your khatiya put upright at the beginning of an
election campaign may not be the portent the Congress would like. The party is
already comatose in the state with some surveys suggesting a near-demise in the polls scheduled at the
beginning of next year, putting its vote share at a pitiable five to six
percent.
Wary of getting its khatiya
khari, the Congress has already tried several new tricks and
strategies. First, impressed by his record, the Congress hired poll strategist
Prashant Kishor to plan the UP campaign, a decision that has led to emergence
of a parallel power centre in the state.
Then, acting primarily on Kishor's
feedback, the Congress brought Sheila Dikshit from the retirement home, making
her the party's presumptive CM candidate in a bid to snare the Brahmin votes.
But, with surveys indicating that her popularity ratings are in low single
digits, Dikshit has so far been an outsider in the race, hobbling to the finish
line while others have established a huge lead.
So, like always, the onus is back
on Gandhi to put some life into the campaign, a miracle that he has failed to
perform many times in the past.
Before starting the yatra, the
Congress had reached out to at least 1.5 lakh committed workers to accompany
Gandhi on his nearly 2500-km trek through UP. It was hoping that even if half
of them turn up for the walk, the party may be able to reach out to a large
number of voters in person and convince them to vote for the Congress.
But, events at Deoria suggest UP's
voters may be interested more in looting the Congress cots than voting for it.
The signs, if not ominous, are
definitely not auspicious. ‘’
আজ থেকে পাঁচ বছর আগের রাহুল
গাঁন্ধির সঙ্গে ২০১৬ সালের কংগ্রেস সহ-সভাপতির তুলনা করার জন্য সমালোচকরা তৈরি
থাকতে পারেন, কারণ আধুনিক ভারতের ‘কংগ্রেস মুক্ত’ ভারতের বিজেপি নামক আধুনিক দলটি
‘খাটসভা’ নামক ২৫০০ কিলোমিটার যাত্রা পথে রাহুল গাঁন্ধিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে
চাইছে। তাঁর কারণ উত্তর ভারত, পশ্চিম ভারতে বিজেপির আধিপত্য বর্তমানে কংগ্রেসের
তুলনায় অনেক বেশি। রাহুল গাঁধি নিশ্চয়ই ইতিহাস পড়ে নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে
১৯৪৭ সালের ২২ জানুয়ারি ‘সংবিধান-সভা’র (কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’) মঞ্চে
দাঁড়িয়ে প্রতিঞ্জালব্ধ কন্ঠে জওহরলাল নেহরু উচ্চারণ করেছিলেন, ‘’এই সভার প্রথম
কাজ, একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে ভারতকে মুক্ত করা, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাদ্য
জোগাতে পারা, বস্ত্রহীন মানুষের পরনে বস্ত্র জোগাতে পারা। প্রতিটি দেশবাসীকে তাঁর
নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী বিকাশের সব রকমের সুযোগ দিতে পারা।‘’
No comments:
Post a Comment