নোটবন্দি সমাজ বাজেট বন্দি নোট:
সম্প্রতি ফেসবুকে
একটি পোস্ট দেখলাম। বাংলায় লেখা ‘যারা আমাকে সাহায্য করতে নিষেধ করেছিলেন তাঁদের
ধন্যবাদ। আপনারা নিষেধ না করলে আমি আমার কাজ করতে পারতাম না।’ এই কোটেশনের নীচে
নাম ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিঞ্জানী আইনস্টাইনের। লেখাটির তথ্য ভিত্তিক সত্যাসত্য আমার মত অধমের পক্ষে যাচাই করে দেখা সম্ভব নয়।
তবে লেখাটির সঙ্গে আমি নিজে অনেকটা মিল খুঁজে পাই, সেই কারণে উল্লেখ করলাম। কেন্দ্রে
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন। ২০১৭-১৮ সালের এই বাজেট
অবশ্যই ‘সম্মিলিত বাজেট’। দীর্ঘ টানাপড়েন এবং দ্বিধা কাটিয়ে অবশেষে রেল বাজেট এবং
সাধারণ বাজেট দুটিকে এক বাক্সে বন্দি করতে পেরেছেন রেল মন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবং
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এই সিধান্ত অবশ্যই
এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ভারত এগচ্ছে, আরও বলা ভালো ‘এগিয়ে ভারত’। স্কুলে পড়ার
সময় নামজাদা শিক্ষকরা শিখিয়েছিলেন কারো সমালোচনা করতে হলে আগে প্রশংসা করে নিতে হয়। স্বতঃস্ফূর্ত উপলব্ধি প্রায় প্রত্যেক লেখায় পরম্পরা রেখে বলতে চাই, আমার
সীমাবদ্ধ যোগ্যতায় কেন্দ্রীয় বাজেট বা রাজ্য বাজেট নিয়ে কিছু লেখা বালখিল্য হয়ে
যায়। তবু একটু ‘হিলে হিলে হিলে না’ করে নিজেকে হেলাতে চাইছি।
নভেম্বরে কালোটাকা চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেওয়া নোট
বাতিলের সিধান্ত আজ প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতির দফারফা করে দিয়েছে। এমন একটা অভিযোগ
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রায় সবাই একসুরে বলছেন। খুব
স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগগুলি মেনে নিতে হয়। কারণ নোট বাতিলের কারণে মৃত্যু মিছিল
বাড়ছে। নোট বাতিল হওয়ার পর আমি একটি লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখি। লেখাটি এই নিবন্ধ
দাবি করছে।
হেমন্তের
ভোরের আলো সবে ছই টপকে নৌকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বিদ্যাধরি নদীর জলের ঢেউয়ে আনন্দের দোল
হিন্দোলে ব্যস্ত। মাঝি মল্লার দল তখনও ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের শেষ প্রহরে চেনা
আঁশটে গন্ধে ভেজা জাল টানছে। একটা নোকার ছইয়ের উপর হেমন্তের হলুদ পাখি নিরাপদ
আশ্রয়ে ভোরের আকাশ দেখছিল। জলের নীচ থেকে একটা কুমির নৌকার কাছে মুখ তুলে রয়েছে।
কুমিরের দু’চোখে জল। রাত জাগার ক্লান্তি। দু’টো চোখে পিঁচুটি। হলুদ পাখি জানতে
চাইল, ‘‘তুমি কি এই নৌকার ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে খেতে এসেছ?’’
কুমির বলল
‘’না না। আমি তোমাকে দেখে এলাম। তুমি আমার চেনা প্রতিবেশি। জান আমার খুব দুঃখের
দিন যাচ্ছে। আমার কাছে পাঁচটা শেয়ালের বাচ্চা ছিল। তিনটেকে বড় মাছেরা খেয়ে ফেলেছে।
বাকি দু’টোকে খেতে দিতে পারছি না। আমাদের জলরাজার দেশে এখন বাজার বসে না। কিচ্ছু
পাওয়া যায় না।‘’
হলুদ পাখি
জানতে চাইল, ‘’কেন বাজার বসে না?’’
‘’আমাদের
দেশে স্বর্ণমুদ্রার নকল ধরা পড়েছে না! তুমি এসব কি করে জানবে? তুমি আমাদের জলরাজার
দেশে কি থাক?’’
হলুদ পাখি
পূর্ব দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ততক্ষণে দু’জন মদ্দ জোয়ান মানুষ হাতে দু’টো বল্লম নিয়ে
ছইয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
হলুদ পাখি
ঠোঁট উল্টে মনে মনে বলল, ‘’কুমিরের আবার কান্না। ওর কান্না দেখে বিশ্বাস করতে হবে
শিয়ালের বাচ্চা তিনটেকে বড় মাছেরা খেয়েছে! মরণ আমার।‘’
সুন্দরবন
ভালো আছে। ভালো থাক সুন্দর বন।
সংস্কারের কাজ করতে তথা দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়তে গিয়ে এতগুলো মানুষের
মৃত্যু মেনে নিতে হবে! কে ভেবছিলো এইভাবে অসহায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু হবে? এর
পিছনে কতটা পরিকল্পিত বৈধ অর্থনীতির অবদান? আর কতটাইবা অপরিকল্পিত সমান্তরাল অর্থনীতির
অভিশাপ? সময় বলবে। ‘দি ইন্সটিটিউট অব কষ্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়া’ এর
প্রেসিডেন্ট মানস কুমার ঠাকুর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন,
‘’দেশের অর্থনীতির তিনটি ক্ষত, (১) সমান্তরাল অর্থনীতি, (২) জাল নোট, (৩)
সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত।‘’ এই সূত্রে মানসবাবু আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন,
‘’সমান্তরাল অর্থনীতি থেকে দেশের ২ শতাংশ মানুষের লাভ হয় মাত্র। কিন্তু সমস্যায়
পড়েন বাকি ৯৮ শতাংশ মানুষ। হিসেব বলছে, ২০১৫-১৬ সালে ভারতের বাজারে জাল নোট ছিল
৬.৫০ লক্ষ। এর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের সংখ্যাই ৪ লক্ষ ছিল।‘’ (সংবাদ সংস্থা।)
ফিরে দেখা যাক আরও কয়েকটি তথ্য।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, Centre for
Marketing Indian Economy report (CMMI) on 24th November, 2016 বলছে,
নোট বাতিলের ফলে ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। বিশেষঞ্জদের অনুমান নোট বাতিলের
ফলে ২ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হবে। এ পর্যন্ত মোট ১৪ লক্ষ কোটি টাকা
মূল্যের নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে। যে পরিমাণ টাকা ফিরবে না, অর্থাৎ কিনা ডিমনিটাইজেশনের
ধাক্কায় নিকেশ হওয়া কালো টাকার পরিমাণ ততখানিই। ইতি পূর্বে স্বেচ্ছা ঘোষণার
প্রকল্পে (যা অঘোষিত আয় বলে চিহ্নিত) মোট ৬৭,০০০ কোটি টাকা জমা পড়েছিল। ৩০
সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত এই সময় সীমা ছিল। নোট বাতিল কান্ডে দেশের মোট নগদের ৮৬
শতাংশ এক ধাক্কায় বাতিল হয়ে গেছে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে ২৪ নভেম্বর আরও খবর ছিল, ‘’প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি
চিদম্বরমের হিসেবে, বাজারে ১৫৭০ কোটি পুরনো ৫০০ টাকার নোট ছিল। ১০০০ টাকার নোটের
পরিমাণ অন্তত ৫৩০ কোটি। সব মিলিয়ে ২১০০ কোটি নোট। আর দেশের টাঁকশালগুলিতে প্রতি
মাসে নোট ছাপানোর ক্ষমতা সাকুল্যে ৩০০ কোটি। ফলে পুরো নোট বদল করতে কম করে ৭ মাস
লেগে যাবে।.....................। ঘরোয়া স্তরে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ২৩ নভেম্বর,
২০১৬ বলেন, ‘’অর্থক্রান্তি সংস্থার চেয়ারম্যান অনিল ভকিল বিজেপির কিছু বাছাই করা
নেতাকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব তখন সেই প্রস্তাব বাতিল করে
দেন। কারণ, ‘ক্যাশ-লেস’ হওয়ার জন্য অন্য উন্নত দেশের মতো ভারতে এখনো পর্যাপ্ত
পরিকাঠামো নেই। ওই নেতার কথায়- ‘’ভকিল পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে এই
প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন। আর প্রধানমন্ত্রী গোটা বিষয়টি গোপন রেখে একতরফা
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।‘’ (এবিপি)। ৯
ফেব্রুয়ারি পি চিদম্বরম রাজ্যসভায় বলেন ‘’প্রথমে পুরনো নোটে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা
বাজার থেকে তুলে নেওয়া হল। সরকার বলছে, শেষ হিসেব পর্যন্ত নতুন নোটে ৯ লক্ষ কোটি
টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। তা হলে একবার ডিমনিটাইজ করে আবার রিমনিটাইজ করার অর্থ
কী?’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করেন, নোট আতিলের ধাক্কায় ৪০ কোটি মানুষ কাজ
হারিয়েছেন। বাজেট পেশের পরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘’নগদের জোগান দ্রুত
বাড়ছে। নোট বাতিলের প্রভাব আর আগামী বছরে গড়াবে বলে মনে হয় না।‘’ যদিও অর্থনীতিবিদদের
দাবি নোট বাতিলের ধাক্কা সামলাতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে। যে কথার সমর্থন
পাওয়া যাচ্ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহয়ের কথাতেও। বাজেটের পরে তিনি
বলেছেন, ‘’নোট বাতিলের ধাক্কা স্থায়ী হবে না, এ কথা উনি কী করে বিশ্বাস করলেন,
তাঁর কোনও ইঙ্গিত মিলল না।‘’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘’সরকার যে
দুর্নীতি ও কালো টাকার সমস্যা নির্মূল করতে দায়বদ্ধ, সেই বিষয়টি বাজেটে প্রতিফলিত
হয়েছে।‘’ প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে স্বচ্ছ করবে
নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত। বাজেট এবং নোট বাতিল দেশের কল্যাণে যুগলবন্দি
সিদ্ধান্ত।
বাজেট বন্দি নোট
সংস্কার শব্দটার ব্যপ্তি সাধারণ চোখে ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। গ্রাম
সংস্কার। শহর সংস্কার। সংস্কৃতির সংস্কার। রাজনীতির সংস্কার। আর এসব কিছুর
নিয়ন্ত্রণ সম্ভবত অর্থনীতির উপর পড়ে। তাই সময়োপযোগী অর্থনৈতিক সংস্কার দেশ এবং দশের
স্বার্থে প্রয়োজন। যেমন উল্লেখ করতেই হয় এবারের বাজেটের সময়কে এগিয়ে নিয়ে আসা। ইউপিএ
সরকার চেষ্টা করে যে সাহস দেখাতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যৌথ প্রয়াসে এবং দায়িত্বশীল বিরোধীদল হিসাবে কংগ্রেসের
সহযোগিতায় পুঁজিবাদী ভারতের গণতন্ত্র মজবুত হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে কল্যাণ-অর্থনীতির
দল এবং উচ্চ শিক্ষিত অর্থনীতিবিদদেরও আপত্তি থাকার কথা নয়। উন্নত রাষ্ট্রের তিনটে
ভিত্তি আমরা সাধারণ পড়শোনা করেও জেনেছি। (১) GST চালু, (২) সমান্তরাল অর্থনীতির মোকাবিলা (জাল টাকা, কালো টাকার রম রমা বন্ধ
করা) (৩) অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা কার্যকর করা। পাশাপাশি ‘ঢিলটো ছুঁড়লাম পাকটো
পেলেক না বটে’ দর্শনে বিশ্বাসী প্রথাবহির্ভূত ঞ্জান নিয়ে কল্যাণ-অর্থনীতির কথা
আমরা জানি। যে সরকার কল্যাণ-অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে বাজেট করে তাঁরা খুব
স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বেশি বেশি রাখবে। আশির দশকে কল্যাণ
অর্থনীতির একটি বই হাতে এসেছিল। নির্মল সেনগুপ্ত লিখিত ‘আমাদের দেশ একটি অর্থনৈতিক
পরিচয়’। বইয়ে প্রকাশকের কোনও নাম নেই। এই
বইয়ে আমাদের চেনানো হচ্ছে ‘’স্কুলে-পড়া ছেলেরা আজকাল ‘’উপেনটি
বাস্কোপ খেলে, আগডুম-বাগডুম’’ প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু এই সেদিনও এদেশে এছড়ার চল
ছিল। এর আসল রূপ ছিলঃ আগে ডোম, বাগে ডোম, ঘোড়া ডোম সাজে/ ঢাক, ঢোল, শিঙ্গা বাজে। হাজার
বছর আগের সৈন্য-সামন্তদের যুদ্ধযাত্রার বর্ণনা। সামন্তরাজা তাঁর সৈন্যদের নিয়ে
যুদ্ধে চলেছেন। সেই সেকালের সামন্তরাজাদের সময় গ্রামের যা অবস্থা ছিল (যাকে আমরা
সামন্ত ব্যবস্থা বলব) আজ তা কিছুটা পরিবর্তিত হলেও, তাঁর অনেকখানিই রয়ে গেছে। তাই
গ্রাম আর গ্রামের মানুষদের অবস্থা বোঝাতে আমরা এককথায় অর্ধ-সামন্তী প্রথা বলি, আর শহুরে সভ্যতা বা কলকারখানার
সভ্যতাকে বলি পুঁজিবাদী।‘’ (পৃষ্ঠা- ১৬/১৭)
কল্যাণ অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি
কর্মসংস্থান যোজনার ব্যয়বরাদ্দ ৩৮,৫০০ কেটি টাকা থেকে বাড়িয়ে চমক দিয়ে ৪৮,০০০ কোটি
টাকা করেছেন। এই গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প ‘এগিয়ে ভারত’-এ প্রথম ইউপিএ সরকারের
আনা যুগান্তকারী এক প্রকল্প। সেই প্রকল্পকে তামাদি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। বাজেট
বক্তৃতায় অরুণ জেটলি সংসদের সম্মানীয় সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘’Honorable
members would be happy (about the budget increase)…..This is the highest ever
allocation for MGNREGA.’’
সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যয়বরাদ্দ আহামরি কিছু নয়। বাজেট নথি যারা বোঝেন তাঁরা
খুঁটিয়ে দেখে বলছেন, গ্রামের গরিবদের জন্য অনেক কাজ হচ্ছে বলে ‘জিরাফ’-এর উচ্চতায়
প্রচার নিয়ে গেলেও সেই অনুপাতে খরচ বাড়ছে না। একশো দিনের কাজে এ ২০১৬-১৭ আর্থিক
বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে মাত্র ১০০০ কোটি টাকা। ইউপিএ এর ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে
সর্বশিক্ষা অভিযান বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৬, ৬০৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সালের আর্থিক বছরে
এনডিএ সরকারের এই খাতে বাজেট বরাদ্দ ২৩,৫০০ কোটি টাকা। মিড ডে মিল, প্রধানমন্ত্রী
গ্রাম সড়ক যোজনা এইসব প্রকল্পে কোনও বাড়তি খরচ রাখা হয়নি। সেই কারণেই সম্ভবত
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছেন, ‘’The plan-non-plan
distinction is gone. In its place, revenue and capital have been introduced.
One needs to see how it will impact on the economy.’’ (PTI)
কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি বলেছেন, ‘’It’s just a
sher-o-shayari (lyrical) budget. There is nothing for farmers and youth and
nothing for job creation. There is no clear vision, no idea.’’ (News Agency)
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে
বলেন, ‘’A controversial budget 2017……… No road map for the country or the
future from a government that has lost all its credibility…… Taxpayers still
have restrictions on withdrawals.
সূত্রের খবর, জাতীয় আয়ে করের হার মাত্র ১৬.৬%। অন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ে করের হার ২১%।
কর ব্যবস্থাকে সহজ করতে কেন্দ্রীয় বাজেটে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাদের বাৎসরিক আয় তাঁদের
রেহাই দেওয়া হয়েছে। মন্দের ভালো। তবে আমাদের দেশে ৩ কোটির কম মানুষ আয়কর রিটার্ন
দেন।
বাজেটে প্রস্তাবিত নির্বাচনী বন্ড নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। ছোট ছোট
রাজনৈতিক দলগুলির টাকাকে কি বাজেটবন্দি করতে চাইছে এনডিএ সরকার? যদিও সরকারের তরফে
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলছেন, গোপনীয়তা বজায় থাকবে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে
চাঁদা দিলে সেই তথ্য গোপন থাকবে। সিপিএমের সধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি থেকে
কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধি পৃথক পৃথকভাবে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। কতটা গোপনীয়তা
বজায় থাকবে সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ‘এগিয়ে ভারত’।
এবারে বাজেটের সময়সূচী নিয়ে একটা বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। উত্তর প্রদেশ,
পঞ্জাব, গোয়া সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে বাজেট এগিয়ে এনে সরকার সুযোগ নিতে চাইছে।
বিরোধীদের তরফ থেকে এমন একটা অভিযোগ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের
হস্তক্ষেপে বিষয়টার সমাধান হয়েছে। ‘এগিয়ে ভারত’। আগামীতে ভারতের বাজেট পেশ আরও
এগিয়ে আনা উচিৎ বলেই মনে করেন বিভিন্ন বণিকসভার পরিচালকমণ্ডলী থেকে কর্পোরেট কর্তা
এবং নামজাদা অর্থনীতিবিদ। উন্নত দেশ সমূহে যা হয়ে থাকে। উত্তরপ্রদেশ সহ যে পাঁচ রাজ্যের ভোট নিয়ে
কংগ্রেস, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টী, সিপিএম, তৃণমূল সহ প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের
কেন্দ্রীয় নেতাদের মাথা ব্যাথা ছিল।
তাঁরা এখন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন পরবর্তী ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
উত্তর প্রদেশে দুই দলের দুই জনপ্রিয় যুবনেতা আগামীতে ভারতীয় রাজনীতির অনেটা রাশ
নিজেদের হাতে নিয়ে আসতে সফল হবেন বলে বিশেষঞ্জরা বলছেন। কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল
গাঁধি এবং সমাজবাদী দলের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং নেতা অখিলেশ যাদব সেই অর্থে
বিজেপি সহ অনেক দলের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছেন। উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, গোয়া সহ
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দেবে। এই ভোটের পরে
কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিসর দেশে অনেকটাই বাড়বে। ২১ নভেম্বর, ২০১৬, কংগ্রেস
সভানেত্রী সনিয়া গাঁধি ‘ইন্ডিয়া টুডে’ চ্যানেলে সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাইকে একটি
সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘’Indira
Gandhi had deep compassion for the people in need. This is missing in politics
today.’’ রাহুল গাঁধি শুরুটা
করেছেন সেই অবস্থান থেকে। শতাব্দী প্রাচীন দলটার খোল নলচে বদলে কংগ্রেস দলটার নব
নির্মাণ করতে চাইছেন তিনি। প্রবীণ, নবীন এবং বর্তমান মূল্যবোধের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘটিয়ে আধুনিক ভারতের উপযোগী
গণতান্ত্রিক দল গড়ে তুলতে চাইছেন কংগ্রেসের ভাবি সভাপতি। ‘ভারত এগিয়ে’। তবে
প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেস। সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি এবং রাজ্য
সভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমার সঙ্গে একমত হলেন। তিনি
বললেন, ‘’১৩ ফেব্রুয়ারির পর দেশে কংগ্রেস ভালো অবস্থায় থাকবে। এই পরিস্থিতি গড়ে
তোলার সব কৃতিত্ব আমাদের দলের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধির। পাঁচ রাজ্যে ভোটের পরে যে রাজনৈতিক
পরিসর তৈরি হবে তাঁর সুযোগ আমাদের নিতে হবে। আর এই সুযোগ নিতে গেলে আমাদের পৃথক
পৃথক গোস্থী করে রাজনীতি করা বন্ধ করতে
হবে। আমি ওড়িষার দায়িত্বে থেকে গোষ্ঠী রাজনীতির উর্ধে উঠে কাজ করে সফল হয়েছি।‘’
আগামী লোকসভার ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোট হতে পারে কি? আমার
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রদীপবাবু বলেন, ‘’সেটা হাই কমান্ড ঠিক করবে। তবে তোমার আর
একটি প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি রাজ্যে সিপিএমের যে ভোট মেশিনারি প্রমোদ দাশগুপ্ত,
অনিল বিশ্বাস গড়ে তুলতে পেরেছিলেন সেই মেশিনারি ভেঙ্গে গেছে। ওদের রাজ্য সম্পাদক
সূর্যকান্ত মিশ্র খুব চেষ্টা করছেন।‘’
একই প্রশ্ন ছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহঃ সেলিমের কাছেও।
তিনিও এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘’নোট বন্দির সঙ্গে জোট বন্দির কোনও সম্পর্ক নেই।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলে নোট বাতিলের প্রতিবাদে সব দল ঐক্যবদ্ধভাবে
আন্দোলন করবে। জোট করেই এই আন্দোলন করব। কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে পৃথক পৃথক দলের পৃথক
পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে বলতে পারি পাঁচ রাজ্যের ভোট
মিটলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা কংগ্রেসের অণুকুলে আসবে। তবে কংগ্রেসের
সঙ্গে নির্বাচনী জোট নিয়ে আমরা এখনই কিছু ভাবছি না।‘’
পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে সিপিএমের সাংসদ আলাদা করে বলেন, ‘’রাজ্যের ক্ষেত্রে
তোমার সঙ্গে আমি একমত। এখানেও রাজনৈতিক পরিসর তৈরি হয়েছে। এবং হচ্ছে। তবে সিপিএম
এখনো পুরোটা প্রস্তুত নয়। সময় বদলেছে। গ্রামের সংস্কৃতি, মূল্যবোধের পরিবর্তন
হয়েছে। সেইমত নীতি, কৌশল, স্লোগান তৈরি করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি নির্বাচনী
মেশিনারি নতুন করে গড়ে তুলতে।‘’
আগামীতে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে কংগ্রেস কোন দলের সঙ্গে জোট
করবে? এই প্রশ্নটা এখন থেকেই উঠতে শুরু করেছে। কারণ রাজ্যে বিজেপি অনেকটা পরিসর দখল করে নিয়েছে। তাই বিজেপিকে অবহেলা করা
কোনও দলের পক্ষেই সম্ভব নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য
সভাপতি এবং সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সির কাছে ফোনে জানতে চেয়েছিলাম।
তিনি বললেন, ‘’এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। তবে আমদের নেত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিল ইস্যুতে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন করছেন। সময়ের কথা
সময়ে বলতে পারব। তুমি আমার অফিসে এলে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি।‘’
No comments:
Post a Comment