বিহানবেলার ঘর সংসার
একটা দেশ ভারত নামক একটা দেশ এতটা পথ এগিয়ে এসে আবার কি পিছনের দিকে হাটতে
চাইছে? আমার এই লেখার মুখবন্ধে প্রথমেই সশ্রদ্ধ আবেদন রাখছি ভারতের সব ধর্মের
ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে। বিশেষত ইসলাম ধর্মের সেইসব শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে।
বিশ্বের আপামর জনতার আদালতে আমার সীমাবদ্ধ ঞ্জাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি। যেসব ঞ্জাণী
শিক্ষিত মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করেন তাঁদের সিঞ্চিত ধ্যান সাধনার প্রতি সমস্ত
শ্রদ্ধা রেখে আমার নিরপেক্ষ নিবেদন। এই লেখায় কোনও ব্যক্তি, কোনও বিশেষ গোষ্ঠী যদি
মনে করেন তিনি ভিন্ন মত পোষণ করেন তাহলে আপনি বা আপনারা আমার ব্লগের কমেন্ট বক্সে
আপনার এবং আপনাদের মতামত জানাবেন। আপনাদের মতামত আমি পুনরায় সংযোজন করব।
ইসলাম ধর্মের তিন তালাক বিষয়টা নিয়ে ‘তর্কপ্রিয়’ বাঙালি, প্রাক্তন
প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধির সতর্ক পদচারণার আগে খুব কিছু আলোচনা করার কথা ভাবেনি। আমাদের
আলোচনা বাংলার সীমান্ত ভেঙ্গে সর্ব ভারতীয় হয়ে ওঠার দাবি রাখে। ভারতীয় সংবাদ
মাধ্যমে প্রকাশ ‘’তিন তালাক প্রথার বিলোপের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ
মামলা দায়ের হয়েছে। মুসলিম মহিলাদের একটি সংগঠন সেই মামলা করেছে। তার ভিত্তিতেই
সম্প্রতি এ ব্যাপারে আদালত কেন্দ্রের মতামত জানতে চেয়ে নোটিস দেয়। এর পরই জাতীয়
আইন কমিশন তিন তালাক এবং বহুগামিতা নিয়ে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে পার্সোনাল ল
বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে মোদী সরকারের স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে
আইন কমিশনের প্রশ্নমালা বয়কটের জন্য ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল
ল বোর্ড।‘’
তিন তালাক বিলোপ বিষয়ক মামলায় আরও পরে পর পর দু’টি হাই কোর্টের রায়
আবেদনকারীদের পক্ষে গেছে। ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে প্রকাশিত খবর ছিল, ‘’ইলাহাবাদ
হাইকোর্টের পর কেরল হাইকোর্ট। তিন তালাক ভারতীয় মুসলিম মহিলাদের আইনের চোখে সমতার
অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলে জানাল বিচারপতি এ মুহামদ মুস্তাকের বেঞ্চ।
বিবাহবিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের তিনটি মামলার রায় দিতে গিয়ে শুক্রবার আদালত
বলেছে, এই প্রথা গোটা দেশকে দেখিয়ে
দিচ্ছে, মুসলিম মহিলারা সুবিচার পান না। বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের বিধিবদ্ধ করণেই রয়েছে
এর সমাধান। আদালত জানিয়েছে, কোরান কোথাও সটান তিন তালাকের সমর্থন করেনি। বরং বিয়ে
সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বোঝাপড়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। সৌদি আরব, মিশরের মতো মুসলিম
দেশও তিন তালাককে বাতিল করেছে।‘’ (ABP news)
ইতিহাস আমাদের টেনে নিয়ে যায় আশির দশকে। তখন আমার বয়স কত হবে?
সালটা ১৯৮০-১৯৮১ হবে। আমাদের পাড়ার একটি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চশিক্ষিত বর্ণ
হিন্দু পরিবার ‘বিবাহবিচ্ছিন্ন’ বা ‘ডিভোর্স’ এই জাতীয় শব্দ সংবাদপত্রের মাধ্যমে
জানতেন। কিন্তু নিজেদের পরিবারে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবতে পারতেন না। যেমন
ভাবতে পারেননি আমার বড়দাদার অভিজাত এবং উচ্চ শিক্ষিত শ্বশুর বাড়ি। আমার বড়দা অল্প
শিক্ষিত এবং সরকারি চাকুরে ছিলেন। রামপুরহাট মহকুমার একটি গ্রামের এক প্রতিষ্ঠিত
ডাক্তার । সেই ভদ্রলোক তাঁর এক মেয়ের সঙ্গে আমার বড়দার বিয়ে দেন। সালটা
১৯৬৯। সেই ডাক্তারাবুর উচ্চশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ছেলেরাও এই অসম বিয়েতে মত দেন।
আমার দাদার বিয়ের পর দু’তিন বছরের ব্যবধানে দুই সন্তান হয়। খুব সম্ভবত বছরটা ১৯৭৩ সাল। একদিন বৌদির বাবা
ডাক্তারবাবুর বাড়ি থেকে অভিজাত গরুর গাড়ি আসে। সেই গরুর গাড়ি করে আমি আমার মাতৃসম
বৌদিকে বাপের বাড়ি ফেরত দিয়ে আসি। সঙ্গে বৌদির ছোট ছেলে। আসা যাওয়া প্রায় ১০-১৫
মাইল রাস্তা হবে। ১৯৭৩ সালের পর বড়দার প্রথম স্ত্রী আমাদের বাড়ি কোনওদিন আসেনি। বড়
বৌদি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন শুনেছি। তাঁর ছোট ছেলেও কোনদিন বাবাকে দেখতে আসেনি।
১৯৭৪ সালে বড়দা তাঁর পুরনো প্রেমিকাকে বিয়ে করে। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে
আইনি বিবাহ বিচ্ছেদ না নিয়ে ভদ্রলোক দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। বড়দার উচ্চশিক্ষিত
ডাক্তার শ্বশুর, ডাক্তার শ্যালক, ইঞ্জিনিয়র আরও দুই শ্যালক এবং উচ্চ শিক্ষিত
প্রাক্তন বামপন্থী ছাত্র নেতা, সিউড়ি শহরের একটি নাম করা স্কুলের শিক্ষক ছোট
শ্যালকও ‘ডিভোর্স’ নিয়ে উচ্চবাচ্চ করেননি। কেন? সে প্রশ্ন কেউ কোনদিন করেন নি। যদিও বর্তমানে আমার বড়দা এবং তাঁর দ্বিতীয়
বৌ কেউ বেঁচে নেই। আর্থিক কষ্টের মধ্যেও সামাজিক অবমাননা সঙ্গে বয়ে তাঁরা চার
পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরপুর সংসার করেছে। চলুন শুরুর গল্পে ফিরে যাই।
আশির দশক। ১৯৮০-৮১ সাল। নলহাটি, রামপুরহাটে সমাজকর্মী হিসাবে বেশ নাম ডাক
হয়েছে আমার। সেই সময় আমাদের পাড়ার সেই বর্ণহিন্দু বাড়ির বড় মেয়েটি বিয়ের এক বছরের
মাথায় বাপের বাড়ি ফিরে এলো। উচ্চশিক্ষিত বাবা, দাদা, সরকারি উচ্চপদে চাকুরে তাঁরা।
গ্রামে চল্লিশ বিঘে জমি আছে বাবার। তবু পরিবারটি জানে না এর পর কি করতে হবে?
ডিভোর্স-এর জন্য আবেদন করা যায় জানলেও সামাজিক তথা লোক লজ্জার ভয়ে তাঁরা আদালতে
যেতে পারছিল না। অথচ সেই সময় আমাদের রাজ্যে প্রগতিশীল বামফ্রন্ট সরকার ছিল। পাশে
পেলেন আমাদের মত উচ্ছন্নে যাওয়া সমাজকর্মীদের। ওই বছর গুলিতে পরিবারটির সামনে থেকে
তাঁদের সাহায্য করতে চেয়েছি। না আমি রবি ঠাকুরের ‘নিষ্কৃতি’ কবিতার কাহিনী নতুন
করে বাঁধতে বসিনি। ওই বছরগুলিতে আদালতের নির্দিষ্ট তারিখে মেয়েটি তাঁর দাদা, বাবার
সঙ্গে নিয়মিত সিউড়ি যেত। আমাকেও তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যেতে হত। এমনই একদিন সিউড়ি
কোর্টের সামনে বসে আছি। হঠাৎ দেখি লিয়াকত আমাকে ডাকছে। লিয়াকত আমার সঙ্গে নলহাটি
হরিপ্রসাদ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়েছে। তারপর আর লেখাপড়া
চালিয়ে যেতে পারেনি। তখন ও নলহাটি বাজারে রিক্সা চালাত। আমি বললাম, কিছু বলবি?
লিয়াকত বলল, ‘’আমার সঙ্গে খানিক আসবা। আমার কিছু কথা আছে তুমার সঙ্গে।‘’
দূরে একটা চায়ের দোকানে আমরা বসলাম। আদালত চত্বরে কত অসহায় মুখ। মানসিক
নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য তাঁরা ঘুরছে। লিয়াকত এক কাপ লাল চা নিয়ে বলল,
‘’আমার ছোট বহিনকে বাবা ১৩ বছর বয়সে বিহা দিয়াছিল। এখন দুই ছেলা এক মেয়ার মা। বয়স মাত্র
১৮ বছর। ওর সুয়ামী ‘তিন তালাক’ দিয়াছে। আমার দিদি আর দাদা বুলাছে বোনকে খোরপোষ
দিতে হবে। কে কার কথা মানে! জামাই আবার নিকাহ কোরাছে। আমি আমার দিদি মিলে সিউড়ি
কোর্টে মামলা কোরাছি। একবছর হুং গেল। তুমি দীপেন সবার লেগি কত উপকার কর। আমাদের
পাশে খানিক দাঁড়াও ক্যানে।‘’
লিয়াকতের পুরো কথা শোনার পর আমি থতমত হয়ে গেছিলাম। কারণ সেই সময় শরিয়ত আইন
বা মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড
বিষয়ে আমার একদমই ধারণা ছিল না। লিয়াকতকে বললাম, আইন আদালতের বিষয়। আমি এই
ব্যাপারে কোনও সাহায্য করতে পারব বলে মনে হয় না। তবে পুলিশ এবং সামাজিক বিষয়ে আমি
চেষ্টা করব তোদের জন্য কিছু করার।
সেই মত আমি আমার তৎকালীন মান্যগণ্য বন্ধুমহলকে লিয়াকতদের পরিবারের লড়াইয়ের
কথা জানাই। তাঁরা সম্ভবত সাহায্যও করেছিল। তারপর কয়েকটা বছর কেটে গেছে। আমি
কলকাতায় থাকি। একমাস দু’মাস অন্তর বাড়ি যাই। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরের কোনও এক বিহান
বেলায় লিয়াকত আমাদের বাড়ি এল। ভেতরে ঢুকল না। রিক্সা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সেই
রিক্সায় করে আমাকে একরকম জোর করে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল। ওদের বাড়ির মাটির সীমান্ত
প্রাচীরে লিয়াকতের বোন তখন ঘুঁটে দিচ্ছিল। বাইরে তিন চারটে ছেলেমেয়ে নাকের পোঁটা
মুছতে মুছতে পিট্টু খেলছে। আমরা যেতেই লিয়াকতের বোন ছুটে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
লিয়াকতের মা আর দিদি সামনে এসে দাঁড়াল। দিদির হাতে বেতের মোড়া। রিক্সার পুরনো
টায়ার দিয়ে উপর আর নীচের ঘের সেলাই করা। আমি সেই মোড়ায় বসে ওদের লড়াই শুনেছিলাম।
লিয়কতের মা গাজরের হালুয়া, ডিমের হালুয়া আর পড়টা খেতে দিয়েছিলেন। বিহানবেলার ঘর সংসারের
কথা সেদিন শুনেছিলাম। সিউড়ি আদালতের রায় লিয়াকতের বোনের পক্ষে গেছিল। কিন্তু জামাই
খোরপোষ ছ’মাস দিয়ে বন্ধ করে দেয়। লিয়াকতরা খোরপোষের জন্য আর চেষ্টাও করেনি। পরে
বোনকে সেলাই স্কুলে ভর্তি করে সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে নিয়েছে।
গ্রাম বাংলার এই ধরনের বিহান বেলার গল্পকথা আকছার শোনা যায়। রাজনৈতিক
টানাপোড়েন নোট আকালেও সমানে চলছে। পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত আমরা সংবাদ মাধ্যমে
দেখতে পাচ্ছি। যে হেতু বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয় সেই কারণে আমার ব্যক্তিগত কোনও
মতামত নেই। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহয়ের সঙ্গে
আলোচনা থেকে জানা যায় ১৯৭৩ সালের সংশোধিত আইনের সি আর পি সি ১২৫ ধারা মোতাবেক জেলা
শাসকরা খোরপোষ দেওয়ার বিধান দিতেন। পরে এই আইন সংশোধন হয়। ১৯৭৩ এর পরে ১৯৮৬ সালে পুনরায়
সংশোধিত আইন আসে।
সম্প্রতি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ কলকাতার ইরান সোসাইটি সভাঘরে Justice K. M. Yusuf Memorial Trust & Iran Society-এর
যৌথ উদ্যোগে তিন তালাকের বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আমি সেই সভায়
আমন্ত্রিত ছিলাম। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘’Triple Talaq: In the light of Islam and present Scenario’’ । সেদিনের
আলোচনা সভায় বক্তা ছিলেন যথাক্রমে Kawal Sing
Walia, President of the Iran Society, Khwaja iftekhar Yusuf, Trustee, Justice
K. M. Yusuf Memorial Trust, Khwaja Jaweed Yusuf, General Secretary, Justice K.
M. Yusuf Memorial Trust, Nasir Ahmed, Life Member, Iran Society, Dr. M. Firoze,
General Secretary, Iran Society, Kolkata, Intaj Ali Shah, Chairman, West Bengal
Minorities’ Commission Government of West Bengal, এবং Ms.
Uzma Naheed, An eminent woman social activist from Mumbai and member of the All
India Muslim Personal Law Board.
ইন্তাজ আলি শা সাহেব সেদিনের ইরান সোসাইটি সভাঘরে যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই
সুরে আলাদাভাবে আমাকে বলেন, ‘’আমি কৃষ্ণনগরে ১৯৮৭ সালে ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট
ছিলাম। একজন মহিলা পাঁচজন ছেলে মেয়ে নিয়ে এসেছিল। তাঁর দাবি ছিল স্বামী তালাক
দিয়েছে। কি খাওয়াব ছেলে মেয়েদের?
আমি সেই মামলায় খোরপোষের বিধান দিয়েছিলাম। এর আগে ১৯৮১ সালে আমি প্রথম
ম্যাজিস্ট্রেট। তখন আমার কাছে দু’টো তিন তালাকের মামলা আসে। একটা মামলায় অভিযোগ
ছিল স্ত্রী ঘর ঝাট দেয়নি। তরকারিতে নুন দেয়নি। সেই জন্য স্বামী তালাক দিয়েছে। আমি
ওই মামলাতেও খোরপোষের রায় দিয়েছিলাম।‘’
ইন্তাজ সাহেব আরও বলেন, ‘’আমাদের দেশে ১৯৩৭ সালে শরিয়ত আইন আসে। ১৯৩৯ সালে Dissolution of Muslim act
আসে। আমি বলতে চাইছি জ্বলন্ত ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ৮০ শতাংশ মুসলিম
পরিবার আইন বিষয়ে অঞ্জ। এইসব পরিবারকে শিক্ষিত এবং সচেতন করা প্রয়োজন। তিনটে চান্দ্রমাসে এবং ‘তুহর’ এর সময় এই
তিন তালাক দেওয়া হয়। জেলাস্তরে একজন কাজি রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আধুনিক সময়ের
সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রতিবেশি দেশ পারলে আমরা পারব না কেন?’’
ইন্তাজ সাহেবের বক্তব্যকে মাথায় রেখে আমরা এই রাজ্যের বর্তমান মুসলিমদের
আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটটা একবার দেখে নিতে পারি। বছর দশেক আগে একটি রিপোর্ট আধুনিক
বাংলার অহংকার ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে প্রকাশিত সাচার কমিটির রিপোর্ট
থেকে রাজ্যের মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থার কথা রাজ্যবাসী তথা দেশবাসী জানতে পেরেছিল।
তারপর আমরা দশ দশটা বছর পেরিয়ে এলাম। উল্লেখযোগ্যভাবে কিছু কি পাল্টেছে? রাজ্যের
মুসলিমদের আর্থসামাজিক অবস্থান? পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন এমন সংখ্যালঘূদের মধ্যে
মুসলিমরা আছেন ২৮ শতাংশ। তাঁদের পরিস্থিতি ২০০৬ সালের পর কি আদৌ বদলেছে? সম্প্রতি
প্রকাশিত একটি রিপোর্ট একই কথা বলছে। ৩৮ শতাংশ মুসলমান পরিবার মাসে আড়াই হাজার
টাকার কম রোজগার করে। মাত্র ১.৫৪ শতাংশ সরকারি চাকরিতে আছেন। ১.৫৫ শতাংশ মুসলমান পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী স্কুল
শিক্ষক। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন মাত্র ১ শতাংশ। রাজ্যের মুসলমান বাবা-মা ৪২.৫
শতাংশ ছেলে এবং ৪০.৪ শতাংশ মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেই পারেন না। মুসলমান ছেলেমেয়েদের
স্কুলছুটের সংখ্যা এইরকম ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ১৪.৫ শতাংশ মাঝপথে স্কুল
ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার হাল আরও শোচনীয়। প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে ৪৭.১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
তিন তালাক নিয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত ১৮
অক্টোবর, ২০১৬ সংবাদ পত্রে প্রকাশ করে ভারতের বৃহত্তম বামপন্থী দলটি। আমরা যে প্রেস রিলিজ পাই সেটি উল্লেখ
করলাম।
The CPI (M) supports the
demand of Muslim women against the practice of arbitrary and instant triple
talaq. This specific practice is not permitted in most Islamic countries.
Acceptance of this demand will bring relief to affected women.
All personal laws including
those for the majority community require reform.
In this context the claims
being made by Government spoke persons that personal laws for Hindu women have
already been reformed shows that their interest is not in securing women’s
equality but in targeting the minority Communities, particularly the Muslim
minority. Even now laws concerning, adoption, property rights and even the
right to choose your own partner discriminate against Hindu women.
With the offensive of the
communal forces on the very identity of minority communities, any move to push
the agenda of uniform Civil Code as is being done by the Government directly
and through its institutions is counterproductive for the rights of woman. Uniformity
is not the guarantee for equality.
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের সঙ্গে আমার ব্যগতিগত আলাপ রয়েছে।
তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিন তালাক বিষয়ে তাঁর অবস্থান। অত্যন্ত সুশিক্ষিত মীরাতুনদি ১১
ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে আমাকে এসএমএস করে তাঁর বক্তব্য জানান। তিনি বলেন, ‘’আমি
মুসলিম মেয়েদের তাৎক্ষণিক তালাকজনিত কষ্ট দূর করার পক্ষে। কেন্দ্রীয় সরকার অথবা
মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড সে বিষয়ে সদিচ্ছা পোষণ করে না। এই সত্য স্পষ্ট হয়েছে
সাপ্রতিক বিতর্কে। তাঁরা মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করুক এটাই চাই।‘’
এই লেখায় যিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন মুম্বাইয়ের সমাজকর্মী সেই উজমা নাহিদ
কলকাতার ইরান সোসাইটির সভাঘরে যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল
নিকাহ। উজমা বলতে চাইছেন আধুনিক ভারতীয় সমাজে মহিলাদের ‘নিকাহ’ করা উচিত সুস্থির এবং
গঠনমূলক চিন্তার পর। তাহলে হয়ত তাৎক্ষণিক ‘তিন তালাক’ বিষয়টা এত সহজে আসেনা। এজন্য
প্রয়োজন আধুনিক স্ত্রী শিক্ষা। বিশিষ্ট সমাজকর্মী পরে তিনিও তাঁর বক্তব্য আমার
অনুরোধমত এসএমএস করে পাঠান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ তে। লেখাটি উল্লেখ করলাম।
‘’Nikah is 3letter word in
Quran which is a noun, grammatically it means to absorb. Eg. The rain married
with the land or sleep married with eyes. So there are multi meanings of this
word which brings peace satisfaction in man and woman’s life. They are secure
by doing sins.
We must concentrate more to
secure Nikah inspite of discussing Talaq. Nikah works like mexicine in human
lice it secure from instinctive pressure. Or safe guard from serious diseases.
Just think when rain marries with earth it brings Zarkhezi’’ (fruits? Vegetable
grains) and when sleep marries with eyes how much peace it provides to human
being so if there is no rain the earth is dead and if you don’t have sleep the
eyesight is effected. Then, water cannot be separated from earth and sleep
cannot be separated from eyes. So we must secure ‘Nikahas’ much as we can. The
word Talaq has 14 menings. Like Talaq’ means to open up talaqat’ to be
separated atlaq’ to make free. almost the meanings are revoke able like if your
stepping ahead you may come back too. If you are flying the came you may open too.
This word is so stretchable that you can stretch at as much as you can but in the end it will come on
the same point. So understanding the language of Quran which has eleven
meanings of each word. We must work put on mercy’’ which is the purpose of the
facility of divorce. If they both don’t like to live together they can use
talaq, but Quran says to be just with women and use its given process of three
months long period.’’
No comments:
Post a Comment