দুনিয়া কাঁপানো একদিন
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের এক ধারাবাহিক আন্দোলনকে ‘দুনিয়া কাঁপানো
দশদিন’ নামে আমরা জেনেছিলাম। সেই আদর্শ, দর্শন, অর্থনীতি, সামাজিক নীতি এসব এখন সমাজ বিঞ্জানী এবং ঐতিহাসিকদের বস্তুনিষ্ঠ
চর্চার বিষয়। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দর্শন নিয়ে গবেষণা চলতেই থাকবে। আমরা সেই দশদিনের
সঙ্গে আলোচ্য বিষয়কে এক সরণিতে রাখতে আগ্রহী নই। ওই নাম করণের অনুকরণে ২৪ জুন, ২০১৬
দিনটিকে নামকরণ করতে চাইছি। এই দিনেইতো ব্রিটেন নতুন করে ‘গণতন্ত্র’ পেল। এমনটাই
দাবি একুশ শতাব্দীর ব্রেক্সিটপন্থীদের। তিরিশ বছর আগে বেরিয়ে গিয়েছিল
গ্রিনল্যান্ড। এখন ব্রিটেন। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন ৫১.৯ শতাংশ
ব্রিটিশ নাগরিক। ইইউতে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন ৪৮.১ শতাংশ।
গত ২৫ বছর ধরে যে ব্যক্তিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনকে আলাদাভাবে
স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চাইছিলেন তিনি হলেন ‘ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টী’এর
(ইউকেআইপি) নেতা নাইজেল ফারাজ। তাঁর কথায় এই দিনটিকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে দেখা
উচিত আমাদের। লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মন্ত্রীসভার
বিদেশ সচিব বরিস জনসনের কথায়, ‘’............সবাইকে বলছি বিটেন ভেঙ্গে যায়নি। কম
ইউরোপীয়ও হয়ে যায়নি।‘’ বরিস আরও বলেন, ‘’ ২১ শতকে এসে একটা সরকার কেন ব্রাসেলসের
(ইইউ-এর সদর দফতর) দিকে তাকিয়ে বসে থাকবে? অতীতে সেটা মহৎ মনে হলেও ব্রিটেনের
মানুষ এখন গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।‘’
১৯৬৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইউরোপ তথা ব্রিটেনের
বৃহত্তর স্বার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল। প্রায় সাড়ে চার দশক ইইউ এর সঙ্গে
বিশ্ব অর্থনীতি এবং কূটনীতির খসড়া দলিল তৈরি করতে সক্রিয় থেকেছে। বলা ভালো ইউনিয়ন
চালানোর বিভিন্ন নীতি এবং কৌশলের অংশীদার ছিল ব্রিটেন। ২০০৪ সালে পূর্ব ইউরোপের
দশটা দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। এরমধ্যে সাতটা দেশ ছিল পূর্বতন সোভিয়েত
রাশিয়া নিয়ন্ত্রীত গোষ্ঠীর। কি এমন হল যে ব্রিটেন নামক প্রাচীন এক রাষ্ট্রের প্রথম
সারির কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতা ‘ব্রেক্সিট’-এর জন্য গণভোটের আবেদন করলেন? তথ্য
বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১,৭৪,১০,৭৪২ জন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে
থাকার জন্য ব্রিটেনের প্রতি সপ্তাহে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছিল। সংবাদ সংস্থার
খবর, জিডিপির ০.৫ শতাংশের দায় নিয়েও নিজেদের দেশের কোনও লাভ হচ্ছিল না। বিষয়টা
যথেষ্ট জটিল। নিজেদের দেশের অর্থনীতি, করব্যবস্থা, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা,
শুল্ক-বাণিজ্য এবং অভিবাসন নীতি, সর্বপরি বিদেশনীতির বিষয়ে ব্রিটেনকেও নির্ভর করতে
হচ্ছিল ব্রাসেলসের উপর।
৩০৯ বছর আগে যে গ্রেট ব্রিটেন গড়ে উঠেছিল সেই মঞ্চে ইংল্যান্ড আর
স্কটল্যান্ড ছিল। তবু দেখা গেছে ব্রিটিশ শাসকদের কতৃত্ব। অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই ইংরেজরা
প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। বিষয়টা উল্লেখ করলাম আলোচনার মঞ্চটাকে বিস্তৃত করার
অভিপ্রায়ে। যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এক সময় সূর্য অস্ত যেত না সেই জাতি এতগুলো দশক
পরাধীনতা মেনে নিল কি করে? স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালের
আগে থেকে আমাদের কিছুটা পেছনে হাটলে সম্ভবত সুবিধা হয়।
ষাটের দশকের শেষ নাগাদা আন্তর্জাতিক মঞ্চে জার্মানি এবং জাপান নিজের নিজের
দেশের অর্থনীতিকে পুনঃসংগঠিত করলো। এই দশকের শেষে উল্লেখিত দুটি দেশ আমেরিকার
সঙ্গে বাজার দখলের লড়াইয়ে নামে। ১৯৯৩ সালেই রাষ্ট্রবিঞ্জানীদের মত ছিল জার্মানী এবং জাপানের আন্তর্জাতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল।
‘ব্রেটন উড’ চুক্তি অনুসারে জাপান ও জার্মানীতে সামরিক ব্যায় বরাদ্দ নিষিদ্ধ ছিল।
ফলে দুটি দেশের সরকারের সাহায্যে শিল্পপতিদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়িয়ে নিতে অনেকটা
সুবিধা হয়। মার্কিন অর্থনীতিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ জানাতে দুটি দেশ ময়দানে নেমে পড়ে।
তথ্য বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর অনেক আগে থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে চাইছে।
সেই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর না করে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটি
গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাজারে ভারসাম্য আনতে চেষ্টা করছিল।
কিন্তু ধাক্কা আসে। অ্যাথেন্স, মাদ্রিদ, লন্ডন। ইউরোপের উত্তর থেকে দক্ষিণে ছড়িয়ে
পড়ছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে থেকেই। গ্রীসের অভিঞ্জতা আমাদের
এই সঙ্কটকে মনে করিয়ে দেয়। পরস্পরের দোষারোপকেও মনে করতে পারি। যেমন পর্তুগাল,
ইটালি, গ্রীস, রোম বা ‘PIGS’ নামক চারটি দেশের অতি ব্যয় তথা অপরিকল্পিত ব্যয়ের কারণে সমস্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বোঝা টানতে
হচ্ছে। এমন সব অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। খুব সম্ভবত গত ২৫ বছরের যে টানা লড়াই
ব্রিটেনবাসী করল তার ফসল ২৪ জুন, ২০১৬। অভিযোগ আরও আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেউলিয়া
হয়ে যাওয়া কয়েকটি দেশের দায় ব্রিটেনকেও নিতে হচ্ছিল। অভিবাসীরা মুক্ত সীমান্তের সুযোগ
নিয়ে ঢুকে পড়ছে বিনা বাঁধায়। সীমাহীন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ব্রিটেনবাসী অনুভব করেছে দেশের স্বাধীনতা এবং
সার্বভৌমত্ব বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ব্রিটেনের
বেরিয়ে আসাটা কি এই সত্য প্রমাণ করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বলে মুক্ত
সমাজের কথা। যে সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতা শেষ কথা বলার দায়িত্ব নিতে পারে। আধুনিক
গণতন্ত্রের আইন অনুযায়ী। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগকেও সম্মানজনকভাবে ‘স্পেস’ করে
দেওয়ার সামাজিক সংস্কৃতি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে
একটি উৎপাদনমুখী ব্যাবস্থাকে আহ্বান করা হয় মার্কিন অর্থনীতিতে।
উল্লেখ করতে চাইছি প্রথম বিশ্বের তথ্য। ঐতিহাসিকরা বলছেন, ‘’ব্রিটিশ শ্রমিক
শ্রেণীর বড় অংশ অন্ততঃ প্রথম মহাযুদ্ধ অবধি জনকল্যাণ রাষ্ট্রের বদলে সমস্ত (অন্ততঃ
পুরুষ) শ্রমজীবীর জন্য মোটামুটি উচ্চ মজুরী সম্পন্ন চাকরি চাইত। অর্থাৎ সামাজিক
মজুরীর (Social wage) এর তুলনায় নগদ মজুরী ছিল তাঁদের
কাছে অধিক কাম্য।‘’ এই সময়ের সূত্র ধরে এগলে ঠিক ওই সময়কালে পাচ্ছি এক রাস্ট্র
নেতার বক্তব্য। প্রথম মহাযুদ্ধের পরে পরেই ব্রিটেনে বেকার ভাতা চালু করার
প্রস্তাবে ওই রাষ্ট্র নেতা বলেছিলেন, ‘’ছেলেরা বন্দুক ধরতে শিখে এসেছে। যদি এবার
ওদের চাকরি বা ভাতা কোনটাই না দিই, তাহলে ওরা হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে বন্দুক
ঘোরাবে।‘’
ব্রেক্সিট
উত্তর ব্রিটেনকে কি সেই সত্যের দিকে ধাবিত হতে দেখব আমরা? বর্তমান ইউকে নামক এক
প্রাচীন সভ্যতাকে কি আরও জটিল দিকে ঠেলে দিতে চাইছে? সম্প্রতি বিবিসি সূত্রে খবর
ব্রিটেনে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে মন্দা চলছে। আমরা আগেই জানি গত তিন দশকের মধ্যে পাউন্ড
সবচেয়ে তলানিতে নেমেছে। অন লাইন সংস্করণ পত্রিকায় Global Financial Integrity, 20 June, 2016, Daniel
Neale লিখছেন,
With
just days remaining until Britain decides on its EU membership, the UK is at a
crossroads. It has a historical choice to make, with various consequences
attached to the decision on the 23rd of June on whether it becomes the first
ever country to leave the EU. Those consequences could include undermining the
leading role that Britain has taken in the global fight against corruption and
transforming Britain into an even greater tax haven for multinationals.
According
to a recent
report by the British Treasury, £36 billion would be sucked
out of the UK’s financial sector by 2030 due to the economic costs of pulling
out from the EU. Taxpayers will be forced to pay 8p more in income tax on every
pound earned, and the economy risks shrinking between 3.4 percent
and 9.5 percent by 2030 depending on the exit strategy it chooses.’’
খুব সম্ভবত
ব্রিটেনের আর্থিক সমস্যা, বেকার সমস্যা তথা ব্রিটেনের উন্নয়নের বিষয়ে বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সজাগ আছেন। তাই তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে বলেছেন, “In the coming weeks, I will set out
[how] to take our economy through this period of uncertainty, to get the economy
growing strongly across all parts, to deal with Britain’s long-standing
productivity problem, to create more well-paid jobs, to negotiate the best
terms for Britain’s departure from the EU and to forge a new role for ourselves
in the world,”
দায়িত্ব
নেওয়ার আগে তিনি আরও বলেন, “We the Conservatives will put ourselves at the service of
ordinary working people and we will make Britain a country that works for
everyone.”Theresa May
বিশ্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই
করার ডাক ব্রিটেনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় রানী এলিজাবেথ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘’Of course we all live and work in an increasingly
complex and demanding world where events and developments can and do take place
with remarkable speed, and retaining the ability to stay calm and collected can
at times be hard.’’ (Simon Johnson, The Daily Telegraph, July 2, 2016)
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে
আসাকে আমেরিকাও স্বাগত জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘’The people of the UK have spoken, and we respect their
decision. The special relationship between the United States and the United
Kingdom’s membership is enduring, and in
NATO remains a vital corner-stone of US foreign, security and economic policy.
The UK and the EU will remain indispensible partners of the US even as they
begin negotiating their ongoing relationship to ensure continued stability,
security and prosperity for Europe, Great Britain and Northern Ireland, and the
world.’’
রিপাবলিকান দলের মার্কিন
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও ব্রিটেনের নাগরিকদের গণভোটকে স্বাগত
জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘’They’re angry about
many, many things in the UK, the US and many other places. This will not be the
last. I said this was going to happen and I think it is a great thing.
Basically, they took back their country. That’s a great thing.’’ (John
Reynolds, The Times, London, June 24, 2016)
ব্রিটেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়া’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন।
যুগোস্লাভিয়ার বিষয়টির অনেক আগে ইতিহাস বলছে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে সৈন্য
প্রত্যাহার করে। ১৯৯২ সালে নজিব সরকারের পতন এশিয়ার মানচিত্রে নতুন বার্তা নিয়ে
এসেছিল। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম এক নতুন শতাব্দীর। সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের অবসানে
একুশ শতক এল বিশ্বায়নের বার্তা নিয়ে। একুশ শতক শুরু হল ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান দিয়ে।
বাজার অর্থনীতির বাস্তব মুনশিয়ানায়। আমরা খুঁজে পেলাম রাস্ট্রের কল্যাণের জন্য
উন্নয়নের রাস্তা। কিছুদিনের মধ্যে বার্লিন
প্রাচীরও ভেঙ্গে ফেলা হল। শেষ ঘণ্টা শুনলাম ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার কণ্ঠে। সোভিয়েত
রাশিয়া পতনের কিছুদিন পর ফুকোয়ামা লিখলেন, ‘দি এন্ড অফ হিস্ট্রি অ্যান্ড দি লাস্ট
ম্যান।’
একুশ শতাব্দী শেষ হল ঠাণ্ডা
যুদ্ধের অবসান দিয়ে। নতুন রাশিয়ারও জন্ম হল। ‘ব্রেক্সিট’ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট
দু’বছর আগে থেকে শুরু হয়েছিল বলেই মনে হয়। ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়ার স্বাধীন হয়ে
আত্মপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে কি নতুন অক্ষ তৈরি হতে যাচ্ছে? তথ্য বলছে ১৯৫৪ সালে
ক্রিমিয়ান পেনিনসুলা রাশিয়া থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ইউরপিয়ান
ইউনিয়ন ক্রিমিয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি। সংবাদ সংস্থার খবর, ‘’EU decided that individual members should choose
whether they would recognize Kosovo’s independence or not. The majority did,
with the notable exception of Spain, which faces separatism, trend in the
Basque country and Catalonia.’’
‘’The EU rejected the Crimean referendum and said would not consider its
result. EU foreign policy chief Catherine Aston said, the referendum is illegal
under the constitution of Ukrine and under international law. He added more,
you can’t simply sit back and say this situation can be allowed to happen.’’ (March,
2014)
যুগোস্লাভিয়ার অভিঞ্জতা আমাদের
সামনে আসার আগে আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর পরিস্থিতিটা উঁকি দিয়ে দেখে নিতে চাইছি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর পনেরোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে এগারোটি প্রজাতন্ত্র
মিলে গড়ে তুলেছিল ‘Commonwealth of Independent
States’. এগারোটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একমাত্র রুশ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রসংঘে
নিরাপত্তা পরিষদে (Security Council) সদস্য পদ আছে। বর্তমানে রুশ
প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের
অবস্থান। Commonwealth of Independent States তৈরি হওয়ার পরেও ‘সিস’ নয়
রাশিয়াই সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থান নিয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পরে রাশিয়ার
অবস্থান যেমন বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি যুগোস্লাভিয়ার অভিঞ্জতাও অত্যন্ত
সময় উপযোগী হবে ‘ব্রেক্সিট’ পরবর্তী সময়ে। যুগোস্লাভিয়ার অন্যতম অঙ্গ রাজ্য
সার্বিয়ার কসভো প্রদেশের কসভান-আলবেনিয়ানরা যুগোস্লাভিয়ার থেকে বিছিন্ন হতে চেয়ে
আন্দোলন শুরু করেছিল। ন্যাটো গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়েই তাঁরা স্বাধীনতা পেয়েছিল।
ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়ার জন্ম ১৯১৯ সালে। শুরুতে ৬ টি রিপাবলিক নিয়ে
গঠিত হয়েছিল এই ফেডারেল রিপাবলিক। সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া,
ম্যাসেডেনিয়া, মন্টেনগ্রো এবং বসনিয়া।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার
পর জাতীয়তাবাদের দাবিতে ১৯৯১-৯২ এই এক বছরে ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হারডোগোভিনা
ও ম্যাসেডেনিয়া পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে। ১৯৯২ সাল থেকে সার্বিয়া এবং মন্টেনগ্রো
নিয়েই গঠিত যুগোস্লাভিয়া যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান ইউকে-এর পরিস্থিতির পরে
যুগোস্লাভিয়ার থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
এই প্রসঙ্গে Fedia Buric এর লেখাটি আশা করি সাহায্য করতে পারে।
BREXIT: A LESSON FROM YUGOSLAVIA
On June 23, 2016 the UK decided to leave the European Union. The Brexit referendum, like
any other, was supposed to let the people speak. The trouble is, that they did
not speak in unison and now the raison
d’être of this multinational state has disappeared. In the
early 1990s, Yugoslavs also went to their referendums to determine their
willingness to stay in another federation. The result was bloodshed and the
fragmentation of Yugoslavia into squabbling, dysfunctional mini
nation-states. What can a dead country teach the (barely) alive one?
The UK has a lot in common with Yugoslavia. Like Yugoslavia, the
UK is a complicated multinational state born out of a contentious historical
project that often overlapped with the imperial project of the country that
would form the core of the multinational federation. For Yugoslavia, this was Serbia,
and for the UK, this was England. Like the English in Scotland and Ireland, the
Serbs in Croatia, Kosovo and Bosnia were sometimes perceived as brute
conquerors.
Like the English, the Serbs felt misunderstood by the
populations they were trying to integrate, accusing them of ungratefulness at
all the sacrifices they are making for the common cause. Like the non-English
in the UK, the non-Serbs in Yugoslavia felt patronised, bullied, and colonised
by their more powerful big brother. The creations of both unions were preceded
by periods of terrible interethnic and inter-religious violence.
And yet, despite the pull of history, the elites managed over
time to assemble messy, but durable, multinational experiments. Complicated
compromises were hammered out and historical animosities became more
predictable and controllable, if not entirely extinguished. Local self-rule and
autonomy to ethnically distinct regions was the modus operandi in both the UK and Yugoslavia.
For the minorities stuck in areas where their political desires
were not shared, there were also special provisions. For the Protestants
in Northern Ireland maintaining
cultural and political links to their brethren in England was as important as
the free flow of cultural capital between the Serbs of Bosnia and
the Serbs of their motherland, Serbia.
Aware of the unprecedented nature of multinational federations
in an era of nation-states, the elites in both federations were reluctant to
push any notion of a multinational identity that would supersede the deeply
entrenched national identities of the constitutive units. Put more concretely,
‘Britishness’ was never really an official policy of the UK, just as
‘Yugoslavness’ was never really an official policy of post-World War II
Yugoslavia. Instead, the elites must have hoped that out of years, decades, and
centuries of interethnic interactions, the English, Welsh, Scots and Northern
Irish would come to see themselves as Brits, just as the Serbs, Croats,
Muslims, Slovenes,Macedonians and Montenegrins would come to see themselves as Yugoslavs.
For the UK, membership of the EU distracted the internal destructive
forces — of English nationalism for example — redirecting their ire towards
Brussels. For Yugoslavia, the Cold
War and
the consequent special relationship the country had with both blocs tamed
internal nationalisms — at least for a while — by buttressing a sense of
national pride at such a small country occupying such a large world stage.
Then, the Berlin Wall fell
down and so too did Yugoslavia: the Yugoslavs lost their special place,
internal nationalisms roared back and democratic populism took the centre
stage.
The Yugoslav case defies the notion that democracy is an
essential good in itself, that it brings stability and that it liberates
people. In Yugoslavia, the 1990s began with a genuine mobilisation of
grassroots engagement with the political process. New political parties sprang
up overnight. People demonstrated, asking for all sorts of things. Referendums
were announced. New futures were promised. The decade ended in a bloodbath, the
country tearing itself apart into dysfunctional or non functional
nation-states. The end tally: over 100,000 dead, more than 2 million
displaced, new borders erected and a future poisoned by hate, division and
nationalist-coloured corruption.
If there is one lesson the UK should take from Yugoslavia it is
this: referendums are terrible. These brief exercises in direct democracy not
only fail to solve existential societal questions, but they bring to the fore
societal divisions that had previously been channeled into civil political
discourse (like in the UK) or, yes, been politically repressed (like in the
case of Yugoslavia).
Because they are almost always organised around issues that
seem existential, their disruptiveness is also due to the fact that they are,
mostly, irreversible. Unlike in elections, the losing side cannot redirect its
anger into winning the next round because the matter had supposedly been
settled forever.
Take the example of the Bosnian Serbs in Bosnia. In 1992, the
newly, democratically elected, Muslim-Croat government organised a referendum on whether or not Bosnia-Herzegovina should leave the Yugoslav federation
after two of its richest republics, Slovenia and Croatia, had already opted
out. The Bosnian Serbs, overwhelmingly in favour of staying in Yugoslavia where
they could maintain their links to Serbia, boycotted the referendum knowing
that the fact that they composed slightly over 30 percent of the population.
Their participation would see them outvoted, but still legitimise the
referendum. Predictably, the referendum returned an overwhelming ‘yes’ for
independence. Equally predictably, the referendum led to war, as Bosnian Serbs
carved out their piece of Bosnia which they wanted to remain in Yugoslavia.
Following the Brexit referendum, the UK is facing a startlingly
similar situation. To a large extent, the vote fell across the national lines
and made the lack of national consensus a matter of life and death for the
country. The end of the UK outside of the EU seems as predictable as the end of
the unified Bosnia-Herzegovina outside of Yugoslavia: the Scots secede, the
Northern Irish ask for their own self-determination and eventual reunification
with Ireland, while the Protestants retreat from politics, and resort to who
knows what, fully aware that the political process had already turned them into
a minority.
‘ব্রেক্সিট’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে এর
কতটা প্রভাব পড়তে পারে? প্রভাব যে পড়বে সে নিয়ে সন্দেহ রাখার কোনও অবকাশ নেই। কারণ
সূত্রের খবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বে আর্থ-সামাজিক
ঝুঁকি বাড়বে বলে G-20 নেতৃত্ব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ভারতে
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদায়ী গভর্নর এবং অর্থনীতির শিক্ষক রঘুরাম রাজন ইতিপূর্বে
বলেছেন, ‘’ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইয়নিয়ন ছাড়ার গণভোটের রায়ে বিশ্বের অর্থনীতি কিছুটা
হলেও টালমাটাল হবে।‘’ রাজনের দাবি, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও ভারতের অর্থনীতি বহু
দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। সম্প্রতি বিশেষঞ্জদের অভিমত, প্রেসিডেন্ট বারাক
ওবামার নেতৃত্বে আমেরিকায় কর্মসংস্থান বাড়ায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর
সম্ভাবনা পোক্ত হয়েছে।
‘ব্রেক্সিট’ পরবর্তী ইউকের মানুষ তাঁদের যোগ্য নেতৃত্বকে
সম্মান জানিয়েই ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নেবে এমনটা আশা করা যায়। কারণ ব্রিটেনের নিজস্ব
স্পর্শকাতর ঘরানা রয়েছে। সেই ঘরানার নাম ‘Commonwealth
wave’. এই আন্দোলন
সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘’Commonwealth is a
voluntary association of 54 countries that support each other and work together
towards shared goals in democracy and development.’’
আমরা ব্রিটেনের সঙ্গে ছিলাম পরাধীন হিসাবে। আমরা
ব্রিটেনের সঙ্গে থাকব স্বাধীন ভারতীয় হিসাবে। কারণ ব্রিটেনের ধ্রুপদী আভিজাত্য
চিরকালীন থাকবে। বিগ বেন, শেক্সপিয়র, উইমবলডন, রানী এলিজাবেথ, অক্সফোর্ড এবং সেভিল
রো নামক আভিজাত্যের চিরকালীন আবেদনে।
No comments:
Post a Comment